Originally Published The Times of India Published on Nov 13, 2022 Commentaries 14 Days ago
ভারতের কাছে শি জিনপিংয়ের ভাষণের গুরুত্ব
ভারতের কাছে শি জিনপিংয়ের ভাষণের গুরুত্ব

চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রায়ই বলেন যে চিনকে বুঝতে হলে কমিউনিস্ট পার্টিকে বুঝতে হবে। গত বছর চিনা কমিউনিস্ট পার্টি তার শতবর্ষ উদযাপন করেছে। এই ১০০ বছরে পার্টি একটি অসংগঠিত গেরিলা বাহিনী থেকে এমন একটি বাহিনীতে পরিণত হয়েছে যেটি শুধু পৃথিবীর ছয় ভাগের এক ভাগেরও বেশি মানুষকেই নিয়ন্ত্রণ করে না, একটি দরিদ্র জাতিকে দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে রূপান্তরিত করেছে। ১৯৮০–১৯৯০–এর দশকের মহাপ্রলয় সোভিয়েত ইউনিয়নকে ছিন্নভিন্ন এবং পূর্ব ইউরোপে ভ্রাতৃপ্রতিম শাসনগুলিকে ধ্বংস করে দেয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে চিনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিসিপি) টিকে ছিল কারণ এটি রাজনৈতিক শাসনের জন্য খাপ খাইয়ে নিতে এবং প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল।

ন্যাশনাল কংগ্রেস, যা ১৬ অক্টোবর চিনে শুরু হয়েছিল, তা এমন একটি প্রতিষ্ঠান এবং একটি অনুশীলন যা এক দশকে দুবার সংঘটিত হয়, এবং গণতন্ত্রের নির্বাচনী উন্মাদনার স্থানটি পূরণ করে।

গণতন্ত্র ও সিসিপি–র মধ্যে যে গঠনগত বিরাট পার্থক্য রয়েছে তা মনে রাখলে রাজনৈতিক উন্নয়নগুলি একজন সাধারণ পর্যবেক্ষককে বিভ্রান্ত করতে পারে। যদিও চিন একটি একদলীয় রাষ্ট্র রয়ে গেছে যেখানে তার ১.৪ বিলিয়ন জনগণ সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের নেতা নির্বাচন করতে পারে না, সিসিপি কিন্তু এমন রাজনৈতিক প্রক্রিয়া তৈরি করেছে যা শাসক ও শাসিতদের মধ্যে সংলাপ বজায় রাখে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি গণতন্ত্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিতর্ক একটি প্রতিষ্ঠান, যা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করে। একইভাবে অন্যত্র রাজনৈতিক দলগুলি ইসতেহারের মাধ্যমে তাদের কর্মসূচি সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করে। ন্যাশনাল কংগ্রেস, যা ১৬ অক্টোবর চিনে শুরু হয়েছিল, তা এমন একটি প্রতিষ্ঠান এবং একটি অনুশীলন যা এক দশকে দুবার সংঘটিত হয়, এবং গণতন্ত্রের নির্বাচনী উন্মাদনার স্থানটি পূরণ করে। কংগ্রেস চিনের রাজনৈতিক ক্যালেন্ডারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যা পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য নীতি নির্ধারণ করার পাশাপাশি নেতৃত্বের আসনগুলি পূর্ণ করে। ১৬ অক্টোবর শি তাঁর কাজের প্রতিবেদন পেশ করেন যাতে তিনি তাঁর ‘‌অর্জন’‌ ও ভবিষ্যৎ নীতির গতিপথের রূপরেখা তুলে ধরেন।

এক দশকের রিপোর্ট কার্ড

২০১২ সালে তাঁর মেয়াদ শুরু হওয়ার পর তাঁরই তুলে ধরা নিজের সাফল্যের তালিকায় আছে দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে প্রায় ১০০ মিলিয়ন মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বার করে আনা, এবং দশকব্যাপী দুর্নীতিবিরোধী প্রয়াসের মাধ্যমে দুর্নীতি মোকাবিলার ক্ষেত্রে প্রায় ৫ মিলিয়ন কমিউনিস্ট ক্যাডারকে তদন্তের পরিধিতে নিয়ে আসা। তিনি পার্টির ক্রিয়াকলাপকে ন্যায্যতা দেওয়ারও চেষ্টা করেছেন হংকংয়ের ক্ষেত্রেও, যেখানে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকে চূর্ণ করা  হয়েছিল। যদিও শি প্রাথমিকভাবে তাঁর কাজের প্রতিবেদন ও বক্তব্যের মাধ্যমে পার্টির প্রতি বিশ্বস্তদের এবং চিনে তাঁর অভ্যন্তরীণ নির্বাচনী এলাকাকে সম্বোধন করেছিলেন, তাঁর ঘোষণার মূল সুরটি ছিল তাঁর ‘‌দৃঢ় নেতৃত্ব’‌ কীভাবে চিনের সমস্যাগুলি মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে তা তুলে ধরা। তাঁর পূর্বসূরি হু জিনতাওয়ের মেয়াদের থেকে, কিছু বৃত্তে যা ‘হারানো দশক’‌ হিসাবে বিবেচিত হয়, শি জমানার বৈপরীত্য কোনও অভিসন্ধি ছাড়াই তুলে ধরা হয়েছে। সম্মেলনের কার্যধারায় দুর্বল ও ক্ষিপ্ত হু–র উপস্থিতিও এই বর্ণনটিকে সমর্থন করছে বলে মনে হচ্ছে।

