Author : John Swartz

Occasional PapersPublished on Mar 22, 2024
ballistic missiles,Defense,Doctrine,North Korea,Nuclear,PLA,SLBM,Submarines

প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে ভারতের পরিকাঠামো উন্নয়ন সংক্রান্ত পরিস্থিতির মূল্যায়ন

  • John Swartz

    চিনের সীমান্তবর্তী লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) বরাবর ভারতীয় অবকাঠামো নির্মাণের গতি চিরাচরিত ভাবে আর্থিক ও তত্ত্বের সীমাবদ্ধতার কারণে ধীর থাকলেও গত ২০ বছরে ত্বরান্বিত হয়েছে। আমলাতান্ত্রিক পরিবর্তন বৃহত্তর আর্থিক সম্পদের বিনিয়োগের কারণে নির্মাণকাজ আরও দক্ষ হয়ে উঠেছে। এই নিবন্ধটিতে নানাবিধ পরিবর্তনগুলিকে দর্শিয়ে কৌশলগত বাধ্যবাধকতাগুলি তুলে ধরা হয়েছে, যা এলএসি-র সঙ্গে সম্পর্কিত চিনা কূটনৈতিক ও বাস্তবিক কার্যকলাপ দ্বারা সৃষ্ট। সামগ্রিক ভাবে, ভারত সরকার এই অঞ্চলে তার সড়ক ও বিমান পরিকাঠামোর প্রস্তুতি, স্থিতিস্থাপকতা সক্ষমতাকে উন্নত করে নিজের কৌশলগত পরিবেশের পরিবর্তনের জন্য দৃষ্টান্তমূলক সাড়া দিয়েছে। তবে এই দীর্ঘ নিবন্ধে এর পাশাপাশি এ কথাও দর্শানো হয়েছে যে, একই সময়ে অঞ্চলটিতে রেল অবকাঠামোর কাজ পিছিয়ে থাকার বিষয়টি অব্যাহতই রয়েছে।

Attribution:

আরোপণজন সোয়ার্টজ, ‘ট্র্যাকিং ইন্ডিয়া’জ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট নিয়ার দ্য লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল,’ ওআরএফ অকেশনাল পেপার নং ৪১৭, অক্টোবর ২০২৩, অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন।

ভূমিকা

ভারত সরকার গত ১০ থেকে ১৫ বছর যাবৎ লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) সংলগ্ন এলাকায় সংযোগব্যবস্থাকে উন্নত করার জন্য অবকাঠামো শৃঙ্খলগুলিকে প্রসারিত করতে সক্ষম হয়েছে। নানাবিধ তত্ত্ব, প্রাকৃতিক, আমলাতান্ত্রিক এবং আর্থিক অসুবিধা সত্ত্বেও সড়ক শৃঙ্খলের ব্যাপক উন্নতি ঘটেছেসুড়ঙ্গ এবং সেতুর বর্ধিত সংখ্যাও অনেক বেশি পরিমাণে বিনিয়োগ, সুদক্ষ কার্যক্ষমতা প্রযুক্তিগত সক্ষমতার ইঙ্গিত দেয়, যা স্বাভাবিক ভাবেই সড়ক ব্যবস্থার গুণমান বৃদ্ধি করেছে। আকাশ পরিসরে কিছু ক্ষেত্রে ভারত একটি কৌশলগত সুবিধা বজায় রেখেছে এবং সীমিত বাজেট থাকা সত্ত্বেও নিজেটোপোগ্রাফি ব্যবহার করে (ভারতকে পূর্ণ ক্ষমতায় বিমান চালু করার অনুমতি দেয়) এমনটা করতে পেরেছে(১) তবে রেল সংযোগের ক্ষেত্রে এ কথা একেবারেই বলা যায় না। কারণ সে ক্ষেত্রে বেশ বড় ধরনের অসামঞ্জস্য রয়েছে। তা সত্ত্বেও ভারত আজ এলএসি বরাবর সামগ্রিক ভাবে যথেষ্ট ভাল অবস্থানে রয়েছে। এবং অন্তত ২০ বছরের আগের তুলনায় পরিকাঠামোগত ভাবে বলতে গেলে অবশ্যই ভাল অবস্থানে রয়েছে।(ক)(খ)(২)

এই বৃদ্ধির সময়কালের আগে ভারত সরকার তার নিজস্ব তত্ত্বেই জর্জরিত ছিল এবং এই অঞ্চলে অবকাঠামো নির্মাণকাজ নিষিদ্ধ রেখেছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কৌশলগত চাপ অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের কারণে এবং মূলত সীমান্তে চিনা সামরিক বাহিনীর কর্মকাণ্ড কূটনৈতিক ভাবে বিতর্কিত অঞ্চলটি নিয়ে চিনেসঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী অচলাবস্থার কারণে এই অবস্থা বর্তমানে পরিবর্তিত হয়েছে

এই গবেষণামূলক নিবন্ধে বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামোর কৌশলগত গুরুত্ব সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে; এলএসি বরাবর ভারতীয় অবকাঠামো উন্নয়নের নিরিখে গুরুত্বপূর্ণ বাধাগুলির কথা তুলে ধরা হয়েছে, যা ১৯৫০-এর দশকে শুরু হয়েছিল এবং এখনও পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে; এবং পরিকাঠামোর সম্প্রসারণকে গতিশীল করে এমন পরিবেশের প্রক্রিয়া পরিবর্তনের রূপরেখা দেওয়া হয়েছেনিবন্ধটিতে বিমান রেল অবকাঠামো উন্নয়নের কথাও তুলে ধরা হয়েছে। কারণ এই দুটির নিজস্ব অনন্য গতিশীলতা রয়েছে, যে দিকে মনোযোগ দেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন।

লেখক এই নিবন্ধের পটভূমির জন্য আনুষঙ্গিক উৎস ব্যবহার করেছেন। তবে বাকি তথ্যের (বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সরকারি নথি) জন্য নিবন্ধটি প্রাথমিক উৎস অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নেওয়া সাক্ষাৎকারের  উপর নির্ভর করেছে(গ) এর পাশাপাশি যথাযোগ্য জায়গায় সংবাদ ও গবেষণামূলক নিবন্ধের তথ্যও ব্যবহার করা হয়েছে।

অবকাঠামোর কৌশলগত গুরুত্ব

এলএসি হল ভারত ও চিনের মধ্যে প্রকৃত সীমান্ত (ডি-ফ্যাক্টো) এবং তা কটি সম্মত আইনি সীমানার (ডে জুরে লিগাল বাউন্ডারি) চেয়ে আলাদা। এমনটা লার কারণও রয়েছে। কারণ বিশেষ করে অতীতে প্রায়শই চিনের পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হত যে, এলএসি অনির্দিষ্ট ছিল এবং তাই তাদের পক্ষে যে কোনও অনুপ্রবেশ দুর্ঘটনাবশত হয়েছে কিংবা তা মোটেও অনুপ্রবেশ ছিল না।(৪) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যখন চিন ও ভারত স্বাধীন হয়েছিল এবং যখন ১৯৬২ সালে ভারত ও চিন সীমান্তে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, তার পর এলএসি-র জন্ম হয়। এই যুদ্ধের পরে উভয় পক্ষই এ বিষয়ে কিছুটা সহমত হয়েছিল যে, এলএসি নামক একটি রেখা নির্ণয় করা হোক, যে রেখা বরাবর বা রেখা পর্যন্ত তারা টহল দেবে অথবা তা অতিক্রম করলে তাকে অনুপ্রবেশ বলে গণ্য করা হবে।(৫) যাই হোক, এই পারস্পরিক টহলদার সীমান্তের প্রকৃতি ২০২০ সালের পরে পরিবর্তিত হয়, যখন চিনা পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) এলএসি বরাবর একযোগে বেশ কয়েকটি অনুপ্রবেশ শুরু করে। এর মধ্যে একটি ক্ষেত্রে বিষয়টি সহিংস হয়ে ওঠে এবং উভয় পক্ষের সৈন্যদের মৃত্যু হয়।(ঘ) এই অনুপ্রবেশগুলির কয়েকটি ক্ষেত্রে দ্রুত প্রত্যাহার বা নিষ্পত্তি করা হয়যাই হোক এ কথা বলে নেওয়া জরুরি, এখনও পর্যন্ত দুটি চিনা অনুপ্রবেশ পয়েন্ট (চাইনিজ ইনকার্শন পয়েন্ট) রয়ে গিয়েছে। এই ঘটনাগুলি এলএসি-তে দুই দেশের টহল দেওয়ার উপায় পরিবর্তন করেছে। অর্থাৎ কোনও পক্ষই আর সীমান্ত থেকে দূরে থাকে না বা এলাকায় কদাচিৎ টহল দেয় নাবরং বর্তমানে উভয় দেশের সৈন্য একে অপরের কাছাকাছি ঘাঁটি গেড়ে বসেছে এবং দুই পক্ষের তরফে অহরহ টহল দেওয়ার ঘটনা স্বাভাবিকের চাইতেও সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠেছে।(৬)

সড়ক ও রেল শৃঙ্খল

ভারতীয় পশ্চাৎভূমি বরাবর উপস্থিত রুক্ষ ভূখণ্ডের প্রেক্ষিতে যুদ্ধের সময়কালে নিজেদের তরফে অবস্থান করার জন্য নতুন সৈন্যদের একটি স্থির সরবরাহ শৃঙ্খল, অঞ্চলটিতে শক্তি নিয়ে আসার পর্যাপ্ত পরিমাণে গতি, পণ্যের চলাচল ও আন্তঃসম্প্রসারণে অনুমতি দেওয়ার জন্য সড়ক অবকাঠামোর বিস্তার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এলএসি-র আশপাশেপরিবেশ কতটা নির্মম তা বিবেচনা করে, সরবরাহ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরিস্থিতি আসলে সেনাবাহিনীকে শুধুমাত্র একটি গুরুতর কৌশলগত অসুবিধার দিকেই ঠেলে দেয় না, বরং শত্রুর কোনও হস্তক্ষেপ না হলেও এ হেন পরিস্থিতি মারাত্মক হতে পারে এমন কিছু ঘটনার উদাহরণও রয়েছে, যেখানে এ কথা স্পষ্ট যে, সৈন্যদের হত্যাকারী শত্রু নয়, বরং পরিবেশ নিজেই।(৭) উপরন্তু, যদি ভবিষ্যতে এই গতিশীল সংঘর্ষ দীর্ঘায়িত হয়, তা হলে সীমান্তের আশপাশে অনুদৈর্ঘ্য ও পার্শ্বীয় উভয় প্রেক্ষিতেই যত বেশি পরিমাণে সড়ক সংযোগ থাকবে, এই সরবরাহ শৃঙ্খলগুলি শত্রুদের মোকাবিলা করার জন্য তত বেশি স্থিতিস্থাপক হয়ে উঠবে

আরও বুঝিয়ে বলতে গেলে, এই অত্যন্ত ভঙ্গুর পর্বতগুলির মধ্যে একক বা দুটি ভাল ভাবে স্থাপন করা যুদ্ধাস্ত্র - যে ধরনের যুদ্ধাস্ত্র চিনের কাছে বিপুল পরিমাণে রয়েছে - একটি জটিল রাস্তাকে জটিলতর রাস্তা পরিণত করতে পারে, যা সময়সাপেক্ষ মেরামতের প্রয়োজন এবং তা খুব স্বাভাবিক ভাবেই প্রতিরক্ষামূলক বা আক্রমণাত্মক পদক্ষেপকে মারাত্মক ভাবে বাধা দিতে পারে। যাই হোক, যদি কোনও জটিল রোডব্লকের (যেখানে পথিমধ্যে সমস্যা হয়েছে এবং সে পথে যাতায়াত সাময়িক ভাবে অসম্ভব) অল্প দূরত্বের মধ্যে বিকল্প পথ থাকে, তা হলে যে কোনও সরবরাহ পুনরায় বিকল্প পথ দিয়ে যাতায়াত করতে পারে এবং শুধু মাত্র অল্প সময়ের মধ্যেই যে কোনও রোডব্লক সরানো যেতে পারে।(৮) টানেলিং বা সুড়ঙ্গনির্মাণের উত্থান এই পথের শুধু মাত্র দ্রুততর বিকল্পই নয়, বরং যে কোনও রকম আবহাওয়াতেই যাতায়াতের সুবিধা করে দেয়, তা সে সময় যত আর্দ্রই হোক না কেন এবং এ ধরনের পথ শত্রুর বিরুদ্ধে বেশ স্থিতিস্থাপকতাও বটে

