-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
ইথিওপিয়া আশা করে যে, তার ব্রিকস সদস্যপদ দেশটিকে বিশ্বব্যাপী নানা প্রেক্ষিতে সামনের সারিতে নিয়ে আসবে।
২০২৩ সালে ভূ-রাজনীতির প্রেক্ষিতে সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনাপ্রবাহের অন্যতম ছিল ব্রিকস-এর সম্প্রসারণ। সেখানে আমন্ত্রিত ছ’টি দেশ ছিল আর্জেন্টিনা, মিশর, ইথিওপিয়া, ইরান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি (ইউএই)।
সম্ভবত সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ছিল ইথিওপিয়ার মতো এক অসম্ভাব্য ব্রিকস প্রার্থীদেশকে আমন্ত্রণ জানানো। দেরিতে আসার পর ইথিওপিয়া নিরলস ভাবে ব্রিকস-এর অংশ হওয়ার লক্ষ্য অনুসরণ করে চলেছে। আফ্রিকার দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল দেশ এবং আয়তনের দিক থেকে দশম বৃহত্তম দেশ হিসাবে ইথিওপিয়া ব্রিকস-এ নিজের মর্যাদা প্রসারিত করার সুযোগ সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন।
ইথিওপিয়ার প্রতিবেশী ও নেমেসিস মিশর - যার সঙ্গে নীল নদের জল এবং গ্র্যান্ড ইথিওপিয়ান রেনেসাঁ ড্যাম (জিইআরডি) নিয়ে দেশটির বিরোধ রয়েছে – সেই মিশরও ব্রিকস-এর অন্যতম প্রার্থী। তাই ইথিওপিয়া আর পিছিয়ে থাকতে চায়নি।
দুর্বল অর্থনীতি ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জর্জরিত ইথিওপিয়ার ব্রিকস-এ যোগদান দরিদ্র দেশ থেকে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে।
বৃহত্তর প্রেক্ষিতে ইথিওপিয়া আংশিক ভাবে তার ক্রমাগত গৃহযুদ্ধের কারণে একটি দরিদ্র অর্থনীতিসম্পন্ন দেশ থেকে গেছে এবং তা দেশটিকে নানা ভাবে বিপর্যস্ত করেছে। আফ্রিকার সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল অর্থনীতির মধ্যে ইথিওপিয়াকে এখন একটি বাস্কেট কেস বলে মনে করা যেতে পারে। দুর্বল অর্থনীতি ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জর্জরিত ইথিওপিয়ার ব্রিকস-এ যোগদান দরিদ্র দেশ থেকে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে।
আগে সোমালিয়ায় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ইথিওপিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমী শক্তিগুলির বেশ প্রিয়পাত্র ছিল। এখন অবশ্য নিজের পুরনো শত্রু ইরিত্রিয়ার সঙ্গে যোগসাজস করায় এবং টাইগ্রেতে যুদ্ধের অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার দরুন তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। টাইগ্রের যুদ্ধের তীব্রতাকে সীমিত করতে মার্কিন নীতির ব্যর্থতা, এর মানবাধিকার উদ্বেগ এবং মার্কিন পৃষ্ঠপোষকতায় সমাধানের অভাব ওয়াশিংটনে ইথিওপিয়ার বন্ধু দেশগুলিকে যথেষ্ট বিরক্ত করেছিল। এর ফলে ইথিওপিয়াকে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে আমেরিকান গ্রোথ অ্যান্ড অপর্চুনিটিস অ্যাক্ট-এর (এজিওএ) সুবিধাগুলি ব্যবহার করা থেকে স্থগিত করা হয়েছিল। ফলে ইথিওপিয়াও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ইথিওপিয়া এজিওএ-র অন্যতম প্রধান সুবিধাভোগী হিসাবে এফডিআই লাভ করেছে এবং বিশেষ শিল্প অঞ্চলের উন্নয়নের মাধ্যমে উত্পাদন রফতানি সম্প্রসারিত করতে সক্ষম হয়েছে। ২০২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইথিওপিয়ান রফতানির ৫২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে অর্ধেক পরিমাণই এজিওএ-র অধীনে শুল্কমুক্ত ছিল। এর মধ্যে পোশাক, চামড়ার জুতো, ফুল এবং উদ্ভিজ্জ পণ্য অন্তর্ভুক্ত।
