-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
শুল্ক হ্রাসের বাইরেও, ভারত-যুক্তরাজ্য সিইটিএ বিনিয়োগ সংযোগকে আরও গভীর করে, মূল্য শৃঙ্খলকে শক্তিশালী করে, এবং দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক স্থাপত্যের ভিত্তি স্থাপন করে।
সম্প্রতি সমাপ্ত ভারত-যুক্তরাজ্য (ইউকে) সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য চুক্তি (সিইটিএ) উভয় দেশের বাণিজ্য গতিপথে একটি যুগান্তকারী উন্নয়নের প্রতিনিধিত্ব করে, এবং তা ভারত-যুক্তরাজ্য রোডম্যাপ ২০৩০-এর অর্থনৈতিক মাত্রা পুনর্নির্মাণের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছে। এই চুক্তি কিছু কৌশলগত প্রয়োজনীয়তার একত্রীকরণকেও প্রতিফলিত করে: ব্রেক্সিট-পরবর্তী বাজার বৈচিত্র্যের জন্য যুক্তরাজ্যের প্রচেষ্টা, '‘মেক ইন ইন্ডিয়া, ফর দ্য ওয়ার্ল্ড’' অ্যাজেন্ডার মাধ্যমে ভারতের রপ্তানি-ভিত্তিক পদক্ষেপ, এবং বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খল চিন থেকে দূরে সরে যাওয়ার সময় একটি নিয়ম-ভিত্তিক, গণতান্ত্রিক বাণিজ্য করিডোর তৈরিতে অভিন্ন ভূ-রাজনৈতিক আগ্রহ। সিইটিএ-এর মূল অংশে আছে বড় পরিমাণে শুল্ক হ্রাস, আর প্রিমিয়াম অটোমোবাইল থেকে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য পর্যন্ত পণ্যের উপর ব্যাপক ছাড়। সবচেয়ে আকর্ষণীয় হ্রাসগুলির মধ্যে একটি হল স্কচ হুইস্কির উপর নিষেধাজ্ঞামূলক শুল্কের পর্যায়ক্রমে হ্রাস — যা প্রতীকী ও বাণিজ্যিক উভয় উদ্দেশ্যকেই নির্দেশ করে।
সারণি ১: ভারত-যুক্তরাজ্য সিইটিএ-এর অধীনে মূল বাণিজ্য ছাড়
|
এলাকা |
সিইটিএ-র অধীনে শিরোনাম পরিবর্তন |
|
ভারতে প্রবেশকারী যুক্তরাজ্যের পণ্য |
৯০% শুল্করেখার উপর শুল্ক গড়ে ১৫% থেকে কমে প্রায় ৩% হয়েছে। |
|
যুক্তরাজ্যে যাওয়া ভারতীয় পণ্য |
৯৯% ভারতীয় রপ্তানি — টেক্সটাইল, রত্ন এবং জেনেরিক সহ — এখন শূন্য শুল্কের সম্মুখীন |
|
স্কচ হুইস্কি এবং যুক্তরাজ্যের অন্যান্য স্পিরিট |
ভারতে শুল্ক ১৫০% থেকে তাৎক্ষণিকভাবে ৭৫% কমেছে এবং ১০ বছর পরে ৪০% এ নেমে আসবে। |
|
সম্পূর্ণরূপে নির্মিত যুক্তরাজ্যের গাড়ি |
২৫,০০০ ইউনিট কোটার অধীনে পাঁচ বছরের মধ্যে ভারতীয় শুল্ক ১১০% থেকে ১০% পর্যন্ত কমেছে। |
|
স্বল্পমেয়াদি পোস্টিং |
স্বল্পমেয়াদি কর্মসংস্থানে নিযুক্ত কর্মীদের আর উভয় দেশে সামাজিক নিরাপত্তা অবদানের প্রয়োজন হবে না, যার ফলে দ্বিগুণ চার্জ দূর হবে। |
সূত্র: রয়টার্স
যদিও ভারত এবং যুক্তরাজ্য এখনও একে অপরের সামগ্রিক বাণিজ্যের খুব সামান্য অংশের ভাগীদার — ভারত যুক্তরাজ্যের মোট বাণিজ্যের মাত্র ২.৪ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে এবং ভারতের বাণিজ্যে যুক্তরাজ্যের অংশ ২০০৯ সালের ২.৪ শতাংশ থেকে কমে ২০২৪ সালে মাত্র ১.৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে — বছরের পর বছর ধরে মোট দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়া বছরে, মোট দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৪২.৬ বিলিয়ন পাউন্ডে (প্রায় ৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) পৌঁছেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৮.৩ শতাংশ বৃদ্ধি। পরিষেবাগুলি বিনিময়ের ক্ষেত্রে প্রাধান্য বজায় রেখেছে, যা ভারতে যুক্তরাজ্যের রপ্তানির প্রায় ৫৯ শতাংশ এবং ভারত থেকে রপ্তানির ৫৮ শতাংশ। একই সঙ্গে, পণ্য বাণিজ্য ইঞ্জিনিয়ারিং, টেক্সটাইল, ফার্মাসিউটিক্যালস ও পরিশোধিত পেট্রোলিয়ামের মতো ক্ষেত্রে কেন্দ্রীভূত। বিনিয়োগ প্রবাহ, যদিও অসম, তবুও শক্তিশালী রয়ে গিয়েছে: ২০২৩ সালে ভারতে যুক্তরাজ্যের প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের (এফডিআই) পরিমাণ ছিল ১৭.৪ বিলিয়ন পাউন্ড, এবং যুক্তরাজ্যে ভারতীয় এফডিআই মোট ১৩.১ বিলিয়ন পাউন্ড, যা বাণিজ্যিক একীকরণের গভীরতা এবং আন্তঃসীমান্ত উদ্যোগের ক্রমবর্ধমান জালিকার প্রতিফলন ঘটায়।
চিত্র ১: যুক্তরাজ্য এবং ভারতের মধ্যে এফডিআই পরিমাণ
সূত্র: যুক্তরাজ্যের ব্যবসা ও বাণিজ্য বিভাগ, ২০২৫
অগ্রগতি উন্মোচন: একটি সীমিত ম্যাক্রো চুক্তির ক্ষুদ্র অর্থনীতি
সম্প্রতি সমাপ্ত ভারত-যুক্তরাজ্য (ইউকে) সমন্বিত অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য চুক্তি (সিইটিএ) উভয় দেশের বাণিজ্য গতিপথে একটি যুগান্তকারী উন্নয়নের প্রতিনিধিত্ব করে, এবং তা ভারত-যুক্তরাজ্য রোডম্যাপ ২০৩০-এর অর্থনৈতিক মাত্রা পুনর্নির্মাণের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের জন্য এই চুক্তিটি এমন এক সময়ে হয়েছে যখন দেশীয় উৎপাদন ব্রেক্সিট-পরবর্তী সমন্বয় এবং সরবরাহ শৃঙ্খল পুনর্নির্মাণের দ্বৈত চাপের মুখোমুখি হচ্ছে। ভারতীয় মধ্যবর্তী পণ্য — বিশেষ করে ওষুধ, মোটরগাড়ি উপাদান এবং আইটি পরিষেবা — নির্দিষ্ট উপখাতে ব্রিটিশ শিল্পে উৎপাদন খরচ ২ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই ব্যয় দক্ষতা, ভারতের ক্রমবর্ধমান ক্রয় এবং পরিকাঠামো বাজারে অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকারের সঙ্গে মিলিত হয়ে পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং মহাকাশে ব্রিটিশ সংস্থাগুলিকে আরও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করতে পারে। এই চুক্তিটি উচ্চ-মূল্যবান ব্রিটিশ রপ্তানি, যেমন প্রিমিয়াম স্পিরিট ও উচ্চমূল্য-সম্পন্ন অটোমোবাইল, বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল ভোক্তা বাজারগুলির মধ্যে একটিতে কৌশলগত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করে। এই সুযোগগুলি ব্রিটেনের উৎপাদন-নিবিড় অঞ্চল যেমন ওয়েস্ট মিডল্যান্ডস ও উত্তর-পূর্বের উপর স্থিতিশীল প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে, এই অঞ্চলগুলি ক্রমাগত শিল্পায়নের চাপের মুখোমুখি হয়েছে।
