গত ডিসেম্বরের শুরুতে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত ডোভাল কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভ (সিএসসি)–এর ষষ্ঠ এনএসএ বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন। বৈঠকে গত বছরে সিএসসি–কৃত উন্নয়ন ও অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়, এবং একটি নিরাপদ, সুরক্ষিত ও স্থিতিশীল ভারত মহাসাগরকে উন্নত করার জন্য ২০২৪ সালের একটি রোড ম্যাপে সবাই সম্মত হয়। বৈঠকে সদস্য রাষ্ট্র, মরিশাস ও শ্রীলঙ্কা এবং পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র বাংলাদেশ ও সেশেলস উপস্থিত ছিল। মলদ্বীপ, যেখানে এখন একটি নতুন জমানা ক্ষমতায় এসেছে, ছিল একমাত্র অনুপস্থিত সদস্য রাষ্ট্র। এই ঘটনাটি আঞ্চলিক সহযোগিতার উপর অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রভাবকে চিহ্নিত করে। ভারত মহাসাগরে চ্যালেঞ্জ মোকবিলায় একটি সক্রিয় সিএসসি–র জন্য চাপ অব্যাহত রাখা ভারতের জন্য অপরিহার্য।
পরিবর্তনশীল গতিশীলতা
সিএসসি ভারত মহাসাগরের ক্রমবিকাশশীল গতিশীলতাকে তুলে ধরে। সংস্থাটির সূচনা হয়েছিল ২০১১ সালে, যখন ভারত ও মলদ্বীপের সঙ্গে শ্রীলঙ্কা একটি ত্রিপক্ষীয় সামুদ্রিক নিরাপত্তা গোষ্ঠী তৈরির জন্য এগিয়ে এসেছিল। কিন্তু ভারত ও মলদ্বীপের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার কারণে ২০১৪–র পরে সব কিছু স্থবির হয়ে পড়ে। ২০২০ সালে ভারত শুধুমাত্র সংস্থার পুনরুজ্জীবন ও প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের জন্যই চাপ দেয়নি, সেইসঙ্গেই মরিশাস, সেশেলস ও বাংলাদেশে সিএসসি সম্প্রসারণের আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। সিএসসি–র জন্য চাপ ভারত মহাসাগরের জন্য ভারতের বিকশিত কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করে। ভারত মহাসাগর আজ একটি বিকশিত বহুমুখী বিশ্বের কেন্দ্রবিন্দুতে, যেখানে প্রবেশের জন্য অঞ্চল–অতিরিক্ত শক্তিগুলি প্রতিযোগিতা করছে। ইন্দো–প্যাসিফিকের গুরুত্ব বাড়ার সঙ্গেসঙ্গে এই প্রতিযোগিতা আরও বাড়বে।
ভারত শুধুমাত্র সংস্থার পুনরুজ্জীবন ও প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের জন্যই চাপ দেয়নি, সেইসঙ্গেই মরিশাস, সেশেলস ও বাংলাদেশে সিএসসি সম্প্রসারণের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
ভারত এই অঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী শক্তি, এবং সিএসসি তার নেতৃত্ব ও নিরাপত্তা স্থাপত্যকে শক্তিশালী করার সুযোগ দেয়। স্বাধীনতার পর থেকে ভারত মহাসাগরে নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে ভারত ক্রমবর্ধমান ভূমিকা পালন করেছে। সমুদ্রকে সুরক্ষিত করতে এবং আন্তর্জাতিক হুমকি মোকাবিলায় দ্বীপরাষ্ট্রগুলির সক্ষমতার অভাব ভারতকে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত সক্ষমতা বৃদ্ধি, পরিকাঠামো উন্নয়ন ও সরঞ্জাম সরবরাহে সহায়তা করতে অনুপ্রাণিত করেছে। অভ্যুত্থান এড়াতে, বা কোভিড–১৯ ও বহুমুখী সংকটের সময় মানবিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদানের জন্য, ভারত এই অঞ্চলে প্রথম প্রতিক্রিয়া শক্তি হিসাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সিএসসি ভারতকে তার ভূমিকাকে প্রাতিষ্ঠানিক আকার দেওয়া, আঞ্চলিক নিরাপত্তা স্থাপত্যকে রূপ দেওয়া, এবং বিদ্যমান ও উদীয়মান হুমকিগুলিকে আরও ভালভাবে মোকাবিলা করার সুযোগ দেয়।
একটি পুনরুজ্জীবন যা চিন ফ্যাক্টরের সঙ্গে যুক্ত
চিন সিএসসি–র পুনরুজ্জীবনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। চলতি শতাব্দীর প্রথম দশকের গোড়ার দিক থেকে বেজিং তার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্পের মাধ্যমে ভারত মহাসাগরে যথেষ্ট পরিমাণে বিনিয়োগ করেছে, যা একে ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করতে সহায়তা করেছে। ভারত মহাসাগরে বেজিংয়ের প্রসারের লক্ষ্য হল যোগাযোগ ও বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র লাইন নিয়ন্ত্রণ করা এবং ভারতের প্রভাব ও উপস্থিতি সীমিত করা। আজ চিন শুধু তার নৌ–সক্ষমতাই শক্তিশালী করছে না; এটি ভারত মহাসাগর অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা সম্পর্ক বজায় রাখছে এবং মহাসাগরে নিয়মিত সামুদ্রিক মহড়াও পরিচালনা করছে। এটি জিবুতিতে একটি ঘাঁটি স্থাপন করেছে, এবং শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দর নিয়ন্ত্রণ করছে। দেশটি ভারত মহাসাগরের সমুদ্রতলের মানচিত্র তৈরি করতে বৈজ্ঞানিক জাহাজ ব্যবহার করে চলেছে। পরিশেষে, এটি ভারত মহাসাগরে বিদ্যমান নিরাপত্তা স্থাপত্যের মোকাবিলা করতে চায় ইন্ডিয়ান ওশন রিজিয়ন ফোরাম অন ডেভলপমেন্ট কোঅপারেশন–এর মতো প্ল্যাটফর্মে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তার উপস্থিতির মাধ্যমে।
