Author : Navdeep Suri

Expert Speak Raisina Debates
Published on Oct 08, 2022 Updated 6 Days ago

পশ্চিম এশিয়ায় ভারতের ডি-হাইফেনেশন নীতি ইজরায়েলের সঙ্গে তার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

দ্বিপাক্ষিকতার ৩০ বছর: ইন্দো-ইজরায়েলি সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা
দ্বিপাক্ষিকতার ৩০ বছর: ইন্দো-ইজরায়েলি সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা

ভারত এবং ইজরায়েল এ বছর তাদের পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৩০ তম বার্ষিকী উদযাপন করেছে এবং এই উপলক্ষে উভয় দেশের ঐতিহাসিক স্থানগুলি সে দেশের পতাকার রঙে আলোকিত করা হয়। স্টার অব ডেভিড এবং অশোক চক্র সমন্বিত একটি স্মারক লোগোও চালু করা হয়, যা দুই দেশের মধ্যে দৃঢ় বন্ধুত্ব এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার প্রতীক বলে বিবেচিত।

ভারত ১৯৫০ সালে ইজরায়েলকে স্বীকৃতি এবং মুম্বইতে একটি ইজরায়েলি দূতাবাস চালু করার অনুমতি দিলেও উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন এবং আরব দেশগুলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ইজরায়েলের সঙ্গে সর্বাঙ্গীন কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেনি। এমনকি ১৯৯২ সালের পরেও বিশেষ করে ভারতের দিক থেকে উচ্চপর্যায়ের সফরের ঘাটতি থেকেছে। ১৯৯৮ এবং ২০১৪ সালের মধ্যে বিদেশমন্ত্রীর ২০০০ এবং ২০০১ সালের সফরগুলি ছিল ইজরায়েলে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সফর।

ভারত ১৯৫০ সালে ইজরায়েলকে স্বীকৃতি এবং মুম্বইতে একটি ইজরায়েলি দূতাবাস চালু করার অনুমতি দিলেও উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন এবং আরব দেশগুলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ইজরায়েলের সঙ্গে সর্বাঙ্গীন কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেনি।

এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হয় যখন ২০১৫ সালে প্রণব মুখোপাধ্যায় প্রথম ভারতীয় রাষ্ট্রপতি রূপে ইজরায়েলে সফর করেন এবং তার ঠিক পর পরই ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী মোদী ও ২০১৮ সালে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু পারস্পরিক সফর করেন। এই সফরগুলির ফলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং ক্রমবর্ধমান কৌশলগত অংশীদারিত্বের এক বাঁক বদল ঘটে যেখানে ১৯৬২ সালে চিনের বিরুদ্ধে এবং ১৯৬৫, ১৯৭১ এবং ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইজরায়েলের শক্তিশালী সামরিক সহযোগিতা থেকে বর্তমানে একই রকম ভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রগুলিতেও দুই পক্ষ মনোনিবেশ করছে।

ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব

২০০০ সালে ৯০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২০২১ সালে ৭.৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (রেখচিত্র ১) পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ার পরিসংখ্যানে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং বৈচিত্র্যকরণের বিষয়টি (ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, পারমাণবিক পণ্য এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম– সারণি ১ এবং ২) স্পষ্ট। সর্বোপরি স্টার্ট-আপ এবং টেক ইকোসিস্টেমে (প্রযুক্তি বাস্তুতন্ত্রে) বিনিয়োগ বেশ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ২০২১ সাল পর্যন্ত ভারতীয় প্রকল্পগুলিতে ইজরায়েলের মোট বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে। টেভা ফার্মাসিউটিক্যালস, ইকোপ্পিয়া এবং নান দান জৈন দূষণমুক্ত শক্তি, জল ব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে তিনটি উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগকারী হয়ে উঠেছে।

রেখচিত্র ১: ভারত ও ইরায়েলের মধ্যে মোট বাণিজ্যের পরিমাণ (মিলিয়ন মার্কিন ডলারে)

