Author : Ankita Dutta

Expert Speak Raisina Debates
Published on Oct 20, 2022 Updated 8 Days ago

একাধিক জ্বালানি উদ্যোগের বাস্তবায়ন ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৈচিত্র্যকরণ পরিকল্পনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে না পারার দরুন জ্বালানি নিরাপত্তা অর্জনের পথটি এখনও প্রতিবন্ধকতাসঙ্কুল।

ইউরোপের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি সঙ্কটের মূল্যায়ন
ইউরোপের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি সঙ্কটের মূল্যায়ন

ইউরোপে জ্বালানি সঙ্কট গত কয়েক বছর ধরে উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউরোপ জীবাশ্ম জ্বালানি, বিশেষ করে রাশিয়ার উপর, নির্ভরতা কমানোর প্রচেষ্টা চালালেও খুব বেশি সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। এমনটা হওয়ার প্রাথমিক কারণ হল, পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি এবং অন্যান্য বিকল্প জ্বালানিতে বিনিয়োগের সঙ্গে সাযুজ্য না রেখেই জ্বালানির চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়া।

২০১৪ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন জ্বালানি সঙ্কট ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ই ইউ) কাছে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, রুশ জ্বালানি সম্পদের বিকল্প খুঁজে বের করা অত্যন্ত প্রয়োজন। ই ইউ জ্বালানি আমদানির জন্য রাশিয়ার উপর তাদের নির্ভরতা ক্রমশ কমানোর চেষ্টা চালিয়েছে। ই ইউ ২০২১ সালে রাশিয়া থেকে ৩৯.২ শতাংশ গ্যাস, ২৪.৮ শতাংশ অপরিশোধিত তেল এবং ৪৬ শতাংশ কয়লা আমদানি করেছে। ‘২০২১ সালে রাশিয়া থেকে ই ইউ-এর আমদানির পরিমাণ ছিল ৬২ শতাংশ (৯৯ বিলিয়ন ইউরো), যা ২০১১ সালের তুলনায় প্রায় ১৫ পারসেন্টেজ পয়েন্টের উল্লেখযোগ্য হ্রাসকেই নির্দেশ করে, যখন রাশিয়া থেকে ই ইউ-এর জ্বালানি আমদানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৭৭ পারসেন্টেজ পয়েন্ট (১৪৮ বিলিয়ন ইউরো)।’ ই ইউ তার আমদানির পরিমাণ হ্রাস করতে সক্ষম হলেও এখনও পর্যন্ত রুশ জ্বালানির উপরে নির্ভরশীল। ইউক্রেনের সঙ্কট বিশেষ সময়সীমার মধ্যে এই নির্ভরতা হ্রাস করার প্রয়োজনীয়তাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ই ইউ) সদস্য রাষ্ট্রগুলি কেবল মাত্র রুশ জ্বালানি সম্পদের উপর নিষেধাজ্ঞাই আরোপ করেনি, একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় জ্বালানি সম্পদের সরবরাহ সুরক্ষিত করার জন্য বিকল্প উত্সগুলিরও সন্ধান চালিয়েছে এবং উচ্চ মূল্যের আঘাতকে প্রশমন করার জন্য একাধিক নীতি ও উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে।

সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হয়ে ইউরোপীয় জ্বালানি বাজারে ক্রেমলিনের আধিপত্যকে ব্যবহার করে জ্বালানি রফতানি সীমিত করার প্রচেষ্টা নিয়ে প্রাথমিক ভাবে উদ্বেগ থাকলেও সংঘর্ষ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপে বিতর্কের রূপও বদলেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ই ইউ) সদস্য রাষ্ট্রগুলি কেবল মাত্র রুশ জ্বালানি সম্পদের উপর নিষেধাজ্ঞাই আরোপ করেনি, একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় জ্বালানি সম্পদের সরবরাহ সুরক্ষিত করার জন্য বিকল্প উত্সগুলিরও সন্ধান চালিয়েছে এবং উচ্চ মূল্যের আঘাতকে প্রশমন করার জন্য একাধিক নীতি ও উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে।

