Author : Mannat Jaspal

Occasional PapersPublished on Nov 12, 2022
ballistic missiles,Defense,Doctrine,North Korea,Nuclear,PLA,SLBM,Submarines

মূল্য ঠিক করা হবে কি হবে না: ভারতে কার্বন মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি স্থির করার পক্ষে যুক্তি

  • Mannat Jaspal

    ২০২১ সালের কনফারেন্স অফ পার্টিস ২৬ (কপ২৬) বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে দেশগুলিকে তাদের জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা ও তার সঙ্গে সম্পর্কিত রাষ্ট্রনির্ধারিত অবদান (এনডিসি) বাড়াতে উদ্বুদ্ধ করেছে। যাই হোক, নতুন করে নির্ধারিত এনডিসি এবং ২০৩০ সালের জন্য ঘোষিত অঙ্গীকারগুলি অপ্রতুল, এবং আদৌ প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যগুলির সঠিক অনুসারী নয়। ২০৩০ সালে নির্গমনের অনুমিত হ্রাস ৭.৫ শতাংশ, যা উষ্ণায়ন ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ৩০ শতাংশের চেয়ে অনেক কম। উল্লেখ্য, ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে থাকার জন্য আদর্শ ছিল ৫৫ শতাংশ। অনেক বিশ্লেষক মন্তব্য করেছিলেন যে কোভিড–১৯ অতিমারিটি সবুজ অ্যাজেন্ডার সঙ্গে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে সমন্বিত করার এবং ডিকার্বনাইজেশন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার একটি অনন্য সুযোগ ছিল। কিন্তু কোভিডের কারণে ২০২০ সালে নির্গমন হ্রাসের প্রভাব ক্ষণস্থায়ী ছিল। আসন্ন জলবায়ু সংকটের জরুরি প্রয়োজন ও মাত্রা কিন্তু দাবি করে সবুজ রূপান্তর বাধ্যতামূলক করার জন্য উচ্চাকাঙ্ক্ষী হতে হবে এবং সহযোগিতা বাড়াতে হবে। এই আলোচনায় অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক জলবায়ু নীতি স্থাপত্যে একটি কার্যকর উপকরণ হিসাবে কার্বন মূল্য নির্ধারণের ভূমিকা অন্বেষণ করা হয়েছে।

    আরোপণ: মন্নত জসপাল, “টু প্রাইস অর নট টু প্রাইস? মেকিং আ কেস ফর আ কার্বন প্রাইসিং মেকানিজম ফর ইন্ডিয়া,” ও আর এফ অকেশনাল পেপার নং ৩৬৮, সেপ্টেম্বর ২০২২, অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন

মূল্য ঠিক করা হবে কি হবে না: ভারতে কার্বন মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি স্থির করার পক্ষে যুক্তি

ভূমিকা

অর্থনীতিবিদদের মধ্যে একটি ব্যাপক ঐকমত্য রয়েছে যে জলবায়ু পরিবর্তন হল বাজার এবং নীতিগত ব্যর্থতার একটি সমন্বিত ফসল।[১] যেহেতু গ্রিনহাউস গ্যাস (জি এইচ জি’‌স) নির্গমনের খরচ পণ্য ও পরিষেবার দামে প্রতিফলিত হয় না, এবং অর্থনৈতিক কাজকর্মের একটি উপাদান হিসাবে জলবায়ুর যথেচ্ছ ব্যবহারের অনুমতি দেয়, তাই বিষয়টি একটি মারাত্মক বাজার ব্যর্থতার ইঙ্গিত দেয়।[২] এটি জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার ও অর্থনৈতিক বৃদ্ধির মধ্যে সংযোগকে স্থায়ী রূপ দেয়।[৩] তার উপর সম্ভাব্য উদ্ভাবকদের ক্ষেত্রে দুর্বল প্রণোদনা, রাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো, শক্তিসংক্রান্ত নেটওয়ার্ক ও অর্থের অপ্রতুলতার কারণে গবেষণা, উন্নয়ন ও পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তির জন্য বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় নীতির ক্ষেত্রে ব্যর্থতার মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানি ভর্তুকি এবং একটি বিকৃত করব্যবস্থা সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে।[৪]

এই প্রবণতা বিপরীত দিকে চালিত করতে কার্যকর জলবায়ু পরিবর্তন নীতি সহায়ক হবে। এক্ষেত্রে কার্বন মূল্যনির্ধারণ একটি ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পদ্ধতি হিসাবে বিবেচিত হয়, যা কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমনের সঙ্গে যুক্ত বাহ্যিকতাকে অভ্যন্তরীণ করে তোলে, এবং উৎপাদক, ভোক্তা ও করদাতাদের জন্য সর্বনিম্ন সম্ভাব্য খরচে ডলার প্রতি নির্গমন হ্রাসকে সর্বাধিক করে।[৫] কার্বনের উপর একটি মূল্য ধরা হলে তা কার্বনের সামাজিক খরচকে অন্তর্ভুক্ত করে, বাণিজ্যিক সংস্থাগুলিকে তাদের বিনিয়োগের পোর্টফোলিও ও উৎপাদন পদ্ধতিকে তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তুলতে বাধ্য করে, এবং ভোক্তাদের আচরণগত পদ্ধতি পরিবর্তন করতেও উৎসাহিত করে।[৬] এটি একটি বাজারবান্ধব প্রক্রিয়া প্রস্তাব করে যা অবাধ অর্থনীতির (‌লাসা ফেয়ার)‌ মতাদর্শকে মূর্ত করে তোলে, এবং বাণিজ্যিক সংস্থা ও ভোক্তাদের নির্গমন কমানোর খরচ ও নির্গমন অব্যাহত রেখে অর্জিত সুবিধাগুলির মধ্যে বেছে নেওয়ায় সুযোগ দেয়,‌ এবং এর ফলে সর্বনিম্ন খরচে পরিবেশগত সুবিধার সর্বাধিক্য নিশ্চিত করে।[৭]

