Author : Aleksei Zakharov

Issue BriefsPublished on Jul 06, 2024 PDF Download
ballistic missiles,Defense,Doctrine,North Korea,Nuclear,PLA,SLBM,Submarines

অবহেলা থেকে পুনরুজ্জীবন: রাশিয়ার বাংলাদেশ নিয়ে আগ্রহ

  • Aleksei Zakharov

    ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থনের কারণে ঘনিষ্ঠ ঐতিহাসিক সম্পর্ক থাকলেও বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়ার বৈদেশিক নীতির অগ্রাধিকারের আওতার বাইরে ছিল। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোনও সোভিয়েত/রাশিয়ান বিদেশমন্ত্রী যে দেশটিতে সফর করেননি, তা এই সত্যের সবচেয়ে ভাল উদাহরণ। তবে, ইউক্রেনে যুদ্ধ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনার কারণে পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রাশিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করতে চাইছে। এই সংক্ষিপ্ত রচনাটি রাশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্ককে প্রভাবিত করে এমন ভূ-রাজনৈতিক কারণগুলি অন্বেষণ করে, এবং একটি গভীর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সুযোগ, এবং যে ক্ষেত্রগুলি এই ধরনের পুনরুজ্জীবন এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে তার মূল্যায়ন করে।

Attribution:

আলেক্সেই জাখারভ, "ফ্রম নেগলেক্ট টু রিভাইভাল: মেকিং সেল্স অফ রাশিয়া’‌জ আউটরিচ টু বাংলাদেশ," ওআরএফ ইস্যু ব্রিফ নং ৬৮৯, জানুয়ারি ২০২৪, অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন।

ভূমিকা

ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধের প্রায় দুই বছর পর, রাশিয়া পশ্চিম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পূর্বে পুনর্নির্মাণ শুরু করে দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন অংশীদারিত্বের সন্ধান করছে। রাশিয়ার অস্ত্র ও শক্তি সম্পদের জন্য একটি কৌশলগত গন্তব্য ভারতকে কেন্দ্র করে প্রাথমিকভাবে এই অঞ্চলে রাশিয়ার উপস্থিতি এখনও সীমিত। এইভাবে, রাশিয়া ভারতের নিকটবর্তী প্রতিবেশীদের, বিশেষ করে বাংলাদেশের, সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্বের জন্য তার প্রয়াসের পুনর্নবীকরণ করেছে।

রাশিয়া ও বাংলাদেশের সম্পর্ক মূলত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থনের স্মৃতির উপর ভিত্তি করে তৈরি, [ক] যখন সদ্যস্বাধীন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রথম রাষ্ট্রগুলির মধ্যে ছিল সোভিয়েত রাশিয়া। সোভিয়েত নেতৃত্ব এবং শেখ মুজিবুর রহমানের [খ] মধ্যে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে উৎসাহিত করেছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৭২ এবং ১৯৭৪ সালের মধ্যে সোভিয়েত নৌবাহিনী দ্বারা পরিচালিত চট্টগ্রাম বন্দরে মাইন সুইপিং অপারেশন থেকে শুরু করে ঘোড়াশাল ও সিদ্ধিরগঞ্জে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানের মতো বিভিন্ন উপায়ে বাংলাদেশকে তার গঠনমূলক বছরগুলিতে সহায়তা করেছিল। [১]

যাই হোক, ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশে অভ্যুত্থানের পর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের দ্রুত অবনতি ঘটে, [গ] ফলে মস্কোর প্রতি ঢাকার নীতি পর্যালোচনা করা হয়। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং এইচ এম এরশাদের সামরিক জমানায় ভূ-রাজনৈতিক বিভাজন স্পষ্ট ছিল আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসন এবং কম্বোডিয়ায় ভিয়েতনামের হস্তক্ষেপে মস্কোর সমর্থন নিয়ে ঢাকার উদ্বেগে। ১৯৮৩ সাল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সর্বনিম্ন বিন্দু হিসাবে চিহ্নিত হয়েছিল, যখন ঢাকা "কূটনৈতিক ব্যতীত অন্যান্য কার্যকলাপে" জড়িত থাকার জন্য ১৮ জন সোভিয়েত কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছিল। [ঘ], [২]

অবশেষে ১৯৯০-‌এর দশকে সম্পর্ক ফের ভাল করার কাজ শুরু হলে, বিশেষ করে শেখ হাসিনা সরকারের সময় (১৯৯৬-২০০১), দুই দেশের মধ্যে নতুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৯৯ সালে রাশিয়া এবং বাংলাদেশ সামরিক-প্রযুক্তিগত সহযোগিতার একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা এই ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্বের পথ প্রশস্ত করে। ১৯৯৯ সালে রাশিয়া থেকে আটটি মিগ-‌২৯ যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি হয়, কিন্তু পরবর্তীতে খালেদা জিয়ার প্রশাসনের সময় তা নিয়ে হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত শুরু হয়। [৩] ২০০৯ সালে হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামি লিগ ক্ষমতায় ফিরে আসার পর প্রতিরক্ষা ও পারমাণবিক শক্তির মতো কৌশলগত খাতে মস্কো-ঢাকা সংলাপ নতুন গতি লাভ করে। তবে এসব ক্ষেত্রে এগিয়ে গেলেও রাশিয়ার বিদেশনীতির রাডারে বাংলাদেশের অবস্থান নিচুস্তরেই ছিল।

এই সংক্ষিপ্ত রচনাটি রাশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সম্পর্কের সুযোগ, এই ধরনের পুনরুজ্জীবনের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় এলাকা, এবং এই ধরনের প্রচেষ্টায় ভারত ও চিনের ভূমিকা মূল্যায়ন করার চেষ্টা করে।

রাশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্কের রূপদানকারী ভূ-রাজনৈতিক কারণ

বাংলাদেশের দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতি, বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার, এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে প্রবেশদ্বার হিসাবে ভৌগোলিক অবস্থান দেশটিতে প্রভাব বিস্তারের জন্য মহাশক্তি ও উদীয়মান শক্তি উভয়কে উৎসাহিত করে চলেছে। [৪]

যেহেতু রাশিয়া কমপক্ষে ২০১৪ সাল থেকে এশিয়ার জন্য তার পথ তৈরি করে চলেছে, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক কারণে মস্কোকে আরও বেশি মাত্রায় আকৃষ্ট করেছে — একটি সম্ভাব্য অস্ত্র আমদানিকারক হিসাবে, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের গন্তব্য হিসাবে, এবং শস্যের বৃহত্তম বাজার হিসাবে। সরবরাহ [৫] যাই হোক, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে পশ্চিমের সঙ্গে সম্পর্কের অভূতপূর্ব অবনতির পর, বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা বজায় রাখা এবং সম্প্রসারণ করা রাশিয়ার জন্য অনেক বেশি রাজনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক তাৎপর্য ধারণ করেছে।

ইউক্রেনে যুদ্ধ

রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্বের ফলে বাংলাদেশের বিদেশনীতি রাশিয়া ও পশ্চিমী অংশীদারদের মধ্যে টানাপড়েনে পড়ে গিয়েছে। বাংলাদেশের মন্ত্র ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও প্রতি বিদ্বেষ নয়’ এবং ‘শান্তিপূর্ণ সংলাপ’ এবং ‘সংযম’-এর আহ্বান একটি বিন্দু পর্যন্ত সহায়ক হয়েছে।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পরপরই বাংলাদেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে "গভীর উদ্বেগ" প্রকাশ করে, এবং "শক্তির ব্যবহার নিষিদ্ধ করা, সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডগত অখণ্ডতার প্রতি সম্মান এবং আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির বিষয়ে সমস্ত রাষ্ট্রের বাধ্যবাধকতার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে"। [৬] তা সত্ত্বেও, বাংলাদেশ রাষ্ট্রপুঞ্জের (ইউএন) সাধারণ পরিষদে ইউক্রেন পরিস্থিতি সম্পর্কিত বেশিরভাগ ভোটে দৃঢ় অবস্থান নিতে দ্বিধাগ্রস্ত ছিল। (টেবল ১ দেখুন)। তবে রাষ্ট্রপুঞ্জে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন রাশিয়ার কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে দুটি প্রস্তাব সমর্থন করেছে। [৭] ২০২২ সালের মার্চ মাসে, ঢাকা সেই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় যেটিতে "ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ান ফেডারেশন কর্তৃক অবিলম্বে শত্রুতা বন্ধ করার" দাবি জানানো হয়েছিল (A/ES-11/2), [৮] এবং, ২০২২ সালের অক্টোবরে, এটি সেই প্রস্তাবে যোগ দেয় যা ইউক্রেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমানার মধ্যে অঞ্চলে "অবৈধ তথাকথিত গণভোটের" জন্য রাশিয়ার নিন্দা করেছিল (A/ES-11/4)৷ [৯] কিছু রাশিয়ান পণ্ডিত বাংলাদেশের পদক্ষেপকে প্রথম ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি ছাড় হিসেবে এবং দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ইজরায়েলের সঙ্গে তার আঞ্চলিক বিরোধে প্যালেস্তাইনের সমর্থনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ার পদক্ষেপ হিসেবে দেখেছেন। [১০]

