-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
ভারতীয় রফতানি পণ্যের উপর মার্কিন শুল্ক বৃদ্ধি ভারতের বাণিজ্য পণ্যের কাঠামোগত দুর্বলতাগুলিকে প্রকাশ করে দিয়েছে এবং বৈচিত্র্যকরণের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে,যেখানে পূর্ব এশিয়ার অভিজ্ঞতা শিক্ষামূলক মডেল প্রদান করে।
সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক নির্বাচিত ভারতীয় রফতানি পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত উচ্চ শুল্ক আরোপের ফলে ভারত-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত তৈরি হয়েছে। ২০২৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রফতানির পরিমাণ ছিল ৮৭.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নয়াদিল্লির বৃহত্তম বাণিজ্য গন্তব্যে পরিণত করে। এর মধ্যে প্রায় ৪৮-৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য এখন উচ্চতর শুল্কের সরাসরি সংস্পর্শে আসছে। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রগুলি হল শ্রম-নিবিড় ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দু। যেমন টেক্সটাইল, রত্ন ও গহনা, চামড়া এবং জুতো।
সংরক্ষণবাদের এই নতুন প্রবাহ যা দর্শায় তা হল, ব্যক্তিগত শুল্কের ধাক্কা মোকাবিলা করার জন্য কেবল স্বল্পমেয়াদি কৌশলের প্রয়োজনীয়তা নয়, বরং ভারতের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত সংস্কারের আশু প্রয়োজনীয়তা। এই দ্বিধার মধ্যে সুরক্ষাবাদের পুনরাবৃত্তিমূলক বিষয়গুলির বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক সাফল্য থেকে শিক্ষা নিলে ভারত অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে পথ খুঁজে নিতে সাহায্য করতে পারে। ১৯৬০-এর দশকের শেষের দিকে শুরু হওয়া পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতির সাফল্যের আখ্যানগুলি একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। প্রধান আঞ্চলিক অর্থনীতি - জাপান, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ান এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তিনটি আকর্ষক অর্থনীতি - ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এবং তাইল্যান্ড - সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রবর্তক এবং পরবর্তী সময়ে রফতানি বৃদ্ধির প্রবর্তক। এক সময় নিউলি ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজড ইকোনমিজ বা নতুন শিল্পায়িত অর্থনীতি (এনআইই) ধীরে ধীরে মানব ও ভৌত মূলধনকে কাজে লাগায় এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি শক্তিশালী পথ তৈরি করে।
উড়ন্ত হাঁসের আখ্যান
এনআইই দ্বৈত পদ্ধতি অনুসরণ করেছিল। তা হল অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা ও শিল্পের অভ্যন্তরীণ শক্তিশালীকরণ এবং ব্যাপক রফতানি প্রচারের মাধ্যমে বিশ্বের অন্যান্য অংশের সঙ্গে বাহ্যিক অর্থনৈতিক সমন্বিতকরণ। পশ্চিমিদের, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংরক্ষণবাদী পদক্ষেপগুলি তুলনামূলক সুবিধার সারণিতে অর্থনীতিগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এই অঞ্চলের আকর্ষণীয় কৌশলটি ‘ফ্লায়িং গিজ প্যারাডাইম’ (এফজিপি) কাঠামোর অধীনে সবচেয়ে ভাল ভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। কাঠামোটি প্রাথমিক ভাবে জাপানের নেতৃত্বে এবং পরে অন্যান্য উদীয়মান অর্থনীতির দ্বারা অনুসৃত শ্রেণিবদ্ধ শিল্প উন্নয়নের ঘটনাকে দর্শায়। এটি তিনটি মডেলের রূপরেখা প্রদান করে, যা দেখায় যে, অর্থনীতিগুলি কী ভাবে অনুকরণের পথ থেকে সরে এসে নেতৃত্বের দিকে অগ্রসর হয়। চূড়ান্ত পর্যায়ে শিল্পায়ন এবং ব্যাপক রফতানি ধাক্কার মাধ্যমে একটি অর্থনীতি ‘লিড গুজ’-এর (পথ প্রদর্শকের) ভূমিকা গ্রহণ করে।
