Expert Speak India Matters
Published on Feb 17, 2022 Updated 28 Days ago

‘‌গ্লোবাল সিন্ডেমিক’‌কে সংজ্ঞায়িত করা হয় একটি অতিমারি হিসেবে, যার সঙ্গে পারস্পরিক যোগাযোগ রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন, অপুষ্টি ও মেদবাহুল্যের। একত্রে এগুলি মানুষের ও এই গ্রহের স্বাস্থ্যের জন্য বিরাট বিপদ সৃষ্টি করে, এবং তা বিশ্বের সমস্ত অঞ্চলকে প্রভাবিত করে।

স্থিতিশীল খাদ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই

Source Image: Lance Robotson — Flickr/CC BY-NC 2.0

স্থিতিশীল খাদ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই

পরিবেশের ক্ষতি না–করে বিশ্বের মানুষের জন্য পুষ্টিকর খাদ্যের সরবরাহ স্থিতিশীল রাখা একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সারা বিশ্বে ক্রমবর্ধমান ক্ষুধার্ত জনসংখ্যা এই দাবি রাখে যে কৃষি জমির ব্যবহার বৃদ্ধি করা হোক, গবাদি পশুর জন্য আরও চারণভূমি থাকুক এবং সার ও জেনেটিক্যালি পরিবর্তিত ফসলের ব্যবহার আরও বেশি হোক। কিন্তু তা করা হলে অন্যান্য নানা ক্ষতির সঙ্গে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন (জিএইচজিই) ও পরিবেশ দূষণ বাড়বে এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হবে, এবং সব মিলিয়ে পরিবেশের ক্ষতি হবে। এই অবস্থায় এই গ্রহ এবং নিজেদের বাঁচাতে আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হল জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করা এবং সকলের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করা।

খাদ্য নিরাপত্তা চারটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে:‌ খাদ্যের প্রাপ্যতা, ভৌত ও অর্থনৈতিক সহজলভ্যতা, ব্যবহার ও জৈব উপলব্ধতা এবং এই তিনটির ভরণপোষণ। একশো কোটিরও বেশি মানুষ তাঁদের জীবিকার জন্য এখনকার খাদ্য ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল। ক্রমবর্ধমান পুষ্টির প্রয়োজন মেটাতে ১৯৬১ সাল থেকে মাথাপিছু খাদ্য উৎপাদন ৩০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে, আর সেই সঙ্গে নাইট্রোজেন সারের ব্যবহার বেড়েছে ৮০০ শতাংশ এবং সেচের জন্য জল সম্পদের ব্যবহার বেড়েছে ১০০ শতাংশ। তা সত্ত্বেও বর্তমানে ৮২ কোটি ১০ লক্ষ মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছেন, পাঁচ বছরের কমবয়সী ১৫ কোটি ১০ লক্ষ শিশুর বৃদ্ধি ঠিকমতো হয়নি, ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী ৬১ কোটি ৩০ লক্ষ মেয়ে ও মহিলার আয়রনের ঘাটতি রয়েছে, এবং ২০০ কোটি প্রাপ্তবয়স্ক অতিরিক্ত ওজন বা মেদবাহুল্যে ভুগছেন।

ক্রমবর্ধমান পুষ্টির প্রয়োজন মেটাতে ১৯৬১ সাল থেকে মাথাপিছু খাদ্য উৎপাদন ৩০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে, আর সেই সঙ্গে নাইট্রোজেন সারের ব্যবহার বেড়েছে ৮০০ শতাংশ এবং সেচের জন্য জল সম্পদের ব্যবহার বেড়েছে ১০০ শতাংশ।

জলবায়ু পরিবর্তনে খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা ও খাদ্যাভ্যাসের বড় ধরনের অবদান থাকে, এবং এগুলির আমূল পরিবর্তন না হলে প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা অসম্ভব। আরও উদ্ভিজ খাবার খাওয়া নিশ্চিত ভাবেই আমাদের কার্বন পদচিহ্ন হ্রাস করবে। তবে ব্যক্তিগত খাদ্যাভ্যাসের জটিলতা বিবেচনা করে একথা বলা যায় এ পরিবর্তন নিয়ে আসা এত সহজ নয়। সবাই পরিবর্তন ঘটাতে পারে না। তা ছাড়াও নিরামিষ খাদ্যও পরিবেশের ক্ষতি না–করে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে না, যে হেতু গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে ঘটে, যার মধ্যে থাকে চাষ–আবাদ, ফসল সংগ্রহ, সঞ্চয়, পরিবহণ ও রান্না করা।

