Expert Speak Young Voices
Published on Oct 21, 2022 Updated 8 Days ago

বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও দিল্লির মহল্লা ক্লিনিকগুলি দরিদ্র এবং সুবিধা-বঞ্চিতদের স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।

দিল্লির মহল্লা ক্লিনিক: প্রতিরক্ষার প্রথম ব্যূহ
দিল্লির মহল্লা ক্লিনিক: প্রতিরক্ষার প্রথম ব্যূহ

মহল্লা ক্লিনিকগুলিকে প্রায়শই দিল্লির প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থায় ‘প্রতিরক্ষার প্রথম ব্যূহ’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। ২০১৫ সালে পশ্চিম দিল্লির পেরাগড়িতে এই প্রকল্পের সূচনা একটি মিশ্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছিল। মোবাইল ভ্যান বা মোবাইল মেডিক্যাল ইউনিটের (এম এম ইউ) সফল মডেলের উপর ভিত্তি করে ক্লিনিকগুলির সংখ্যা ২০১৬ সালের ১০৬ থেকে ২০২২ সালে ৫১৯-এ এসে পৌঁছেছে। এই ক্লিনিকগুলি বিভিন্ন অঞ্চল এবং শ্রেণির মধ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা সরবরাহের ব্যবধান পূরণ করতে গুণমানসম্পন্ন প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানের জন্য তৈরি করা হয়েছিল যার ভিত্তি ছিল বিনামূল্যে পরামর্শ, ওষুধ, পরীক্ষানিরীক্ষা এবং প্যাথলজিকাল পরীক্ষা প্রদানকারী জিরো-কস্ট বা শূন্য-খরচ মডেল অনুসরণ করা।

বিবর্তনের অন্তর্ভুক্তি

২০১৫ সাল থেকে এর গতিপথের উপর নজর রাখলে দেখা যাবে যে, ক্লিনিকগুলি উন্নততর উপলব্ধতা এবং অন্তর্ভুক্তিকরণের জন্য আরও মানববান্ধব হওয়ার উদ্দেশ্যে নিয়মিত পরিবর্তন এবং উন্নতির মধ্য দিয়ে গিয়েছে। সেন্টার ফর সিভিল সোসাইটি ২০১৬ সালে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করে এই ক্লিনিকগুলির কার্যকারিতা বিশ্লেষণ করার চেষ্টা চালায়। সেখানে বর্ণনা করা হয়েছে যে, কী ভাবে সাধারণ মানুষ এই ধরনের ক্লিনিকগুলির অবস্থান সম্পর্কে অবগত না হওয়া সত্ত্বেও চিকিৎসক, ওষুধ এবং পরীক্ষানিরীক্ষার আশ্বাসের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দর্শান। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে যখন দিল্লিতে ডেঙ্গি এবং চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব ঘটে, তখন এই ক্লিনিকগুলি জনসমক্ষে উঠে আসে এবং রোগীদের পরীক্ষা ও সম্পূর্ণ ল্যাব টেস্টের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ হয়ে দাঁড়ায়। এটি মহল্লা ক্লিনিকগুলির অন্যতম উল্লেখযোগ্য সাফল্য বলে মনে করা হয় যা আপৎকালীন অবস্থায় শহরটিকে স্বস্তি প্রদানে সক্ষম হয়েছিল।

২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে যখন দিল্লিতে ডেঙ্গি এবং চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব ঘটে, তখন এই ক্লিনিকগুলি জনসমক্ষে উঠে আসে এবং রোগীদের পরীক্ষা ও সম্পূর্ণ ল্যাব টেস্টের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ হয়ে দাঁড়ায়।

টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সেস-এর (টি আই এস এস) কেস স্টাডিতে (২০১৭) বিনামূল্যে চিকিৎসার উচ্চ সন্তুষ্টির হার উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও সেখানে এ বিষয়েও জোর দেওয়া হয় যে, নির্বাচিত ক্লিনিকগুলিতে চিকিৎসকের ঘন ঘন পরিবর্তন একটি উদ্বেগের কারণ ছিল। ২০১৯ সালে আই ডি ইনসাইট দেখিয়েছে যে, সাধারণ মানুষ এই ক্লিনিকগুলির অবস্থান সম্পর্কে আরও বেশি সচেতন হয়ে উঠছেন, যা জনমানসে এই ক্লিনিকগুলির জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ। সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব ডেভেলপিং সোসাইটি, লোকনীতি এ বিষয়ে আরও জানায় যে, ৩১ শতাংশ উত্তরদাতা হয় নিজে বা তাঁদের পরিবারের কেউ গত পাঁচ বছরে অন্তত এক বার মহল্লা ক্লিনিকে গিয়েছিলেন। লহরিয়ার (২০১৭) মতে, এই ক্লিনিকগুলিতে অন্যান্য স্বাস্থ্য পরিষেবার মতোই গঠনগত বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেমন অপ্রশিক্ষিত চিকিৎসকদের নির্মূল করার সম্ভাবনা; উচ্চ স্তরের স্বাস্থ্য সুবিধাগুলির বিকেন্দ্রীকরণ, যাঁদের প্রয়োজন তাঁদের জন্য বিশেষজ্ঞদের উপলব্ধ করা এবং কার্যকর স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান। এই বিষয়টি ক্লিনিকগুলিকে জনপ্রিয়, উপলব্ধ করে তোলার পাশাপাশি এমন এক ভাবনায় পরিণত করেছে, যা বর্তমানে অন্য রাজ্যগুলিও অনুসরণ করে চলছে।

