ঔপনিবেশিকতা এবং বিশ্বায়ন দ্বারা উদ্দীপিত গণ-অভিবাসন প্রবাহের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পশ্চিমের উপর যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করেছে। অভিবাসন প্রসঙ্গটি পশ্চিমে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সমস্যা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে, যা দক্ষিণপন্থী পপুলিস্ট রাজনীতির উত্থান ও বিস্তারের জন্য একটি উপ-স্তর হিসাবে কাজ করে এবং রাজনীতিবিদদের প্রায়শই ভোটারদের মেরুকরণের মাধ্যমে জনপ্রিয় অভ্যন্তরীণ সমর্থন কুড়োতে সাহায্য করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনী বিতর্কে অভিবাসন একটি বিশিষ্ট অবস্থান গ্রহণ করলেও, কানাডা ২০২৪ সালের জন্য স্টুডেন্ট ভিসার পরিমাণ ৩৫ শতাংশ কমানোর ঘোষণা করেছে। অস্ট্রেলিয়া ২০২৫ সালের জুন মাসের মধ্যে তার অভিবাসন অর্ধেক কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ব্রতী হয়েছে। ব্রিটেনের প্রাইম মিনিস্টার ঋষি সুনাক তাঁর বিতর্কিত রোয়ান্ডা অ্যাসাইলাম প্ল্যান এবং সেফটি অব রোয়ান্ডা (অ্যাসাইলাম অ্যান্ড ইমিগ্রেশন) বিলের সাহায্যে অভিবাসন বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনী বিতর্কে অভিবাসন একটি বিশিষ্ট অবস্থান গ্রহণ করলেও, কানাডা ২০২৪ সালের জন্য স্টুডেন্ট ভিসার পরিমাণ ৩৫ শতাংশ কমানোর ঘোষণা করেছে।
আন্তর্জাতিক সংস্থা, কনজারভেটিভ এবং লেবার পার্টি এই পরিকল্পনার সমালোচনা করলেও প্রাইম মিনিস্টার সুনাক সরকারের কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি আসলে অবৈধ অভিবাসনের বাড়তে থাকা প্রবাহের দরুন ক্রমবর্ধমান বিতর্কিত অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমস্যা হিসাবে অভিবাসন থেকেই উদ্ভূত হয়েছে। অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য নির্বিশেষে ব্রিটেনের রোয়ান্ডা পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক শরণার্থী প্রোটোকলের উপর তাঁর আকাঙ্ক্ষা ও প্রভাব সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করে।
রোয়ান্ডা পরিকল্পনা
প্রাক্তন প্রাইম মিনিস্টার বরিস জনসন ২০২২ সালে মাইগ্রেশন অ্যান্ড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ-এর (দ্য রোয়ান্ডা প্ল্যান) অধীনে ব্রিটেন এবং রোয়ান্ডার মধ্যে একটি পাঁচ বছরের আশ্রয় সংক্রান্ত চুক্তির প্রস্তাব করেছিলেন, যার লক্ষ্য ছিল অনিরাপদ এবং অননুমোদিত পথের মাধ্যমে ব্রিটেনে অবৈধ অভিবাসনের মোকাবিলা করা। এটির লক্ষ্য ছিল অনিয়মিত অভিবাসন রোধ করা, বিশেষ করে যখন ইংলিশ চ্যানেল জুড়ে ছোট নৌকার আগমনের মাধ্যমে অভিবাসনের ঘটনা ঘটছে (চিত্র ১.