সারণি ১: ইউক্রেনে যুদ্ধ সংক্রান্ত রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রস্তাবে বাংলাদেশের ভোট (২০২২-২০২৩)

প্রস্তাব

শিরোনাম 

তারিখ

বাংলাদেশের ভোট

A/RES/ES-11/1

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসন

 ২ মার্চ ২০২২

বিরত

A/ES-11/2

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের মানবিক পরিণতি 

২৪ মার্চ ২০২২

পক্ষে

A/ES-11/3

মানবাধিকার কাউন্সিলে রাশিয়ান ফেডারেশনের সদস্যতার অধিকার স্থগিত করা  

৭ এপ্রিল ২০২২

 বিরত

A/ES-11/4

ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা: রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদের নীতিগুলি রক্ষা করা

১২ অক্টোবর ২০২২

পক্ষে

A/RES/ES-11/5

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের জন্য প্রতিকার এবং প্রতিশোধের অগ্রগতি 

১৪ নভেম্বর ২০২২

বিরত

A/RES/ES-11/6

ইউক্রেনে একটি ব্যাপক, ন্যায্য এবং স্থায়ী শান্তির অন্তর্নিহিত  রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদের মূলনীতি

২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বিরত

 সূত্র: রাষ্ট্রপুঞ্জের ডিজিটাল লাইব্রেরি থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে লেখক দ্বারা সংকলিত

রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব তার বিদেশী অংশীদারদের সঙ্গে বাংলাদেশের আলোচনারও কারণও হয়েছে। যেমন, ২০২৩ সালের এপ্রিলে জাপান এবং ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ফ্রান্সের সঙ্গে দেশটির যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে "ইউক্রেনের যুদ্ধ আন্তর্জাতিক আইন, বিশেষ করে রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদের লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার জন্য একটি গুরুতর হুমকি"। [১১] এই বিবৃতিগুলি রাশিয়ার দ্বারা উপেক্ষা করা হয়নি, বরং একে "রুশ-বিরোধী বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা"র জন্য পশ্চিমকে দায়ী করা হয়েছে, [১২] যদিও কৌশলে বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে মন্তব্য করা হয়নি।

মার্কিন-রাশিয়া সংঘাত

তা সত্ত্বেও, ২০২২ সাল থেকে, ঢাকা ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে একটি সূক্ষ্ম রেখা বরাবর পথ চলতে বাধ্য হয়েছে। বাংলাদেশের রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা মেনে চলা রুশ পক্ষের জন্য বিরক্তিকর হয়ে উঠেছে। ২০২২ সালের শেষের দিকে ঢাকায় রাশিয়ার দূতাবাসের চাপের মধ্যেও মার্কিন আরোপিত নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশ একটি কালো তালিকাভুক্ত রুশ জাহাজের প্রবেশে বাধা দেয়, যদিও এটি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের সরঞ্জাম বহন করছিল। [১৩]

বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রক বারবার বলেছে যে, দেশটি "যে জাহাজগুলি নিষেধাজ্ঞার অধীনে আছে সেগুলো গ্রহণ করবে না [যেহেতু দেশটির] যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক আছে।" [১৪] 'ঘটনা'টি ভারতের সাহায্যে সমাধান করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে, কারণ পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া বন্দরে কার্গোগুলিকে নোঙর ফেলা এবং মাল নামানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছিল এবং চালানটি সড়কপথে বাংলাদেশে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। [১৫] অধিকন্তু, ২০২৩ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে, তিনটি অ-অনুমোদিত রুশ জাহাজ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য যন্ত্রপাতি বাংলাদেশের মংলা বন্দরে পৌঁছে দেয়। [১৬] যাই হোক, ৬৯টি রুশ জাহাজের অননুমোদনের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তালিকা মেনে চলার জন্য ঢাকার সিদ্ধান্ত মস্কোকে জানানোর পর, রাশিয়ার বিদেশ মন্ত্রক বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠায় এবং "গভীর উদ্বেগ" প্রকাশ করে যে এই পদক্ষেপ "বিভিন্ন ক্ষেত্রে  নেতিবাচকভাবে সহযোগিতার সম্ভাবনাকে প্রভাবিত করবে।" [১৭]

নিষেধাজ্ঞার গল্পের সমান্তরালে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি মার্কিন-রাশিয়া দ্বন্দ্বের বিষয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রিচার্ড হাস "স্বচ্ছ" নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে মন্তব্য করার পরে এবং ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী পার্টির (বিএনপি) সমাবেশের পরে তাদের নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাড়ি যান। ঢাকায় রাশিয়ার দূতাবাস "উন্নত গণতন্ত্রের আধিপত্যবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষার" সমালোচনা করে, [১৮] এবং রাশিয়ার বিদেশ মন্ত্রক মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে "দেশের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়াগুলিকে অবিরামভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করার" জন্য অভিযুক্ত করেন৷ [১৯]

যাই হোক, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয়তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে রাশিয়া ‘হস্তক্ষেপ’ করার দায় ঘাড়ে নেওয়ার অবস্থান নিয়েছে। তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের মন্তব্যে বাংলাদেশের এই অস্বস্তি প্রতিফলিত হয়েছে যে দেশটি "রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনও দেশের [বাংলাদেশের] অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ চায় না।" [২০] উপরন্তু, মার্কিন কর্মকর্তা এবং বিএনপির প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠক সম্পর্কে মস্কোর মন্তব্যকে দলটির দ্বারা নিন্দা করা হয়েছে, যা এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে যে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধু হিসেবে রাশিয়া “দেশের জনগণের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে সম্মান করবে।" [২১]

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের সংসদীয় নির্বাচনের দৌড়ে রাশিয়া আওয়ামি লিগকে সমর্থন করেছিল, যার সঙ্গে দেশটি গভীর ঐতিহাসিক সম্পর্ক এবং বিভিন্ন পরিসরে অগ্রগতিশীল অংশীদারিত্ব ভাগ করে নেয়। বিপরীতে, বিএনপি-‌কে রাশিয়ায় একটি 'পশ্চিমপন্থী' দল হিসাবে বিবেচনা করা হয়, এবং ক্ষমতায় তার সম্ভাব্য উত্থান রাশিয়ার স্বার্থের প্রতি চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখা হয়।

রাশিয়ার অবস্থান চিনের সঙ্গে একত্রিত হয়েছে, যেহেতু বেজিং আওয়ামি লিগ সরকারের উপর মার্কিন চাপের সমালোচনা করেছে এবং "সব ধরনের আধিপত্যবাদ এবং ক্ষমতার রাজনীতির বিরোধিতা করতে বাংলাদেশের সঙ্গে একত্রে কাজ করার" প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। [২২] ২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতির জ্বালানি, পরিবহণ পরিকাঠামো, স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য খাতে অনেক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের বিষয়ে চিনের একটি বড় চুক্তি রয়েছে। এর ফলে ঢাকার যে কোনও সরকারের পক্ষে এ থেকে দূরে সরে যাওয়া কঠিন হবে। বেজিংয়ের সঙ্গে অবিরত অংশীদারিত্বের কারণ দেশটি একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে, এবং এটি বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও অস্ত্রের প্রধান উৎস।

