-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
যুদ্ধের আড়ালে রাশিয়ার সঙ্গে চিনের জোট সমৃদ্ধ হলেও মার্কিন নীতির পরিবর্তন এই নীরব অংশীদারিত্বের ফাটল প্রকাশ্যে এনে দিতে পারে।
রাশিয়ার ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণের কয়েক সপ্তাহ আগে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং মস্কোতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পাশে দাঁড়িয়ে ‘সীমাহীন’ অংশীদারিত্বের কথা ঘোষণা করেছিলেন। যাই হোক, সময়ের চাকা ঘোরার সঙ্গে সঙ্গে শি-র তরফে করা শব্দবন্ধটি ক্রমশ সরকারি আখ্যান থেকে নীরবে মুছে যেতে থাকে। কারণ এই শব্দবন্ধের ক্রমাগত ব্যবহার রাশিয়ার যুদ্ধের ভিত্তিতে চিনের দ্ব্যর্থহীন সমর্থনকেই দর্শিয়েছিল। তবুও পশ্চিমিদের সঙ্গে চিনের বিচ্ছেদ শেষ পর্যন্ত চিন-রাশিয়ার সম্পর্ককে গভীরতর করে তুলেছে। বিচ্ছিন্ন হওয়ার দরুন দুই দেশই ক্রমশ একে অপরের দিকে এগিয়ে গিয়েছে এবং মস্কো ও বেজিং একটি প্রায় নীরব জোট গঠন করেছে, যেখানে শি আড়ালে হিসেব-নিকেশ করেই ধীরে ধীরে পুতিনের উপর প্রায় কর্তৃত্ব অর্জন করেছেন।
চিন সতর্কতার সঙ্গে এই ঘটনাপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করছে। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হ্রাস মস্কো-বেজিং অংশীদারিত্বকে তুলনামূলক ভাবে দুর্বল করে দিতে পারে।
তবে, ২০২৫ সালে ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক পরিবর্তনের মূল কারণ ছিল ইউরোপীয় জটিলতা থেকে সরে এসে মস্কোর সঙ্গে কৌশলগত পুনর্নির্মাণ এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চিনকে নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রচেষ্টা জোরদার করা। এটি চিন-রাশিয়া সম্পর্কের একটি সম্ভাব্য দৃষ্টান্তমূলক পুনর্বিন্যাসের ইঙ্গিত দিয়েছে। চিন সতর্কতার সঙ্গে এই ঘটনাপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করছে। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হ্রাস মস্কো-বেজিং অংশীদারিত্বকে তুলনামূলক ভাবে দুর্বল করে দিতে পারে। ইউক্রেনের যুদ্ধের আলোচনা যখন যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনার দিকে ঝুঁকছে, তখন এই পরিবর্তনশীল সমীকরণ কী ভাবে চিনের কৌশলগত স্বার্থকে প্রভাবিত করে, তার পুনর্মূল্যায়ন সময়োপযোগী এবং প্রয়োজনীয় বটেই।
ইউক্রেন যুদ্ধের সময় চিন-রাশিয়া নৈকট্য
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বেজিংয়ের স্বার্থকে উল্লেখযোগ্য ভাবে প্রভাবিত করেছিল। কারণ চিন এই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি দেশের জন্য একটি প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার। ইউরোপে চিনের বেশির ভাগ অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য রাশিয়ার মধ্য দিয়ে হলেও মস্কোর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে এই বাণিজ্যিক পথটি ব্যাহত হয়েছিল। এই পরিস্থিতি এড়াতে চিন এমনকি বারো-দফার শান্তি পরিকল্পনা তৈরি করে সংঘাতের শান্তি ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে নিজেকে একজন সৎ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু চিনের সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ বলে প্রমাণিত হয়েছিল। কারণ সেই চুক্তিটিতে ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড থেকে রুশ বাহিনী প্রত্যাহারের কথা বলা হয়নি।
