Author : Sameer Patil

Published on Jan 08, 2024 Updated 0 Hours ago

এই বছর ভবিষ্যতের উচ্চাভিলাষী শীর্ষ সম্মেলন রাষ্ট্রপুঞ্জকে তার বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষা করা এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রেক্ষিতে হুমকি মোকাবিলায় তার প্রবিধানকে সশক্ত করার এক বিরল সুযোগ প্রদান করবে।

২০২৪: রাষ্ট্রপুঞ্জের পুনরুজ্জীবনের সুযোগ?

এই প্রবন্ধটি "What to expect in 2024"‌–এর অংশ


 

ভূমিকা

মায়ানমারের গৃহযুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইরায়েল-হামাস দ্বন্দ্ব থেকে শুরু করে ইউরোপে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষ এবং দক্ষিণ সুদানে হিংসার ঘটনা… বর্তমানে বিশ্ব কয়েক ডজনেরও বেশি সংঘাতের সম্মুখীন হয়ে চলেছে২০২৩ সালটি বিগত বছরগুলির মতো যখন সংঘাতের প্রবাহে ভেসে গিয়েছে এবং সঙ্কট তীব্রতর হয়ে উঠেছে, তখন যে সাধারণ বিষয়টি উল্লেখযোগ্য ভাবে অভিন্ন থেকেছে, তা হল তাত্ক্ষণিক কার্যকর ভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে রাষ্ট্রপুঞ্জের (ইউএন) অক্ষমতা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে আশাবাদ ও ইতিবাচক মনোভাব দ্বারা চালিত হয়ে উন্মোচিত মহৎ প্রকল্প রাষ্ট্রপুঞ্জ বর্তমানে এক অসহায় সত্তায় পর্যবসিত হয়েছে। সংস্থা সনদ দ্বারা নির্ধারিত প্রাথমিক কাজ অর্থাৎ তার মূল উদ্দেশ্য আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষণাবেক্ষণের কাজটি করতে ব্যর্থ হয়েছেএবং ভবিষ্যৎও খুব একটা উজ্জ্বল বলে মনে হচ্ছে না। কারণ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস উত্তেজনা বৃদ্ধি, বিভাজন ও আরও খারাপ’ পরিস্থিতির জন্য সতর্ক হওয়ার সাবধানবাণী শুনিয়েছেন।

৭৫ বছরেরও বেশি পুরনো রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রাথমিক বাধ্যবাধকতা পালনে প্রধান অন্তরায় আসলে কী? সমালোচকরা এই প্রেক্ষিতে বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করেছেন। পি-৫-এর মধ্যে ঐকমত্যের অভাব রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদকে (ইউএনএসসি) অচলাবস্থার দিকে চালিত করেছে। বর্তমান ক্ষমতার ভারসাম্যের অপ্রতুল প্রতিফলন উদীয়মান অর্থনীতির প্রতিনিধিত্ব এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার উপর জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ার মতো বিষয়গুলি রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতি আস্থা, বৈধতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষয়িষ্ণু করে তুলেছে। এর সদস্য রাষ্ট্রগুলি এই সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ না করলে রাষ্ট্রপুঞ্জ বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যাবে।

 

ক্রমপরিবর্তনশীল ভূ-রাজনৈতিক পরিসরের মূল্যায়ন

আমরা অশান্তির যুগ প্রত্যক্ষ করছি, যা ঠান্ডা লড়াই-পরবর্তী যুগের তুলনায় একটি দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তন। একটি ভঙ্গুর বিশ্বব্যবস্থা - যা শুধু পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যেই নয়, বরং গ্লোবাল নর্থ এবং গ্লোবাল সাউথের মধ্যেই মেরুকৃত আসলে এমন এ বিচ্যুতি, যা প্রধান শক্তির মধ্যে আস্থার ঘাটতির কারণে গভীরতর হয়েছে। পদ্ধতিগত কারণগুলি প্রধান শক্তিগুলির মধ্যে নিরাপত্তামূলক প্রতিযোগিতাকে ত্বরান্বিত করছে। আন্তঃরাষ্ট্রীয় যুদ্ধ - যা কয়েক দশক আগে একটি সুদূরপ্রাচীন ঘটনা বলে মনে করা হতো - বর্তমানে এক কঠোর বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে। পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন দেশগুলি এখন একে অপরের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সামরিক সংঘর্ষ এড়িয়ে চলছে, তার পরিবর্তে বিকল্প হিসেবে প্রক্সি যুদ্ধ বেছে নিচ্ছে। কিন্তু আঞ্চলিক পারমাণবিক শক্তিহীন দেশগুলি এ হেন কোনও সংশয়ের মুখে পড়েনি। ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি বা সীমান্ত প্রযুক্তি এখন এমন সাধনী সরবরাহ করছে, যা যুদ্ধে প্রক্রিয়ায় সূক্ষ্মতা  ধ্বংসের এমন উপাদান যোগ করেছে, যা আগে কখনও দেখা যায়নি। এর পাশাপাশি দ্বন্দ্বের সময়কাল হ্রাস করার পরিবর্তে এই প্রযুক্তিগত ক্ষমতাগুলি তাদের সময়কাল দীর্ঘায়িত করছে। তবুও এই সীমান্ত প্রযুক্তির অস্ত্রায়ন সম্প্রসারণ নিয়ন্ত্রণের জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের কাছে কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেই।

