চিন-ভারত সম্পর্কে ২০২২ সালে বিশেষ উন্নতি হয়নি। নতুন বছরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে আমরা যখন এই গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আগামী মাসগুলিতে কী রূপ নেবে তা নিয়ে আলোচনা করছি, তখন আমাদের অবশ্যই ভারত সম্পর্কে চিনের সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। চিনা ভাষার গণমাধ্যম, চিনা ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়া পরিসর বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদনে এমন তিনটি প্রধান বিষয় তুলে ধরা হয়েছে, যেগুলি বর্তমানে চিনের অভ্যন্তরীণ বিতর্ক এবং ভারত সম্পর্কে আলোচনার উপজীব্য এবং যা এক দিক থেকে ভারতের প্রতি দেশটির সামগ্রিক মনোভাব এবং নীতিকেও রূপ দান করছে।
১. ‘প্রথম’ স্থান হারানোর আশঙ্কা
আগামী কয়েক মাসে ভারতের জনসংখ্যা চিনের জনসংখ্যাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার খবরে চিনা বিশ্লেষকরা কিছুটা শঙ্কিত হয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। চিনা ইন্টারনেটের বিভিন্ন ভাষ্য উদ্বেগের সঙ্গে এ কথা উল্লেখ করেছে যে ভারত বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হয়ে উঠবে এবং সে দেশে তরুণদের সংখ্যা চিনের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। চিনের আশঙ্কা মূলত তিনটি কারণের উপর দাঁড়িয়ে: প্রথমত, এই যুক্তি দেওয়া হচ্ছে যে, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারকে যথেষ্ট বৃহৎ করে তুলবে এবং ব্যাপক অভ্যন্তরীণ চাহিদা বিশ্বব্যাপী বিদ্যমান বিশ্বায়ন-বিরোধী প্রবণতার ক্ষতিপূরণ জোগাবে – যেমনটা চিনা অর্থনীতি দীর্ঘ দিন যাবৎ অর্জনের চেষ্টা করেছে, কিন্তু বিশেষ সফল হয়নি। দ্বিতীয়ত, বহু চিনা পর্যবেক্ষকদের মতে, ভারতের বর্তমান পরিস্থিতি (যেখানে নব্বইয়ের দশকের পরে শিক্ষিত ভারতীয়দের অধিকাংশই শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ করতে প্রস্তুত) ২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকে চিনের অবস্থার মতোই, যখন সে দেশের আশির দশকের পরবর্তী প্রজন্ম ব্যাপক সংখ্যায় শ্রমশক্তিতে প্রবেশ করে এবং চিনা অর্থনীতির উড়ানের সূচনা করে। তাঁদের যুক্তি অনুযায়ী, আগামী ১০ বছরে ভারত চিনের অর্থনৈতিক সাফল্যকে অনেকাংশেই অনুকরণ করতে সক্ষম হতে পারে। সর্বোপরি, এই যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে, ভারতে মোবাইল ইন্টারনেটের বিস্তার এবং জনপ্রিয়তা ২০০০-এর দশকের চিনা পরিস্থিতির তুলনায় অনেকটাই বেশি, যা ভারতে তথ্যপ্রযুক্তিচালিত অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আরও ত্বরান্বিত করবে বলে চিনা পক্ষের বিশ্বাস এবং যা গুণমান ও গতির দিক থেকে চিনের উন্নয়নমূলক অভিজ্ঞতাকে ছাপিয়ে যেতে পারে।
চিনা ইন্টারনেটের বিভিন্ন ভাষ্য উদ্বেগের সঙ্গে এ কথা উল্লেখ করেছে যে ভারত বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হয়ে উঠবে এবং সে দেশে তরুণদের সংখ্যা চিনের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
তুলনায় জনসংখ্যার দিক থেকে চিন দ্রুত বার্ধক্যের সম্মুখীন হচ্ছে এবং সে দেশে জন্মের হারও কম। কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা (১৫-৬৪ বছর বয়সি) ২০১২ সালের পর থেকে ক্রমাগত হ্রাস পেয়েছে এবং একই সঙ্গে চিনের বৃদ্ধির হারের ক্ষেত্রেও এ কথা বলা যায়। ২০২৫ সালের পর চিনের কর্মক্ষম জনসংখ্যা প্রতি বছর ০.৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ হারে হ্রাস পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। পরবর্তী বছরগুলিতে চিন জাপানের পরে সবচেয়ে বেশি বয়স্ক জনসংখ্যাবিশিষ্ট দেশ হয়ে উঠবে বলে আশা করা যায়। অনেকে এ কথাও বিশ্বাস করেন যে, বয়স্ক জনসংখ্যা চিনের অর্থনীতির প্রেক্ষিতে ‘অ্যাকিলিস হিল’ বা ‘দুর্বলতার প্রধান কারণ’ হয়ে উঠবে, যা দেশটির উদ্ভাবন এবং উদ্যোগী ক্ষমতাকে নেতিবাচক ভাবে প্রভাবিত করবে।
