-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
বিদেশ মন্ত্রকের বাজেট ভূ-অর্থনৈতিক পরিবর্তনকে প্রতিফলিত করে, কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক চ্যালেঞ্জগুলি থেকে গিয়েছে
ভারতের বিদেশনীতির লক্ষ্য ও কৌশলগত উদ্দেশ্যগুলির প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও অনুসরণকারী প্রাথমিক নির্বাহী কর্তৃপক্ষ হিসাবে বিদেশ মন্ত্রকের (এমইএ) বার্ষিক বাজেট কেন্দ্রীয় সরকারের বার্ষিক বাজেট বরাদ্দের মধ্যে গভীর বিশ্লেষণের যোগ্যতা রাখে। বিদেশ মন্ত্রকের বাজেট শুধুমাত্র ভারতের কৌশলগত এবং আন্তর্জাতিক অগ্রাধিকারগুলিই প্রতিফলিত করে না, বরং তার অংশীদারদের সঙ্গে যুক্ত হওয়া এবং তার বৈশ্বিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও প্রতিশ্রুতিগুলি পূরণ করার ক্ষেত্রে নয়াদিল্লির ক্ষমতাও প্রতিফলিত করে।
যদিও এমইএ-র বাজেট ২০১৪ থেকে ২০২৫-এর মধ্যে ৬৭% বৃদ্ধি পেয়েছে, বার্ষিক বাজেটে এর শতাংশগত ভাগ একই সময়পর্বে ০.৮% থেকে ০.৪%-এ নেমে গিয়েছে। এই বছর, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন মন্ত্রকের জন্য ২০,৫১৬.৬১ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন, যা গত বছরের অনুমানকৃত ব্যয় থেকে ৭.৩% এবং ২০২৪-২৫-এর সংশোধিত অনুমান থেকে ১৮% কম। যাই হোক, এর থেকে ভারতীয় এক্সিম ব্যাঙ্কের সার্বভৌম গ্যারান্টিগুলি বাদ রয়েছে, যার ২০২৩-২৪ (৯,০১৩.৭২ কোটি টাকা) এবং ২০২৪-২৫ (৪,৩৮৩.৪০ কোটি টাকা) সালে ব্যয় ছিল উচ্চতর৷ ২০২৫-২৬-এর জন্য এমন কোনও বরাদ্দ নেই, যার ফলে দেখা যায় যে এমইএ-র বাজেট ২০২৪-২৫-এর তুলনায় ১৫.৪৫% বেড়েছে। এক্সিম ব্যাঙ্কের জন্য বিধান ভবিষ্যতের প্রয়োজনের সাপেক্ষে একটি নমনীয় প্রক্রিয়া রয়ে গিয়েছে, ঠিক ভারতীয় উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সহায়তা প্রকল্পের বিধানগুলির মতোই, যা এই বছর অর্থবর্ষ ২৩ (২,৩৫০ কোটি টাকা) ও অর্থবর্ষ ২৪ (৩,৮৪৯ কোটি টাকা) থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়ে ২৫ কোটি টাকা হয়েছে। ২০২৫-২৬ বাজেটে বিদেশী উন্নয়ন অংশীদারিত্বের জন্য এমইএ-র বরাদ্দের ৩৩% (৬,৭৫০ কোটি টাকা) নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিদেশ মন্ত্রকের বাজেট শুধুমাত্র ভারতের কৌশলগত এবং আন্তর্জাতিক অগ্রাধিকারগুলিই প্রতিফলিত করে না, বরং তার অংশীদারদের সঙ্গে যুক্ত হওয়া এবং তার বৈশ্বিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও প্রতিশ্রুতিগুলি পূরণ করার ক্ষেত্রে নয়াদিল্লির ক্ষমতাও প্রতিফলিত করে।
এমইএ-র ২০২৫-এর বাজেট সামনের বছরের জন্য নয়াদিল্লির কৌশলগত ও ভূ-অর্থনৈতিক অগ্রাধিকারগুলিকে তুলে ধরে৷ বাজেটটি বাণিজ্য-সম্পর্কিত এবং কৌশলগত প্রয়োজনীয়তার জন্য ভারতের প্রতিবেশ ও সংযোগ উদ্যোগের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে, এবং সম্পূর্ণরূপে সাহায্য-ভিত্তিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা থেকে বিশেষ কূটনৈতিক ব্যয়ের মাধ্যমে সার্বভৌম ঋণ, সহায়তা ও ক্রেডিট লাইনে স্থানান্তরকে চিত্রিত করেছে, যা হল নির্দিষ্ট দেশগুলির জন্য এমইএ-র ভারতীয় কারিগরি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা (আইটিইসি) কর্মসূচি।
