Author : Kabir Taneja

Originally Published Hindustan Times Published on Apr 09, 2022 Commentaries 7 Days ago

বেশ কিছু পশ্চিমি দেশ এবং বিশ্লেষক দ্বারা হঠাৎ করে বিদেশি যোদ্ধার ধারণা সমর্থিত হওয়ার ঘটনা তাদের সুবিধাবাদী মনোভাব এবং দ্বিচারিতাকেই তুলে ধরে।

ইউক্রেনের যুদ্ধে বিদেশি যোদ্ধাদের অস্ত্র তুলে নেওয়ার ঝুঁকি এবং বিপদ
ইউক্রেনের যুদ্ধে বিদেশি যোদ্ধাদের অস্ত্র তুলে নেওয়ার ঝুঁকি এবং বিপদ

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ একাধিক ক্ষেত্রে এক বিপজ্জনক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (ইউ এস) এবং নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো) দ্বারা সমর্থিত ইউরোপ কর্তৃক কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করা এবং প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রেক্ষিতে আগামী সপ্তাহগুলিতেও যে কিভ এবং মস্কোর সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না, তা বলাই বাহুল্য। এই অস্থির অবস্থার মধ্যে দেশীয় নাগরিক এবং ‘বিদেশি যোদ্ধা’দের অস্ত্র তুলে নেওয়ার পক্ষে ইউক্রেনের সমর্থন এবং পশ্চিমি নেতাদের প্রচার এক আশঙ্কাজনক ধারার জন্ম দিয়েছে।

খারকিভ ইউনিভার্সিটিতে পাঠরত তামিলনাড়ুর বাসিন্দা এক ভারতীয় নাগরিক রুশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইউক্রেনের দলে যোগদান করেছে। ব্রিটেনের বিদেশ সচিব লিজ ট্রুস রুশদের সঙ্গে লড়তে ইউক্রেনের উদ্দেশে যাত্রা করা ব্রিটিশ নাগরিকদের সমর্থন জানিয়েছেন এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশও এই যুদ্ধে লড়তে আগ্রহী নাগরিকদের প্রতি উদাসীন মনোভাব দেখিয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কির মতে, সে দেশের সমর্থনে অস্ত্র তুলে নেওয়ার জন্য ১৬,০০০ বিদেশি নাগরিক নিজেদের নাম নথিভুক্ত করেছেন।

ব্রিটেনের বিদেশ সচিব লিজ ট্রুস রুশদের সঙ্গে লড়তে ইউক্রেনের উদ্দেশে যাত্রা করা ব্রিটিশ নাগরিকদের সমর্থন জানিয়েছেন এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশও এই যুদ্ধে লড়তে আগ্রহী নাগরিকদের প্রতি উদাসীন মনোভাব দেখিয়েছে।

কোনও এক উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিদেশি নাগরিকদের এক দেশ থেকে অন্য দেশে যুদ্ধে যোগদান করার জন্য যাওয়ার ঘটনা নতুন নয় এবং আমেরিকান ও স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধের মতো সংঘাতের ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটতে দেখা গিয়েছে। যদিও সাম্প্রতিক কালে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়ার ঘটনাকে বিশ্বব্যাপী জিহাদি আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য রূপে দেখা হচ্ছে, বিশেষ করে সিরিয়া এবং ইরাকে তথাকথিত ইসলামিক রাষ্ট্রে (আই এস) যোগদান করার জন্য ইউরোপ থেকে মুসলিমদের দেশগুলির উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া। ফলে এই ধারাটিকে ভাল ভাবে বুঝতে এবং এ হেন যাতায়াত হ্রাস করতে একাধিক তত্ত্বগত ও নীতিগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। যদিও ইউক্রেনের ক্ষেত্রে একই রকমের নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঝুঁকিগুলিকে শুধু মাত্র গ্রহণযোগ্য কৌশলগত প্রতিক্রিয়া রূপেই দেখা হচ্ছে, এমনটা নয়। সেগুলিকে দেশটির মধ্যে এক বৃহৎ অভ্যুত্থানের পরিকাঠামো গড়ে তোলার প্রচারেও কাজে লাগানো হচ্ছে।

