Published on May 19, 2023 Updated 0 Hours ago

বেলারুশ রাশিয়ার কৌশলগত পরমাণু অস্ত্র রাখতে ইচ্ছুক, কারণ ন্যাটো পূর্ব ইউরোপে উপস্থিতি বাড়ানোর কথা বিবেচনা করছে

বেলারুশ কেন রাশিয়ার কৌশলগত অস্ত্র রাখতে চায়?

২৫ মার্চ একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছিলেন যে রাশিয়া তার প্রতিবেশী তথা মিত্র দেশ বেলারুশে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। যেহেতু পরমাণু প্রসাররোধ ও কৌশলগত স্থিতিশীলতার জন্য বিশ্বের উপর ঘোষণাটির সম্ভাব্য প্রভাব রয়েছে, এবং সেইসঙ্গেই ইউক্রেন সঙ্কট ‌ও আরও বিস্তৃতভাবে রাশিয়া–পশ্চিম সংঘর্ষের জন্যও, তাই বিষয়টি অবিলম্বে বিশ্বজুড়ে  শিরোনাম হয়।মূলত পশ্চিম দুনিয়ার বেশ কয়েকটি সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি দ্রুত আনুষ্ঠানিক বিবৃতি জারি করে এই পরিকল্পনার নিন্দা করে।

পুতিনের বিবৃতি নিয়ে রাজনৈতিক ও সংবাদমাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল কেন  মস্কো বেলারুশে তার কৌশলগত পরমাণু অস্ত্র স্থাপনে আগ্রহী এবং এই ঘোষণার মাধ্যমে তারা ঠিক কী অর্জন করতে চাইছে। রাশিয়া পারমাণবিক মহাশক্তি হওয়ায় এই প্রসঙ্গে তার চিন্তাভাবনা ও উদ্দেশ্যগুলি স্পষ্টতই সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তবুও, এই ধাঁধার সমাধান খুঁজতে হলে বেলারুশ এবং সে দেশের সরকারের অবস্থানও  বিবেচনা করতে হবে। প্রকৃতপক্ষে, ২০২১ সালের নভেম্বরের প্রথম দিকে, বেলারুশ প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দার লুকাশেঙ্কো সতর্ক করে বলেছিলেন যে যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পূর্ব ইউরোপে তার পারমাণবিক বোমা রাখার কথা বিবেচনা করে তবে তিনি মস্কোকে পরামর্শ দেবেন যাতে বেলারুশে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করা হয়। এবং ২০২২ সালের জুনে তিনি প্রেসিডেন্ট পুতিনকে বেলারুশের বিমানগুলিকে আপগ্রেড করতে সাহায্য করতে বলেছিলেন , যাতে সেগুলি পারমাণবিক অস্ত্র বহন করতে সক্ষম হয়। এই ভাবনাটি ছিল পারমাণবিক–সক্ষমতাসম্পন্ন বোমারু বিমানের প্রশিক্ষণ ফ্লাইট–সহ ন্যাটো পক্ষের সামরিক তৎপরতা বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়া ।

পুতিনের বিবৃতি নিয়ে রাজনৈতিক ও সংবাদমাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল কেন  মস্কো বেলারুশে তার কৌশলগত পরমাণু অস্ত্র স্থাপনে আগ্রহী এবং এই ঘোষণার মাধ্যমে তারা ঠিক কী অর্জন করতে চাইছে।

সিদ্ধান্ত অপরিবর্তনীয়?