বাংলাদেশের প্রাক-নির্বাচন রাজনৈতিক ঘটনাবলীর প্রতি ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল আরও সংক্ষিপ্ত। নয়াদিল্লি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে কথা বলেছে, কিন্তু হাসিনা সরকারকে স্বৈরাচারী সরকার হিসেবে চিহ্নিত করার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির অংশীদার হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, নির্বাচনী প্রচারণায় যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা এবং ভোটের দৌড়ে বিরোধীদের ক্রমবর্ধমান গতি ভারতীয় স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর হিসাবে দেখা হয়েছিল, কারণ বিএনপি-জামাত-ই-ইসলামি জোট ঐতিহাসিকভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে এবং ভারতের উত্তর-পূর্বে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসী কার্যকলাপের প্রতি চোখ বন্ধ করে রেখেছে। [২৩], [২৪] তার উপর, কিছু ভারতীয় বিশেষজ্ঞ উল্লেখ করেছেন যে হাসিনার অবস্থানে কোনও দুর্বলতা বাংলাদেশকে চিনের কাছাকাছি ঠেলে দিতে পারে, এবং ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। [২৫]

উল্লেখযোগ্যভাবে, ভারত, চিন ও রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতেরা ফলাফল ঘোষণার পর আওয়ামি লিগের বিজয়ে হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। [২৬] বিপরীতে, মার্কিন বিদেশ দপ্তর একটি বিবৃতি প্রকাশ করে যে "...এই নির্বাচনগুলি অবাধ বা সুষ্ঠু ছিল না" এবং দুঃখ প্রকাশ করে যে "সব দল অংশগ্রহণ করেনি।" [২৭]

ইন্দো-প্যাসিফিক ধাঁধা

২০২৩ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ সরকার তার ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক প্রকাশ করে, যা বিশেষজ্ঞ সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভিন্ন মতামতকে উস্কে দিয়েছিল এবং ঢাকার কোয়াডে যোগদানের বিষয়ে আলোচনা পুনরুজ্জীবিত করেছিল, যে সম্ভাবনার কথা  ২০২১ সালের মে মাসে প্রথম প্রকাশ্যে আসে। এরপরেই চিনা কর্মকর্তারা মন্তব্য করেন যে এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশ-চিন সম্পর্কের "প্রভূত ক্ষতি" হবে। [২৮] নথিটির গ্রহণ বাংলাদেশকে মার্কিন ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের কাছাকাছি নিয়ে আসতে পারে বলে কিছু প্রত্যাশা থাকা সত্ত্বেও, [২৯] আউটলুক আরও সাবধানী পদ্ধতির ইঙ্গিত দিয়েছে। যেহেতু হাসিনার জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন সফরের ঠিক আগে আউটলুক প্রকাশ করা হয়েছিল, তাই ঘোষণাটি বরং এই অনুমানের দিকে চালিত করেছিল যে এটি হয় "পশ্চিমী শক্তি ব্লকের চাপের কারণে" এসেছে, বা এটি "একটি আধা-‌আন্তরিক প্রচেষ্টা ছিল [... ] অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক"-‌এর স্লোগান গ্রহণ করে উন্নয়ন সহযোগীদের সন্তুষ্ট করতে। [৩০]

কিছু বাংলাদেশী পণ্ডিত উল্লেখ করেছেন যে আউটলুক "কোনও সুস্পষ্ট প্রো-কোয়াড ঝোঁককে বোঝায় না, এটি ব্লকের সঙ্গে বিদ্যমান সহযোগিতাকে আরও গভীর করার জন্য ঢাকার ইচ্ছা প্রকাশ করে।" [৩১] আউটলুকের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জল্পনা-কল্পনা বাংলাদেশী কর্মকর্তাদের এই অঞ্চলের জন্য দেশটির দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে বাধ্য করেছিল। "যারা তাদের নিজস্ব পছন্দের চিত্রের সঙ্গে তাদের নিজ নিজ ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলগুলি চালু করেছে সেই সব খেলোয়াড়ের সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য" ঢাকার প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করার পাশাপাশি বিদেশ প্রতিমন্ত্রী মহম্মদ শাহরিয়ার আলম "অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশের জন্য একটি অ-আলোচনাযোগ্য উপাদান" বলে জানিয়ে দিয়ে কোনও সামরিক ব্লক বা জোটে যোগদানের সম্ভাবনা খারিজ করে দেন। [৩২]

রাশিয়ার জন্য বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক ধারণা গ্রহণ করা এবং কোয়াডের সঙ্গে এর সম্ভাব্য সম্পৃক্ততা একটি সংবেদনশীল বিষয়। রাশিয়ার সরকারি মহলের দৃষ্টিতে কোনও বন্ধুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের ইউএস ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের যে কোনও অনুমোদন অ-‌গ্রহণযোগ্য  হিসাবে বিবেচিত। যাই হোক, গুরুত্বপূর্ণভাবে, বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক কোনও সংঘাতের মধ্যে জড়িয়ে পড়া এড়াতে পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে, এবং এটি কোনও আঞ্চলিক শক্তির বিরুদ্ধে পরিচালিত নয়।

যখন আরও বেশি সংখ্যক দেশ ইন্দো-প্যাসিফিক সম্পর্কে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করছে, সেই সময়ে রাশিয়া এমন একটি অঞ্চলে তার দখল হারানোর বিষয়ে ক্রমবর্ধমানভাবে সতর্ক হচ্ছে যেখানে তাদের দেওয়ার মতো কিছু নেই। পাশ্চাত্য-বিরোধী আখ্যানটি শুধুমাত্র কয়েকটি আঞ্চলিক খেলোয়াড়ের মধ্যে ভালভাবে অনুরণিত হয়, এবং বাংলাদেশের মতো এই দেশগুলির জন্য খুব কমই গ্রহণযোগ্য হয় যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপানের সঙ্গে ব্যাপক সহযোগিতার সাথে একটি জোটনিরপেক্ষ নীতিকে একত্রিত করতে চায়।

কূটনৈতিক সম্পর্ক গভীরতর করার উদ্যোগ

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে, নয়াদিল্লিতে জি২০ সম্মেলনের ঠিক আগে, রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বাণিজ্য এবং শক্তি থেকে মহাকাশ এবং ভূ-রাজনীতি পর্যন্ত বিস্তৃত বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে দুই দিনের সফরে ঢাকায় যান। এটি ছিল কোনও সোভিয়েত/রুশ শীর্ষ কূটনীতিকের বাংলাদেশে প্রথম সফর, এবং এটি একটি সংকেত যে মস্কো ঢাকার প্রতি তার কূটনৈতিক অবহেলা পুনর্বিবেচনা করেছে এবং দেশটির সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে চাইছে।

আঞ্চলিক সমস্যা

যদিও ইন্দো-প্যাসিফিকের প্রতি রাশিয়ার স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি সুপরিচিত, লাভরভ এই বিষয়ে তাঁর আগের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া থেকে কিছু শিক্ষা গ্রহণ করেছেন বলে মনে হয়। ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে অওকাস, কোয়াড, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি "বৈশ্বিক উদ্দেশ্য - অঞ্চলে সম্প্রসারণ" কি না সে সম্পর্কে একটি প্রশ্নের জবাবে লাভরভ "ব্লক-ভিত্তিক বিন্যাস...নিরাপত্তা স্থাপত্যকে ক্ষুণ্ণ করা" সম্পর্কে তাঁর বারবার বলা অবস্থানের পুনরাবৃত্তি করেন। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে তিনি জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে নিয়ে গঠিত আরেকটি কোয়াডের কথা উল্লেখ করেন। সাংবাদিক কিন্তু গ্রুপিং বলে উল্লেখ করছিলেন অন্য একটি কোয়াড (অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান, ইউএস)-এর প্রতিস্থাপনের কথা;‌ কিন্তু অন্য টির কথা সম্ভবত এসেছিল নয়াদিল্লির বিরোধিতা করতে মস্কোর অনাগ্রহের কারণে, যেখানে ইন্দো-প্যাসিফিক সম্পর্কে এবং কোয়াড নিয়ে লাভরভের পূর্ববর্তী মন্তব্য বিরক্তির কারণ হয়েছিল। [৩৩] বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও রাশিয়াকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সাবধানে পদচারণা করতে হবে, এবং এই অঞ্চলে উদীয়মান প্রবণতা সম্পর্কে ঢাকার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের অধিকারকে সম্মান করতে হবে।