বৃহত্তম রাশিয়ান জ্বালানি সংস্থা গ্যাজপ্রম ২০২১ সাল থেকে ধীরে ধীরে ইউরোপে তার জ্বালানি আমদানির পরিমাণ সীমিত করে চলেছে৷ ই ইউ-এর নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার পরে রাশিয়া ইউরোপীয় সংস্থাগুলিকে রুবলে অর্থ প্রদান করার দাবি জানিয়ে সরবরাহ আরও কমিয়ে দেয়৷ এর ফলে ই ইউ-এর বেশ কয়েকটি দেশে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে জ্বালানি প্রবাহ ব্যাহত হয়েছে। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে মস্কো নর্ড স্ট্রিম ১ সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ করে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জ্বালানি সঙ্কট গুরুতর হয়ে ওঠে। এর কারণ স্বরূপ রাশিয়া দাবি করে যে, দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার দরুন  বিদ্যমান পাইপলাইনে হওয়া তৈল ছিদ্র মেরামত করা সম্ভব হয়নি। এর ফলে ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন দের লেয়েন তাঁর স্টেট অফ দি ইউনিয়ন বক্তৃতার সময় এই পরিস্থিতির জরুরি অবস্থার উপরে আলোকপাত করে বলেন যে, ‘সমগ্র ইউরোপ জুড়েই আমাদের এই নির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে হবে।’

কী করা হয়েছে?

ই ইউ রুশ রফতানিকৃত জ্বালানিগুচ্ছ থেকে সরে এসে উৎসের বৈচিত্র্যকরণের জন্য সুচিন্তিত পদক্ষেপ নিয়েছে। তার পঞ্চম এবং ষষ্ঠ দফার নিষেধাজ্ঞায় ই ইউ সমস্ত ধরনের রুশ কয়লা এবং সমুদ্রবাহিত অপরিশোধিত তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। রুশ জ্বালানি সম্পদগুলির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা ছাড়াও ই ইউ তার ব্যবহৃত জ্বালানির উৎসকে মস্কো থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি দ্বিমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রথমটি হল সম্পদের বিকল্প সরবরাহ সুরক্ষিত করার চেষ্টা। রাশিয়ার বিকল্প হিসেবে গ্যাস রফতানি সুরক্ষিত করতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কাতার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, নরওয়ে, আজারবাইজান, আলজিরিয়া, তুরস্ক, জাপান, মিশর এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছে।

একটি সর্বাঙ্গীন রিপাওয়ারইইউ পরিকল্পনা ২০২২ সালের মে মাসে প্রকাশিত হয়েছিল, যা রুশ জীবাশ্ম জ্বালানির উপরে ই ইউ-এর নির্ভরতা দ্রুত হারে কমিয়ে আনার পথনির্দেশ করে।

দ্বিতীয়ত, জ্বালানি সঙ্কটের প্রভাব কমানোর জন্য ই ইউ একাধিক নীতি ও উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ২০২২ সালের মার্চ মাসে তারা রিপাওয়ারইইউ পরিকল্পনা চালু করেছিল, যেখানে সদস্য দেশগুলি ২০২২ সালের মধ্যে রাশিয়া থেকে সরবরাহকৃত জ্বালানির উপর নির্ভরতা দুই-তৃতীয়াংশ হ্রাস করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হয়। একটি সর্বাঙ্গীন রিপাওয়ারইইউ পরিকল্পনা ২০২২ সালের মে মাসে প্রকাশিত হয়েছিল, যা রুশ জীবাশ্ম জ্বালানির উপরে ই ইউ-এর নির্ভরতা দ্রুত হারে কমিয়ে আনার পথনির্দেশ করে। এর লক্ষ্য ছিল বিদ্যুৎ উৎপাদন, শিল্প, নির্মাণ ও পরিবহণে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে দূষণমুক্ত শক্তির রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করা। ইউরোপীয় কমিশন ২০৩০ সালের মধ্যে রিনিউয়েবেল এনার্জি ডিরেক্টিভস-এর লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ শতাংশে উন্নীত করার প্রস্তাব করেছে, যা ২০২১ সালের ৪০ শতাংশ থেকে বেশি। এর ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে মোট পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনের ক্ষমতা ১২৩৬ গিগাওয়াটে গিয়ে পৌঁছবে, যা ‘ফিট ফর ৫৫’ কাঠামোর আওতায় স্থির হওয়া ২০৩০ সালের মধ্যে ১০৬৭ গিগাওয়াট লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেকটাই বেশি।

