Published on Nov 01, 2025 Updated 0 Hours ago
শ্রীলঙ্কা সম্পর্কে ভারতের তরুণ প্রজন্ম কী ভাবে?

১৫ জুলাই শ্রীলঙ্কার তরুণ রাজনৈতিক নেতাদের ২৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ভারতে তাঁদের দুই সপ্তাহের পরিচিতিমূলক কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন। ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পৃক্ততার সময়ে এই কর্মসূচি শুরু হয়। প্রকৃতপক্ষে, অর্থনৈতিক সঙ্কট ভারত-শ্রীলঙ্কার সম্পর্কের ক্ষেত্রে সংযোগ, জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক এবং উন্নয়ন সহায়তা-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় নিয়েছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নও উত্থাপন করে: ভারতের তরুণ প্রজন্ম শ্রীলঙ্কা ভারতের সঙ্গে দ্বীপদেশটির সম্পর্ককে কোন নজরে দেখে?

বিদেশনীতি সমীক্ষা

ভারতের শীর্ষস্থানীয় থিঙ্ক ট্যাঙ্ক অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন ভারতীয় তরুণদের (১৮-৩৫ বছর বয়সি) উপর একটি বার্ষিক বৈদেশিক নীতি সমীক্ষা পরিচালনা করে, যাঁরা দেশের জনসংখ্যার ৪৩ শতাংশ। উদ্দেশ্য হল তরুণরা ভারতের বৈদেশিক নীতি বিশ্বে এর ক্রমবর্ধমান ভূমিকা কী ভাবে উপলব্ধি করে, তা মূল্যায়ন করা। সমীক্ষার পাইলট সংস্করণ - যেখানে ২,০৩৭ জনেরও বেশি উত্তরদাতার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল - ২০২১ সালের গস্ট মাসে প্রকাশিত হয়েছিল। পরবর্তী সংস্করণগুলিতে ১৯টি শহরের ১১টি ভারতীয় ভাষায় (তামিল-সহ) প্রতি বছর ৫,০০০ উত্তরদাতাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সমীক্ষার দ্বিতীয় পুনরাবৃত্তিটি ২০২২ সালের জুন থেকে জুলাইয়ের মধ্যে পরিচালিত হয়েছিল এবং তৃতীয়টি ২০২৩ সালের গস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরিচালিত হয়েছিল। ২০২৫ সালের ৮ জুলাই প্রকাশিত ইয়ং ইন্ডিয়া অ্যান্ড দ্য চায়না চ্যালেঞ্জঅর্থাৎ সর্বশেষ পুনরাবৃত্তিটি ২০২৪ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরিচালিত হয়েছিল। যদিও এই সমীক্ষায় একেডি-র জয়ের পরের ঘটনাগুলি তুলে ধরা হয়নি, তবে এটি সম্পর্কের দিকনির্দেশনা সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে।

তরুণ ভারত শ্রীলঙ্কা সম্পর্কে আশাবাদী

গত তিনটি সমীক্ষায় বেশির ভাগ উত্তরদাতা শ্রীলঙ্কার প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছেন। ২০২২ সালে এই আস্থা ছিল ৬৫ শতাংশ এবং ২০২৩ সালে ৬১ শতাংশ। সর্বশেষ সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, আস্থা বেড়ে ৬৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। একই ভাবে, যখন উত্তরদাতাদের ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তখন ২০২২ সালে ৬১ শতাংশ বিশ্বাস করেছিলেন যে সম্পর্কগুলি ভাল বা অত্যন্ত ভাল ছিল। ২০২৩ সালে এটি ৫৬ শতাংশে কমেছে এবং ২০২৪ সালে তা ৫৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। উভয় ক্ষেত্রেই, ২০২৩ সাল থেকে আশাবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং শ্রীলঙ্কা ১১টি দেশের মধ্যে তৃতীয় শীর্ষ পছন্দ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ৫৫ শতাংশেরও বেশি উত্তরদাতা বলেছেন যে, গত দশকে অর্থাৎ ২০১৪ সাল থেকে ভারত-শ্রীলঙ্কা সম্পর্ক বৃদ্ধি পেয়েছে।

সামগ্রিক দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, যোগাযোগের জন্য অব্যাহত প্রচেষ্টা এবং ভারতীয় উদ্বেগের প্রতি কলম্বোর সম্মান - বিশেষ করে চিনা জাহাজের উপর স্থগিতাদেশ - এই আশাবাদে অবদান রেখেছে।

