Author : Shashank Mattoo

Expert Speak Raisina Debates
Published on Aug 18, 2022 Updated 15 Days ago

জাপান এবং নয়াদিল্লির মধ্যে গভীরতর সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রেরণা প্রদানকারী নেতা শিনজো আবের মৃত্যু ভারতের জন্য একটি চরম ধাক্কা।

আবে পরবর্তী সময়: ভারতের উপর এর প্রভাব
আবে পরবর্তী সময়: ভারতের উপর এর প্রভাব

নির্বাচন আসার সঙ্গে সঙ্গে যেমনটা অনুমান করা হচ্ছিল, সে কথাই আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এল ডি পি জাপানের আপার হাউস নির্বাচনে জয়লাভ করে এবং জাতীয় রাজনীতির অপরিবর্তনীয় লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হয় অর্থাৎ জাপানের যুদ্ধ-পরবর্তী শান্তিবাদী সংবিধানের সংশোধন। যদিও এই জয় সংক্রান্ত যে কোনও রকমের উদযাপনই স্থগিত রাখা হয়। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের মৃত্যু সকল ঘটনাপ্রবাহের উপরে এই গভীর শোকের ছায়া ফেলেছে। নিহত নেতার দেহ টোকিয়োতে ফিরিয়ে আনার সঙ্গে সঙ্গে জাপান এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশে পর্যবেক্ষকরা জাপান ও বিশ্বের উপরে আবের হত্যার প্রভাব সম্পর্কে জল্পনা শুরু করেছেন।

যিনি নয়াদিল্লিকে তাঁর ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের কেন্দ্রে স্থান দিয়েছিলেন, এমন এক নেতার চলে যাওয়া ভারতের জন্য একটি বড় ধাক্কা। আবের পূর্বসূরিরা ভারতের ব্যাপক সম্ভাবনার কথা অনুভব করে নয়াদিল্লির সঙ্গে সম্পর্কের প্রসার ঘটাতে তৎপর হলেও আবে এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে একটি সুনির্দিষ্ট রূপ দেন এবং এটির দিক নির্দেশ করেন, যা এখনও দুই দেশের সম্পর্ককে সদর্থক ভাবে প্রভাবিত করে চলেছে। ‘দুই সাগরের সঙ্গম’ ঘটানোর উদ্যোগে, যা ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে সেতু বন্ধন করবে, তাঁর আস্থা দুই দেশের মধ্যে চিরাচরিত ধারণাগত চৌহদ্দিকে ভেঙে দেয় এবং একটি কৌশলগত ধারণা রূপে সর্বাঙ্গীন ‘ইন্দো-প্যাসিফিক’ নীতির উত্থানের পথ করে দেয়। আইনভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে যৌথ ভাবে অবস্থান গ্রহণের মাধ্যমে ভারত ও জাপানের উচিত নতুন ইন্দো-প্যাসিফিকের রূপরেখা নির্ণয় করা, এই যুক্তি দর্শিয়ে আবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কটিকে একটি উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য প্রদান করেছিলেন। এর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কটিকে বাড়তি প্রেরণা জুগিয়েছিল। ২০১৪ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে উভয় শীর্ষ নেতাই একযোগে বাণিজ্য বৃদ্ধি, ভারতে জাপানি বিনিয়োগ আনা, কোয়াডের পুনরুজ্জীবন এবং চিনের প্রতি যৌথ পদক্ষেপ গ্রহণের মতো বিষয়গুলি নিয়ে কাজ করেছেন। একদা সীমিত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কটি বর্তমানে সরবরাহ শৃঙ্খল নিরাপত্তা, গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি, মহাকাশ ও সাইবার নিরাপত্তা আন্তঃসহযোগিতা এবং সামরিক মহড়ার মতো বিষয়গুলি নিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

এল ডি পি জাপানের আপার হাউস নির্বাচনে জয়লাভ করে এবং জাতীয় রাজনীতির অপরিবর্তনীয় লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হয় অর্থাৎ জাপানের যুদ্ধ-পরবর্তী শান্তিবাদী সংবিধানের সংশোধন।

