Published on Sep 20, 2025 Updated 0 Hours ago

ভূ-রাজনীতি যত শক্ত হচ্ছে, ভারতের নরম কৌশল ততই সমৃদ্ধ হচ্ছে এবং স্মৃতি, সহানুভূতি বিনিময়ের মাধ্যমে আঞ্চলিক বন্ধন পুনর্নির্মাণের জন্য প্রভাবশালী কূটনীতির মাধ্যমেই তা হচ্ছে।

বিশ্বাসের বুনন: ভারতের প্রতিবেশে প্রভাবশালী কূটনীতি

ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, ভঙ্গুর বহুপাক্ষিকতা এবং রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বিচ্ছিন্নতার এক যুগে কূটনীতি পরিবর্তহচ্ছে। আনুষ্ঠানিক আলোচনাপ্রক্রিয়া ও কৌশলগত হিসাবনিকাশের গণ্ডি ছাড়িয়ে এখন জন-কেন্দ্রি নরম সম্পৃক্ততার পথ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কূটনৈতিক অনুশীলনের কেন্দ্রে আবেগ যৌথ অন্তর্ভুক্তির অনুভূতিকে জায়গা করে দিয়ে অ্যাফেকটিভ ডিপ্লোমেসি’ বা প্রভাবশালী কূটনীতি রাষ্ট্রগুলির পারস্পরিক সম্পর্ককে নতুন ভাবে সংজ্ঞায়িত করে। যেখানে প্রথাগত কূটনীতি কৌশল, চুক্তি স্বার্থের উপর জোর দেয়, সেখানে অ্যাফেকটিভ ডিপ্লোমেসি আবেগগত সঙ্কেত প্রেরণকে প্রান্তিক নয়, বরং রাষ্ট্রগুলি কী ভাবে কোনও ঘটনা ব্যাখ্যা করে ও তার প্রতিক্রিয়া জানায়,  সেই বিষয়ের গঠনমূলক প্রক্রিয়া হিসেবে কাজ করে। সংঘর্ষ-পরবর্তী প্রতিক্রিয়া থেকে শোক বা সহানুভূতি পর্যন্তআবেগগত যোগাযোগআচরণকে আকার দেয়, বিভাজন কমায়, আস্থার পুনর্সামঞ্জস্য ঘটায় এবং বৈধতা নিয়ে আলোচনার পথ তৈরি করে। ডিজিটাল যুগে এই ধরনের প্রকাশ ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং জনমত, জাতীয় ভাবমূর্তি আঞ্চলিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করে।

যেখানে প্রথাগত কূটনীতি কৌশল, চুক্তি স্বার্থের উপর জোর দেয়, সেখানে অ্যাফেকটিভ ডিপ্লোমেসি আবেগগত সঙ্কেত প্রেরণকে প্রান্তিক নয়, বরং রাষ্ট্রগুলি কী ভাবে কোনও ঘটনা ব্যাখ্যা করে ও তার প্রতিক্রিয়া জানায়, সেই বিষয়র গঠনমূলক প্রক্রিয়া হিসেবে কাজ করে।

একটি স্থপতিদেশ অংশীদার হিসেবেই ভারত এই ক্রমবর্ধমান দৃষ্টান্তের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত। দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী দেশগুলিতে নরম শক্তি কূটনীতিতে সম্পৃক্ত থাকার পর ভারত তার অ্যাক্ট ইস্ট নীতির মাধ্যমে এটিকে ক্রমবর্ধমান ভাবে আবেগপূর্ণ যুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তুলেছে, যা দেশের আঞ্চলিক দৃষ্টিভঙ্গির কেন্দ্রবিন্দুতে মানুষ থেকে মানুষে যোগাযোগকেই সবচেয়ে  বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। অ্যাসোসিয়েশন ফর সাউথ-ইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান), বে অফ বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টোরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন (বিমস্টেক) এবং মেকং-গঙ্গা কোঅপারেশন-এর (এমজিসি) মতো মঞ্চগুলিতে ভারত কেবল সহযোগিতাই নয়, বরং আরও গভীর সংযোগের সন্ধান করে। এটি প্রায়শই সূক্ষ্ম হলেও ক্রমবর্ধমান কৌশলগত আঙ্গিককেই তুলে ধরে। এটি ভারতকে দ্বৈত ভূমিকা পালনের সুযোগ করে দেয়: আবেগপূর্ণ বা প্রভাবশালী কূটনীতি গঠনের পাশাপাশি যে আস্থা, স্মৃতি ও দৃশ্যমানতা এটি গড়ে তুলতে সহায়তা করে, তা থেকে উপকৃত হওয়ার সুযোগও বিদ্যমান

