Published on Sep 09, 2025 Updated 0 Hours ago

ভারত ট্রাম্প-শি-র ক্রমবর্ধমান গতিশীলতা নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে

চুক্তির ঝুলিতে আসলে কী আছে?

ট্রাম্প ২.০ প্রশাসন ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র কয়েক মাস হয়েছে। তবে বাণিজ্য যুদ্ধের তীব্রতা বৃদ্ধির মাঝেই চিনের সঙ্গে তার সম্পর্কের গতিপথ ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে উঠে আসছে, যা আরও বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করছে।

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে মার্কিন ব্যবসার জন্য ন্যায়সঙ্গত বাজার প্রবেশাধিকারের সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে চিনা আমদানির উপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। ২০২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিন একটি বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করে, যার অধীনে বেজিং আরও বেশি পণ্য কিনতে সম্মত হয়েছিল। তবুও ২০২৪ সালে বেজিংয়ের সঙ্গে ওয়াশিংটনের পণ্যের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ২৯৫.৪ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৫.৮ শতাংশ বেশি। জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত ট্রাম্পের আমেরিকা ফার্স্টবাণিজ্য নীতি স্পষ্ট করে দেয় যে, তাঁর প্রশাসনের অগ্রাধিকার হবে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে হওয়া চুক্তির অধীনে স্বাক্ষরিত প্রতিশ্রুতিগুলি চিন মেনে চলে কি না, তা পর্যালোচনা করা। উপরন্তু, ট্রাম্পের নীতিগত ইশতেহারের লক্ষ্য হল প্রযুক্তি হস্তান্তর, বুদ্ধিবৃত্তিগত সম্পত্তি লঙ্ঘন, তৃতীয় দেশের মাধ্যমে রফতানি চালিত করা এবং বৈষম্যমূলক বাণিজ্য অনুশীলন সম্পর্কিত বেজিংয়ের অনুশীলনগুলি তদন্ত করা। এই নথিতে শিল্প ও উৎপাদন ভিত্তির অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা পর্যালোচনা করার চেষ্টা করা হয়েছে, যাতে এ কথা নিশ্চিত করা যায় যে, ওয়াশিংটনের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ আমদানি সামঞ্জস্য করার প্রয়োজন আছে কি না। কৌশলগত প্রতিপক্ষদের কাছে প্রযুক্তি বিক্রি সীমাবদ্ধ করে এ হেন ফতানি-নিয়ন্ত্রণ কাঠামো পরীক্ষা করার জন্যও একটি প্রেরণা রয়েছে।

ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ট্রাম্প চিনা আমদানির উপর দুবার শুল্ক আরোপ করেছেন, যার ফলে মোট শুল্ক ২০ শতাংশে পৌঁছেছে। তিনি যানবাহন, অর্ধপরিবাহী এবং ওষুধ আমদানির উপর শুল্ক আরোপের ইঙ্গিত দিয়েছেন।

বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিবেশ থেকে আঁচ পেয়ে মার্কিন আইন প্রণেতারা ট্রাম্প প্রশাসনকে শুল্ক এড়ানোর জন্য সন্দেহজনক বাণিজ্য পদ্ধতিগুলি তদন্ত করা এবং ট্রান্সশিপমেন্ট রোধে সতর্কতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘দে মিনিমিস রুল’ অনুযায়ী কম মূল্যের প্যাকেজ শুল্কমুক্ত করার অনুমতি দেওয়া হয়

এই ব্যবধানটিকে কাজে লাগিয়ে কিছু ই-টেলার চিন থেকে সরাসরি মার্কিন গ্রাহকদের কাছে ৮০০ মার্কিন ডলারের কম মূল্যের পণ্য পাঠিয়েছে। এখন বাণিজ্য ছাড় রোধ করার জন্য খসড়া আইন চালু করা হয়েছে।

জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত ট্রাম্পের আমেরিকা ফার্স্টবাণিজ্য নীতি স্পষ্ট করে দেয় যে, তাঁর প্রশাসনের অগ্রাধিকার হবে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে হওয়া চুক্তির অধীনে স্বাক্ষরিত প্রতিশ্রুতিগুলি চিন মেনে চলে কি না, তা পর্যালোচনা করা। উপরন্তু, ট্রাম্পের নীতিগত ইশতেহারের লক্ষ্য হল প্রযুক্তি হস্তান্তর, বুদ্ধিবৃত্তিগত সম্পত্তি লঙ্ঘন, তৃতীয় দেশের মাধ্যমে রফতানি চালিত করা এবং বৈষম্যমূলক বাণিজ্য অনুশীলন সম্পর্কিত বেজিংয়ের অনুশীলনগুলি তদন্ত করা।

