Published on Apr 12, 2024 Updated 0 Hours ago

সাম্প্রতিক নেতৃত্বের পুনর্গঠন এই ইঙ্গিত দেয় যে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার মাধ্যমে শি আগামী দিনের লড়াইয়ের জন্য পিএলএ-র যুদ্ধ-দক্ষতায় আরও শান দিচ্ছেন।

শি জিনপিং পিএলএ শীর্ষনেতাদের ক্ষমতা ছেঁটে ফেলছেন

চিনের পার্লামেন্ট ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস থেকে বর্ষীয়ান নেতাদের অপসারণের পর পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) মধ্যে শুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়া আরও সম্প্রসারিত হওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট। একই সময়ে চিনের অভ্যন্তরে একটি দুর্নীতিবিরোধী আখ্যানের বৃহত্তর অনুরণন উপলব্ধ হয়েছে।

আইন প্রণয়নকারী নানাবিধ সংস্থার মধ্যে যে সব ব্যক্তিত্ব সামরিক প্রতিষ্ঠানের অভিজাত অংশ হওয়ার পাশাপাশি প্রতিরক্ষা-শিল্প ক্ষেত্রেরও অংশ, তাঁদের ইতিমধ্যেই ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ঝাং ঝেনঝং এবং সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনে (সিএমসি) কর্মরত রাও ওয়েনমিন, যাঁকে প্রতিরক্ষা পরিষেবার তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল; লেফটেন্যান্ট জেনারেল ঝাং ইউলিন, যিনি সিএমসি-র সরঞ্জাম উন্নয়ন বিভাগে নিযুক্ত ছিলেন; রকেট ফোর্সের শীর্ষ নেতা জেনারেল ঝাউ ইয়ানিং এবং তাঁর উত্তরসূরি জেনারেল লি ইউচাও, যিনি অভিজাত সামরিক বিভাগে দেশের পারমাণবিক অস্ত্রাগারের রক্ষক ছিলেন এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল লি চুয়াংগুয়াং। এ ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন পিএলএ-র বিমান বাহিনীর প্রাক্তন কম্যান্ডার জেনারেল ডিং লাইহাং এবং পিএলএ-র সাদার্ন থিয়েটার কম্যান্ডের প্রাক্তন ডেপুটি কম্যান্ডার ভাইস অ্যাডমিরাল জু সিনচুন। এর পাশাপাশি আবার পিপলস পলিটিক্যাল কনসালটেটিভ কনফারেন্স বেশ কিছু টেকনোক্র্যাট বা প্রযুক্তিবিদের সদস্যপদ প্রত্যাহার করেছে। এর মধ্যে রয়েছেন উ ইয়ানশেং, যিনি চায়না অ্যারোস্পেস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি কর্পোরেশনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন; চায়না অ্যারোস্পেস সায়েন্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশন (সিএএসআইসি) থেকে ওয়াং চাংকিং, যে সংস্থাটি আবার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে নিযুক্ত এবং লিউ শিকুয়ান, যিনি সিএএসআইসি চায়না নর্থ ইন্ডাস্ট্রিজ গ্রুপ কর্পোরেশন উভয়ের হয়েই কাজ করেছেন এবং যে সংস্থাটি পিএলএ-এর জন্য অস্ত্র তৈরি করে। সম্প্রতি প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি শাংফু এবং প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী কিন গাং-এর প্রকাশ্যে উপস্থিত না হওয়া নিয়ে কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়নার (সিপিসি) শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে একটি আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। নেতৃত্বের এ হেন আকস্মিক পরিবর্তন রকেট বাহিনীর ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে চিনে আর্থিক অস্বচ্ছলতার বিষয়ে একটি জনপ্রিয় আখ্যান প্রকাশ্যে এসেছে। নতুন বছরের বার্তায় পিএলএ ডেইলি দুর্নীতির বিপদ সম্পর্কে পদমর্যাদাধারীক্ষমতাধরদের সতর্ক করেছে। এর আগে চিনের কমিউনিস্ট পার্টির জার্নাল কিউশি-তে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দেশের নিরীক্ষকদের শিল্প, প্রযুক্তি এবং আর্থিক ক্ষেত্রে শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাজ খতিয়ে দেখার কথা বলেছিলেন।

 

এ ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন পিএলএ-র বিমান বাহিনীর প্রাক্তন কম্যান্ডার জেনারেল ডিং লাইহাং এবং পিএলএ-র সাদার্ন থিয়েটার কম্যান্ডের প্রাক্তন ডেপুটি কম্যান্ডার ভাইস অ্যাডমিরাল জু সিনচুন।

 

শি-র পিএলএ সংক্রান্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং বাস্তবতা