যাই হোক, যুদ্ধ তীব্র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিন-রাশিয়া অংশীদারিত্বের উন্নতি অব্যাহত ছিল। কারণ চিন রাশিয়ার নিন্দা করা বন্ধ করে দিয়েছিল এবং তার বদলে জাতীয় সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা ও শত্রুতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছিল। সর্বোপরি, বেজিং রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ব্যবস্থায় যোগ দেয়নি, যার ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২০২১ সালের ১৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ২০২৩ সালে ২৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের প্রথম দিক পর্যন্ত রুশ অর্থনীতি ইউয়ানাইজেশন বা ইউয়ান-করণের (যেখানে চিনের মুদ্রা ইউয়ান প্রাধান্য পাবে) মধ্য দিয়ে যায়। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক অর্থপ্রদান নিষ্পত্তির জন্য রাশিয়া ক্রমশ ইউয়ানের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
ইউরোপে চিনের বেশির ভাগ অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য রাশিয়ার মধ্য দিয়ে হলেও মস্কোর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে এই বাণিজ্যিক পথটি ব্যাহত হয়েছিল।
সর্বোপরি, ইউরোপীয় বাজারের জন্য রাশিয়ার জ্বালানি ও খনিজ রফতানি পুনরায় চিনে পাঠানো হয়েছিল এবং বিনিময়ে রাশিয়া প্রচুর পরিমাণে উচ্চ প্রযুক্তির পণ্য, উৎপাদিত পণ্য এবং ভোগ্যপণ্য আমদানি করেছিল (দ্রষ্টব্য চিত্র ১.১ এবং ১.২)। বেজিং কেবল মস্কোতে বাণিজ্যিক পণ্যের বৃহত্তম সরবরাহকারীই হয়ে ওঠেনি, বরং পশ্চিমি রফতানি নিয়ন্ত্রণের আওতায় দ্বৈত-ব্যবহারের পণ্যও রফতানি করেছিল। এই পণ্যগুলির মধ্যে রয়েছে মাইক্রোইলেকট্রনিক্স, টেলিযোগাযোগ সরঞ্জাম, রাডার, অপটিক্যাল ডিভাইস, মেশিন টুলস, সেন্সর ও ট্যাঙ্ক, ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত অন্যান্য উচ্চ-অগ্রাধিকারসম্পন্ন উপাদান।
চিত্র ১.১: ২০২২ ও ২০২৩ সালে চিনে রাশিয়ার রফতানি

সূত্র: চিনা কাস্টমস তথ্য
চিত্র ১.২: ২০২২ ও ২০২৩ সালে রাশিয়ায় চিনের রফতানি

সূত্র: চিনা কাস্টমস তথ্য
এই সময়কালে, রাশিয়া-চিন রাজনৈতিক সম্পর্কের উন্নতিও দেখা গিয়েছে, যা দুই দেশের সরকারের সকল স্তরের মধ্যে ঘন ঘন দ্বিপাক্ষিক বিনিময় এবং সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) ও ব্রিকস+-এর (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চিন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা) মতো আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক জোটগুলিতে তাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছে। সর্বোপরি, উভয় দেশই ইউরেশিয়ায় সংযোগ প্রকল্পগুলিকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, যা ইউরেশিয়ান অর্থনৈতিক ইউনিয়নের (ইইইউ) সঙ্গে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) সংযোগে প্রতিফলিত হয়েছে।
এর পাশাপাশি, ভূ-অর্থনৈতিক আন্তঃসংযোগ ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও প্রতিফলিত হয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে চিনের উন্নত সম্পর্ক চিনকে আর্কটিক অঞ্চলে তার উপস্থিতি প্রসারিত ও দৃঢ় করতে সহায়তা করেছে। নর্দার্ন সি রুটে বেজিংয়ের অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে, পশ্চিমে রুশ বন্দরগুলিকে চিনের উত্তর-পূর্ব দিকের বন্দরগুলির সঙ্গে সংযুক্ত করেছে এবং সুয়েজ খালের মাধ্যমে চালিত পথের তুলনায় জাহাজ চলাচলের সময় প্রায় কয়েক সপ্তাহ কমিয়ে আনতে সাহায্য করেছে। সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার জন্য চিন আর্কটিকের বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পগুলিতে বিনিয়োগ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, চিনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পলি গ্রুপ আরখানগেলস্ক অঞ্চলটিতে গভীর জলের বন্দর নির্মাণের জন্য একটি সমঝোতাপত্র (মউ) স্বাক্ষর করেছে। চিন রাশিয়ার রোসাটমের সহযোগিতায় একটি পারমাণবিক শক্তিচালিত আইসব্রেকারও তৈরি করছে। গত বছর রুশ ও চিনা নৌবাহিনী উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে ৩৫ দিনের টহলে অংশগ্রহণ করে এবং চুকচি সাগর, বেরিং সাগর ও আর্কটিক মহাসাগর বরাবর চালিত এই টহলে আসলে রাশিয়া ও চিনের নৌ সহযোগিতাই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
