Author : Madhavi Jha

Published on Jul 11, 2025 Updated 0 Hours ago

গিগ অর্থনীতি ভারতীয় নারীদের ক্ষমতায়নের প্রতিশ্রুতি দেয়—কিন্তু জরুরি সংস্কার ব্যতিরেকে এটি অগ্রগতির চেয়ে বেশি অনিশ্চয়তা আনতে পারে

গিগ অর্থনীতিতে নারী: নমনীয়তা এবং নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে

নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে সাম্প্রতিক আলোচনায় আর্থিক স্বাধীনতার একটি বিষয় ধারাবাহিকভাবে উঠে আসে। এই প্রেক্ষাপটে গিগ (‌অস্থায়ী বা ফ্রিলান্স কাজকর্ম)‌ অর্থনীতি পরিবর্তনের অনুঘটক এবং আর্থিক স্বাধীনতা অর্জনে নারীর চ্যালেঞ্জের প্রতিফলন, উভয়ই হয়ে উঠেছে। যেহেতু ভারতের মহিলা শ্রমশক্তির অংশগ্রহণের হার এখনও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম, তাই গিগ অর্থনীতিকে প্রায়শই এই সংখ্যাগুলিকে বাড়ানোর একটি উপায় হিসাবে দেখা হয়। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলি নমনীয়তা প্রদান করে, যা মহিলাদের তাদের যত্ন এবং কর্মসংস্থানের বাধ্যবাধকতাগুলি মোকাবিলা করতে সহায়তা করতে পারে। তবে, সীমিত ডিজিটাল প্রাপ্তি, মাতৃত্ব ও স্বাস্থ্যসেবা সুবিধার অভাব, এবং কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তাদের এই শিল্পে সম্পূর্ণরূপে অংশগ্রহণ করতে বাধা দেয়।

নারী গিগ কর্মীদের জন্য স্বাস্থ্য, সুস্থতা এবং সামাজিক সুরক্ষা চ্যালেঞ্জ

নারী গিগ কর্মীদের বিশেষ অসুবিধার মুখোমুখি হতে বাধ্য করা হয়, যার মধ্যে শিশুদের বা পরিবারের অন্য সদস্যদের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি অনিয়মিত কাজের সময়সূচির সঙ্গে খাপ খাওয়ানো অন্তর্ভুক্ত। এই ভারসাম্যমূলক পদক্ষেপের ফলে দীর্ঘমেয়াদি চাপ তৈরি হতে পারে, যা উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতাসহ মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থার একটি উল্লেখযোগ্য কারণ। চাকরির অস্থিরতা সৃষ্টিকারী অস্থায়ী চুক্তিগুলি মানসিক যন্ত্রণাকে আরও খারাপ করে তোলে। `

এর উপর, বিশেষ করে রাইড-শেয়ারিংয়ের মতো শিল্পে, নারী গিগ কর্মীদের হয়রানির শিকার হওয়া এবং
নিরাপত্তা ঝুঁকির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ‘‘‌‌কর্মক্ষেত্রে 'কর্মচারী'র যে কোনও স্থানে যাওয়া, পরিবহণ ব্যবস্থা সহ’‌’ কর্মক্ষেত্রে নারীদের যৌন হয়রানি (প্রতিরোধ, নিষেধাজ্ঞা ও প্রতিকার) আইন, ২০১৩ (পিওএসএইচ)-‌এর পরিধির অন্তর্ভুক্ত। এই আইনের কারণে মহিলা কর্মীরা হয়রানির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক আশ্রয় এবং একটি সমাধান চাইতে পারেন। তবে, এই আইন গিগ কর্মীদের সুরক্ষা দেয় না, কারণ গিগ প্ল্যাটফর্মগুলি তাদের 'স্বাধীন ঠিকাদার' হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করে। পরিষেবা প্রদানকারী এবং ভোক্তাদের আরও নিরাপদ নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করার জন্য, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলিকে কর্মীদের সুরক্ষার জন্য তাদের বিরোধ বিভাগে 'কর্মক্ষেত্রে হয়রানি ‘ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।


ভুল শ্রেণিবিভাগ সংক্রান্ত উদ্বেগ মোকাবিলা করার জন্য, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে প্ল্যাটফর্ম ওয়ার্ক নির্দেশিকা (ইইউ) গ্রহণ করে, যা ক্রমবর্ধমান গিগ অর্থনীতি শিল্পের জন্য নতুন নির্দেশিকা নির্ধারণ করে।


নারী প্ল্যাটফর্ম এবং গিগ কর্মীদের স্বাস্থ্যসেবা এবং আয়ের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার জন্য বেকারত্ব, মাতৃত্ব, অসুস্থতা ও অক্ষমতার জন্য কভারেজ-‌সহ ব্যাপক সামাজিক সুরক্ষা প্রয়োজন। সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার আদায় এবং শ্রম বাজার দক্ষতা উন্নত করার জন্য এই সুরক্ষা অপরিহার্য। ভুল শ্রেণিবিভাগ সংক্রান্ত উদ্বেগ মোকাবিলা করার জন্য, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে
প্ল্যাটফর্ম ওয়ার্ক নির্দেশিকা (ইইউ) গ্রহণ করে, যা ক্রমবর্ধমান গিগ অর্থনীতি শিল্পের জন্য নতুন নির্দেশিকা নির্ধারণ করে। এর অর্থ হল যে প্ল্যাটফর্মটি, অন্যথায় প্রদর্শন না করলে, শ্রমিকদের কর্মচারী হিসাবে ধরে নেওয়া হবে, যা তাদের সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা, চাকরির নিরাপত্তা, যৌথ দর কষাকষির অধিকার এবং শ্রম সুরক্ষার সুযোগ দেয়।