প্রতিবেশীদের মধ্যে ভুটান সবচেয়ে বেশি, ২,১৫০ কোটি টাকার, সুবিধাভোগী হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। ২০২৫-২৬ বাজেটের ব্যয়ে শ্রীলঙ্কা (৩০০ কোটি টাকা), মলদ্বীপ (৬০০ কোটি টাকা), ও মায়ানমার (৩৫০ কোটি টাকা)-এর জন্য বরাদ্দ যথাক্রমে ১৮.৩%, ৩৩% ও ২৮.৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকা ও কাঠমান্ডু অর্থবর্ষ ২৪-এর পরিমাণই পেয়েছে, যেখানে আফগানিস্তানের জন্য সাহায্য ১০০ কোটি টাকা থেকে ৫০ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, ভুটানের বরাদ্দ মোট আন্তর্জাতিক সাহায্যের (৫,৪৮৩ কোটি টাকা) ৩৯.২%, এবং দক্ষিণ এশিয়ায় বিতরণ করা সহায়তার ৪৯.৫% (৪,৩২০ কোটি টাকা)।
প্রতিবেশী অঞ্চলে সহায়তা সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ কর্মসূচী এবং ক্ষুদ্র তৃণমূল পর্যায়ের জনসম্প্রদায় উন্নয়ন প্রকল্পের পাশাপাশি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, রাস্তা, সেতু, সমন্বিত সীমান্ত চেকপয়েন্ট, আবাসন ইত্যাদির উন্নয়নের জন্য সহায়ক হবে। গত বছর নেপাল ও বাংলাদেশে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হলেও বিবিআইএন (বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল) অঞ্চলের সমন্বিত বিদ্যুৎ বাণিজ্য মার্কারগুলি নিয়ে নয়াদিল্লি উৎসাহী৷ ভুটানের বাজেট বরাদ্দ আঞ্চলিক শক্তি নিরাপত্তা ও পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উন্নয়নে ভারতের দায়বদ্ধতার প্রতিফলন। মায়ানমারে বরাদ্দের বৃদ্ধি কালাদান মাল্টিমোডাল প্রকল্প এবং ভারত-মায়ানমার-তাইল্যান্ড ত্রিপক্ষীয় হাইওয়ে প্রকল্পের অগ্রগতির জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। একইভাবে, বাজেটে ইরানের চাবাহার বন্দরের জন্য বরাদ্দ (১০০ কোটি টাকা) রাখা হয়েছে, যা চাবাহার পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চল ও বন্দর পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয়। চাবাহার বন্দর আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ পরিবহণ করিডোরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যা কিনা একটি ইউরেশীয় করিডোর যার ভারত একটি অংশ এবং যা ভারত সক্রিয়ভাবে অনুসরণ করছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবশ্য ইরানের প্রতি তাঁর ‘সর্বোচ্চ চাপ’ নীতির অংশ হিসাবে চাবাহার বন্দরকে অর্থায়ন এবং নির্মাণের ক্ষেত্রে ভারতকে দেওয়া ছাড় বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এমইএ-র বাজেট ভারতের বর্ধিত প্রতিবেশী অঞ্চলে একটি অপরিহার্য বৈদেশিক নীতি কৌশলের ধারাবাহিকতা প্রদান করে: আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার জন্য কৌশলগত আন্তঃনির্ভরতা তৈরি করা।
বাজেটে ইরানের চাবাহার বন্দরের জন্য বরাদ্দ (১০০ কোটি টাকা) রাখা হয়েছে, যা চাবাহার পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চল ও বন্দর পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয়।
