Author : Manoj Joshi

Published on May 10, 2022 Updated 0 Hours ago

বিশ্বের অন্যান্য অংশ যখন ফের উন্মুক্ত হচ্ছে, সেই সময় চিনের জিরো-কোভিড নীতি ও নতুন করে রোগের প্রাদুর্ভাব সে দেশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠছে।

কী করে বেজিং একটি ভূ-রাজনৈতিক বেড়া–দৌড়ে জড়িয়ে পড়ল

মার্চের শেষ সপ্তাহটি শুরু হয়েছিল কোভিড–১৯ সংক্রমণ বাড়তে থাকায় চিনের আর্থিক কেন্দ্র ও প্রধান শহর সাংহাইয়ে বড় ধরনের লকডাউন দিয়ে। বিশ্বের অন্যান্য অংশ যখন ফের উন্মুক্ত হচ্ছে, সেই সময় চিনের জিরো-কোভিড নীতি ও নতুন করে রোগের প্রাদুর্ভাব সে দেশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে।

২০২২ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেজিং নিজেকে একটি ভূ-রাজনৈতিক বেড়া–দৌড়ের মধ্যে আবিষ্কার করেছে। ঘটনাটি কিছুদিন আগে শুরু হয়েছিল যখন চিন অতিমারি মোকাবিলা করার জন্য ‘‌‌জিরো–কোভিড’‌ কৌশল বেছে নিয়েছিল, আর এখন দেশটি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে একটি কেউ–জিতবে–না এমন যুদ্ধে রাশিয়াকে সমর্থন করে ইউরোপের ক্ষেত্রে একটি অস্বস্তিকর অবস্থানে রয়েছে। এর থেকে অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে — ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (ইউএস) সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে, এবং এমনকি ভারতের সঙ্গে তার সম্পর্ক মেরামত করার প্রয়াসও অত্যন্ত কঠিন কাজ বলে মনে হচ্ছে।

কোভিড-১৯ এর সময় ‘‌ডাইনামিক ক্লিয়ারিং’‌ নীতি অনুযায়ী সংক্রমণের মোকাবিলা করা হয় ভয়ঙ্কর কঠোর লকডাউন, গণ–পরীক্ষা এবং কনট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের মাধ্যমে। এটি অতিমারির সময় অনেক মানুষকে প্রায়–স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে সক্ষম করেছিল, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মতো বৃহৎ সংখ্যার মৃত্যু ও গুরুতর অসুস্থতা এড়াতে সহায়তা করেছিল। উপরন্তু, চিনা অর্থনীতি ২০২০ সালেও বৃদ্ধি পাচ্ছিল, যদিও সেই সময়ে বেশিরভাগ অন্য অর্থনীতি সঙ্কুচিত হয়েছিল।

বিশ্বজুড়ে অতিমারির উচ্চ জোয়ার যখন কমে গেছে, সেই সময় চিনের কাছে এমন একটি জনসংখ্যা থেকে গেছে যা অত্যন্ত সংক্রামক ওমিক্রন ভ্যারিয়ান্টের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এই ভ্যারিয়ান্ট কম প্রাণঘাতী, তবে ‘‌ট্রেস-টেস্ট-আইসোলেট’‌ কৌশল দিয়ে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রেও কম কার্যকরী।

দেখা যাচ্ছে, বিশ্বজুড়ে অতিমারির উচ্চ জোয়ার যখন কমে গেছে, সেই সময় চিনের কাছে এমন একটি জনসংখ্যা থেকে গেছে যা অত্যন্ত সংক্রামক ওমিক্রন ভ্যারিয়ান্টের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এই ভ্যারিয়ান্ট কম প্রাণঘাতী, তবে ‘‌ট্রেস-টেস্ট-আইসোলেট’‌ কৌশল দিয়ে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রেও কম কার্যকরী। ফলে আমরা সাংহাই, জিলিন ও শেনঝেনে নতুন করে শহরব্যাপী লকডাউন দেখতে পেলাম। হংকংয়ে সাম্প্রতিক উচ্চ মৃত্যু ও ক্ষতির ঢেউটি ভাইরাস প্রতিহত করার ব্যবস্থা না–করা হলে কী ঘটতে পারে তার জন্য সতর্কবার্তা জারি করে গেল।

চিন সবচেয়ে বড় যে মূল্য দিয়েছে তা হল এটি বাকি বিশ্বের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। যখন অন্যত্র বাধাগুলি হ্রাস করা হচ্ছে, তখন চিন নিজেকে আবদ্ধ করে রেখেছে। ম্যানুফ্যাকচারিং ও রফতানির ক্ষেত্রে এর বিশাল ভূমিকা বিবেচনা করে বলা যায়, এই বাধাগুলি শুধু চিন নয়, পুরো বিশ্বকে প্রভাবিত করে। বেজিংকে অবশ্যই ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইতিমধ্যে ভঙ্গুর হয়ে পড়া বিশ্ব অর্থনীতির ব্যাঘাতগুলিকে বিবেচনায় রাখতে হবে।

এছাড়াও, দেশটি বৃদ্ধির মন্থরতা এবং রিয়েল এস্টেট বাজারের মন্দা ও বেসরকারি ক্ষেত্রে ‘অভিন্ন সমৃদ্ধি’‌ কর্মসূচির কারণে উদ্ভূত বিভিন্ন অর্থনৈতিক সমস্যার মোকাবিলা করছে।