কৃষি, খাদ্য ব্যবস্থা ও আধুনিক খাদ্যাভ্যাসের পরিবেশগত প্রভাব

রাষ্ট্রপুঞ্জের (ইউএন) মতে খাদ্য, শক্তি ও জল হল স্থিতিশীল উন্নয়নের তিনটি স্তম্ভ। ক্রমবর্ধমান বিশ্ব জনসংখ্যা তিনটিরই চাহিদার তাৎপর্যপূর্ণ বৃদ্ধি ঘটিয়েছে। বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের এক–চতুর্থাংশেরও বেশি (২৬%) ঘটে খাদ্যের জন্য। কৃষির জন্য ব্যবহার করা হয় (চিত্র ১) বিশ্বের বরফ ও মরু-মুক্ত বাসযোগ্য ভূমির অর্ধেক, ও বিশ্বের তাজা জলের ৭০%। এ ছাড়াও বিশ্বের ইউট্রোফিকেশনের (‌পরিপোষক–সমৃদ্ধ দূষণকারীর কারণে জলপথের দূষণ)‌ ৭৮% ঘটে কৃষির কারণে।

চিত্র ১: খাদ্য ও কৃষির পরিবেশগত প্রভাব

২০১৮ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমীক্ষা ১১৯টি দেশের প্রায় ৩৮,০০০ খামারের থেকে সংগৃহীত তথ্য মূল্যায়ন করে এই কথা জানিয়েছে যে কৃষিজ প্রক্রিয়ার কারণে, যার মধ্যে পরিবহণ ও অরণ্যবিনাশের ঘটনাও আছে, ১৩৭০ কোটি মেট্রিক টন কার্বন ডাইঅক্সাইড তৈরি হয়েছে৷ এটি প্রতি বছর গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের ২৬%–এর সমতুল। এই রিপোর্টে আরও জানানো হয়েছে যে মাংস, মাছ, ডিম ও দুধ উৎপাদনের জন্য বিশ্বের ৮৩% কৃষিজমি ব্যবহৃত হয়, এবং তা গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের ৫৬-৫৮%–র জন্য দায়ী। এই রিপোর্টের একটি প্রতিনিধিত্বকারী চিত্রণ দেওয়া হয়েছে চিত্র ২-এ, যেখানে ২৯টি খাদ্য থেকে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ চিত্রিত করা হয়েছে। এই তালিকায় দেখা যাচ্ছে সবচেয়ে বেশি গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণকারী হল গরুর মাংস ও সবচেয়ে কম বাদাম।

চিত্র ২: খাদ্য থেকে সরবরাহ শৃঙ্খল জুড়ে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ

যদিও গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের বেশিটাই ঘটে থাকে প্রাণীজ খাদ্যের কারণে, তবে কিছু বিশেষজ্ঞ ব‌লেন যে শুধু মাংস বাদ দিলে তার কোনও উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়বে না। ব্রিটিশ জনস্বাস্থ্য পুষ্টিবিদ জেনি আই ম্যাকডায়ারমিডের মতে, স্বাস্থ্যকর খাদ্য আবশ্যিক ভাবে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমায় না, আবার অস্বাস্থ্যকর খাবারের সংমিশ্রণও পরিবেশের উপর এর প্রভাব কমাতে পারে। ২০২১ সালের একটি পর্যালোচনায় ডায়েটিশিয়ান সারা ফোর্বস বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ার গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের ৬৭-৭৩% ঘটে দেশটির প্রধান খাদ্যসামগ্রী, যেমন ফল ও শাকসবজি, শস্য, চর্বিহীন মাংস, মাছ, ডিম, বাদাম, বীজ, বিন, শিমজাতীয় সবজি, দুধ ও অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্যের কারণে। অবশিষ্ট ২৭-৩৩%–র কারণ অ–প্রধান বা ইচ্ছামূলক খাদ্যসামগ্রী, যেমন চিনিযুক্ত পানীয়, অ্যালকোহল, কেক, পেস্ট্রি ও প্রক্রিয়াজাত মাংস। সুতরাং, পরিবেশের ক্ষতির জন্য শুধুমাত্র মাংস খাওয়াকে দায়ী করা বৈজ্ঞানিক ভাবে ঠিক নয়।