রেল অবকাঠামোর সাধারণ কৌশলগত শক্তি হল এই যে, তা বিপুল পরিমাণ উপকরণ মানুষ দ্রুত স্থানান্তরিত করতে পারে। রেলপথ আসলে সড়ক ও আকাশপথের পরিপূরক। সড়ক বিমানের অবকাঠামো গতি স্থিতিস্থাপকতার নিরিখে উৎকৃষ্ট হলেও রেল কিন্তু দক্ষতার কারণে গুরুত্বপূর্ণ। রেলের প্রধান দুর্বলতা হল তা আক্রমণ, নাশকতা প্রাকৃতিক ভূ-আন্দোলনের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এবং তার ফলে তা বৃহত্তর সংঘর্ষের ক্ষেত্রে খানিক অবিশ্বস্তও বটে। সর্বোপরি, এই পার্বত্য অঞ্চলে রেলপথ নির্মাণের জন্য উচ্চ স্তরের সুড়ঙ্গ খনন ও সেতু নির্মাণ প্রয়োজন – যেমনটা জম্মু-বারামুল্লা লাইনের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে। তবে এ হেন পদ্ধতি রেলপথ নির্মাণের বিষয়টিকে অত্যন্ত ব্যয়বহুল জটিল করে তোলে। ভারতের প্রেক্ষিতে ভারতীয় বাহিনীর বর্তমান দিকনির্দেশনা এবং নির্মাণ ও অর্থায়নের ক্ষেত্রে রেলপথ নির্মাণ যে যে অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছে, তা নিয়ে নানাবিধ বিতর্ক হয়েছে।(৯)

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে চিন তার বাহিনীকে এলএসি-র আরও কাছাকাছি মোতায়েন করেছে এবং সেই কারণেই তাদের ফোর্স ইনডাকশন টাইম অর্থাৎ শক্তি আনার গতি অনেক দ্রুত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ভারতীয় বাহিনী মূলত সীমান্ত থেকে অনেক দূরে অবস্থান করে এবং প্রধানত রেল পরিবহণের অভাবের কারণে ভারতীয় বাহিনীর শক্তি আনার গতি বেশ অনেকটাই ধীর হবে।(১০) এটি রেল পরিবহণকে প্রকৃতপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। তবে ভারতকে অবশ্যই এই অবকাঠামোয় বিনিয়োগ করা কতটা যথাযথ, তার মূল্যায়ন করতে হবে

 

বায়ু শক্তি সম্পর্কিত অবকাঠামো

আধুনিক সামরিক যুগে বায়ু শক্তি সম্পর্কিত অবকাঠামোগুলি উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্রের প্রতিরক্ষা বা নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় সামরিক বাহিনী ইতিমধ্যেই সীমান্তের পাশের ভূ-সংস্থানের কারণে কিছু প্রাকৃতিক সুবিধা অর্জন করেছে।(১১) হেন সুবিধা থাকা সত্ত্বেও ভারতকে অবশ্যই তার বিমান শক্তি সম্প্রসারণের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবেকারণ চিন ব্যাপক ভাবে বহুমাত্রিক ভাবে সীমান্ত অঞ্চলে নিজেদের সম্প্রসারণ ঘটিয়ে চলেছে।(১২) উপরন্তু, সড়ক অবকাঠামোর ভঙ্গুরতার কারণে ভারী উত্তোলন এবং যুদ্ধাস্ত্র বহনকারী হেলিকপ্টারগুলির প্রাপ্যতা বাড়ানো বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারেকারণ সেগুলি ভারী ক্ষতিগ্রস্ত বা নষ্ট হওয়া সামরিক স্থাপনাগুলিকে পুনরায় সরবরাহ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

 

ঐতিহাসিক প্রতিবন্ধকতা এবং অন্তরায় সময়রেখ

উত্তর ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে অবকাঠামো প্রকল্পের আসল সূচনা বরং নানা সময়ে টুকরো টুকরো ভাবে হয়েছে। ১৯৬৫ সালে লাদাখে একটি রাস্তা নির্মাণের প্রচেষ্টা করা হয়েছিল, ১৯৬২ সালে তাওয়াংয়ে প্রথম সড়ক তৈরি হয় এবং মাত্র ১৯৯০-এর দশকে ওয়ালং-কে সংযুক্ত করা হয়।(১৩) ১৯৬০ সালে সীমান্ত সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ, ব্যবস্থাপনা নির্মাণের জন্য বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন (বিআরও) গঠিত হয়েছিল। যাই হোক, ২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকে ইউনাইটেড প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স (ইউপিএ) সরকারের সময়ে সবচেয়ে বড় পরিকাঠামোগত নির্মাণের সূচনা হয়েছিল, যা মূলত চিনের আগ্রাসন সীমান্তে অনুপ্রবেশের দ্বারা প্ররোচিত হয়েছিল। চিনের তরফে শত্রুতা প্রায় ২০১৪ সাল থেকে একটি কার্যকর টপ-ডাউন প্রচেষ্টা তৈরি করেছিল, যদিও এর তীব্রতা কার্যকারিতা ছিল দোদুল্যমান।

এখন প্রশ্ন হল, কেন ভারত বারবার চিনের সম্মুখীন হওয়া এবং চিনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া সত্ত্বেও এলএসি-র কাছাকাছি একটি উল্লেখযোগ্য অবকাঠামো ব্যবস্থা তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছিল? এর সংক্ষিপ্ত উত্তর হল, তত্ত্ব এবং ভূখণ্ড। আর কেন ভারতের নির্মাণের গতি এত ধীর ছিল? সেই অন্য প্রশ্নের উত্তর হল, আমলাতন্ত্র এবং আর্থিক ব্যবস্থা।(১৪)

চিত্র ১. প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার মানচিত্র(১৫)

 

তত্ত্ব

এই গবেষণাপত্রের জন্য যে বিশেষজ্ঞদের সাক্ষাত্কার নেওয়া হয়েছে, তাঁরা সকলেই এ বিষয়ে সহমত যে, ২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকে ভারতের কৌশলগত তত্ত্ব এলএসি-র চারপাশে খুব সীমিত রাস্তা নির্ধারণ করেছিল এবং কার্যত কোনটিই ঠিক শেষ পর্যন্ত এগোয়নি। ফলে সেই সময়ে অবকাঠামোর গতি ধীর হয়ে পড়ে এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব তৈরি করে।(১৬) তখন এলএসি পর্যন্ত প্রকৃত সরবরাহ প্রায়শই বিশেষ ভাবে নির্মিত খচ্চর/চমরি গাই ট্রেন কিংবা বিমান দ্বারা সরবরাহ করা হত। এই প্রতিরক্ষামূলক তত্ত্বের শিকড় সম্ভবত ১৯৬২ সালের মাসব্যাপী যুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্যর্থতা থেকে উদ্ভূত। সেই যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ভারতীয় সামরিক বাহিনী এলএসি-কে কার্যকর ভাবে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়। চিন একতরফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে, নিজেদের সেনাবাহিনী অগ্রসর হওয়া বন্ধ করে দেয় এবং দ্রুতই ক্রান্ত বেশির ভাগ এলাকা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিলেও আকসাই চিনের প্রায় ৩৮,০০০ বর্গ কিমি অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এই ঘটনার পরে, সামরিক নেতৃত্ব যুক্তি দিয়েছিল, যদি প্রতিরক্ষার প্রথম সারিটি ভীষণ ভাবে ব্যর্থ হয়, তা হলে চিনা সেনাবাহিনীকে আরও কঠিন ভারতীয় ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে যেতে বাধ্য করা, তাদের লক্ষ্য বোঝা (যেখানে তারা আক্রমণ হানবে বলে লক্ষ্যস্থির করেছিল) এবং ভারতীয় সামরিক বাহিনীকে পাল্টা আক্রমণ করার সুযোগ করে দেওয়ার মাধ্যমে চিনা সেনাবাহিনীর কাজকে আরও কঠিন করে তোলা বুদ্ধিমানের কাজ হবে(১৭) সেই সময়ে পদ্ধতিটি প্রচলিত থাকলেও তা পরে মারাত্মক ফল বহন করে এবং চিনাদের দেখাদেখি ভারতকে ভাল ভাবে অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করতে বাধ্য করে(ঙ)(চ)(১৮)

পরিবেশ

তাত্ত্বিক কারণ ছাড়াও ভূসংস্থান জলবায়ু এলএসি বরাবর ভারতীয় অবকাঠামোগত অবস্থানকে ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত করেছিল। মসাময়িক ও চিরাচরিত ভাবে সংঘাতের প্রকৃতি নির্ধারণে ভূখণ্ডটি এক মূল চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে।(ছ)(১৯) হিমালয় ও তার পাদদেশের অঞ্চলটি একাধিক কারণে সংঘাতপ্রবণ, কোনও অবকাঠামো নির্মাণের প্রেক্ষিতেই অত্যন্ত ভঙ্গুর এবং পরিবর্তনশীল জলবায়ুর সাক্ষী থাকে(২০)

প্রথমত, হিমালয়ের উচ্চতার নিরিখে উপত্যকা থেকে শুরু করে পর্বত শৃঙ্গ পর্যন্ত… সুবিশাল বৈচিত্র্য রয়েছে। এর অর্থ হল এই যে, কোন রাস্তা নির্মাণ করতে হলে সেটিকে অবশ্যই রিজলাইন বা শৈলশিরা বরাবর করতে হবে এবং যদি রাস্তাগুলির চলাচলের জন্য শিরাগুলি অতিক্রম করার প্রয়োজন হয়, তা হলে প্রযুক্তিগত ভাবে জটিল এবং ব্যয়বহুল সেতু বা সুড়ঙ্গ নির্মাণ করা আবশ্যক। উপরন্তু, সেতু এবং সুড়ঙ্গের অনুপস্থিতিতে এই সরঞ্জামগুলি ছাড়া চলাচল প্রায় অসম্ভব। যখন পাহাড়ের চূড়া বরাবর শুধু রাস্তা থাকে, তখন রাস্তার কোন ক্ষতিই চলাচলকারী পাহাড়ের পাদদেশে ফিরে যেতে বাধ্য করে এবং ফের তাকে নতুন করে সফর শুরুর কাজটি করতে বাধ্য করে।(২১)

দ্বিতীয়ত, পর্বতশ্রেণি ভূতাত্ত্বিক ভাবে কমবয়সি হওয়ার কারণে এখানে ভূমিধস এবং পৃথিবীর গতিবিধির অন্যান্য ধরন খুবই সাধারণ।(২২) এটি, এবং জলবায়ুর তৃতীয় বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ রক্ষণাবেক্ষণের খরচ সমস্যার সৃষ্টি করে। যেমনটি ব্যাপক ভাবে দেখা গিয়েছে অর্থাৎ প্রায়শই বৃষ্টিপাত, তুষারপাত এবং ভূমিধসের সময় রাস্তার পুরো অংশ ধুয়ে যায়, যার জন্য বার্ষিক মেরামত সুবিশাল রক্ষণাবেক্ষণের বাজেটের প্রয়োজন হয়।(২৩) এই সমস্যাগুলি রেলের অবকাঠামো নির্মাণকে প্রভাবিত করে। রেলের পরিকাঠামোর সঙ্গে যুক্ত ইতিমধ্যেই প্রচুর নির্মাণব্যয়ের কারণে এ হেন রেলপথ নির্মাণ আদৌ আর্থিক ভাবে বিচক্ষণ হবে না, যেগুলি অন্তত পক্ষে কিছু এলাকার অনিবার্য ভাবে ভেঙে পড়বে বা ভেসে যাবে।(২৪)

অবশেষে, জলবায়ু বিভিন্ন উপায়ে নির্মাণকাজকে আরও কঠিন করে তোলে। হিমালয়ে বর্ষাকালে প্রবল বর্ষণ হয় এবং শীতকালে একই অনুপাতে তুষারপাত হয়। এর অর্থ হল এই যে, রাস্তাগুলি ধুয়ে ফেলার পাশাপাশি চলমান যে কোনও রাস্তা নির্মাণ বন্ধ করতে হবেকারণ এই পরিস্থিতিতে কংক্রিট বা অ্যাসফল্ট কোনওটিজমাট বাঁধতে পারে না। অতএব, কাজ বছরের শুষ্ক অর্ধেক সময়েই সীমাবদ্ধ। এর উপরে আবার শীতকালে ও আর্দ্র মাসে অনেক এলাকা নিয়মিত ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়কারণ সরু পথগুলি তুষারে পরিপূর্ণ থাকে, যা চলাচলের অযোগ্য হয়ে ওঠে। আবহাওয়া উচ্চতার কারণে শ্রমিকদের অবস্থাও ভয়ঙ্কর হয়। এমনকি মেশিনগুলিও পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না। তাই শুধু মাত্র মাঝারি দেশীয় ধরনের সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়, যেগুলি অত্যাধুনিক নয়।(২৫)

আমলাতান্ত্রিক এবং আর্থিক

এলএসি-র কাছাকাছি অবকাঠামো গড়ে উঠতে এত সময় লাগানোর চূড়ান্ত বিস্তৃত কারণটি সরকারের সঙ্গেও জড়িত এবং তা প্রাথমিক ভাবে আমলাতন্ত্র এবং অর্থের সঙ্গে২০০৬ সাল নাগাদ ভারত সরকার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর ইউপিএ সরকারের অধীনে ৭৩টি পরিকল্পিত রাস্তা-সহ এলএসি পরিকাঠামো সম্প্রসারণের জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা উত্থাপন করে।(জ)(ঝ)(২৬) যদিও ২০০৬ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কাজ খুব কমই এগিয়েছে।(২৭) কী ধরনের আমলাতান্ত্রিক এবং আর্থিক সমস্যা এই ঘাটতির নেপথ্যে থেকেছে?