যদিও শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ভ্লাদিমির পুতিনের ২৫ মার্চের ঘোষণাকে ব্রেকিং নিউজ হিসাবে রিপোর্ট করেছে, এতে অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। উপরে উল্লিখিত বেলারুশ প্রেসিডেন্টের বিবৃতি ছাড়াও মস্কো ও মিনস্ক পূর্ববর্তী বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে বিষয়টি উত্থাপন করেছিল। ১৯ ডিসেম্বর ২০২২–এ তাঁদের যৌথ প্রেস কনফারেন্সে লুকাশেঙ্কো ও পুতিন নিশ্চিত করেন  যে তারা সম্ভাব্য পারমাণবিক মিশনের জন্য বেলারুশ সামরিক বিমান ও পাইলটদের প্রস্তুত করতে একত্রে কাজ করছে। একদিন পরে রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে যে মিত্ররা ইউরোপে মার্কিন পরমাণু সক্ষমতার আধুনিকীকরণের প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে।

তবুও,‌ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সর্বশেষ মন্তব্য কয়েকটি নতুন কথা তুলে ধরেছে। এই মুহূর্তে আমরা যা জানি তা হল:

  • চুক্তিগুলি শুধুমাত্র ট্যাকটিকাল পারমাণবিক অস্ত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত, স্ট্র‌্যাটেজিক অস্ত্রের সঙ্গে নয় (যা ঠান্ডা যুদ্ধের সময় বেলারুশ অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছিল);
  • বেলারুশের দুটি ধরনের ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম থাকবে যা পারমাণবিক বোমা বহন করতে সক্ষম:‌ ইস্কান্দার মিসাইল সিস্টেম এবং ১০টি সম্প্রতি আপগ্রেড করা বিমান;
  • বেলারুশ পাইলটেরা এপ্রিলেই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শেষ করবেন এবং তারপরে তাঁরা দ্বৈত–সক্ষম বিমান চালাতে সক্ষম হবেন;
  • বেলারুশে পারমাণবিক অস্ত্র সংরক্ষণের সুবিধাস্থল জুলাইয়ের মধ্যে প্রস্তুত হয়ে যাবে;
  • রাশিয়া পরমাণু অস্ত্র বেলারুশের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে তুলে দেবে না।

কিছু ভাষ্যকার মনে করেন যে মস্কো পরমাণু অস্ত্রের প্রকৃত হস্তান্তর সম্পূর্ণ করতে চায় না, শুধু মার্কিন/ন্যাটোকে আলোচনায় বাধ্য করার জন্য সংঘাতের মাত্রা বাড়ানোর বাজি রাখতে আগ্রহী।

যাই হোক, বেলারুশ অঞ্চলে অস্ত্র মোতায়েন করার প্রকৃত পরিকল্পনা সম্পর্কে কোনও নির্দিষ্ট তথ্য দেওয়া হয়নি। কিছু ভাষ্যকার মনে করেন যে মস্কো পরমাণু অস্ত্রের প্রকৃত হস্তান্তর সম্পূর্ণ করতে চায় না, শুধু মার্কিন/ন্যাটোকে আলোচনায় বাধ্য করার জন্য সংঘাতের মাত্রা বাড়ানোর বাজি রাখতে আগ্রহী। প্রকৃতপক্ষে, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে পারমাণবিক সহযোগিতা সংক্রান্ত বেলারুশ–রুশ পরিকল্পনার বিষয়ে মন্তব্য করার সময় রাশিয়ার এমএফএ মুখপাত্র জোর দিয়ে বলেছিলেন যে রাশিয়ার ভান্ডার থেকে কোনও বোমা সরিয়ে নেওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই। তবুও এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা একটি বড় সামরিক–রাজনৈতিক সংঘাতের অগ্রগতি লক্ষ্য করছি, এবং উত্তেজনা বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীদের একের পর এক পাল্টা পদক্ষেপও। অতএব, একবার বেলারুশের সম্পূর্ণ পরিকাঠামো প্রস্তুত হয়ে গেলে, উত্তেজনা না–কমলে রাশিয়ার অস্ত্র মোতায়েন সম্ভবত পরবর্তী পদক্ষেপ হয়ে উঠবে।