ব্রিটিশ জনস্বাস্থ্য পুষ্টিবিদ জেনি আই ম্যাকডায়ারমিডের মতে, স্বাস্থ্যকর খাদ্য আবশ্যিক ভাবে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমায় না, আবার অস্বাস্থ্যকর খাবারের সংমিশ্রণও পরিবেশের উপর এর প্রভাব কমাতে পারে।

দ্য ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেল্‌থ-এ প্রকাশিত একটি সমীক্ষার রিপোর্টে বলা হয়েছে যে ৩০ বছর ধরে খাদ্যতালিকাগত পরিবর্তনগুলি অনুসরণ করে দেখা গিয়েছে অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারের (আলট্রা–প্রসেস্‌ড ফুড বা ইউপিএফ) বর্ধিত উৎপাদন ও ব্যবহারও বেশি গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের একটি কারণ। ব্রাজিলের এই সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে খাদ্যাভ্যাসের ক্ষেত্রে ঘরের খাবার থেকে ইউপিএফ–এর দিকে ঝোঁক বাড়তে থাকার ফলে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ ২১% বেড়েছে, দেশের তাজা জলের সম্পদের ব্যবহার (‌বা জল পদচিহ্ন) বেড়েছে‌ ২২%, এবং বাস্তুতান্ত্রিক পদচিহ্ন ১৭% বেড়েছে। সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে একাধিক ইউপিএফ-এ পাম এবং সয়া তেল রয়েছে, যেগুলির স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত প্রভাব যথেষ্ট বেশি। তা ছাড়া পরিবেশের উপর প্রাণীজ পণ্যের প্রভাব কমাতে ক্রমে বেশি করে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে উদ্ভিদ-ভিত্তিক নকল মাংস, যা পশুর মাংসের চেয়ে বেশি পরিবেশবান্ধব। তবে কিছু উদ্ভিজ বিকল্প, যেমন সয়াবিন থেকে যা পাওয়া যায়, পরিবেশ বান্ধব নয়। সয়াবিন তেলের শিল্প–প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহৃত হেক্সেন একটি বায়ু দূষণকারী ও সম্ভাব্য নিউরোটক্সিন। উপরন্তু সয়াবিন প্রায়শই জেনেটিক্যালি মডিফায়েড (জিএম) হয়, এবং গবেষণায় দেখা গেছে যে এই ফসল বেশি হার্বিসাইড ব্যবহার করে ও কৃষি–বাস্তুতন্ত্রকে নেতিবাচক ভাবে প্রভাবিত করে।