একটি বিষয় যা দ্বিপাক্ষিক অ্যাজেন্ডায় উচ্চতর এবং বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, তা হল রোহিঙ্গা সংকট। ২০২১ সালের জুলাইয়ে তাসখন্দে একটি আঞ্চলিক সম্মেলনের ফাঁকে মোমেন ও লাভরভের মধ্যে আলোচনায় বাংলাদেশ রাশিয়াকে রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবিলায় একটি ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগ শুরু করার জন্য মায়ানমারের সঙ্গে তার বন্ধুত্বকে ব্যবহার করতে বলেছিল, কিন্তু মস্কো এই অনুরোধ এড়িয়ে যায়। বাংলাদেশ যখন রাশিয়ার মধ্যস্থতা চাইছে, রাশিয়া ক্রমাগত মায়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির আহ্বান জানিয়ে চলেছে। লাভরভের ঢাকা সফরের সময় বিষয়টি আবারও উত্থাপিত হয়। বাংলাদেশের রিডআউট অনুসারে, "বিদেশমন্ত্রী মোমেন সংকট সমাধানে রাশিয়ার সহযোগিতা চেয়েছেন," কিন্তু অন্যদিকে লাভরভ "রাশিয়া ও মায়ানমারের মধ্যে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে আবারও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি উত্থাপন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।" [৩৪] স্পষ্টতই, রাশিয়া ঢাকা ও নেপিডোর মধ্যে মধ্যস্থতা করতে বা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সুবিধার্থে মায়ানমারের সামরিক জুন্টাকে রাজি করাতে অনিচ্ছুক। একই সময়ে, ২০১৮ সাল থেকে, রাশিয়া রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির অংশ হিসাবে এবং এনজিও আখমত কাদিরভ রিজিওনাল পাবলিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে মানবিক সহায়তা প্রদান করে আসছে, শরণার্থীদের জীবনযাত্রার উন্নতি এবং তাদের জল, খাদ্য, সরবরাহ, ওষুধ, এবং বাসস্থানের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। । [৩৫]

বাণিজ্য এবং শক্তি নিরাপত্তা

লাভরভের সফর এটাও প্রমাণ করেছে যে রাশিয়া বাংলাদেশে তার অর্থনৈতিক অ্যাজেন্ডাকে পুনরুজ্জীবিত করতে চাইছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইউক্রেনের যুদ্ধের প্রভাবকে পরোক্ষভাবে স্বীকার করে রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী তেল, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), সার, গম এবং খাদ্যপণ্যের মতো অত্যাবশ্যক পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে যুদ্ধের পরিণতি কমানোর জন্য দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার প্রস্তাব পেশ করেন। যদিও প্রস্তাবটি বাংলাদেশের জন্য আকর্ষণীয় মনে হতে পারে, রাশিয়ান সংস্থাগুলির সঙ্গে আরও অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার অনেক ত্রুটি রয়েছে। এক কথায়, রাশিয়া বাংলাদেশের ২০টি প্রধান বাণিজ্য অংশীদারের একটি নয়। গত পাঁচ বছরে, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে স্থবির হয়ে পড়েছে, [ঙ] কোনও দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই (টেবল ২ দেখুন)। রাশিয়ার অর্থনীতির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যকে প্রভাবিত করেছে, এবং মস্কো ও ঢাকা এই সমস্যাটি ঘিরে কাজ করার জন্য একটি স্থিতিস্থাপক প্রক্রিয়া চালু করতে পারেনি। এমনকি লাভরভ যদিও "জাতীয় মুদ্রার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের লেনদেন ব্যবস্থার কথা" [৩৭] উল্লেখ করছিলেন, [৩৭] এটা সুপরিচিত যে বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক বাণিজ্যের জন্য রাশিয়ান রুবল ব্যবহার করার ধারণার বিরুদ্ধে ছিল। [৩৮] এর ফলে দুই পক্ষের কাছে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে চিনা ইউয়ান ব্যবহার করার মতো কয়েকটি বিকল্প রয়েছে।

উপরন্তু, যদিও বিষয়টি নিয়ে ২০২২ সাল থেকে আলোচনা করা হয়েছে, তাহলেও রাশিয়া থেকে বর্ধিত তেল আমদানি বাস্তবায়িত হয়নি, এবং বাংলাদেশী শোধনাগারগুলিকে আপগ্রেড করা এবং তৃতীয় দেশের মাধ্যমে আমদানির মতো বাধাগুলি মোকাবিলার প্রচেষ্টাগুলি কোথাও পৌঁছয়নি। উল্লেখযোগ্যভাবে, বাংলাদেশ ব্যয়বহুল এলএনজি আমদানি কমাতে প্রাকৃতিক গ্যাসের স্থানীয় উৎপাদন বাড়াতে চাইছে, এবং বাংলাদেশের শক্তি ক্ষেত্রে তার দীর্ঘস্থায়ী উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংস্থা গ্যাজপ্রম ড্রিলিং করার জন্য পাঁচটি নতুন নিকট সমুদ্র উপকূলবর্তী কূপ পেতে প্রস্তুত। [৩৯]

সারণি ২. ২০১৮-‌২০২৩ সালে রাশিয়ার সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য (মিলিয়ন মার্কিন ডলারে)

২০২২-২০২৩


        

২০১৮-২০১৯   

২০১৯-২০২০

২০২০-২০২১

২০২১-২০২২

 

আমদানি  

৬৪৭

৭৮২

৪৮২   

৪৮০

৪৯৭

রপ্তানি     

৫৪৮

৪৮৭

৬৬৫

৬৩৮ 

৪৬০

মোট    

১১৯৫ 

১২৬৯

১২৪৭

১১১৮

৯৫৭

সূত্র: বাংলাদেশ ব্যাংক, [৪০] বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, [৪১] এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো। [৪২]

সংযোগকারী হিসাবে পারমাণবিক শক্তি 

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বর্তমানে নির্মাণাধীন, রাশিয়া-বাংলাদেশ অংশীদারিত্বের একটি বড় সাফল্যের গল্প। ২০০৯ সালে প্রস্তাবিত এবং দুই সরকারের চুক্তির একটি সিরিজের পরে 

এগিয়ে চলা প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে ভিভিইআর-১২০০ রিঅ্যাক্টর (৩+ প্রজন্ম) সহ দুটি ইউনিট নির্মাণ, ৬০-বছরের জীবনচক্র এবং আরও ২০ বছর সম্ভাব্য বর্ধিতকরণ। ২,৪০০ মেগাওয়াটের মোট উৎপাদন ক্ষমতা বাংলাদেশের শক্তি খরচের ১০ শতাংশ পর্যন্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। [‌৪৩] দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা এবং বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের সম্প্রসারণ ও বৈচিত্র্যের প্রচেষ্টার পরিপ্রেক্ষিতে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

প্রথম ইউনিটের জন্য রাশিয়ার প্রথম ব্যাচের পারমাণবিক জ্বালানি সরবরাহের পর প্রকল্পটি সম্প্রতি কিছু অগ্রগতি দেখেছে। বিতরণ উপলক্ষে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে হাসিনা এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন উপস্থিত ছিলেন, এবং পুতিন "পারমাণবিক প্রকল্পের সমগ্র জীবনচক্র" জুড়ে রাশিয়ার সহায়তা এবং "বাংলাদেশে একটি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ পরমাণু শিল্প তৈরিতে" রাশিয়ারর অবদানের উপর জোর দেন। [‌৪৪] ইউরেনিয়াম চালান ডেলিভারির পরে পাওয়ার প্ল্যান্ট আনুষ্ঠানিকভাবে একটি পারমাণবিক সুবিধার মর্যাদা পায়, এবং এর প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিট যথাক্রমে ২০২৪ ও ২০২৫ সালে চালু হওয়ার কথা ছিল।