যুদ্ধ সংঘাতের প্রবণতা রাষ্ট্রের মানসিকতার পরিবর্তন দ্বারাও শক্ত হয়, যেখানে তারা আলোচনার টেবিলে না বসে যুদ্ধক্ষেত্রে বিরোধ নিষ্পত্তি করতে ইচ্ছুক। ইথিওপিয়ার টাইগ্রে যুদ্ধ এবং নাগোর্নো-কারাবাখে আজারবাইজানের আক্রমণ এ হেন মনোভাবগত পরিবর্তনের প্রতীক। রাষ্ট্রগুলি আর শান্তির জন্য বহুপাক্ষিক প্রক্রিয়া ব্যবহার করতে ইচ্ছুক নয়। এর ফলে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও কূটনীতি ক্রমশ পিছু হঠছে। এই প্রবণতা ২০২৪ সালে আরও বেশি প্রাধান্য পাবে এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের কাজকে আরও চাপে ফেলবে।

আর কটি বিশিষ্ট প্রবণতা হল বলপ্রয়োগকে সীমিত করার জন্য আর্থিক নিষেধাজ্ঞা ও বাণিজ্যিক বিধিনিষেধের মতো অ-সামরিক জবরদস্তিমূলক সাধনীর রূঢ় ব্যবহারপি-৫ মতপার্থক্যের কারণে ইউএনএসসি-র নিষেধাজ্ঞার ব্যবস্থাকে অগ্রসর করতে না পারার দরুন পশ্চিমী দেশগুলি তার প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে একতরফা নিষেধাজ্ঞা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করেছে। তবুও, কয়েকটি উদাহরণ ব্যতীত নিষেধাজ্ঞাগুলি তাদের আচরণ পরিবর্তন করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং তাদের সীমিত উপযোগিতা তুলে ধরেছে। এটি অবশ্য পশ্চিমী শক্তিগুলিকে নিরুৎসাহিত করবে না, এবং এই বছর তার প্রতিপক্ষের সঙ্গে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়াতে নীতির উপকরণ হিসেবে আর্থিক নিষেধাজ্ঞার ব্যবহার দেখা যাবে

একটি বহুমুখী বিশ্বব্যবস্থার জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের পুনর্নির্মাণ

কথা স্পষ্ট যে, রাষ্ট্রপুঞ্জকে তার বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষা করতে এবং বহুপাক্ষিকতার সঙ্কট মোকাবিলা করতে নিজেকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে। এই বছর আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রেক্ষিতে হুমকি মোকাবিলা প্রবিধানকে শক্তিশালী করার একটি বিরল সুযোগ প্রদান করবে।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাষ্ট্রপুঞ্জের উচ্চাভিলাষী ভবিষ্যতের শীর্ষ সম্মেলন বা সামিট অব দ্য ফিউচার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে তাকার্যক্রমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘আ নিউ অ্যাজেন্ডা ফর পিস’রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব ইতিমধ্যে শান্তির জন্য তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি এবং একটি কার্যকর যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গঠনের উপায় তুলে ধরেছেন।