সারণি ১: ভারত থেকে ইরায়েলে সর্বাধিক ফতানিকৃত ১০টি পণ্য

২০০০ সাল ২০০০ সাল ২০২২ সাল ২০২২ সাল
পণ্যের নাম মূল্য (মার্কিন ডলারে) পণ্যের নাম মূল্য (মার্কিন ডলারে)
মূল্যবান ধাতু, মুক্তো ও গহনা ২৭৩ মিলিয়ন খনিজ জ্বালানি ও তেল ১৬২৭ মিলিয়ন
তুলো ৪৯ মিলিয়ন মূল্যবান ধাতু, মুক্তো ও গহনা ১৪৭৪ মিলিয়ন
জৈব রাসায়নিক ২৩ মিলিয়ন বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ২৯৯ মিলিয়ন
কাপড় ও পোশাক ১১ মিলিয়ন জৈব রাসায়নিক ১৭৪ মিলিয়ন
প্রতিরক্ষা ৮ মিলিয়ন প্লাস্টিক ১৫৭ মিলিয়ন
প্লাস্টিক ৭.৬ মিলিয়ন ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের দ্রব্য ১০০ মিলিয়ন
ফল ও বাদাম ৬.৬ মিলিয়ন অস্ত্র ও গোলাবারুদ ৮৯ মিলিয়ন
মানব নির্মিত প্রধান তন্তু ৬ মিলিয়ন কাপড় ও পোশাক ৭৪ মিলিয়ন
বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ৫.৩ মিলিয়ন পারমাণবিক রিয়্যাক্টর ৫৬ মিলিয়ন
কফি, চা, মশলা ৪.২ মিলিয়ন ঔষধপত্র ৪৪ মিলিয়ন

সূত্র : ডিরেক্টর জেনারেল অব ফরেন ট্রেড থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে লেখকদের দ্বারা সঙ্কলিত

সারণি ২: রায়েল থেকে ভারতে সর্বাধিক আমদানিকৃত ১০টি পণ্য

২০০০ সাল ২০০০ সাল ২০২২ সাল ২০২২ সাল
পণ্যের নাম মূল্য (মার্কিন ডলারে) পণ্যের নাম মূল্য (মার্কিন ডলারে)
মূল্যবান ধাতু, মুক্তো ও গহনা ২৯৯ মিলিয়ন মূল্যবান ধাতু, মুক্তো ও গহনা ১৩২০ মিলিয়ন
সার ৪৭ মিলিয়ন বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ৬৮৫ মিলিয়ন
বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ৩৪ মিলিয়ন সার ২০৩ মিলিয়ন
ধাতু ও খনিজ পদার্থ ১৬ মিলিয়ন খনিজ তেল ও জ্বালানি ১৭৯ মিলিয়ন
পারমাণবিক রিয়্যাক্টর ১০ মিলিয়ন অস্ত্র ও গোলাবারুদ ১০০ মিলিয়ন
জৈব রাসায়নিক ৫ মিলিয়ন পারমাণবিক রিয়্যাক্টর ৯৮ মিলিয়ন
সিমেন্ট ও প্লাস্টারের দ্রব্য ৪.৫ মিলিয়ন চিকিৎসার সরঞ্জাম ৭০ মিলিয়ন
এয়ারক্রাফট ও স্পেস ক্রাফট দ্রব্য ২ মিলিয়ন অ্যালুমিনিয়াম দ্রব্য ৪৮ মিলিয়ন
ঔষধপত্র ১ মিলিয়ন জৈব ও অজৈব যৌগ ৩৮ মিলিয়ন
প্লাস্টিক ০.৮ মিলিয়ন প্লাস্টিক ২৯ মিলিয়ন

সূত্র : ডিরেক্টর জেনারেল অব ফরেন ট্রেড থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে লেখকদের দ্বারা সঙ্কলিত