মূল্যের মধ্যে বাহ্যিকতাকে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়ার ধারণাটি এসেছিল এক শতাব্দী আগে, যখন  অর্থনীতিবিদ আর্থার পিগু ‘‌দ্য ইকনমিক্স অফ ওয়েলফেয়ার’‌ (১৯২০)–এ যুক্তি দিয়েছিলেন যে, ব্যক্তি (এবং সংস্থাগুলি) আরোপিত খরচ বা অন্যদের দেওয়া সুবিধাগুলির কথা বিবেচনা না–করেই পদক্ষেপ করতে থাকবে, যদি না ব্যক্তির জন্য খরচের মধ্যে তাঁর কাজের একটি সামাজিক মূল্য অন্তর্ভুক্ত থাকে। কার্বনের  উপর একটি পিগুভিয়ান কর বসানো হলে তা নিশ্চিত করে যে জি এইচ জি নির্গমনের খরচ পণ্য বা পরিষেবার দামে প্রতিফলিত হবে।[৮]

কার্বন মূল্যকে দেখা হয় টেকসই ও জলবায়ুবান্ধব পথের দিকে ভবিষ্যতের বিনিয়োগ এবং ব্যবহার ও উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করার একটি কার্যকর হাতিয়ার হিসাবে। একই সঙ্গে মনে করা হয় এটি টেকসই ভাবে অতিমারি থেকে পুনরুদ্ধারকে সমর্থন করবে। কার্বনের উচ্চ মূল্য, নির্গমন বাণিজ্য থেকে নিলাম বৃদ্ধি এবং নতুন যন্ত্র থেকে আয়ের ফলে ২০২১ সালে কার্বন মূল্যনির্ধারণের আয় প্রায় ৮৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হিসাবে রেকর্ড করা হয়েছিল, যা ২০২০ সালের তুলনায় প্রায় ৬০ শতাংশ বেশি। অধিকন্তু, কার্বন মূল্য নির্ধারণ একটি কার্যকর রাজস্ব হাতিয়ার এবং সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির একটি বিশিষ্ট উৎস হতে পারে।[৯] সাধারণ কার্বন মূল্য নীতি তিনটি ক্ষেত্রে সরকারি রাজস্ব নিয়ে আসে: জলবায়ু সম্পর্কিত পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ, সাধারণ বাজেট, এবং আয়কর ছাড়।[১০] হিসাব করলে বোঝা যায় যে জীবাশ্ম জ্বালানিতে সরকারি ব্যয় থেকে যত পূর্ণকালীন চাকরির সুযোগ তৈরি হয় তার তিনগুণ চাকরি তৈরি করতে পারে টেকসই শিল্পে বিনিয়োগ।[১১] উন্নয়নশীল অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে এই বিনিয়োগগুলি জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে এবং ন্যায্য রূপান্তরের জন্য বিভিন্ন অরক্ষিত ক্ষেত্র ও জনসম্প্রদায়গুলিকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।[১২] অন্যদিকে পূর্বব্যবস্থা হিসাবে কার্বন মূল্য নির্ধারণের পদ্ধতি, যেমন ই ইউ কার্বন বর্ডার অ্যাডজাস্টমেন্ট মেকানিজম–এর মতো কার্যকর অভ্যন্তরীণ জলবায়ু নীতিগুলি তৈরি করা হলে তা সীমান্ত–শুল্কের প্রভাবগুলি অকার্যকর করে দিতে সাহায্য করতে পারে। এই ধারণাটি উন্নত দেশগুলি কার্বন লিকেজ এড়াতে সংরক্ষণবাদী কৌশল হিসাবে ক্রমশ বেশি করে বিবেচনা করছে।

এই আলোচনা জলবায়ু নীতিতে একটি কার্যকর উপকরণ হিসাবে কার্বন মূল্যের ক্রমবর্ধমান ভূমিকা অন্বেষণ করতে চায়। একটি সমন্বিত নীতির মিশ্রণের মধ্যে কার্বন মূল্য নির্ধারণ অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সুবিধা অর্জনের জন্য একটি ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পদ্ধতি এবং দক্ষ হাতিয়ার হিসাবে উত্থাপিত হয়েছে। ভারতের ক্ষেত্রে কার্বন বাজারের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরা হয়েছে সাম্প্রতিক শক্তি সংরক্ষণ (সংশোধন) বিল, ২০২২–এ, যা ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে সরকারকে একটি কার্বন ক্রেডিট ট্রেডিং স্কিম প্রতিষ্ঠার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, এবং এইভাবে একটি আনুষ্ঠানিক কার্বন বাজারের  ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে। এটি ২০৭০ সালের মধ্যে নেট–জিরো অর্থনীতির দিকে ভারতের পথ চলায় সহায়ক হতে পারে।[১৩]