ভারতের পক্ষ থেকে, চুক্তিটি দেশীয় সংস্থাগুলিকে বিশ্বব্যাপী মূল্য শৃঙ্খলে অন্তর্ভুক্ত করার বৃহত্তর জাতীয় উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সিইটিএ-র অধীনে শুল্ক হ্রাস এবং নিয়ন্ত্রক নিশ্চয়তা রপ্তানি-নিবিড় কেন্দ্রগুলিকে — যেমন তিরুপুরের নিটওয়্যার ক্লাস্টার, কানপুর এবং চেন্নাইয়ের চামড়া রপ্তানিকারী এবং গুজরাটের বিশেষ রাসায়নিক সংস্থাগুলিকে — যুক্তরাজ্যের বাজারে আরও অনুমানযোগ্য এবং প্রতিযোগিতামূলক প্রবেশাধিকার প্রদানের মাধ্যমে উপকৃত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তার উপর, এই চুক্তি ভারতের উৎপাদন-সংযুক্ত প্রণোদনা (পিএলআই) প্রকল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা ইলেকট্রনিক্স, সৌর মডিউল এবং বৈদ্যুতিক যানবাহনের উপাদানসহ উদীয়মান ক্ষেত্রগুলির জন্য একটি স্থিতিশীল চাহিদা করিডোর প্রদান করে। ভারতের স্থানীয়করণ নীতি এবং ক্রয়ের নমনীয়তা সংরক্ষণকারী কার্ভ-আউটগুলির অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করে যে চুক্তিটি নয়াদিল্লির উন্নয়নমূলক উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে বাধাগ্রস্ত করবে না।
যদিও ভারত-যুক্তরাজ্য বাণিজ্য চুক্তি সামগ্রিক প্রভাবের দিক থেকে সামান্য বলে মনে হতে পারে, তবে অন্তর্নিহিত অর্থনৈতিক লাভগুলি যথেষ্ট, বিশেষ করে ক্ষেত্রগত পরিবর্তন, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং সরবরাহ শৃঙ্খলের স্থিতিস্থাপকতার ক্ষেত্রে।
মূলধন প্রবাহ এবং বিনিয়োগ কাঠামোও লাভজনক। চুক্তিতে ভারতের বিমা খাতে ৪৯ শতাংশ এফডিআই সীমা পুনর্ব্যক্ত করা, এবং সেইসঙ্গে তত্ত্বাবধানের মানগুলির পারস্পরিক স্বীকৃতি ভারতের দীর্ঘমেয়াদি পরিকাঠামো ঋণ বাজারে যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর অংশগ্রহণ আনবে বলে আশা করা হচ্ছে। ব্রিটিশ পেনশন তহবিল এবং সবুজ অর্থায়ন প্রতিষ্ঠানগুলি ভারতীয় পৌর বন্ড এবং জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক পরিকাঠামো প্রকল্পগুলিতে তাদের অংশগ্রহণকে আরও গভীর করবে বলে আশা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে, ভারতীয় বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলি — যেমন ইনফোসিস, টাটা এবং মাহিন্দ্রা — যুক্তরাজ্যের উদ্ভাবন এবং গবেষণা ও উন্নয়ন পরিসরে তাদের উপস্থিতি জোরদার করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা আইনি নিশ্চয়তা এবং আরও স্থিতিশীল বিনিয়োগ পরিবেশের দ্বারা সমর্থিত। যদিও একটি দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ চুক্তির অনুপস্থিতি একটি উল্লেখযোগ্য অসুবিধা, তবে এটি চুক্তির মাধ্যমে কার্যকর হওয়া বৃহত্তর কাঠামোগত সুবিধাগুলিকে ছাপিয়ে যায় না।
অসমাপ্ত কাজ: কৌশলগত চুক্তির দুর্বল প্রান্ত