গত দু’বছরে ইজরায়েলের স্টার্ট-আপ ন্যাশনাল সেন্ট্রাল এবং আই ক্রিয়েট  টাই-এর মতো ভারতীয় শিল্পোদ্যোগ কেন্দ্রগুলির মধ্যে একাধিক মউ স্বাক্ষরিত হয়েছে। ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টরা প্রযুক্তিগত স্টার্ট-আপগুলিতে অর্থায়নে বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছেন এবং প্রযুক্তিভিত্তিক সমাধান প্রদানের জন্য ভারতীয় সংস্থাগুলি ও বৃহত্তর বাজারের খোঁজে থাকা ইজরায়েলি সংস্থাগুলির মধ্যে সংযোগস্থাপনকারী কার্যকর ব্যবসায়িক মডেল সৃষ্টি হয়েছে৷ এর ফল স্বরূপ টি সি এস, ইনফোসিস এবং উইপ্রোর মতো বড় ভারতীয় প্রযুক্তি সংস্থার অফিসগুলি তেল আভিভের বাণিজ্যিক সরণিতে জায়গা করে নিয়েছে। আদানি গ্রুপের হাইফা বন্দর (ইজরায়েলের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্দর) অধিগ্রহণ অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বে একটি নতুন লজিস্টিক মাত্রা যোগ করেছে।

তাদের প্রযুক্তি সম্পর্ককে দ্রুততর করতে উভয় দেশই সম্প্রতি ভারত-ইজরায়েল ইন্ডাস্ট্রিয়াল আর অ্যান্ড ডি অ্যান্ড ইনোভেশন ফান্ড (আই ফোর এফ) বা শিল্পপ্রযুক্তি গবেষণা ও উদ্ভাবন তহবিলের পরিধিকে প্রসারিত করেছে যাতে শিক্ষাব্যবস্থা এবং ব্যবসায়িক সংস্থাগুলির বর্ধিত অংশগ্রহণের মাধ্যমে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি এবং আই সি টি-র মতো ক্ষেত্রগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। ২০২১ সালের মার্চ মাসে ভারতীয় তেল এবং গ্যাস সংস্থা আই ও সি এল সবুজ গতিশীলতাকে উন্নীত করার জন্য ভারতে অ্যালুমিনিয়াম-এয়ার ব্যাটারি সিস্টেম তৈরির উদ্দেশ্যে ইজরায়েলি স্টার্ট-আপ ফিনার্জির সঙ্গে একটি যৌথ উদ্যোগ চালু করেছে।

জল এবং কৃষি

ভারত-ইজরায়েল সম্পর্কের একটি অনন্য দিক হল ২০১৭ সাল থেকে জল ও কৃষিক্ষেত্রে তাদের ক্রমবর্ধমান সহযোগিতা। ইজরায়েলের ৯০ শতাংশ বর্জ্য জল পুনরায় ব্যবহার করার উল্লেখযোগ্য ইতিহাস রয়েছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ইজরায়েলের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা মাশাভের সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে আসন্ন জল সঙ্কটের বিষয়টি মোকাবিলা করতে উদ্যোগী হয়েছে। বর্তমানে ভারতে জল বণ্টন এবং ব্যবস্থাপনা, ছিদ্র শনাক্তকরণ, বর্জ্য জল পরিশোধন, নির্লবণীকরণ এবং জল নিরাপত্তা-সহ বিভিন্ন বিষয় সংক্রান্ত ৩০টিরও বেশি ইজরায়েলি প্রকল্প রয়েছে।

ইজরায়েলের ৯০ শতাংশ বর্জ্য জল পুনরায় ব্যবহার করার উল্লেখযোগ্য ইতিহাস রয়েছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ইজরায়েলের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা মাশাভের সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে আসন্ন জল সঙ্কটের বিষয়টি মোকাবিলা করতে উদ্যোগী হয়েছে।