ন্যাটোর নিউক্লিয়ার শেয়ারিং ব্যবস্থার প্রতিফলন

মিনস্ক ও মস্কো উভয়ই জোর দিয়ে বলেছে যে তাদের চুক্তি অভিনব কিছু নয়, কারণ তারা ঠান্ডা যুদ্ধের প্রথম বছর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় মিত্র যা অনুশীলন করে এসেছে সেটাই অনুসরণ করতে চলেছে। এটি তথাকথিত ন্যাটোর পারমাণবিক ভাগাভাগি (‌নিউক্লিয়ার শেয়ারিং)‌ ব্যবস্থাকে নির্দেশ করে, যা ‘‌নিশ্চিত করে যে পারমাণবিক প্রতিরোধের সুবিধা, দায়িত্ব ও ঝুঁকিগুলি জোটজুড়ে ভাগ করে নেওয়া হয়েছে’‌। বর্তমানে, পাঁচটি অ–পারমাণবিক ইউরোপীয় দেশ এই প্রক্রিয়ার অংশ:‌ বেলজিয়াম, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস ও তুর্কিয়ে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে তাদের উদ্দেশ্যগুলি পারমাণবিক অস্ত্র প্রসাররোধ চুক্তি (এনপিটি) লঙ্ঘন করে কি না, তখন বেলারুশ ও রাশিয়া জোর দিয়ে বলেছে যে তারা ন্যাটোর প্রতিষ্ঠিত অনুশীলনকে অনুলিপি করে। এনপিটি দ্ব্যর্থহীনভাবে ‘‌যে কোনো প্রাপকের’‌ কাছে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ স্থানান্তর নিষিদ্ধ করে। মস্কো দীর্ঘদিন ধরে ন্যাটোর ব্যবস্থার সমালোচনা করেছে, কিন্তু এখন একই যুক্তির পুনরাবৃত্তি করছে যে যতক্ষণ না তারা শান্তির সময়ে মিনস্কে অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এনপিটি–র কোনও লঙ্ঘন হবে না।

লক্ষণীয় বিষয় হল, পারমাণবিক ভাগাভাগি অনুশীলন সংক্রান্ত মনোভাবের এই বিপরীত বাঁক মস্কোর সামগ্রিক পরিবর্তনশীল বৈদেশিক নীতি দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করছে বলে মনে হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে আচরণকে তারা অনুপযুক্ত মনে করে, তার সমালোচনা চালিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে মস্কো এখন দাবি করছে যে ওয়াশিংটনকে কোনও কিছু করার অনুমতি দেওয়া হলে রাশিয়া ও অন্যান্য মহাশক্তিরও একই অধিকার ভোগ করা উচিত।

বেলারুশ: পরমাণুমুক্ত পরিস্থিতিগত নিরপেক্ষতা থেকে…

যদিও এটি এখনও অনিশ্চিত যে রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্র স্থায়ীভাবে বেলারুশে মোতায়েন করা হবে কি না, এবং হলে ঠিক কখন হবে, সেই ধাঁধার উত্তর পেতে মিনস্কের চিন্তাভাবনা বোঝা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে বেলারুশ অনেক দূরত্ব অতিক্রম করে পরমাণুমুক্ত দেশ থেকে বদলে গিয়ে তার ভূখণ্ডে রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করতে বলছে।

মস্কো দীর্ঘদিন ধরে ন্যাটোর ব্যবস্থার সমালোচনা করেছে, কিন্তু এখন একই যুক্তির পুনরাবৃত্তি করছে যে যতক্ষণ না তারা শান্তির সময়ে মিনস্কে অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এনপিটি–র কোনও লঙ্ঘন হবে না।