বিদেশ নীতিতে ঐকমত্যের যে উত্তরাধিকার আবে রেখে গিয়েছেন, তা এ কথা সুনিশ্চিত করে যে, ভারতের জন্য জাপান আগামী দিনেও এক প্রধান কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা অংশীদার থাকবে। আবের পূর্ববর্তী সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জাপানের জোটের ভবিষ্যৎ এবং চিনের উত্থানের প্রতি জাপানের প্রত্যুত্তরকে কেন্দ্র করে টোকিয়োতে রাজনৈতিক বিভাজন ব্যাপক আকার ধারণ করে। এই পরিস্থিতিতে আবের উত্থান সমগ্র দেশের সামনে এক স্পষ্ট কৌশলী দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে। ২০১৩ সালের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে, যা বর্তমানেও দেশটির বিদেশ নীতির সোপান, আবে জাপানের অভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষা ক্ষমতা শক্তিশালী করার পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতের মতো গণতান্ত্রিক শক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার উপরে জোর দেন। এমনকি, ২০২০ সালে তিনি ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার পরেও তাঁর বিদেশ নীতির মৌলিক চালিকাশক্তিগুলি অটুট রয়েছে এবং আগামী দিনেও তেমনটা থাকবে বলেই আশা করা যায়। অতএব, জাপানের এক মুখ্য মিত্রশক্তি হিসেবে ভারতের অবস্থানে কোনও পরিবর্তন হবে না বলেই মনে হয়।

তবুও আবের অনুপস্থিতি নয়াদিল্লির জন্য চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারে, যেহেতু জাপান যুদ্ধ-পরবর্তী শান্তিবাদ থেকে তার পূর্বের মনোযোগ সরিয়ে এনে নতুন পথে হাঁটতে চাইছে। প্রথমত, এ কথা বর্তমানে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, জাপানের সংবিধানের সংস্কারের সম্ভাবনা ক্রমশ প্রবল হয়ে উঠছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পরাজয়ের পরে অধিগ্রহণকারী মার্কিন কর্তৃপক্ষ দ্বারা নির্ধারিত সংবিধানটির মূল উদ্দেশ্য ছিল টোকিয়োকে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার প্রেক্ষিতে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে ওঠা থেকে প্রতিহত করা। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, সংবিধানের নবম ধারায় ‘দেশের সার্বভৌম অধিকার হিসেবে যুদ্ধ ঘোষণা’ করার অধিকারকে স্পষ্ট ভাবে খারিজ করা হয়েছে। এই একই ধারার অধীনে স্থল সেনা, নৌসেনা এবং বায়ুসেনার গঠনের উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলে জাপানের রাজনীতিকরা নবম ধারা এবং সংবিধানের পুনর্ব্যাখ্যার জন্য এমন এক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, যা আজও বিতর্কিত। সংস্কারের ধরন সম্পর্কে এখনও বেশ কিছু সন্দেহ থাকলেও মনে করা হচ্ছে যে, এটি জাপানের সশস্ত্র বাহিনীর সাংবিধানিকতা সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব দূর করবে এবং সুস্পষ্ট ভূমিকা প্রদান করবে। জাপানকে তাই আরও বেশি করে একটি ‘স্বাভাবিক দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আবের দর্শনের কথা মাথায় রাখলে এই পদক্ষেপ নয়াদিল্লিকেও আগ্রহী করে তুলবে। সংস্কারের এ হেন উদ্যোগ জাপানি সেনার বৈধতা সংক্রান্ত দ্বন্দ্বের অবসান ঘটাবে এবং একই সঙ্গে তা ভবিষ্যতের জাপানি নেতাদের জন্য নয়াদিল্লির মতো আঞ্চলিক শক্তিগুলির সঙ্গে সামরিক আন্তঃসহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়টিকেও সহজতর করে তুলবে।