ট্রাম্পের লক্ষ্য কেবল চিনের রফতানি নয়, লজিস্টিক ব্যবস্থাও। সামুদ্রিক ও জাহাজ নির্মাণ খাতের তদন্তের উদ্দেশ্যে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি চিনে নির্মিত জাহাজের জন্য একটি পোর্ট কলের ক্ষেত্রে ১.৫ মিলিয়ন ডলার এবং একটি অপারেটরের জন্য ৫০০,০০০ ডলার ফি নেওয়ার প্রস্তাব পেশ করেছেন, এমনকি যদি কোনো বহরে একটি চিনা জাহাজ থাকে, সে ক্ষেত্রেও এই মূল্য লাগু করা হবেচিনের কসকোকে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম কন্টেনার লাইন বলা হয় এবং প্রস্তাবিত শুল্ক সমুদ্র সরবরাহ শৃঙ্খলের উপরেও প্রভাব ফেলবে।

বাণিজ্যের পর ফেব্রুয়ারি মাসে ঘোষিত আমেরিকা ফার্স্টবিনিয়োগ নীতিতেও পুঁজি মনোযোগ পেয়েছে, যা জাতীয় নিরাপত্তার ভিত্তিকে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা হিসেবে গড়ে তুলেছে। চিনেসামরিক-বেসামরিক সংমিশ্রণ’ - যা তার শিল্প ভিত্তি বৃদ্ধি গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহকে সমর্থন করার জন্য তার বেসরকারি খাত এবং গবেষণা সুবিধাগুলিকে সমন্বিত করার চেষ্টা করে - তা উল্লেখ করা হয়েছে। ট্রাম্প মনে করেন যে, মার্কিন বিনিয়োগকারীরা - যাঁরা চিনা সংস্থাগুলিতে অর্থ বিনিয়োগ করেন অনিচ্ছাকৃত ভাবে চিনের সামরিক আধুনিকীকরণের লক্ষ্যের পথে এগোচ্ছেন। তিনি চিনে মূলধন, প্রযুক্তিগত জ্ঞান প্রযুক্তির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে  চান এবং চিনের সঙ্গে যুক্ত শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের কৃষি জমি, গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন ব্যবসা সম্পদ অধিগ্রহণ থেকে সীমাবদ্ধ করতে চান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি বিনিয়োগ কমিটিকে - যা জাতীয় নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে বিদেশি সংস্থাগুলির তরফে হওয়া আমেরিকায় বিনিয়োগ পরীক্ষা করে - সম্প্রতি একটি আদেশের মাধ্যমে ট্রাম্প গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, শক্তি, কাঁচামাল এবং প্রযুক্তিতে চিনা বিনিয়োগ সীমিত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। মহাকাশ, কোয়ান্টাম, জৈবপ্রযুক্তি, অর্ধপরিবাহী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো ক্ষেত্রে চিনে মার্কিন বহির্গামী বিনিয়োগের  উপর নিষেধাজ্ঞা প্রসারিত করার পরিকল্পনা চলছে।

ট্রাম্প প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই চিনের আগ্রাসী আচরণের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। মার্কিন মিনিস্টার অফ ডিফেন্স হিসেবে শপথ গ্রহণের কয়েক ঘণ্টা পর মার্কো রুবিও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের তাঁর সমকক্ষ প্রতিনিধিদের আতিথ্য দেন। এই চারটি দেশ সম্মিলিত ভাবে কোয়াড্রিল্যাটেরাল সিকিউরিটি ডায়লগ (কোয়াড) গঠন করে এবং দ্বিপাক্ষিক ভাবে এই দেশগুলির রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন মার্কো রুবিও। কোয়াডের যৌথ বিবৃতিতে জবরদস্তি বা বলপ্রয়োগের মাধ্যমে স্থিতাবস্থা পরিবর্তনের একতরফা পদক্ষেপের বিরোধিতা করা হয়েছে এবং একটি মুক্ত ও অবাধ ইন্দো-প্যাসিফিক আইনের শাসন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা সমুন্নত রাখা হয়েছে। এটি ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক প্রোটোকল থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্থানকেই দর্শায়। কারণ একটি নতুন প্রশাসন সাধারণত ন্যাটো জোটের সদস্যদের অথবা মেক্সিকো কানাডার মতো প্রতিবেশীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। কোয়াডের গুরুত্ব ট্রাম্পের নির্দেশিকা থেকেও অনুমান করা যেতে পারে, যা রুবিওর অধীনে পররাষ্ট্র দফতরকে কোয়াডের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে খনিজ পদার্থের খনন ও প্রক্রিয়াকরণ বাড়ানোর নির্দেশ দেয়। চিন একটি রফতানি-নিয়ন্ত্র ব্যবস্থা তৈরি করেছে, যা বৈদ্যুতিন পণ্য সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের বাণিজ্যকে সীমিত করে।