এই আলোচনার লক্ষ্য বৈশ্বিক কার্বন মূল্য নির্ধারণের পদ্ধতি, প্রাথমিকভাবে কার্বন কর ও এমিশন ট্রেডিং সিস্টেমগুলির ভূচিত্র বোঝা এবং জাতীয় কার্বন বাজার ব্যবহার করে ভারতের একটি উপযুক্ত ডিকার্বনাইজেশন কৌশলে পৌঁছনোর জন্য বিশ্বব্যাপী জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়া। আলোচনার বাকি অংশ কার্বন মূল্য নির্ধারণের বিভিন্ন পদ্ধতি বর্ণনা করে; বর্তমান বিশ্বব্যাপী কার্বন মূল্যের ভূচিত্র পর্যালোচনা করে; এবং কার্বনের উপর একটি অন্তর্নিহিত মূল্য স্থাপনের জন্য   ভারতের গৃহীত ব্যবস্থাগুলির রূপরেখা দেয়। আলোচনাটি শেষ করা হয়েছে এমন একটি কার্বন মূল্য কাঠামোর পদ্ধতি প্রস্তাব করে যা ভারতের পক্ষে সবচেয়ে অনুকূল হবে।

১।‌ কার্বন মূল্য নির্ধারণের দিকে এগোনোর পথ

কার্বন করের সবচেয়ে উপযুক্ত হার নির্ধারণের জন্য বিভিন্ন পন্থা রয়েছে, এবং তা প্রায়শই প্রদত্ত এক্তিয়ারের মধ্যে করব্যবস্থার নীতিগত উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যগুলির উপর নির্ভর করে। করের হার একটি হ্রাসমূলক পদ্ধতি ব্যবহার করে নির্ধারণ করা যেতে পারে, যেখানে নির্ধারক মান হল দেশটি যে কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের স্তর অর্জন করতে আশা করে;‌ অথবা তা নির্ধারণ করা যেতে পারে কার্বন পদ্ধতির সামাজিক ব্যয় থেকে, যা প্রতি অতিরিক্ত মেট্রিক টন গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন থেকে হওয়া ক্ষতির মূল্য ডলারে পরিমাপ করে। এটি রাজস্ব পরিমাপ পদ্ধতি ব্যবহার করেও নির্ধারণ করা যেতে পারে, যেখানে করের হার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের রাজস্ব বিবেচনার উপর নির্ভর করে;‌ অথবা তা করা যেতে পারে শুধুই একটি বেঞ্চমার্কিং পদ্ধতি অনুসরণ করে, যেখানে করের হার ব্যবসায়িক অংশীদার বা প্রতিযোগী দেশগুলির করের হারের সঙ্গে সম্পর্কিত থাকে।[১৪]

কার্বনের মূল্য নির্ধারণের প্রক্রিয়াগুলি এই ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় যে মুনাফাকারী সংস্থাগুলি নির্গমন কমাতে থাকবে সেই পর্যায় অবধি যেখানে কার্বনের সামাজিক ব্যয়ের তুলনায় প্রান্তিক হ্রাস–খরচ কম হবে। কোনও সত্তার ক্ষেত্রে প্রান্তিক হ্রাস–খরচ হল নির্গমনের প্রতিটি অতিরিক্ত ইউনিট হ্রাস করার প্রান্তিক খরচ, যা নির্ভর করে কম–কার্বন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের গতি, অনুবর্তিতার খরচ, এবং সেই সঙ্গে সংস্থাগুলির ও ভোক্তাদের উচ্চ–কার্বন পণ্যগুলি কম–কার্বন পণ্য দিয়ে প্রতিস্থাপন করার সক্ষমতা সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর।[১৫] একটি সত্তার জন্য কার্বনের সামাজিক খরচ হল নির্গমনের একটি ইউনিটের প্রান্তিক ক্ষতির খরচ, এবং তা বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের একটি অতিরিক্ত ইউনিটের অর্থনৈতিক মূল্য উপস্থাপিত করে।[১৬]

বাজার বা মূল্যায়নভিত্তিক বিভিন্ন পলিসি ইন্সট্রুমেন্ট কার্বনের মূল্যের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে, এবং তা কার্যকরভাবে কার্বন হ্রাসের পথে নিয়ে যেতে পারে। এগুলিকে একটি সুস্পষ্ট বা অন্তর্নিহিত কার্বন মূল্য নির্ধারণের কৌশল হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যেতে পারে। এর মধ্যে কার্বন কর, ক্যাপ–অ্যান্ড–ট্রেড স্কিম, নির্গমন হ্রাস ক্রেডিট, পরিচ্ছন্ন শক্তির মান ও জীবাশ্ম জ্বালানি ভর্তুকি হ্রাস অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

চিত্র ১। [১৭]