ব্রিকস-এ যোগদানের দাবি তুলে ইথিওপিয়া তার পশ্চিমী মিত্রদেশদের এই বার্তাই দিতে চেয়েছিল যে, তার কাছে অন্যান্য বিকল্প রয়েছে। ব্রিকস-কে পশ্চিমী দেশগুলি চিন ও রাশিয়া সমর্থিত জোট বলেই মনে করত। ইথিওপিয়া সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পিছপা হয়নি। ২০২৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্রিকস সভাপতিত্বের সময় ইথিওপিয়া গোষ্ঠীটির সদস্যপদ পাওয়ার জন্য সমর্থন কুড়োনোর সুযোগ হাতছাড়া করেনি।
আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল দেশ নাইজেরিয়া এবং শক্তিশালী অর্থনীতিসম্পন্ন দেশ কেনিয়া ব্রিকস-এর জন্য ভাল প্রার্থী নিঃসন্দেহে। তারা দক্ষিণ আফ্রিকা ও মিশরের সঙ্গে ব্রিকস জোটটিতে আফ্রিকার প্রতিনিধিত্বে আঞ্চলিক ভারসাম্য আনতে পারত। ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ ব্রিকস-এ দেশটির অন্তর্ভুক্তি নিয়ে নিজস্ব স্বপ্ন পূরণের জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলেন এবং প্রেসিডেন্ট রামাফোসার আমন্ত্রণে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়েছিলেন। সেখানে সদস্যপদ প্রাপ্তির জন্য ব্রিকস যে মানদণ্ড-ভিত্তিক পদ্ধতির বিকাশ করছিল, তার জন্য অপেক্ষা করার পরিবর্তে ইথিওপিয়াকে অবিলম্বে জোটে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রেসিডেন্ট রামাফোসাকে ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী অনুরোধ করেছিলেন।
যুদ্ধের তীব্রতাকে সীমিত করতে মার্কিন নীতির ব্যর্থতা, এর মানবাধিকার উদ্বেগ এবং মার্কিন পৃষ্ঠপোষকতায় সমাধানের অভাব ওয়াশিংটনে ইথিওপিয়ার বন্ধু দেশগুলিকে যথেষ্ট বিরক্ত করেছিল।
যে পদ্ধতিতে ইথিওপিয়া ব্রিকসের সিদ্ধান্ত গ্রহণকে চ্যালেঞ্জ করেছিল, তা ব্রিকস-কে এ কথা মেনে নিতে বাধ্য করে যে, তারা সম্প্রসারণের জন্য একটি মানদণ্ড নির্ধারণ করবে। কিন্তু তার পরে ছ’টি দেশকে আবার ব্রিকস সদস্যপদে অন্তর্ভুক্ত করতে সম্মত হয়েছে, যাকে একটি অপরিপক্ব অনুশীলন বলা চলে। আর্জেন্টিনা সেই সময় থেকেই জোটে যোগদানের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে এসেছে এবং সৌদি আরবের উত্সাহ হ্রাস পেয়েছে। কারণ সৌদি আরব ব্রিকস-এর একমাত্র সংযোজন নয়, বরং অতিরিক্ত পাঁচটি দেশের মধ্যে একটি ছিল। এই পরিস্থিতিতে ইথিওপিয়াকেই স্পষ্টত বিজয়ী বলে মনে হয়। একগুচ্ছ জটিল সমস্যা ছাড়াও ইথিওপিয়া আদৌ ব্রিকস-এর জন্য কী নিয়ে আসবে, তা নিয়ে কেউ কোনও প্রশ্ন অবধি করেনি।
ব্রিকস সদস্যপদ পাওয়ার এই সাফল্য সত্ত্বেও ইথিওপিয়া তার অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির প্রেক্ষিতে রীতিমতো যুঝছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ইথিওপিয়া আফ্রিকার তৃতীয় খেলাপি দেশ হয়ে ওঠে। এটি তার সার্বভৌম বন্ডে ৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ প্রদানের নিয়ম মেনে চলেনি। অতিমারি ও দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের প্রভাবে ইথিওপিয়ার আর্থিক দুর্বলতা – যা ধারণাগত ভাবে ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে শেষ হয়েছিল বলে মনে করা হয় - দেশটির অর্থনৈতিক কাঠামোকে রীতিমতো পঙ্গু করে দিয়েছে।