অতীত এবং স্পষ্ট বর্তমান বিপদ

তাইওয়ানের পুনঃএকত্রীকরণের ইস্যুতে শি বলেছেন যে শান্তিপূর্ণভাবে অঞ্চলটি ফিরিয়ে আনার জন্য প্রচেষ্টা চালানো হবে, যদিও পার্টি তার উদ্দেশ্য পূরণের জন্য শক্তি প্রয়োগের অধিকার সংরক্ষিত রাখছে। তাছাড়া, শি ব্যাপক করতালির মধ্যে জোর দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘চিনের সম্পূর্ণ পুনর্মিলন অবশ্যই ঘটাতে হবে এবং সন্দেহ নেই যে তা বাস্তবায়িত হবে।’‌’‌

যদিও শি প্রাথমিকভাবে তাঁর কাজের প্রতিবেদন এবং বক্তব্যের মাধ্যমে পার্টির প্রতি বিশ্বস্তদের এবং চিনে তাঁর অভ্যন্তরীণ নির্বাচনী এলাকাকে সম্বোধন করেছিলেন, তাঁর ঘোষণার মূল সুরটি ছিল যে তাঁর ‘‌দৃঢ় নেতৃত্ব’‌ কীভাবে চিনের সমস্যাগুলি মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে তা তুলে ধরা।

তার ভাষণে শি একথা অস্বীকার করেছেন যে চিন একটি সম্প্রসারণবাদী শক্তি। এই দাবির মধ্যে যা নিহিত তা হল এক ‘‌শক্তিশালী’‌ চিন এখন শুধু তার অতীতের ‘‌দুর্বল’‌ সাম্রাজ্যের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া মূল্যবান সম্পদ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এটি স্বৈরাচারী শাসকদের ঐতিহাসিক দাবির অস্ত্রীকরণ এবং প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বা বলপূর্বক অঞ্চল দখলের জন্য আলঙ্কারিক বাগাড়ম্বরের বিষয়টি সামনে এনেছে। এমনই একটি উদাহরণ হল ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন, যা এই বছরের শুরুর দিকে বেজিং শীতকালীন অলিম্পিকের সময় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে শি–র সাক্ষাতের পরপরই ঘটেছিল। পরিচয়ের রাজনীতি ও ভূ–রাজনীতির এতে ভূমিকা আছে। তাইওয়ানকে দলে যোগ দিতে প্রলুব্ধ করতে চিন ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ (ও সি টি এস) নীতি তুলে ধরেছিল। ও সি টি এস পদ্ধতির অধীনে তাইওয়ান মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে একীভূত হলে প্রশাসনে তার স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখতে সক্ষম হবে। ১৯৯৭ সালে ব্রিটেন কর্তৃক চিনের কাছে হংকং হস্তান্তর সি সি পি–কে ধারণাটি পরীক্ষা করার জন্য একটি পাইলট জোন দিয়েছিল। যাই হোক, দ্বীপে স্বশাসনের ধারণাকে প্রায় মুছে ফেলতে চিনের মাত্র কয়েক বছর লেগেছিল। তা ছাড়াও ট্রাম্প প্রশাসনের পর থেকে বাণিজ্য যুদ্ধ ও আগে–বহাল–করা প্রযুক্তিতে অবরোধের কারণে মার্কিন দেশ ও চিনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। এদিকে তাইওয়ান প্রবীণ মার্কিন রাজনীতিবিদদের সফরের মাধ্যমে আকাশে উড়তে শুরু করেছিল। তারপরে ইউ এস হেলথ সেক্রেটারি অ্যালেক্স আজার এবং ইউ এস হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ২০২০ ও ২০২২ সালে দ্বীপটি পরিদর্শন করেছিলেন, যা চিন ধরছে তাইওয়ান সরকারকে স্বীকৃতির লক্ষণ হিসাবে। এর সঙ্গে চিনা আত্মপরিচয়ের বিপরীতে তাইওয়ানের আত্মপরিচয় দৃঢ় হতে থাকার বিষয়টি জুড়ে গিয়ে শি–কে বাধ্য করেছে ‘‌তাইওয়ানের স্বাধীনতা’‌র কথা বলা শক্তিগুলির ও বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে আঘাত শানাতে।