সূত্র: বিশ্বব্যা‌ঙ্ক: স্টেট অ্যান্ড ট্রেন্ডস অফ কার্বন প্রাইসিং ২০২১

১। প্রত্যক্ষ কার্বন মূল্য

প্রত্যক্ষ কার্বন মূল্য হল সরকারের বাধ্যতামূলক আরোপিত মূল্য, এবং তা কার্বন সামগ্রীর উপর একটি মূল্য আরোপ করে। এটি উৎপাদক ও ভোক্তাদের জন্য একটি বাজার সংকেত হিসাবে কাজ করে, যাতে তারা উৎপাদন ও ব্যবহারের পরিচ্ছন্ন উৎসের দিকে অগ্রসর হয় এবং আরও সাশ্রয়ী কার্বন প্রশমন পথকে উৎসাহিত করে। এগুলি অর্জন করার একটি উপায় হল কার্বন কর এবং/অথবা ই টি এস (এমিশন ট্রেডিং সিস্টেম বা ক্যাপ–অ্যান্ড–ট্রেড), যা তাদের ক্রিয়াকলাপের জন্য নির্গমনকারীদের দায়ী হিসাবে ধরে এবং কার্বন ক্রেডিট–এর মাধ্যমে কার্বন নির্গমন কমানোর জন্য পুরস্কার প্রদানের মতো একটি ব্যবস্থা তৈরি করে;‌ আর অন্য একটি উপায় হল অভ্যন্তরীণ ছায়ামূল্য, যা বাণিজ্যিক সংস্থাগুলিকে সিদ্ধান্তগ্রহণ বা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করে। কীভাবে এই ক্ষেত্রটি তৈরি করা হল তার ভিত্তিতে এ থেকে বিভিন্ন সুবিধা পাওয়া যায়, যেমন সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধি, সবুজ শিল্প ও কর্মসংস্থান, কম–কার্বন বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা, শক্তি দক্ষতা ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা, এবং বায়ুর গুণমান উন্নত করা।[১৮]

ক। কার্বন কর

কার্বন করের মাধ্যমে কার্বনের উপর একটি নির্দিষ্ট মূল্য আরোপ করা হয় (জি এইচ জি নির্গমনে কার্বন ডাইঅক্সাইডের সমতুল্য), আর নির্গমন হ্রাসের পরিমাণ বাজার শক্তির উপর ছেড়ে দেওয়া হয়। এর উদ্দেশ্য হল জীবাশ্ম জ্বালানির খরচ বৃদ্ধি করা এবং জ্বালানি বদলের কৌশল ও শক্তি–দক্ষ প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের  প্রণোদনা দেওয়া।[১৯] এটি জীবাশ্ম জ্বালানির পণ্যচক্রের বিভিন্ন বিন্দুতে প্রয়োগ  করা যেতে পারে:‌ উজানে (উৎপাদন/নিষ্কাশনের সময়), মধ্যপ্রবাহে (বণ্টনের সময়), বা নিম্নধারায় (ব্যবহারের সময়)।[২০]

মূল্য, নির্গমন ক্ষেত্র, কর আরোপণ বিন্দু, প্রাপ্ত রাজস্ব সাধারণ জনসাধারণের ব্যয় বা নির্দিষ্ট নির্গমনহ্রাসকারী কার্যকলাপের জন্য বরাদ্দ করা, এবং করের এক্তিয়ারের বাইরে আন্তঃসীমান্ত সামঞ্জস্যের বিষয়গুলি সামগ্রিক কাঠামোর মধ্যেই রাখা উচিত এবং সেগুলির পর্যায়ক্রমিক পর্যালোচনা করা উচিত।[২১] অবশ্য এ কথা মাথায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে নির্গমন হ্রাসের আকারে মূল্য সংকেতের বাজারি প্রতিক্রিয়া  নির্ধারণ করা বা অনুমান করা কঠিন।[২২]

কার্বন কর থেকে যথেষ্ট রাজস্ব আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে, এবং উপকরণের কার্যকারিতা কর–রাজস্বের পরিমাণ ও ব্যবহারের উপর নির্ভর করে। শ্রম ও পুঁজির উপর বর্তমান বিকৃত কর কমানো হলে তা নিম্নআয়ের পরিবারের উপর আঘাত কমাতে সাহায্য করতে পারে, এবং নীতির কিছু সামাজিক খরচ অকার্যকর করে দিতে পারে। রাজস্বের অংশ ব্যবহার করে জলবায়ুবান্ধব প্রযুক্তি এবং কাঙ্খিত স্থিতিশীলতা সংক্রান্ত কর্মসূচিগুলিতে গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন করা উচিত।[২৩]

খ। এমিশন ট্রেডিং সিস্টেম ( টি এস)

ক্যাপ–অ্যান্ড–ট্রেড মডেল ব্যবহার করে সরকার একটি নির্দিষ্ট অনুবর্তিতা–সময়ের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রের জন্য অনুমতিযোগ্য নির্গমনের একটি সীমা (ক্যাপ) নির্ধারণ করে, এবং অনুমতিপত্রগুলি হয় নিলাম করা হয় বা মানদণ্ড অনুযায়ী বরাদ্দ করা হয়।[২৪] ই টি এস হল বাজারে অবাধে নির্গমন অনুমতিপত্র বরাদ্দ করা ও নিলামের একটি প্রচলিত মিশ্র পদ্ধতি। এভাবে যেমন নির্গমনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত হয়, তেমনই দাম বাজারের সরবরাহ ও চাহিদা দ্বারা নির্ধারিত হয়। অনুবর্তিতার মেয়াদকালে সংস্থাগুলি তাদের কার্বনহ্রাস ব্যয় কমাতে পারলে সেকেন্ডারি মার্কেটে তাদের অনুমতিপত্রগুলি এমন সংস্থাগুলির কাছে বিক্রি করতে পারে যাদের কার্বন হ্রাসের খরচ বেশি।[২৫]  এটি সর্বনিম্ন সম্ভাব্য খরচে নির্গমন হ্রাসের ব্যবস্থা করে। অনুবর্তিতার মেয়াদ শেষে অনুমতিপত্রগুলি সরকারের কাছে সমর্পণ করতে হয়। এই পরিকল্পনায় বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করা উচিত: নির্গমনের সর্বোচ্চ সীমার আকার ও স্তর, ক্ষেত্রগত বিস্তৃতি, সর্বোচ্চ সীমার বিস্তৃতির সুযোগ, কর আরোপণ বিন্দু, অনুমতিপত্র অবাধে বিতরণ বা বিক্রয় (নিলাম) করার সুযোগ, রাজস্ব বণ্টন ও ব্যবস্থাপনা, নির্গমন ও অনুমতিপত্রের পর্যবেক্ষণ, পরিমাপ ও যাচাইকরণ, খরচ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার উপর প্রভাব।[২৬]