একটি জি২০ সাধারণ কাঠামো পুনর্গঠনে ইথিওপিয়া জাম্বিয়া ও ঘানার সঙ্গে যোগ দিয়েছে। ২০২১ সালে ইথিওপিয়া জি২০ ঋণ উদ্যোগের অধীনে ত্রাণ চেয়েছিল। হ্রাসকৃত বৈদেশিক মুদ্রা ভাণ্ডার – যা দেশে একটি ধারাবাহিক সমস্যা এবং উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির জন্ম দেয় – ইথিওপিয়াকে চিন ও ভারতের মতো ঋণদাতাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ভাবে ঋণ পরিষেবা স্থগিতকরণ চুক্তিতে পৌঁছতে বাধ্য করে। ইথিওপিয়ায় ২৮.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক ঋণ রয়েছে, যার অর্ধেকই নেওয়া চিনের কাছ থেকে।
তা সত্ত্বেও, আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের মতে, ইথিওপিয়ার জিডিপি ২০২৩ সালে ৫.৮ শতাংশ থেকে ২০২৪ সালে ৬.২ শতাংশ বৃদ্ধির অনুমান করা হয়েছে প্রধানত শিল্প, ভোগ্যপণ্য ও বিনিয়োগের উপর ভিত্তি করে। ২০২২ সালে ইথিওপিয়ার মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৩৪ শতাংশ। উচ্চ প্রতিরক্ষা ব্যয় ও হ্রাসকৃত রাজস্ব সংগ্রহের কারণে ২০২২ সালে ইথিওপিয়ার রাজস্ব ঘাটতি ছিল জিডিপি-র ৪.২ শতাংশ। যেহেতু ইথিওপিয়া ২০২১ সালে ঋণ পুনর্গঠন করতে চেয়েছিল, তার সার্বভৌম রেটিং সিসিসি-তে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ব্রিকস মূলত নিজের সদস্যদের মধ্যে যে যে গুণাবলির প্রত্যাশী, তার কোনওটাই ইথিওপিয়ার ক্ষেত্রে খাটে না।
২০২২ সালে ইথিওপিয়ার মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৩৪ শতাংশ। উচ্চ প্রতিরক্ষা ব্যয় ও হ্রাসকৃত রাজস্ব সংগ্রহের কারণে ২০২২ সালে ইথিওপিয়ার রাজস্ব ঘাটতি ছিল জিডিপি-র ৪.২ শতাংশ।
আবার এই পরিস্থিতিকে ইথিওপিয়ার অভ্যন্তরীণ বিবাদের সঙ্গেও মিলিয়ে দেখতে হবে। ইরিত্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য আবিকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে সম্মানিত করার পরে পূর্বের প্রভাবশালী টাইগ্রে ইথিওপিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, যা সম্ভবত টাইগ্রিয়ানের শক্তিকে হ্রাস করার জন্যই করা হয়েছিল। দু’বছর ব্যাপী সংঘর্ষ দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। টাইগ্রে এবং আদ্দিস আবাবার মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর বাস্তবায়নের পদ্ধতিকে বিশ্লেষকরা নিতান্তই অস্থায়ী ব্যবস্থা বলে মনে করেন। এতে কোনও অর্থনৈতিক সুবিধা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এ দিকে বৃহত্তম জাতিগোষ্ঠী ওরোমোর কিছু অংশের হাতে অস্ত্র উঠে এসেছে এবং ওরোমো লিবারেশন আর্মি ও তানজানিয়ায় ইথিওপিয়ান সরকারের শান্তি আলোচনা এখনও পর্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে।
ইথিওপিয়ার আর একটি প্রভাবশালী জাতিগোষ্ঠী আমহারা এখনও স্থিতিশীল নয়। টাইগ্রে, ওরোমো এবং আমহারা, এই তিনটি প্রধান জাতিগোষ্ঠীর হিংসাত্মক প্রতিদ্বন্দ্বিতা সরেজমিনে দেখাবে ইথিওপিয়া কতটা অগ্রগতি সাধন করতে পারে। এই সমগ্র পরিস্থিতি আবার আদ্দিস আবাবার উপর চাপ সৃষ্টি করবে, যাকে শান্তি ও উন্নয়নের মরূদ্যানের মতো মনে করা যেতে পারে।