যদিও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ভারতের ভূমিকার বিষয়ে গণ-‌পরিসরে খুব কম দৃষ্টিপাত করা হয়েছে, হাসিনা এবং পুতিন উভয়েই এই প্রকল্পে নয়াদিল্লির অবদানের কথা স্বীকার করেছেন। ভারতের পারমাণবিক শক্তি বিভাগ এবং বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের মধ্যে ২০১৭ চুক্তির শর্তাবলী,[৪৫] এবং ২০১৮ সালে স্বাক্ষরিত ত্রিপক্ষীয় সমঝোতাপত্র অনুসারে ভারত বাংলাদেশী বিশেষজ্ঞদের প্রশিক্ষণ সহ প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং পরামর্শ দিচ্ছে। [‌৪৬] অধিকন্তু, নয়াদিল্লি প্ল্যান্টের পাওয়ার ট্রান্সমিশন লাইনগুলি বিকাশের জন্য ঢাকাকে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি ক্রেডিট লাইন প্রসারিত করেছে। [৪৭] যাই হোক, ভারত-বাংলাদেশ পর্যালোচনা সভায় প্রকল্পটিকে ঋণ তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয় বলে জানা গিয়েছে। [৪৮]

বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য রাশিয়ার ১১.৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের অর্থায়ন করা হয়েছে, যা প্রকল্প ব্যয়ের প্রায় ৯০ শতাংশ, এবং ২০২৭ সালের পরবর্তী ২৮ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। নিষেধাজ্ঞাগুলির কারণে উভয় পক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন ডলার থেকে সরে গিয়ে চিনা ইউয়ানে ঋণ পরিশোধের নিষ্পত্তি করা হবে। [৪৯]  নতুন প্রক্রিয়াটি বোঝায় যে রাশিয়ায় অর্থপ্রদানগুলি একটি চিনা ব্যাঙ্কের মাধ্যমে যাবে, আর রাশিয়ার সুবিধাভোগীরা সুইফ্টের বিকল্প চিনের ক্রস-বর্ডার ইন্টারব্যাঙ্ক পেমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করে অর্থ পাবে। এই ধরনের ব্যবস্থা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাস্তবায়নের জন্য বেজিংকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থ করে তুলেছে।

প্রতিরক্ষা সহযোগিতা

রাশিয়া বাংলাদেশের জন্য প্রতিরক্ষা আমদানির ক্ষেত্রে চিনের পরেই দ্বিতীয় প্রধান উৎস,  (টেবল ৩)। এই ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সম্পৃক্ততার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চালক ছিল ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি রাশিয়ান ক্রেডিট লাইন যা ২০১৩ সালে মস্কোতে পুতিন এবং হাসিনার মধ্যে আলোচনার পর প্রসারিত করা হয়েছিল। বাংলাদেশ ১৬টি ইয়াক-১৩০ যুদ্ধ প্রশিক্ষক জেট, পাঁচটি এমআই-১৭১এসএইচ যুদ্ধ-পরিবহণ হেলিকপ্টার, এবং সাঁজোয়া সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্য ঋণটি ব্যবহার করেছিল। [৫০]

২০১৯ সালে বাংলাদেশ এবং রাশিয়া বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা শিল্পের সম্ভাব্য চাহিদা মোকাবিলায় সামরিক-প্রযুক্তিগত সহযোগিতার উপর একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ তৈরি করেছে। তারপর থেকে অবশ্য দুটি এমআই-১৭১এ২ বহুমুখী ভারী হেলিকপ্টার সরবরাহের চুক্তি ছাড়া দুই দেশের মধ্যে কোনও উল্লেখযোগ্য চুক্তি হয়নি, যা ২০২১ সালে রাশিয়ান হেলিকপ্টার হোল্ডিং এবং বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। [৫১]

সারণি ৩: বাংলাদেশে অস্ত্রের প্রধান সরবরাহকারী (২০১২-২০২২; মার্কিন ডলারে) 
 

সরবরাহকারী/বছর

২০১২  

২০১৩

২০১৪

২০১৫

২০১৬ 

২০১৭

২০১৮

২০১৯  

২০২০

২০২১

২০২২

মোট

চিন

১৪৯

৪৮৮

২০১

৪৫০

২৬২

২০৮

৯২

৬৩৭

২৭

১৫

১০৩

২৬৩১

ফ্রান্স

  

১০

১০

৪২

জার্মানি

১৪ 

১২

১২

৩৮

ভারত

ইতালি

১২

১২

২৫

২১

৭৮

রাশিয়া

২০

৫০

৭৬

১৫৪

৯৩

৩৪

৪২৬

সার্বিয়া

১০

১০

২৭

৫৬

তুর্কিয়ে

১২

২৫

১৬

৬১

ইউক্রেন

১০

১৭

২৪

৬৭

ব্রিটেন 

৩২

১৬

১৮

৬৮

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

৫৪

৫৪

১৩

১২১

মোট 

১৮৪

৬৫০

২০৩

৬৩৬

৪৪৯

৩৩১   

১৫৫

৭১৪

৫৯

৭৩

১৮৪

৩৬৩৬

 সূত্র: সিপরি অস্ত্র স্থানান্তর ডেটাবেস [৫২]

দুই পক্ষ সামরিক কূটনীতি চালিয়ে যাচ্ছে, যেমনটি সরকারি সফরের থেকে বোঝা যাচ্ছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একটি প্রতিনিধি দল ৫০তম স্বাধীনতা দিবসের উদযাপনে অংশ নিতে ঢাকা সফর করেছিল এবং রাশিয়ার সেনারা বিজয় কুচকাওয়াজে অংশ নিয়েছিল। [৫৩]

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বাংলাদেশ নিয়মিতভাবে রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন আর্মি গেমসে তার সামরিক কর্মীদের পাঠিয়েছে, [চ] যা আবার উভয় দেশের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের বৈঠকের স্থানও ছিল। ইউক্রেনে চলতি যুদ্ধের মধ্যে হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারেক আহমেদ সিদ্দিক ২০২২ ও ২০২৩ সালে রাশিয়া সফর করেন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিষয়ক মস্কো সম্মেলনে বক্তৃতা করতে এবং রাশিয়ার উপ-প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আলেকজান্ডার ফোমিনের সঙ্গে আলোচনা করেন। [৫৪]

২০২৩ সালের নভেম্বরে, পাঁচ দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো, প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহর থেকে রাশিয়ান যুদ্ধজাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। এই ডিট্যাচমেন্ট দলটির মধ্যে ছিল বৃহৎ সাবমেরিন-বিরোধী যুদ্ধ জাহাজ অ্যাডমিরাল ট্রিবুটস এবং অ্যাডমিরাল প্যানটেলেয়েভ এবং মহাসাগরীয় ট্যাঙ্কার পেচেঙ্গা। কিছু বিশ্লেষক পরামর্শ দিয়েছেন যে রাশিয়ান যুদ্ধজাহাজের সফর একটি শক্তি প্রক্ষেপণ এবং ওয়াশিংটনের জন্য একটি সংকেত যে ইউক্রেনের যুদ্ধ রাশিয়াকে দুর্বল বা বিচ্ছিন্ন করেনি। [৫৫] এই সফরটি রাশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের "খুব উচ্চ স্তর" [৫৬] হিসাবে এবং ভারত মহাসাগর অঞ্চলে রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান উপস্থিতির একটি সাক্ষ্য হিসাবে বিবেচিত হয়েছিল। [৫৭] কিন্তু রাশিয়ার জাহাজের বন্দর ভ্রমণ একটি প্রতীকী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা উচিত। ভারত ও বাংলাদেশ-‌সহ আঞ্চলিক শক্তিগুলির সঙ্গে সীমিত নৌ-সমাবেশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং তার পুরনো সোভিয়েত-যুগের প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহর [৫৮] পুনরায় পূরণ করার প্রচেষ্টা করা সত্ত্বেও, এটি অসম্ভব যে রাশিয়া আগামী বছরগুলিতে ভারত মহাসাগরের সামুদ্রিক বিষয়ে তার সম্পৃক্ততা বাড়াতে সক্ষম হবে।