কার্বন করের মতোই অনুমতিপত্র বিক্রি থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব আর্থিক রাজস্ব বৃদ্ধি  করবে, বিকৃত কর কমানোর সহায়ক হবে, এবং তা ক্লিন–টেক প্রোগ্রামে অর্থ বিনিয়োগের জন্য ব্যবহার করা যাবে। অন্যদিকে অনুমতিপত্র বিনামূল্যে বরাদ্দ করা হলে তাতে অনুমতিপত্রের মূল্যের সমতুল্য সম্পদ বর্তমান সংস্থাগুলির কাছে হস্তান্তর হওয়ার ঝুঁকি থেকে যাবে।[২৭] একটি ই টি এস–এ অনুমতির মূল্য বেশি বা অস্থির হলে তা নীতির কার্যকারিতা হ্রাস করতে পারে। তাই খরচের অনিশ্চয়তা এড়াতে এবং সংস্থাগুলির অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও প্রতিযোগিতামূলক ক্ষমতা নিশ্চিত করতে নির্গমন ব্যয় যাতে একটি সীমা অতিক্রম করে না–যায় বা একটি সীমার নিচে নেমে না–যায় তার জন্য সরকার প্রায়শই কিছু খরচ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এর মধ্যে রয়েছে: অফসেট, অ্যালাওয়েন্স ব্যাঙ্কিং (ভবিষ্যৎ অনুবর্তিতা মেয়াদকালে ব্যবহার করার জন্য রিজার্ভ ইউনিট) ও বরোয়িং (ভবিষ্যৎ অনুবর্তিতা মেয়াদকালের জন্য বরাদ্দ করা ইউনিট ব্যবহার করা), সেফটি ভালভ, প্রাইস কলার  ও মার্কেট স্টেবিলিটি রিজার্ভ।

একটি অফসেট প্রবিধান নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলিকে ই টি এস এক্তিয়ারের বাইরের নির্গমন হ্রাস ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়ে তাদের নিজস্ব নির্গমন হ্রাস সামাল দেওয়ার সুযোগ দেয়, এবং ক্যাপ–অ্যান্ড–ট্রেড ব্যবস্থাকে নির্গমন–হ্রাস–ঋণ ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারে। অ্যালাওয়েন্স ব্যাঙ্কিং অ্যান্ড বরোয়িং ব্যবস্থা ভবিষ্যৎ মেয়াদে  (ব্যাঙ্কিং) অনুমতিপত্র স্থানান্তর করার অনুমতি দিয়ে বা ভবিষ্যৎ সময়ের  অনুমতিপত্রগুলিকে আগেই ব্যবহার করার অনুমতি দিয়ে সংস্থাগুলিকে একাধিক সময়দিগন্ত জুড়ে তাদের নির্গমন বাণিজ্য চালানোর অনুমতি দেয়। এটি সংস্থাগুলিকে কার্বন হ্রাসের জন্য ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সবচেয়ে ভাল পদ্ধতি তৈরি করতে বিভিন্ন মেয়াদসীমা জুড়ে অগ্রাধিকার স্থির করার নমনীয়তা দেয়। ব্যাঙ্কিং অ্যান্ড বরোয়িং বার্ষিক ভিত্তির পরিবর্তে ক্রমবর্ধমান নির্গমনের উপর সর্বোচ্চ সীমা সংজ্ঞায়িত করে। সেফটি ভালভ হল বিক্রয়যোগ্য অনুমতিপত্রগুলির মূল্যের একটি সর্বোচ্চ সীমা, আর এর সঙ্গে সরকার একটি পূর্বনির্ধারিত মূল্যে অতিরিক্ত অনুমতিপত্র দিয়ে থাকে। অবশ্য এভাবে সর্বোচ্চ নির্গমন সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। কিন্তু সেফটি ভালভের সর্বোচ্চ সীমাকে নিম্নতম মূল্যের সঙ্গে যুক্ত করে প্রাইস কলার, যা নিলামের জন্য ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করে বা সরকারের পূর্বনির্ধারিত মূল্যে অনুমতিপত্র কিনে নেওয়ার ব্যবস্থা করে। কস্ট কন্টেনমেন্ট রিজার্ভ (সি সি আর) হল একটি পরিমাণভিত্তিক পরিমাপ, যা একটি রিজার্ভে অনির্ধারিত অনুমতিপত্র স্থানান্তর করে। এভাবে যদি ব্যবস্থার মধ্যে মোট অনুমতিপত্রের সংখ্যা পূর্বনির্ধারিত সীমার বেশি হয় বা তার নিচে চলে  যায়, তবে এগুলি বাজার থেকে সরানো হয় বা বাজারে প্রবেশ করানো হয়। অবশ্য সতর্ক পরিকল্পনা ছাড়া এই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রশমন ব্যয়ের নিশ্চয়তা বৃদ্ধি কিন্তু নির্গমন হ্রাসের পরিমাণের নিশ্চয়তা হ্রাস করতে পারে।[২৮]