রাশিয়াকে পাশ কাটিয়ে চিনে স্থানীয় উৎপাদনের জন্য সোভিয়েত উচ্চ-প্রযুক্তির প্রতিরক্ষা সামগ্রী ও জ্ঞান অর্জনের জন্য ইউক্রেনই ছিল চিনের কাছে একটি সহজ গন্তব্য।
চিন-রুশ ঘনিষ্ঠতার মূল্য
এত কিছু সত্ত্বেও রাশিয়ার সঙ্গে চিনের সম্পর্ক উন্নত করার জন্য মূল্য চোকাতেও হচ্ছে। যুদ্ধের আগে ইউক্রেন বেজিংয়ের একটি প্রধান অস্ত্র রফতানিকারক এবং সামরিক সরঞ্জামের তৃতীয় বৃহত্তম উৎস ছিল। চিন ইউক্রেন থেকে একটি আইসব্রেকার এবং এমনকি একটি অর্ধ-সমাপ্ত বিমানবাহী রণতরী ভারিয়াগ কিনেছিল। রাশিয়ার অস্বীকৃতির পর চিন ইউক্রেন থেকে নৌ যোদ্ধা সুখোই-৩৩ কিনেছিল এবং ইউক্রেনের জে-১৫ নৌ যোদ্ধা জেট তৈরির জন্য নিজের কর্মদক্ষতা ও কারিগরি কৌশলকে কাজে লাগিয়েছিল। চিনের যুদ্ধজাহাজের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ নৌ গ্যাস-টারবাইন ইঞ্জিন ইউক্রেনীয় নির্মাতাদের সহযোগিতায় তৈরি করা হয়। চিনা ভারী কৌশলগত এয়ারলিফটার ওয়াই-২০ ইউক্রেনীয় নকশার একটি উন্নত অনুলিপিও বলা চলে।
২০১৬ সালে চিনা বিনিয়োগকারীরা মোটর সিচের বেশির ভাগ (৫৬ শতাংশ) শেয়ারহোল্ডিং কিনেছিল। মোটর সিচ আসলে এমন একটি বিমান ইঞ্জিন সংস্থা, যা বিমান, হেলিকপ্টার, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের জন্য ইঞ্জিন তৈরি করে। এই শেয়ার ক্রয়ের লক্ষ্য ছিল চিনের অ্যাকিলিস হিল (সবচেয়ে দুর্বলতম পরিসর) অর্থাৎ বিমান ইঞ্জিন উৎপাদন ক্ষমতার অভাব দূর করা। তাই রাশিয়াকে পাশ কাটিয়ে চিনে স্থানীয় উৎপাদনের জন্য সোভিয়েত উচ্চ-প্রযুক্তির প্রতিরক্ষা সামগ্রী ও জ্ঞান অর্জনের জন্য ইউক্রেনই ছিল চিনের কাছে একটি সহজ গন্তব্য। যুদ্ধের আগে এই গোপন প্রযুক্তিগত চুক্তিতে ইউক্রেনের উচ্চ স্তরের দুর্নীতি একটি সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল।
ক্রমবর্ধমান রাশিয়া-চিন সহযোগিতা এবং চিন-পশ্চিম প্রতিযোগিতা ইউক্রেনীয় সামরিক-শিল্প ক্ষেত্রে চিনা প্রবেশাধিকারের বিষয়টিকে আরও জটিল করে তোলে।
তবে রাশিয়ার সঙ্গে শি জিনপিংয়ের ঘনিষ্ঠতা এবং রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখল করার বিষয়টির নিন্দা করতে চিনের অনীহার দরুন প্রযুক্তি অর্জনের পথ ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়। ক্রমবর্ধমান রাশিয়া-চিন সহযোগিতা এবং চিন-পশ্চিম প্রতিযোগিতা ইউক্রেনীয় সামরিক-শিল্প ক্ষেত্রে চিনা প্রবেশাধিকারের বিষয়টিকে আরও জটিল করে তোলে। ২০২১ সালে বেজিংয়ের তীব্র নিন্দা সত্ত্বেও ইউক্রেন মোটর সিচ সংস্থাটির জাতীয়করণ করে এবং কার্যকর ভাবে প্রযুক্তি-হস্তান্তরের সম্ভাবনা বন্ধ করে দেয়। যুদ্ধটি চিনে ইউক্রেন-সরবরাহকৃত প্রতিরক্ষা পণ্যের খুচরো যন্ত্রাংশের সরবরাহ সীমিত করার ক্ষেত্রেও ভূমিকা পালন করে। সর্বোপরি, ইউক্রেনের সামরিক শিল্পের উপর রাশিয়ার বোমাবর্ষণ এই সরবরাহ সংক্রান্ত অনিশ্চয়তাকে আরও পোক্ত করেছে।
তা সত্ত্বেও, চিন-ইউক্রেন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আবার গতিশীল হচ্ছে। যুদ্ধের আগে, চিন ইউক্রেনের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার ছিল এবং ২০২১ সালে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১৯.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছিল। তবে, ২০২২ সালে যুদ্ধের প্রাথমিক ধাক্কাগুলি এই পথটিকে তীব্রভাবে ব্যাহত করে, যার ফলে বাণিজ্য প্রায় ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে আসে। ২০২৪ সাল থেকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। এই বৃদ্ধির জন্য ইউক্রেনে চিনের বৈদ্যুতিক উপাদান, মেশিন, বয়লার, আসবাবপত্র, ধাতু, রাসায়নিক এবং অ-লৌহঘটিত ধাতু রপ্তানি এবং কিয়েভ থেকে কাঠ, কাঠের পণ্য, ছাই এবং স্ল্যাগ এবং শস্য আমদানিকে দায়ী করা যেতে পারে। তবে, চিন এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ-পূর্ব যুগের সৌহার্দ্য এখনও অনুপস্থিত।