এমনকি দুই দেশের মধ্যে সামরিক কূটনীতির বিকাশ ঘটলেও ভবিষ্যতের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার শক্তি অনিশ্চিত। বাংলাদেশের আর্থিক সীমাবদ্ধতা আরও সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি গুরুতর প্রতিবন্ধক। বাংলাদেশের সামরিক প্রয়োজনে রাশিয়া আরেকটি ঋণ দিলেও এ ক্ষেত্রে নতুন দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে বেশ কিছু বাধা রয়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের বিরুদ্ধে পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞা ইউক্রেন সংঘাতের সময় রাশিয়ার দেশীয় চাহিদার পুনর্নির্মাণের পাশাপাশি ভবিষ্যতের ব্যস্ততার উপর ছায়া ফেলেছে। এই পরিস্থিতিতে বাজার রাশিয়ার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চিনের হাতে চলে যাচ্ছে, যার বাংলাদেশের অস্ত্র আমদানির উপর একচেটিয়া আধিপত্য সম্ভবত প্রতিদ্বন্দ্বীহীন থাকবে।

অস্ত্রের উদীয়মান রপ্তানিকারক হিসেবে ভারতের জন্য সুযোগ থাকতে পারে। যদিও ভারতের আসল সরঞ্জাম নির্মাতারা শীঘ্রই বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশ করতে পারে, ভারতও বহুজাতিক কোম্পানিগুলির জন্য একটি ট্রানজিট পয়েন্ট হতে পারে যাদের সমাবেশ এবং উৎপাদন ইউনিট প্রতিবেশী দেশগুলিতে রপ্তানির জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। [৫৯] রাশিয়া ও ভারত একই ধরনের প্রকল্প অন্বেষণ করতে পারে, তবে এর সম্ভাব্যতা নির্ভর করবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কালো তালিকাভুক্ত রুশ সংস্থাগুলির সঙ্গে কাজ করার জন্য ভারতের সংকল্পের উপর। অদূর ভবিষ্যতে ভারত বাংলাদেশকে এমআই-১৭ হেলিকপ্টার, এএন-৩২ ট্রান্সপোর্ট এয়ারক্রাফ্ট এবং মিগ-‌২৯ ফাইটার জেট-এর মতো মূলগত রুশ সরঞ্জাম রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সাহায্য দেবে বলে মনে হচ্ছে। [৬০]

উপসংহার

ইউক্রেনে উত্তেজনাপূর্ণ যুদ্ধ এবং পশ্চিমীদের সঙ্গে অভূতপূর্ব বিভাজনের প্রেক্ষাপটে, অবহেলিত সম্পর্ককে নতুন করে উদ্ভাবন করা এবং তাদের সমর্থনের জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলিকে আকৃষ্ট করা ছাড়া রাশিয়ার কাছে কোনও বিকল্প নেই। তার শক্তি এবং বাণিজ্যিক স্বার্থ দ্বারা চালিত, এবং আঞ্চলিক প্রভাবের প্রতিযোগিতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এক ইঞ্চিও জমি না-‌ছাড়ার অভিপ্রায়ে উদ্বুদ্ধ রাশিয়ার বাংলাদেশ নীতি একটি নতুন গতি অর্জন করেছে।

ঢাকার সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সংযোগ গড়ে তোলার জন্য মস্কো পারমাণবিক শক্তির সহযোগিতায় বিনিয়োগ করেছে, যা দুই দেশকে বহু দশক ধরে আবদ্ধ রাখতে পারে;‌ এবং বাংলাদেশে যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, তর্কাতীতভাবে এটি বিকশিত হতে থাকবে।

বাংলাদেশের সঙ্গে রাশিয়ার অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষিতে ঝুঁকিপূর্ণ, যা সম্পর্ক গভীর করার জন্য আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার প্রাথমিক কারণ হতে পারে। এমনকি রাশিয়া বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি স্বতন্ত্র অংশীদার হিসাবে দেখলেও ঢাকা-মস্কো অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দুই প্রাথমিক কৌশলগত অংশীদার ভারত ও চিনের ভূমিকা আগামী বছরগুলোতে বৃদ্ধি পাবে। রাশিয়া সম্ভবত উভয়ের সঙ্গে সহযোগিতা ও সমন্বয় বজায় রাখার চেষ্টা করবে। রাশিয়া-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক লেনদেনের সাম্প্রতিক প্রবণতা চিনা আর্থিক পরিকাঠামোর উপর ক্রমবর্ধমান নির্ভরতাকে নির্দেশ করে, যা রুশ ঋণ পরিশোধ এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সচল রাখার জন্য একক পথ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের নিজ নিজ প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং বাংলাদেশের আওয়ামি লিগ সরকারের সঙ্গে দৃঢ় বন্ধন সম্ভবত রাশিয়া ও চিনের জন্য ঐক্যবদ্ধ ফ্যাক্টর হিসাবে কাজ করবে। আপাতত ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে মস্কোর বেজিংয়ের সঙ্গে পরামর্শ করার দরকার নেই। কিন্তু চিনের উপর ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক নির্ভরতার পরিণতিতে রাশিয়ার বাংলাদেশ নীতির উপর বেজিং ছড়ি ঘোরাতে পারে কি না তা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, যার উত্তর দীর্ঘমেয়াদেই পাওয়া যাবে।

রাশিয়া এখনও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি ও সমর্থনের উপর নির্ভর করছে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের অগ্রণী অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে তিনটি দেশের মধ্যে সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে রাশিয়ার অস্ত্র ও জ্বালানি সংস্থান সরবরাহের জন্য ভারতকে সম্ভাব্য ট্রানজিট পয়েন্ট হিসাবে ব্যবহার করার পাশাপাশি মস্কো ও ঢাকা তাদের বাণিজ্য কার্যক্রম ও দ্বিপাক্ষিক প্রকল্পের জন্য ভারতীয় রুপির ব্যবহার অন্বেষণ করতে পারে। এটি রাশিয়া-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক কার্যক্রমের উপর ক্রমবর্ধমান চিনা প্রভাব কমাতে সাহায্য করতে পারে, এবং রাশিয়াকে ভারতীয় রুপির অবাধ প্রাপ্যতার সুযোগ ব্যবহার করে একটি সমাধানে পৌঁছে দিতে পারে। [ছ]

যতদিন পর্যন্ত রাশিয়া বাংলাদেশকে জ্বালানি সম্পদ, প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী এবং আর্থিক, প্রযুক্তিগত বা এমনকি রাজনৈতিক সহায়তা দিতে সক্ষম হবে, ততদিন মস্কো ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের মধ্যে থাকবে।

পাদটীকা

[ক] ১৯৭১ সালের এপ্রিলে পূর্ব পাকিস্তানে সংঘাতের শুরুতে, সোভিয়েত ইউনিয়ন জনসংখ্যার বিরুদ্ধে নিপীড়ন এবং ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে সাধারণ নির্বাচনে জয়ী আওয়ামি লিগ দলের রাজনৈতিক নেতাদের উপর দমন-পীড়নের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। মস্কো কূটনৈতিক যোগাযোগ বজায় রেখে পরিস্থিতি নিয়ে পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং রাজনৈতিক সমাধানের জন্য তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে আহ্বান জানায়। ১৯৭১ সালের আগস্টে নয়াদিল্লির সঙ্গে শান্তি, বন্ধুত্ব এবং সহযোগিতার চুক্তি স্বাক্ষরের পরে এবং ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সোভিয়েত ইউনিয়ন সফরের পর, মস্কো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সমালোচনা বাড়িয়ে তোলে এবং সংঘাতে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করে। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন তিনবার রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে ভিটো দেয় যেগুলিতে যুদ্ধবিরতি এবং সশস্ত্র বাহিনী প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হলেও পূর্ব পাকিস্তানে কোনও রাজনৈতিক মীমাংসার কথা বলা হয়নি। উল্লেখযোগ্যভাবে, ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুসারে, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারত মহাসাগরে তার প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহর মোতায়েন করে বঙ্গোপসাগরের দিকে ইউএসএস এন্টারপ্রাইজ ক্যারিয়ার গ্রুপের অগ্রগতি প্রতিহত করেছিল,। অবশেষে, ১৯৭১ সালের যুদ্ধে ভারতের বিজয় পাকিস্তানকে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বীকৃতি দিতে বাধ্য করে।