ড্রিপ সেচ এবং নির্লবণীকরণ প্রকল্পে শুধু মাত্র সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বই সফল হয়নি, এর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তঃসহযোগিতাও গত তিন থেকে চার বছরে আশাব্যঞ্জক ফল দেখিয়েছে। তেল আভিভ বিশ্ববিদ্যালয় জলের গুণমান পর্যবেক্ষণের উপর কাজ করার জন্য কেরলের অমৃতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অংশীদারিত্ব স্থাপন করেছে; পঞ্জাবের থাপার বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে পয়ঃনিষ্কাশন পুকুরের বর্জ্য জল পরিশোধনের ব্যবস্থা এবং আইআইটি মাদ্রাজের সঙ্গে জল বিশুদ্ধিকরণের জন্য প্রযুক্তি প্রণয়নের কাজ করছে৷

ভারতই একমাত্র দেশ যেখানে ইজরায়েল দিল্লিতে তার দূতাবাসে একজন জল সম্পদ বিশেষজ্ঞকে ওয়াটার অ্যাটাশে হিসাবে নিযুক্ত করেছে যিনি কৃষি, শিল্প, প্রকৃতি এবং শহুরে জলের চাহিদার মতো চারটি স্তম্ভ জুড়ে ইজরায়েলের অংশগ্রহণের নেতৃত্ব দেন৷ এটি এই ক্ষেত্রে একটি ট্রিকল-ডাউন প্রভাব অর্জনের বৃহত্তর উদ্দেশ্য নিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য যৌথ ভাবে জল প্রযুক্তি কেন্দ্রের মাধ্যমে সক্ষমতা নির্মাণ কর্মসূচিও তৈরি করেছে।

কৃষির ক্ষেত্রে, ইন্দো-ইজরায়েল কৃষি প্রকল্প (আই আই এ পি) ভারতের ২১টি রাজ্য জুড়ে ২৯টি উৎকর্ষ কেন্দ্র (সি ও ই) পরিচালনা করে। তাদের প্রধান মনোযোগের ক্ষেত্রগুলির মধ্যে রয়েছে উল্লম্ব কৃষিপদ্ধতি, মাটি সৌরায়ন এবং বর্ধিত উত্পাদনশীলতা। এই কেন্দ্রগুলি শাকসবজি, আম, লেবু জাতীয় ফল চাষ এবং মৌমাছি পালন ও পশুপালনের মতো অ-কৃষিজ কর্মসূচির বিষয়ে বিশেষ পারদর্শী। এটি অনুমান করা হয় যে, প্রতি বছর এই সি ও ই-গুলি ২৫ মিলিয়ন উচ্চ গুণমানসম্পন্ন সবজির চারা এবং ৪ লক্ষ উচ্চ গুণমানসম্পন্ন ফলের চারা উৎপাদন করার পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক ভারতীয় কৃষকদের সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করে।

প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা

ইজরায়েল থেকে অস্ত্রের বৃহত্তম আমদানিকারকদের মধ্যে ভারত অন্যতম এবং ইজরায়েলের বার্ষিক ৪০ শতাংশ অস্ত্র রফতানি ভারতেই হয়। ১৯৯২ সাল থেকে ভারতে সরবরাহকৃত ইজরায়েলের সম্পূর্ণ নির্মিত অস্ত্র এবং প্রধান সাবসিস্টেমগুলির মোট মূল্য আনুমানিক ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (চৌধুরি এবং রেইন ২০২২)। তাদের প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্ব ইজরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র, ইলেকট্রনিক যুদ্ধ ব্যবস্থা, রেডার ব্যবস্থা, নেভিগেশন ব্যবস্থা এবং ডি আর ডি ও দ্বারা পরিকল্পিত ও উত্পাদিত অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগুলি ভাগ করে নেওয়ার ক্ষেত্রেও প্রসারিত।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে ভারতের যাত্রা উভয় দেশের মধ্যে যৌথ প্রতিরক্ষা উদ্যোগের পথ খুলে দিয়েছে। সম্প্রতি স্বাক্ষরিত প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বিষয়ক ভারত-ইজরায়েল ভিশন এই প্রেক্ষিতে এক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। বারাক ৮ সারফেস-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র, স্কাইস্ট্রাইকার ড্রোন এবং ট্র্যাভর অ্যাসল্ট রাইফেলের মতো অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবস্থা হল দু’টি দেশ দ্বারা গৃহীত যৌথ উৎপাদন এবং উন্নয়ন উদ্যোগের কিছু উল্লেখযোগ্য পণ্য।