বিশ্লেষক জয়দেব রানাডে এই দীর্ঘমেয়াদি ঘাটতির জন্য চিনা সরকার ব্যবস্থার বিপরীতে ভারতীয় গণতন্ত্রের দীর্ঘ প্রক্রিয়াকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, সেখানে তারা কেবল একটি পরিকল্পনা করে এবং পিএলএ তা সম্পন্ন করে।(২৮) ভারতে আদেশের শৃঙ্খলটি বিস্ময়কর: সেনাবাহিনী ইঞ্জিনিয়ারদের কাছে জানায়, তাঁরা কেমন কাজ চান; ইঞ্জিনিয়াররা অর্থদাতাদের সঙ্গে কথা বলেন; অর্থদাতারা প্রয়োজনীয় জমি খুঁজে বের করেন ও জমির মালিকদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেন ও জমির মূল্য চোকান; তার পর পরিবেশ সংস্থা, রাজ্য সরকার এবং আগ্রহী গোষ্ঠীগুলি এ কথা সুনিশ্চিত করে বক্তব্য রাখে যে, পরিকাঠামো পরিবেশে কোনও বাধা সৃষ্টি করবে না; এবং এত কিছুর পরেই নির্মাণকাজ শুরু হতে পারে। বিআরও সূত্র অনুসারে এই প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভাবে সমস্যার একটি বড় অংশ বিশেষ ভাবে বন ছাড়পত্র এবং জমি অধিগ্রহণের অনুমোদন পাওয়া সংক্রান্ত(২৯) ই কাজটুকু করতেই প্রায়শই অন্তত তিন বছর সময় লাগে।(৩০) এই ধীর, কঠিন প্রক্রিয়ার কারণে, ২০০৬ সালে টপ-ডাউন পদ্ধতিটি বাস্তবায়িত হওয়ার কাজটি ব্যর্থ হয়।

উদাহরণ স্বরূপ, চিনে প্রাক্তন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত অশোক কান্থা বলেছেন যে, তাঁর মেয়াদে তাঁদের পরিকল্পনা করা রাস্তাগুলির মধ্যে বেশ গুরুতর বিলম্ব হয়েছিল কারণ সেই পথটি একটি সুরক্ষিত এলিফ্যান্ট করিডোর (হাতি চলাচলের বন্য পথ) অতিক্রম করেছিল।(৩১) এই করিডোরগুলি ভারতে আইনত সুরক্ষিত এবং তেমন কোনও অতিক্রমকারী পথের অনুমোদন পাওয়ার কাজটি কঠিন(৩১) এই সুনির্দিষ্ট দ্বন্দ্বের তখনই সমাধান হতে পারে, যখন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মধ্য দিয়ে প্রকল্পটিকে ঠেলে নিয়ে যাওয়ার দুরূহ কাজটি করে দেন।(৩৩)

আর্থিক বিষয়গুলি প্রকাশ্যে কম তালিকাভুক্ত করা হলেও এ কথা স্পষ্ট যে, বিআরও অভ্যন্তরীণ নথি অনুসারে, ২০১৭ সালের আগে এবং তার কাছাকাছি সময়ে অর্থায়নের অভাব একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হয়ে ওঠে(৩৪) ঐতিহাসিক ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার উপর জোর দিতে ২০১৬ সালে এবং গণ আউটসোর্সিং অধিকতর তহবিল সৃষ্টির আগে বিআরও-তে নির্মাণ দর্শনের পরিবর্তনের নীতি নির্দেশিকা অনুসারে, ৩৫.২ বিলিয়ন ভারতীয় টাকার (৪২৯.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) মধ্যে প্রায় বিলিয়ন ভারতীয় টাকা (৬০.৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যয় করা হয়েছিল। এই পরিসংখ্যান পরবর্তী বছরগুলিতে ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে।(৩৫) রক্ষণাবেক্ষণ, অবকাঠামো স্থাপনাখরচ এবং কাজের ব্যয়যুক্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য অর্থ প্রদান করার পর শুধুমাত্র ১৫ বিলিয়ন ভারতীয় টাকা (অর্থাৎ ১৮২.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বা মোট বাজেটের ৪২.৫ শতাংশ পড়ে থাকে প্রকৃত নির্মাণের জন্য(৩৬) এই বাজেটের সীমাবদ্ধতার পরিপ্রেক্ষিতে বিআরও দ্রুত অগ্রসর হওয়ার জন্য যে রীতিমতো যুঝছে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এর ফলস্বরূপ অবকাঠামো নির্মাণে দীর্ঘ সময় লেগেছে এবং বিআরও সম্প্রসারিত হতে হতে আরও লঘু হয়ে গিয়েছে। এই সময়ে, আর্থিক ও প্রশাসনিক ভাবে পরিচালনা করার জন্য বিআরও-র কাছে যত না দক্ষতা ছিল, তার চেয়ে প্রকল্পের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি(৩৭)

টুকরো টুকরো অংশগুলির সমন্বয় সাধন

এই বিষয়গুলির সমাধান সংক্রান্ত সময় সম্পর্কে বিতর্ক থাকলেও সাধারণত ধরে নেওয়া হয় যে, এই সমস্যা ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ঘটেছে।(৩৮) তা হলে বিশেষ করে কী পরিবর্তন হল, যা এই নির্দিষ্ট সময় থেকে নির্মাণের গতি বৃদ্ধি করেছে? উত্তরটি তিনটি মূল কারণের মধ্যে নিহিত - আর্থিক, তাত্ত্বিক এবং কৌশলগত। ভৌত পরিবর্তনের জন্য দায়ী বিষয়গুলি হল আর্থিক তাত্ত্বিক এবং এই পরিবর্তনগুলিকে প্রেরণা জুগিয়েছে কৌশলগত দিকগুলি(ঞ)

অর্থায়ন

২০১৪ সালের পর ভারতীয় পরিকাঠামো উন্নয়নের গতি বৃদ্ধিকারী মূল কারণগুলির মধ্যে অন্যতম হল দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি। এর ফলে বিআরও-তে বর্ধিত তহবিল বরাদ্দ করা হয়। ভারতের জিডিপি ১৯৯৫ সালে ৩৬০.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ২০০৫ সালে ৮২০.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১৫ সালে ২.১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং অবশেষে ২০২৩ সালে ৩.৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে (দ্রষ্টব্য চিত্র ২)। গত থেকে ১০ বছরে এই উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এলএসি বরাবর অবকাঠামোর জন্য বৃহত্তর বিবেচনামূলক মূলধনে রূপান্তরিত হয়েছে।

চিত্র ২. সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় জিডিপি, বিলিয়ন মার্কিন ডলারে(৪০)

সূত্র: ‘ইন্ডিয়া জিডিপি ১৯৬০-২০২৩,’ ম্যাক্রোট্রেন্ডস(৪১); ‘রিপোর্ট ফর সিলেক্টেড কান্ট্রিজ অ্যান্ড সাবজেক্টস’, আইএমএফ(৪২)

 

এই তহবিলগুলিকে যে সীমান্ত অবকাঠামোর কাজে বরাদ্দ করা হয়েছে তা বোঝার উপায় কী?

প্রথমত, বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে সম্মত হন যে, বিআরও-র দক্ষতা ক্ষমতা বৃদ্ধি দৃঢ় ভাবে বৃহত্তর আর্থিক সম্পদের ইঙ্গিত দেয়।(৪৩) দ্বিতীয়ত, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মতে, গত পাঁচ বছরে ১৫৪.৭ বিলিয়ন ভারতীয় টাকা (আনুমানিক ১.৮৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) শুধুমাত্র ইন্দো-চিনা সীমান্ত সড়কেই ব্যয় করা হয়েছেএই অর্থ ব্যবহার করে প্রায় ২০৮৮.৫৭ কিলোমিটার নতুন রাস্তা তৈরি করা হয়েছে।(৪৪) ২০১১ থেকে ২০১৬ সালের পরিসংখ্যানগুলিকে সমন্বিত করা হলে দেখা যাবে, বিআরও-র মতে, সেই সময়কালে সাধারণ কৌশলগতরাস্তাগুলিতে মাত্র ১৪৪ বিলিয়ন ভারতীয় টাকা (আনুমানিক ১.৭৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) ব্যয় করা হয়েছিল, যার মধ্যে প্রাথমিকভাবে সামরিক ব্যবহারের জন্য নির্মিত রাস্তার পাশাপাশি অন্যান্য সীমান্তে সংশ্লিষ্ট রাস্তাও অন্তর্ভুক্ত।(৪৫) এ ভাবে বর্তমান ইন্দো-চিনা সীমান্তে খরচ ২০১১ ও ২০১৬ সালের মধ্যে সমস্ত সীমান্ত সড়ক নির্মাণের খরচকে ছাপিয়ে গিয়েছে।(৪৬) উপরন্তু, বিআরও-র মহাপরিচালক লে. জেনারেল রাজীব চৌধুরীর মতে, গত দুবছরে বিআরও-র বাজেট ১০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।(৪৭) বিআরও-র মূলধন বাজেটও ২০২২-২৩ আর্থিক বছরে প্রায় ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।(৪৮)

তৃতীয়ত, সুড়ঙ্গ এবং সেতু নির্মাণের সংখ্যা বৃদ্ধি এই ইঙ্গিত দেয় যে, একটি বড় বাজেট এবং মনোযোগ প্রকৃতপক্ষে এলএসি অবকাঠামোর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরীর মতে, গলওয়ান সংঘর্ষের (২০২১ সালে) পরের বছরে ৮৭টি সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল এবং তার পরের বছর (২০২২ সালে) আরও ৬৭টি সেতু নির্মাণ করা হয় অর্থাৎ আগের বছরগুলির তুলনায় এক ব্যাপক বৃদ্ধিকে দর্শায়।(৪৯) নানাবিধ উচ্চাভিলাষী প্রকল্পের সঙ্গে সঙ্গেই সুড়ঙ্গ নির্মাণের প্রকল্পও বৃদ্ধি পেয়েছে।(৫০) বিশেষ করে, জোজি-লা টানেলটি সমাপ্তির কাছাকাছি রয়েছে এবং যে সময় তা সম্পূর্ণ হওয়ার কথা ছিল, তার চেয়ে প্রায় তিন বছর কম সময় লেগেছে। এর পাশাপাশি শিনকু লা টানেলটি নির্মাণ শুরু হতে চলেছে এবং সে লা টানেল নির্মাণের কাজ চলছে।(৫১)

