Published on Aug 04, 2022 Updated 0 Hours ago

স্থিতিশীল নগর উন্নয়নের পন্থা বাস্তবায়নের সময়ে স্থানীয় সম্প্রদায়গুলির আকাঙ্ক্ষা ও আশঙ্কার কথা মাথায় রেখে আরও সার্বিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

নগরায়ণ এবং উপকূলীয় উন্নয়ন: বিরোধিতা থেকে আলোচনার পথে

পৃথিবীর জনসংখ্যার ৩৭% মানুষ উপকূলের ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে বসবাস করেন। ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের গ্লোবাল রিস্ক রিপোর্ট ২০১৯-এ সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধির সমস্যাগুলির উপরে আলোকপাত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, জলস্তর বৃদ্ধির ফলে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের ৫৭০টি শহর এবং প্রায় ৮০ কোটি মানুষ-সহ ৯০% উপকূল অঞ্চল তীব্র বিপদের সম্মুখীন হবে। আমরা জলবায়ু পরিবর্তন এবং ভূ-সম্পত্তি নিয়ে যখন ব্যস্ত আছি, তখন বিশ্ব জুড়ে উপকূলীয় শহরগুলি উপকূলীয় নগর পরিকাঠামো উন্নয়নকে প্রসারিত করেছে। দ্রুত নগরায়্ণ এবং উপকূলীয় পর্যটন বিশ্বব্যাপী প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা অবিলম্বে মধ্যস্থতার দাবি রাখে। বিক্ষোভ বা প্রতিবাদ বিতর্কিত বিষয়গুলি সম্পর্কে আলোচনার সুযোগ করে দিলেও প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ উপকূলীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঊর্ধ্বে উঠে স্থিতিশীল নগর উন্নয়ন এবং পরিবেশ সংক্রান্ত ন্যায়বিচারের ধারণাগুলির পুনঃপ্রতিষ্ঠার শিক্ষা দিতে পারে। এ হেন উদ্যোগগুলি স্থিতিশীল বিশ্ব গড়ার লক্ষ্যে একটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গঠনের পথ নির্দেশ করতে পারে।

চ্যুতি রেখা বরাবর প্রতিদ্বন্দ্বিতা

উপকূলীয় অঞ্চলকেন্দ্রিক শহর এবং শহর-সংলগ্ন অঞ্চলের উন্নয়ন উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের উপরে তীব্র চাপের সৃষ্টি করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, মুম্বই মেট্রোপলিটন রিজিয়ন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি দ্বারা  প্রকাশিত গ্রেটার মুম্বই ২০৩৪-এর প্রাথমিক খসড়া উন্নয়ন কর্মসূচিতে মুম্বইয়ের উপকূলীয় কোলিওয়াড়াগুলির (গ্রাম) অবস্থানসূচক সীমানা উল্লেখ করা হয়নি। এর ফলে স্বাভাবিক ভাবেই কোলিওয়াড়ার বাসিন্দাদের মনে এই শঙ্কা ছড়িয়ে পড়ে যে, কোলিওয়াড়াগুলি শহর উন্নয়নের পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত নয়। একই রকম ভাবে পরিকল্পনা স্তরে গোষ্ঠীগুলির অন্তর্ভুক্তিকরণ মুম্বইয়ের উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী মৎস্যজীবীদের উদ্বেগগুলি দূর করতে পারত, যারা বর্তমানে শহরটির কোস্টাল রোড প্রজেক্ট পরিকল্পনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন এই ভেবে যে প্রকল্পটি সরাসরি ভাবে তাঁদের চিরাচরিত জীবিকা এবং পৈতৃক জমিজমার উপরে প্রভাব ফেলবে।

মুম্বই মেট্রোপলিটন রিজিয়ন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি দ্বারা প্রকাশিত গ্রেটার মুম্বই ২০৩৪-এর প্রাথমিক খসড়া উন্নয়ন কর্মসূচিতে মুম্বইয়ের উপকূলীয় কোলিওয়াড়াগুলির (গ্রাম) অবস্থান সূচক সীমানা উল্লেখ করা হয়নি।