আসিয়ান, বিমস্টেক এবং এমজিসি-তে কার্যকর সম্পর্ক

আসিয়ান আঞ্চলিক সমন্বিতকরণের মূল উপাদান হিসেবে জনগণের সঙ্গে জনগণের সংযোগকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। আসিয়ান সংযোগের মাস্টার প্ল্যান ২০২৫ শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক বোঝাপড়াকে এর মূল লক্ষ্য হিসেবে রূপরেখা দিয়েছে, যা আসিয়ান কারিকুলাম সোর্সবুক (২০১২) এবং আসিয়ান ভার্চুয়াল লার্নিং রিসোর্স সেন্টার-এর (২০১৫) মতো উদ্যোগ দ্বারা সমর্থিত এবং যা আঞ্চলিক সচেতনতা শিক্ষাগত বিনিময়কে উৎসাহ জোগায়। পর্যটনকে চিরাচরিত পথ, কমিউনিটি ইকোট্যুরিজম এবং হোমস্টে শৃঙ্খলের মাধ্যমে অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি সংহতির শক্তি হিসেবে রূপায়িত করা হয়। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত আসিয়ান ফাউন্ডেশন শিল্প, শিক্ষা, মিডিয়া এবং যুব উন্নয়ন জুড়ে উদ্যোগের নেতৃত্ব দিয়ে চলেছে। সাম্প্রতিক শীর্ষ সম্মেলনগুলিতে ক্রমবর্ধমান ভাবে এই ব্যস্ততাগুলিকে সাইডলাইনে জায়গা করে দেওয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আসিয়ান ইউথ ডায়লগ - প্রথমটি ২০২২ সালে কম্বোডিয়ায় এবং দ্বিতীয়টি ২০২৩ সালে জাকার্তায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল - আসিয়ান নীতি নিয়ে বিতর্ক করার জন্য এবং আসিয়ান সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করার জন্য কয়েক ডজন তরুণ নেতাকে আহ্বান জানিয়েছিলআসিয়ান ইউথ ফাউন্ডেশন-সহ নাগরিক সমাজের শৃঙ্খলগুলি আন্তঃসাংস্কৃতিক সম্পর্ক ব্যবহারিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য আসিয়ান ইউথ এক্সচেঞ্জ-এর মতো মঞ্চ পরিচালনা করে। এই উদ্যোগগুলি আবেগগত অনুরণন, অভিন্ন সাধারণ পরিচয় এবং সহযোগিতার উপর ভিত্তি করে একটি আঞ্চলিক চেতনা গড়ে তোলে। এই গতিতে অবদান রেখে ভারত আসিয়ান-এর মধ্যে তার সাংস্কৃতিক উপস্থিতি বৃদ্ধি করেছে এবং ২০২৪ সালের ২৯ নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত নয়াদিল্লিতে ২০২৪ আসিয়ান-ইন্ডিয়া মিউজিক ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করেছিল, যা সঙ্গীত ও অভিন্ন সাধারণ শিল্পের মাধ্যমে ঐক্যকেই দ্যাপন করে। ভারত আসিয়ান ডিজিটাল মাস্টারপ্ল্যান ২০২৫-কে সমর্থন করেছে এবং কম্বোডিয়া, লাওস, মায়ানমার ভিয়েতনাম বা সিএলএমভি দেশগুলিতে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনে সহায়তা করেছে।

এই গতিতে অবদান রেখে ভারত আসিয়ান-এর মধ্যে তার সাংস্কৃতিক উপস্থিতি বৃদ্ধি করেছে এবং ২০২৪ সালের ২৯ নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত নয়াদিল্লিতে ২০২৪ আসিয়ান-ইন্ডিয়া মিউজিক ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করেছিল, যা সঙ্গীত ও অভিন্ন সাধারণ শিল্পের মাধ্যমে ঐক্যকেই দ্যাপন করে।

