২০২৩ সালের ৯ এবং ১০ সেপ্টেম্বর জি২০ নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে অতি প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক সমস্যাগুলিকে নিয়ে আলোচনা চালানোর জন্য একটি অনন্য মঞ্চ তুলে ধরা এবং লিডারস ডিক্লেয়ারেশনের আকারে ঐকমত্যে উপনীত হওয়ার বিষয়ে গোষ্ঠীটির সভাপতি হিসাবে ভারতের ক্ষমতা পর্যাপ্ত ভাবে তুলে ধরেছিল। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির নিরিখে জি২০-র মূল উদ্দেশ্য বাণিজ্য, অর্থ, স্থিতিশীল এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বহুমুখী অর্থনৈতিক উদ্বেগের অপরিহার্যতার ভিত্তিতে নির্মিত।
যে প্রশ্নটি বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা হল এই সব কিছুর মধ্যে সাধারণ মানুষ এবং দরিদ্রদের জন্য কী-ই বা আছে?
ভারতের জি২০ সভাপতিত্ব উচ্চ স্তরের আলোচনার মধ্যে জনসাধারণের উদ্বেগকে তুলে ধরার জন্য তার কর্মসূচির অগ্রাধিকারে অন্তর্ভুক্তিকরণকে জায়গা করে দিয়েছে। ১১টি এনগেজমেন্ট গ্রুপ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন অংশ, ছাত্র এবং যুবক থেকে শুরু করে নারী, বেসরকারি ক্ষেত্র, শিক্ষাবিদ ও সুশীল সমাজ সক্রিয় ভাবে সমালোচনামূলক বিষয়ে সারগর্ভ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছেন। এই ‘বটম আপ’ পদ্ধতি আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতীয় নাগরিকদের কণ্ঠস্বরকে তুলে ধরেছে।
মানব সম্পদ
এর পাশাপাশি ভারত মানব ও প্রাকৃতিক সম্পদ… উভয় ক্ষেত্রেই তার সুবিশাল সম্ভাবনা প্রদর্শন করেছে। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের জন্য ৭.২ শতাংশে দাঁড়িয়ে থাকা প্রধান আন্তর্জাতিক অর্থনীতিগুলির মধ্যে সর্বোচ্চ বৃদ্ধির হার নিয়ে গর্ব করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও ভারতের অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। চিন থেকে দূরবর্তী পরিসরে উৎপাদন ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি দ্বারা গৃহীত ‘চায়না প্লাস ওয়ান’ কৌশলটি ভারতকে উল্লেখযোগ্য ভাবে উপকৃত করবে, যার ফলে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং তা দেশীয় অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে সূচিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ভারতের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি সমাজের বিভিন্ন অংশকে ইতিবাচক ভাবে প্রভাবিত করবে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, অস্ট্রেলিয়া এবং সংযুক্ত যুক্ত রাষ্ট্রের মতো দেশগুলির সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ও অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বে ভারতের সক্রিয় অংশগ্রহণ দেশীয় অর্থনীতির মধ্যে সমগ্র পণ্য মূল্যশৃঙ্খলকে প্রভাবিত করবে। এই ধরনের চুক্তিগুলি সুলভ মূল্যে বিকল্প প্রদানের মাধ্যমে শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে উপকৃত করবে।
চিন থেকে দূরবর্তী পরিসরে উৎপাদন ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি দ্বারা গৃহীত ‘চায়না প্লাস ওয়ান’ কৌশলটি ভারতকে উল্লেখযোগ্য ভাবে উপকৃত করবে, যার ফলে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে।
বিদেশি বিনিয়োগ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অবদান রাখে, শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতার পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং কারখানা ও পরিষেবা ক্ষেত্রে শ্রমিকদের উচ্চ মজুরির দিকে পরিচালিত করে। এর পাশাপাশি বিদেশি ব্যবসাগুলির ক্ষেত্রে প্রায়শই উন্নত ক্রয় পদ্ধতি পরিলক্ষিত হয়, যা আখেরে কৃষক এবং কৃষি সম্প্রদায়কে উপকৃত করে।
