-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
একটি পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য যুদ্ধের হুমকির সম্মুখীন হয়ে ইইউ সংঘর্ষের পরিবর্তে আপসকে বেছে নিয়েছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ১৫ শতাংশ শুল্ক চুক্তিই গ্রহণ করেছে, যা বেদনাদায়ক হলেও শেষ পর্যন্ত ‘লেসার ইভিল’ বা ‘কম ক্ষতিকর’ হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল।
২০২৫ সালের ২৭ জুলাই ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (ইউএস) দুই প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদারের মধ্যে কয়েক মাস ধরে বিদ্যমান উত্তেজনাপূর্ণ মতবিনিময়ের পর একটি বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছয়, যা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১ অগস্টের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি না হলে ইউরোপীয় পণ্যের উপর ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দেওয়ার পর আরও তীব্র হয়ে উঠেছিল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘ভেঙে’ দেওয়ার জন্য ইইউ তৈরি করা হয়েছে… এই দাবি তুলে ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্লকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রেখেছেন এবং মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পণ্যের ক্ষেত্রে পরবর্তী কালের বাণিজ্য উদ্বৃত্তের উপর মনোযোগ দিয়েছেন। ২০২৩ সালে এই উদ্বৃত্ত ছিল ১৫৭ বিলিয়ন ইউরো। একই সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইইউ-র পরিষেবায় ১০৯ বিলিয়ন ইউরোর বাণিজ্য ঘাটতি ছিল। এটি এমন একটি বিষয়, যা ট্রাম্প ক্রমাগত উপেক্ষা করে আসছেন।
ব্রেক্সিট-পরবর্তী ব্রিটেনে সমস্যা সমাধানের জন্য ট্রাম্প ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন দের লেইন স্কটল্যান্ডে তাঁর গল্ফ রিসর্টে দেখা করেন, যাকে ‘এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বড় চুক্তি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। জাপানের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্য চুক্তির অনুরূপ ইইউ-মার্কিন চুক্তিতে বেশিরভাগ ইউরোপীয় রফতানির উপর ১৫ শতাংশ বেসলাইন শুল্ক হার আরোপ করা হয়েছে।
চুক্তির রূপরেখা
চুক্তির শর্তাবলি অনুসারে, অটোমোটিভ সেক্টর - যা ট্রাম্পের জন্য বিতর্কের একটি প্রধান কারণ ছিল এবং ট্রাম্পের এই ধারণার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল যে ইউরোপীয় বাজার আমেরিকান গাড়ির জন্য বন্ধ - কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে। কারণ ১৫ শতাংশ শুল্ক নিঃসন্দেহে গত এপ্রিল মাসে এই খাতের উপর আরোপিত ২৭.৫ শতাংশ শুল্কের থেকে হ্রাসকেই দর্শায়। তবুও ১৫ শতাংশ হার বেশ কয়েকটি শিল্পকে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে প্রভাবিত করবে, যার মধ্যে অটোমোবাইলও রয়েছে। কারণ এই ক্ষেত্রটি ট্রান্সআটলান্টিক বাণিজ্যের উপর ব্যাপক ভাবে নির্ভরশীল। ফোক্সভাগেন ও মার্সিডিজ-বেঞ্জের মতো জার্মান সংস্থার - যারা তাদের ১০ শতাংশেরও বেশি যানবাহন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি করে - বার্ষিক মুনাফা ১.৫-২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
যে সব ওষুধের উপর ট্রাম্প এপ্রিল মাসে ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন, সেই পরিস্থিতি এখনও অস্পষ্ট। উচ্চ শুল্কের ফলে মার্কিন ভোক্তা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের জন্য দাম বৃদ্ধি পাবে, বিশেষ করে আয়ারল্যান্ডের মতো ওষুধ রফতানি কেন্দ্রগুলিকে প্রভাবিত করবে। ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম রফতানিও অনিশ্চয়তার সম্মুখীন। ট্রাম্প বলেছেন যে, এগুলির উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। অন্য দিকে ফন দের লেইন ধাতু খাতের জন্য একটি কোটা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এ দিকে, ইইউ মার্কিন কৃষি আমদানির উপর শুল্ক বজায় রাখবে, যা ব্লকের নিয়ম মেনে চলে না। পাশাপাশি কিছু কৃষি পণ্য ও কৃষিজাত পণ্যের উপর শুল্ক বাতিল করবে।
গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল, বিমান ও বিমানের যন্ত্রাংশ, কিছু রাসায়নিক ও কিছু কৃষিজাত পণ্যের মতো পণ্য শূন্য শুল্ক আকারে দ্বিপাক্ষিক শুল্ক ছাড় পেয়েছে। আরও আলোচনার পরে এই তালিকাটি আরও প্রসারিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ওয়াইন ও স্পিরিট খাতের বিষয়েও আলোচনা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, যে ক্ষেত্রে বর্তমানে ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে এবং এই ক্ষেত্রগুলি ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন ও নেদারল্যান্ডস-সহ বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ট্রাম্পের শুল্ক হুমকি সর্বোত্তম পদক্ষেপের বিষয়ে ইইউর অভ্যন্তরীণ বিভাজন প্রকাশ করে দিয়েছে। ফ্রান্সের মতো দেশগুলি কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে এবং জার্মানির মতো অন্যান্য দেশ - যারা রফতানির উপর অত্যন্ত নির্ভরশীল - সতর্কতা অবলম্বন করার আহ্বান জানিয়েছে।
শুল্ক কমানোর বিনিময়ে ইইউ রাশিয়ার জ্বালানি উৎস প্রতিস্থাপনের জন্য তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও পারমাণবিক জ্বালানির আকারে ৭৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের মার্কিন জ্বালানি কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং ২০২৮ সালের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অতিরিক্ত ৬০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে।
ট্রাম্পের শুল্ক হুমকি সর্বোত্তম পদক্ষেপের বিষয়ে ইইউর অভ্যন্তরীণ বিভাজন প্রকাশ করে দিয়েছে। ফ্রান্সের মতো দেশগুলি কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে এবং জার্মানির মতো অন্যান্য দেশ - যারা রফতানির উপর অত্যন্ত নির্ভরশীল - সতর্কতা অবলম্বন করার আহ্বান জানিয়েছে। ফলস্বরূপ, চুক্তির প্রতি প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন ছিল। ফরাসি প্রাইম মিনিস্টার ফ্রাঁসোয়া বেরো এটিকে ‘একটি কালো দিন’ বলে অভিহিত করেছেন, অন্য দিকে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ চুক্তির প্রতি সতর্ক সমর্থন জানিয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ৪০ বিলিয়ন ইউরোর বাণিজ্য উদ্বৃত্ত থাকা ইতালি আরও গভীর বাণিজ্য যুদ্ধ এড়াতে আগ্রহী ছিল। এ দিকে, ট্রাম্পের মিত্র হাঙ্গেরির প্রাইম মিনিস্টার ভিক্টর অরবান চুক্তির নিন্দা করে বলেছেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প সকালের প্রাতরাশে ফন দের লেইনকে দুরমুশ করে ছেড়েছেন।’
বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্যিক সম্পর্ক ঝুঁকির মুখে
১৫ শতাংশ শুল্ক হার এখনও একটি প্রধান বাণিজ্য বাধা হিসেবে কাজ করবে, যার ফলে আটলান্টিক বাণিজ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সম্প্রতি হুমকির মুখে থাকা ৩০ শতাংশ ও প্রাথমিক ২০ শতাংশ শুল্কের চেয়ে কম হলেও বর্তমান হার এখনও ইউরোপীয় পণ্যের উপর পূর্ব-বিদ্যমান গড় ৪.৮ শতাংশ হারের চেয়ে অনেক বেশি। ১৫ শতাংশ হার ট্রাম্পের ঢালাও ১০ শতাংশ শুল্কের চেয়েও বেশি, যা যুক্তরাজ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার নিজস্ব চুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছিল।
তবুও একটি চুক্তিবিহীন পরিস্থিতি - যা ৩০ শতাংশ শুল্ক নিয়ে আসত, ইইউ-কে ‘মন্দার দ্বারপ্রান্তে’ ঠেলে দিত এবং এর ফলে পূর্ণ-মাত্রার বাণিজ্য যুদ্ধও হতে পারে - আপাতত এড়ানো গিয়েছে। উভয় পক্ষের বাজারের জন্য কিছু স্থিতিশীলতা ও পূর্বাভাস প্রদানের মাধ্যমে চুক্তিটি অন্তত সাময়িক ভাবে আটলান্টিক বাণিজ্য উত্তেজনা কমিয়েছে। অতএব, অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও মার্কিন স্বার্থের পক্ষে থাকা সত্ত্বেও চুক্তিটিকে এখনও ‘সবচেয়ে কম খারাপ বিকল্প’ হিসাবে দেখা হচ্ছে। বেলজিয়ামের প্রাইম মিনিস্টার বার্ট দি ওয়েভার যেমন স্বীকার করেছেন, ‘এটি স্বস্তির মুহূর্ত অবশ্যই, কিন্তু উদ্যাপনের নয়।’ যে পরিস্থিতিতে কোনও চুক্তিতে একমত হতে পারছিল না, ব্রাসেলস পাল্টা ব্যবস্থার একটি তালিকা তৈরি করেছিল - ৯৩ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের বিস্তৃত মার্কিন পণ্যের উপর লক্ষ্য করে, ৩০ শতাংশ পর্যন্ত প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করা হবে।
