Author : Sameer Patil

Originally Published MONEY CONTROL Published on Apr 23, 2022 Commentaries 16 Days ago

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ অর্থনৈতিক সঙ্কটের মোকাবিলা করা এবং রাজনৈতিক জোট অটুট রাখা। নতুন সরকার ইমরান খান এবং তার পি টি আই-এর তরফ থেকে কড়া বিরোধিতার সম্মুখীন হতে চলেছে, যারা পথ বিক্ষোভ দেখানোয় পারদর্শী।

ইমরান খানের পদচ্যুতির পরে ইসলামাবাদে পাকিস্তানি সেনা অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করতে চলেছে
ইমরান খানের পদচ্যুতির পরে ইসলামাবাদে পাকিস্তানি সেনা অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করতে চলেছে

৯-১০ এপ্রিলের মধ্যবর্তী রাতে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিতর্কিত এবং নাটকীয় পদচ্যুতির ঘটনা পাকিস্তানকে এক অনিশ্চিত রাজনৈতিক ভবিষ্যতের  দিকে ঠেলে দিয়েছে। পাকিস্তান মুসলিম লিগ নওয়াজের (পি এম এল-এন) নেতা শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন বিরোধী পক্ষের নবাগত সরকার যে শুধু মাত্র পাকিস্তানের অনিশ্চিত অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জেরই সম্মুখীন, এমনটা নয়। ইমরানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পি টি আই) রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মাঝেও তাদের শান্তি এবং সুস্থিতি বজায়  রাখতে হবে।

তাঁর বিরুদ্ধে বিরোধী পক্ষ অনাস্থা প্রস্তাব আনার পর থেকেই গত এক মাসে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জনমত নিজের দিকে টানার জন্য প্রতিপক্ষ বিরোধী, আমেরিকা বিরোধী এবং সেনা বিরোধী আবেগ উস্কে দিয়েছেন এবং নিজেকে ‘চক্রান্তের শিকার’ প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছেন। এই উস্কানি আগামিদিনে দেশে আরও রাজনৈতিক হিংসা এবং ডামাডোল সৃষ্টি করতে পারে যাতে ক্ষমতাধর সেনা প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়।

এখনও পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনা এক ‘নিরপেক্ষ’ ভূমিকা নিয়েছে এবং বিদ্যমান রাজনৈতিক সঙ্কটে প্রকাশ্যে হস্তক্ষেপও করেনি। কিন্তু সেনার অভ্যন্তরে ইমরান খানের রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা এবং ‘প্রশাসন পরিবর্তনের’ জন্য আমেরিকাকে দায়ী করার মাধ্যমে আমেরিকার সঙ্গে পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটানোর প্রচেষ্টাকে কেন্দ্র করে অস্থিরতা ফুটে উঠছে।

সেনা এবং বিচারব্যবস্থা… পাকিস্তানের দুই মহা শক্তিধর প্রতিষ্ঠানই সম্ভবত ইমরানের এ হেন বিপজ্জনক রাজনৈতিক পন্থার বিরুদ্ধে যা দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করেছে।

কয়েকটি গণমাধ্যমের বক্তব্য অনুযায়ী, ইমরান ৯ এপ্রিল চিফ অফ আর্মি স্টাফ জেনারেল কমর জাভেদ বাজওয়াকে পদচ্যুত করার চেষ্টা করেন এবং বিরোধী পক্ষের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার পরিবর্তে ‘সামরিক আইন’ বলবৎ করার হুমকি দেন। হয়তো ইমরান সেই পাকিস্তানি সেনার জন্যই এক রাজনৈতিক ‘বোঝা’ হয়ে উঠেছিলেন, যা ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে তাঁকে ক্ষমতায়  এনেছিল।

অন্য দিকে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে পাকিস্তানের শীর্ষ আদালতের ইমরানের বিরুদ্ধে মতদানের বিষয়টি বিচারবিভাগীয় ব্যবস্থার অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে। সেনা এবং বিচারব্যবস্থা… পাকিস্তানের দুই মহা শক্তিধর প্রতিষ্ঠানই সম্ভবত ইমরানের এ হেন বিপজ্জনক রাজনৈতিক পন্থার বিরুদ্ধে, যা দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করেছে।