সর্বোপরি, বিমস্টেক জনগণের সঙ্গে জনগণের সংযোগকে একটি মৌলিক দিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ২০১৮ সালের কাঠমান্ডু ঘোষণাপত্রে থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, শিক্ষাবিদ, গণমাধ্যম এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে শক্তিশালী সংযোগকে সমর্থন করা হয়েছে। বৌদ্ধ তীর্থযাত্রা সার্কিট, সাংস্কৃতিক উৎসব পর্যটন সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা, যেমন উন্নত নিরাপত্তা, উন্নত সংযোগ এবং সুনির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক ভ্রমণ পথের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিমস্টেকের অধীনে ট্র্যাক-২ কূটনীতি আরও সুগঠিত হয়েছে, বিশেষ করে বিমস্টেক নেটওয়ার্ক অফ পলিসি থিঙ্ক ট্যাঙ্কস-এর (বিএনপিটিটি) নিয়মিত পরিচালনার মাধ্যমে। এই বৈঠকের সপ্তম সংস্করণ ২০২৫ সালের মে মাসে কাঠমান্ডুতে আয়োজিত হয়েছিল এবং পর্যটন, সংস্কৃতি জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগ’-এর উপর আলোকপাত করা হয়েছিলএই আদান-প্রদানগুলিকে আঞ্চলিক শান্তি ও সমৃদ্ধির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে জায়গা করে দেওয়া হয়েছে। এই জন-প্রথম পদ্ধতিকে আরও জোরদার করে ভারত ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আন্তঃ-বিমস্টেক বিনিময়ের সেতুহিসেবে প্রথম বিমস্টেক যুব শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করে, যেখানে মন্ত্রী, সাংসদ (এমপি), শিল্পী এবং উদ্যোক্তা-সহ ৭০ জনেরও বেশি অংশগ্রহণ করেছিলেন। এই উদ্যোগগুলি কূটনৈতিক সম্পদ হিসেবে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অভিজ্ঞতার ক্রমবর্ধমান প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতির ইঙ্গিত দেয়। ভারত বোধি (যা বার্ষিক ৩০০ জন যুবককে প্রশিক্ষণ দেয়), সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া বিনিময় সম্প্রসারণ করে এবং নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষাগত সম্পর্ক আরও গভীর করে। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মায়ানমারে সময়োপযোগী ত্রাণ পাঠানো এবং বিমস্টেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রের প্রস্তাবের মাধ্যমে দেশটি মানবিক সংহতি ও অভিন্ন সাধারণ আশার উপরও জোর দিয়েছে।

ভারত এই নীতিমালা বজায় রাখা এবং তার সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, মেকং অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জন্য বার্ষিক ৫০টি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনস (আইসিসিআর) সাংস্কৃতিক বৃত্তি এবং ১০টি আয়ুষ ফেলোশিপ প্রদান করেছে। এর পাশাপাশি নিয়মিত জনস্বাস্থ্য, স্থিতিশীল কৃষিকাজ এবং জল ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কর্মশালাআয়োজন করেছে।