বেলারুশ ১৯৯০–এর দশকের মাঝামাঝি থেকে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র। দেশদুটির দ্বিস্তরীয় পারস্পরিক প্রতিরক্ষা প্রতিশ্রুতি রয়েছে:‌ একটি ইউনিয়ন স্টেট অফ বেলারুশ ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক, এবং অন্যটি যৌথ নিরাপত্তা চুক্তি সংস্থার (সিএসটিও) অংশ হিসাবে বহুপাক্ষিক, যার সদস্য হিসাবে আর্মেনিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান ও তাজিকিস্তানও আছে। তা সত্ত্বেও, ২০২২ সালের প্রথম দিক পর্যন্ত বেলারুশের সংবিধানে একটি ধারা ছিল যাতে বলা হয়েছিল যে বেলারুশ ‘‌তার অঞ্চলটিকে একটি পারমাণুমুক্ত অঞ্চল এবং রাষ্ট্রকে নিরপেক্ষ করার লক্ষ্য অনুসরণ করে’‌।

সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত বেলারুশের সমস্ত পারমাণু অস্ত্র ১৯৯৬ সালের নভেম্বরের শেষের দিকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছিল। তবে মিনস্ক কখনই রাশিয়ার সঙ্গে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিসর্জন দিয়ে একটি পুরোপুরি নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হওয়ার চেষ্টা করেনি। তবুও, মিনস্ক যখন ২০১৪–২০২০ সালে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে শান্তি আলোচনার প্রধান স্থান হিসাবে কাজ করেছিল, তখন বেলারুশ মূলত সেই নির্দিষ্ট সংঘাতে ‘‌পরিস্থিতিগত নিরপেক্ষতার’‌ নীতি অনুসরণ করেছিল, এবং এমনকি ‘‌পূর্ব ইউরোপীয় সুইজারল্যান্ড’‌ হওয়ার ধারণাটিকেও প্রশ্রয় দিয়েছিল।

রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র রাখার জন্য প্রস্তুতি

২০২০ সালের শেষের দিকে, যখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বেলারুশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফলাফল নিয়ে বেশ কয়েকটি নিষেধাজ্ঞার প্যাকেজ আরোপ করে ও মিনস্কের সঙ্গে যোগাযোগ স্থগিত করে প্রতিক্রিয়া জানায়, তারপর সব কিছুর পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে। রায়ানএয়ার বিমানের ঘটনার জন্য, বেলারুশ–ইইউ সীমান্তে অভিবাসী সঙ্কটের কারণে, এবং তারপর ইউক্রেন সংঘাত শুরু হওয়ার পর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে থাকে। বর্তমানে নিষেধাজ্ঞার মাত্রা বেলারুশের বিরুদ্ধে আংশিক অবরোধের পর্যায়ে পৌঁছেছে। নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত ঘটনাবলি, ছড়িয়ে পড়ার উচ্চ–সম্ভাবনাযুক্ত ঘরের পাশের যুদ্ধ, এবং সেইসঙ্গে পূর্ব ইউরোপের ব্যাপক চলতি সামরিকীকরণ  ও জোটের পূর্বমুখী সম্প্রসারণের জন্য ন্যাটোর মাদ্রিদ শীর্ষ সম্মেলনের সিদ্ধান্তগুলি বেলারুশের জন্য একটি গুণগতভাবে ভিন্ন নিরাপত্তা পরিবেশ তৈরি করেছে।

এই প্রেক্ষাপটই পরমাণু অস্ত্রের প্রতি মিনস্কের মনোভাবের নাটকীয় পরিবর্তনকে ব্যাখ্যা করে। বেলারুশ সরকারের কেউই, এই লেখকের পর্যবেক্ষণ অনুসারে, দ্রুত অবনতিশীল আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং পারমাণবিক অস্ত্রের বিকাশ সম্পর্কে বিশেষভাবে খুশি নন, কারণ এ সবের মধ্যে ন্যাটোর পারমাণবিক অস্ত্রের লক্ষ্যে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিগুলি সুস্পষ্ট। যাই হোক, ভূ–রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ইতিমধ্যে কতদূর চলে গেছে তা বিবেচনা করে বলা যায়, রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র রাখার ক্ষেত্রে বেলারুশ সিদ্ধান্ত–গ্রহণকারীদের চিন্তাভাবনায় সম্ভবত যা প্রাধান্য পেয়েছে তা হল পশ্চিমী সম্ভাব্য আক্রমণের বিরুদ্ধে একটি নিবারণমূলক  (‌ডেটারেন্স)‌ ব্যবস্থা গড়ে তোলা।।