১)। এই ধরনের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অভিবাসনের পথগুলি এই অঞ্চলে একাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটিয়েছে এবং অঞ্চলটিতে মানব পাচারকারী মাফিয়াদের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। পরিকল্পনাটিতে অভিবাসন প্রক্রিয়াকরণ, আশ্রয় এবং পুনর্বাসনের জন্য ব্রিটেনে অবৈধ ভাবে প্রবেশকারীদের রোয়ান্ডায় স্থানান্তরের অনুমতি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
পরিকল্পনাটি বিভিন্ন মানবাধিকার আইনজীবীদের ব্রিটেন জুড়ে আদালতে সেটিকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য প্ররোচিত করেছিল। সুপ্রিম কোর্ট অ-প্রত্যাহার নীতির লঙ্ঘন সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এই নীতিটিতে বলা হয়েছে যে, আশ্রয়প্রার্থীদের ‘প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে এমন একটি দেশে ফেরত পাঠানো যাবে না, যেখানে তাঁদের জাতি, ধর্ম, জাতীয়তার কারণে তাঁদের জীবন বা স্বাধীনতা হুমকির সম্মুখীন হবে। এবং একটি নির্দিষ্ট সামাজিক গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক মতামতের সদস্যপদ অথবা সেখানকার নির্যাতন কিংবা অবমাননাকর আচরণের প্রকৃত ঝুঁকির সম্মুখীন হবেন।’ রোয়ান্ডার নিম্ন মানের মানবাধিকার ইতিহাস বিবেচনা করলে এটি আশ্রয়প্রার্থীদের স্থানান্তরের জন্য একটি নিরাপদ তৃতীয় দেশ হিসাবে যথেষ্ট প্রশ্ন তুলেছে।
পরিকল্পনাটিতে অভিবাসন প্রক্রিয়াকরণ, আশ্রয় এবং পুনর্বাসনের জন্য ব্রিটেনে অবৈধ ভাবে প্রবেশকারীদের রোয়ান্ডায় স্থানান্তরের অনুমতি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
রায় এড়ানোর জন্য সুনাক সরকার তার অভিবাসন-বিরোধী ‘নৌকা থামানো’র প্রচারাভিযানকে একটি আইনি কর্মসূচিতে রূপান্তরিত করেছে। এটি দ্য সেফটি অব রোয়ান্ডা (অ্যাসাইলাম অ্যান্ড ইমিগ্রেশন) বিল প্রবর্তন করে রোয়ান্ডাকে শরণার্থীদের স্থানান্তরের জন্য একটি নিরাপদ তৃতীয় দেশ বলে ঘোষণা করে। বিলটি ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে হাউস অফ লর্ডসে প্রথম ভোটে জিতেছিল।
চিত্র ১.১ ইংলিশ চ্যানেল জুড়ে ছোট নৌকার নোঙর করা এবং আগমনবিন্দুগুলি
সূত্র: আইনিউজ ইউকে; গ্রাফিক: টমাস সন্ডার্স
প্রতি বছর ব্রিটেনে হাজার হাজার ছোট নৌকার আগমন ঘটলেও (চিত্র ১.২) ব্রিটিশ সরকার কত জন শরণার্থীকে রোয়ান্ডায় পাঠাতে চায় তার সংখ্যা নির্ধারণ করেনি। এ বিষয়ে কোনও সংখ্যা সংজ্ঞায়িত না করা হলেও প্রতিবেদনে প্রাথমিক পাঁচ বছরে ‘পাইলট প্রকল্পের’ অধীনে ১০০০ আশ্রয়প্রার্থীকে রোয়ান্ডায় আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে রোয়ান্ডার সদিচ্ছার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
