Author : Manoj Joshi

Originally Published The Tribune Published on Sep 29, 2022 Commentaries 5 Days ago

দেশটি এখনও আধুনিক ভূ-রাজনৈতিক পরিসরে তার সাম্রাজ্যবাদী উত্তরাধিকারকে কাজে লাগিয়ে চলেছে।

কেন ব্রিটেন এখনও গুরুত্বপূর্ণ
কেন ব্রিটেন এখনও গুরুত্বপূর্ণ

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যু দুঃখ ও স্মৃতিবেদনা উদ্রেককারী এক উপলক্ষ। তবে অনেকেই এ কথা ভেবে বিস্মিত হয়েছেন যে, কেন ব্রিটিশদের দ্বারা অত্যাচারিত ভারতের মতো প্রাক্তন উপনিবেশগুলি তাঁর মৃত্যুতে শোকপালন করছে। আংশিক ভাবে এটি আমাদের ঔপনিবেশিক অতীতের দ্ব্যর্থকতার সঙ্গে সম্পর্কিত। যে সেনাবাহিনী ব্রিটিশদের হয়ে ভারত দখলের কাজটি করেছিল, তার কেন্দ্রে ছিল ভারতীয় সৈনিকরা এবং ভারতীয় রাজন্যবর্গ নিজেদের মধ্যেই এক পক্ষ অবলম্বন করে অপর পক্ষের পরাজয়কে সুনিশ্চিত করেছিলেন।

এ কথা বোঝা কষ্টসাধ্য নয় যে, ভারতের কাছে ব্রিটেনের গুরুত্ব এক ঔপনিবেশিক প্রভু এবং তার পূর্বতন প্রজার সম্পর্কের চেয়ে গভীরতর। আমাদের সংসদ, বিচারব্যবস্থা, সামরিক ব্যবস্থা, উচ্চশিক্ষার ভাষা এবং আরও বহু ক্ষেত্রে ব্রিটিশ নীতির প্রভাব সুস্পষ্ট।

প্রধানমন্ত্রী কিংসওয়ে, যা ‘রাজপথ’ নামে পরিচিত, তার নাম পরিবর্তন করে ‘কর্তব্য পথ’ করার ঘটনা উদযাপন করলেও তিনি বা তাঁর সরকার কেউই ১৮৬০ সালে ব্রিটিশদের দ্বারা প্রবর্তিত কঠোর ইন্ডিয়ান পিনাল কোড বা ভারতীয় দণ্ডবিধির ব্যবহারে অনুশোচনা বোধ  করেননি, যেটির অধীনস্থ ১৪৪ নং ধারা ব্যবহার করে রাষ্ট্রদ্রোহের অছিলায় জনগণকে কারাগারে বন্দি করে গণবিক্ষোভকে দমন করা হয়। ১৯২৩ সালের সেকেলে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট অথবা ব্রিটিশদের দ্বারা সৃষ্ট ১৮৮৭ সালের ইনটেলিজেন্স ব্যুরোর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে সরকারের কোনও মাথাব্যথা নেই এবং উক্ত আইনগুলি বর্তমানেও সেই কাজই করে চলেছে যা করার জন্য এগুলি তৈরি করা হয়েছিল অর্থাৎ রাজনীতিবিদ এবং দেশে রাজনৈতিক কার্যকলাপের উপরে নজরদারি চালানো। শত্রু দেশের চরবৃত্তি বা অন্তর্ঘাতমূলক কাজকর্ম ঠেকানোর ক্ষেত্রে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর ভূমিকা ভুলে যাওয়াই ভাল।

১৯৪৮ সালে ব্রিটিশরা কাশ্মীর সংক্রান্ত আমেরিকার নীতিকে প্রভাবিত করে এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের কাছে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ভারতের দায়ের করা অভিযোগকে একটি আন্তর্জাতিক সমস্যায় রূপান্তরিত করতে সক্ষম হয়েছিল।