এমজিসি সভ্যতাগত বন্ধন সাংস্কৃতিক সম্প্রীতির উপর নির্ভরশীল, যা বহু-বার্ষিক কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে জন-কেন্দ্রিক উদ্যোগে পরিচালিত হয়। ২০১৯-২২  পরিকল্পনায় ঐতিহ্য-ভিত্তিক বিনিময়ের কল্পনা করা হয়েছিল — সিম রিপের এমজিসি এশিয়ান ট্র্যাডিশনাল টেক্সটাইল জাদুঘরে শিল্প মেলা, পুষ্কর হর্নবিলের মতো উৎসবে পারস্পরিক অংশগ্রহণ এবং আঞ্চলিক মিডিয়া সহযোগিতা — যার মাধ্যমে অভিন্ন সাধারণ ঐতিহ্য ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছিল। সিএলএমভি দেশগুলিতে কুইক ইমপ্যাক্ট প্রজেক্ট-এর (কিউআইপি) মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ের সম্পৃক্ততাও এগিয়ে নেওয়া হয়েছে২০১৫ সাল থেকে ৩৮টি প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে, যার মূল্য প্রায় ১.৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ধারাবাহিক মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের মাধ্যমে - ২০১৯ সালে দশ এবং ২০২১ সালে একাদশ এমজিসি পর্যটন, সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার মতো জন-কেন্দ্রিক ক্ষেত্রগুলিকে আঞ্চলিক কূটনীতিতে সমন্বিত করার চেষ্টা করেছিল। এর সাহায্যে সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পৃক্ততাকে আরও বাস্তব করে তোলা সম্ভব হয় এবং আস্থা, অভিন্ন সাধারণ স্মৃতি দৈনন্দিন অভিজ্ঞতায় সহযোগিতার ভিত্তি তৈরি করে। ভারত এই নীতিমালা বজায় রাখা এবং তার সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, মেকং অঞ্চলের  শিক্ষার্থীদের জন্য বার্ষিক ৫০টি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনস (আইসিসিআর) সাংস্কৃতিক বৃত্তি এবং ১০টি আয়ুষ ফেলোশিপ প্রদান করেছে। এর পাশাপাশি নিয়মিত জনস্বাস্থ্য, স্থিতিশীল কৃষিকাজ এবং জল ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কর্মশালাআয়োজন করেছে। উপরন্তু, এটি এমজিসিকে কেবল একটি নীতি মঞ্চ হিসাবেনয় বরং বাণিজ্য, সাংস্কৃতিক এবং মানুষে মানুষে বিনিময়ের দীর্ঘ সমৃদ্ধ ইতিহাসের উদ্‌যাপনহিসাবে রূপায়িত করে চলেছে। এই বিনিময়গুলি অভিন্ন সাধারণ ঐতিহ্যে ভারতের বিনিয়োগকে একটি আবেগগত সম্পদ কূটনৈতিক কৌশল হিসেবে প্রদর্শন করে এবং সভ্যতার সম্পর্কের রক্ষক একটি বিশ্বস্ত প্রতিবেশী হিসাবে ভারতের পরিচয়কে আরও শক্ত করেছে।

চ্যালেঞ্জ পারস্পরিক শিক্ষা

এই প্রচেষ্টা সত্ত্বেও জনগণের সঙ্গে জনগণের কূটনীতিকে অভ্রান্ত এবং কার্যকর ভাবে অনুরণিত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ব্যবধান রয়ে গিয়েছেআসিয়ান স্তরে বেশ কয়েকটি উদ্যোগের পর্যাপ্ত বাস্তবায়নের অভাব রয়েছে এবং এর দৃশ্যমানতা কম। জন-কেন্দ্রিক’ কর্মসূচি এখনও অবাধ মূলত রাজনৈতিক ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল, যার ফলে অসম নাগরিক সম্পৃক্ততা দেখা দেয়, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে। একাধিক সংযোগ কৌশল থাকা সত্ত্বেও এ ক্ষেত্রে জনসচেতনতা সীমিত। অনেক দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশ আসিয়ানের প্রচেষ্টার প্রতি অমনোযোগী এবং উচ্চ-স্তরের মঞ্চগুলি খুব কমই নিয়মিত উদ্বেগের সমাধান করে। বিমস্টেক তার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। কাঠমান্ডুতে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নির্ধারণ করা সত্ত্বেও অগ্রগতি ধীর। ভিসা সমস্যা অপ্রতুল অবকাঠামো ভ্রমণ এবং শিক্ষার্থীদের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে, যা সাংস্কৃতিক বিনিময় ঐতিহ্য ভ্রমণকে প্রভাবিত করে। একই ভাবে, এমজিসি-র উদ্দেশ্যগুলিও মূলত প্রতীকী থেকেছেকোভিড-১৯-এর কারণে সিম রিপে প্রস্তাবিত ২০তম বার্ষিকী উদ্যাপন (২০২০) স্থগিত করা হয়েছিল এবং এর গতিবেগের বেশির ভাগই মঞ্চ জুড়েকূটনীতির অভিজাত পক্ষপাতের মধ্যে একটি ধারাবাহিক ঘাটতি রয়েছে। ট্র্যাক ১ ও ২ প্রক্রিয়া নীতিনির্ধারক ও বিশ্লেষকদের সম্পৃক্ত করলেও প্রায়শই বৃহত্তর জনসাধারণের দাবিকে আমল দেয়নি। নাগরিকরা শুধুই মহাসড়ক উৎসব দেখেন, কিন্তু অভিন্ন সাধারণ গল্প বলা বা বিশ্বাস তৈরির প্রচেষ্টার স্বাদ নেওয়ার সুযোগ পান না। এই ব্যবধানগুলি তুলে ধরে যে কূটনীতিকে অবশ্যই জীবিত অভিজ্ঞতাকে কেন্দ্র করে গড়ে তুলতে হবে, যেখানে আঞ্চলিক সহযোগিতা কেবল আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে নয়, সহানুভূতি, অভিন্ন সাধারণ স্মৃতি, মূল্যবোধের হাত ধরে বৃদ্ধি পাবে