চিত্র ১.২ ব্রিটেনে প্রবেশের চেষ্টা যা শনাক্ত করা হয়েছে
তথ্য সূত্র: ইরেগুলার মাইগ্রেশন স্ট্যাটিস্টিক্স (২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে ইউকে হোম অফিস দ্বারা প্রকাশিত)
একটি দুর্বল প্রচেষ্টা
ব্রিটেনের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অভিবাসন শীর্ষ তিনটি নির্বাচনী বিষয়ের মধ্যে একটি। ২০২০ সালের হিসাব অনুযায়ী, ৯.৪ মিলিয়ন বিদেশে জন্মগ্রহণকারী ব্রিটেনের বাসিন্দা দেশের জনসংখ্যার ১৪ শতাংশ জুড়ে রয়েছে। রোয়ান্ডা পরিকল্পনা অনিয়মিত অভিবাসীদের রোধ করে এই সমস্যাটি মোকাবিলা করতে চায়। আশ্চর্যের বিষয় হল, ২০২০ সাল ব্যতীত মোট নেট মাইগ্রেশনের শতাংশ হিসাবে অবৈধ অভিবাসন ১০ শতাংশের নীচেই ছিল (সারণি ১.১)। এই ভাবে পরিকল্পনাটি দেশের বৃহত্তর অভিবাসন সঙ্কটের সমাধান করে না। ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসের আগে হতে চলা নির্বাচনের প্রেক্ষিতে পরিকল্পনাটি অভিবাসনের মতো জাতীয় নিরাপত্তা প্রসঙ্গে, বিশেষ করে সুনাকের অনুমোদনের ক্রমহ্রাসমান মাত্রায় সরকারের কঠোর অবস্থানকে চিত্রিত করার জন্য একটি জনপ্রিয় আখ্যান হিসাবে কাজ করবে।
সারণি ১.১ ব্রিটেনের মোট নেট মাইগ্রেশনের শতাংশ হিসেবে অবৈধ অভিবাসন
বছর
|
অনিয়মিত অভিবাসন
|
মোট অভিবাসন
|
মোট অভিবাসনের তুলনায় অনিয়মিত অভিবাসনের শতাংশ
|
২০১৮
|
১৩৩৭৭
|
২৭৬০০০
|
৪
|
২০১৯
|
১৬২৮১
|
১৮৪০০০
|
৮
|
২০২০
|
১৭১০০
|
৯৩০০০
|
১৮
|
২০২১
|
৩৬৮১৩
|
৪৬৬০০০
|
৭
|
২০২২
|
৫৪৭০২
|
৭৪৫০০০
|
৭
|
তথ্য সূত্র: ইরেগুলার ইমিগ্রেশন স্ট্যাটিস্টিক্স, ইউকে হোম অফিস; দীর্ঘমেয়া্দি আন্তর্জাতিক অভিবাসন, অস্থায়ী: ওয়াইই জুন ২০১২ থেকে ওয়াইই জুন ২০২৩, অফিস অব ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্স
ইউএন রিফিউজি কনভেনশন (১৯৫১) এবং এর ১৯৬৭ প্রোটোকলের একটি পক্ষ হিসাবে ব্রিটেন যে কোনও শরণার্থীকে নিপীড়ন, নির্যাতন বা দুর্ব্যবহারের ঝুঁকির সামনে আশ্রয় দিতে বাধ্য। রোয়ান্ডা প্ল্যান দেশটিকে এই ধরনের বাধ্যতামূলক আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি রোধ করতে সুযোগ করে দেয়। গুরুতর বেসামরিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং হিংসার কবলে থাকা সমস্ত দেশ অর্থাৎ ইরান, ইরাক, সিরিয়া এবং আফগানিস্তান থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থী মোট অবৈধ অভিবাসীর ৫৪.১৯ শতাংশ। এই ভাবে পরিকল্পনাটি প্রকৃত শরণার্থীদের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের অধীনে নিশ্চিত সুরক্ষা চাওয়া থেকে বঞ্চিত করে।
নব্য ঔপনিবেশিকতার ছায়া?