প্রভাব
রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপীয় শক্তি হিসেবে স্বীকৃতি পেতে আগ্রহী এবং চিরাচরিত ভাবে চিনের সঙ্গে তার সম্পর্ক কেবল তখনই গভীর হয়েছে, যখন পশ্চিমিরা রাশিয়ার জন্য দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। দ্বিপাক্ষিক সরকারি উদ্যোগ সত্ত্বেও পারস্পরিক অবিশ্বাস – বিশেষ করে দূর প্রাচ্যে চিনা উচ্চাকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে সতর্ক রুশদের মধ্যে – একেবারে মুছে যায়নি। অতএব, মার্কিন-রাশিয়া সম্পর্কের বরফ গলতে থাকলে বেজিংয়ের প্রতি মস্কোর ঝোঁকই কমবে। রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল হলে এবং রাশিয়া যদি বিশ্ব আর্থিক ব্যবস্থায় পুনরায় প্রবেশ করে, তা হলে চিনের প্রভাবও স্বাভাবিক ভাবেই কমতে শুরু করবে। ভারতের জন্য এই পুনর্নির্মাণ নিঃসন্দেহে কৌশলগত স্বস্তি প্রদান করে। কারণ রাশিয়ার উপর পশ্চিমি চাপ কমলে খুব স্বাভাবিক ভাবেই নয়াদিল্লির সঙ্গে রাশিয়ার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে। আর ইন্দো-রাশিয়া সম্পর্কের অর্থ হল এই যে, সম্পর্কটি যে কোনও প্রকার পশ্চিমি তদন্ত বা নিরীক্ষণ কিংবা চিনা চাপের বোঝা থেকে মুক্ত।
রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপীয় শক্তি হিসেবে স্বীকৃতি পেতে আগ্রহী এবং চিরাচরিত ভাবে চিনের সঙ্গে তার সম্পর্ক কেবল তখনই গভীর হয়েছে, যখন পশ্চিমিরা রাশিয়ার জন্য দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।
ইউক্রেনে নতুন গুরুত্বপূর্ণ খনিজ চুক্তি এবং যৌথ পুনর্গঠন তহবিলের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি চিনকে ছাপিয়ে যাওয়ার হুমকিও দিচ্ছে। যুদ্ধোত্তর কালে পশ্চিমি পুঁজির অর্থায়নে পুনর্গঠন চুক্তির দিকে বেজিং দীর্ঘদিন ধরে নজর রেখেছে। কিন্তু মার্কিন-চিন উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে চিনের সেই উচ্চাকাঙ্ক্ষাগুলিও ব্যর্থ হতে পারে।
অতএব, ২০২৫ সালের মে মাসে রাশিয়ার বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে যোগদানের জন্য শি-র মস্কো সফর হল ইউক্রেনের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান গতিশীলতা নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করার পাশাপাশি চিন-রুশ সম্পর্কের মধ্যে যে কোনো প্রকার নেতিবাচক মনোভাব বা অবনমন রোধ করার জন্য একটি পরিকল্পিত পদক্ষেপ। এক দশকের সাযুজ্যতার ফসল এই মস্কো-বেজিং নীরব অংশীদারিত্ব রাতারাতি ভেঙে যাবে না। চিন বিআরআই-কে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে, ইউরোপের সঙ্গে সংযোগ প্রসারিত করতে এবং আর্কটিক উপস্থিতি বৃদ্ধি করতে রুশ ভূখণ্ড ব্যবহার করতেই থাকবে। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি কিন্তু চিনের জন্য সব দিক থেকেই হারের আশঙ্কাকে উস্কে দিচ্ছে বলা যায়।
অতুল কুমার অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ফেলো।
রাজোলি সিদ্ধার্থ জয়প্রকাশ অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Atul Kumar is a Fellow in Strategic Studies Programme at ORF. His research focuses on national security issues in Asia, China's expeditionary military capabilities, military ...
Read More +
Rajoli Siddharth Jayaprakash is a Junior Fellow with the ORF Strategic Studies programme, focusing on Russia’s foreign policy and economy, and India-Russia relations. Siddharth is a ...
Read More +