কোয়াডের গুরুত্ব ট্রাম্পের নির্দেশিকা থেকেও অনুমান করা যেতে পারে, যা রুবিওর অধীনে পররাষ্ট্র দফতরকে কোয়াডের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে খনিজ পদার্থের খনন ও প্রক্রিয়াকরণ বাড়ানোর নির্দেশ দেয়। চিন একটি রফতানি-নিয়ন্ত্র ব্যবস্থা তৈরি করেছে, যা বৈদ্যুতিন পণ্য সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের বাণিজ্যকে সীমিত করে।

আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিতে তাইওয়ানের অংশগ্রহণকে সমর্থন করার কথা স্টেট ডিপার্টমেন্টের ঘোষণা এবং রুবিও স্টেট ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইট থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের স্বাধীনতাকে সমর্থন করবে না’… এই বাক্যাংশটি বাদ দেওয়ার পর ওয়াশিংটন-তাইপেই সম্পর্কে নতুন মোড় এসেছে। বেজিং ওয়াশিংটনকে দ্ব্যর্থহীন ভাবে এ কথা বলতে অনুরোধ করে আসছিল যে, তারা তাইওয়ানের স্বাধীনতা চাওয়ার বিরোধিতা করছে এবং পররাষ্ট্র দফতরেচিরাচরিত অবস্থানের পরিবর্তে যে, তারা স্বাধীনতাকে সমর্থন করে না। ২০২৩ সালে সান ফ্রান্সিসকো শীর্ষ সম্মেলনের সময় চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মধ্যে আলোচনার সময় এই উদ্বেগজনক বিষয়টি উঠে আসে। ফেব্রুয়ারি মাসে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের সময় রুবিও যখন তাঁর জাপানি দক্ষিণ কোরীয় সমকক্ষদের সঙ্গে দেখা করেন, তখন তিনি তাইপেই সম্পর্কে এই অবস্থানকে আরও জোরদার করে বলেন যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা সমৃদ্ধির জন্য তাইওয়ান প্রণালী জুড়ে শান্তি অপরিহার্য। শি তাইপেইয়ের বিরুদ্ধে নিয়মিত সামরিক বলপ্রয়োগের আশ্রয় নিলেও রুবিওর দৃষ্টিভঙ্গি বেজিংকে সতর্ক করে দিয়েছে।

বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতি সামরিক শক্তিগুলি যখন এই চাপানউতোরে জর্জরিত, তখন ভারতের জন্য সুযোগ চ্যালেঞ্জ উভয়ই রয়েছে। রুবিও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার বিষয়ে জোরালো সমর্থক এবং ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বেজিংয়ের যুদ্ধবাজ মনোভাব মোকাবিলায় ওয়াশিংটনের কৌশলের জন্য নয়াদিল্লিকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। তিনি ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সেনেটে মার্কিন-ভারত প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আইন উত্থাপন করেছিলেন, যা ভারতের কৌশলগত মর্যাদা বৃদ্ধি করতে এবং জাপান রায়েলের মতো ওয়াশিংটনের চিরাচরিত মিত্রদের সমতুল্য অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। দ্বিতীয়ত, বাইডেনের নেতৃত্বে কোয়াড গ্রুপিং জলবায়ু পরিবর্তন স্বাস্থ্যের মতো বিষয়গুলিতে সহযোগিতা প্রত্যক্ষ করেছিল। তবে ট্রাম্প ২.০-এর অধীনে নিরাপত্তা উপাদানটি আরও শক্তিশালী হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তৃতীয়ত, চিনের সঙ্গে বাণিজ্য ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে উত্তেজনা বৃদ্ধির নেপথ্যে ট্রাম্পের শেষ খেলা কী, তা নিয়ে কোনও স্পষ্টতা নেই। এ তত্ত্বও উঠে আসছে যে, ট্রাম্প শি-র বিরুদ্ধে সুবিধা হিসাবে এই ঝুঁকিকে ব্যবহার করতে চাইছেন। ট্রাম্পের শুল্কের প্রতি বেজিংয়ের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল এই যে, চিন বাণিজ্য যুদ্ধ বা অন্য কোনও ধরনের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিল। তবুও ৭ মার্চ সাংবাদিক সম্মেলনে চিনের ফরেন মিনিস্টার ওয়াং ই সাধারণ স্বার্থ বিবেচনা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিনের মধ্যে সহযোগিতার কথা বলেছিলেন এবং গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জুন মাসে ট্রাম্প এবং শি-র মধ্যে জন্মদিনের শীর্ষ সম্মেলন সম্পর্কে নানা কথা প্রকাশিত হয়েছিল। পরিস্থিতি যা-ই হোক, দিল্লি মার্কিন-চিন চুক্তির কৌশল নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে।

 


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ওপেন-এ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Harsh V. Pant

Harsh V. Pant

Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...

Read More +
Kalpit A Mankikar

Kalpit A Mankikar

Kalpit A Mankikar is a Fellow with Strategic Studies programme and is based out of ORFs Delhi centre. His research focusses on China specifically looking ...

Read More +