একই রকম ভাবে যান্ত্রিক শিল্প ট্রলারের বিরুদ্ধে ট্রলিং নীতি গ্রহণ কন্যাকুমারীর নিকট উপকূলস্থ গ্রামে বসবাসকারী মুক্কুভর মৎস্যজীবীদের সমস্যা জটিল করে তোলে। তাঁরা স্থানীয় ক্ষমতার রাজনীতি এবং তাঁদের ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ চার্চকে উপেক্ষা করে সরাসরি রাজ্য প্রশাসনের কাছে সমস্যার সমাধানের জন্য দ্বারস্থ হন। একই ভাবে কুডানকুলম প্রকল্পের বিরুদ্ধে পারমাণবিক শক্তিবিরোধী প্রতিবাদ সংক্রান্ত মৎস্যজীবীদের সকল আবেদন একযোগে খারিজ করে দেওয়া হয়। ফলে এই প্রতিবাদ বৃহত্তর সংগঠিত প্রতিরোধের আকার নেয় এবং দেরিতে হলেও সরকার প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়। উপরোক্ত সব ক’টি ক্ষেত্রেই প্রণয়ন পর্যায়ের শুরুতেই স্থানীয় সম্প্রদায়গুলিকে পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত করা হলে তা প্রকল্প বাস্তবায়ন সময়সীমাকে উল্লেখযোগ্য ভাবে কমিয়ে আনতে পারত এবং প্রয়োজনীয় খরচ কমাতে সক্ষম হত।

উৎসেই উদ্বেগের শনাক্তকরণ

উপকূল অঞ্চলে স্থায়ী ভাবে বসবাসকারী মানুষজন, বিশেষ করে মৎস্যজীবী সম্প্রদায়, যাঁরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে উপকূলের কাছাকাছি বাস করছেন, স্বভাবতই সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণের সঙ্গে আবেগময়, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় এবং আধ্যাত্মিক সূত্রে যুক্ত। মাছ ধরার পরিমাণ হ্রাস পেলেও এই সম্পর্কগুলি সংশ্লিষ্ট মানুষদের গোষ্ঠীগত পরিচয়, আচার-অনুষ্ঠান এবং শ্রুতিকথার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ।(১) ধর্মীয় স্তর ছাড়াও মাছ ধরার সঙ্গে যুক্ত সাধারণ স্থানগুলি সম্প্রদায়ের কার্যকলাপ, মাছ শুকানো ও বিপণন, মাছ ধরার জাল ও নৌকো মেরামত, মাছ নিলাম এবং জাল, নৌকো, ইঞ্জিন, যন্ত্রাংশ ও বরফ সঞ্চয়ের কাজে ব্যবহৃত হয়।

নব্য-উদারনৈতিক শহুরে উপকূল উন্নয়ন উপকূলীয় নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের জন্য ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করে। সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের অবনতি, প্রাকৃতিক সম্পদের অবক্ষয়, জমির অধিকার হারানো, বাণিজ্যিক মৎস্যশিকার এবং অতিরিক্ত মৎস্যশিকারের পাশাপাশি এই ধরনের নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াগুলি অধিকাংশ সময়েই মৎস্যজীবীদের সহজাত জ্ঞান ও সমুদ্রের সঙ্গে তাঁদের সামাজিক সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে অনবধানবশত উপেক্ষা করে। এই প্রান্তিকীকরণ বৃদ্ধি পেয়েছে পরিকল্পনাকারীদের উপেক্ষার দরুন, যাঁরা প্রায়শই উন্নয়নের জন্য একমাত্রিক মনোভাব পোষণ করেন। ‘উন্নয়ন’মূলক কর্মকাণ্ডের নিরিখে অরক্ষিত হওয়ার দরুন উপকূলীয় সম্প্রদায়গুলি পরিবেশবাদী গোষ্ঠী এবং রাজনৈতিক স্বার্থজনিত চাপের সম্মুখীন হয়। উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ প্রকাশ এ দিকেই ইঙ্গিত করে যে, সম্প্রদায়গুলি নিজেদের ন্যায্য বাসস্থান এবং পরিবেশের চাহিদার জন্য সক্রিয় হয়ে উঠেছে এবং পরিকল্পনাকারীদের এ বিষয়ে নজর দেওয়া আবশ্যক। উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের উপরে চাপ বৃদ্ধির নমুনা এ ঘটনাতেই স্পষ্ট যে, নিজেদের দাবি সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তাঁরা  সাম্প্রতিক সময়ে নিজেদের গোষ্ঠীর বাইরে গিয়েও বিভিন্ন সহায়ক গোষ্ঠীর সঙ্গে জোট বেঁধে সরব হয়েছেন।

উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ প্রকাশ এ দিকেই ইঙ্গিত করে যে, সম্প্রদায়গুলি নিজেদের ন্যায্য বাসস্থান এবং পরিবেশের চাহিদার জন্য সক্রিয় হয়ে উঠেছে এবং পরিকল্পনাকারীদের এ বিষয়ে নজর দেওয়া আবশ্যক।