এর একটি ফলাফল হল বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির বিকল্প সরবরাহ শৃঙ্খল তৈরির প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত হওয়া। গত কয়েক বছর ধরে চলে আসা মার্কিন ‘‌ডিকাপলিং’‌ কৌশলের রাজনৈতিক ব্যাঘাতের উপর এই নতুন বিষযটি যুক্ত হয়েছে।

কোভিড-১৯ সংকট যখন চলছে, সেই সময়েই চিন অন্যদিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পরিণতির মুখোমুখি হতে বাধ্য হয়েছে। আপাতত চিন তার সমর্থন আরও বাড়িয়েছে রাশিয়ার প্রতি, আকার ও ফলাফলের দিক থেকে যেটি একমাত্র দেশ যে কম পশ্চিম-ভিত্তিক বিশ্ব ব্যবস্থা তৈরি করতে বেজিংয়ের সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক। চিনের যুক্তির মূল জায়গাটা হল আমেরিকার নেতৃত্বাধীন নর্থ অ্যাটলান্টিক ট্রিটি অরগ্যানাইজেশন-এর (নেটো) ঘেরাও করার কৌশলের মোকাবিলা করছে রাশিয়া, যা এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিন যে ভাবে লড়াই করছে তার থেকে ভিন্ন নয়।

আপাতত চিন তার সমর্থন আরও বাড়িয়েছে রাশিয়ার প্রতি, আকার ও ফলাফলের দিক থেকে যেটি একমাত্র দেশ যে কম পশ্চিম-ভিত্তিক বিশ্ব ব্যবস্থা তৈরি করতে বেজিংয়ের সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে এই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে চিন রাশিয়াকে সমর্থন জোগাতে বিশ্বব্যাপী কূটনৈতিক প্রচার শুরু করেছে। চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের নয়াদিল্লি সফর ছিল দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার বিদেশ মন্ত্রীদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকের মধ্যে একটি। এছাড়া প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও দক্ষিণ কোরিয়ার নির্বাচিত আগামী প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলের সঙ্গে কথা বলেছেন।

এখন আমাদের কাছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের করা গন্ডগোলের অভিযোগের কথাও আছে, যেখানে তিনি মস্কোতে শাসন পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছেন এবং ইউক্রেনের সংগ্রামকে গণতন্ত্র ও স্বৈরাচারের মধ্যে যুদ্ধ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বার্তাটির লক্ষ্য যদি বা মস্কো হয়ে থাকে, এটি বেজিংকে অস্বস্তিতে না ফেলে থাকলে অবাক হওয়ার কথা। রাশিয়ায় যে কোনও সম্ভাব্য শাসন পরিবর্তন চিনের জন্য ক্ষতিকর হবে, কারণ চিন রাশিয়ার সঙ্গে ‘‌সীমাহীন’‌ অংশীদারি গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের ‘‌ডিকাপলিং’‌ নীতির ফলে তৈরি হওয়া মার্কিন-চিন উত্তেজনার এখনও সমাধান হয়নি। এখনও অবধি বাইডেন ট্রাম্পের পথ ধরেই হাঁটছেন। আর এখন রাশিয়া যা করল তারপরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চিনকে সতর্ক করেছে যে যদি সে রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধের প্রচেষ্টায় বস্তুগত সহায়তা দেয় তবে তার ফল তাকে ভুগতে হবে।

বেজিং দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপকে তার বৈশ্বিক কৌশলের চাবিকাঠি হিসেবে দেখে আসছে। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ–এর কেন্দ্রবিন্দুতে আছে ট্রান্স-ইউরেশিয়ান লিঙ্কগুলি, যা ১৯৫০ ও ১৯৬০–এর দশকে অ্যাটলান্টিক অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছিল।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতা এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ বেজিংয়ের সব হিসেব বিপর্যস্ত করেছে। দেশটি এখন তার কূটনীতিকে কেন্দ্রীভূত করতে চাইছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দোষারোপ করার উপর। তবে চিনের বড় সমস্যা হল ইউক্রেনের ঘটনাবলি নিয়ে ইউরোপের ঐক্যবদ্ধ প্রতিক্রিয়া তার কাজকে জটিল করে তুলেছে। বেজিং দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপকে তার বৈশ্বিক কৌশলের চাবিকাঠি হিসেবে দেখে আসছে। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ–এর কেন্দ্রবিন্দুতে আছে ট্রান্স-ইউরেশিয়ান লিঙ্কগুলি, যা ১৯৫০ ও ১৯৬০–এর দশকে অ্যাটলান্টিক অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছিল। এখন পূর্ব ও মধ্য ইউরোপে তার ধৈর্য ধরে তৈরি করা ১৭+১ গ্রুপিং রুশদের বিরুদ্ধে নেটোর ফ্রন্টলাইনে পরিণত হওয়ায় চিনাদের গুরুতর সমস্যা তৈরি হয়েছে।

নীতিকে আকার দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনার মধ্যে রাখতে হচ্ছে:‌ চিনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) আসন্ন পঞ্চবার্ষিক ২০তম কংগ্রেস। শি জিনপিং-এর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অভূতপূর্ব তৃতীয় মেয়াদ অনুমোদনের গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি রূপায়ণের সময় সিপিসি–কে তার বৈদেশিক নীতিতে স্থিতিশীলতা, সীমান্তে শান্তি এবং অতিমারিকে দৃঢ় ভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখার পথ খুঁজতে হচ্ছে।


এই ভাষ্যটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ‘হিন্দুস্থান টাইমস’–এ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.