এটি এমন এক সময়ে যখন আবের প্রভাব এবং অভিজ্ঞতার অনুপস্থিতি সকলের দ্বারা তীব্র ভাবে অনুভূত হবে। যে কোনও ধরনের সাংবিধানিক সংস্কারের প্রস্তাব, যেটিতে জাপানের যুদ্ধ-পরবর্তী শান্তিবাদ থেকে দূরে সরে এসে একটি ‘স্বাভাবিক রাষ্ট্র’ হয়ে ওঠার কথা থাকবে, তা গভীর ভাবে বিতর্কের জন্ম দেবে। প্রাইম মিনিস্টার ফুমিয়ো কিশিদার সরকারকে আইনি প্রক্রিয়াটির বাস্তবায়নের পূর্বে উভয় হাউসেই তীব্র বিতর্কের সম্মুখীন হতে হবে এবং অতঃপর তিনি তাঁর প্রস্তাবটি সন্দেহপ্রবণ জনসাধারণের সামনে রাখতে পারবেন। তিনি যদি এই চাপের মুখে পড়ে সাংবিধানিক সংস্কারের অপেক্ষাকৃত মধ্যম পন্থা অবলম্বন করেন, তা হলে তিনি জাপানের দক্ষিণপন্থীদের চক্ষুশূল হয়ে উঠতে পারেন, যাঁরা বর্তমান পরিস্থিতিকে জাপানের জাতীয় রাজনীতি্কে পুনর্সংজ্ঞায়িত করার একটি সুযোগ রূপে দেখেন। নীতি প্রণয়নের নিরিখে আবের অনন্য ক্ষমতার নেপথ্যে ছিল জাপানের রক্ষণশীল সম্প্রদায়ের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক এবং রাজনৈতিক পুঁজিকে সর্বদা সামনের সারিতে রাখার সদিচ্ছা। তাঁর প্রয়াণের ফলে সাংবিধানিক সংস্কারের আন্দোলনটি তার সবচেয়ে উজ্জ্বলতম নেতাকে হারিয়েছে। আবের তীব্র রাজনৈতিক প্রভাব ব্যতীত কিশিদা প্রশাসনের উপরে সংস্কার সংক্রান্ত চাপও অনেকাংশে হ্রাস পাবে।

আবের পূর্বসূরিরা ভারতের ব্যাপক সম্ভাবনার কথা অনুভব করে নয়াদিল্লির সঙ্গে সম্পর্কের প্রসার ঘটাতে তৎপর হলেও আবে এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে একটি সুনির্দিষ্ট রূপ দেন এবং এটির দিক নির্দেশ করেন, যা এখনও দুই দেশের সম্পর্ককে সদর্থক ভাবে প্রভাবিত করে চলেছে।

রাজনৈতিক পরিসর থেকে আবের প্রস্থান প্রতিরক্ষা এবং জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল সংক্রান্ত আসন্ন বিতর্কগুলিকেও প্রভাবিত করবে, যা নয়াদিল্লির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিশিদা প্রশাসন জাপানের প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধি এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে আরও সক্রিয় সামরিক ভূমিকা পালনের জন্য নিজেকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করলেও টোকিয়ো আবের ২০১৩ সালের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল পুনর্লিখনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এমনটা হলে চিন এবং উত্তর কোরিয়াকে প্রতিরোধ করা সহজতর হবে, তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা শক্তিশালী হবে এবং চিনকে পরিবেষ্টনকারী ইন্দো-প্যাসিফিক দেশগুলির সামরিক খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। মূল্যবৃদ্ধি এবং জনগণের অসন্তোষ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যে প্রশ্নটি একক ভাবে জাপানের রাজনীতির কেন্দ্রে উঠে এসেছে, তা হল এই প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য অর্থের জোগান সরকার কী ভাবে দেবে? কোভিড-১৯ অতিমারির পরে অর্থনীতিকে পুনরায় চাঙ্গা করে তুলতে ইতিমধ্যেই অর্থনৈতিক প্রণোদনামূলক প্যাকেজ ঘোষণা করা এবং একটি নতুন অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জাপানের পরিকল্পিত প্রতিরক্ষা উন্নয়নের অর্থায়ন কঠিন বলে প্রমাণিত হবে।

তাঁর মৃত্যুর আগে আবে এই বিতর্কে এক মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। যেহেতু আবে জাপানের শাসক দলের সবচেয়ে বড় অংশটিকে নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং সেই প্রভাবকে জাপানের প্রতিরক্ষা ক্ষমতার সম্প্রসারণের কাজেও ব্যবহার করা হত, তাই তাঁর মৃত্যু টালমাটাল অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে জটিলতর করে তুলেছে। বিদেশ নীতির নিরিখে একদা শান্তির দূত হিসেবে যে ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হত, সেই প্রাইম মিনিস্টার কিশিদাকেও মধ্যপন্থী, রক্ষণশীল, নিমরাজি জোট অংশীদার এবং আগ্রাসী আমলাদের সঙ্গে জাপানের সামরিক বাহিনীকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করার লক্ষ্যে লড়াই চালাতে হবে।

আবের অভাব টোকিয়োকে দরিদ্রতর করবে, নয়াদিল্লিকেও।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.