তবে ব্রিটেন শুধু মাত্র ভারতের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়। বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিসরে সুদক্ষ ভাবে তার ব্যাপক সাম্রাজ্যবাদী উত্তরাধিকারকে কাজে লাগিয়ে দেশটি এখনও এক বিশাল বৈশ্বিক ভূমিকা পালন করে চলেছে। সাম্রাজ্যবাদী অতীতের পাশাপাশি দেশটির শিল্প সংক্রান্ত ক্ষমতা দেশটিকে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী আর্থিক কেন্দ্রের পাশাপাশি বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত জ্ঞানের এক পীঠস্থান করে তুলেছে। একই সঙ্গে ব্যারিস্টারদের পেশাগত সংগঠন (ইনস অফ কোর্ট) এবং বিভিন্ন জ্ঞানচর্চার প্রতিষ্ঠান (রয়্যাল সোসাইটি) বৈশ্বিক মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটেন বৈশ্বিক মঞ্চে নিজের মত ও ভাবনাকে আমেরিকার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করে পথ চলার সিদ্ধান্ত নেয়। চার্চিলের এক কানাডিয়ান সহযোগী স্যার উইলিয়াম স্টিফেনসন, যাঁর কোড নাম ছিল ইনট্রেপিড, এ কথা সুনিশ্চিত করেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাব থেকে বেরিয়ে ব্রিটিশদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। এর ফলস্বরূপই ১৯৪০ সালে ব্রিটিশরা নিজেদের রেডার, জেট ইঞ্জিন এবং পারমাণবিক অস্ত্র সম্পর্কিত বেশ কিছু মূল্যবান বৈজ্ঞানিক গুপ্ত তথ্য আমেরিকানদের সঙ্গে ভাগ করে নেয়।

যুদ্ধকালীন সম্পর্ক বর্তমান সময়ের ফাইভ আইজ বা পঞ্চ অভিভাবকের জন্ম দিয়েছে, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড তাদের গোয়েন্দা পরিষেবার ক্ষেত্রে শুধু মাত্র তথ্য নয়, আধিকারিকদেরও আদানপ্রদান করে। এই দেশগুলির মধ্যে বিদ্যমান জোট এবং দ্বিপাক্ষিক চুক্তি দেশগুলিকে একত্র করে বর্তমান সময়ের সমস্যাগুলির নিরিখে এক বিরল শক্তিশালী যৌথ দৃষ্টিভঙ্গির সূচনা করেছে।

এই দেশগুলি প্রধানত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার ছত্রচ্ছায়ায় কাজ করলেও তার পটভূমি এবং বিশেষত্বের পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটেন তার কূটনীতিকদের এবং গোয়েন্দা পরিষেবা এম আই সিক্স-এর দক্ষতাকে ব্যবহার করে উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তার করে। তার অতীত অভিজ্ঞতার দৌলতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ব্রিটেনের কাছে মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ এশিয়ায় কী ঘটছে, সে সম্পর্কে গভীরতর ধারণা রয়েছে।

১৯৪৮ সালে ব্রিটিশরা কাশ্মীর সংক্রান্ত আমেরিকার নীতিকে যে ভাবে প্রভাবিত করেছিল এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের কাছে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ভারতের দায়ের করা অভিযোগকে একটি আন্তর্জাতিক সমস্যায় – যা আজও আমাদের তাড়া করে বেড়ায় – রূপান্তরিত করতে সক্ষম হয়েছিল, তা থেকেই এ কথা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ১৯৬২ সালে যখন ভারতের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে, তখন ব্রিটিশরা আমেরিকানদের প্ররোচিত করে, যাতে তারা কাশ্মীর ভাগের আলোচনায় পাকিস্তানকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নয়াদিল্লির উপরে চাপ সৃষ্টি করে।

১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার সাদ্দাম হুসেনের কুয়েত দখলের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিপ্রয়োগের সংকল্পের সুদৃঢ়করণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। একাধিক দিক থেকে দেখলে তখনই ব্রিটিশরা সম্ভবত শেষ বারের মতো এ হেন ভূমিকা পালন করেছিল। দ্বিতীয় বার এ হেন প্রয়াস বিপর্যয়কর বলে প্রমাণিত হয় যখন তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার সংক্রান্ত কাল্পনিক প্রচারে গা ভাসিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে সেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন, যা ইরাক ও সংশ্লিষ্ট অঞ্চলটিকে ধ্বংস করে দেয়।