উপরোল্লিখিত বক্তৃতার সময় ই ইউ কমিশনের সভাপতি তিনটি প্রধান পদক্ষেপ করার কথা ঘোষণা করেছিলেন। প্রথমত, সর্বোচ্চ চাহিদার সময়ে বাধ্যতামূলক ভাবে বিদ্যুৎ সঞ্চয় চালু করার জন্য একটি ই ইউ-ব্যাপী পরিকল্পনার সূচনা। ই ইউ ইতিমধ্যে আসন্ন শীতের জন্য জ্বালানি সম্পদ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে গ্যাস রিডাকশন প্ল্যান বা গ্যাসের ব্যবহার হ্রাসের মতো একটি স্বতঃপ্রণোদিত উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ ক্ষেত্রে লক্ষ্য হল ২০২২ সালের আগস্ট মাস থেকে ২০২৩ সালের মার্চ মাসের মধ্যে গ্যাসের চাহিদা ১৫ শতাংশ কমিয়ে আনা। দ্বিতীয়ত, জীবাশ্ম জ্বালানি সংস্থার উদ্বৃত্ত লাভের ব্যবহার করা। এবং তৃতীয়ত, পুনর্নবীকরণযোগ্য এবং পারমাণবিক শক্তি উৎপাদনকেন্দ্রগুলি দ্বারা অর্জিত রাজস্বের সীমা নির্ধারণ করা। এই পদক্ষেপগুলি জ্বালানির দাম এবং গৃহস্থালির খরচ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করার জন্য আনুমানিক ১৪০ বিলিয়ন ইউরোর সংস্থান করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর জ্বালানি মন্ত্রীদের বৈঠকে এই পদক্ষেপগুলি আলোচিত হয়েছে।

এগুলি ছাড়াও বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় রাষ্ট্র জ্বালানির ক্রমবর্ধমান দাম মোকাবিলায় জাতীয় স্তরে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। যেমন জার্মানি পরিবার পিছু চাপ কমাতে ৬৫ বিলিয়ন ইউরোর ত্রাণ প্যাকেজ অনুমোদন করেছে, ইতালি ১৬ সেপ্টেম্বর ১৪ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের একটি সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে যার লক্ষ্য হল সংস্থা এবং পরিবারগুলিকে জ্বালানির ক্রমবর্ধমান মূল্য থেকে সুরক্ষা প্রদান করা। এবং ব্রিটেন আগামী দুই বছরের জন্য গৃহস্থালির গ্যাস এবং বৈদ্যুতিক বিল বার্ষিক ২৫০০ জিবিপি-তে সীমাবদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মূল্যায়ন

২০২২ সালে ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার আগ্রাসন জ্বালানি উৎসের বৈচিত্র্যকরণ নিয়ে বিতর্কগুলিকে উস্কে দিয়েছে এবং জ্বালানি সম্পদ রফতানি থেকে অর্জিত অর্থ ইউক্রেনে রুশ ক্রিয়াকলাপের অর্থায়ন করছে, এই মর্মে জ্বালানি নির্ভরতার প্রসঙ্গে এক নতুন তৎপরতার সঞ্চার ঘটাতে সমর্থ হয়েছে।

একাধিক নীতি এবং উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে ই ইউ সাধারণ পরিবারের জন্য জ্বালানির উচ্চ মূল্য এবং অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার উপায় খুঁজছে। যদিও এমনটা করার চেয়ে বলা সহজ। ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড (আই এম এফ) ২০২২ সালের জুলাই মাসের মূল্যায়নে জানিয়েছে যে, রাশিয়া থেকে অভূতপূর্ব ভাবে জ্বালানি আমদানি সম্পূর্ণ বন্ধ করা হলে হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া এবং চেক প্রজাতন্ত্রের মতো মধ্য ও পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলির জি ডি পি প্রায় ৬ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে এবং একই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ২০২২ সালে ২.৬ শতাংশ এবং ২০২৩ সালে আরও ২ শতাংশ হ্রাস পাবে।

রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানির উপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যেই অন্তর্দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করেছে যেখানে একাধিক সদস্য দেশ ইউনিয়নের আরোপিত সময়সীমার মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে তাদের অক্ষমতা প্রকাশ করে।

ই ইউ-এর সম্মুখে উপস্থিত প্রধান প্রতিবন্ধকতাগুলির মধ্যে অন্যতম হল সরবরাহ এবং চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা। রাশিয়া থেকে আমদানি না করার উদ্দেশ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রাকৃতিক গ্যাস এবং এল এন জি-র জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ইত্যাদি দেশগুলির সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত করার মাধ্যমে সরবরাহের সমস্যার মোকাবিলা করার চেষ্টা করেছে। যদিও এ ক্ষেত্রে সমস্যাটি হল, এই সব দেশ থেকে জ্বালানি প্রবাহ বাড়ানোর জন্য নতুন পাইপলাইনের পরিকাঠামো এবং এল এন জি-র জন্য আরও সুনির্দিষ্ট টার্মিনালের প্রয়োজন হবে। এই প্রক্রিয়াগুলি সময়সাপেক্ষ এবং কার্যকর হতে দুই থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। চাহিদার দিকটি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য, ই ইউ-এর স্বতঃপ্রণোদিত গ্যাস সংরক্ষণ পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, জার্মানি, স্পেন ইত্যাদির মতো বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ তাদের নিজ নিজ গ্যাসের সঞ্চয় ৮০ শতাংশেরও বেশি বাড়ানোর উদ্দেশ্যে জ্বালানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা অনুমোদন করেছে। যদিও এই সঞ্চয়ের স্থিতিশীলতা শীতকালীন তীব্রতার উপর নির্ভর করবে, যেহেতু সেই সময়ে জ্বালানির চাহিদা এতটাই তীব্র হয়ে উঠবে যা সামলানো সঞ্চয়ভাণ্ডারগুলির পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে।