তা সত্ত্বেও প্রতিটি কাঠামো মূল্যবান শিক্ষা প্রদান করে। আসিয়ানের মূল শক্তি তার প্রাতিষ্ঠানিক গভীরতার মধ্যে নিহিত। সচিবালয়, সেক্টরাল সংস্থা এবং আসিয়ান ফাউন্ডেশন জনমুখী উদ্যোগের ধারাবাহিকতা সমন্বয় প্রদান করে। আসিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলের ঋণ স্থানান্তর এবং মান নিশ্চিতকরণ ব্যবস্থার মতো কর্মসূচি হাজার হাজার শিক্ষার্থী বিনিময়কে সমর্থন করে এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলিতে শিক্ষার মান উন্নত করে। ২০১৪ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে আসিয়ান ফাউন্ডেশন একাই ২৫টি সম্প্রদায়-কেন্দ্রিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে - ৭৫,০০০-এরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছনো – এবং তৃণমূল পর্যায়ের উদ্যোগের প্রতি তার স্থিতিশীল প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে। এই প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো বিমস্টেক এবং এমজিসি-র জন্য একটি মূল্যবান মডেল হিসেবে কাজ করতে পারে। কারণ উভয়েরই জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততার জন্য দীর্ঘমেয়াদি মঞ্চের অভাব রয়েছে। বিমস্টেক উল্লেখযোগ্য উদ্ভাবনী অনুশীলনও প্রদান করে। ২০২৫ সালের যুব শীর্ষ সম্মেলন - এবং বিএনপিটিটি-র অধীনে কাঠামোগত ট্র্যাক ২ ডায়লগের মতো যুব কূটনীতির দরুন এর পরীক্ষা-নিরীক্ষা অংশগ্রহণমূলক কূটনীতির দিকে প্রাথমিক অথচ অপরিহার্য পরিবর্তনকে প্রতিফলিত করে। তরুণ নেতা অনুশীলনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কথোপকথনের এই প্রসারণ এমন একটি বিষয়, যা তার পরিপক্বতা সত্ত্বেও আসিয়ান নিয়মিত নাগরিক সমাজের মঞ্চের মাধ্যমে আরও সক্রিয় ভাবে সংহত হতে পারে। বিমস্টেক-এর আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক কাঠামো তৈরির প্রচেষ্টা থেকেও এমজিসি ইঙ্গিত নিতে পারে, যা আরও বেশি কণ্ঠস্বর শোনার সুযোগ করে দেয় এবং যা দ্রুত, স্থানীয় এবং বাস্তব সহায়তা প্রদানে এর শক্তিকে পরিপূরণ করবে। ভারতের কিউআইপি কর্মক্ষেত্রে সংবেদনশীল কূটনীতির একটি স্পষ্ট উদাহরণ হিসেবে কাজ করে। এগুলি সরাসরি সম্প্রদায়ের চাহিদা পূরণ করে এবং স্থানীয় পর্যায়ে আস্থা তৈরিতে সহায়তা করে। স্থানীয় অবকাঠামোর জন্য ঋণের পাশাপাশি এই ছোট আকারের উদ্যোগগুলি কূটনীতিকে আরও কার্যকর করে তোলে। আসিয়ান এবং বিমস্টেক স্থানীয় সাংস্কৃতিক অনুদান বা সামাজিক প্রকল্পগুলিতে অর্থায়ন থেকে অনুপ্রেরণা নিতে পারে, যা দৈনন্দিন জীবনে আঞ্চলিক সহযোগিতার পথ করে দেয়।

বিমস্টেক আসিয়ানের প্রচার কৌশল বৃত্তিমূলক মডেলগুলিকে অভিযোজিত করতে পারে; আসিয়ান এমজিসি-র ঐতিহ্য-ভিত্তিক উদ্যোগগুলিকে তার যুব ও পর্যটন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে

আসিয়ানের ‘ওয়ান কমিউনিটি’ পরিচয়, বিমস্টেকের বৌদ্ধ ঐতিহ্য সার্কিট এবং এমজিসি-অভিন্ন সাধারণ তীর্থযাত্রা পথের মধ্যে সাংস্কৃতিক মানসিক সংযোগ বিদ্যমান, যার সব কটিই সাধারণ ইতিহাসের ভিত্তিতে নিহিত। প্রতিটিই একে অপরের থেকে অনুপ্রেরণা নিতে পারে। বিমস্টেক আসিয়ানের প্রচার কৌশল বৃত্তিমূলক মডেলগুলিকে অভিযোজিত করতে পারে; আসিয়ান এমজিসি-র ঐতিহ্য-ভিত্তিক উদ্যোগগুলিকে তার যুব ও পর্যটন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, সবচেয়ে প্রভাবশালী মানুষ থেকে মানুষে যোগাযোগের উদ্যোগগুলি হল সেগুলি, যা সরাসরি দৈনন্দিন জীবনকে স্পর্শ করে এবং রূপান্তরিত করে। একে অপরের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো এবং তৃণমূল স্তরে পৌঁছে তা থেকে শেখার মাধ্যমে এই গোষ্ঠীগুলি এমন একটি কূটনীতির কাছাকাছি যেতে পারে, যা কেবল আলোচনার মাধ্যমে নয়, সংযোগের মাধ্যমে নিহিত বলে  মনে হয়।

নরম শক্তি থেকে অভিন্ন সাধারণ স্বার্থ

ই পদ্ধতিকে স্থায়ী করার জন্য ভারতকে লেনদেনের কূটনীতির বাইরেও শক্তিশালী অর্থাৎ মানুষের মধ্যকার শৃঙ্খলে বিনিয়োগের মাধ্যমে এই আবেগপূর্ণ সম্পর্কগুলিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে বঙ্গোপসাগর জুড়ে স্থানীয় মূল্যশৃঙ্খলকে লালন করা, যাতে দৈনন্দিন অর্থনৈতিক অনুশীলন তৃণমূল পর্যায়ে সহযোগিতা অন্তর্ভুক্ত করা যায়। এর জন্য স্থিতিশীল, চাহিদা-চালিত এবং জন-কেন্দ্রিক অবকাঠামো (যেমন গ্রামীণ রাস্তা, স্কুল এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র) প্রয়োজন, যা আস্থা তৈরি করে, সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততাকে আরও গভীর করে এবং বিমস্টেক, এমজিসি এবং আসিয়ান জুড়ে উদীয়মান আন্তঃসীমান্ত করিডোরগুলিতে আঞ্চলিক কূটনীতির আবেগপূর্ণ মাত্রাগুলিকে শক্তিশালী করে। ভারতকে অভিন্ন সাধারণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ডিজিটাল অবকাঠামো এবং পরিবহণ  করিডোরকে কেন্দ্র করে আসিয়ান-বিমস্টেক সমন্বিতকরণকে আরও বেশি করে কাজে লাগাতে হবে, যাতে আঞ্চলিক সম্পৃক্ততাকে আরও দৃশ্যমান করা যায় এবং যাতে সাধারণ নাগরিকরা নিজেদেরকে নেহাতই দর্শক হিসেবে নয়, বরং সমন্বিতকরণ প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণকারী হিসেবে মনে করতে পারেন। ভারত বর্তমানে এমন প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, যার মাধ্যমে ভারত-মায়ানমার-তাইল্যান্ড মহাসড়কটি জরুরি ভিত্তিতে বিকশিত হচ্ছে এবং এটি প্রাচীন সভ্যতার পথগুলিকে আঁকড়ে ধরে। তবে এই উদ্যোগকে কেবল কৌশলগত নিদর্শন হিসেবে নয়, বরং প্রতিবেশ জুড়ে আবেগগত, সাংস্কৃতিক সম্প্রদায়ের পুনঃসংযোগের মাধ্যম হিসেবে দেখা উচিত। এই সব কিছু সেই কূটনীতির লক্ষ্যেই এগিয়ে যাবে, যা অভিন্ন সাধারণ ইতিহাস এবং জীবন্ত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে অনুরণিত হবে।

 


রাজেশ্বরী দাশগুপ্ত ওআরএফ-এর রিসার্চ ইন্টার্ন। তিনি বর্তমানে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপর গবেষণারত।

শ্রীপর্ণা ব্যানার্জি স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।

 


নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত লেখক(দের) ব্যক্তিগত।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.