নতুন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস কর ছাড়ের কথা বললেও দেশের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস বা জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রায় ভেঙে পড়েছে, ঠিক যেমন গত মাসে ভেঙে পড়েছে বৃহত্তম এয়ারক্র্যাফট ক্যারিয়ার এইচ এম এস প্রিন্স অফ ওয়েলস।

ব্লেয়ার ছিলেন শেষ প্রভাবশালী ব্রিটিশ নেতা এবং তাঁর কিছু গুরুতর ত্রুটি ছিল। তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত ব্রিটিশরা লিবিয়া এবং সিরিয়ার মতো আরও দু’টি দেশ ধ্বংসের নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

ব্রেক্সিট এ কথাই পুনর্ব্যক্ত করে যে, দেশটির রাজনৈতিক সম্প্রদায় এতটাই আত্মমগ্ন হয়ে পড়েছিল যে, তারা বাস্তবতার সঙ্গে যোগসূত্র হারিয়ে ফেলে। একটি রাজনৈতিক সত্তা হিসেবে দেশটি ডেভিড ক্যামেরন, টেরেসা মে এবং বরিস জনসনের মতো বিশেষত্বহীন নেতৃবৃন্দের অধীনে দিগ্‌ভ্রষ্ট হয়ে পড়েছে। এমনকি নতুন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস কর ছাড়ের কথা বললেও দেশের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস বা জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রায় ভেঙে পড়েছে, ঠিক যেমন গত মাসে ভেঙে পড়েছে বৃহত্তম এয়ারক্র্যাফট ক্যারিয়ার এইচ এম এস প্রিন্স অফ ওয়েলস।

এ সব কিছু সত্ত্বেও বৈশ্বিক পরিসরে ব্রিটেনকে এক অতিরঞ্জিত রূপদানকারী কারণগুলি অটুট রয়েছে। লন্ডন বিশ্বের অর্থনৈতিক রাজধানী হওয়ার পাশাপাশি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্র এবং আন্তর্জাতিক বন্ড জারি ও বাণিজ্য করার নিরিখে বৃহত্তম কেন্দ্র। প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের প্রেক্ষিতেও লন্ডন ইউরোপের রাজধানী এবং সেখানে মোট ইউনিকর্নের এক চতুর্থাংশ আয়োজিত হয়। রয়্যাল সোসাইটিগুলির ল্যান্সেট, নিউ সায়েন্টিস্ট ও নেচার-এর মতো বিজ্ঞান সংক্রান্ত পত্রিকাগুলির মাধ্যমে গবেষণালব্ধ তথ্যের আদানপ্রদান-সহ অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ এবং লন্ডনে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলি পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। ব্রিটেন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মদ উৎপাদন না করলেও সে দেশে ওয়াইন টেস্টিং সংক্রান্ত সর্বাধিক মূল্যবান শংসাপত্র প্রদান করা হয়।

ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ হল দেশটির ইনটেলিজেন্স পরিষেবা ও কূটনৈতিক পরিষেবার গুণমান অত্যন্ত ভাল থাকা এবং উভয় ক্ষেত্রেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সময়-পরীক্ষিত জোটের মাধ্যমে পরিষেবা দু’টি উল্লেখযোগ্য আন্তঃসহযোগিতার প্রমাণ দিয়েছে। পরিবর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটিশদের দ্বারা প্রদত্ত গুণমানসম্পন্ন ইনপুট এবং বিশ্লেষণ দ্বারা লাভবান হয়। তবে এর কোনওটিই এ কথা তুলে ধরে না যে, এক পক্ষ অপর পক্ষ দ্বারা ব্যবহৃত হচ্ছে। উভয় পক্ষই তাদের নিজ নিজ জাতীয় স্বার্থ সম্পর্কে সচেতন। ব্রিটিশরা এ কথা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিল, যখন ১৯৫৬ সালে সুয়েজ সঙ্কটের সময়ে মার্কিনরা তাদের পায়ের তলার জমি কেড়ে নেয়। অন্য দিকে আমেরিকানরাও বাস্তবের সম্মুখীন হয় যখন গ্রেনাডা আক্রমণের জন্য ব্রিটিশরা তাদের তীব্র সমালোচনা করে।


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ‘দ্য ট্রিবিউন’-এ।

মতামত লেখকের নিজস্ব।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.