আর্থ-সামাজিক রূপান্তরের ক্ষেত্রে নগর পরিকল্পনাবিদরা প্রায়শই যে বিষয়টি উপেক্ষা করে যান, সেটি হল, উপকূলীয় সম্প্রদায়গুলি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একই রকমের সমগোত্রীয় থাকেনি। একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মানুষদের তাদের বর্তমান জীবিকা, উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং পছন্দের ভিত্তিতে পৃথক করা যেতে পারে। এ ধরনের মতপার্থক্যও অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ এবং বিভক্ত রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার দিকে পরিচালিত করে। সে কারণেই প্রাথমিক জীবিকার ক্ষতিপূরণের জন্য দক্ষতা বৃদ্ধি কর্মসূচি অথবা বলপূর্বক পুনর্বাসনের জন্য একটি অভিন্ন প্রমিত নীতি অন্যায্য এবং বৃথা। এক দিকে যখন শহরগুলির ভবিষ্যতের জন্য বড় আকারের উপকূলীয় পরিকাঠামো প্রকল্পগুলিতে বিনিয়োগ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে, প্রতিষ্ঠানগুলিকে প্রতিক্রিয়া স্বরূপ আরও মানবিক এবং স্থিতিশীল কৌশলের মাধ্যমে ‘উন্নয়ন’-এর সঙ্গে সংযুক্তিকরণের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

উন্নয়নের অপরিহার্যতা এবং সামাজিক প্রভাব

উপকূলীয় উন্নয়নের অপরিহার্যতা এবং ব্লু ইকনমিকে জোরদার করার জন্য আন্তর্জাতিক চাপের অর্থ হল নীতিগুলিকে পুনর্বিবেচনা করতে হবে যাতে প্রাথমিক স্তরের আলোচনাতেই সম্প্রদায়গুলির সংযুক্তিকরণ সম্ভব হয়। এ কথা বিবেচনা করা দরকার যে, উপকূলীয় সম্প্রদায়গুলি কদাচিৎই উন্নয়নের বিরোধিতা করেছে। এমনকি প্রথাগত ভাবে অঞ্চলটির অধিবাসী হওয়ার দরুন এই সম্প্রদায়গুলির অঞ্চলটির বাস্তুতন্ত্র সম্পর্কে গভীর জ্ঞান এবং অর্থনৈতিক আগ্রহ রয়েছে। তাঁরা এই জ্ঞান উপকূলীয় উন্নয়ন সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে লাগাতে চান। বর্তমান এই স্বশাসিত গোষ্ঠীগুলি  প্রভাবশালী স্তরে আলোচনা থেকে ব্রাত্য বোধ করছে এবং তাঁদের সরাসরি প্রভাবিত করতে পারে এ হেন প্রকল্পগুলির সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বাস্তবায়নে অংশগ্রহণ, প্রতিনিধিত্ব এবং সংযুক্তিকরণ চান তাঁরা। উপকূলীয় উন্নয়নে সামাজিক ভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং স্থানীয় ভাবে মধ্যস্থতামূলক পদ্ধতির জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ও নীতি পর্যায়ে মানসিকতার গভীর পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।

এ ছাড়াও, সামুদ্রিক পরিবেশের সঙ্গে সাংস্কৃতিক সম্পর্কের জটিলতা এবং প্রথাগত উপকূলীয় জনগণের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ভিন্নতা প্রায়শই উন্নয়ন আলোচনার পরিসরে পড়ে না। বর্তমান পরিস্থিতি ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় ক্ষেত্রেই উন্নয়নের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ফলাফলের গুরুতর মূল্যায়ন এবং বিনিয়োগের উপর বিশেষ ও তাৎক্ষণিক জোর দেয়। এটি পরিবেশগত মূল্যায়নের পরিসরের বাইরে উপকূলীয় সম্প্রদায়ের উদ্বেগগুলি বোঝার জন্য একচেটিয়া এবং গভীরতর বা সামাজিক প্রভাব মূল্যায়ন (এস আই এ) কৌশলগুলি তৈরি করার জন্য ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্টের মতো বিশেষজ্ঞ সংস্থাগুলির সঙ্গে জড়িত হওয়ার আহ্বান জানায়৷ উপকূলের প্রতি শহুরে মুগ্ধতার পরিপ্রেক্ষিতে, এস আই এ-র অভাব অথবা বাদ দেওয়া ইতিমধ্যেই প্রান্তিক উপকূলীয় জনগণের সামাজিক পরিবর্তনের সুবিধাগুলির স্বীকৃতি দেয়নি৷ যদিও পরিবেশগত এবং সামাজিক প্রভাবগুলিকে কেন্দ্রীভূত করার জন্য সমন্বিত পদ্ধতির বিকাশ এবং প্রয়োগ করা হয়েছে, তবুও মূল্যায়নের জন্য কী ভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল, তা বিবেচনা করাও জরুরি।