২০২০ সালের শেষের দিকে, যখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বেলারুশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফলাফল নিয়ে বেশ কয়েকটি নিষেধাজ্ঞার প্যাকেজ আরোপ করে ও মিনস্কের সঙ্গে যোগাযোগ স্থগিত করে প্রতিক্রিয়া জানায়, তারপর সব কিছুর পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে।

এর একটা কারণ তারা ২০২০ সালে ওবামা প্রশাসনের শেষের দিকে পরিচালিত মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের একটি উচ্চস্তরের গোপনীয়তার মাত্রাযুক্ত ‘‌ওয়ার গেম’‌ সম্পর্কে অবহিত আছে। সেই অনুমিত খেলায় মার্কিন সামরিক প্রধানদের একটি দল বেলারুশে পারমাণবিক অস্ত্র নিক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যদিও খেলায় বেলারুশের কোনও ভূমিকাই ছিল না। মার্কিন লক্ষ্য ছিল কোনও পারমাণবিক সঙ্কটের পরিস্থিতিতে রাশিয়াকে পিছিয়ে যেতে বাধ্য করার কৌশল ছকে রাখা। যদিও এটি ছিল শুধুমাত্র একটি অনুমানমূলক পরিকল্পনা, তা হলেও মিডিয়া এ সম্পর্কে রিপোর্ট করার পরে অন্যান্য নেতিবাচক ঘটনার পটভূমিতে দৃশ্যতই মিনস্কে এর বিশাল প্রতিক্রিয়া হয়। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বেলারুশ একটি নতুন সংবিধান গ্রহণ করে, যাতে আর পরমাণুমুক্ত বেলারুশের উল্লেখ ছিল না।

রাশিয়ার কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রের জন্য বেলারুশের আগ বাড়িয়ে অনুরোধ করা ন্যাটোর পারমাণবিক ভাগাভাগি ব্যবস্থার মধ্যে প্রদর্শিত যুক্তিটিই অনুসরণ করে বলে মনে হয়, যেখানে এই ব্যবস্থায় অংশগ্রহণকারী ইউরোপীয় দেশগুলি এটিকে এমন একটি অতিরিক্ত নিশ্চয়তা হিসাবে বিবেচনা করে (নর্থ আটলান্টিক ট্রিটির অনুচ্ছেদ ৫–এ অন্তর্ভুক্ত সম্মিলিত প্রতিরক্ষা প্রতিশ্রুতি ছাড়াও) যেখানে তারা আক্রান্ত হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক ক্ষমতাসহ সমগ্র সামরিক শক্তি তাদের প্রতিরক্ষায় আসবে। একই কারণে, ঠান্ডা যুদ্ধ তুঙ্গে থাকার সময়, অনেক ইউরোপীয় সরকার তাদের মাটিতে মার্কিন সৈন্যদের আতিথ্য দিতে চেয়েছিল। একইভাবে মিনস্কের কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন যে, বেলারুশের উপর আক্রমণের ক্ষেত্রে মস্কো তার নিজের ভূখণ্ডে পারমাণবিক হামলার ঝুঁকি না–নিয়ে দ্রুত প্রশমনের আশায় মিত্রকে রক্ষা করার জন্য তার ‘‌পারমাণবিক ছাতা’‌ খুলতে অস্বীকার করতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে, বেলারুশে রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র রাখার অর্থ এই অনিশ্চয়তা হ্রাস করা, এবং এইভাবে প্রতিরোধের বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি করা।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.