-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
২৪ জুলাই ২০২৫ ভারত এবং সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র একটি ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট বা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে (এফটিএ) স্বাক্ষর করে, যা আনুষ্ঠানিক ভাবে কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক অ্যান্ড ট্রেড এগ্রিমেন্ট বা সর্বাত্মক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য চুক্তি (সিইটিএ) নামে পরিচিত। তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে আলোচনা এবং ২০২২ সালের প্রথমে শুরু হওয়া চোদ্দ দফা আলোচনার সমাপ্তিই হল এই চুক্তি। বেশ কয়েকজন ব্রিটিশ প্রাইম মিনিস্টারের মেয়াদকাল এবং নির্ধারিত সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পর এই বছরের মে মাসে সম্পন্ন হওয়া চুক্তিটি অবশেষে আলোর মুখ দেখেছে।
সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের ১১তম বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে ভারত বর্তমানে সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের মোট বাণিজ্যের ২%-এর কিছু বেশি পরিমাণের জন্য দায়বদ্ধ। তবে সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত প্রায় ৮.৪ বিলিয়ন পাউন্ড। অনুমান করা হচ্ছে, সিইটিএ-র ফলে বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে ৪২ বিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ দ্বিগুণ হবে।
স্বাক্ষরিত, স্বীকৃত, আনুষ্ঠানিক ভাবে সম্পন্ন
নয়াদিল্লির জন্য এই চুক্তি বিশেষ করে শ্রম-নিবিড় রফতানি যেমন টেক্সটাইল ও পোশাককে উপকৃত করবে, যে ক্ষেত্রগুলি চিরাচরিত ভাবে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলির কাছ থেকে কঠোর প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয়। সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় রফতানির ৯৯% পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। রত্ন ও গয়না, সামুদ্রিক খাবার, জুতো, খেলনা ও প্রকৌশল পণ্যের রফতানি বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। আপেল, পনির, ভোজ্য তেল ও দুগ্ধজাত পণ্যের মতো সংবেদনশীল পণ্যের উপর শুল্ক অব্যাহত থাকলেও আম, মশলা, চা ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য সামগ্রীর মতো বিশেষ ভারতীয় কৃষি পণ্যের রফতানি বৃদ্ধি পাবে বলেও মনে করা হচ্ছে।
অন্য দিকে, ব্রিটেনে ৯০% শুল্করেখার উপর গড়ে ভারতীয় শুল্ক ১৫% থেকে হ্রাস পেয়ে ৫% হবে, যার ফলে ভারতীয় ভোক্তাদের জন্য সস্তা পণ্য দেশে প্রবেশ করবে। ব্রিটিশ সরকারের মতে, এই চুক্তিটির ফলে ব্রিটিশ অর্থনীতিতে বার্ষিক ৪.৮ বিলিয়ন পাউন্ড বৃদ্ধি পাবে এবং ৬ বিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের বিনিয়োগ আনতে সক্ষম হবে।
সংরক্ষণ সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতা থাকলেও বৈদ্যুতিক যানবাহনের (ইভি) দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যও বৃদ্ধি পাবে এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত সরঞ্জাম, মহাকাশ সংক্রান্ত যন্ত্রাংশ, চকলেট, বিস্কিট ও স্যামনে ভারতীয়দের প্রবেশাধিকারের পরিমাণ বাড়বে।
ব্রিটেনের জন্য অ্যালকোহল ও অটোমোবাইল এমন দু’টি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র, যা লাভের মুখ দেখবে। ব্রিটিশ গাড়ির উপর ভারতীয় শুল্ক ১১০% থেকে ব্যাপক হারে কমে ১০% হবে। হুইস্কি ও জিনের শুল্ক ১৫০% থেকে কমিয়ে ৭৫%-এ নেমে এসেছে এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে আরও ৪০% পর্যন্ত হ্রাস পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সংরক্ষণ সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতা থাকলেও বৈদ্যুতিক যানবাহনের (ইভি) দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যও বৃদ্ধি পাবে এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত সরঞ্জাম, মহাকাশ সংক্রান্ত যন্ত্রাংশ, চকলেট, বিস্কিট ও স্যামনে ভারতীয়দের প্রবেশাধিকারের পরিমাণ বাড়বে।
ব্রিটিশ ব্যবসাগুলি ভারতের প্রকাশ্য ক্রয় বাজারে প্রবেশাধিকার পাবে এবং ২ বিলিয়ন টাকার বেশি মূল্যের অ-সংবেদনশীল সরকারি দরপত্রে অংশ নিতে সক্ষম হবে। এই চুক্তি গবেষণা ও শিক্ষাক্ষেত্রে গভীর সহযোগিতার পথও প্রশস্ত করতে পারে, যেখানে ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ভারতে ক্যাম্পাস স্থাপন করবে।