সামগ্রিক ভাবে, বিআরও-এর বাজেটে এই ব্যাপক বৃদ্ধি নানাবিধ সম্ভাবনাকে উন্মোচিত করেছে এবং বিআরও-র ক্ষমতা বৃদ্ধি করে২০১৪-২০১৭ সালের আগে বিআরও-র আর্থিক সক্ষমতা তার সম্প্রসারণমূলক কর্মসূচির জন্য খুবই কম ছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বর্ধিত তহবিলের ফলে সেই ক্ষমতার প্রতিবন্ধকতাগুলিকে মোকাবিলা করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।(৫২)

আমলাতন্ত্র

তাত্ত্বিক পরিবর্তনের প্রথম স্পষ্ট ইঙ্গিতগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল এই যে, ভারত সরকারের চায়না স্টাডি গ্রুপ (সিএসজি) - যেটি ১৯৯৯ সালে এলএসি বরাবর কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলিকে চিহ্নিত করেছিল। দ্য স্টেটসম্যান যেমন দর্শিয়েছে যে, ‘সিএসজি ইন্দো-চিন বর্ডার রোডস (আইসিবিআর) হিসাবে পরিচিত ৭৩টি কৌশলগত ভাবে সীমান্ত বরাবর গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাকে শনাক্ত করেছে ১৯৯৯ সালে ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটি (সিসিএস) এই রাস্তাগুলি নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছিল… এবং ২০০৩ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে সেই কাজ সম্পূর্ণ করার একটি অস্থায়ী লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। লক্ষ্যটি পরবর্তী কালে ২০০৬ থেকে ২০১২ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত (২০১৭) কাজ শেষ হওয়া অনেকটাই বাকি।’(৫৩) টি অস্বাভাবিক নয় যে, ২০১০-এর দশকের প্রথম দিকে সরকারি তরফে বিষয়টি নিয়ে চেষ্টা চালানো হলেও তা নির্মাণকাজকে এগোতে তেমন সাহায্য করেনি। এবং অবশ্যই ডোকলাম (২০১৭) বা গলওয়ান সংঘর্ষকালীন (২০২০) চিনা অনুপ্রবেশগুলি অবশেষে বাগাড়ম্বরকে বাস্তবতায় পরিণত করেছে।(৫৪)

এই পরিবর্তনগুলির প্রভাব অভিজ্ঞতামূলক ভাবে তীক্ষ্ণ বৃদ্ধিতে দেখা গিয়েছে, বিশেষ করে ২০২০ সাল থেকে কিলোমিটারদীর্ঘ সড়ক এবং বিআরও দ্বারা নির্মিত সেতুর সংখ্যা থেকেই তা স্পষ্ট।(৫৫) দ্য ট্রিবিউনের মতে, ২০১৭ থেকে ২০২২ পর্যন্ত বিআরও ৩৫৯৫ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রাস্তা তৈরি করেছে।(৫৬) এর আগে, এনডিটিভি-র একটি প্রতিবেদন অনুসারে বিআরও ২০০৬-২০০৭ সালে শুরুর সময় থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মাত্র ৬২৬ কিলোমিটার পথ নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করেছিল।(৫৭)

আমলাতান্ত্রিক ভাবে এই দক্ষতা বৃদ্ধির কারণ কী, তা স্পষ্ট। তহবিল ছাড়াও, ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বেশ কয়েকটি প্রক্রিয়া স্থাপন করা হয়েছিল, যা আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করেছিল এবং নির্মাণ দক্ষতা বৃদ্ধি করেছিল। এই প্রক্রিয়াগুলি অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু নিম্নলিখিত প্রক্রিয়াগুলি সামগ্রিক প্রক্রিয়ার কয়েকটি মাত্র:

 

পরিবেশ ও বন মন্ত্রক বিআরও-কে দ্রুত রাস্তা নির্মাণের অনুমতি দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বনভূমির পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে সাধারণ অনুমোদন প্রদান করে।

 

• যে রাজ্যগুলিতে প্রকল্পগুলি প্রায়শই আমলাতান্ত্রিক ভাবে জর্জরিত ছিল, সেখানে কেন্দ্রীয় সরকার বিআরও-কে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কমিটিমর্যাদা দেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছিল, যাতে ভূমি অধিগ্রহণ, বন্যপ্রাণী ছাড়পত্র, কোয়ারি বরাদ্দ ইত্যাদি সম্পর্কিত সমস্যাগুলি দ্রুত সমাধান করতে পারে৷(৬০) সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া পরিবর্তন ছিল এই যে, উচ্চ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের নেতারা এখন কম বিচক্ষণতার সঙ্গে নিম্ন স্তরের নেতাদের বিপরীতে এই বিরোধগুলি সমাধানের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটিগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। এটি একগুচ্ছ আমলাতান্ত্রিক গোলকধাঁধার মধ্য দিয়ে প্রকল্পগুলিকে দ্রুত সম্পন্ন করার পথ প্রদান করে।(৬১)

প্রকল্পগুলিকে সম্পূর্ণ রূপে আউটসোর্স করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল এবং তা বিআরও-এর ক্ষমতাকে ব্যাপক ভাবে প্রসারিত করে। ২০১৭ সালের আগে, আউটসোর্সিং শুধু মাত্র নির্দিষ্ট ছোট এলাকায় অনুমোদিত ছিল এবং তা ব্যবহার করা হয়েছিল, যেমন সমাপ্তি উপকরণ সরবরাহ ক্ষেত্রেই। এর অর্থ হল, বড়, উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন নির্মাণ ব্যবসাগুলি এতে আকৃষ্ট হবে না এবং শুধুমাত্র ছোট, স্থানীয় ঠিকাদাররা প্রকল্পগুলি গ্রহণ করবে(৬২) ২০১৭ সালের পরে বিলিয়ন ভারতীয় টাকা (১২.১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) মূল্যের সমস্ত প্রকল্পকে নতুন ইঞ্জিনিয়ারিং কন্ট্রাক্ট প্রকিউরমেন্ট মডেল’-এর অধীনে আউটসোর্স করা (৬৩) এ ছাড়াও, ছোট প্রকল্পগুলি একটি প্যাকেজ হিসাবে চুক্তিবদ্ধ হতে পারে এবং একই সঙ্গে বড় সংস্থার কাছ থেকে বিড আকর্ষণ করতে পারে(৬৪) এর অর্থ হল, বৃহত্তর ব্যবসায়ীরা প্রকল্পগুলি গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গে বিআরওকে আরও নানাবিধ বিষয় পরিচালনা করার ভূমিকা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং ইতিমধ্যে নির্মিত পথগুলি খোলা রাখার সিসিফিয়ান কাজের উপর বিআরও মনোনিবেশ করতে পারে।

• তৃণমূল স্তরে সমষ্টির মতো নির্মাণ সামগ্রীর একটি উন্নত মজুদভাণ্ডার তৈরি করা হয়েছিল, যা মন্থরতা সৃষ্টিকারী যে কোনও রকম ঘাটতিকে প্রতিরোধ করতে পারে

শীর্ষ স্তরে, বিআরও-র নেতৃত্বকে বর্ধিত আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল।(৬৬) এর অর্থ হল এই যে, বিআরও নেতৃত্ব (চিফ ইঞ্জিনিয়ার, অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর জেনারেল অব বর্ডার রোডস, ডিরেক্টর জেনারেল অব বর্ডার রোডস) অনেক বড় প্রকল্পের চুক্তি অনুমোদন করার পাশাপাশি একতরফা ভাবে আরও ব্যয়বহুল সরঞ্জাম সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়েছিলেন। এই নীতির আগে এই বিআরও নেতৃত্বকে অনুমোদনের জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অনেক উচ্চ স্তর পর্যন্ত যেতে হত।(৬৭)

 

কৌশলগত পরিবেশ

২০০০ সালে শুরু হওয়া কূটনৈতিক এবং গতিশীল ক্ষেত্র গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি দ্বারা সীমান্তে কৌশলগত পরিবেশের পরিবর্তনগুলিকে ত্বরান্বিত করেছিল।

সরকারের মধ্যে পরিবর্তনের সম্ভাব্য সূচনা বিন্দু ছিল ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে এবং ২০০০-এর দশকের শুরুতে সীমান্ত আলোচনার ব্যর্থতা। বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে, চিনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বহু আলোচনার পরে ভারতীয় আলোচকরা অনুভব করেছিলেন যে, তাঁরা আক্ষরিক অর্থেই একটি অচলাবস্থায় পৌঁছেছে(৬৮) চিন সীমান্ত সমস্যার সম্পূর্ণ নিষ্পত্তিতে আগ্রহী ছিল নাকারণ তারা এ বিষয়ে অবিচল ছিল যে, অরুণাচল প্রদেশে অবস্থিত একটি বড় গুরুত্বপূর্ণ শহর তাওয়াং চিনের অন্তর্গত। চিন জানত যে, এটি এমন এক বিষয়, যা ভারত কোনওদিন মেনে নেয়নি এবং নেবেও না। এর ফলে আলোচনা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে যায়।(৬৯)

এই উপলব্ধি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দৃঢ় হয় এবং আলোচনা স্থবির হয়ে পড়ে। এই সময়রেখ অনুযায়ী, ভারতীয় পরিকাঠামো উন্নয়নের দিকে প্রথম বড় কিছু প্রয়াস দেখা যায়। প্রথমত এবং পূর্বে উল্লিখিত হিসাবে, ১৯৯৯ সালে চায়না স্টাডি গ্রুপ সংগঠিত হয়েছিল এবং তারা বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত রাস্তা চিহ্নিত করেছিল। পরে ২০০৬ সালে ইউপিএ সরকার এলএসি বরাবর ৭৩টি রাস্তা নির্মাণের ঘোষণা করে

চিযে তার অবস্থানে নিযুক্ত হয়েছে, সেই ধারণা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারত ২০০৫ সালের দিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি করতে শুরু করে। ২০০৫ এবং ২০০৬ সালে দুবার ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সিতে (আইএইএ) ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ভোট দেওয়ার ফলে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক উষ্ণ হয়; তারা ২০০৫ সালে যৌথ সামরিক মহড়া চালায় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে ২০০৮ সালে একটি বেসামরিক পারমাণবিক চুক্তিতে সম্মত হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপগুলি, বিশেষ করে পারমাণবিক চুক্তিটি, চিনের ভারতের প্রতি মনোভাবে পরিবর্তন আনে।(৭০) রাষ্ট্রদূত কান্থা এই পরিবর্তনটিকে সবচেয়ে উপযুক্ত ভাবে তুলে ২০০৮ সালে বলেন যে, চিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের প্রতিযোগিতামূলক আলোকে ভারতকে দেখতে শুরু করেছিল এবং ২০১২ সালে শি জিনপিং ক্ষমতা গ্রহণের পর এই উপলব্ধি আরও দৃঢ় হবে।(৭১)

১৯৯৯ থেকে ২০১২… এই সময়কালটিকে মূলত উপলব্ধিগত পরিবর্তনের সময় হিসাবে দেখা যেতে পারে। বেশ কিছু প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, ২০০৮ সালের পরে সীমান্ত লঙ্ঘনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে (চিত্র ৩)। যাই হোক, ২০১৩ থেকে এখনও পর্যন্ত সীমান্তে আরও শারীরিক সম্মুখ সংঘর্ষ, সীমান্ত লঙ্ঘন এবং পারস্পরিক নেতিবাচক ধারণাগুলি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে।(৭২)

চিত্র ৩. বছর অনুসারে চিনা অনুপ্রবেশের সংখ্যা(৭৩)

দ্রষ্টব্য: স্বাধীন বাঁ দিকের স্কেল ব্যবহার করে কমলা রঙে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, ভারত সরকারের তথ্য ডান দিকের স্কেল ব্যবহার করে নীল রঙে দর্শানো হয়েছে।

 