সংরক্ষণবাদের এই নতুন প্রবাহ যা দর্শায় তা হল, ব্যক্তিগত শুল্কের ধাক্কা মোকাবিলা করার জন্য কেবল স্বল্পমেয়াদি কৌশলের প্রয়োজনীয়তা নয়, বরং ভারতের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত সংস্কারের আশু প্রয়োজনীয়তা।
প্রথম মডেলটি আমদানি থেকে রফতানি-নেতৃত্বাধীন অর্থনীতিতে রূপান্তরকে ব্যাখ্যা করে,যা পূর্ব এশিয়ার সমস্ত অর্থনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রাথমিক আমদানি প্রযুক্তি ও মূলধনী পণ্যের স্থানান্তরকে সহজতর করেছিল, যা দীর্ঘমেয়াদে রফতানি-নেতৃত্বাধীন উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করেছিল। সারণি ১-এ এনআইই-এর উৎপাদনে বিশ্ব রফতানির অংশ বৃদ্ধির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এবং দ্বিতীয় স্তরের এনআইইগুলি ধীরে ধীরে গ্যাং অফ ফোর-এর সমকক্ষ হয়ে উঠেছে। দ্বিতীয় মডেলটি দক্ষিণ কোরিয়ার চেবোল কৌশলে স্পষ্ট, যেখানে রাষ্ট্র স্যামসাং, হুন্ডাই, এলজি এবং ডেউ-এর মতো বৃহৎ পারিবারিক মালিকানাধীন সংস্থাগুলির সঙ্গে অংশীদারিত্ব করেছিল। এই সংস্থাগুলিকে লক্ষ্যনির্দিষ্ট নীতির মাধ্যমে উচ্চ মূল্যের উৎপাদনের দিকে পরিচালিত করা হয়েছিল। এই পরিবর্তনটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-আরোপিত স্বেচ্ছামূলক রফতানি নিষেধাজ্ঞা (ভিইআর) দ্বারা শুরু হয়েছিল, যেখানে একটি দেশ স্বেচ্ছায় (পরোক্ষ চাপের অধীনে) অন্য দেশে রফতানি করা পণ্যের পরিমাণ সীমিত করতে সম্মত হয়। চেবোল কৌশলটি ছিল এই ধরনের চাপের প্রতি একটি স্থিতিশীল প্রতিক্রিয়া, যা দক্ষিণ কোরিয়ার রফতানি সম্ভারকে পুনর্গঠন করেছিল - নিম্ন-মূল্যের পণ্য থেকে ইস্পাত, ইলেকট্রনিক্স ও তথ্য-প্রক্রিয়াকরণ মেশিনের মতো উচ্চ-মূল্যের উৎপাদনে।
সারণি ১: বিশ্ব উৎপাদন রফতানিতে অর্থনীতির অংশ
|
জোট অর্থনীতি |
১৯৬৫ |
১৯৮০ |
১৯৯০ |
|
গ্যাং অফ ফোর (রিপাবলিক অফ কোরিয়া, তাইওয়ান, হংকং, সিঙ্গাপুর) |
১.৫% |
৫.৩% |
৭.৯% |
|
দ্বিতীয় স্তরের এনআইই (মালয়েশিয়া, তাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া) |
অগ্রাহ্য |
০.৪% |
১.৫% |
১৯৮০-এর দশকের গোড়ার দিকে জাপানও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিইআর-এর চাপের সম্মুখীন হয়েছিল, যার ফলে প্রতি বছর তাদের গাড়ি রফতানি ১.৬৮ মিলিয়ন ইউনিটে সীমাবদ্ধ ছিল। তবে জাপানি গাড়ি নির্মাতারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেই অ্যাসেম্বলি প্ল্যান্ট স্থাপন করে সাড়া ফেলে দেয়। ১৯৮২ সালে হন্ডা ওহাইওর মেরিসভিলে, ১৯৮৩ সালে টেনেসির স্মির্নাতে নিসান এবং ১৯৮৮ সালে কেন্টাকির জর্জটাউনে টয়োটা গাড়ি উৎপাদন শুরু করে। এই বিনিয়োগগুলি কেবল মার্কিন বাজারে প্রবেশাধিকার সংরক্ষণই করেনি, বরং হাজার হাজার আমেরিকান কর্মসংস্থানও তৈরি করেছে, যার ফলে জাপানি সংস্থাগুলি মার্কিন উৎপাদন বাস্তুতন্ত্রের সঙ্গে আরও গভীর ভাবে সমন্বিত হয়েছে। এফজিপি-র দ্বিতীয় মডেলটি এ ভাবে উৎপাদন বর্ণালির উচ্চ-মূল্যের প্রান্তে থাকা পণ্য উৎপাদনে প্রযুক্তির প্রভাবকেই তুলে ধরে।