জটিল ইতিহাস রাজনীতি সত্ত্বেও চেন্নাই দক্ষিণ ভারতে শ্রীলঙ্কার প্রতি আশাবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালে চেন্নাইয়ের মাত্র ৩৩ শতাংশ মানুষ শ্রীলঙ্কার উপর আস্থা রেখেছিলেন। কিন্তু ২০২৪ সালে তা বেড়ে ৬৮ শতাংশে পৌঁছেছে। একই ভাবে, চেন্নাইয়ের উত্তরদাতারা - যাঁরা দুই দেশের সম্পর্ককে ভাল বলে মনে করেছিলেন - ২০২৩ সালে ৩৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৪ সালে ৪৭ শতাংশে পৌঁছেছেন। সর্বোপরি, ৫৫ শতাংশ বলেছেন যে, গত দশ বছরে সম্পর্ক বৃদ্ধি পেয়েছে। ভৌগোলিক ভাবে বলতে গেলে, দক্ষিণের (হায়দরাবাদ, বিজয়ওয়াড়া, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই) উত্তরদাতারা শ্রীলঙ্কার প্রতি আস্থা (৭৬ শতাংশ), দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক (৬৮ শতাংশ) এবং গত দশকে সম্পর্কের (৬০ শতাংশ) দিক থেকে সবচেয়ে বেশি আশাবাদী। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, ভৌগোলিক নৈকট্য, আশা সংযোগ প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত সুবিধা এবং অতিরিক্ত বিমান পথ ভিসা-মুক্ত ব্যবস্থা (যা ২০২৪ সালের শুরু থেকে চালু হয়) মতো জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক বৃদ্ধি এই আশাবাদকে আকার দিচ্ছে।

শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে সাম্প্রতিক আশাবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা অস্থিতিশীলতা বিশেষ করে তামিলনাড়ু হয়ে ভারতে শরণার্থী প্রবাহের সম্ভাবনা হ্রাস করেছে। সামগ্রিক দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, যোগাযোগের জন্য অব্যাহত প্রচেষ্টা এবং ভারতীয় উদ্বেগের প্রতি কলম্বোর সম্মান - বিশেষ করে চিনা জাহাজের উপর স্থগিতাদেশ - এই আশাবাদে অবদান রেখেছে।

চিনে প্রতি উদ্বেগ ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে

তবুও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে চিনের মিথস্ক্রিয়া নিয়ে তরুণরা উদ্বিগ্ন। প্রতি দশজন উত্তরদাতার মধ্যে প্রায় নজন বেজিংয়ের উত্থান নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং এটিকে ভারতের জন্য তাৎক্ষণিক সামরিক হুমকি বলে মনে করেন। চিনের সঙ্গে সীমান্ত সংঘাতকে সবচেয়ে বড় বৈদেশিক নীতি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হয়। ৫৬ শতাংশ উত্তরদাতা বিশ্বাস করেন যে, নিকটবর্তী প্রতিবেশ (ভারত মহাসাগর এবং দক্ষিণ এশিয়া) ভারতের জন্য কৌশলগত ভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল।

তরুণরা আশা করে যে, তাঁদের প্রতিবেশীরা ভারতের আঞ্চলিক নিরাপত্তা লক্ষ্যগুলি, বিশেষ করে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতার ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য হবে।

প্রতিবেশী দেশগুলিতে চিনা কার্যকলাপের প্রতি প্রচণ্ড অবিশ্বাস রয়েছে। হাম্বানটোটা বন্দরের চিনা মালিকানা ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় (৮১ শতাংশ)। এর পরেই রয়েছে ঋণের ফাঁদ এবং মলদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কায় চিনা গুপ্তচর জাহাজ ডুবোজাহাজের নোঙর করা (প্রতিটি ক্ষেত্রেই ৭০ শতাংশ)। ফলে তরুণরা আশা করে যে, তাঁদের প্রতিবেশীরা ভারতের আঞ্চলিক নিরাপত্তা লক্ষ্যগুলি, বিশেষ করে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতার ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য হবে।