বিশেষ কূটনৈতিক ব্যয় (৪,৯০০ কোটি টাকা) এবং আইটিইসি প্রোগ্রাম (৬,৩৭৫ কোটি টাকা) এর মতো বর্ধিত বিবেচনামূলক ব্যয়ের (ডিসক্রিশনারি স্পেন্ডিং) ব্যবস্থাও উল্লেখযোগ্য। বিবেচনামূলক ব্যয়ের জন্য এই বরাদ্দগুলি ভারতকে তার বিশ্বব্যাপী প্রোফাইল, জনসাধারণের উপলব্ধি, এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক প্রসারিত করতে সাহায্য করতে পারে, বিশেষ করে যখন চিন প্রতিবেশী অঞ্চলে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে আবির্ভূত হচ্ছে এবং বিশ্ব ব্যবস্থা অপ্রত্যাশিত উপায়ে বিকশিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বৃহত্তর পরিমণ্ডলে ভূ-অর্থনৈতিক ও কৌশলগত চালচলনের জন্য নয়াদিল্লিকে সুযোগ করে দিতে এই বিবেচনামূলক ব্যয় প্রক্রিয়াগুলি অপরিহার্য।
যদিও এমইএ-র বাজেট এবং তার বরাদ্দগুলি ভারতের ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক ভারসাম্যের প্রেক্ষাপটে প্রশংসনীয়, এটি কিছু সমস্যা মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছে, যেমন গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তির মতো নতুন পরিসরের উন্নয়ন, এবং প্রাথমিক সক্ষমতা-নির্মাণ ও কম সক্ষমতার সমস্যার মতো কাঠামোগত খামতি যা এমইএ-র কার্যকারিতা ব্যাহত করে।
এমইএ-র প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা সীমিত থেকে গিয়েছে, তবুও মন্ত্রক ২০২৫-২৬-এর জন্য তার প্রশিক্ষণ বাজেট বছরে ১১.৪% কম করে দিয়েছে। ভারতীয় ফরেন সার্ভিসে কর্মী সংখ্যা কম, মাত্র ৮৫০ জন অফিসার ১৯৩টি দূতাবাস ও কনস্যুলেট পরিচালনা করছেন। যদিও বার্ষিক নিয়োগ ৩২-৩৫ জন অফিসার হয়েছে, তবে এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (১০০-৩৫০) বা যুক্তরাজ্যের (৮০-১০০) মতো দেশগুলির চেয়ে অনেক কম। এই হারে, ভারতের সর্বোত্তম ১,৫০০ অফিসারে পৌঁছতে কয়েক দশক সময় লাগবে। এই ব্যবধান পূরণ করতে এমইএ-র উচিত কূটনৈতিক কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য বাইরে থেকে (ল্যাটরাল) নিয়োগ, প্রতিরক্ষা কর্মী ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের সংযুক্ত করা, এবং পরামর্শদাতাদের সাময়িকভাবে নিযুক্ত করার পরিবর্তে কৌশলগতভাবে নিয়োগ করা। উপরন্তু, গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি ও জেনারেটিভ এআই -এর মতো নতুন পরিসরগুলি যখন একটি কৌশলগত মাত্রা অর্জন করছে, সেই সময় বাইরে থেকে নিয়োগ এবং অফিসারদের প্রশিক্ষণের সময় বিদেশনীতির প্রেক্ষিতে এই পরিসরগুলিতে ফোকাস করতে হবে।
এমইএ-র ২০২৫-২৬ বাজেট আঞ্চলিক সংযোগ, অর্থনৈতিক কূটনীতি, এবং ভূ-অর্থনৈতিক প্রভাবের দিকে ভারতের কৌশলগত পরিবর্তনকে প্রতিফলিত করে। যাই হোক, প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতার ব্যবধান, কম কূটনৈতিক বাহিনী, এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তির মতো উদীয়মান পরিসরে সীমিত মনোযোগ সমস্যা হয়ে উঠছে। কৌশলগত নিয়োগ, প্রশিক্ষণ এবং লক্ষ্যযুক্ত বিনিয়োগের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলির সমাধান করা ভারতের বৈশ্বিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং বিকশিত ভারত ২০৪৭-এর মতো লক্ষ্য অর্জনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই ভাষ্যটি প্রথম ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস -এ প্রকাশিত হয়েছিল।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.