বেশির ভাগ ছোট ঘটনা বাদ দিয়ে এই সময়ের সংক্ষিপ্তসার করলে যেমনটা দাঁড়াবে, তা হল ভারত-চিন সম্মুখ সংঘর্ষ ২০১৩ সালে ডেপসাং-এ শুরু হয়েছিল, যেখানে ভারতীয় এবং চিনা সৈন্যরা তিন সপ্তাহ ধরে জমি আঁকড়ে থেকেছিল। পরের বছর চুমারে একটি ১৬ দিনব্যাপী স্ট্যান্ড-অফ অর্থাৎ সম্মুখ সংঘর্ষ হয়(৭৪) ২০১৫ সালে বার্তসেতে একটি সপ্তাহব্যাপী সংঘর্ষ ঘটে।(৭৫) ২০১৭ সালে ভুটানে ৭৩ দিন দীর্ঘ গুরুত্বপূর্ণ ডোকলাম এবং প্যাংগং সোর কাছে ছোট সংঘর্ষ ঘটে।(৭৬) সর্বোপরি, বিশেষজ্ঞদের মতে এই বছরটি অনেক বেশি চিনা অবকাঠামো বিনিয়োগ চিহ্নিত করেছিল।(৭৭) ২০১৯ সালে, প্যাংগং সো-য় আর কটি সংঘাত ঘটে।(৭৮) যাই হোক, এই গবেষণাপত্রের জন্য সাক্ষাত্কার নেওয়া হয়েছে এমন বিশেষজ্ঞদের মতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যেটি দৃষ্টান্তমূলক ভাবে চিন সম্পর্কে ভারতীয় ধারণাকে বদলে দিয়েছে তা হল ২০২০ সালের গলওয়ান সংঘর্ষ। এই সম্ভাব্য অনাকাঙ্ক্ষিত যুদ্ধাবস্থাসঙ্গে যুক্ত হয়েছে অন্যান্য, সম্ভবত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, একই সঙ্গে ঘটতে থাকা অনুপ্রবেশ, যা ইতিমধ্যেই খারাপ ইন্দো-চিনা সম্পর্ককে খারাপতর করে তোলে। জয়দেব রানাডের মতে, ঠিক এই পর্যায়ের পর চিন কী ভাবে সমস্ত নিয়ম লঙ্ঘন করেছে এবং এর আগে ১৯৯৩ এবং ১৯৯৬ সালে আচার-আচরণ সংক্রান্ত চুক্তিগুলিকে লঙ্ঘন করেছে, তা বিবেচনা করে ভারতের ‘বিশ্বাস লোপ’ পায় বা ‘জিরো ট্রাস্ট’-এ পরিণত হয়। এই ঘটনাগুলি ক্রমাগত কূটনৈতিক অচলাবস্থার সঙ্গে যুক্ত, সরকার এবং সামরিক বাহিনী জুড়ে ভারতীয় নেতৃত্বকে সীমান্তে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করে এবং আর্থিক ও সাংগঠনিক ভাবে সীমান্ত অবকাঠামোর উপর আরও জোর দেয়।

বিমান এবং রেলপথের উপর মনোযোগ

বিমান পরিকাঠামো

এই বিভাগটি অবকাঠামোর অন্য দুটি মূল ক্ষেত্রের অনন্য গতিশীলতা নিয়ে আলোচনা করে এবং সেগুলি হল বিমান এবং রেলপথ

বিমান অবকাঠামো মূলত সড়ক অবকাঠামোর গতি অনুসরণ করেছে এবং চিনের অভিপ্রায় এবং বাস্তবে কৌশলগত পরিবেশের উপলব্ধি পরিবর্তন করে সড়ক অবকাঠামোর বিস্তারের মতোই মূলত প্ররোচিত হয়েছে।

২০০৮ সালে প্রথম বারের মতো বিমান পরিকাঠামো উন্নত করার জন্য উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা করা হয়েছিল। এটি কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ দৌলত বেগ ওল্ডি (ডিবিও) এয়ারফিল্ড পুনরায় চালু করার মাধ্যমে শুরু হয়েছিল(ট) এবং কেন্দ্রীয় সরকার অনুমতি না দেওয়া সত্ত্বেও বিমান বাহিনী এমনটা করেছিল।(৮০) এয়ারফিল্ড উদ্বোধনের বিষয়ে ভাইস চিফ এয়ার মার্শাল (অবসরপ্রাপ্ত) প্রণব কুমার বারবোরা টাইমস নাউ-কে ২০২০ সালের জুন মাসের শুরুতে বলেছিলেন যে, ‘৪৩ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এবং সেখান থেকে পুনরায় কাজ করার কোন ছাড়পত্র ছিল না এর নেপথ্যে একাধিক কারণ থেকেছে এবং প্রতিবারই শুধু মাত্র ‘না’ শুনতে হয়েছে... ভারতীয় বিমান বাহিনী এমনটা করার কারণ হিসেবে ‘সৈন্যের রসদ বজায় রাখা বিমান বাহিনীর দায়িত্ব’ বলে উল্লেখ করে।(৮১) ৪৩ বছরব্যাপী নিষ্ক্রিয় থাকার পর সম্পূর্ণ বিপরীতে হেঁটে এই এয়ারফিল্ড ব্যবহার করা শুরু হয়। এটি সম্ভবত চিনের সীমান্তে অনুপ্রবেশের প্রতিক্রিয়া হিসাবে ঘটেছে

যখন ডিবিও এয়ারফিল্ড পুনরায় চালু হয়, প্রায় একই সময়ে লাদাখের ফুকচে নিয়োমা এয়ারফিল্ডগুলিও ২০০৮ ও ২০০৯ সালে পুনরায় চালু করা হয়। এই দুই এয়ারফিল্ড হয় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বা ১৯৬২ সালের যুদ্ধের পরে অব্যবহৃত হয়ে পড়েছিলতাই তাদের পুনরায় চালু করাঘটনাটি কৌশলগত নিয়মে ক্রমাগত অমান্য করাকেই দর্শায়। ২০১৭ সালে ডোকলাম সঙ্কটের পরে নিয়োমা এয়ারফিল্ডের উপর নজর দেওয়া হয় এবং বর্তমানে এটির আধুনিক ল্যান্ডিং গ্রাউন্ডের সংস্কারকাজ চলছে। এই নতুন রানওয়েগুলি ফাইটার এয়ারক্রাফট বা যুদ্ধবিমান ব্যবহার করার সুবিধা দেবে এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরীর মতে, এই এলাকায় আরও সামরিক স্থিতিস্থাপকতা যোগ করবে।(৮২) উপরন্তু, বিআরও দাবি করে যে, ২০২৩ সালের অগস্ট মাস থেকে শুরু হওয়া নতুন রানওয়েগুলির কাজ সম্ভবত দুটি মরসুমের মধ্যে সম্পন্ন হবে যদি এমনটা করা সম্ভব হয়, তবে তা আধুনিক বিআরও-র বৃহত্তর দক্ষতাকেই তুলে ধরবে। যাই হোক, ওআরএফ বিশ্লেষক ডঃ মনোজ জোশীর মতে, সীমান্তে এই অবতরণ স্থলগুলির নৈকট্যের কারণে কোনও সংঘাতের সময় শত্রুর গোলাবর্ষণের ফলে সেগুলি আবার দ্রুত অকার্যকর হয়ে যেতে পারে।(৮৩)

২০১৭ সালে ডোকলামের পর নিয়োমায় সংস্কারের মতো ভারত অরুণাচল প্রদেশে আরও সাতটি আধুনিক ল্যান্ডিং গ্রাউন্ড সংস্কার করার সিদ্ধান্ত নেয়।(৮৪) এই ল্যান্ডিং গ্রাউন্ডগুলি পূর্বাঞ্চলীয় ক্ষেত্রে আরও গতিশীলতা স্থিতিস্থাপকতা প্রদান করে, যা সাধারণত এত দিন যাবৎ কম মনোযোগ পেয়ে এসেছে(৮৫)

বিআরও জানিয়েছে যে, দুটি নতুন হেলিপ্যাড ২০২২ সালে পূর্ব লাদাখের হ্যানলে এবং থানকুং-এ সম্পূর্ণ হয়েছিল। চণ্ডীগড়ের এয়ার ডিসপ্যাচ সাব ইউনিট ‘বাস্তবে কাজ সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় মজুত, সরঞ্জামের দক্ষ নিরবচ্ছিন্ন বিতরণ সুনিশ্চিত করার জন্য সংস্কার করা শুরু করে।(৮৬) ২০২১ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকার শুধু মাত্র লাদাখেই চারটি নতুন বিমানবন্দর ও ৩৭টি নতুন হেলিপ্যাডের পরিকল্পনা করে।(৮৭) ২০২২ সালে এ কথা ব্যাপক ভাবে প্রতিবেদিত হয়েছিল যে, ভারতীয় সেনাবাহিনী উল্লেখযোগ্য সংস্কারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং তার রকেট বাহিনীকে শক্তিশালী ও প্রসারিত করছে।(৮৮) এই পদক্ষেপ সম্ভবত চিনের নিজস্ব রকেট বাহিনী সম্প্রসারণ এবং একটি আক্রমণাত্মক প্রতিরোধক নির্মাণের বিদ্যমান উদ্যোগের প্রতিক্রিয়ায় ঘটেছে(৮৯) এয়ারফিল্ডের উদ্বোধন, সংস্কার এবং পুনরায় চালু করার পাশাপাশি সামরিক বাহিনীও গলওয়ানের পরে পোর্টেবল হেলিপ্যাড’ গড়ে তোলার অনুরোধ করেছিল। সম্পূর্ণ প্রসারিত হলে এটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এলাকায় সরবরাহ শৃঙ্খলের নির্ভরযোগ্যতা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং বর্তমানে কর্মরত বাহিনীর আক্রমণাত্মক প্রতিরক্ষামূলক ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে(৯০)

হিমালয়ে ভারতীয় বিমান অবকাঠামো এমন ভাবে স্থাপন করা হয়েছে, যাতে চিনের উপর কৌশলগত সুবিধার নিরিখে সড়কের বিপরীতে ভূখণ্ডটি অতিরিক্ত সাহায্য করতে পারে। এর কারণ হল বিশাল দ্রুত উচ্চতার পরিবর্তন, যেখানে চিনা বিমানবাহিনী বিশাল তিব্বত মালভূমিতে উচ্চ উচ্চতায় তার প্রাসঙ্গিক ঘাঁটি বজায় রাখতে বাধ্য ভারতের কাছে তাদের রানওয়ে হেলিপ্যাড স্থাপনের জন্য কাছাকাছি উপত্যকা পাদদেশের সুবিধা রয়েছে। আঞ্চলিক অসামঞ্জস্যের মূল প্রভাব হল এই যে, ভারতের নিম্ন পরিকাঠামো বিমানগুলিকে ঘন বাতাসে উড়ান করার সুযোগ দেয় এবং তাদের সম্পূর্ণ ভার বহন করার ক্ষমতা প্রদান করে। অন্য দিকে তা চিনা বিমান বাহিনীকে অবশ্যই উল্লেখযোগ্য ভাবে (প্রায়৫০ শতাংশ হারে উদ্ধৃত করা হয়) কম পরিমাণে জ্বালানি ও পণ্যের ভার বহন করতে পারবে।(৯১) এই ভূ-সংস্থানগত পার্থক্য আকাশপথে ভারতকে দারুণ সুবিধা করে দেয়।

রেল অবকাঠামো

ভারত সরকার দেশের অন্যান্য অঞ্চলে  প্রচুর পরিমাণে রেলপথ বৃদ্ধি করা সত্ত্বেও চিরাচরিত ভাবে এলএসি-র কাছাকাছি অঞ্চলে রেল অবকাঠামো অবহেলিত থেকেছে। গলওয়ানের ঘটনার পর সেই অঞ্চলে নাটকীয় ভাবে রেল অবকাঠামো বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এই উপেক্ষার কারণ হল, রেললাইনগুলি স্থাপন এবং রক্ষণাবেক্ষণের সাথে জড়িত ব্যয় এবং এলএসসি বরাবর সীমিত অবকাঠামোর তত্ত্ব। বর্তমানে এলএসি-র কাছাকাছি কোন কৌশলগত ভাবে প্রাসঙ্গিক রেলপথ নেই।(৯২)