সারণি ১। কার্বন কর বনাম ই টি এস

দ্রষ্টব্য: উভয় ব্যবস্থাতেই নির্গমনের উপর একটি মূল্য নির্ধারণ করে কার্বনের ব্যয়কে অভ্যন্তরীণ করে তোলা হয়, তবে তাদের পদ্ধতি ভিন্ন।
সূত্র: লেখকের নিজস্ব।

গ। আন্তর্জাতিক ক্রেডিট ব্যবস্থাবেসলাইন   ক্রেডিট ব্যবস্থা

প্যারিস চুক্তির ধারা ৬ (কিয়োটো প্রোটোকলের ১২ অনুচ্ছেদ) অনুসারে, নির্গমন হ্রাস লক্ষ্যমাত্রা (অ্যানেক্স বি পার্টি) স্থির করার পর শিল্পোন্নত দেশগুলি উন্নয়নশীল দেশগুলি থেকে সার্টিফায়েড এমিশন রিডাকশন (সি ই আর) ক্রেডিট কিনতে পারে। এমন প্রতিটি ক্রেডিট এক টন কার্বন ডাইঅক্সাইডের এর সমতুল্য। তারা তাদের কিয়োটো লক্ষ্য পূরণ করতে অক্ষম হলে তা অফসেট হিসাবে কাজ করে।[২৯] এই নির্গমন ঋণ সেই নির্গমনকারীদের জন্য উপলব্ধ হয় যারা সফলভাবে নির্ধারিত সীমার নিচে নির্গমন হ্রাস করে; তারপর তারা আন্তর্জাতিক বাজারে এই ঋণ বিক্রি করে দিতে পারে। এটিকে বেসলাইন অ্যান্ড ক্রেডিট সিস্টেম হিসাবেও উল্লেখ করা হয়, যা একটি আন্তর্জাতিক ক্যাপ–অ্যান্ড–ট্রেড মেকানিজমের জন্য নমনীয়তা প্রদান করে।[৩০]

ক্লিন ডেভেলপমেন্ট মেকানিজম হল আন্তর্জাতিক মানসম্মত নির্গমন অফসেট ব্যবস্থা, যা জলবায়ু পরিবর্তনের উপর রাষ্ট্রপুঞ্জের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন (ইউ এন এফ সি সি সি) দ্বারা বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যের সুবিধার্থে পরিচালিত হয়। যাই হোক, কার্বন ক্রেডিট মার্কেটের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার পরিপ্রেক্ষিতে ক্রমশই প্রাধান্য পেয়েছে এবং বাজারে আধিপত্য বিস্তার করছে অনেক স্বাধীন (যেমন গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড, ভেরিফাইড কার্বন স্ট্যান্ডার্ড) বা অভ্যন্তরীণ মান (ক্যালিফোর্নিয়া কমপ্লায়েন্স অফসেট প্রোগ্রাম, অস্ট্রেলিয়া এমিশনস রিডাকশন ফান্ড, রিপাবলিক অফ কোরিয়া অফসেট ক্রেডিট মেকানিজম)।[৩১]

ঘ। অভ্যন্তরীণ কার্বন মূল্য

বিশ্বব্যাপী কর্পোরেশনগুলি তাদের ঝুঁকি–মূল্যায়ন কাঠামোতে জলবায়ু ঝুঁকি ও সুযোগগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা স্বীকার করতে শুরু করেছে, এবং কার্বন মূল্যকে মূলধন বরাদ্দ ও বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য একটি কার্যকরী উপকরণ হিসাবে বিবেচনা করছে। অতএব, বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থা অভ্যন্তরীণ কার্বন মূল্য নির্ধারণ ব্যবস্থা স্বেচ্ছায় ব্যবহার করছে ভবিষ্যৎ ধাক্কা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য, জলবায়ু সম্পর্কিত ভৌতিক ও রূপান্তরের ঝুঁকির সঙ্গে  সম্পর্কিত মাত্রা পরিমাপ করার জন্য, এবং সেই সঙ্গে কার্বন মূল্য সংক্রান্ত সম্ভাব্য সরকারি বিধিগুলি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য একটি আগাম পদক্ষেপ হিসাবে৷ এটি সাধারণত ছায়া কার্বন মূল্যের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়, যেখানে একটি অনুমানমূলক কার্বন খরচ প্রতি টন কার্বন ডাইঅক্সাইডের নির্গমনের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এটি একটি সংস্থার বিস্তৃত দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগুলিতে জলবায়ু–সম্পর্কিত ঝুঁকি ও সুযোগগুলি শনাক্ত করতে এবং সংহত করতে সহায়তা করে, এবং সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ কার্বন নিরপেক্ষতা লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় অফসেটের ভিত্তিতে একটি অন্তর্নিহিত মূল্যনির্ভর মূলধনী বরাদ্দ ও বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াগুলিকে চালিত করে। [৩২]