[খ] বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা, এবং স্বাধীন দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, তাঁকে জনপ্রিয়ভাবে বাঙালিরা সম্মানজনক শব্দ বঙ্গবন্ধু (বাংলার বন্ধু) বলে অভিহিত করেন।

[গ] ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসে, শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবার (সে সময় বিদেশে থাকা শেখ হাসিনা ও তাঁর দুই কন্যা ছাড়া) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একদল কর্মকর্তার হাতে নিহত হন। ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে অভ্যুত্থানের পরে আরও দুটি অভ্যুত্থান ঘটে, যার ফলে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসেন। নয়াদিল্লিপন্থী এবং মস্কোপন্থী ব্যক্তিরা ক্ষমতা থেকে সরে গেলেও, বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন, পাকিস্তান ও পশ্চিম এশিয়ার মুসলিম দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে নিয়েছিল।

[ঘ] এর আগে ১৯৮০ সালে, বাংলাদেশ চারজন সোভিয়েত কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছিল এই অভিযোগ করে যে সোভিয়েত দূতাবাস গুপ্তচরবৃত্তির জন্য যোগাযোগ সরঞ্জাম আমদানি করেছিল। ১৯৮৩ সালে, কূটনীতিকদের বহিষ্কার করার সিদ্ধান্তটি রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী সরকারবিরোধী 'রাজনৈতিক উপাদানের' সঙ্গে দূতাবাসের কর্মীদের কথিত যোগাযোগের দ্বারা প্ররোচিত হয়েছিল। ।

[ঙ] বাংলাদেশ এবং রাশিয়া ডেটা পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে ভিন্ন পন্থা প্রয়োগ করে। রাশিয়ার ফেডারেল কাস্টমস সার্ভিসের মতে, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২০১৫ সালে ১.৪ বিলিয়ন থেকে বেড়ে ২০২১ সালে প্রায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে (সর্বশেষ উপলব্ধ তথ্য)। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির পরও শুল্ক পরিষেবা দ্বারা বাংলাদেশ রাশিয়ার প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি।

[চ] ইন্টারন্যাশনাল আর্মি গেমস হল ২০১৫ সাল থেকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দ্বারা আয়োজিত একটি বার্ষিক সামরিক ইভেন্ট। বিভিন্ন দেশের দলগুলি তাদের যুদ্ধের প্রস্তুতি এবং শারীরিক দক্ষতা প্রমাণ করার জন্য বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে।

[ছ] ২০২২ সালে নয়াদিল্লি এবং মস্কোর দ্বারা চালু করা রুপি-বিন্যস্ত বাণিজ্য ব্যবস্থার ফলস্বরূপ রাশিয়া কয়েক বিলিয়ন ভারতীয় রুপি জমা করে, যা এটি ব্যবহার করতে পারেনি। এটি ২০২৩ সালের মে থেকে ভারতীয় ও রুশ কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনার বিষয়। যদিও মুদ্রা রূপান্তর, ভারতের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ, এবং পরিকাঠামো প্রকল্পগুলির মতো বিভিন্ন বিকল্প অন্বেষণ করা হয়েছে, উভয় পক্ষ এখনও একটি পারস্পরিক সম্মত সমাধান খুঁজে পায়নি।

 [১]
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ দূতাবাস, , মস্কো।


[২] আলমগীর মহিউদ্দিন, "
সরকার ১৮ জন সোভিয়েত কূটনীতিককে বহিষ্কারের আদেশ দিয়েছে...," ইউপিআই আর্কাইভস, ৩০ নভেম্বর, ১৯৮৩।


[৩] মামলার টাইমলাইনটি এখানে পাওয়া যাবে: "
রিফিউজি রিভিউ ট্রাইব্যুনাল: অস্ট্রেলিয়া," ডিপার্টমেন্ট অফ ইমিগ্রেশন অ্যান্ড সিটিজেনশিপ, ২০০৯।


[৪] এইচ এ শোভন এবং মোঃ হিমেল রহমান, "
ঢাকায় কোল্ড ওয়ার রেডাক্স," দ্য ডেলি স্টার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৩।


[৫] রিচার্ড কনলি, রাশিয়া’‌জ ইকোনমিক পিভট টু এশিয়া ইন এ শিফটিং রিজিওনাল এনভায়রনমেন্ট (লন্ডন: রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউট, সেপ্টেম্বর ২০২১), ৪-‌৬।

[৬] রাষ্ট্রপুঞ্জে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন, “জনাব মনোয়ার হোসেনের বিবৃতি, ডিপিআর এবং সিডিএ, এ আই ইউক্রেন সংকটের বিষয়ে ইউএনজিএ-র জরুরি বিশেষ অধিবেশন”।

[৭] "
বাংলাদেশ রাশিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে," ডেলি স্টার, ১৩ অক্টোবর, ২০২২।


[৮] রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদ, "
A/RES/ES-11/2 ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের মানবিক পরিণতি"।


[৯] রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদ, "
A/RES/ES-11/4 Territorial Integrity of Ukraine: Defending the Principles of the Charter of the United Nations: Resolution / Adopted by the General Assembly"।


[১০] মারিয়া স্যাভিশেভা, "বোলশোমি কোরাব্লু — Большое плавание в Бангладеш, или какие санкционные риски для третьих стран должватих стран должватичьна [‌
বাংলাদেশকে ইয়াজ, বা তৃতীয় দেশগুলির জন্য রাশিয়ার কী নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি বিবেচনায় নেওয়া উচিত], ” রাশিয়ার আন্তর্জাতিক বিষয়ক কাউন্সিল, ১৩ মার্চ, ২০২৩।


[১১]
জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়; এলিসি


[১২] “
বাংলাদেশে ইউক্রেন সম্পর্কে পশ্চিমী নেতাদের মন্তব্য রাশিয়া নোট করে,” ঢাকা ট্রিবিউন, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩।


[১৩] রাহেদ এজাজ, “
নাম বদলে নিষেধাজ্ঞাভুক্ত জাহাজে রূপপুরের পণ্য” প্রথম আলো, ডিসেম্বর ২৯, ২০২২।


[১৪] “
মোমেন: নিষেধাজ্ঞার অধীনে থাকা রাশিয়ান জাহাজ বাংলাদেশ গ্রহণ করবে না,” ঢাকা ট্রিবিউন, জানুয়ারি ২২, ২০২৩।


[১৫] দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী, "
হলদিয়া বন্দরে বাংলাদেশ পারমাণবিক প্ল্যান্ট ডকের জন্য রাশিয়ান চালান," দ্য ইকোনমিক টাইমস, জানুয়ারি ৯, ২০২৩।


[১৬] "Посольство РФ подтвердило запрет на заход 69 российских судов в порты страны [
বাংলাদেশের বন্দরে ৬৯ জাহাজের ঢুকতে না দেওয়ার কথা রাশিয়ান দূতাবাস নিশ্চিত করেছে] তাস ১৫, ২০২৩।


[১৭] রাশিয়ান ফেডারেশনের বিদেশ মন্ত্রক,
https://www.mid.ru/ru/foreign_policy/news/1855144

[১৮] “বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না রাশিয়া,” নিউ এজ, ২০ ডিসেম্বর, ২০২২,
https://www.newagebd.net/article/189553/russia-for-not-interfering-in-the-domestic-affairs-of-bangladesh

[১৯] "
S Interfering in Internal Affairs Of Bangladesh: Russia on Envoy’s Visit,," এনডিটিভি, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২২।


[২০] “
আমরা চাই না রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করুক: মোমেন,” দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২২।


[২১] “
বিএনপি রুশ মুখপাত্রের বক্তব্যের নিন্দা করেছে,” প্রথম আলো, নভেম্বর ২৫, ২০২৩।