ব্রিকস ইথিওপিয়ার সদস্যপদে স্বীকৃতি দেওয়ার সময় দেশটির অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা ও অভ্যন্তরীণ গৃহযুদ্ধ… উভয় জ্বলন্ত বিষয়কেই নেহাত উপেক্ষা করেছে। পশ্চিমী দেশগুলির কাছে ইথিওপিয়ার মূল্য ছিল প্রায়শই সোমালিয়ায় আল শাবাব মৌলবাদী ও সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলিকে হ্রাস করার জন্য সহযোগী হিসাবে ব্যবহার করা মাত্র। আফ্রিকান ইউনিয়ন মিশন টু সোমালিয়া-র (এএমআইএসওএম) অধীনে ইথিওপিয়া ও কেনিয়া ছিল সৈন্যবাহিনীর প্রধান সরবরাহকারী, যেখানে উগান্ডা ও বুরুন্ডিও যথেষ্ট ভূমিকা পালন করেছিল। এক বার ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়ার মধ্যে বন্ধুত্ব হলে, এই দুই দেশ কেনিয়া ও জিবুতি এবং এর ফলে মোগাদিশুতে সোমালি সরকারের ভূমিকাকে হ্রাস করে হর্ন অফ আফ্রিকার ভূ-রাজনীতিকে পুনর্বিন্যাস করার চেষ্টা করবে।
একটি নতুন ইথিওপিয়া-ইরিত্রিয়া-সুদান অক্ষ গড়ে উঠতে শুরু করলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। কারণ সুদান নিজেই বিশৃঙ্খলার মধ্যে জর্জরিত। এই অঞ্চলের সবচেয়ে স্থিতিশীল দেশগুলি হল কেনিয়া, জিবুতি এবং উগান্ডা। কিন্তু তারা এই অঞ্চলের ভূ-রাজনীতি পরিবর্তনের জন্য ইথিওপিয়ার মতো জোরদার চাপ দিতে মোটেও ইচ্ছুক নয়।
আফ্রিকান ইউনিয়ন মিশন টু সোমালিয়া-র (এএমআইএসওএম) অধীনে ইথিওপিয়া ও কেনিয়া ছিল সৈন্যবাহিনীর প্রধান সরবরাহকারী, যেখানে উগান্ডা ও বুরুন্ডিও যথেষ্ট ভূমিকা পালন করেছিল।
এক বার যদি ইথিওপিয়া ব্রিকস-এর সদস্য হয়ে ওঠে, তা হলে সমগ্র জোটটি আগ্রাসী ভাবে লোহিত সাগরে নিজেদের প্রবেশাধিকার অর্জন করতে পারার নতুন উচ্চাকাঙ্ক্ষা তৈরি করতে পারবে। ১৯৯৩ সালে ইরিত্রিয়া ইথিওপিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর ইথিওপিয়া একটি বৃহৎ স্থলবেষ্টিত দেশে পরিণত হয়। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হয়েছিল যে, ইথিওপিয়া ইরিত্রিয়ার বন্দরগুলি ব্যবহার করতে থাকবে এবং দুই দেশের মধ্যে একটি অভিন্ন সাধারণ অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় থাকবে। ১৯৯৮ সালে ইথিওপিয়া-ইরিত্রিয়া যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে আসাব ও মাসাওয়া বন্দরগুলিতে ইথিওপিয়ার প্রবেশাধিকার বন্ধ হয়ে যায়।
২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইথিওপিয়া জিবুতির বন্দর, সড়ক ও রেল সংযোগে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। এটি লোহিত সাগরের একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর হিসাবে জিবুতির নমনীয়তাও বৃদ্ধি করেছে। প্রথমে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং পরে চিনের তরফে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ পেয়ে জিবুতির উন্নতি ঘটেছে। এটি হর্ন অফ আফ্রিকার রাজনীতির পুনর্বিন্যাসের অংশ, যে বিষয়টিতে ইথিওপিয়া এখন মোটেই সন্তুষ্ট নয়। ইথিওপিয়া বিশ্বাস করে যে, জিবুতি যানজটপূর্ণ এবং বেশ ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে।
অতীতে, ইথিওপিয়া আমিরাতির বহুজাতিক লজিস্টিক সংস্থা ডিপি ওয়ার্ল্ড-এর সঙ্গে সোমালিল্যান্ডের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল বারবেরা বন্দরে বিনিয়োগের জন্য একটি সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছিল। লোহিত সাগরে তাই ইথিওপিয়ার জন্য ইথিওপিয়া-ইরিত্রিয়া বন্ধুত্ব আসাবের পথগুলি পুনরায় চালু করতে পারে। অবশ্য সম্ভবত অংশীদারিত্বে সম্পৃক্ততা ও কৌশলগত গভীরতার অভাব রয়েছে। তাই ইথিওপিয়া দক্ষিণে জিবুতির বিকল্পের সন্ধান করছে এবং বারবেরায় বিনিয়োগ করার জন্য সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে একটি চুক্তি ঘোষণা করার পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ হিসাবে সোমালিল্যান্ডকে ইথিওপিয়ার লাভজনক ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের অংশীদারিত্ব প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছে।