২। অন্তর্নিহিত কার্বন মূল্য

কিছু নির্দিষ্ট আদেশ বা সরকারি নীতি রয়েছে যা সরাসরি কার্বন নির্গমনের উপর মূল্য না–ধরলেও জি এইচ জি হ্রাসের জন্য অভিন্ন কর্মক্ষমতা মান নির্ধারণ করে। সেগুলি প্রযুক্তি ও কর্মক্ষমতা–ভিত্তিক মান নির্ধারণ করে, এবং ধীরে ধীরে জীবাশ্ম জ্বালানিতে ভর্তুকি তুলে দিয়ে সেগুলিকে টেকসই/নবায়নযোগ্য শক্তির তুলনায় আরও ব্যয়বহুল করে তুলে জি এইচ জি  নির্গমন হ্রাস করার জলবায়ু উদ্দেশ্যগুলি পূরণ করার চেষ্টা করে।

ক। কমান্ডঅ্যান্ডকন্ট্রোল প্রবিধান

নির্গমন মাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবেশের গুণমান রক্ষা করতে প্রচলিত পরিবেশ নীতি প্রযুক্তি ও কর্মদক্ষতা–ভিত্তিক মান ব্যবহার করে। প্রযুক্তিভিত্তিক মানগুলির জন্য সংস্থাগুলিকে নির্দিষ্ট শক্তিদক্ষ প্রক্রিয়া, সরঞ্জাম বা পদ্ধতিগুলি ব্যবহার করতে হয়, যদিও সেগুলির নির্গমন হ্রাসের পরিমাণের কোনও নির্দিষ্ট লক্ষ্য নেই। অন্যদিকে কর্মদক্ষতা–ভিত্তিক মান কিন্তু দূষণ নির্গমনের অনুমতিযোগ্য মাত্রা বা অনুমোদিত নির্গমন হার নির্দিষ্ট করে, এবং তারপর নির্গমন হ্রাসের প্রক্রিয়াগুলির ভার ছেড়ে দেয় নিয়ামক সত্তার বিবেচনার উপর।[৩৩] পরিবেশগত ও অর্থনৈতিকভাবে উচ্চতর প্রযুক্তির বিকাশ ও গ্রহণের জন্য উচ্চ খরচের পাশাপাশি দুর্বল প্রণোদনার কথা মাথায় রাখলে বলতেই হবে যে প্রকৃতিগতভাবে এই ধরনের মানভিত্তিক নীতির সুযোগ ও প্রভাব সীমিত। এর আওতার মধ্যে বাজারভিত্তিক উপকরণগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হলে তা ব্যয়কার্যকর নয় এমন ফলাফলগুলি কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করতে পারে।

খ। ক্লিন এনার্জি স্ট্যান্ডার্ড

পরিচ্ছন্ন শক্তি মান বা ক্লিন এনার্জি স্ট্যান্ডার্ড (সি ই এস) হল একটি বাজারভিত্তিক ও প্রযুক্তি–নিরপেক্ষ পদ্ধতি, যা শক্তি ক্ষেত্রকে শক্তির কম বা অ–নির্গমনকারী উৎসগুলি ব্যবহার করতে উৎসাহিত করে। জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা হ্রাস করার উপায় হিসাবে শিল্প ও বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ গ্রাহকদের নিজেদের বিদ্যুতের প্রয়োজনের একটি নির্দিষ্ট শতাংশ পূরণ করতে বাধ্য করা হয় পরিচ্ছন্ন শক্তির উৎস থেকে। কার্বনের মূল্য নির্ধারণ ঘিরে চ্যালেঞ্জিং রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে পরিচ্ছন্ন শক্তি মানগুলিকে প্রায়ই বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে কার্বনের মূল্য নির্ধারণের জন্য একটি সাশ্রয়ী ও রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য বিকল্প হিসাবে দেখা হয়। যে সংস্থাগুলি পরিচ্ছন্ন শক্তি মানগুলির লক্ষ্য বা চৌকাঠ অতিক্রম করে, তারা শক্তি সঞ্চয়  শংসাপত্রগুলি পেতে পারে, এবং তা শক্তি বিনিময়ের জন্য লেনদেন করা যেতে পারে। এই ব্যবস্থাটি ই টি এস–এর সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ, এবং সবচেয়ে সাশ্রয়ী ও দক্ষ পদ্ধতিতে উচ্চ–কার্বন–নির্গমনকারী শক্তির তীব্রতা কমাতে বাজারের নীতির উপর নির্ভরশীল।[৩৪]

গ। জীবাশ্ম জ্বালানি ভর্তুকির অবসান

অনেক দেশ তাদের বৃদ্ধি ও উন্নয়নের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য জীবাশ্ম জ্বালানিতে বড় ধরনের ভর্তুকি দেয়। এটি সেই দেশগুলির জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে যেখানে পুনর্নবীকরণযোগ্য খাতে উদ্ভাবন এবং বৃদ্ধি এখনও গতি পায়নি। যাই হোক, জীবাশ্ম জ্বালানি ভর্তুকির ধীরে ধীরে অবসান ঘটানো হলে তা জ্বালানির জন্য একটি সর্বোত্তম মূল্য অর্জনের পাশাপাশি শক্তি দক্ষতা ও জ্বালানি–পরিবর্তন প্রযুক্তির জন্য প্রণোদনা প্রদানের একটি কার্যকর উপায় হতে পারে (যা একটি সুস্পষ্ট কার্বন মূল্য বাস্তবায়নের সঙ্গে তুলনীয়)।[৩৫] জীবাশ্ম জ্বালানি ভর্তুকিকে প্রায়শই ‘‌সরকারের ব্যর্থতা’‌ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়, যা বাজারের ব্যর্থতার অবস্থাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। কয়েক বছর ধরে দরিদ্রদের সহায়তার লক্ষ্যে এই ভর্তুকিগুলি পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার বিষয়ে উল্লেখযোগ্য মতৈক্য হয়েছে। ২০০৯ সালে জি২০ নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে বলা হয়েছিল, “জীবাশ্ম জ্বালানির ভর্তুকি সংস্কারের অর্থনৈতিক ও জলবায়ু সুবিধাগুলি উল্লেখযোগ্য হতে পারে। অদক্ষ জীবাশ্ম জ্বালানি ভর্তুকি অপব্যয়কে উৎসাহিত করে, আমাদের শক্তি নিরাপত্তা হ্রাস করে, পরিচ্ছন্ন শক্তির উৎসগুলিতে বিনিয়োগে বাধা দেয়, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদ মোকাবিলার প্রচেষ্টাকে দুর্বল করে।”[৩৬]