২০২৩ সালের ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত রোয়ান্ডা সরকারকে ব্রিটেন থেকে স্থানান্তরিত শরণার্থীদের থাকার জন্য খরচ হিসাবে ২৪০ মিলিয়ন পাউন্ড প্রদান করা হয়েছে। এই খরচ ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরে ৫০ মিলিয়ন পাউন্ড বৃদ্ধি করা হয়েছে। ব্রিটেন রোয়ান্ডার অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করতেও সম্মত হয়েছে। ইউনাইটেড নেশনস হাইকমিশন ফর রিফিউজিস (ইউএনএইচসিআর) সুরক্ষার জন্য সহকারী হাইকমিশনার পরিকল্পনার ‘নব্য ঔপনিবেশিক’ চিন্তাভাবনায় যথেষ্ট ‘হতাশা’ প্রকাশ করেছেন।
ব্রিটেনের রোয়ান্ডা প্ল্যানটি ওয়ামের যুক্তিকেই দর্শায়। কারণ এটি ব্রিটেনের মতো উন্নত দেশগুলিকে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে তাদের দায়িত্ব ও বাধ্যবাধকতা ত্যাগ করতে এবং একটি দরিদ্র আফ্রিকার দেশের উপর বোঝা হস্তান্তর করতে সহায়তা করে।
নব্য ঔপনিবেশিকতা সংক্রান্ত গবেষক ওয়ামে ক্রুমা কয়েক দশক আগে এই ধরনের কৌশলকে দায়িত্ব ছাড়াই ক্ষমতা প্রদানের অনুশীলন বলে তুলনা করেছিলেন। ব্রিটেনের রোয়ান্ডা প্ল্যানটি ওয়ামের যুক্তিকেই দর্শায়। কারণ এটি ব্রিটেনের মতো উন্নত দেশগুলিকে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে তাদের দায়িত্ব ও বাধ্যবাধকতা ত্যাগ করতে এবং একটি দরিদ্র আফ্রিকার দেশের উপর বোঝা হস্তান্তর করতে সহায়তা করে। আর্থিক সাহায্য ছাড়া এই পরিকল্পনাটি রোয়ান্ডার মতো একটি স্বল্পোন্নত দেশে অন্য কোনও প্রণোদনা প্রদান করে না। এটি ব্রিটেন থেকে রোয়ান্ডায় অভিবাসনের কারণে সৃষ্ট অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ প্রতিস্থাপিত করবে এবং ব্রিটেনকে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তার জবাবদিহিতা থেকে মুক্তি দেবে।
রোয়ান্ডার প্রস্তুতি
রোয়ান্ডায় প্রেরিত অভিবাসীদের সংখ্যার বিষয়ে নীরব থাকার পাশাপাশি এই পরিকল্পনাটি আশ্রয়প্রার্থীদের গ্রহণ করার জন্য রোয়ান্ডার প্রস্তুতির বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে। রোয়ান্ডায় কি নিরপেক্ষ আশ্রয় প্রক্রিয়াকরণের সাধনী রয়েছে? কঙ্গোর সঙ্গে রোয়ান্ডার দ্বন্দ্ব কী ভাবে আগত শরণার্থীদের প্রভাবিত করবে? কী ভাবে ইরাক, ইরান, সিরিয়া এবং আফগানিস্তান থেকে উদ্বাস্তুরা রোয়ান্ডার নিরাপত্তা পরিসরকে প্রভাবিত করবে? রোয়ান্ডা কি শরণার্থীদের সমাজে সমন্বিত হতে সাহায্য করার জন্য শিক্ষিত, দক্ষতা এবং নিয়োগ করার আর্থ-সামাজিক ক্ষমতা রাখে?