ইথিওপিয়া আমিরাতির বহুজাতিক লজিস্টিক সংস্থা ডিপি ওয়ার্ল্ড-এর সঙ্গে সোমালিল্যান্ডের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল বারবেরা বন্দরে বিনিয়োগের জন্য একটি সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছিল।
একা ইথিওপিয়া কোনও বন্দরে প্রবেশাধিকার সুনিশ্চিত করবে, এমন কোনও উপায় নেই। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই অংশীদারদের হয় সংযুক্ত আরব আমিরশাহি নতুবা চিনের সঙ্গে একই আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসতে হবে। তবে সমস্যা হল এই যে, সোমালিল্যান্ড চিন নয়, বরং তাইওয়ানের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলে। আবার সোমালিল্যান্ডকে আদ্দিস আবাবা থেকে প্রাপ্ত এই গ্যারান্টি দিতে হবে যে, ইথিওপিয়া সোমালিল্যান্ডকে একটি স্বাধীন সত্তা হিসাবে স্বীকৃতি দিচ্ছে। এই পরিস্থিতি মোগাদিশুকে উত্তেজিত করেছে এবং তারা ঘোষণা করেছে যে, এই ধরনের একটি চুক্তি অবৈধ। এ কথা অবশ্য স্পষ্ট যে, ইথিওপিয়া যদি কেবল বারবেরা বন্দরে প্রবেশের জন্য অবকাঠামো তৈরি করতে এবং তার সম্প্রসারণ করতে চায়, তা হলে তা অঞ্চলের ভূ-রাজনীতির পরিবর্তন করার চেষ্টা না করেই করা যেত।
এখনও পর্যন্ত কোনও দেশ যে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দেয়নি, সেই সোমালিল্যান্ডকে দেওয়া ইথিওপিয়ার স্বীকৃতি আসলে দর্শায় যে, এটি শুধু মাত্র লোহিত সাগরে পৌঁছনোর ইথিওপিয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষাতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা অঞ্চলের ভূ-রাজনীতিকে পুনর্বিন্যাস করা এবং একটি জাতীয় উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রস্তাব দিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেওয়ার ধারণার সঙ্গেও সংযুক্ত।
জিবুতির উপর ইথিওপিয়ার নির্ভরতা খুব দ্রুতই যে হ্রাস পাবে, তেমন কোনও সম্ভাবনাও নেই। সোমালিয়ার সঙ্গে ইথিওপিয়ার সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে এবং তা জিবুতি, কেনিয়া ও উগান্ডার জন্য আরও বিরক্তির উদ্রেক করবে, যে দেশগুলি আসলে ইথিওপিয়ার আসল অভিসন্ধি বোঝার চেষ্টা করছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ইথিওপিয়ার উন্নয়ন সহায়তা, ঋণ ত্রাণ ও এফডিআই প্রয়োজন। আশা করা যায়, ব্রিকস ইথিওপিয়াকে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক, চিন, রাশিয়া, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং সৌদি আরবের কাছ থেকে ত্রাণ পেতে সাহায্য করবে। আর ইথিওপিয়া আশা করে যে, এ হেন পরিস্থিতি ইথিওপিয়ার প্রতি ওয়াশিংটনকে নমনীয় হতে, এজিওএ সুবিধাগুলি পুনর্বহাল করতে এবং উন্নয়নমূলক সহায়তা বৃদ্ধিতে প্রেরণা জোগাবে।
গুরজিত সিং জার্মানি, ইন্দোনেশিয়া, ইথিওপিয়া, আসিয়ান এবং আফ্রিকান ইউনিয়নের ভারতীয় অ্যাম্বাস্যাডর। তিনি এশিয়া আফ্রিকা গ্রোথ করিডোরের (এএজিসি) সিআইআই টাস্ক ফোর্সের সভাপতি।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Gurjit Singh has served as Indias ambassador to Germany Indonesia Ethiopia ASEAN and the African Union. He is the Chair of CII Task Force on ...
Read More +