২।‌ গ্লোবাল কার্বন প্রাইসিং মেকানিজমএকটি পর্যালোচনা

বিশ্বব্যাপী কর এবং এমিশন ট্রেডিং সিস্টেম (ই টি এস) সহ ৬৮টি কার্বন প্রাইসিং ইন্সট্রুমেন্ট (সিপিআই) কাজ করছে ,এবং আরও তিনটি স্বল্পমেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য নির্ধারিত রয়েছে।[৩৭]  যেহেতু এই আলোচনার উদ্দেশ্য ভারতের জন্য একটি জাতীয় কার্বন মূল্য নির্ধারণের পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত করা, তাই আলোচনাটি শুধু কার্বন কর এবং ই টি এস প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। পর্যালোচনার জন্য বৈশ্বিক কার্বন মূল্য নির্ধারণের পদ্ধতিগুলি খতিয়ে দেখা কাজের হবে, যাতে করে সর্বোত্তম অনুশীলন ও শেখার সুযোগ শনাক্ত করার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলের ও বাস্তবায়নের বিভিন্ন সময়সীমার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা যায়।

সারণি ২ ও ৩ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চিন, নিউজিল্যান্ড, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র, সুইজারল্যান্ড, ব্রিটেন, আঞ্চলিক গ্রিনহাউস গ্যাস উদ্যোগ এবং চিনের সাতটি প্রদেশের (‌বেজিং, সাংহাই, তিয়ানজিন, চংকিং, শেনজেন, গুয়াংডং ও হুবেই)‌ সুপ্রান্যাশনাল, ন্যাশনাল ও সাবন্যাশনাল স্তরের ই টি এস সিস্টেমের একটি তুলনা উপস্থাপন করে। । সারণি ৪ আর্জেন্টিনা, কানাডা, চিলি, কলম্বিয়া, আয়ারল্যান্ড, জাপান, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, মেক্সিকো ও নরওয়ের আন্তর্জাতিক কার্বন কর ব্যবস্থার একটি তুলনা উপস্থাপন করে।

কার্বন মূল্যের নীতিগুলি খতিয়ে দেখার জন্য সেই দেশগুলিকে নির্বাচিত করা হয়েছিল যেগুলি তাদের ক্ষেত্রগত বিস্তার, কর আরোপণ বিন্দু, বরাদ্দের পদ্ধতি, মূল্য নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা, রাজস্ব পুনর্বণ্টন এবং ছাড়ের আদেশে বৈচিত্র্যময়। তিনটি টেবিলের জন্যই ডেটা বিশ্বব্যাঙ্কের কার্বন প্রাইসিং ড্যাশবোর্ড থেকে নেওয়া হয়েছে।

সারণি ২:‌ বৈশ্বিক এমিশন ট্রেডিং সিস্টেম–এর পর্যালোচনা (সুপ্রান্যাশনাল ও ন্যাশনাল)[৩৮]

দ্রষ্টব্য: ‌টিসিও২ই = টন (টি) কার্বন ডাইঅক্সাইড (সিওটু) সমতুল্য (ই); জিএইচজি = গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন; এন২০ = নাইট্রাস অক্সাইড
পিএফসি’‌স = পারফ্লুরোকেমিক্যালস; এমটিসিও২ই = মেট্রিক টন কার্বন ডাইঅক্সাইড সমতুল্য; সিএইচ৪ = মিথেন; এনএফ৩ = নাইট্রোজেন ট্রাইফ্লুরাইড;‌ এসএফ৬ = সালফার হেক্সাফ্লোরাইড; এইচএফসি’‌স = হাইড্রোফ্লুরোকার্বন
সূত্র: বিশ্বব্যাঙ্ক কার্বন প্রাইসিং ড্যাশবোর্ড

সারণি ৩:‌ এমিশন ট্রেডিং সিস্টেম (‌সাব–ন্যাশনাল)‌

দ্রষ্টব্য: টিসিও২ই = টন (টি) কার্বন ডাইঅক্সাইড (সিওটু) সমতুল্য (ই); জিএইচজি = গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন; এমটিসিও২ই = মেট্রিক টন কার্বন ডাই অক্সাইড সমতুল্য
সূত্র: বিশ্বব্যাঙ্ক কার্বন প্রাইসিং ড্যাশবোর্ড

সারণি ৪:‌ বৈশ্বিক কার্বন ট্যাক্স মেকানিজম–গুলির পর্যালোচনা

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.