অতিমারি এবং ক্লিনিক

কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব বিশ্ব জুড়ে শক্তিশালী স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থাকেও বিকল করে দিয়েছে। ভারতেও অনুরূপ পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করা গিয়েছে, যেখানে পরিষেবা প্রদানের ক্ষমতার ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতে গিয়ে একটি স্বাস্থ্য পরিষেবা বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। দিল্লিতে আগের ডেঙ্গি বা চিকুনগুনিয়া সংক্রমণের বিপরীতে হেঁটে কোভিড-১৯ প্রবাহগুলি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য বাধা সৃষ্টি করেছে, এমনকি মহল্লা ক্লিনিকগুলিও তীব্র চাপের সম্মুখীন হয়েছে। ডেল্টা ভেরিয়েন্টের সময় শহরটি প্রয়োজনীয় ওষুধ, অক্সিজেন এবং হাসপাতালে বেডের অভাবের সঙ্গে লড়াই করতে বাধ্য হয়েছে।

দিল্লিতে কোভিডের প্রথম প্রবাহের সময় ক্লিনিকগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা সরবরাহ সুনিশ্চিত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল। বৃহত্তর প্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতালগুলি বহির্বিভাগে রোগীদের পরামর্শ প্রদান বন্ধ করে দিলেও, মহল্লা ক্লিনিকগুলি তা চালিয়ে যায়। সুরক্ষা সরঞ্জামের অভাব এবং বেতন প্রদানে বিলম্ব হওয়া সত্ত্বেও এই পরিষেবা কেন্দ্রগুলি বহু সংখ্যক মানুষের জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়ার নিরিখে এবং কোভিড-১৯ পরীক্ষার পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

দিল্লিতে আগের ডেঙ্গি বা চিকুনগুনিয়া সংক্রমণের বিপরীতে হেঁটে কোভিড-১৯ প্রবাহগুলি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য বাধা সৃষ্টি করেছে, এমনকি মহল্লা ক্লিনিকগুলিও তীব্র চাপের সম্মুখীন হয়েছে।

চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা কর্মীরা বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সঙ্কটে সাড়া দিতে সীমিত সংস্থান, ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম (পি পি ই) ও অন্যান্য সরঞ্জামের অভাব-সহ নানা প্রতিকূলতার মধ্যে ব্যক্তি, পরিবার এবং সম্প্রদায়কে সুরক্ষা প্রদানের চেষ্টা চালিয়েছেন এবং নিজেরাও কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অরক্ষিত হয়ে পড়েন। ভুল তথ্যের কারণে সৃষ্ট আতঙ্কই ছিল স্বাস্থ্য পরিষেবা কর্মীদের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক আচরণের প্রাথমিক কারণ। এই সময়ে দিল্লি প্রশাসনের উচিত ছিল জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক ও ত্রাস প্রশমনের পাশাপাশি গুজবের মোকাবিলা করতে সঠিক তথ্য প্রচার চালানোর কাজে ক্লিনিকগুলির উপলব্ধতাকে ব্যবহার করা।

অতিমারির সময়ে অন্যান্য সরকারের দ্রুত প্রতিক্রিয়ার উদাহরণ অনুসরণ করে দিল্লির বেশ কয়েকটি মহল্লা ক্লিনিক কোভিড-১৯ ল্যাবরেটরি পরীক্ষার পরিষেবা দেওয়া শুরু করে। এই ক্লিনিকগুলিতে নিযুক্ত বহু কর্মী পাইকারি বাজারে কাজ করা মানুষদের পরীক্ষা করার মতো বিভিন্ন কোভিড-১৯ সম্পর্কিত দায়িত্ব পালনে মূল্যবান বলে প্রমাণিত হয়েছেন। এটি এ কথাই দর্শায় যে, চিকিৎসার প্রয়োজনে মহল্লা ক্লিনিকের কর্মীরা শহরের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হতে পারেন।