যদিও পাকিস্তানের রাজনীতিতে ইমরানের ভবিষ্যৎ বা প্রাসঙ্গিকতাকে খাটো করে দেখা এখনই উচিত হবে না। ইমরান খান এমন এক ‘জনপ্রিয়’ নেতা, যুব সম্প্রদায়, শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকে শুরু করে দেশের বাইরে বসবাসকারী পাকিস্তানিরাও যাঁর অনুরাগী। তাঁরই আহ্বানে পি টি আই সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রতিবাদে ১০ এপ্রিল বিশাল সংখ্যক জনতা রাস্তায় নামে। বিগত এক মাসে ইমরানের আবেগপ্রবণ বক্তৃতা এবং তাঁর বিরুদ্ধে বৈদেশিক (পড়ুন আমেরিকার) চক্রান্তকে দর্শিয়ে প্রচারিত আখ্যান পি টি আই অনুগামীদের ক্রুদ্ধ করেছে এবং তারা বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা ‘আমদানিকৃত সরকার’-এর বিরুদ্ধে ইমরানকে সমর্থন জোগাতে উদ্দীপ্ত হয়েছে।

ইমরান নিজের স্বার্থে এই আবেগকে সর্বতো ভাবে ব্যবহার করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন করানোর জন্য নতুন সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করবেন। পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভিকে জানিয়েছে যে অক্টোবরের আগে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। ফলে নির্বাচনী সময় এগিয়ে আনার জন্য পি টি আই জাতীয় ও আঞ্চলিক সব আইনসভা থেকে পদত্যাগ করার মতো একাধিক চাপ সৃষ্টিকারী কৌশলের  আশ্রয় নেবে, এমনটা সহজেই অনুমান করা যায়।

নতুন প্রধানমন্ত্রী শরিফের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ অর্থনৈতিক সঙ্কটের মোকাবিলা করা এবং রাজনৈতিক জোট অটুট রাখা। নব ক্ষমতাপ্রাপ্ত সরকার ইমরান খান এবং পি টি আই-এর তরফে কড়া বিরোধিতার সম্মুখীন হতে চলেছে যারা পথ বিক্ষোভ দেখানোয় পারদর্শী।

অর্থনৈতিক দিক থেকে ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ডের ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থ সাহায্য পুনঃপ্রবর্তন করা, মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি, খাদ্য ও জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি এবং একই সঙ্গে ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঐতিহাসিক বাণিজ্য ঘাটতি থেকে উদ্ধার পেতে নতুন সরকারের কাছে সর্বাধিক প্রাধান্য পাবে।

আশ্চর্যজনক ভাবে ৭ এপ্রিল ইমরান সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের মতদানের পর থেকে পাকিস্তানের স্টক এক্সচেঞ্জ এবং ডলার-পাকিস্তান রুপি বিনিময় মূল্যে সামান্য বৃদ্ধি লক্ষ করা গেছে।

অর্থনৈতিক দিক থেকে ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ডের ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থ সাহায্য পুনঃপ্রবর্তন করা, মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি, খাদ্য ও জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি এবং একই সঙ্গে ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঐতিহাসিক বাণিজ্য ঘাটতি থেকে উদ্ধার পেতে নতুন সরকারের কাছে সর্বাধিক প্রাধান্য পাবে।

নব ক্ষমতাপ্রাপ্ত সরকারের নেপথ্যে থাকা বহু দলীয় জোট আগামী মাসগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলিকে কেন্দ্র করে মত বিরোধের সম্মুখীন হতে পারে। ইমরান প্রশাসনকে বিতাড়িত করতে পারার সাফল্য বিরোধী পক্ষকে একসূত্রে বেঁধে রাখলেও জোট শক্তিগুলির সামনে আসল পরীক্ষা হবে, যখন তারা তাদের নিজ নিজ দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণে সচেষ্ট হবে। আন্তঃপ্রাদেশিক মতপার্থক্য, স্থানীয় রাজনৈতিক লক্ষ্য, পরবর্তী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি এবং বাজেটের কথা বিবেচনা করে আর্থিক সম্পদের বণ্টন ইত্যাদি নতুন জোটের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে। এমনটা মনে করা হচ্ছে যে, জোটের অন্যতম প্রধান দুই শক্তি পি এম এল-এন এবং পাকিস্তান পিপল পার্টি পরবর্তী নির্বাচনের আগের সময়কালকে জনসমর্থন অর্জনের কাজে ব্যবহার করতে পারে।

বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে, পাকিস্তানের নতুন বিদেশমন্ত্রীর সামনে আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটানোর মতো কঠিন কাজ অপেক্ষা করছে। কিন্তু এ কথা সত্যি যে, নতুন সরকার এই কাজে সেনা সংগঠনগুলির সহায়তা পাবে। আই এম এফ, ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স, কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করা এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সেনার সহায়তা প্রয়োজন – এই সত্যি পাকিস্তানের সব গণতান্ত্রিক সরকারের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। প্রধানমন্ত্রী শরিফ এবং পি পি পি-র আসিফ আলি জারদারির সেনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বেশ কিছুটা সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকার ফলে নতুন সরকার যে রাওয়ালপিন্ডি থেকে সাহায্য লাভ করবে, তা অনুমান করা যায়।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.