একটি স্থিতিশীল খাদ্য ব্যবস্থা স্বাস্থ্য-উন্নয়নকারী ও পরিবেশ-বান্ধব

রোগের বোঝা বাড়ানোর ক্ষেত্রে ১০টি সবচেয়ে বিপজ্জনক কারণের মধ্যে রয়েছে বিশ্বব্যাপী অপুষ্টি ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস। স্থিতিশীল খাদ্যাভ্যাস বা ‌সাসটেনেবল ডায়েটের মধ্যে দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার প্রয়াসের মধ্যে আছে অপুষ্টি, লুকানো ক্ষুধা বা মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ঘাটতি সহ সব ধরনের অপুষ্টির বিরুদ্ধে এবং খাদ্য-সম্পর্কিত সংক্রামক নয় এমন সব রোগের (‌যেমন মেদবাহুল্য, ডায়াবেটিস টাইপ ২, কার্ডিওভাসকুলার রোগ ইত্যাদি)‌ বিরুদ্ধে লড়াই করার কৌশল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (এফএও)–এর মতে, স্থিতিশীল খাদ্যাভ্যাসের অর্থ হল এমন খাবার খাওয়া যেগুলির পরিবেশগত প্রভাব বা কার্বন পদচিহ্ন কম, কিন্তু একই সময়ে যা পুষ্টির চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিতে সমৃদ্ধ। এফএও বলেছে স্থিতিশীল খাদ্যাভ্যাস হল সহজলভ্য, সাশ্রয়কারী, বৈচিত্র্যময়, পুষ্টিগত ভাবে পর্যাপ্ত, নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর, এবং সাংস্কৃতিক ভাবে গ্রহণযোগ্য। বিশ্বের জনসংখ্যার একটি অংশ খাদ্যতালিকাগত পদচিহ্ন কমাতে (‌অর্থাৎ পরিবেশের বেশি ক্ষতি হবে এমন খাদ্য বর্জন)‌ আরও উদ্ভিজ খাবার খাওয়ার দিকে এগোচ্ছে, কিন্তু ভেগান বা নিরামিষভোজী হওয়া সবার জন্য উপলব্ধ বিকল্প নয়; উদ্ভিজ খাবার সব সময় সাশ্রয়ী হয় না, এবং নিরামিষ খাওয়ার অভ্যাস বজায় রাখা কঠিন। উপরন্তু, পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট ও ট্রান্স-ফ্যাট সমৃদ্ধ মাংসহীন বা নিরামিষ ইউপিএফগুলি আমাদের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ উভয়ের জন্যই টেকসই নয়। নিম্নলিখিত ব্যবস্থাগুলি তেমন স্থিতিশীল খাদ্যের অংশ হিসেবে গণনা করা হয়েছে যা একই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (এফএও)–এর মতে, স্থিতিশীল খাদ্যাভ্যাসের অর্থ হল এমন খাবার খাওয়া যেগুলির পরিবেশগত প্রভাব বা কার্বন পদচিহ্ন কম, কিন্তু একই সময়ে পুষ্টির চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিতে সমৃদ্ধ।

স্থানীয় খাবার খান:‌ মরসুমি, স্থানীয়, তাজা, ঘরে–তৈরি খাবার বেছে নিন। স্থানীয় খাবার খেলে খাদ্য–মাইল ও পরিবহণ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমে, এবং তার ফলে কার্বন পদচিহ্ন ছোট হয়। উদাহরণস্বরূপ, কৃত্রিম ফর্মুলা ফিডের বিপরীতে বুকের দুধে শূন্য কার্বন পদচিহ্ন রয়েছে। ২০২০ সালের একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে ২০১৬ সালে জন্ম থেকে ৩৬ মাস বয়স পর্যন্ত শিশু ও বাচ্চাদের জন্য উত্তর আমেরিকার মাথাপিছু নিঃসরণ ছিল খুব কম, ৫৯.০৬ কেজি কার্বন ডাই–অক্সাইডের সমতুল্য। বুকের দুধ খাওয়ানোর প্রচার অতএব একই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন ও শৈশবকালীন অপুষ্টি মোকাবিলার অন্যতম বুদ্ধিদীপ্ত উপায় হতে পারে। টরন্টো থেকে ২০০৫ সালের একটি রিপোর্ট অনুসারে, কৃষকদের স্থানীয় পণ্য উপভোক্তাদের কাছে পৌঁছনোর জন্য গড়ে ১০১ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হয়, যেখানে আমদানি করা পণ্য গড়ে ৫,৩৬৪ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে। স্থানীয় পণ্যের ঝুড়ির বিপরীতে কার্বন ডাই–অক্সাইড নিঃসরণে আমদানির অবদান ১১,৮৮৬.৮৬৭ গ্রাম, যা স্থানীয় পণ্যের ঝুড়ির চেয়ে ১০০ গুণ বেশি।