তাঁর কাজ নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে শি বলেছেন, ‘‌‘‌সামরিক শক্তির ব্যবহারকে স্বাভাবিক করে তুলতে হবে এবং বিভিন্ন উপায়ে তা ব্যবহার করতে হবে… চিনের প্রয়োজন সামরিক অভিযান পরিচালনার জন্য প্রস্তুত থাকা, একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা, ঝুঁকি ও সংঘাত প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা, এবং আঞ্চলিক যুদ্ধে জয়লাভ করা।’‌’‌ শি তাঁর ভাষণে বলেছেন পিপলস লিবারেশন আর্মিকে বিশ্বমানের সামরিক শক্তি হওয়ার লক্ষ্য অর্জনের জন্য সেনা প্রশিক্ষণ ও নতুন কৌশল গ্রহণ ত্বরান্বিত করতে হবে। প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে শি ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়েছেন। তাৎপর্যপূর্ণভাবে ১৯তম কেন্দ্রীয় কমিটির পঞ্চম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন থেকে মান্ডারিন ভাষায় ‘‌ঝুনবেই বেইঝান’‌ যুদ্ধরব ঘোষিত হয়েছে, যার অর্থ ‘‌যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও’‌। পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনগুলো হল সি সি পি–র এলিটদের একটি বার্ষিক কনক্লেভ, যেখানে নীতিগত বিষয় আলোচিত হয়। পি এল এ–র শতবর্ষকে চিহ্নিত করা এই বছরের প্লেনামে ঘোষিত প্রধান ‘‌উন্নয়ন লক্ষ্যগুলির’‌ মধ্যে একটি ছিল ২০২৭ সালের মধ্যে একটি আধুনিক সেনাবাহিনী তৈরি করা৷ প্লেনাম কমিউনিকে ‘‌একটি ধনী দেশ ও একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনীর ঐক্য উপলব্ধি করতে জাতীয় প্রতিরক্ষার আধুনিকীকরণ’‌কে একটি গুরুত্ব দেওয়ার ক্ষেত্র হিসাবে তালিকাভুক্ত করেছে। চিনের ঘোষণাগুলি ইঙ্গিত দেয় যে তারা কার্যত ‘শান্তিপূর্ণ পুনর্মিলন’‌–এর বিকল্পটি ত্যাগ করেছে।

শি তাঁর ভাষণে বলেছেন পিপলস লিবারেশন আর্মিকে বিশ্বমানের সামরিক শক্তি হওয়ার লক্ষ্য অর্জনের জন্য সেনা প্রশিক্ষণ ও নতুন কৌশল গ্রহণ ত্বরান্বিত করতে হবে।

ভারতের উপর প্রভাব

২০২০ সালে ভারত–চিন সীমান্তে একটি উত্তেজনাপূর্ণ সামরিক অচলাবস্থা শুরু হয়েছিল, এবং রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পরে সেখানে ২০ জন ভারতীয় সেনা শহিদ হয়েছিলেন। যদিও সংঘাতের কিছু জায়গা থেকে সরে দাঁড়ানো সম্ভব হয়েছে, এবং দিল্লিতে চিনা রাষ্ট্রদূত এই বলে উত্তেজনা কমাতে চেয়েছেন যে গালওয়ানের কারণে সৃষ্ট সামরিক বিরোধ শেষ হয়ে গেছে, তা হলেও এখন আমাদের প্রহরা কমানোর সময় নয়। পি এল এ–র গালওয়ান কমান্ডার কিউ ফাবাও কংগ্রেসের একজন প্রতিনিধি হিসেবে গর্বের আসন পেয়েছিলেন, এবং শি–র ভাষণের ঠিক আগে গ্রেট হলে শি যুগের ‘‌প্রধান অর্জন’‌ নিয়ে সম্প্রচার করা একটি ভিডিওতে বরফের উপত্যকায় হিংসাত্মক সংঘর্ষের ছবিও ছিল বলে প্রতিবেদিত হয়েছে। ভুলে গেলে চলবে না যে ২০০৬ সালে তৎকালীন চিনের প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও–এর ভারত সফরের আগে ভারতে চিনের রাষ্ট্রদূত জোর দিয়ে বলেছিলেন যে অরুণাচল প্রদেশ তিব্বতের অংশ, এবং পুরো ভারতীয় রাজ্যটির উপর অধিকার দাবি করেছিলেন। ভুলে গেলে চলবে না যে সি সি পি তার কৌশল স্থির করার জন্য প্রাচীন চিনা গ্রন্থগুলির থেকে শিক্ষা নেয়, যার মধ্যে একটি হল ‘শেং দং জি শি’‌, যার অর্থ হল পূর্বে গোলমাল সৃষ্টি কর এবং পশ্চিমে আঘাত কর। চিন বিস্ময়ের উপাদান মজুত রেখেছে, এবং যখন একেবারেই প্রত্যাশিত নয় সেই সময়ে আঘাত করবে।


এই ভাষ্যটি প্রথম ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’

মতামত লেখকের নিজস্ব।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.