তৃতীয় মডেলটি শ্রমের একটি শ্রেণিবদ্ধ আঞ্চলিক বিভাজনের উপর ভিত্তি করে তৈরি, যেখানে শ্রম-নিবিড় কার্যকলাপগুলি নেতৃত্বাধীন অর্থনীতি থেকে তার প্রতিবেশীদের দিকে স্থানান্তরিত হয়। এই প্রক্রিয়াটি নেতৃত্বাধীন অর্থনীতি থেকে স্থানান্তর এবং অনুসারী অর্থনীতি দ্বারা অনুসৃত সক্রিয় শিল্পায়ন কৌশল উভয়ের দ্বারাই গঠিত হয়। অর্ধপরিবাহী শিল্প এটি স্পষ্ট ভাবে চিত্রিত করে। ১৯৮০-এর দশকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্ধপরিবাহী উপাদান ডায়নামিক র্যান্ডম অ্যাক্সেস মেমোরি (ডিআরএএম) তৈরিতে জাপানের আধিপত্য মার্কিন চাপে হ্রাস পায়, যা অন্যদের উত্থানের জন্য জায়গা তৈরি করে দেয়। কোরিয়া ডিআরএএম-এ জাপানকে ছাড়িয়ে যায়, তাইওয়ান ফাউন্ড্রি মডেলের পথিকৃৎ হয়ে ওঠে এবং সংস্থাগুলি চিপ তৈরিতে বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠে ও নকশা তৈরির কাজ অন্যান্য সংস্থার উপর ছেড়ে দেয়। এই উদ্ভাবন বিশ্বব্যাপী অর্ধপরিবাহী উৎপাদন শৃঙ্খলের পুনর্গঠন করে এবং বিশ্বব্যাপী চিপ তৈরির কেন্দ্রীয় কেন্দ্র হিসেবে তাইওয়ান নিজের জায়গা পোক্ত করে।
যে হাঁস কখনও ওড়েনি
পূর্ব এশিয়ার বিপরীতে লাতিন আমেরিকা কখনও তার রফতানিতে স্থিতিশীল কাঠামোগত পরিবর্তন অর্জন করতে পারেনি। এই অঞ্চলের বেশিরভাগ অংশই সম্পদ-ভিত্তিক এবং নিম্ন-প্রযুক্তির পণ্যের সঙ্গে আবদ্ধ ছিল এবং উচ্চ-মূল্যের খাতে কেবলমাত্র সীমিত পরিবহনই ছিল। নর্থ আমেরিকা ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এনএএফটিএ) অনুসরণ করে মেক্সিকোর ইলেকট্রনিক্স ও অটোমোবাইলের উত্থান মূলত সমাবেশ-চালিত ছিল এবং সেখানে স্থানীয় মূল্য সংযোজন খুব কম ছিল ও অন্য দিকে ব্রাজিল মাঝারি-প্রযুক্তির অলিন্দেই আটকেছিল। এর ফলে এই অঞ্চলটি ইস্পাত ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রফতানির উপর শুল্কের মতো পুনরাবৃত্ত মার্কিন বাণিজ্য বাধার সম্মুখীন হয়েছিল। বিশ্বব্যাপী পণ্যের দামের মন্দা, যেমন ১৯৮০-এর দশকে লাতিন আমেরিকার ঋণ সঙ্কট এবং ২০১৪-১৬ সালের মন্দার সময় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। সংস্কারের অভাবে লাতিন আমেরিকা দুর্বল হয়ে পড়ে, যা উচ্চ-মূল্যের রফতানির পথে হাঁটতে ব্যর্থ অর্থনীতির জন্য ঝুঁকিকেই দর্শায়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংরক্ষণবাদী পদক্ষেপগুলি তুলনামূলক সুবিধার সারণিতে অর্থনীতিগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
যে ভাবে পূর্ব এশিয়া তুলনামূলক সুবিধার সিঁড়ি বেয়ে এগিয়ে গিয়েছে, তেমনটা সক্রিয়া না থাকলেও লাতিন আমেরিকা দীর্ঘমেয়াদি আমদানি প্রতিস্থাপন শিল্পায়ন (আইএসআই) অনুসরণ করেছিল। আইএসআই দেশীয় শিল্পকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে কাজ করলেও এটি শেষ পর্যন্ত এই অঞ্চলের রফতানিমুখী উৎপাদনের দিকে উত্তরণের ক্ষমতাকে সীমিত করে তুলেছিল। শিল্প উন্নয়নের ধারাবাহিক বহির্মুখী ধরনকে সমন্বিত করার পরিবর্তে, লাতিন আমেরিকার অর্থনীতিগুলি অভ্যন্তরমুখী বাণিজ্য নীতি বজায় রেখেছিল, যা বিদ্যমান কাঠামোগত অনমনীয়তাগুলিকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছিল। ফলস্বরূপ, অঞ্চলটি উৎপাদনের ক্ষেত্রে ‘ফ্লায়িং গিজ’ ধারণাকে সমন্বিত করতে ব্যর্থ থেকেছে এবং ধীরে ধীরে এক দেশ থেকে অন্য দেশে চালিত হয়েছে।