এই দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায় করার জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, কিছু সংঘাত নিরাপত্তা প্রতিযোগিতার জন্ম না দিলেও সম্পদের ঘাটতি, জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য অর্থনৈতিক বৈষম্যের সৃষ্টি করবে। সেই অনুসারে, এটিকে সংঘাত প্রতিরোধের জন্য নতুন সাধনীগুলি বিকাশ করতে হবে এবং আসন্ন সংঘাতের বিষয়ে সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে প্রাথমিক সতর্কতামূলক ক্ষমতাগুলিতে বিনিয়োগ করতে হবে। এ ছাড়াও সীমান্ত প্রযুক্তিগুলির বিপজ্জনক ভূমিকার উপর নজর রাখার পাশাপাশি গ্লোবাল সাউথের জন্য তাদের ইতিবাচক সুবিধাগুলি অস্বীকার না করে সেগুলির বিস্তার রোধ করার উদ্দেশ্যে বিশ্বব্যাপী প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি করা উচিত।

দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রপুঞ্জকে অবশ্যই মধ্য শক্তি, ক্ষুদ্রপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক জোট, জি২০ এবং গঠনমূলক অরাষ্ট্রীয় শক্তির মতো নতুন ভূ-রাজনৈতিক শক্তিক্ষমতা ব্যবহার করে ভূরাজনৈতিক বিভাজনের মাঝে সেতুবন্ধন করতে হবে। বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে ঐকমত্য গঠনে তাদের অবদানকে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং তাদের সম্পৃক্ত করতে হবে। রাষ্ট্রপুঞ্জ তাদের কিছু প্রতিষ্ঠানের স্টুয়ার্ডশিপ দিয়ে এবং পি-৫- আস্থার ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে শান্তিনির্মাণ উদ্যোগের মাধ্যমে এমনটা করতে পারে।

সর্বোপরি, রাষ্ট্রপুঞ্জকে অবশ্যই রাষ্ট্রপুঞ্জের ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য সামিট অব দ্য ফিউচার-এর উদ্দেশ্যে একটি সুদৃঢ় ও সময়োচিত পথনির্দেশিকা তৈরি করতে হবে, বিশেষ করে ইউএনএসসি-র জন্য, যা বর্তমানে বিগত শতাব্দীর শক্তি ভারসাম্য এবং ঔপনিবেশিক প্রকল্পকে প্রতিফলিত করে। এই পথনির্দেশিকাটি উন্নয়নশীল বিশ্ব এবং উদীয়মান অর্থনীতিগুলিকে শুধুমাত্র পর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্ব প্রদান করেই নয়, বরং তাদের বিদ্যমান পি-৫-এর মতো সম-অধিকার প্রদান করে রাষ্ট্রপুঞ্জের ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করতে হবে। এর পাশাপাশি অবশ্যই পি-৫-কে একটি শূন্য-সমষ্টির খেলা পরিত্যাগ করার জন্য চাপ দিতে হবে এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, জবাবদিহিমূলক কার্যকর রাষ্ট্রপুঞ্জের ব্যবস্থার সংস্কারে সম্মত হতে হবে। ভারত ইতিমধ্যেই তার সংস্কার কার্যকর বহুপাক্ষিকতার ধারণা প্রকাশ করেছে। একই ভাবে, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা ক্যারিবিয়ান, এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় (ছোট দ্বীপ উন্নয়নশীল রাষ্ট্র) থেকে শুরু করে উন্নয়নশীল দেশগুলির এল৬৯ গোষ্ঠীও ইউএনএসসি সংস্কারের জন্য নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছে।

উপসংহার

বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার গভীর মেরুকরণ এবং ক্রমবর্ধমান সংঘাতের প্রেক্ষিতে শান্তির পথ খোঁজা সত্যিই রাষ্ট্রপুঞ্জের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং প্রয়াসে পরিণত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, সংস্কারের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপুঞ্জের মোকাবিলা করার জন্য রাজনৈতিক পদ্ধতিগত চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যাইহোক, সামিট অব দ্য ফিউচার রাষ্ট্রপুঞ্জের বৈধতা এবং দীর্ঘমেয়াদের জন্য একটি নীলনকশা তৈরি করার উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক গতি প্রদান করে। আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার ক্ষমতাকে শক্তিশালী করার জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জকে এই কঠিন অথচ প্রতিশ্রুতিময় পথে হাঁটতে হবে। মহাসচিব গুতেরেস যেমনটা জোর দিয়ে বলেছেন, রাষ্ট্রপুঞ্জকে সংস্কার অথবা ‘ধ্বংস’-এর মধ্যে যে কোনও একটি পথ বেছে নিতে হবে।

 


সমীর পাটিল অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ডেপুটি ডিরেক্টর এবং সেন্টার ফর সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড টেকনোলজির সিনিয়র ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.