Published on Apr 23, 2025 Updated 0 Hours ago

স্থায়ী শান্তিতে পৌঁছনোর পথটি দীর্ঘ, তবে আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি এবং পর্যায়ক্রমে উত্তেজনা হ্রাসের দিকে এগনো যেতে পারে।

ইউক্রেন সংঘাত: শেষ পর্ব কি আসন্ন?

মার্কিন নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মস্কোতে সংশয়ের সৃষ্টি করেছে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃনির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল; পরিবর্তে রাশিয়ার জ্বালানির উপর নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি এবং আইএনএফ চুক্তি থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার ফলে উত্তেজনা তীব্রতর হয়েছিল। মস্কোর ধারণা ছিল ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুদ্ধ শেষ করার প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও বাইডেনের ইউক্রেন নীতি অব্যাহত থাকবে। তবে, তাঁর শপথ গ্রহণের পর থেকে মস্কো ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি উষ্ণ হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে ইউক্রেনকে আরও সহায়তা বন্ধ করার পর। তার উপর, সংঘাতের অবসান ঘটাতে ওয়াশিংটনের প্রতিশ্রুতি তার সহযোগীদের দ্বারা প্রতিধ্বনিত হয়েছিল। ১২ ফেব্রুয়ারি ৯০ মিনিটের একটি ফোনালাপের পর মার্কিন নীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যেখানে ট্রাম্প ও পুতিন ইউক্রেনে স্থায়ী শান্তির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সৌদি আরবে শান্তি আলোচনায় সম্মত হন। এই নতুন পরিবর্তনের আলোকে যে তিনটি মূল প্রশ্ন উঠে আসে সেগুলি হল সম্ভাব্য ভূখণ্ড বিভাজন, রাশিয়ার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে কি না, এবং ইউরোপীয় নিরাপত্তা স্থাপত্যে মার্কিন প্রাধান্যের প্রশ্নে ওয়াশিংটন যে ধাক্কার মুখোমুখি হতে পারে সেই সম্পর্কিত। মার্কিন অবস্থান পরিবর্তনের মূল কারণ হল ইন্দো-প্যাসিফিক মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের যুদ্ধবাজ মনোভাব নিয়ন্ত্রণে ওয়াশিংটনের মনোযোগ পুনরায় কেন্দ্রীভূত করা, এবং ইরান, উত্তর কোরিয়া ও চিনের সঙ্গে মস্কোর ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক যাতে আরও শক্তিশালী না হয় তা নিশ্চিত করা। এই কারণেই মস্কোর কিছু দাবি শর্তসাপেক্ষে বিবেচনা করা হয়েছিল, যেমন ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদের আবেদন বিবেচনা না-‌করা  এবং ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে মার্কিন অবস্থান শিথিল করা।


মার্কিন অবস্থান পরিবর্তনের মূল কারণ হল ইন্দো-প্যাসিফিক মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের যুদ্ধবাজ মনোভাব নিয়ন্ত্রণে ওয়াশিংটনের মনোযোগ পুনরায় কেন্দ্রীভূত করা, এবং ইরান, উত্তর কোরিয়া ও চিনের সঙ্গে মস্কোর ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক যাতে আরও শক্তিশালী না হয় তা নিশ্চিত করা।



ফোনালাপের সময় উভয় পক্ষই সংঘাতের মূল কারণ দূর করতে সম্মত হয়, এবং বন্দি বিনিময়, মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি ও ইরান পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা করে। ট্রাম্প মস্কো ও ইউক্রেনের মধ্যে তাৎক্ষণিক আলোচনা শুরু করার ঘোষণা করে দেন এবং মার্কিন পক্ষ থেকে আলোচক নিয়োগ করেন। টেলিফোনে কথোপকথনের পর ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে ফোন করেন, এবং পুতিনের সঙ্গে কথোপকথনের বিস্তারিত তাঁকে জানান। ১৮ ফেব্রুয়ারি রুশ ও মার্কিন প্রতিনিধিদল সৌদি আরবে মিলিত হয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের জন্য কাঠামো নির্ধারণ করে। উভয় পক্ষই আলোচনার জন্য উচ্চস্তরের দল নিয়োগ করতে সম্মত হয় এবং রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক চ্যানেল পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে, ভূখণ্ড বিভাজন বা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনও নির্দিষ্ট মন্তব্য করা হয়নি।