উপসংহার

বিভিন্ন দেশে প্রতি ২০০০-৭০০০ জন মানুষের জন্য চিকিত্সক, নার্স এবং অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা (পি এইচ সি) প্রদান করে থাকেন। তবে ভারতে প্রতি ৫০,০০০ জনে একটি শহুরে পি এইচ সি সুবিধা রয়েছে। এর ফলস্বরূপ দিল্লিতে মহল্লা ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার ফলে চিকিত্সক-সহ স্বাস্থ্য পরিষেবা সংক্রান্ত সুবিধার প্রাপ্যতা পাঁচ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ক্লিনিকগুলির অবস্থান নির্দিষ্ট সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায়গুলির অন্তর্গত দরিদ্র এবং অনগ্রসর মানুষদের জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়ার পথ প্রশস্ত করে। এটি এ কথাই দর্শায় যে, জনসংখ্যার চাহিদা অনুসারে স্বাস্থ্য পরিষেবার রূপায়ণ এবং সেই সেই পরিষেবা জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়া পরিষেবার উপযোগিতা বৃদ্ধি করে এবং সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা পুনরায় বহাল করে।

এই ক্লিনিকগুলির অবস্থান নির্দিষ্ট সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায়গুলির অন্তর্গত দরিদ্র এবং অনগ্রসর মানুষদের জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়ার পথ প্রশস্ত করে।

মহিলা, শিশু, বয়স্ক, অভিবাসী এবং সাধারণ মানুষ, যাঁদের আগে সরকারি প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়ার সুযোগ ছিল না, তাঁরাও এই ক্লিনিকগুলির সুবিধা পেয়েছেন। এটি আমাদের সম্প্রদায়গুলির মধ্যে সুপ্ত ভাবে বিদ্যমান স্বাস্থ্য পরিষেবা সংক্রান্ত বৈষম্য দূরীকরণে সহায়তা করে।

সৌম্যজিৎ দাস, সতবিন্দর সিং বক্সী এবং সিপানা রমেশের (২০২১) প্রতিবেদন অনুসারে, অতিমারি এবং তার পরবর্তী দেশব্যাপী লকডাউনের ফলে অনাপৎকালীন ক্ষেত্রে হাসপাতালে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পেয়েছে। একই সময়ে ভারতে সকল পরিষেবার পরিসর ব্যাপী টেলি-কনসাল্টেশন গ্রহণে ৫০০ শতাংশ বৃদ্ধি লক্ষ করা গিয়েছে যার মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষই প্রথম বার এই পরিষেবা ব্যবহার করেছেন। টেলিমেডিসিন ভারত এবং অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলির ক্ষেত্রে একটি সমাধান হতে পারে যেখানে পরিকাঠামো এবং শ্রমের ঘাটতির কারণে প্রান্তিক অঞ্চলে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান বিঘ্নিত হয় এবং মহল্লা ক্লিনিকগুলি সে ক্ষেত্রে অভিযোজন ও সেগুলি সমন্বয়ের ক্ষেত্রে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। টেলিমেডিসিন অনুশীলন সফল হওয়ার জন্য এই জাতীয় ক্লিনিকগুলিতে কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কর্মীর প্রয়োজন নেই। শারীরিক  সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবার উপর মনোযোগ দেওয়া, যা এখনও পর্যন্ত তেমন ভাবে আলোচিত নয়, সেটিকেও অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি।

নয়াদিল্লির বাইরে এবং ভারতের মেট্রোপলিটন অঞ্চল জুড়ে সম্প্রদায় স্তরের অসামান্য প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার মাধ্যমে আম আদমি মহল্লা ক্লিনিকগুলি জরুরি প্রয়োজন পূরণ করতে পারে। গুজরাত, ঝাড়খণ্ড, কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশ এবং মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যগুলিতেও এই ক্লিনিকগুলির অনুরূপ মডেল নিয়ে পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। কোভিড-১৯-এর সময়ে এই মহল্লা ক্লিনিকগুলি শহরের স্বাস্থ্য সঙ্কট মোকাবিলায় তাদের অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলে। তাত্ক্ষণিক স্বাস্থ্য পরামর্শ দ্বারা চিহ্নিত এই দ্রুত প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা সেই সকল সম্প্রদায়ের মানুষের জীবনে মূল্যবান এবং প্রাসঙ্গিক করে তোলে, যাঁদের এটির সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন রয়েছে। এই ক্লিনিকগুলি দেশের ইতিহাসে অভূতপূর্ব এবং এগুলির বিদ্যমান প্রভাবের মূল্যায়ন আমাদের পরিষেবাকে উন্নতকারী উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়তা করবে।

মতামত লেখকের নিজস্ব।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.