উপকূলের প্রতি শহুরে মুগ্ধতার পরিপ্রেক্ষিতে, এস আই এ-র অভাব অথবা বাদ দেওয়া ইতিমধ্যেই প্রান্তিক উপকূলীয় জনগণের সামাজিক পরিবর্তনের সুবিধাগুলির স্বীকৃতি দেয়নি৷

উন্নয়নের পূর্ব শর্ত হিসেবে, এস আই এ-র ফলাফলগুলি অর্থনৈতিক, সামাজিক, পরিবেশগত প্রতিকূলতাগুলির প্রশমনে সাহায্য করতে পারে এবং একই সঙ্গে সব অংশীদা্রের জন্যই কস্ট টু বেনিফিট অনুপাত পরিমাপ করার জন্য উদ্ভাবনী প্রযুক্তিগুলি আরও ভাল ভাবে পরিকল্পনায় সাহায্য করতে পারে৷ উন্নয়ন যে অপরিহার্য তা বুঝতে পেরে, উন্নত জীবিকার জন্য উপকূলীয় দরিদ্র এবং দক্ষ মৎস্যজীবীদের চাহিদা চিহ্নিত করতে পরিবর্তিত সাসটেনেবিলিটি লাইভলিহুডস ফ্রেমওয়ার্কে (এস এল এফ) আরও আঞ্চলিক এবং প্রাসঙ্গিক সংজ্ঞা বিবেচনা করা যেতে পারে। পরবর্তী কালে এস এল এফ উপযোগী স্থিতিশীল এবং ন্যায়সঙ্গত সমাধানগুলির বিকাশের জন্য পরিকাঠামো প্রদান করতে সক্ষম হবে।

মধ্যপন্থার খোঁজ

উন্নয়নের অসামঞ্জস্যপূর্ণ ফলাফল উন্নয়ন পরিকল্পনার অপ্রতুলতা মোকাবিলায় তীব্রতর এস আই এ পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তাকেই তুলে ধরে। শহুরে উপকূলীয় পরিকল্পনার মধ্যে এস আই এ-র অন্তর্ভুক্তিকরণ সেটিকে উন্নয়নের  আখ্যানের নিরিখে অপরিহার্য করে তুলবে। সামাজিক প্রভাবের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় কমিশনের ভূমিকা, অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশ সুরক্ষা এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ আইন যা পরিবেশের সাংস্কৃতিক দিকগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে অথবা জেলাভিত্তিক সম্প্রদায়কেন্দ্রিক মনোভাবের জন্য হংকং-এর নগর পুনর্নবীকরণ কৌশলটি জনসাধারণের অংশগ্রহণের জন্য আরও সর্বাত্মক ধারণা তৈরিতে সাহায্য করে। যদিও সামগ্রিক দায়বদ্ধতা এবং এই ধরনের পদ্ধতির স্থানীয় প্রাসঙ্গিকতার একটি পর্যায়ক্রমিক পর্যালোচনা অপরিহার্য।

উপকূলীয় সম্প্রদায়ের নেতৃত্বাধীন উন্নয়ন অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ার পথ দর্শাতে পারে, যে ক্ষেত্রটিতে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু কাঠামো গড়ে উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কোস্টাল ৫০০ যা বিশ্বব্যাপী ৫০০ জন মেয়র এবং স্থানীয় প্রশাসনকে উপকূলীয় মৎস্যচাষের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে একজোট করে, মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছনোর জন্য একটি বিকল্প কাঠামো প্রদান করে। একই ভাবে, সেন্ট লুসিয়ার সোফ্রিয়ার মেরিন ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মডেল স্থানীয় সম্পদ ব্যবহারকারী এবং অংশীদারী সংস্থাগুলির মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক তৈরি করে। এর পাশাপাশি ব্রিটিশ কলম্বিয়ার উত্তরে বসবাসকারী জনজাতীয় গোষ্ঠীগুলির দ্বারা নির্মিত অংশগ্রহণকারী মডেল, যা ৬.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কোস্টাল গ্যাসলিঙ্ক পাইপলাইনে ১০ শতাংশ অংশীদারিত্বের অধিকারী, সহযোগিতামূলক সম্ভাবনাগুলি খতিয়ে দেখার ক্ষেত্রে বিশেষ আলোকপাত করে। ভারতেও কার্যকরী মডেল তৈরি হয়েছে। যেমন জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির নিরিখে স্থানীয় অভিযোজন পদ্ধতির রূপরেখা দেওয়ার জন্য পুদুচেরির মৎস্যজীবীদের সঙ্গে যৌথ ভাবে তৈরি করা মডেল। এই মধ্যস্থতাকারী উদ্যোগগুলি সামাজিক ভাবে প্রভাবশালী নেতৃত্ব এবং বিনিয়োগকে অনুপ্রাণিত করে।