এই অঞ্চলে চিনকে মোকাবিলা করার জন্য ভারতের নীতির (৭৫ শতাংশ) সমর্থন করে যুবসমাজ। তাঁরা বিষয়ে একমত যে, সংযোগ এবং উন্নয়ন সহায়তা অর্থাৎ অনুদান ঋণ (প্রতিটি ৮৬ শতাংশ) এবং প্রথম প্রতিক্রিয়াশীল দেশ এইচএডিআর কার্যক্রম (প্রতিটি ৭৫ শতাংশ) ভারতের প্রতিবেশ প্রথম নীতির সবচেয়ে সফল দিকগুলির মধ্যে অন্যতমএটি অর্থনৈতিক সঙ্কটের সময় শ্রীলঙ্কায় ভারতের বহুমুখী সহায়তার প্রতি সমর্থন প্রদর্শন করে। সক্রিয় নীতির এই প্রয়োজনীয়তা বিআরআই সম্পর্কে সন্দেহ এবং ভারতের সংযোগের প্রতি সমর্থন দ্বারাও উদ্দীপিত হয়। উত্তরদাতারা বিশ্বাস করেন যে, বাণিজ্য ও অর্থনীতি (৯০ শতাংশ), প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা (৮৭ শতাংশ), ডিজিটাল ও প্রযুক্তি (৮২ শতাংশ), জ্বালানি (৮০ শতাংশ), জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক (৭৯ শতাংশ), আর্থিক (৭৯ শতাংশ) রাজনৈতিক (৭১ শতাংশ) মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতের সংযোগ পর্যাপ্ত। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে এই ধরনের বেশ কয়েকটি প্রকল্প পাইপলাইনে রয়েছে।

সারবত্তা

পরবর্তী সমীক্ষাগুলি দর্শায় যে, চিনা প্রভাব, তামিল সমস্যা জেলেদের সমস্যা নিয়ে বড় উদ্বেগ থাকলেও শ্রীলঙ্কার জন্য আশাবাদ ব্যাপক ভাবে প্রদর্শিত হচ্ছে। মনে হচ্ছে, কেবল ভূ-রাজনীতি বৈদেশিক নীতি নয়, আসলে চিরাচরিত সভ্যতাগত মিথস্ক্রিয়া, জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক সম্প্রসারণ এই মূল্যায়নকে আকার দিচ্ছে। গণমাধ্যমের খবরও এই ইতিবাচক ধারণা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আস্থা (৫৪-৬৭ শতাংশ), দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক (৪৭-৬২ শতাংশ) এবং গত দশকে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সম্পর্ক (৪৯-৫৬ শতাংশ) সম্পর্কিত প্রশ্নের জন্য উত্তরদাতাদের নজর থেকেছে সংবাদের উপর এবং সে ক্ষেত্রেও আশাবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতিবাচক ধারণা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি এবং শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার নিয়ে সংবাদমাধ্যমের প্রচারণার বিষয়টি উল্লেখ করা যেতে পারে।

এই গতির উপর ভিত্তি করে গড়ে তোলা এবং অস্থির শ্রীলঙ্কার রাজনীতির সঙ্গে স্থিতিশীল সম্পর্ক স্থাপনের জন্য পরিসরটি উপযুক্ত বলে মনে হচ্ছে।

বিদ্যমান উত্তেজনাপূর্ণ অস্থির রাজনীতি সত্ত্বেও, বিশেষ করে ২০১৪ সাল থেকে, সমীক্ষাটিতে ভারতের শ্রীলঙ্কা নীতির প্রতি সামগ্রিক সমর্থন দেখা গিয়েছে। বর্তমানে তরুণরা চান, চিনের মোকাবিলা করার জন্য ভারত তার প্রতিবেশ প্রথম নীতির মাধ্যমে একটি সক্রিয় ভূমিকা পালন করুক। অর্থনৈতিক সঙ্কটের সময় ভারতের ভূমিকার প্রতিও সমর্থন রয়েছে। তাই এই গতির উপর ভিত্তি করে গড়ে তোলা এবং অস্থির শ্রীলঙ্কার রাজনীতির সঙ্গে স্থিতিশীল সম্পর্ক স্থাপনের জন্য পরিসরটি উপযুক্ত বলে মনে হচ্ছে। একেডি-র ক্রমবর্ধমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, ভারতীয় সংবেদনশীলতার প্রতি শ্রদ্ধা এবং তামিল রাজনীতির প্রতি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ধারণাটিকে আরও উন্নত করতে পারে। তবে প্রকল্পগুলি থেকে শ্রীলঙ্কার পিছিয়ে যাওয়া/বাতিল করা, অভিজ্ঞতার অভাব এবং ভারসাম্য বজায় রাখা একই ক্ষতি করতে পারে। ভারসাম্যের পাল্লা কোন দিকে ঝুঁকে পড়ে, তা অবশ্য সময় বলবে।

 


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় সিলন টুডে-তে।


নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত লেখক(দের) ব্যক্তিগত।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.