বারাক ৮ সারফেস-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র, স্কাইস্ট্রাইকার ড্রোন এবং ট্র্যাভর অ্যাসল্ট রাইফেলের মতো অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবস্থা হল দু’টি দেশ দ্বারা গৃহীত যৌথ উৎপাদন এবং উন্নয়ন উদ্যোগের কিছু উল্লেখযোগ্য পণ্য।

নিরাপত্তা ক্ষেত্রের মধ্যে আন্তঃসহযোগিতার একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হল সাইবার নিরাপত্তা। প্রধানমন্ত্রী মোদী ২০১৭ সালে তাঁর সফর চলাকালীন এ হেন অংশীদারিত্বের সম্ভাবনাকে স্বীকার করেছেন। তার পর থেকে বিভিন্ন ইজরায়েলি ইউনিকর্ন যেমন উইজ, অরকা সিকিউরিটি এবং কোরালজিক্স ভারতে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। ২০২০ সালে ইজরায়েলের ন্যাশনাল সাইবার ডিরেক্টরেট (আই এন সি ডি) এবং ইন্ডিয়ান কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম (সি ই আর টি – ইন) সাইবার হুমকির বিষয়ে তথ্য আদান-প্রদান করতে এবং সক্ষমতা নির্মাণের উদ্যোগগুলিকে উন্নত করার জন্য একটি পরিকাঠামো তৈরি করার উদ্দেশ্যে একটি মউ স্বাক্ষর করেছে। এই উদ্যোগের পথে হেঁটেই ২০২২ সালের মার্চ মাসে পুনের মহারাষ্ট্র ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং কর্মরত পেশাদারদের মধ্যে সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ইজরায়েলি সাইবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থ্রাইভডিএক্স-এর সঙ্গে একটি সাইবার সিকিউরিটি বুটক্যাম্পের আয়োজন করে।

কর্মক্ষেত্রে ডি-হাইফেনেশন

ইজরায়েলের সঙ্গে ভারতের অংশীদারিত্ব স্পষ্ট ভাবে বিকশিত হয়, যখন এটি সক্রিয় ভাবে ইজরায়েল-প্যালেস্তাইনি বিরোধকে দুই পক্ষের অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক থেকে স্বতন্ত্র রাখতে শুরু করে। বর্তমান সরকার উভয় পক্ষের সঙ্গেই তার সম্পর্ককে প্রত্যক্ষ ও দৃশ্যমান করার জন্য সচেতন প্রচেষ্টা চালিয়েছে এবং দু’পক্ষের সঙ্গেই সমান ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখে এ কথা সুনিশ্চিত করেছে যে, কোনও পক্ষই যাতে অপর পক্ষের বিরুদ্ধে ভেটো প্রয়োগ না করতে পারে। এর একটি উদাহরণ দেখা যায় যখন প্রধানমন্ত্রী মোদী ২০১৭ সালে শুধু মাত্র ইজরায়েল সফরে গেলেও সেটিকে রামাল্লায় প্যালেস্তাইন কর্তৃপক্ষের থেকে পৃথক করেন এবং ২০১৮ সালে আলাদা ভাবে প্যালেস্তাইন সফরে যান।