এই চুক্তি ভারতকে সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের ইইউ সিবিএএম-র মতো কার্বন বর্ডার অ্যাডজাস্টমেন্ট মেকানিজম (সিবিএএম) থেকে অব্যাহতি দেয় না, যার লক্ষ্য কার্বন-নিবিড় পণ্যের উপর কর আরোপ করা। ফলে ভারতের লোহা, ইস্পাত এবং সারের রফতানির উপর প্রভাব পড়বে। সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সিবিএএম ২০২৭ সালের প্রথম দিকে কার্যকর হবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং উভয় পক্ষই এই বিতর্কিত বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে পারে।
সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের জন্য, চুক্তিটি থেকে আইনি ও আর্থিক পরিষেবা বাদ দেওয়া উদ্বেগজনক। ভারত এই ক্ষেত্রগুলি উন্মুক্ত করে দেওয়ার বিষয়ে দ্বিধাগ্রস্ত। কারণ এই ক্ষেত্রের পরিষেবাগুলি ভারতের জিডিপি-র ৫০%-এরও বেশি অবদান রাখে। ইতিমধ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ চুক্তি (বিআইটি) নিয়ে আলোচনা চলছে, যা উভয় পক্ষের বিনিয়োগকে সুরক্ষিত করবে।
অভিবাসনের ক্ষেত্রে, চুক্তিটি নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে কর্মরত ভারতীয় পেশাদারদের জন্য সহজে চলাচলের সুযোগ করে দেয়। তবুও চূড়ান্ত ফলাফল হল এই যে, আইটি ও স্বাস্থ্যসেবা খাত-সহ ভারত মূলত তার কর্মীদের জন্য যে উদার ভিসা ব্যবস্থা চেয়েছিল, তা থেকে সরে আসা। একই সঙ্গে এটি বিশ্বব্যাপী মূল্য শৃঙ্খল ও বিশ্ব অর্থনীতিতে নিজেকে আরও ভাল ভাবে সংহত করার জন্য ছাড় দেওয়ার উদ্দেশ্যে ভারতের পক্ষ থেকে বৃহত্তর নমনীয়তা ও ইচ্ছাকেই দর্শায়। তবে ডাবল কন্ট্রিবিউশন কনভেনশন - যা ব্রিটেনে ভারতীয় কর্মীদের (এবং ভারতে ব্রিটিশ কর্মীদের) তিন বছরের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা অবদান থেকে অব্যাহতি দেয় - একটি বড় জয় বলে মনে করা হচ্ছে।
ইন্দো-প্যাসিফিক ঝোঁক
ভারতীয় ও ব্রিটিশ ভোক্তা, ব্যবসায়ী ও নির্মাতাদের জন্য বাস্তব সুবিধার ঊর্ধ্বে উঠে এই চুক্তিটি শুল্ক যুদ্ধ ও বাণিজ্য উত্তেজনার বিশ্বব্যাপী পটভূমিতে মুক্ত বাণিজ্যকে সমর্থন করার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হিসেবে কাজ করে। উভয় দেশের প্রতিভা ও সম্পদের সমন্বয়ে চুক্তিটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও কর্মসংস্থানের পথ খুলে দেবে এবং উভয় পক্ষেরই উদ্ভাবন ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। স্টারমার অনুমান করেন যে, এই চুক্তিটি ব্রিটেন জুড়ে ২,২০০-টিরও বেশি কর্মসংস্থান তৈরি করবে।
মোদীর বর্তমান সফরে বিস্তৃত কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সমন্বয় এবং বিশ্বব্যাপী অস্থিরতার পটভূমির মধ্যে সম্পর্ক আরও সুসংহত করার লক্ষ্যে ‘ইউকে-ভিশন ২০৩৫’ উন্মোচিত হয়েছে।
২০২০ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে এটি লন্ডনের ব্রেক্সিট-পরবর্তী বাণিজ্য নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। নয়াদিল্লির জন্য, ওয়াশিংটন ও ব্রাসেলসের সঙ্গে আলোচনায় তাদের অনন্য চ্যালেঞ্জগুলির কথা উঠে এলেও এবং তাদের নিজস্ব গতিপথ নির্ধারণ করলেও সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিটি এই বৃহত্তর বাণিজ্য চুক্তির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির স্থাপন করবে। বাণিজ্য বৈচিত্র্য ও আরও স্থিতিস্থাপক সরবরাহ শৃঙ্খলের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে চুক্তিটি ইন্দো-প্যাসিফিকের প্রতি সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের ঝোঁককেও দর্শায়, যা ব্রিটিশ সরকারের সমন্বিত পর্যালোচনা কৌশলগুলিতে স্থান পেয়েছে এবং সশক্ত হয়েছে।
ভারত-সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র সিইটিএ দ্বিপাক্ষিক অংশীদারিত্বকে আরও গভীর করার জন্য একটি বৃহত্তর উচ্চাকাঙ্ক্ষাকেই দর্শায়। গত বছর দু’টি দেশ প্রযুক্তিগত এবং ডিজিটাল ক্ষেত্রে সহযোগিতাকে ত্বরান্বিত করার জন্য একটি প্রযুক্তি এবং সুরক্ষা উদ্যোগ (টিএসআই) শুরু করেছে। মোদীর বর্তমান সফরে বিস্তৃত কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সমন্বয় এবং বিশ্বব্যাপী অস্থিরতার পটভূমির মধ্যে সম্পর্ক আরও সুসংহত করার লক্ষ্যে ‘ইউকে-ভিশন ২০৩৫’ উন্মোচিত হয়েছে।
সিইটিএ যখন ভারতীয় ও ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অনুমোদনের অপেক্ষায়, তখন এ কথা অবশ্যই আশাব্যঞ্জক যে, লন্ডন ও নয়াদিল্লি অবশেষে অভিবাসন এবং উত্তরাধিকার সংক্রান্ত সমস্যাগুলির ছায়া থেকে বেরিয়ে আসছে, যা কয়েক দশক ধরে দুই দেশের সম্পর্ককে ব্যাহত করেছিল।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় এনডিটিভি-তে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...
Read More +
Shairee Malhotra is Deputy Director - Strategic Studies Programme at the Observer Research Foundation. Her areas of work include Indian foreign policy with a focus on ...
Read More +