সোনালি বিহঙ্গের পাঠ
অলৌকিক অর্থনীতির অভিজ্ঞতা ওয়াশিংটনের সাম্প্রতিক সংরক্ষণবাদী বাণিজ্য ব্যবস্থার প্রতি ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিকে নির্দেশ করতে পারে। ভারতের বর্তমান রফতানি পণ্যের ধরনকে বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে পূর্ব এশিয়ার রফতানি পণ্যের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় যে, তা ভারতের বর্তমান পথের সীমাবদ্ধতা এবং শিল্প সংস্কারের একই রকমের পথে হাঁটলে সেই সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে। কাঠামোগত পরিবর্তনের ধরনগুলি ট্র্যাক করার জন্য ভারতের রফতানিকে চারটি বিভাগে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে: সম্পদ-ভিত্তিক, নিম্ন-প্রযুক্তি, মাঝারি-প্রযুক্তি এবং উচ্চ-প্রযুক্তি। এটি লাল (২০০০) দ্বারা নির্মিত কাঠামোর অধীনে - যা গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) তীব্রতা, উৎপাদন জটিলতা, মূলধন তীব্রতা ও দক্ষতার প্রয়োজনীয়তার অন্তর্নিহিত পরামিতির উপর ভিত্তি করে পণ্যগুলিকে শ্রেণিবদ্ধ করে।
চিত্র ১: পূর্ব এশীয় অর্থনীতিগুলির রফতানি গঠন (১৯৮৬-১৯৯৮)

সূত্র: ওয়েইস, জে. (২০০৫)
চিত্র ১ এবং ২-এর মধ্যে বৈসাদৃশ্য ভারত এবং এনআইই-এর মধ্যে রফতানি বৈচিত্র্যের পার্থক্যকেই দর্শায়। পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতিগুলি সম্পদ-ভিত্তিক এবং নিম্ন-প্রযুক্তি রফতানি থেকে উচ্চ-প্রযুক্তি রফতানির অভিমুখে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। ভারত আরও জটিল চিত্র প্রদর্শন করে। উচ্চ-প্রযুক্তি রফতানির অংশ বৃদ্ধি পেলেও নিম্ন-প্রযুক্তি রফতানি এখনও একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সংরক্ষণ করে। একই ভাবে সম্পদ-ভিত্তিক রফতানি উল্লেখযোগ্য থেকেছে এবং মাঝারি-প্রযুক্তি রফতানি মূলত স্থিতিশীল রয়েছে। নিম্ন-প্রান্তের বিভাগগুলির এই ধরনের স্থায়িত্ব ভারতের রফতানির সম্ভারের কাঠামোগত দ্বৈততাকে প্রতিফলিত করে, যেখানে সুরক্ষাবাদী ব্যবস্থাগুলি সামগ্রিক বাণিজ্যের তুলনায় আধিপত্য বিস্তারকারী অংশগুলিতে কেন্দ্রীভূত।
চিত্র ২: ভারতের রফতানি গঠন (২০১৭-২০২৪)

সূত্র: ইন্ডিয়া ট্রেড পোর্টাল-এর তথ্য ব্যবহার করে লেখকদের দ্বারা সঙ্কলিত
সংস্কারের মাধ্যমে প্রতিরোধ গড়ে তোলা
ভারতের রফতানি খাত পুনর্গঠনের বৃহত্তর উদ্দেশ্য হল প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হিসেবে উৎপাদনের ভূমিকা জোরদার করা। প্রাথমিক পণ্যের বিপরীতে উৎপাদন ইতিবাচক বাহ্যিক প্রভাব তৈরি করে - প্রযুক্তির বিস্তার ও দক্ষতা গঠন থেকে শুরু করে শৃঙ্খল সংক্রান্ত প্রভাব পর্যন্ত - যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলকতাকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। এটি গতিশীল মাত্রার অর্থনীতি থেকেও উপকৃত হয়, যা সংস্কারের একটি সদৃশ চক্র তৈরি করে। অর্থাৎ একটি দেশ যত বেশি উৎপাদন করে, খরচ তত কম হয় এবং গুণমান তত বেশি হয়। এটি এই ব্যাখ্যাও করে যে, কেন উচ্চ রফতানি ও জিডিপি-র অনুপাতের অর্থনীতি - যেমন ইস্ট এশিয়ান টাইগারস - একটি