একই সময়ে ভারত প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রের জন্য তার নীতিগত সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। এমনকি একাধিক ক্ষেত্রে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে ভোটও দিয়েছে। ২০১৪ সালে গাজায় ইজরায়েলের আক্রমণের তদন্ত শুরু করার জন্য ইউ এন এইচ আর সি প্রস্তাবের সমর্থনে ভোট দেয় ভারত এবং ২০১৫ সালে ভারত প্যালেস্তাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে আর একটি প্রস্তাবে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে মত দান করে। তার পর ২০২১ সালে ভারত আরও দু’টি প্রস্তাবে সমর্থন জানায়, যার মধ্যে একটি হল প্যালেস্তাইনের জনগণের স্ব-নিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং অন্যটি হল পূর্ব জেরুজালেমে ইজরায়েলি বসতি স্থাপন।

সামনের পথ

১৯৯২ সালে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক সূচনার পর থেকে এবং বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সরকারের আট বছরের শাসনকালে দুই দেশ অনেকটা পথ পাড়ি দিয়েছে।

বর্তমান সরকার উভয় পক্ষের সঙ্গেই তার সম্পর্ককে প্রত্যক্ষ ও দৃশ্যমান করার জন্য সচেতন প্রচেষ্টা চালিয়েছে এবং দু’পক্ষের সঙ্গেই সমান ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখে এ কথা সুনিশ্চিত করেছে যে, কোনও পক্ষই যাতে অপর পক্ষের বিরুদ্ধে ভেটো প্রয়োগ না করতে পারে।

আগামী দিনে উভয় পক্ষের মধ্যে সর্বাঙ্গীন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি, যার মধ্যে পরিষেবার বাণিজ্য অন্তর্ভুক্ত, সেটি অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে। জল ক্ষেত্রে ভারত বিভিন্ন অঞ্চলে জল সমাধানের জন্য একটি কেন্দ্রীয় মঞ্চ তৈরি করতে ইজরায়েলি প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে পারে। সাইবার নিরাপত্তা ক্ষেত্রে যৌথ ডক্টরাল ফেলোশিপের মাধ্যমে এ টু এ সহযোগিতাকে গভীরতর করার দিকে মনোনিবেশ করার পাশাপাশি বেসরকারি ক্ষেত্রকে এই অংশীদারিত্বে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে উত্সাহিত করবে।

ভারতে একটি চিপ নির্মাণকারী ফাউন্ড্রি স্থাপনের জন্য টাওয়ার সেমিকন্ডাক্টরের পরিকল্পনা থেকে উৎপাদন সম্পর্কিত প্রণোদনা ক্ষেত্রটিতে চিনের উপর ভারতের নির্ভরতা কমাতে সাহায্য করবে। ন্যানো এবং রেডার-সক্ষম স্যাটেলাইট ব্যবস্থা তৈরি করতে ভারত ইজরায়েলের সঙ্গে একজোটে কাজ করতে পারে।

আব্রাহাম অ্যাকর্ডস এবং নতুন আই টু ইউ টু গ্রুপিং ত্রিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক স্তরে সম্পর্ক সম্প্রসারণের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করেছে। ভারতে উচ্চাকাঙ্ক্ষী খাদ্য নিরাপত্তা এবং দূষণমুক্ত শক্তির মতো প্রকল্পগুলি বাস্তবায়নে প্রথম দু’টি আই টু ইউ টু প্রকল্পে ইজরায়েলি ও মার্কিন প্রযুক্তি মঞ্চগুলির সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মূলধনের সমন্বয় সাধন ঘটেছে। এই উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলির সফল বাস্তবায়ন পরিবহণ, স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং আরও অন্যান্য ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দেবে।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের চতুর্থ দশকে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে ইজরায়েলের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দ্বারা দুই দেশের সম্পর্ক প্রসঙ্গে একদা প্রদত্ত ‘রাজযোটক’ তকমাটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে।


হরগুণ শেঠি ওআরএফ-এর একজন রিসার্চ ইন্টার্ন।

মতামত লেখকের নিজস্ব।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.