২০২২ সালের অক্টোবর মাসে ২০তম জাতীয় পার্টি কংগ্রেসে বক্তৃতায় শি পিএলএ-র জন্য তাঁভবিষ্যৎ পরিকল্পনার উপর মনোনিবেশ করেছিলেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, একটি বিশ্বমানের সামরিক বাহিনী গড়ে তোলা তাঁর আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তিনি প্রতিরক্ষা-সম্পর্কিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, অস্ত্র ও সরঞ্জামের উন্নতি সাধনের সঙ্গে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলিকে ত্বরান্বিত করার উপর জোর দিয়েছিলেনশি জিনপিং যুদ্ধের দক্ষতায় বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার প্রতিশ্রুতিও দেন সাম্প্রতিক বছরগুলিতে প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলিতে অর্থায়নের জোয়ার এসেছে এবং ২০০০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে প্রতি বছর সামরিক খাতে ব্যয় ১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে গত বছর চিনের প্রতিরক্ষা বাজেট ৭.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে অর্থাৎ প্রায় ১.৫৫ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (২২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) বৃদ্ধির সাক্ষী থেকেছে। প্রতিরক্ষা খাতে উচ্চ হারে বরাদ্দ পিএলএ-কে একটি উন্নততপরিসর করে দিয়েছে বলে মনে হয় না। কারণ পিপলস ডেইলিতে প্রকাশিত প্রচলিত পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের দায়িত্বে নিয়োজিত একটি সিপিসি রিপোর্টের ফলাফল রকেট ফোর্স বিভাগে অর্থায়নের ‘ব্যাপক ঘাটতি’র উন্মোচন করেছে। বর্তমানে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার তরফে করা একটি বিশ্লেষণে এ কথা নিশ্চিত করা হয়েছে যে, পিএলএ এবং তার সামরিক-শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দুর্নীতি চিনের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতিকে খর্ব করেছে। এটি উদাহরণ দিয়ে বলেছে যে, পশ্চিম চিনের ক্ষেপণাস্ত্র সাইলোগুলিতে ত্রুটিপূর্ণ ঢাকনি এবং জ্বালানির পরিবর্তে ক্ষেপণাস্ত্রে জলের ব্যবহার করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ সিএমসি-ও এই বিষয়টির উপর নজর রেখেছে এবং বৃহত্তর স্বচ্ছতার দাবি জানিয়েছে। সিএমসি ভাইস-চেয়ারপার্সন জেনারেল ঝাং ইউঝিয়া বলেছেন যে, পিএলএ-র অধিগ্রহণ এবং গবেষণা বিভাগগুলিকে অবশ্যই শি-র আধুনিকীকরণ লক্ষ্য পূরণ করতে এবং যুদ্ধে জয়ী হওয়ার ক্ষমতা বিকাশের জন্য গুণমানের উপর মনোনিবেশ করতে হবে। ঝাং পিএলএ-র জন্য অন্যান্য অগ্রাধিকারের উপর জোর দিয়েছেন। যেমন: যুদ্ধক্ষেত্রের প্রয়োজনীয়তা পূরণের জন্য আরও ভাল মানের বিধান প্রদান; অস্ত্র উন্নয়নে উন্নত প্রযুক্তির আরও ভাল ব্যবহার অর্জনের জন্য মান নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার উন্নতি এবং আপগ্রেডিং সিস্টেম বা বিদ্যমান ব্যবস্থাগুলির সংস্কার

 

প্রতিরক্ষা খাতে উচ্চ হারে বরাদ্দ পিএলএ-কে একটি উন্নততপরিসর করে দিয়েছে বলে মনে হয় না। কারণ পিপলস ডেইলিতে প্রকাশিত প্রচলিত পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের দায়িত্বে নিয়োজিত একটি সিপিসি রিপোর্টের ফলাফল রকেট ফোর্স বিভাগে অর্থায়নের ‘ব্যাপক ঘাটতি’র উন্মোচন করেছে।

 