ট্রান্সআটলান্টিক বাণিজ্য চুক্তির রূপরেখা যখন উঠে আসছে, তখন প্রশ্ন উঠেছে যে ৪৫০ মিলিয়ন-শক্তিশালী ভোক্তা বাজার হিসাবে ব্লকের অর্থনৈতিক শক্তি প্রতিফলিত করে একটি শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া কি ইইউ-র জন্য আরও ভাল ছাড় নিশ্চিত করতে পারত? বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইইউ শক্তিশালী অবস্থানে থাকলেও নিরাপত্তা গ্যারান্টির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরতা ও ইউক্রেনে আমেরিকান বিচ্ছিন্নতা রোধ করার প্রয়োজনীয়তার কারণে এটি আংশিক ভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। জার্মান শিল্প ফেডারেশন এই চুক্তিকে ‘অপ্রতুল আপস যা একটি বিপর্যয়কর সঙ্কেত পাঠায়’ বলে দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং সতর্ক করে দিয়েছে যে, শুল্ক ইউরোপে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রতিযোগিতা ও মুদ্রাস্ফীতির হারকে প্রভাবিত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্যাল স্টাডিজ (আইএসপিআই) অনুমান করে যে, ১৫ শতাংশ শুল্কের ফলে ইতালির জিডিপি ০.২ শতাংশ সংকুচিত হতে পারে।
বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইইউ শক্তিশালী অবস্থানে থাকলেও নিরাপত্তা গ্যারান্টির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরতা ও ইউক্রেনে আমেরিকান বিচ্ছিন্নতা রোধ করার প্রয়োজনীয়তার কারণে এটি আংশিক ভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল।
উল্লেখযোগ্য ভাবে, হোয়াইট হাউসের চুক্তির সংস্করণ - যা একটি ফ্যাক্টশিট আকারে প্রকাশিত হয়েছে - এবং ইউরোপীয় কমিশনের ঘটনাবলির বিবরণে গুরুত্বপূর্ণ অসঙ্গতি রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ফ্যাক্টশিটে ‘উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মার্কিন সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়ের’ জন্য ইইউ-র চুক্তির কথা উল্লেখ করা হলেও, ব্লকের বিবৃতিতে এই কথা উল্লেখ করা হয়নি। এই ধরনের প্রতিশ্রুতি প্রতিরক্ষা খাতে অভ্যন্তরীণ শিল্পায়নের লক্ষ্যে কমিশনের সম্প্রতি বর্ণিত প্রতিরক্ষা উদ্যোগের সঙ্গে মৌলিক ভাবে সংঘাতজনক হবে। ৬০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের বিষয়ে হোয়াইট হাউস ফ্যাক্টশিটে ব্যবহৃত আরও সুনির্দিষ্ট ভাষার বিপরীতে ইইউ বিবৃতিতে কেবল উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘সংস্থাগুলি এই লক্ষ্যে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।’ যে ভাবেই হোক, এটি কোনও গ্যারান্টি নয়। কারণ এই ধরনের বিনিয়োগ বেসরকারি খাতের উপর নির্ভর করবে।
একটি যৌথ বিবৃতির অনুপস্থিতি আর একটি সতর্কতা, বিশেষ করে ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত খামখেয়ালিপনার প্রতি ঝোঁক - যা ইইউ-র মতো একটি সত্তার জন্য অনন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। ইইউ-র বাণিজ্য চুক্তিতে সহমত না হওয়ার একচেটিয়া ক্ষমতা রয়েছে, কিন্তু তাদের ২৭টি সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে তা নিয়ে পরামর্শ করতে হবে। প্রকৃতপক্ষে, অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের হুমকি আসার আগেই ইইউ ইতিমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তি প্রায় সম্পন্ন করার অবস্থানে ছিল।
খাতভিত্তিক শুল্ক ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনও স্পষ্ট না হওয়ায়, আলোচনা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবুও চুক্তিটি কার্যকর হওয়ার আগে ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলির অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকায় এটি বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্যিক সম্পর্কের উপর গভীর প্রভাব ফেলবে, যার মূল্য ২০২৪ সালে ছিল ১.৬ ট্রিলিয়ন ইউরো।
শায়েরী মলহোত্র অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ডেপুটি ডিরেক্টর।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Shairee Malhotra is Deputy Director - Strategic Studies Programme at the Observer Research Foundation. Her areas of work include Indian foreign policy with a focus on ...
Read More +