কৌশলগত প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও, চুক্তিটিতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাঁক আছে যা এর সামগ্রিক প্রভাবকে কমিয়ে দিতে পারে। যুক্তরাজ্যে অভিবাসন ঘিরে রাজনৈতিক সংবেদনশীলতার কারণে ভারতের আরও উদার 'মোড ৪' গতিশীলতা কাঠামোর আনার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে, যুক্তরাজ্য-অস্ট্রেলিয়া চুক্তির অধীনে প্রদত্ত একই স্তরের বাজার প্রবেশাধিকার না পেয়ে ব্রিটিশ আর্থিক ও আইনি ক্ষেত্রগুলি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। উপরন্তু, যুক্তরাজ্যের আসন্ন কার্বন বর্ডার অ্যাডজাস্টমেন্ট মেকানিজম থেকে ভারতের ত্রাণ নিশ্চিত করতে ব্যর্থতা তার কার্বন-নিবিড় রপ্তানির জন্য ভবিষ্যতের ঝুঁকিও তৈরি করে। একই সময়ে, ভারতীয় কৃষি রপ্তানিকারকেরা কঠোর স্যানিটারি এবং ফাইটোস্যানিটারি বাধার মুখোমুখি হচ্ছেন। সামনের দিকে তাকিয়ে, বেশ কয়েকটি গতিশীলতা ঘনিষ্ঠভাবে মনোযোগ দেওয়ার দাবি রাখে: ভারতীয় রাজ্যগুলি যুক্তরাজ্যের ক্রয় বাজারগুলিতে প্রবেশের জন্য সক্রিয় প্রণোদনা তৈরি করে কি না; দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ঘাটতি কীভাবে দেশীয় রাজনৈতিক বর্ণনকে প্রভাবিত করে; এবং ডিজিটাল বাণিজ্য সহযোগিতা অগ্রগতি করতে পারে কি না, যা ভারতের ডেটা স্থানীয়করণ ব্যবস্থার সংস্কারের উপর নির্ভরশীল।
চুক্তিটি শুধু বাণিজ্যিকভাবে লাভজনকই হবে না, বরং এর উভয় পক্ষের অন্তর্ভুক্তিমূলক ও উদ্ভাবনী-নেতৃত্বাধীন বৃদ্ধিকে সমর্থনকারী একটি দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক কাঠামো হিসাবেও কাজ করার সম্ভাবনা রয়েছে।
পরিশেষে, ভারত-যুক্তরাজ্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) অর্থনৈতিক প্রভাব শুধু শিরোনামযোগ্য বাণিজ্য ভারসাম্য বা জিডিপি অনুমানের মাধ্যমে ধরা হবে না। এর আসল তাৎপর্য বাণিজ্য ও বিনিয়োগের অন্তর্নিহিত জ্যামিতির পরিবর্তন, সংস্থা-স্তরের প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি এবং সবুজ প্রযুক্তি, ওষুধ ও ডিজিটাল উদ্ভাবনের মতো ক্ষেত্রে নতুন অংশীদারিত্বকে অনুঘটন করার ক্ষমতার মধ্যে নিহিত। কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হলে, চুক্তিটি শুধু বাণিজ্যিকভাবে লাভজনকই হবে না, বরং এর উভয় পক্ষের অন্তর্ভুক্তিমূলক ও উদ্ভাবনী-নেতৃত্বাধীন বৃদ্ধিকে সমর্থনকারী একটি দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক কাঠামো হিসাবেও কাজ করার সম্ভাবনা রয়েছে।
সৌম্য ভৌমিক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সেন্টার ফর নিউ ইকনমিক ডিপ্লোম্যাসি (সিএনইডি)-র ফেলো এবং লিড, ওয়ার্ল্ড ইকনমিজ অ্যান্ড সাসটেনেবিলিটি।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Soumya Bhowmick is a Fellow and Lead, World Economies and Sustainability at the Centre for New Economic Diplomacy (CNED) at Observer Research Foundation (ORF). He ...
Read More +