নমনীয় অবস্থান

কিয়েভের দিক থেকে দেখলে, সংঘাতের বিষয়ে ট্রাম্পের অবস্থান সরাসরি ইউক্রেনের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করে, এবং গত বছর জেলেনস্কির প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার বিরোধিতা করে। জেলেনস্কি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তিনি আলোচনা প্রক্রিয়া থেকে ইউক্রেনকে বাদ দেয় এমন যে কোনো শান্তি চুক্তি প্রত্যাখ্যান করবেন। অন্যদিকে, মস্কো যুদ্ধের অবসানে ওয়াশিংটনের আগ্রহকে স্বাগত জানিয়েছে, এবং এই আলোচনাগুলিকে সম্ভাব্য ‘‌দ্বিতীয় ইয়াল্টা সম্মেলন’‌ হিসাবে উপস্থাপন করেছে।

ইউক্রেনীয় অঞ্চলগুলির বিষয়ে রাশিয়ার অবস্থান বেশ জটিল ছিল। ২০২২ সালের ইস্তাম্বুল আলোচনার সময় মস্কো ও কিয়েভ একটি চুক্তিতে প্রায় পৌঁছেছিল, যেখানে রাশিয়া বলেছিল ইউক্রেন তার ন্যাটো উচ্চাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করে নিরপেক্ষ থাকলে তারা যে অঞ্চলগুলি দখল করেছিল সেগুলি থেকে সরে যাবে। তবে, পশ্চিমী সমর্থনের অভাবের কারণে চুক্তিটি ভেঙে পড়ে। একইভাবে, গত জুনে বার্গেনস্টকে সুইস শান্তি শীর্ষ সম্মেলনের আগে যখন রাশিয়ার বাহিনী ইউক্রেনে অগ্রসর হচ্ছিল, তখন পুতিন শান্তি আলোচনার পূর্বশর্ত হিসাবে দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়া অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় বাহিনী প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছিলেন। এখন ন্যাটো সদস্যপদ আলোচনা থেকে বাদ হয়ে যাওয়া এবং ইউরোপীয় সম্পৃক্ততা সীমিত থাকায়, রাশিয়ার ভূখণ্ডগত দাবির উপর কঠোর অবস্থান বজায় রাখার সম্ভাবনা কম। স্বল্পমেয়াদে স্থায়ী শান্তি এবং তাৎক্ষণিকভাবে শত্রুতা বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে, আলোচনার ফলে একটি সাধারণ যুদ্ধবিরতি হতে পারে, এবং তারপরে পর্যায়ক্রমে উত্তেজনা হ্রাস পেতে পারে।


ন্যাটো সদস্যপদ আলোচনা থেকে বাদ হয়ে যাওয়া এবং ইউরোপীয় সম্পৃক্ততা সীমিত থাকায়, রাশিয়ার ভূখণ্ডগত দাবির উপর কঠোর অবস্থান  বজায় রাখার সম্ভাবনা কম।



নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিনিময়ে মস্কো আরও ছাড় দিতে পারে। নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার জ্বালানিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে; রাশিয়ার ৪৫%-‌এরও বেশি রাজস্ব এসেছে জ্বালানি বাণিজ্য থেকে। ইউরোপীয় বাজারগুলি রাশিয়া থেকে তেল ও গ্যাসের ব্যবহার হ্রাস করায় বিদেশ থেকে তেল ও গ্যাসের রাজস্ব হ্রাস পেয়েছে। তবে, স্বস্তির পথ দীর্ঘ। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ২০,০০০-‌এরও বেশি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, যার মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৬,০০০ এরও বেশি আরোপ করেছে।

যুদ্ধের অবসান ঘটানো এবং চিনের উত্থান মোকাবিলায় মনোনিবেশ করার বৃহত্তর লক্ষ্য অনুসরণে ট্রাম্পের আগ্রহের অর্থ এমন হওয়া উচিত নয় যে আমেরিকা ইউরোপে তার মূল জাতীয় স্বার্থ ত্যাগ করবে। ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেছেন, প্রতিপক্ষদের মোকাবিলা করার জন্য মার্কিন মিত্রদের নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি করতে হবে, যার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর বোঝা কমবে। তারপরেও ওয়াশিংটন একটি গুরুত্বপূর্ণ বাহ্যিক ভারসাম্যকারী হিসাবে থাকবে। মনে রাখতে হবে যে রাশিয়া আলোচনা থেকে সরে গেলে পরিণতিতে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন অব্যাহত থাকবে। সুতরাং, ইউক্রেনের যুদ্ধ কীভাবে শেষ হতে পারে তা বোঝার জন্য বিভিন্ন দফা আলোচনার ফলাফল গুরুত্বপূর্ণ হবে।



এই ভাষ্যটি ‌প্রথম
ডেকান হেরাল্ড -‌এ প্রকাশিত হয়েছিল।

রাজোলি সিদ্ধার্থ জয়প্রকাশ অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনে স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্র্যামে গবেষণা-সহকারী।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.