জি২০-র প্রাধান্য এবং সেই প্রসঙ্গে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার দারিদ্র্য বিমোচনের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে। স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ১ (এসডিজি ১) ‘দারিদ্র্যমুক্ত’ অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী উন্নয়নমূলক প্রশাসনের একটি মৌলিক ভিত্তি প্রদান করে। ভারত শুধুমাত্র দরিদ্রদের উদ্বেগকেই সমর্থন করেনি, বরং রাষ্ট্রপুঞ্জের স্থিতিশীল উন্নয়নমূলক কর্মসূচি ২০৩০-এর পুরোধা রূপে উদ্ভূত হয়েছে। জি২০-র মধ্যে ভারতের ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-অর্থনৈতিক অবস্থান এমন বিনিয়োগকে আকর্ষণ করতে পারে, যা কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দারিদ্র্য হ্রাসের পথ সহজতর করে দেবে।
গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর
ভারতের অর্থনৈতিক শক্তি, চিরাচরিত প্রতিশ্রুতি, বিভিন্ন প্রতিনিধিত্ব, দুর্বল দেশগুলির পক্ষে সওয়াল করা এবং বহুমুখী কূটনীতি সম্মিলিত ভাবে দেশটিকে জি২০-র মধ্যে গ্লোবাল সাউথের প্রতিনিধি হিসাবে অনুকূল অবস্থানে উন্নীত করেছে। এটি ভারতকে উন্নয়নশীল দেশগুলির পক্ষে উপকারী আলোচনা এবং কর্মসূচিতে কার্যকর ভূমিকা নিতে ও আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাদের সামনে উপস্থিত অনন্য চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা করতে সক্ষম করেছে।
সর্বোপরি, জি২০-র মধ্যে ‘গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর’ হিসাবে ভারতের অবস্থান নিছক প্রতীকী নয়; বরং ভারত উন্নয়নশীল এবং উদীয়মান অর্থনীতির কল্যাণ ও উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়ার মাধ্যমে এ হেন নীতি ও উদ্যোগকে সমর্থনকারী সুযোগ উপস্থাপন করেছে। দু’টি প্রেক্ষিত অবশ্য এ ক্ষেত্রে ভিন্ন: উন্নয়নমূলক আলোচনা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থায় নারীদের স্বীকৃতি দেওয়া এবং তাঁদের সম্মুখ সারিতে আসার সুযোগ করে দেওয়া (যা আমাদের জীবন ও জীবিকাকে প্রভাবিত করে এবং করবে); এবং আফ্রিকার অন্তর্ভুক্তি।
তাই ভারতীয় জি২০ সভাপতিত্ব কূটনৈতিক দক্ষতা প্রদর্শনের চেয়ে বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। এটি বর্তমান সময়ের সমস্যাজনক পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভারতের প্রভাবকে অন্তর্ভুক্ত করে, যা তার নাগরিক এবং বিশ্ব সম্প্রদায় উভয়ের সঙ্গেই অনুরণিত হয় এবং অন্তর্ভুক্তি ও অর্থনৈতিক শক্তির প্রতি ভারতের প্রতিশ্রুতি বর্ধিত বিনিয়োগ, কাজের সুযোগ, আয় বৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য হ্রাসের মতো বাস্তব ফলাফল লাভের জন্য অনুকূল।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে এই উত্থান মাত্র গুটিকয়েক দেশের জন্য সংরক্ষিত বিশেষাধিকার নয়; বরং তার লভ্যাংশ সাধারণ নাগরিক, পরিশ্রমী কৃষক ও কারখানার কর্মী এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী শহুরে মধ্যবিত্তদের মধ্যেও প্রসারিত। ভারতের নেতৃত্বে জি২০ তাই আরও সমৃদ্ধ ও ন্যায়সঙ্গত বিশ্বের জন্য আশার আলোকবর্তিকা হয়ে উঠেছে।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় দ্য হিন্দু বিজনেসলাইন-এ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.