স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামোর মধ্যে দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল। সুতরাং, ভারতের জন্য তুলনামূলক সুবিধার সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠা কেবল দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাই বৃদ্ধি করবে না, বরং বহিরাগত ধাক্কার বিরুদ্ধে স্থিতিস্থাপকতাও প্রদান করবে। এর পাশাপাশি এ কথাও নিশ্চিত করবে যে, বাণিজ্য দুর্বলতার উৎসের পরিবর্তে কাঠামোগত রূপান্তরের চালিকাশক্তি হয়ে উঠবে।
ক্ষেত্রনির্দিষ্ট ও ভবিষ্যতমুখী শিল্প নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে ভারত নিশ্চিত করতে পারে যে, তার প্রবৃদ্ধি বহিরাগত ধাক্কা থেকে মুক্ত।
যুক্তরাজ্য, ইউরোপিয়ান ফ্রি ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন (আইসল্যান্ড, লিচেনস্টাইন, নরওয়ে এবং সুইজারল্যান্ড নিয়ে গঠিত ইএফটিএ) এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো অংশীদারদের সঙ্গে সাম্প্রতিক এফটিএ চুক্তিগুলির পাশাপাশি ইইউ ও ইউরেশীয় গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে আলোচনা সঠিক পদক্ষেপ। এগুলি উচ্চ-মূল্যের রফতানির জন্য বাজার উন্মুক্ত করবে এবং বৈশ্বিক মূল্য শৃঙ্খলে আরও গভীর সমন্বিতকরণ করবে। একই সঙ্গে মেক ইন ইন্ডিয়া, উৎপাদন সংযুক্ত প্রণোদনা (পিএলআই) প্রকল্প এবং জাতীয় লজিস্টিক নীতির মতো শিল্প উদ্যোগগুলি অর্থনীতির জন্য একটি শক্তিশালী সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভিত্তি প্রদান করে এই প্রচেষ্টাগুলিকে সমন্বিত করবে।
সামনের পথ
ভারতের ইতিহাসে কেবল বিপর্যয় ঘটলেই কাঠামোগত সংস্কার অনুসৃত হলেও গত দশকে সেই মনোভাব পরিবর্তিত হয়েছে। মনে হচ্ছে ওয়াশিংটনের শুল্ক অব্যাহত থাকবে। কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অন্যান্য দেশকে ভারতের উপর তাদের শুল্ক বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করছেন। এমনকি যদি মার্কিন শুল্ক প্রত্যাহার করাও হয়, তা হলে এখন ভারতের উৎপাদন ও বাণিজ্য কাঠামো পুনর্গঠনের সময় এসেছে। সুতরাং অভ্যন্তরীণ উৎপাদন পুনর্গঠন করে ভারতের জন্য আরও সক্রিয় রফতানি নীতি গ্রহণ করা অপরিহার্য। পূর্ব এশীয় অর্থনীতিগুলি কেবল একটি কেস স্টাডিই প্রদর্শন করে। ভারতকে বর্তমান আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার নীতি অনুসরণ করতে হবে। ক্ষেত্রনির্দিষ্ট ও ভবিষ্যতমুখী শিল্প নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে ভারত নিশ্চিত করতে পারে যে, তার প্রবৃদ্ধি বহিরাগত ধাক্কা থেকে মুক্ত।
আর্য রায় বর্ধন অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সেন্টার ফর নিউ ইকোনমিক ডিপ্লোমেসির জুনিয়র ফেলো।
কুমকুম মোহতা অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের রিসার্চ ইন্টার্ন।
নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত লেখক(দের) ব্যক্তিগত।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Arya Roy Bardhan is a Research Assistant at the Centre for New Economic Diplomacy, Observer Research Foundation. His research interests lie in the fields of ...
Read More +
Kumkum Mohata is a Research Intern at the Observer Research Foundation. ...
Read More +