এলএসি-র কাছাকাছি বৃহত্তম রেল প্রকল্প হল ৩৩৮ কিমি দীর্ঘ জম্মু-বারামুল্লা লাইন (উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুল্লা রেল লিঙ্ক নামেও পরিচিত)। এই প্রকল্পটি ১৯৯৪ সালে ঘোষণা করা হলেও সন্ত্রাস, তহবিলের অভাব, দুর্গম ভূখণ্ড-সহ নানাবিধ বাধার কারণে এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। প্রকল্পটির জন্য ৩৫০ বিলিয়ন ভারতীয় টাকা (৪.২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) খরচ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ব্যয়বহুল এবং দীর্ঘমেয়াদি এই প্রকল্পটি সুড়ঙ্গ সেতু নির্মাণে ভারতের নতুন সক্ষমতা প্রদর্শন করেকারণ উভয় ক্ষেত্রেই ভারতের অভূতপূর্ব প্রয়োজন হয়েছে।(৯৩)

অন্যান্য উল্লেখযোগ্য রেলপথ এলএসি-র পূর্ব ক্ষেত্রে অবস্থিত এবং তা ২০১৪ সালে তৈরি করা হয়েছিল। ২২ কিমি দীর্ঘ হারমুতি-নাহারলাগুন লাইন, যা কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ অরুণাচল প্রদেশকে দেশের বাকি অংশের সঙ্গে সংযুক্তকারী প্রথম রেলপথও বটে। এই লাইনের আগে শুধুমাত্র এর [অরুণাচল প্রদেশের] সীমান্তের ভিতরে ১.২৬ কিলোমিটার রেলপথ ছিল।(৯৪)

গলওয়ানের পরে, রেলপথের পরিকল্পনার সংখ্যা আপাতদৃষ্টিতে বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যাই হোক, সীমিত সংখ্যক সীমান্ত রেল প্রকল্প এবং নির্মাণে বিলম্বের কারণে (জম্মু-বারামুল্লা লাইন) এই পরিকল্পনাগুলির গতি নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। জম্মু-বারামুল্লা লাইনের পাশাপাশি - যেটি ২০২৪ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা - নতুন রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনাগুলি বেশির ভাগই পূর্ব ক্ষেত্রের সঙ্গে সংযুক্ত, যেখানে বেশ কয়েকটি কৌশলগত রেলপথ নির্মাণের কাজ চলছে। প্রিন্ট-এর স্নেহেশ অ্যালেক্স ফিলিপের মতে, ভালুকপং থেকে তাওয়াংয়ের (অরুণাচল প্রদেশ) মধ্যে একটি ২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রডগেজ লাইন, সিলাপাথর (সম) থেকে বামে (অরুণাচল প্রদেশ) হয়ে আলং পর্যন্ত ৮৭ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ এবং রূপা (অসম) থেকে পাসিঘাট (অরুণাচল প্রদেশ) পর্যন্ত ২১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ… এই সব কিছুই আসলে নাথু লা থেকে রংপো পর্যন্ত একটি লাইন বরাবর পরিকল্পনা করা হয়েছে। পাসিঘাট-এ ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি উন্নত অবতরণ স্থলও রয়েছে(৯৫) এই কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গেলে কম খরচে ভারী পণ্যসম্ভার সৈন্যদের কৌশলগত এলাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর ক্ষমতা ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পাবে

উপসংহার

ভারতীয় পরিকাঠামোর চিত্র আজ থেকে ১০ বা ১৫ বছর আগে যেমনটা ছিল, তার চেয়ে অনেক ভাল অবস্থায় রয়েছে। যদিও ভারতীয় পরিকাঠামোর সামগ্রিক গতি স্তর অবশ্যই চিনেসঙ্গে মেলে না। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারতে তার গতি বাড়ানো হয়েছে এবং সুড়ঙ্গ এবং সেতুগুলির বিস্তার একক ভাবে সামর্থ্যের সামগ্রিক বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।(৯৬)

অতীতে অবকাঠামো নির্মাণ একটি প্রতিরক্ষামূলক সামরিক তত্ত্ব দ্বারা বাধাগ্রস্ত হয়েছিল এবং পরবর্তী সময়ে তহবিল সীমাবদ্ধতার কারণে আমলাতন্ত্রের গেরোয় আটকে পড়েছিল।(৯৭) সেই সময় ও বর্তমান সময়ের মধ্যে ভারত উচ্চ হিমালয়ের ভয়ংকর প্রেক্ষাপটের সঙ্গে লড়াই করেছে, যা অবস্থান তৈরি এবং তা বজায় রাখার প্রচেষ্টাকে ধীর করে দিয়েছিল(৯৮) এলএসি-র কাছাকাছি অবকাঠামোগত উন্নতির দিকে মনোযোগ দেওয়ার মূল কারণগুলি হল বাজেট বৃদ্ধি এবং আমলাতান্ত্রিক পরিবর্তনের আধিক্য।(৯৯) এর আগে, হেন পরিবর্তনগুলিকে এলএসি বরাবর কৌশলগত পরিবেশের পরিবর্তনের জন্য দায়ী করা যেতে পারে, যা ২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকে স্বীকৃতি পেতে শুরু করে, কূটনৈতিক অচলাবস্থা অনুসরণ করে এবং ২০১০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে শেষের দিকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। রাষ্ট্রদূত কান্থা নিবন্ধের লেখকের কাছে বর্ণনা করেছেন যে, ২০০৮ সাল নাগাদ চিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের প্রতিযোগিতার আলোকে ভারতকে দেখতে শুরু করে এবং এই পরিবর্তনের পরে তাদের কার্যকলাপ আরও উস্কানিমূলক হয়ে ওঠে।(১০০)

ডোকলাম গলওয়ানকে অনুসরণ করে ২০০০-এর দশকের শেষের দিকে বেশির ভাগ সংস্কার-সহ বিমান পরিকাঠামোর উন্নয়ন সড়কের অনুরূপ গতিপথ অনুসরণ করেছে। রেল অবকাঠামোর বিষয়ে একটি সুবিশাল অসামঞ্জস্য রয়েছে এবং যেটুকু রেলপথ তৈরি করা হয়েছে, তা দীর্ঘ সময় নিয়েছে। এই মুহূর্তে আরও একাধিক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়ে চলেছে, যা সামগ্রিক একটি উজ্জ্বল ছবি প্রদান করতে পারে।(১০১) কৌশলগত ভাবে, সরবরাহ শৃঙ্খল স্থিতিস্থাপকতা, সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যান্ডউইথ, ফোর্স ইনডাকশন টাইম বা শক্তি আনয়নের গতি এবং সাধারণ প্রস্তুতির উন্নতিতে অবকাঠামোর সমস্ত উপাদান অর্থাৎ সড়ক, বিমান এবং রেলপথের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এ কথা মাথায় রেখে, গত ১৫ বছরে এলএসি-র কাছাকাছি অঞ্চলে পরিকাঠামো আরও দ্রুত উন্নত করা ভারত সরকারের তরফে নিঃসন্দেহে বুদ্ধিমানের কাজ। এই ভারতীয় পরিকাঠামো নির্মাণ চিনা আগ্রাসনের উপর প্রতিবন্ধকতামূলক প্রভাব ফেলবে কি না, তা বিশ্লেষণ করা অবশ্য গবেষকদের সামনে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

পাদটীকা

ক) এই গবেষণামূলক নিবন্ধে এলএসি-র আশেপাশে নির্দিষ্ট সড়কের গুণমান সম্পর্কে খুব বেশি উল্লেখ নেই। কারণ এই বিষয়ে কার্যত কোন বিশ্বাসযোগ্য গবেষণা নেই।

খ) তদন্তের জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এবং বিআরও উভয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোন সংস্থাই অনুরোধে সাড়া দেয়নি।

গ) এর মধ্যে রয়েছে ড. মনোজ যোশী, রাষ্ট্রদূত অশোক কান্থা, জয়দেব রানাডে, দিনকর পেরি, স্নেহেশ অ্যালেক্স ফিলিপ, রেজাউল হাসান লস্কর, কল্পিত মানকিকর, তৃষা রায় এবং নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তিবর্গ।

) এই ঘটনার প্রভাব এই নিবন্ধে একটি পুনরাবৃত্ত ভাবনা হয়ে উঠবে।

) ভারতীয় সামরিক বাহিনী আরও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জন করার পরে এই চিন্তাভাবনা পরে পরিবর্তিত হবে, যা মূলত তার বর্ধিত রকেট গোলাবারুদের সক্ষমতা থেকে উদ্ভূত হয়।

চ) অতি সম্প্রতি, সামরিক প্রতিষ্ঠানে আর কটি পরিবর্তন ঘটেছে যা পাকিস্তানের ধারণার সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। অনেক বিশেষজ্ঞ (হাসান রেজাউল লস্কর, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার, নয়াদিল্লি, জুন ১৫, ২০২৩; স্নেহেশ অ্যালেক্স ফিলিপ, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার, নয়াদিল্লি, জুন ১৬, ২০২৩) উল্লেখ করেছেন যে, কৌশলগত চিন্তাভাবনা পাকিস্তানকে কেন্দ্র করে থাকলেও যেহেতু পাকিস্তান এখনও তথৈবচ অবস্থায় রয়েছে, তাই ভারত তার শক্তি চিনেপ্রতি বরাদ্দ করবে।

) বিশেষত, হিমালয় একটি কৌশলগত পরিবেশ তৈরি করে, যেখানে উভয় পক্ষের জন্য তাদের সরবরাহ শৃঙ্খল প্রসারিত না করে এবং/অথবা গুরুতর বাধার সম্মুখীন না হয়ে দ্রুত অগ্রসর হওয়া খুবই কঠিন।

জ) কিছু গবেষক উল্লেখ করেন যে, বাজপেয়ী ১৯৯৯ সালে ১৩টি সীমান্ত সড়ক নির্মাণের অনুমোদন দিলেও বেশির ভাগই এটি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। কারণ এটি নিয়ে কোনও কাজ করা হয়নি এবং বেশির ভাগ সরকারি নথিতে তার উল্লেখ করা হয়নি।

ঝ) কথা মনে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ হবে যে, এলএসি বরাবর ভারতীয় পরিকাঠামোগত উন্নয়নের অনেকটাই কৌশলগত হলেও প্রচেষ্টার কিছু অংশ প্রকৃতিগত ভাবেই নির্দোষ। সাধারণ ভাবে পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সংযোগ বাড়ানো এবং তাদের উন্নয়নের স্তর বৃদ্ধি করার জন্য ভারতের এই প্রচেষ্টাগুলি তাদের পশ্চিমাঞ্চলে চিনের নিজস্ব প্রচেষ্টার অনুকরণে করা হয়।

ঞ) কথা উল্লেখ করা জরুরি যে, যেমনটা ড. মনোজ জোশী বর্ণনা করেছেন, ভারত নিজের প্রতিসম ভূখণ্ডের কারণে তিব্বত মালভূমিতে চিনের তুলনায় সর্বদা একটি অবকাঠামোগত অসুবিধার মধ্যে থাকবে। জলবায়ু, উচ্চতা পরিবর্তন পৃথিবীর গতিবিধি-সহ পূর্বে উল্লিখিত অগণিত এবং বহুমাত্রিক কারণগুলির দরুন চিনের তুলনায় ভারতেঅবকাঠামো প্রকল্প সর্বদা ধীর এবং আরও ব্যয়বহুল হবে। পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ায় চিনের একটি উল্লেখযোগ্যভাবে সহজ অবকাঠামোগত চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তিব্বতীয় মালভূমি একটি স্বতন্ত্র ভাবে সমতল এবং শুষ্ক ভূখণ্ড, যেটিকে সঠিক ভাবে সংস্থান জোগানো গেলে (যেমনটি সম্পন্ন করা হয়েছে) খুব সহজেই সেখানে নির্মাণকাজ করা সম্ভব। ড জোশী যেমন বলেছেন, তিব্বতে একটি রাস্তা ধ্বংস হলে চিন কাছাকাছি আর কটি রাস্তা খুঁজে পেতে পারে, সেটি অতিক্রম করে সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারে। যাই হোক, ভারতে যদি একটি অনুদৈর্ঘ্য রাস্তা ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে ভারতকে হয় শৈলশিরা থেকে সমতল ভূমিতে ফিরে যেতে হবে এবং সেখান থেকে অন্য রাস্তা নিতে হবে, অথবা ইতিমধ্যেই তৈরি করা একটি সেতু বা সুড়ঙ্গপথে সংলগ্ন পর্বতগুলি অতিক্রম করতে হবে (মনোজ জোশী, নয়াদিল্লি, জুন ২০২৩)

ট) এই বিমানঘাঁটিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি চিনের দিক থেকে খুব কাছাকাছি (প্রায় ১০ কিমি) এবং তাই এটি একটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত। এটি ভারতের একমাত্র নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলির মধ্যে অন্যতম, যা সমতল তিব্বত মালভূমিতে অবস্থিত এবং এটিকে আক্রমণাত্মক পদক্ষেপের জন্য একটি অনন্য ভাবে উপযুক্ত ভূখণ্ড করে তোলেদ্রষ্টব্য: https://theprint.in/opinion/new-road-to-dbo-not-enough-to-stop-pla-tunnel-under-saser-la-pass-is-the-solution/1626931/.