দ্বিতীয়ত প্রতিবন্ধকতা হল রিপাওয়ারইইউ উদ্যোগের বাস্তবায়ন। যেহেতু এই উদ্যোগের লক্ষ্য হল ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৃহত্তর শক্তি অক্ষে পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানির অবদানকে সুদৃঢ় করার মাধ্যমে দূষণমুক্ত শক্তির রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করা, তাই সমগ্র ইউরোপীয় ইউনিয়ন জুড়ে পরিকাঠামো প্রকল্পগুলিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রয়োজন হবে৷ এর মধ্যে বায়ু এবং সৌর প্রকল্পগুলির দ্রুত ইনস্টলেশন অন্তর্ভুক্ত যা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। পরিকল্পনার সময়সীমা সংক্ষিপ্ত হওয়ার দরুন প্রকল্পগুলির সময়োচিত বাস্তবায়ন এখনও প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে। এ ছাড়াও জীবাশ্ম জ্বালানিকে সম্পূর্ণ রূপে প্রতিস্থাপনের জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলির সময় এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন, যাতে জ্বালানির চাহিদায় ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিগুলিকে উচ্চ স্তরে উন্নীত করা যায়।

তৃতীয়ত প্রধান প্রতিবন্ধকতাই হল এটা দেখা যে, সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সংহতি কতদূর বজায় থাকবে। রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানির উপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যেই অন্তর্দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করেছে যেখানে একাধিক সদস্য দেশ ইউনিয়নের আরোপিত সময়সীমার মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে তাদের অক্ষমতা প্রকাশ করে। হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র এবং বুলগেরিয়ার মতো চার সদস্য রাষ্ট্র ইউরোপীয় কমিশনের দ্বারা ছ’মাসের মধ্যে সমস্ত রুশ অপরিশোধিত তেল এবং ২০২২ সালের মধ্যে সমস্ত পরিশোধিত তৈল পণ্য আমদানি বন্ধ করার নিষেধাজ্ঞার প্রাথমিক সময়সীমা সম্পর্কে প্রতিবাদ জানিয়েছে। রুশ তেলের উপর তাদের উচ্চ নির্ভরশীলতার কথা মাথায় রাখলে এই দেশগুলির পক্ষে এত কম সময়ের মধ্যে জাতীয় অর্থনীতিতে বিপর্যয় না ফেলে অন্যান্য সরবরাহকারীর সঙ্গে যুক্ত হওয়া প্রায় অসম্ভব। এই আপত্তির ফল স্বরূপ সমস্ত পাইপলাইন সরবরাহ বাদ দিয়ে শুধু মাত্র সমুদ্রবাহিত আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। এর পরে হাঙ্গেরি গ্যাজপ্রমের সঙ্গে প্রতি দিন ৫.৮ মিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস আমদানির জন্য একটি নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করে। প্রতি বছর ৪.৫ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস সরবরাহের জন্য ২০২১ সালে গ্যাজপ্রমের সঙ্গে বুদাপেস্ট একটি ১৫ বছরের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। একই ভাবে নরওয়ে ২০২২ সালের আগস্ট মাসে নরওয়েজিয়ান ভোক্তাদের সুরক্ষার জন্য জ্বালানি আমদানি রোধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য নর্ডিক দেশগুলি দ্বারা সমালোচিত হয়েছিল।

এক কথায় যে উপসংহারে পৌঁছনো যেতে পারে, তা হল ই ইউ পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যবস্থা এবং উদ্যোগ গ্রহণ করলেও সেই উদ্যোগগুলির সফলতা সময়সাপেক্ষ এবং তা অনেকাংশেই আবহাওয়ার পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল। সুতরাং অদূর ভবিষ্যতে জ্বালানি সঙ্কট সমাধানের সম্ভাবনা সীমিত এবং জ্বালানি নিরাপত্তা অর্জনে ই ইউ-এর সামনের পথ ব্যয়বহুল এবং প্রতিবন্ধকতাসঙ্কুল।

মতামত লেখকের নিজস্ব।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.