রোয়ান্ডার উন্নয়ন সূচকগুলির এই মূল্যায়নের ভিন্ন আখ্যানই তুলে ধরে। আফ্রিকার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনসংখ্যার ঘনত্বের দরুন রোয়ান্ডায় উচ্চ বেকারত্বের হার ১৬.৮০ শতাংশ (আফ্রিকার ১২তম সর্বোচ্চ)। গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সের ১২৫টি দেশের মধ্যে রোয়ান্ডা ৯৬তম স্থানে রয়েছে। জনসংখ্যার মাত্র ৫৭ শতাংশ মানুষের কাছে নিরাপদ পানীয় জলের সুবিধা রয়েছে। রোয়ান্ডার জিডিপি বিশ্বব্যাপী ১৪১তম এবং আফ্রিকায় ৩০তম স্থানে রয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ রাজনৈতিক স্বাধীনতার অভাব এবং রোয়ান্ডার সরকারের অধীনে আটক করে রাখা মানুষদের উপর নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। রোয়ান্ডার মধ্যে পরিকল্পনা সম্পর্কে বিতর্ক খুব অল্পই হয়েছে। প্রতিবেদনে শরণার্থীদের গ্রহণ করা নিয়ে রোয়ান্ডার জনগণের আশঙ্কার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। তবে রাজনৈতিক ও নাগরিক স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতার কারণে সরকারি দমন-পীড়নের ভয়ে সেই জনরোষ সীমিত।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ রাজনৈতিক স্বাধীনতার অভাব এবং রোয়ান্ডার সরকারের অধীনে আটক করে রাখা মানুষদের উপর নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
এই সূচকগুলি শরণার্থীদের ভাগ্য বা রোয়ান্ডার অর্থনীতি ও সমাজ সংক্রান্ত এই পরিকল্পনার উপর কোন বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারে তা বিবেচনা না করে আশ্রয়প্রার্থীদের পুনর্বাসনের গন্তব্য হিসাবে ব্রিটেনের পছন্দ হিসেবে রোয়ান্ডাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
একটি অস্বাস্থ্যকর বিশ্ব নজির
রোয়ান্ডা পরিকল্পনাটি এ হেন প্রথম পরিকল্পনা, যেখানে শরণার্থী প্রেরণের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে সংযুক্ত করা হয়েছে। অর্থনৈতিক সুবিধার পরিবর্তে উন্নয়নশীল এবং দরিদ্র দেশগুলিতে তাদের অভিবাসন সঙ্কটকে চালিত করার জন্য উন্নত দেশগুলির কৌশল একটি অস্বাস্থ্যকর নজির স্থাপন করবে। পরিকল্পনাটি ইতিমধ্যে ইউরোপের অন্যান্য দেশের নজর কেড়েছে। ডেনমার্ক, জার্মানি এবং ইতালি তৃতীয় বিশ্বের দেশে আশ্রয় প্রক্রিয়া রফতানির জন্য অনুরূপ ব্যবস্থা বিবেচনা করছে। বাস্তবায়নে দীর্ঘ বিলম্বে উদ্বিগ্ন রোয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সুনাকের উচিত নীতিটি পুনর্মূল্যায়ন করা এবং বিকল্প সমাধানগুলি অনুসরণ করার কাজে এই সুযোগটিকে ব্যবহার করা।
অভিবাসন একটি মানবিক সঙ্কট হওয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি দীর্ঘমেয়াদি কৌশল প্রয়োজন। ফ্রান্স, ইতালি, তুর্কিয়ে, আলবেনিয়া এবং অন্যদের সঙ্গে ব্রিটিশ সরকারের সীমানা নিয়ন্ত্রণের চুক্তি অভিবাসন কৌশলের একটি ইতিবাচক অগ্রগতি বটে। মানব পাচারকারী মাফিয়াদের সংগঠিত অপরাধ নির্মূল করতে ব্রিটিশ সরকারেরও উচিত ইউরোপীয় কমিশন, রাষ্ট্রপুঞ্জের শরণার্থী হাইকমিশনার এবং ইন্টারপোলের সঙ্গে মিলে কাজ করা। ইউরোপীয় ইউনিয়নকে তার অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সীমানায় নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধির মাধ্যমে উন্মুক্ত সীমানা দ্বারা সৃষ্ট মহাদেশব্যাপী সঙ্কটের দায়িত্ব নিতে হবে।
শিবানী পাণ্ডে অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের রিসার্চ ইন্টার্ন।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.