বেশ কিছু পশ্চিমি দেশ এবং বিশ্লেষক দ্বারা হঠাৎ করে বিদেশি যোদ্ধার ধারণা সমর্থিত হওয়ার ঘটনা তাদের সুবিধাবাদী মনোভাব এবং দ্বিচারিতাকেই তুলে ধরে। আই এস-এর হয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অনেক ইউরোপীয় নাগরিক বর্তমানে ইরাক ও সিরিয়ার অস্থায়ী কারাগারে আটক রয়েছেন। এই সব নাগরিককে পুনর্বাসন দেওয়া যাবে, না কি তাঁদের নিজেদের দেশে কারারুদ্ধ করে রাখা হবে অথবা নিষিদ্ধ সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের দরুন সরাসরি তাঁদের নাগরিকত্ব বাতিল বা খারিজ করা হবে– এর মধ্যে কোনটি সঠিক পদক্ষেপ, সে বিষয়ে পশ্চিমি দেশগুলি দ্বিধাগ্রস্ত। পাশাপাশি পাশ্চাত্যে তীব্র দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠী এবং রাজনীতির উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে ইউক্রেনের মতো একটি সংঘাতের মঞ্চকেই বা কী ভাবে এক আদর্শগত আঁতুড়ঘর হয়ে ওঠা থেকে বিরত রাখা সম্ভব?

বিশ্লেষকেরা লক্ষ করেছেন যে, তীব্র দক্ষিণপন্থী, নিও-নাৎসি এবং শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী গোষ্ঠীগুলি কেবল মাত্র রাজনৈতিক ভাবেই শক্তিশালী হয়নি, তারা কৌশলগত ভাবেও সংগঠিত হয়েছে বা হচ্ছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল হিলে আক্রমণের ঘটনার পরে আমেরিকান সেনাবাহিনীতে তীব্র দক্ষিণপন্থী এবং শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী সমর্থকদের কড়া হাতে দমনের পেন্টাগনের প্রচেষ্টাকে জোরালো করে তোলেন। ইউক্রেনে যুদ্ধরত এই যোদ্ধাদের যুদ্ধাপরাধের মতো ঘটনার পর্যবেক্ষণ, সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রক নিয়মাবলি এবং সমাজের মূল স্রোতে পুনরায় ফিরিয়ে আনার কাজগুলি কী ভাবে সম্ভব হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। দ্বিচারিতার ফলে জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকির প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রগুলি দ্বারা বিদেশি যোদ্ধা সংক্রান্ত সব পদক্ষেপ ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে।

২০১৫ সালে ভারতও আই এস দ্বারা সৃষ্ট হুমকির কথা বিবেচনা করে বিদেশি যোদ্ধার বিষয়টির প্রতি নিজের নীতি ও আইনি পদক্ষেপ সশক্তকারী দেশগুলির একটি হয়ে ওঠে। এমনকি তখনও এই পদক্ষেপ সিরিয়া অথবা আফগানিস্থানে আই এস-এ ভারতীয়দের অংশগ্রহণের বিক্ষিপ্ত ঘটনানির্ভর ছিল না। বরং সরকার তখন এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয় যখন ইরাকে কারবালা এবং নজফ-এর মতো জায়গাগুলিতে আই এস আক্রমণের হাত থেকে শিয়া ধর্মস্থানগুলি রক্ষার্থে দিল্লিস্থিত শিয়া গোষ্ঠী অঞ্জুমান-এ-হায়দরির আহ্বানে সহস্রাধিক শিয়া মুসলিম যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। ভারত আই এস-এ যোগদানকারী বেশ কিছু নাগরিককে পুনরায় ফিরিয়ে আনলেও অন্যান্য অংশগ্রহণকারীকে ফিরিয়ে নিতে অস্বীকার করেছে, যে হেতু শেষোক্তদের আইনত এবং সামাজিক ভাবে পুনর্সংযুক্তিকরণের প্রক্রিয়াটি তার কাছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সংঘর্ষের বেসরকারিকরণের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা উদ্বেগজনক। উদাহরণস্বরূপ, ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ মজবুত করতে রাশিয়ার বেসরকারি ভাড়াটে সেনাদল ওয়াগনর গ্রুপকে কাজে লাগানো, ২০২০ সালের নাগরনো কারাবাখ যুদ্ধে তুরস্কের সিরিয়া থেকে ভাড়া করা যোদ্ধাদের ব্যবহার ইত্যাদির কথা বলা যায়। ন্যাটোর মতো মিত্রশক্তি যখন এক দিকে সামরিক ভাবে অংশগ্রহণ করতে ইতস্তত বা বিলম্ব করছে, অন্য দিকে তখন প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে ইউক্রেনে লড়াই করার জন্য বিদেশি নাগরিকদের ব্যবহার করা বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। এর ফলে সংঘাত কৌশলের উপরে প্রভাব এবং ‘এক জনের যুদ্ধ হল সন্ত্রাস আর এক জনের স্বাধীনতার লড়াই’ — এই তর্ক গুরুত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.