১) দিনকর পেরি, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার, নয়াদিল্লি, জুন ১৬, ২০২৩; স্নেহেশ আলেক্স ফিলিপ, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার, নয়াদিল্লি, জুন ১৬, ২০২৩

২) অশোক কান্থা, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার, নয়াদিল্লি, জুন ১৪, ২০২৩; ফিলিপ, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার; প্রেস ইনফর্মেশন ব্যুরো, ‘কনস্ট্রাকশন অফ অল ওয়েদার রোডস ইন বর্ডার এরিয়াজ’, ২০২২, https://pib.gov.in/PressReleaseIframePage.aspx?PRID=1844615; হিন্দুস্থান টাইমস, ‘গলওয়ান চেঞ্জড ইন্ডিয়া’জ বর্ডার ইনফ্রা ব্লিৎস ভার্সাস চায়না’, ইউটিউব ভিডিয়ো, ২০২৩, https://www.youtube.com/watch?v=osl5kzzdpBw&ab_channel=HindustanTimes.

৩) পেরি, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার; মনোজ জোশি, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার, নয়াদিল্লি, জুন ২০, ২০২৩; ব্রিগেডিয়ার দীপক সিনহা, ইমেলে লেখকের সঙ্গে কথা, এপ্রিল ২১, ২০২৩

৪) ফিলিপ, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার; মনোজ জোশি, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার

৫) মনোজ জোশি, ‘এসে’, ইন আন্ডারস্ট্যান্ডিং দি ইন্ডিয়া-চায়না বর্ডার- দি ইনডিওরিং থ্রেট অফ ওয়ার ইন দ্য হাই হিমালয়াজ (গুরুগ্রাম, হরিয়ানা- হারপার কলিন্স পাবলিশার্স ইন্ডিয়া, ২০২২)

৬) পেরি, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার; ফিলিপ, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার

৭) জোশি, ‘এসে’

৮) জোশি, ‘এসে’, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার, ফ্র্যাঙ্ক ও’ডনেল এবং অ্যালেক্স বলফ্রাস, ‘প্রজেক্ট অন ম্যানেজিং দি অ্যাটম দ্য স্ট্র্যাটেজিক পশ্চারস অব চায়না অ্যান্ড ইন্ডিয়া’, বেলফের সেন্টার, ২০২০, https://www.belfercenter.org/sites/default/files/2020-03/india-china-postures/China%20India%20Postures.pdf; জোশি, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার

৯) মনোজ জোশি, ওআরএফ ইন্টারনাল মিটিং-এ বক্তব্য, অগস্ট ২১, ২০২৩

১০) রাজেশ্বরী পিল্লাই রাজাগোপালন, ‘মিটিং চায়না’জ মিলিটারি চ্যালেঞ্জ’, এনবিআর, https://www.nbr.org/wp-content/uploads/pdfs/publications/sr96_meeting_chinas_military_challenge_jan2022.pdf; হরিশ কুনওয়ার, ‘ট্রেন-লিঙ্ক ফর জে অ্যান্ড কে প্রসপারিটি’, দি ইন্ডিয়া পোস্ট, অক্টোবর ১৬, ২০০৮. https://www.theindiapost.com/nation/jammu/train-link-for-j-k-prosperity/.

১১) টি ওয়েটজেল, “Ukraine Air War examined: A Glimpse at the Future of Air Warfare,” আটলান্টিক কাউন্সিল, অগস্ট ৩১, ২০২২; জোশি, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার

১২) ‘হাউ ইজ চায়না এক্সপ্যান্ডিং ইটস ইনফ্রাস্ট্রাকচার টু প্রজেক্ট পাওয়ার অ্যালং ইটস ওয়েস্টার্ন বর্ডারস?’ চায়না পাওয়ার প্রজেক্ট, মার্চ ২৩, ২০২২, https://chinapower.csis.org/china-tibet-xinjiang-border-india-military-airport-heliport/.

১৩) জোশি, ‘এসে’

১৪) জোশি, ‘এসে’, জোশি, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার; ফিলিপ, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার

১৫) সমীর পাটিল প্রদত্ত মানচিত্র, লেখককে ইমেলে প্রেরণ, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৩

১৬) জয়দেব রানাডে, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার, নয়াদিল্লি, জুন ১৩, ২০২৩; জোশি, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার

১৭) সিনহা, লেখককে ইমেল

১৮) জোশি, ‘এসে’; সিনহা, লেখকে ইমেল

১৯) কান্থা, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার; জোশি, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার; হাসান রেজাউল লস্কর, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার, নয়াদিল্লি, জুন ১৫, ২০২৩

২০) হিন্দুস্থান টাইমস, ‘গলওয়ান চেঞ্জড ইন্ডিয়া’জ বর্ডার ইনফ্রা ব্লিৎস ভার্সাস চায়না’

২১) হিন্দুস্থান টাইমস, ‘গলওয়ান চেঞ্জড ইন্ডিয়া’জ বর্ডার ইনফ্রা ব্লিৎস ভার্সাস চায়না’; জোশি, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার

২২) হিন্দুস্থান টাইমস, ‘গলওয়ান চেঞ্জড ইন্ডিয়া’জ বর্ডার ইনফ্রা ব্লিৎস ভার্সাস চায়না’

২৩) জোশি, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার; দিবাকর মিশ্র, ‘পলিসি গাইডলাইনস ফর চেঞ্জ ইন কনস্ট্রাকশন ফিলোজফি অব বিআরও’, ২০১৭

২৪) জোশি, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার; মিশ্র, ‘পলিসি গাইডলাইনস ফর চেঞ্জ ইন কনস্ট্রাকশন ফিলোজফি অব বিআরও’; জোশি, ওআরএফ-এর ইন্টারনাল মিটিংয়ে বক্তব্য

২৫) মিনিস্ট্রি অব ডিফেন্স, প্রভিশন অফ অল-ওয়েদার রোড কানেক্টিভিটি আন্ডার বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন (বিআরও), নয়াদিল্লি, লোকসভা সেক্রেটারিয়েট, ২০১৯, https://eparlib.nic.in/bitstream/123456789/783598/1/16_Defence_50.pdf; হিন্দুস্থান টাইমস, ‘গলওয়ান চেঞ্জড ইন্ডিয়া’জ বর্ডার ইনফ্রা ব্লিৎস ভার্সাস চায়না’

২৬) প্রবীর দে, ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ইন ইন্ডিয়া’, ইন ইন্টারন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ইন ইস্ট এশিয়া – টুওয়ার্ডস ব্যালান্সড রিজিওনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ইন্টিগ্রেশন, সম্পাদনা এন কুমার (চিনা- ইআরআইএ, ২০০৮), https://www.eria.org/uploads/media/Research-Project-Report/RPR_FY2007_2_Chapter_4.pdf; জোশি, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার; সুধীরঞ্জন সেন, ‘ওনলি ২০ পারসেন্ট অফ ইন্ডিয়া-চায়না স্ট্র্যাটেজিক বর্ডার রেডি টিল নাও’, এনডিটিভি, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৫, https://www.ndtv.com/india-news/only-one-fifth-of-india-china-strategic-border-roads-ready-till-now-743051.

২৭) সেন, ‘ওনলি ২০ পারসেন্ট অফ ইন্ডিয়া-চায়না স্ট্র্যাটেজিক বর্ডার রেডি টিল নাও’

২৮) রানাডে, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার

৩০) হিন্দুস্থান টাইমস, ‘গলওয়ান চেঞ্জড ইন্ডিয়া’জ বর্ডার ইনফ্রা ব্লিৎস ভার্সাস চায়না’

৩১) কান্থা, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার

৩২) ‘রাইট অব প্যাসেজ- ন্যাশনাল এলিফ্যান্ট করিডোরস প্রজেক্ট’, ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া, জুলাই ৫, ২০২৩, https://www.wti.org.in/projects/right-of-passage-national-elephant-corridors-project/.

৩৩) কান্থা, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার

৩৪) মিশ্র, ‘পলিসি গাইডলাইনস ফর চেঞ্জ ইন কনস্ট্রাকশন ফিলোজফি অব বিআরও’

৩৫) মিশ্র, ‘পলিসি গাইডলাইনস ফর চেঞ্জ ইন কনস্ট্রাকশন ফিলোজফি অব বিআরও’; মিনিস্ট্রি অব ডিফেন্স, অ্যানুয়াল রিপোর্ট ২০১৮-১৯, মিনিস্ট্রি অব ডিফেন্স, ২০১৯, https://mod.gov.in/dod/sites/default/files/MoDAR2018.pdf.

৩৬) মিশ্র, ‘পলিসি গাইডলাইনস ফর চেঞ্জ ইন কনস্ট্রাকশন ফিলোজফি অব বিআরও’; অ্যানুয়াল রিপোর্ট ২০১৮-১৯

৩৭) মিশ্র, ‘পলিসি গাইডলাইনস ফর চেঞ্জ ইন কনস্ট্রাকশন ফিলোজফি অব বিআরও’

৩৮) মিশ্র, ‘পলিসি গাইডলাইনস ফর চেঞ্জ ইন কনস্ট্রাকশন ফিলোজফি অব বিআরও’

৩৯) ট্রেডিং ইকোনমিকস, ‘ইন্ডিয়া গভর্নমেন্ট রেভিনিউজ’, https://tradingeconomics.com/india/government-revenues.

৪০) ম্যাক্রো ট্রেন্ডস, “ইন্ডিয়া জিডিপি ১৯৬০-২০২৩"; আইএমএফ, “ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক ডেটাবেস,” এপ্রিল ৭, ২০২৩

৪১) ম্যাক্রো ট্রেন্ডস, “ইন্ডিয়া জিডিপি ১৯৬০-২০২৩"

৪২) আইএমএফ, “ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক ডেটাবেস

৪৩) জোশি, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার; কান্থা, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার

৪৪) মিনিস্ট্রি অব ডিফেন্স, গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া, https://pib.gov.in/PressReleaseIframePage.aspx?PRID=1844615.

৪৫) মিনিস্ট্রি অব ডিফেন্স, গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া, https://pib.gov.in/PressReleaseIframePage.aspx?PRID=1844615.