প্রকৃত পক্ষে, এমন অনেক কারণ রয়েছে যা এখনও ভারতকে জনসংখ্যাগত লভ্যাংশের (যেমন ভারতের গণতান্ত্রিক রাজনীতির কম দক্ষতা, সামাজিক উত্তেজনা, দুর্নীতি, পশ্চাদপসরণকারী পরিকাঠামো নির্মাণ, শ্রমশক্তির কম অংশগ্রহণ ইত্যাদি) প্রাপ্তিকে সীমাবদ্ধ করে এবং একাধিক উপায়ে চিনও তার জনসংখ্যা সমস্যার সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছ (সহায়ক সরকারি নীতি, শ্রম উৎপাদনশীলতাকে উন্নত করা, মানব সম্পদে সমৃদ্ধ একটি দেশ থেকে মানব পুঁজি সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তর করা ইত্যাদি)। এত কিছুর পরেও চিনা পর্যবেক্ষকরা বিশ্বাস করেন, চিনের এই সাবধানবাণীকে খাটো করা উচিত নয় যে, আগামী বছরগুলিতে ভারতের ত্বরান্বিত বৃদ্ধির সম্ভাবনা এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বা তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসাবে উত্থিত হওয়ার পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি এশিয়ায় চিনের প্রাধান্য এবং দেশটির জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলবে।
২. ভারতীয় উৎপাদনের উত্থান: প্রতিবন্ধকতা এবং ঝুঁকি
ভারতীয় অর্থনীতির কোভিড-পরবর্তী পুনরুদ্ধার এবং উত্পাদন খাতে উত্থানের ফলে চিনের সামনে যে প্রতিবন্ধকতাগুলি তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে চিনা ইন্টারনেটে প্রভূত আলোচনা হয়েছে। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ এবং নোবেলজয়ী মাইকেল স্পেন্স-এর করা ভারতীয় অর্থনীতির ভবিষ্যৎ গতিপথ সম্পর্কে ইতিবাচক মূল্যায়নই হোক বা মরগান স্ট্যানলির চিফ এশিয়া ইকনমিস্ট চেতন আহিয়া দ্বারা ২০২৭ সালের মধ্যে ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসাবে উত্থানের ভবিষ্যদ্বাণী বা ভারতীয় স্টক মার্কেটের স্থিতিস্থাপকতা এবং ভারতে আন্তর্জাতিক পুঁজির ক্রমবর্ধমান আগ্রহ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনই হোক… এই সমস্ত খবরই চিনা কৌশলগত পরিসরে প্রধান আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন ভাষ্যে উদ্বেগের সঙ্গে জানানো হয়েছে যে, কীভাবে অ্যাপল আইএনসি চিন থেকে তার উৎপাদন শৃঙ্খলগুলির প্রত্যাহারকে ত্বরান্বিত করেছে এবং ধীরে ধীরে তার উৎপাদন কেন্দ্র ভারতে স্থানান্তর করছে। শুধু অ্যাপল বা স্যামসাং নয়, এ কথাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইলেকট্রনিক্স পরিসর, নব শক্তিযান পরিসর ইত্যাদিতে বহু চিনা কোম্পানি ভারতীয় বাজারে প্রবেশ করতে আগ্রহী এবং ভারত সরকারের বিভিন্ন নীতি প্রণোদনার সুবিধা নিতে ইচ্ছুক।
যদিও চিনা কৌশলগত সম্প্রদায়ের মধ্যে কিছু অংশ মোদী সরকারের বর্তমান উৎপাদন / শিল্পনীতিতে বিশেষত চিনা সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ‘ব্যবহার’, ‘সমকক্ষ হওয়া’, ‘বর্জন’, ‘প্রতিস্থাপন’ ইত্যাদি বিষয়গুলি সম্পর্কে সাবধান করেছে। তাঁদের মতে, মোদীর নেতৃত্বে ভারত চিনা উদ্যোগগুলিকে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ এবং ‘ভারত থেকে রফতানি’ করতেই বাধ্য করছে না, একই সঙ্গে ভারতে একটি সম্পূর্ণ উত্পাদন শিল্প গড়ে তোলার উপরেও জোর দিচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মোবাইল ফোন উৎপাদনের ক্ষেত্রে, ভারত চিনের মোবাইল ফোন সংস্থাগুলিকে ভারতে চূড়ান্ত