লাল মাংস থেকে ক্রমশ সরে আসা:‌ লাল মাংসের ব্যবহার হ্রাস করা এবং সাদা মাংস ও মাছ—যেমন মুরগি, টার্কি, সামুদ্রিক খাবার ও শেলফিশ—খাওয়া শুরু করা অনেকের জন্য একটি স্থিতিশীল উপায়। দিয়েগো রোজ ও সহকর্মীদের নেতৃত্বে ২০১৯–এর একটি পর্যালোচনা ১৬,৮০০ খাদ্যাভ্যাস মূল্যায়ন করে বলেছে একটি গরুর মাংস-ভিত্তিক খাদ্য পরিবেশের উপর ৫২% প্রভাব ফেলে, যেখানে একটি শেলফিশ-ভিত্তিক খাদ্যের মাত্র ১০% প্রভাব পড়ে। আমরা তাই খাদ্যের মানের সঙ্গে আপস না–করে পরিবেশ-সচেতন খাদ্য পছন্দ করার মাধ্যমে আমাদের কার্বন পদচিহ্ন কমাতে পারি।

জলবায়ু-সপ্রতিভ শস্য বেছে নিন:‌ মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা ছাড়াও কার্বন পদচিহ্ন কমাতে এবং স্থিতিশীল খাদ্যাভ্যাস নিশ্চিত করতে মিলেটের মতো জলবায়ু-সপ্রতিভ ফসল বেছে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। মিলেট–এর উপকারিতা ও কঠোর জলবায়ু পরিস্থিতিতে এর স্থায়িত্ব ও দ্রুততার পরিপ্রেক্ষিতে ‘‌ভবিষ্যতের খাদ্য’‌ হিসেবে এর সম্ভাবনা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে ২০২৩ সালকে রাষ্ট্রপুঞ্জের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা মিলেটের আন্তর্জাতিক বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছে। জোয়ার, বাজরা, রাগি ও বার্লির মতো মিলেটগুলি সারা বিশ্বে সহজেই জন্মায়; এর ফসলের সামান্য রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন হয়; এগুলি গ্লুটেন-মুক্ত এবং এদের মধ্যে আছে প্রোটিন, ডায়েটারি ফাইবার ও প্রয়োজনীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট, যেমন আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি ইত্যাদি। এগুলোর হোল গ্রেন তিন ভাবে অপুষ্টির বিপদ কমায়:‌ মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ঘাটতি কমিয়ে, টাইপ ২ ডায়াবেটিস ও মেদবহুলতার বিপদ কমিয়ে, এবং পুষ্টির অভাব কিছুটা কমিয়ে। ভারত থেকে ২০১৮ সালের একটি তুলনামূলক সমীক্ষা বলেছে ধানের বদলে ভুট্টা, আঙ্গুল বাজরা, মুক্তা বাজরা বা জোয়ারের চাষ সেচের জলের চাহিদা ৩৩% কমিয়েছে।

পরিশেষে উল্লেখ্য, খাদ্যাভ্যাসকে প্রভাবিত করে এমন কারণগুলি স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত উদ্বেগের পরিধির বাইরে থাকে, যেমন স্থানীয় প্রাপ্যতা, ঋতু, সামর্থ্য ও পছন্দ। অন্য খাবার ছেড়ে শূন্য বা ন্যূনতম কার্বন পদচিহ্নের খাবার খাওয়াই হল জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার সর্বোত্তম পদক্ষেপ। দৈনন্দিন খাদ্য থেকে কোনও খাদ্যগোষ্ঠীকে সম্পূর্ণরূপে বাদ দেওয়া অবাস্তব ও স্বল্পস্থায়ী। পরিবেশ–বান্ধব স্থিতিশীল খাদ্যের মূল চাবিকাঠি হল পারলে নিজের খাবার নিজেই উৎপন্ন করা; পুষ্টিকর সামগ্রিক খাবার নির্বাচন করা; পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট, ট্রান্স-ফ্যাট ও অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারের ব্যবহার কমানো; স্থানীয় বিক্রেতাদের কাছ থেকে কেনা; বর্জ্য হ্রাস করা; এবং আরও উদ্ভিজ খাবার খাওয়া।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Subhasree Ray

Subhasree Ray

Dr. Subhasree Ray is the Lead - Nutrition & Wellness (Corporate Medical Services), at Reliance Industries Limited. She writes on nutrition policies, sustainable food systems ...

Read More +
Shoba Suri

Shoba Suri

Dr. Shoba Suri is a Senior Fellow with ORFs Health Initiative. Shoba is a nutritionist with experience in community and clinical research. She has worked on nutrition, ...

Read More +