সিপিসি-পিএলএ সম্পর্কের জটিলতা

সিপিসি মাওবাদীদের নির্দেশ অনুসরণ করে বলে যে পার্টিকে অবশ্যই ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে’ এবং তার জেনারেলদের অদম্য আনুগত্যের প্রত্যাশা রাখে। চিনের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থাগুলিতে অর্থাৎ পলিটব্যুরো এবং সেন্ট্রাল কমিটি… উভয় ক্ষেত্রেই পিএলএ-র প্রতিনিধিত্ব রয়েছেদুজন পিএলএ জেনারেল পলিটব্যুরোতে ক্ষমতায় রয়েছেন, যেখানে সেন্ট্রাল কমিটিতে ২০৫ জন স্থায়ী এবং ১৭১ জন বিকল্প সদস্যের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ সামরিক সংস্থার জন্য দায়বদ্ধ। চিনের প্রতিরক্ষা শিল্প ক্ষেত্রে সিপিসি অভিজাতদের নিকটবর্তী পরিবারগুলির সদস্যের তরফে যথেষ্ট অংশীদারিত্ব লক্ষ করা গিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বর্ষীয়ান চিনা নেতা দেং জিয়াওপিং, ইয়ে জিয়ানিং এবং ইয়াং শাংকুনের আত্মীয়দের সঙ্গে চিনের বড় প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। পিএলএ সিপিসি-র ক্ষমতা কাঠামোর আন্তঃসংযোগ এবং চিনের রাজনৈতিক ব্যবস্থার দুর্ভেদ্যতা হল এই দুর্নীতির মূল কারণ। সাম্প্রতিক সময়ে সিপিসি ক্যাডারদের জন্য নির্দেশিকা দিয়ে দুর্নীতিচক্রের সমস্যাটি মোকাবিলা করার চেষ্টা করেছে, যা তাদের নিকটবর্তী পরিবার এবং আত্মীয়দের ব্যবসায়িক কার্যকলাপ প্রকাশ করার কাজটিকে বাধ্যতামূলক করে তুলেছেপিপলস ডেইলিতে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে, সিপিসি ব্যবস্থার সদস্যরা যাতে বিশেষ স্বার্থ গোষ্ঠী’র কথা অনুযায়ী কাজ না করে, সে কথা সুনিশ্চিত করার জন্য প্রবিধানগুলির প্রয়োজন ছিল। অনেকে আবার দুঃখ প্রকাশ করে বলেন যে, একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বেআইনি কাজকর্ম তাঁদের আত্মীয়দের অবৈধ মুনাফা অর্জনে সহায়তা করার ফলে পার্টির ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়েছে। যাই হোক, রাজনৈতিক এবং সামরিক অভিজাতদের মধ্যে স্বার্থসিদ্ধির অভিপ্রায় প্রতিরক্ষা-উৎপাদন ব্যবস্থার মধ্যে দুর্নীতি নির্মূল করার কাজটিকে কঠিন করে তুলেছে।

 

শি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাগুলির মতো অঞ্চলগুলি থেকে দুর্নীতি নির্মূল করার জন্য তদন্তকারীদের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন, যেখানে সম্পদ এবং তহবিলের প্রাচুর্য রয়েছে।

 

সংক্ষেপে বললে, প্রথমত, সিপিসি-র মধ্যে প্রচলিত ধারণা ছিল এই যে, অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলিতে স্থিতিশীল আর্থিক বরাদ্দ তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণে সাহায্য করবে। যাচাই করার জন্য নিরীক্ষকদের দেওয়া শি-র আদেশ শৃঙ্খলাব্যবস্থাকে উন্নত করার জন্য তাঁর সংকল্পকেই দর্শায়। দ্বিতীয়ত, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি মুখ্য সিপিসি ব্যবস্থা সেন্ট্রাল কমিশন ফর ডিসিপ্লিন ইন্সপেকশনের সাম্প্রতিক কনক্লেভ ভবিষ্যতের নির্দেশক হয়ে উঠতে পারেশি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাগুলির মতো অঞ্চলগুলি থেকে দুর্নীতি নির্মূল করার জন্য তদন্তকারীদের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন, যেখানে সম্পদ এবং তহবিলের প্রাচুর্য রয়েছে। তিনি এ-ও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ব্যবসায়িক স্বার্থ এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যোগসাজশকে খর্ব করার অগ্রাধিকার রয়েছে, যা ইঙ্গিত করে যে, তাঁর দুর্নীতিবিরোধী অভিযান আগামী দিনে জোরদার হবে। পরিশেষে, শি এবং পিএলএ নেতৃত্বের মধ্যে টানাপড়েনের সমীকরণ বিশেষ করে ভারত-চিন সীমান্তে উত্তেজনাপূর্ণ স্থবিরতা এবং ব্যাপক হারে সৈন্যদল মোতায়েনের ঘটনা স্কাদেনফ্রেউদ বা অন্যের ক্ষতি থেকে নিজের লাভ সাধনের ইঙ্গিত দিয়েছে। যাই হোক, এই পুনর্বিন্যাসের ঘটনা ইঙ্গিত দেয় যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করার মাধ্যমে শি আসন্ন লড়াইয়ের জন্য পিএলএ-এর যুদ্ধ-দক্ষতার সংস্কার করছেন।

 


কল্পিত এ মানকিকর অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.