অ্যাসেম্বলি লাইন (ছোট ছোট যন্ত্রাংশ একসঙ্গে জুড়ে দেওয়ার শৃঙ্খল) স্থানান্তর করতে ‘জোর’ করছে। এটি হয় তাদের ভারতে সহায়ক সরঞ্জাম, যন্ত্রাংশ, উপাদানগুলির ঊর্ধ্বক্রমের সরবরাহকারীদের হস্তান্তর করতে বাধ্য করছে বা প্রলুব্ধ করছে এবং তারপর চিপস এবং স্ক্রিন ডিসপ্লের মতো উচ্চ মূল্য-সংযোজিত পণ্যগুলির সঙ্গে এই শিল্পক্ষেত্রগুলিকে সংযুক্ত করে ভারতে মোবাইল ফোন নির্মাণের একটি সম্পূর্ণ শিল্প-বাস্তুতন্ত্র গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে। এবং চিনের মতে, ঠিক এখানেই ভারত ভিয়েতনাম বা বাংলাদেশের চেয়ে আলাদা, যারা কেবল তাদের উৎপাদন এবং প্রক্রিয়াকরণ ঘাঁটিকে শক্তিশালী করেই সন্তুষ্ট। কিন্তু ভারতের চাহিদা আরও বেশি, সে চিনের কাছ থেকে সম্পূর্ণ মূল্যশৃঙ্খলই ছিনিয়ে নিতে চায়।
শুধু অ্যাপল বা স্যামসাং নয়, এ কথাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইলেকট্রনিক্স পরিসর, নব শক্তিযান পরিসর ইত্যাদিতে বহু চিনা কোম্পানি ভারতীয় বাজারে প্রবেশ করতে আগ্রহী এবং ভারত সরকারের বিভিন্ন নীতি প্রণোদনার সুবিধা নিতে ইচ্ছুক।
এ হেন পরিস্থিতিতে অ্যাপলের উদাহরণ অনুসরণ করে অন্য বিদেশি / দেশীয় উত্পাদনকারী সংস্থাগুলি তাদের উত্পাদন শৃঙ্খলগুলিকে চিনের বাইরে সরিয়ে নেবে কি না, সে প্রশ্নও চিনের ইন্টারনেট জুড়ে রয়েছে। ভারত কি সত্যিই চিনকে বৈশ্বিক উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম? এশিয়ার অর্থনীতিতে নেতৃত্ব দিতে ভারত কি চিনের জায়গা দখল করতে পারে? চিনা পক্ষে এমন বিড়ম্বনা দেখা দিয়েছে যে, কিছু দিন আগে একটি পোস্ট চিনা ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছিল, যা মধ্যরাতে দিল্লি বিমানবন্দরে লোকের ব্যাপক ভিড়ের কথা তুলে ধরে। ঘটনাটিকে চিনা নেটিজেনরা এই ভাবে ব্যাখ্যা করেন যে, ‘ইউরোপীয় এবং আমেরিকানরা ভারতে সংস্থা চালু করা এবং বিনিয়োগ করার জন্য পড়িমড়ি করে দৌড়চ্ছেন।’
এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, বেশ কিছু চিনা কৌশলবিদ চিনা সরকারকে কেবল চিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য / প্রযুক্তি যুদ্ধে মনোনিবেশ না করার পাশাপাশি চিনের বিরুদ্ধে ভারতের দ্বারা শুরু করা ‘অর্থনৈতিক আক্রমণ’-এর উপর আরও বেশি মনোযোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছেন। অর্থাৎ ভারতের উৎপাদন শিল্পের উত্থানের ফলে উদ্ভূত ঝুঁকিগুলি শনাক্ত করা এবং এর ফলে চিনের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৩. চিন-ভারত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শক্তির প্রবেশ
চিনের ক্ষেত্রে অন্য যে বিষয়টিকে কাঁটার মতো বলে মনে করা হচ্ছে, তা হল ‘ভারত চিন-ভারত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মার্কিন শক্তিকে প্রবেশাধিকার দিয়েছে’, যাতে ভারতের তুলনায় চিনের বিদ্যমান অর্থনৈতিক ও সামরিক শ্রেষ্ঠত্বকে খর্ব করা যায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াংয়ের কাছে ইয়াংটসে এলাকায় এলএসি-তে ২০২২ সালের ৯ ডিসেম্বর ভারতীয় ও চিনা সৈন্যরা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে চিনের প্রধান বক্তব্য ছিল যে, এলএসি থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরে হিমালয়ে কিছুদিন আগে চালানো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভারত যৌথ সামরিক মহড়াই সাম্প্রতিক সংঘর্ষের নেপথ্যে প্রধান কারণ। সাংহাই ইনস্টিটিউটস ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ-এর (এসআইআইএস) সাউথ এশিয়া অ্যান্ড চায়না সেন্টারের সিনিয়র ফেলো এবং সেক্রেটারি জেনারেল লিউ জংই থেকে শুরু