৪৬) মিশ্র, ‘পলিসি গাইডলাইনস ফর চেঞ্জ ইন কনস্ট্রাকশন ফিলোজফি অব বিআরও’

৪৭) হিন্দুস্থান টাইমস, ‘গলওয়ান চেঞ্জড ইন্ডিয়া’জ বর্ডার ইনফ্রা ব্লিৎস ভার্সাস চায়না’

৪৮) মিনিস্ট্রি অব ডিফেন্স, গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া, https://pib.gov.in/PressReleaseIframePage.aspx?PRID=1794833; “ক্যাপিটাল বাজেট অব বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন ইনক্রিজড বাই ৪৩ পারসেন্ট টু ৫০০০ কোটি টাকা; অ্যালাউন্স ডাবলড ইন টু ইয়ার্স,” স্বরাজ্য, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৩

৪৯) হিন্দুস্থান টাইমস, ‘গলওয়ান চেঞ্জড ইন্ডিয়া’জ বর্ডার ইনফ্রা ব্লিৎস ভার্সাস চায়না’

৫০) হিন্দুস্থান টাইমস, ‘গলওয়ান চেঞ্জড ইন্ডিয়া’জ বর্ডার ইনফ্রা ব্লিৎস ভার্সাস চায়না’

৫১) জোশি, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার; “শিঙ্কু লা টানেল কনস্ট্রাকশন টু বিগিন বাই জুলাই, সেজ বিআরও ডিজি,” দ্য ট্রিবিউন, এপ্রিল ৯, ২০২৩; “জোজিলা টানেল প্রজেক্ট উইল বি কমপ্লিটেড বাই ডিসেম্বর ২০২৩, আর্লিয়ার ডেডলাইন ২০২৬: নীতিন গডকড়ি,” মানিকন্ট্রোল, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২১; জোশি, ওআরএফ-এর ইন্টারনাল মিটিংয়ে বক্তব্য

৫২) মিশ্র, ‘পলিসি গাইডলাইনস ফর চেঞ্জ ইন কনস্ট্রাকশন ফিলোজফি অব বিআরও’

৫৩) ‘চায়না বর্ডার রোডস স্টিল আ ডিস্ট্যান্ট ড্রিম’, দ্য স্টেটসম্যান, মার্চ ২৫, ২০১৭, https://www.thestatesman.com/world/china-border-roads-still-a-distant-dream-1490478802.html; জোশি, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার

৫৪) মনোজ জোশি, ‘চ্যাপ্টার ১৯’, ইন দি অক্সফোর্ড হ্যান্ডবুক অফ ইন্ডিয়ান ফরেন পলিসি (অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ২০১৫), ৫৮০-৮১

৫৫) ‘ফাইভ ইয়ার্স, ৩৫৯৫ কিলোমিটার নিউ বর্ডার রোডস’, দ্য ট্রিবিউন, অগস্ট ১০, ২০২২, https://www.tribuneindia.com/news/nation/5-yrs-3-595-km-new-border-roads-420500; হিন্দুস্থান টাইমস, ‘গলওয়ান চেঞ্জড ইন্ডিয়া’জ বর্ডার ইনফ্রা ব্লিৎস ভার্সাস চায়না’

৫৬) ‘ফাইভ ইয়ার্স, ৩৫৯৫ কিলোমিটার নিউ বর্ডার রোডস’

৫৭) সেন, ‘ওনলি ২০ পারসেন্ট অফ ইন্ডিয়া-চায়না স্ট্র্যাটেজিক বর্ডার রেডি টিল নাও’

৫৮) সেন, ‘ওনলি ২০ পারসেন্ট অফ ইন্ডিয়া-চায়না স্ট্র্যাটেজিক বর্ডার রেডি টিল নাও’

৫৯) সেন, ‘ওনলি ২০ পারসেন্ট অফ ইন্ডিয়া-চায়না স্ট্র্যাটেজিক বর্ডার রেডি টিল নাও’

৬০) ‘লোকসভা কোয়েশ্চেন নম্বর ৪৪৯০: কনস্ট্রাকশন অব বর্ডার রোডস,’ ২০১৪, https://www.eparlib.nic.in/bitstream/123456789/710639/1/8769.pdf.

৬১) প্রভিশন অফ অল-ওয়েদার রোড কানেক্টিভিটি আন্ডার বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন (বিআরও)

৬২) মিশ্র, ‘পলিসি গাইডলাইনস ফর চেঞ্জ ইন কনস্ট্রাকশন ফিলোজফি অব বিআরও’

৬৩) অ্যানুয়াল রিপোর্ট ২০১৮-১৯

৬৪) মিশ্র, ‘পলিসি গাইডলাইনস ফর চেঞ্জ ইন কনস্ট্রাকশন ফিলোজফি অব বিআরও’

৬৫), প্রভিশন অফ অল-ওয়েদার রোড কানেক্টিভিটি আন্ডার বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন (বিআরও)

৬৬) মিশ্র, ‘পলিসি গাইডলাইনস ফর চেঞ্জ ইন কনস্ট্রাকশন ফিলোজফি অব বিআরও’

৬৭) প্রভিশন অফ অল-ওয়েদার রোড কানেক্টিভিটি আন্ডার বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন (বিআরও)

৬৮) পেরি, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার; জোশি, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার

৬৯) পেরি, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার; জোশি, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার

৭০) কল্পিত মানকিকর, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার , নয়াদিল্লি, জুন ১২, ২০২৩; কণ্ঠ, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার; জোশি ‘চ্যাপ্টার ১৯’

৭১) কান্থা, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার

৭২) জোশি, ‘চ্যাপ্টার ১৯’; জান-তিনো ব্রেদাওয়ার প্রমুখ, ‘রাইজিং টেনশন ইন দ্য হিমালয়াজ: আ জিওস্প্যাশিয়াল অ্যানালিসিস অব চাইনিজ ইনকার্শনস ইনটু ইন্ডিয়া’, পিএলওএস ওয়ান ১৭, নম্বর ১১ (২০২২): ই০২৭৪৯৯৯, https://doi.org/10.1371/journal.pone.0274999.

৭৩) ব্রেদাওয়ার প্রমুখ, ‘রাইজিং টেনশন ইন দ্য হিমালয়া্জ’

৭৪) জোশি, ‘এসে’

৭৫) সৃজন শুক্লা, ‘হাউ ইন্ডিয়া অ্যান্ড চায়না রিজলভড থ্রি মেজর স্ট্যান্ড-অফস ইন মোদী এরা’, দ্য প্রিন্ট, ২০২০, https://theprint.in/defence/how-india-and-china-resolved-three-major-stand-offs-in-the-modi-era/430594/.

৭৬) শুক্লা, ‘হাউ ইন্ডিয়া অ্যান্ড চায়না রিজলভড থ্রি মেজর স্ট্যান্ড-অফস ইন মোদী এরা’

৭৮) দিনকর পেরি, “ইন্ডিয়ান, চাইনিজ ট্রুপস ফেস অফ ইন ইস্টার্ন লাদাখ, সিকিম” দ্য হিন্দু, মে ১০, ২০২০

৭৯) রানাডে, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার; জোশি, ওআরএফ-এর ইন্টারনাল মিটিংয়ে বক্তব্য

৮০) অম্বুজ পাণ্ডে, “আইএএফ রিয়্যাক্টিভেটেড ডিবিও এয়ারস্ট্রিপ উইদাউট সেন্টার’স পারমিশন, সেজ এয়ার মার্শাল (রিটায়ার্ড) প্রণব কুমার বারবোরা,” এএনআই নিউজ, জুন ৭, ২০২০

৮১) পাণ্ডে, “আইএএফ রিয়্যাক্টিভেটেড ডিবিও এয়ারস্ট্রিপ উইদাউট সেন্টার’স পারমিশন

৮৪) “আফটার ডোকলাম ক্রাইসিস, ইন্ডিয়া প্ল্যানস টু ডেভেলপ মোর এয়ারফিল্ডস অ্যালং চায়না বর্ডার ইন লাদাখ,” ইন্ডিয়া টুডে, নভেম্বর ৪, ২০১৭

৮৫) পেরি, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার; মিনিস্ট্রি অব ডিফেন্স, গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া, https://www.pib.gov.in/PressReleseDetail.aspx?PRID=1871518.

৮৬) মিনিস্ট্রি অব ডিফেন্স, গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া, https://www.pib.gov.in/PressReleseDetail.aspx?PRID=1871518.

৮৭) মনু পাব্বি, “ইন্ডিয়া প্ল্যানস ফোর এয়ারপোর্টস, ৩৭ হেলিপ্যাডস ফর বুস্টিং লাদাখ কানেক্টিভিটি,” ইকোনমিক টাইমস, ২০২১

৮৮) গ্যাব্রিয়েল হনরাদা, ‘ইন্ডিয়া’জ রকেট ফোর্স টেকস অফ উইথ চায়না ইন ইটস সাইটস’, এশিয়া টাইমস, ডিসেম্বর ৩১, ২০২২, https://asiatimes.com/2022/12/indias-rocket-force-takes-off-with-china-in-its-sights/

৮৯) পাব্বি, “ইন্ডিয়া প্ল্যানস ফোর এয়ারপোর্টস, ৩৭ হেলিপ্যাডস ফর বুস্টিং লাদাখ কানেক্টিভিটি; হনরাদা, ‘ইন্ডিয়া’জ রকেট ফোর্স টেকস অফ উইথ চায়না ইন ইটস সাইটস’; ফ্র্যাঙ্ক ও’ডনেল এবং অ্যালেক্স বলফ্রাস, প্রজেক্টস অন ম্যানেজিং দি অ্যাটম দ্য স্ট্র্যাটেজিক পশ্চারস অব চায়না অ্যান্ড ইন্ডিয়া’, বেলফার সেন্টার, ২০২০, https://www.belfercenter.org/sites/default/files/2020-03/india-china-postures/China%20India%20Postures.pdf.

৯০) আয়ুশ জৈন, ‘ইন্ডিয়ান আর্মি রিকোয়েস্টস ফর ‘পোর্টেবল হেলিপ্যাডস’ অ্যাজ বর্ডার রো উইথ চাইনিজ পিএলএ ড্র্যাগস অন’ দি ইউরেশিয়ান টাইমস, মে ৯, ২০২১, https://www.eurasiantimes.com/indian-army-requests-for-portable-helipads-as-border-row-with-chinese-pla-drags-on/.

৯১) ফিলিপ, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার; পেরি, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার

৯২) ফিলিপ, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার; জোশি, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার; স্নেহেশ অ্যালেক্স ফিলিপ এবং মৌসুমী দাশগুপ্ত, ‘ইন্ডিয়া’জ এনই স্ট্র্যাটেজিক রেল লিঙ্ক টু এলএসি উইথ চায়না গ্যাদারস পেস, প্ল্যানস টু কানেক্ট ৮ ক্যাপিটালস টু’, দ্য প্রিন্ট, ২০২২, https://theprint.in/defence/indias-ne-strategic-rail-link-to-lac-with-china-gathers-pace-plans-to-connect-8-capitals-too/1281791/.

৯৩) কুনওয়ার, ‘ট্রেন-লিঙ্ক ফর জে অ্যান্ড কে প্রসপারিটি’; এক্সপ্লেন্ড: অল অ্যাবাউট জম্মু টু কাশ্মীর রেল লিঙ্ক, সেট টু ওপেন বাই ২০২৪’, দ্য ফেডেরাল, মার্চ ২৬, ২০২৩, https://thefederal.com/explainers-2/explained-all-about-jammu-to-kashmir-rail-link-set-to-open-by-2024/; সাউথ এশিয়া টেররিজম পোর্টাল, ‘টেররিস্ট অ্যাটাকস অন রেলওয়েজ ইন ইন্ডিয়া’, https://www.satp.org/satporgtp/countries/india/database/railwayattack.htm.

৯৪) “কানেক্টিং দ্য ল্যান্ড অব দ্য রাইজিং সান – অরুণাচল প্রদেশ,” পিআইবি

৯৫) ফিলিপ এবং দাশগুপ্ত, ‘ইন্ডিয়া’জ এনই স্ট্র্যাটেহিক রেল লিঙ্ক টু এলএসি উইথ চায়না গ্যাদারস পেস’

৯৬) জোশি, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার; ফিলিপ, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার; কান্থা, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার; সুহাসিনী হায়দার, “এক্সপ্লেনড: হাউ ইজ দ্য গভর্নমেন্ট র‍্যাম্পিং আপ বর্ডার ইনফ্রাস্ট্রাকচার?” দ্য হিন্দু, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩; মিশ্র, ‘পলিসি গাইডলাইনস ফর চেঞ্জ ইন কনস্ট্রাকশন ফিলোজফি অব বিআরও’

৯৭) জোশি, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার; মিশ্র, দিবাকর, ‘পলিসি গাইডলাইনস ফর চেঞ্জ ইন কনস্ট্রাকশন ফিলোজফি অব বিআরও’

৯৮) হায়দার, এক্সপ্লেনড: হাউ ইজ দ্য গভর্নমেন্ট র‍্যাম্পিং আপ বর্ডার ইনফ্রাস্ট্রাকচার?

৯৯) মিশ্র, ‘পলিসি গাইডলাইনস ফর চেঞ্জ ইন কনস্ট্রাকশন ফিলোজফি অব বিআরও’

১০০) জোশি, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার; কান্থা, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার; মানকিকর, লেখকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার

১০১) ফিলিপ এবং দাশগুপ্ত, ‘ইন্ডিয়া’জ এনই স্ট্র্যাটেজিক রেল লিঙ্ক টু এলএসি উইথ চায়না গ্যাদারস পেস’

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.