[২২] “চিন ক্ষমতার রাজনীতির বিরোধিতা করতে বাংলাদেশের সাথে কাজ করতে প্রস্তুত: মুখপাত্র,”
bdnews24.com, ১৪ জুন, ২০২৩।

[২৩] আদিত্য গৌদারা শিবমূর্তি, “
বাংলাদেশের নির্বাচন ভারত-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সীমাবদ্ধতা দেখায়। সাউথ এশিয়ান ভয়েসেস, ১৮ অক্টোবর, ২০২৩।


[২৪] বীণা সিক্রি, "ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক: এগিয়ে যাওয়ার পথ," ইন্ডিয়া কোয়ার্টারলি ৬৫, নং। ২: ১৫৬-৫৭।

[২৫] সোহিনী বোস ও বিবেক মিশ্র, "
জামাত-‌এ-‌ইসলামি ইন বাংলাদেশ ইলেকশনস: ডাইভারজিং পারসেপশনস অফ ইন্ডিয়া অ্যান্ড দ্য ইউ এস," অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন, অক্টোবর ৪, ২০২৩।


[২৬] “ভারত, চিন ও রাশিয়া নির্বাচনে বিজয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে অভিনন্দন জানায়, অব্যাহত সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দেয়,” দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ৮ জানুয়ারি, ২০২৪।

[২৭]
মার্কিন বিদেশ দপ্তর.


[২৮] সাইফুল ইসলাম, "
চিনের দূত কোয়াডে যোগদানের বিরুদ্ধে সতর্ক করার পর বাংলাদেশ ফিরে আসে," নিক্কেই এশিয়া, ১১ মে, ২০২১।


[২৯] মাইকেল কুগেলম্যান, "
ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকছে,ফরেন পলিসি, ৩০ মার্চ, ২০২৩।


[৩০] জিল্লুর রহমান, "
ইন্দো-প্যাসিফিক দৃষ্টিভঙ্গিতে আমাদের অগ্রাধিকার কী?" ডেলি স্টার, ৯ মে, ২০২৩।


[৩১] রুবিয়াত সাইমুম, "
ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরে বাংলাদেশের কৌশলগত কেন্দ্রবিন্দু," পূর্ব এশিয়া ফোরাম, ৯ জুন, ২০২৩।


[৩২] “
শাহরিয়ার: ঢাকা’‌জ ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক ইজ নট টু চুজ বিটুইন মেজর পাওয়ারস,” ঢাকা ট্রিবিউন, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩।


[৩৩] "ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল আধিপত্য বিস্তারের জন্য একটি গ্রুপিং নয়, এমইএ বলে," দ্য হিন্দু, ১১ ডিসেম্বর, ২০২০।

[৩৪]
বিদেশ মন্ত্রক, বাংলাদেশ


[৩৫] “
কাদিরভ বাংলাদেশে মায়ানমার থেকে উদ্বাস্তুদের মানবিক সহায়তার কথা বলেছেন,” ডেলি সান, ২৭ মে, ২০২৩।


[৩৬] রাশিয়ান ফেডারেশনের বিদেশ মন্ত্রক,
https://mid.ru/en/press_service/vizity-ministra/1903461/

[৩৭] রাশিয়ান ফেডারেশনের বিদেশ মন্ত্রক,
https://mid.ru/en/press_service/vizity-ministra/1903461/

[৩৮] জেবুন্নেসা আলো, "
রাশিয়ান রুবলে বাণিজ্যের বন্দোবস্ত করার সুযোগ নেই: সেনব্যাঙ্ক," দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩।


[৩৯] এম আজিজুর রহমান, "
রাশিয়ার গ্যাজপ্রম গ্যাস ড্রিলিংয়ের জন্য পাঁচটি নতুন কূপ পাচ্ছে," দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩।


[৪০]
বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক


[৪১] বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়,
বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য পরিসংখ্যান ২০২১-‌২০২২, ঢাকা, পরিকল্পনা মন্ত্রক, ২০২৩।


[৪২]
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।


[৪৩] শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া, “
পরমাণু জ্বালানির প্রথম ডেলিভারি বাংলাদেশকে তার লক্ষ্যের কাছাকাছি নিয়ে যায়,” ডেলি স্টার, অক্টোবর ১, ২০২৩।


[৪৪]
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট


[৪৫]
বিদেশ মন্ত্রক, ভারত সরকার।


[৪৬]
প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো,, ভারত সরকার।


[৪৭] "
বাংলাদেশের জন্য ভারতের ক্রেডিট লাইন পরমাণু প্রকল্পগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র: বিদেশ সচিব," এনডিটিভি, ২৮ মার্চ, ২০২১।


[৪৮] সাইফুদ্দিন সাইফ, "
লাইন অফ ক্রেডিট: বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া এগেন স্ট্রেস এক্সিলারেটিং ফান্ড রিলিজ," দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ৭ আগস্ট, ২০২৩।


[৪৯] জেবুন্নেসা আলো এবং সাইফুদ্দিন সাইফ, "
ঢাকা, মস্কো রূপপুরের অর্থপ্রদান চিনা ইউয়ানে নিষ্পত্তি করতে সম্মত," দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ১৩ এপ্রিল, ২০২৩।


[৫০] রস্টেক, "
রাশিয়া বাংলাদেশের এএফ-‌এর সঙ্গে এমআই-১৭১এসএইচ প্রকিউরমেন্ট চুক্তি স্বাক্ষর করেছে,," জুন ১৯, ২০১৭।


[৫১] রস্টেক, “
বাংলাদেশ পুলিশকে দুটি এমআই-১৭১এ২ হেলিকপ্টার সরবরাহ করবে রস্টেক,” নভেম্বর ১৯, ২০২১।


[৫২] সিপরি অস্ত্র স্থানান্তর ডেটাবেস, "
আমদানিকারক/রপ্তানিকারক টিআইভি টেবিল"।


[৫৩]
রাশিয়ান ফেডারেশনের বিদেশ মন্ত্রক


[৫৪]
রাশিয়ান ফেডারেশনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক


[৫৫] মাইকেল কুগেলম্যান, "
চট্টগ্রাম বন্দরে রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজ বাংলাদেশে গ্রেট পাওয়ার কম্পিটিশন সম্পর্কে আমাদের কী বলে," ডেলি স্টার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৩।


[৫৬] "
অর্ধ শতাব্দীতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশী বন্দরে রাশিয়ার নৌ-‌জাহাজের নোঙর," তাস, ১২ নভেম্বর, ২০২৩।


[৫৭] দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী, “
রাশিয়া কয়েক দশক পর ভারত মহাসাগরে উপস্থিতি বাড়ায়; মায়ানমার-বাংলাদেশে যুদ্ধজাহাজ পাঠায়,” দ্য ইকোনমিক টাইমস, নভেম্বর ১৫, ২০২৩। আরও দেখুন: “চিনের হিংসা, ভারতের গর্ব: রাশিয়া কয়েক দশক পর ভারত মহাসাগরে ফিরে এসেছে, বাংলাদেশ, মায়ানমারে যুদ্ধজাহাজ নোঙর ফেলেছে” ফার্স্টপোস্ট, নভেম্বর ১৫, ২০২৩।


[৫৮] আলেক্সি ডি. মুরাভিভ, "
প্রশান্ত মহাসাগরে রাশিয়ার নৌ-পুনরুত্থান," এশিয়া টাইমস, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৩।


[৫৯] জয়িতা ভট্টাচার্য, "ভারত-বাংলাদেশ ডিউএন্স কোঅপারেশন: কমিং অফ এজ, অ্যাট লাস্ট?" ওআরএফ ইস্যু ব্রিফ ২৫০, জুলাই ২০১৮: ৬।

[৬০] রেজাউল এইচ লস্কর ও রাহুল সিং, “
ইন্ডিয়া আইজ বাংলাদেশ অ্যাজ মার্কেট ফর রেঞ্জ অফ মিলিটারি হার্ডওয়্যার
,” হিন্দুস্তান টাইমস, জানুয়ারি ৩, ২০২৩.

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Aleksei Zakharov

Aleksei Zakharov

Aleksei Zakharov is a Research Fellow at the International Laboratory on World Order Studies and the New Regionalism Faculty of World Economy and International Affairs ...

Read More +