করে সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউট অব দ্য চায়না ইনস্টিটিউটস অব কনটেম্পোরারি ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস-এর ডেপুটি ডিরেক্টর ওয়াং শিদা হয়ে চিনা ইন্টারনেটে ঘুরতে থাকা অসংখ্য প্রবন্ধে অনামা মন্তব্যকারীরা এই দু’টি ঘটনার মধ্যে একটি প্রত্যক্ষ সংযোগের কথাই তুলে ধরেছেন। চিনা আলোচনা থেকে এ কথাই মনে হয়, যে উল্লিখিত অনুশীলনটি চিনকে চাপ দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, যেহেতু চিন ২০২২ সালের জুলাই মাস থেকে আলোচনার টেবিলে বসা অথবা পারস্পরিক কথাবার্তা চালানো থেকে বিরত থেকেছে। ইতিমধ্যে অরুণাচল প্রদেশে চিনা অনুপ্রবেশের চেষ্টা এলএসি বরাবর জমি শক্ত করার এমন এক প্রয়াস, যা আলোচনা প্রক্রিয়ার সময় দেশটি কাজে লাগাবে বলে ভেবেছিল।
চিনা পর্যবেক্ষকরা এ কথা তুলে ধরেছেন যে, চিন কীভাবে প্রাথমিক পর্যায়ে তার উত্পাদন শিল্পের রূপান্তর / উন্নয়নের জন্য চিন ও আমেরিকার অর্থনীতির মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরতা ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছিল।
তবে শুধু ভারত-মার্কিন সামরিক সহযোগিতা নিয়েই চিন চিন্তিত নয়। চিনা দুশ্চিন্তার প্রধান কারণ হল, যেমনটা তারা মনে করে, বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল পুনর্গঠন / পুনর্বিন্যাস করার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের আগ্রহের সমন্বয়। চিনা পর্যবেক্ষকরা এ কথা তুলে ধরেছেন যে, চিন কীভাবে প্রাথমিক পর্যায়ে তার উত্পাদন শিল্পের রূপান্তর / উন্নয়নের জন্য চিন ও আমেরিকার অর্থনীতির মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরতা ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছিল। অন্য দিকে, দেশটি একই সঙ্গে তার পিছিয়ে থাকা অভ্যন্তরীণ প্রদেশগুলির বিকাশ ও শিল্পায়নের জন্য (চিনের শিল্পগতভাবে উন্নত পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশগুলি থেকে নিম্ন পর্যায়ের শিল্প স্থানান্তরের মাধ্যমে) বেল্ট অ্যান্ড রোড পরিকল্পনার অধীনে বিশাল ভারতীয় বাজারকে কাজে লাগাতে চেয়েছিল, যাতে চিনের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি আরও ভারসাম্যপূর্ণ, দীর্ঘমেয়াদি, স্বস্থিতিশীল এবং অপরাজেয় হয়ে উঠতে পারে। যদিও এই চিত্রনাট্য মাঝপথে খেই হারিয়ে ফেলে, কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চিনকে তার শিল্পসংস্কার প্রক্রিয়া মসৃণভাবে চালাতে দিতে অস্বীকার করে এবং দেশটির বিরুদ্ধে ‘বাণিজ্য ও প্রযুক্তি যুদ্ধ’ শুরু করে; অন্য দিকে, ভারত বিআরআই, আরসিইপি বা অন্যান্য চিন-নেতৃত্বাধীন অর্থনৈতিক উদ্যোগের অধীনে চিনের সঙ্গে নিজের অর্থনীতিকে সংযুক্ত করতে এবং সমন্বিত করতে অস্বীকার করে। এ ভাবে চিন ‘ডি-সিনিচাইজেশন’ (চিনা আধিপত্যযুক্ত অঞ্চলকে চিনা ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যাওয়ার প্রয়াস) ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত উভয় দেশকেই অভিযুক্ত করে নিজের ক্ষোভ উগরে দেয়। চিনের মতে, মূলত এই দু’টি দেশ নিজেদের মধ্যে অর্থনৈতিক সুবিধাগুলি ভাগ করে নিতে চাওয়ার দরুন চিনকে বৈশ্বিক শিল্প শৃঙ্খল থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।
সামগ্রিকভাবে, এটি লক্ষণীয়, যখন ভারতের মনোযোগ অস্থির সীমান্তের উপর নিবদ্ধ – বিশেষ করে চিনের সমকক্ষ হয়ে ওঠার ভারতীয় উচ্চাকাঙ্ক্ষার নিরিখে – চিনা পক্ষের অভিমত এই যে, এলএসি বরাবর নয়, চিন ও ভারতের মধ্যে প্রকৃত দ্বন্দ্ব বরং উন্নয়নের ক্ষেত্রেই।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.