একইভাবে, কানাডায়, গিগ কর্মীদের শ্রম অধিকার বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গিগ কর্মীদের অভিজ্ঞতার অসুবিধাগুলিকে স্বীকৃতি দিয়ে সরকার সামাজিক কল্যাণ এবং কর্মসংস্থান শ্রেণিবিভাগের উপর নির্ভর করে এমন একটি শক্তিশালী শ্রম আইন তৈরির জন্য আলোচনা শুরু করেছে। এই উদাহরণগুলি
২০২৫ সালের ইউনিয়ন বাজেটের পাশাপাশি ভারতের জন্য মূল্যবান নীতিগত নীলনকশা প্রদান করে, যা জরুরি আর্থিক সহায়তা এবং স্বাস্থ্য বিমা প্রদানের লক্ষ্যে গিগ কর্মীদের জন্য বিশেষ সামাজিক নিরাপত্তা তহবিল তৈরি করার পরামর্শ দেয়।


সাম্প্রতিক শ্রম পদক্ষেপে নীতিগত ফাঁক এবং শিক্ষা


কনসালটেটিভ গ্রুপ টু অ্যাসিস্ট দ্য পুওর (সিজিএপি) কর্তৃক গিগ কর্মীদের নিয়ে  পরিচালিত গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে
লিঙ্গগত নিয়মাবলি নারীদের শিশু যত্ন, সৌন্দর্য পরিষেবা, গৃহভিত্তিক খুচরা ক্ষুদ্র উদ্যোগ এবং গৃহস্থালির মতো 'মহিলা ক্ষেত্র'-তে সীমাবদ্ধ করে । উপরন্তু, ডিজিটাল লিঙ্গগত পার্থক্য প্রায়শই গিগ শ্রমে নিযুক্ত মহিলাদের উপর প্রভাব ফেলে, যার সঙ্গে তাৎক্ষণিক শারীরিক ও মানসিক প্রভাবও পড়ে। আর্থ-সামাজিক বাধা, অপ্রতুল ডিজিটাল সাক্ষরতা এবং সীমিত প্রযুক্তিগত প্রাপ্যতা ডিজিটাল শ্রম বাজারে অগ্রগতি বা উচ্চ বেতনের চাকরি পাওয়ার ক্ষমতা সীমিত করে।



ডিজিটাল লিঙ্গগত পার্থক্য প্রায়শই গিগ শ্রমে নিযুক্ত মহিলাদের উপর প্রভাব ফেলে, যার সঙ্গে তাৎক্ষণিক শারীরিক ও মানসিক প্রভাবও পড়ে।



ম্যাককিনসে গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের মতে, ২০২৫ সালের মধ্যে যদি নারীর কর্মসংস্থানের হার ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়, তাহলে ভারতের মোট আভ্যন্তর উৎপাদন (জিডিপি) ০.৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বা বর্তমান জিডিপি-র ২৫ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেতে পারে। যদিও গিগ অর্থনীতিতে নারীদের আর্থিকভাবে স্বাধীন হওয়া এবং দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে অবদান রাখার বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে, তবে বর্তমানে এটি মহিলাদের নির্দিষ্ট প্রয়োজন পূরণের জন্য তৈরি করা হচ্ছে না।


২০২৪ সালে মহিলা গিগ কর্মীদের
দিওয়ালি 'ডিজিটাল ধর্মঘটনিয়ন্ত্রক পরিবর্তন এবং কর্মপরিবেশ উন্নত করার জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। এই ধর্মঘটের ডাক দেয় ভারতের প্রথম মহিলা-নেতৃত্বাধীন গিগ কর্মী ইউনিয়ন গিগ অ্যান্ড প্ল্যাটফর্ম ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন (জিআইপিএসডব্লিউইউ), যাদের সদর দপ্তর দিল্লিতে অবস্থিত। এই ডাকের ফলে শত শত মহিলা গিগ কর্মী তাদের ফোন বন্ধ করে 'ডিজিটাল নীরবতা'তে অংশগ্রহণ করেন। এই প্রতিবাদ উচ্চ কমিশন এবং কম বেতন থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রে অপ্রতুল সুরক্ষা পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে, এবং সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সুবিধা, মাতৃত্বকালীন ছুটি, মাসিক ছুটি এবং বাসযোগ্য মজুরির মতো মৌলিক কর্মী অধিকারের জন্য সরব হয়।


একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক গিগ অর্থনীতির জন্য সুপারিশ


দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, আর্থিক কষ্ট এবং সুরক্ষা জালের অভাব সহ গিগ কর্মীদের মুখোমুখি সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য লক্ষ্যযুক্ত নিয়ম অপরিহার্য। নীতিনির্ধারক এবং অন্য অংশীদারেরা
গিগ কাজ নিয়ন্ত্রণ, অর্থাৎ মহিলা গিগ কর্মীদের জন্য সহজলভ্য সামাজিক সুরক্ষা ও অন্যান্য বিশেষায়িত সহায়তা তৈরি করা, এবং গিগ অর্থনীতিতে কর্মরত মহিলাদের অনিশ্চয়তা কমাতে আচরণ পরিবর্তনের উদ্যোগের মাধ্যমে সামাজিক-সাংস্কৃতিক লিঙ্গ পক্ষপাতের বিরুদ্ধে লড়াই করার উপর আরও বেশি মনোযোগ দিতে পারেন।


ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলিকে স্বাস্থ্য বিমা, দুর্ঘটনা বিমা ও বেকারত্ব সুরক্ষার মতো
কল্যাণমূলক কর্মসূচি নিতে হবে। মহিলা গিগ কর্মীদের জন্য মাতৃত্বকালীন সুবিধা, শিশু যত্নের সুবিধা এবং বিশ্রামের জায়গা প্রদানের জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) প্রয়োজন। পিওএসএইচ জ্ঞান বৃদ্ধি, অভিযোগ প্রতিকার পদ্ধতি তৈরি এবং ই-শ্রম সাইটকে শক্তিশালী করা কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা উন্নত করতে পারে।



গিগ অর্থনীতিকে শোষণের জায়গা থেকে নারীদের জন্য সুযোগের জায়গায় রূপান্তরিত করার জন্য বহু-অংশীদার পদ্ধতির প্রয়োজন।



নারী ও প্রযুক্তির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে উগান্ডায় পলিসি নামক একটি নারীবাদী সমষ্টি চেষ্টা করেছে প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে গিগ অর্থনীতিতে নারীদের মুখোমুখি কিছু চ্যালেঞ্জ সমাধান করার। গত বছর উগান্ডার সমৃদ্ধ গিগ অর্থনীতির কার্যকারিতা মূল্যায়নের জন্য বিশ্বব্যাপী গবেষণা উদ্যোগ 'ফেয়ারওয়ার্ক'-এর সঙ্গে সহযোগিতা করারও লক্ষ্য রয়েছে। এই ধরনের উদ্যোগ ভারতে ডিজিটাল সাক্ষরতা ও দক্ষতা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। গিগ অর্থনীতিকে শোষণের জায়গা থেকে নারীদের জন্য সুযোগের জায়গায় রূপান্তরিত করার জন্য বহু-অংশীদার পদ্ধতির প্রয়োজন। গিগ কর্মীদের স্বাস্থ্য বিমা, বেতনভুক্ত ছুটি এবং অবসরকালীন সঞ্চয় কর্মসূচির মতো সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য চাকরির শ্রেণিবিভাগ পুনর্গঠন করতে হবে। আইন প্রণেতাদের উচিত যেসব দেশ কার্যকরভাবে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নারী গিগ কর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করেছে তাদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নেওয়া। কর্মক্ষেত্রে নারীদের বৈষম্য থেকে রক্ষা করার জন্য কোম্পানিগুলির নীতি বাস্তবায়ন করা উচিত। কর্মসংস্থান থেকে পদোন্নতি পর্যন্ত সকল স্তরে এই ধরনের বৈষম্য নিষিদ্ধ করা উচিত। উপরন্তু, স্বচ্ছ হার ও অর্থপ্রদান পদ্ধতি নির্ধারণের মাধ্যমে বেতন বৈষম্য মোকাবিলা করা যেতে পারে, এবং ন্যায্যতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে।


লিঙ্গ-সমেত আইন এবং পর্যাপ্ত সামাজিক নিরাপত্তা নারী গিগ কর্মীদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেবে, শ্রমবাজারের সামগ্রিক বৈচিত্র্য এবং বৃদ্ধি উন্নত করবে, এবং স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) ও ২০২৫ সালের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য অর্জনে অবদান রাখবে।

উপসংহার

ত্বরান্বিত পদক্ষেপ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আমরা যখন ২০২৫ সালের আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন করছি, তখন সময়ের দাবি হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু স্বল্প আলোচিত বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা: গিগ অর্থনীতিতে নারী। এই সমস্যাগুলি একাধিক এসডিজির সঙ্গে যুক্ত, যেমন এসডিজি ৩ (সুস্বাস্থ্য এবং সুস্থতা), এসডিজি ৫ (লিঙ্গ সমতা), এবং এসডিজি ৮ (শালীন কাজ এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধি)। তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ না করলে, নারীদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা এবং শ্রম অধিকারের ব্যবধান বাড়তেই থাকবে। গিগ অর্থনীতিতে নারীরা যাতে তাদের প্রাপ্য সুরক্ষা জাল পায় সেজন্য নীতিনির্ধারক, গিগ প্ল্যাটফর্ম ও নাগরিক সমাজকে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে ।



মাধবী ঝা অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের রিসার্চ ইন্টার্ন।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.