কোস্টাল ৫০০ যা বিশ্বব্যাপী ৫০০ জন মেয়র এবং স্থানীয় প্রশাসনকে উপকূলীয় মৎস্য চাষের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে একজোট করে, মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছনোর জন্য একটি বিকল্প পরিকাঠামো প্রদান করে।

সামনের পথ

রাষ্ট্রপুঞ্জের স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এস আই এ-কে সম্প্রদায়গুলি এবং অংশীদারদের জন্য অবশ্যই উচ্চ মানের প্রতিক্রিয়া এবং সর্বোত্তম অনুশীলনের উপর জোর দিতে হবে। ইউ এন-হ্যাবিটাটের চিন্তাপ্রসূত এবং পশ্চিম আফ্রিকায় বাস্তবায়িত উপকূলীয় অঞ্চলের স্থিতিশীল ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যবহৃত প্রোটোটাইপটিকে একটি পছন্দসই পরিকাঠামো রূপে তুলে ধরা যেতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে আইভরি কোস্টের শহুরে অভিযোজনের জন্য বিশেষ ভাবে তৈরি মডেলটি পরিবেশগত এবং সামাজিক প্রভাব মূল্যায়নের মাধ্যমে সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং প্রভাবগুলি পরীক্ষা করার জন্য একটি আঞ্চলিক দৃষ্টান্ত প্রদান করে। আর একটি ক্ষেত্র যেখানে স্থানীয় পরামর্শ গ্রহণকে পরিকল্পনার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে মনে করা হয়, সেটি হল গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফেসিলিটি এবং বিশ্ব ব্যাঙ্ক দ্বারা বেনিনে গোষ্ঠীভিত্তিক উপকূলীয় এবং সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প। রামসার সাইটগুলিতে সম্প্রদায় এবং স্থানীয় প্রশাসনগুলির সঙ্গে কাজ করার জন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছিল। বিশ্বব্যাপী পরিবেশগত ভাবে বিপর্যয়কর বেশ কয়েকটি স্থান আছে যেখানে নানা উপকূলীয় গোষ্ঠী বসবাস করে এবং যেগুলি অধিকতর গতিশীল এস আই এ টেমপ্লেটের সুযোগ উপস্থাপন করে। তা সত্ত্বেও এস আই এ-কে প্রকৃত অর্থেই অর্থবহ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হলে, ক্ষেত্রটির শক্তিশালী অংশীদারদের ঊর্ধ্বে উঠে সম্প্রদায়ের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এবং প্রান্তিক কণ্ঠস্বরকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অন্যথায় সম্প্রদায়গুলির অংশগ্রহণের বিষয়টি উন্নয়নের নিরিখে প্রতিকূল হয়ে উঠবে।


[১] অস্ট্রেলিয়ার ফার্স্ট নেশন পিপল (টরেস প্রণালী দ্বীপবাসী) সমুদ্রের সঙ্গে ধর্মীয় এবং আধ্যাত্মিক বন্ধনে আবদ্ধ যার মাধ্যমে তাঁরা দীর্ঘমেয়াদি ভাবে বেঁচে থাকার স্বার্থে সমুদ্রের সম্পদকে কাজে লাগান। মুম্বইয়ের কলি জেলেদের কাছে সমুদ্র হল অনন্য সমুদ্রদেবতা দরিয়া দেবের সাম্রাজ্য এবং উপকূলের রক্ষার জন্য একাধিক দেবদেবী জড়িত। একই ভাবে, ওকিনাওয়ার শিওয়া উপসাগরের আশেপাশের জেলে সম্প্রদায়গুলি প্রচুর মাছ ধরা এবং নিরাপদ সমুদ্রযাত্রার জন্য সমুদ্র দেবতাকে পুজো করে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.