চিন শুধু তার নৌ–সক্ষমতাই শক্তিশালী করছে না; এটি ভারত মহাসাগর অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা সম্পর্ক বজায় রাখছে এবং মহাসাগরে নিয়মিত সামুদ্রিক মহড়াও পরিচালনা করছে।
এর মধ্যে কিছু ঘটনার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা সত্ত্বেও ভারত বুঝতে পেরেছে যে অনেক আঞ্চলিক দেশ অপরিহার্যভাবে চিনকে হুমকি বলে মনে করে না। প্রকাশ্য চিনবিরোধী নীতি তারা নিতে অপারগ, যেহেতু তারা চিনের উপরেও নির্ভরশীল। ফলস্বরূপ, সিএসসি পাঁচটি স্তম্ভের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে — সামুদ্রিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তা; সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদ প্রতিরোধ; পাচার ও আন্তর্জাতিক অপরাধ; সাইবার নিরাপত্তা ও গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো রক্ষা, এবং মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ ত্রাণ। ভারত আশা করে যে, সহযোগিতার এই ক্ষেত্রগুলির মাধ্যমে ভারত মহাসাগর থেকে আসা বিপদগুলিকে আরও ভালভাবে বোঝা ও তার মোকাবিলা করা সম্ভব হবে, এবং ভারত মহাসাগরের রাষ্ট্রগুলি তার একটি পছন্দের অংশীদার হতে থাকবে৷
এই কৌশলগত নমনীয়তা প্রকৃতপক্ষে ভারত মহাসাগরের নিরাপত্তায় অবদান রাখছে। ২০২১ সাল থেকে সিএসসি সন্ত্রাসবাদ ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন, মাদক পাচার, সাইবার অপরাধ ও নিরাপত্তা, সামুদ্রিক দূষণ, সামুদ্রিক আইন এবং উপকূলীয় নিরাপত্তা নিয়ে তদন্ত করেছে। ২০২২ সালে সংস্থাটি প্রথমবারের মতো সমুদ্রবিজ্ঞানী ও হাইড্রোগ্রাফারদের একটি সম্মেলন এবং উপকূলীয় সুরক্ষা সম্পর্কিত আরেকটি সম্মেলন আয়োজন করে। এই সম্মেলনের পরবর্তী পুনরাবৃত্তিগুলি ২০২৪ সালের জন্য নির্ধারিত হয়েছে। সন্ত্রাসবাদ, সাইবার নিরাপত্তা, মানবিক সহায়তা এবং দুর্যোগ ত্রাণ (এইচএডিআর), পাচার এবং আন্তর্জাতিক সংগঠিত অপরাধের বিষয়ে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ ইতিমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। নিয়মিত এনএসএ এবং ডেপুটি এনএসএ বৈঠক ছাড়াও দেশগুলি সন্ত্রাসবিরোধী, পুলিশ, আইন প্রয়োগ এবং সাইবার নিরাপত্তার মতো ক্ষেত্রে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করছে।
রাজনীতির প্রভাব
তবুও, একটি তরুণ প্রতিষ্ঠান হিসাবে সিএসসি এর সদস্য রাষ্ট্রগুলিতে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য অরক্ষিত। সাম্প্রতিক বৈঠকে মলদ্বীপের অনুপস্থিতি এই দুর্বলতার উদাহরণ। দুটি কারণ সম্ভবত এর সিদ্ধান্তে অবদান রেখেছে: প্রথমত, চিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দেওয়া, এবং দ্বিতীয়, জাতীয়তাবাদী প্রচারণার প্রত্যাশা পূরণ করা যা প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়ে ভারত থেকে মলদ্বীপকে দূরে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে, জাতীয়তাবাদী ও চিনপন্থী তাসের এই ব্যবহার মলদ্বীপের একচেটিয়া নয়। সিএসসি–র সকল সদস্য গণতান্ত্রিক, এবং এই দেশগুলি তাদের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সুবিধার জন্য উভয় তাসই খেলে যাবে, কারণ ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রাধান্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। নয়াদিল্লির জন্য, যার উচ্চাকাঙ্ক্ষা, দায়িত্ব ও বিপদ গত দশকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, সিএসসি তার আঞ্চলিক নেতৃত্বকে সংহত করতে সাহায্য করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে থাকবে।
এই ভাষ্যটি প্রথম দ্য হিন্দুতে প্রকাশিত হয়েছিল।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.