-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তন আমেরিকার জনগণের এই মনোভাবের ইঙ্গিত দেয় যে, তাঁরা একটি সুরক্ষাবাদী অর্থনৈতিক নীতি অনুসরণ করছেন, যার ফলে বাণিজ্য ভারসাম্যের সমতা অর্জনের জন্য শুল্ক যুদ্ধের সূচনা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত ট্রাম্প ৯০টি দেশের উপর শুল্ক আরোপের কথা ঘোষণা করেছেন। আকর্ষক বিষয় হল, রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া ও কিউবার মতো দেশগুলিকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কারণ এর নেপথ্যে মূল যুক্তি হল যে, এই দেশগুলি নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিল এবং এই দেশগুলির সঙ্গে ওয়াশিংটনের বাণিজ্যের পরিমাণ খুবই সামান্য। রাশিয়ার ক্ষেত্রে গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৩.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তালিকা থেকে বাদ দেওয়া সত্ত্বেও মার্কিন শুল্ক রাশিয়ার অর্থনীতির উপর প্রভাব ফেলবে।
ট্রাম্পের আগমনে রাশিয়ার বাজার ইতিবাচক ভাবে সাড়া দিয়েছে; মস্কোর স্টক এক্সচেঞ্জ ৬% বৃদ্ধি পেয়েছে এবং রুবল শক্তিশালী হতে শুরু করেছে এবং এমনটা ঘটেছে মূলত ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা হ্রাস পাওয়া, আমদানির জন্য অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে যাওয়া এবং মস্কোর উপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার ক্রমবর্ধমান সম্ভাবনার দরুন।
শুল্ক বিশ্বব্যাপী চাহিদার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ে উৎপাদন, শিল্প ও পরিষেবা খাতের উপর এবং এর ফলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে মন্দা দেখা দেয়। স্বাভাবিক ভাবেই বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম কমে যায়। রাশিয়া বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম প্রাকৃতিক সম্পদ রফতানিকারক দেশ এবং এর রফতানি আয়ের বেশির ভাগই আসে অপরিশোধিত তেল ও গ্যাস রফতানি থেকে। তেলের দাম কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাশিয়ার সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর বহিরাগত ভূ-অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রভাব ও এই উন্নয়নের প্রতি মস্কো কী প্রতিক্রিয়া দর্শাচ্ছে, তা ক্রমাগত পর্যালোচনার দাবি রাখে।
২০২৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে রাশিয়ার অর্থনীতি
ট্রাম্পের আগমনে রাশিয়ার বাজার ইতিবাচক ভাবে সাড়া দিয়েছে; মস্কোর স্টক এক্সচেঞ্জ ৬% বৃদ্ধি পেয়েছে এবং রুবল শক্তিশালী হতে শুরু করেছে এবং এমনটা ঘটেছে মূলত ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা হ্রাস পাওয়া, আমদানির জন্য অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে যাওয়া এবং মস্কোর উপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার ক্রমবর্ধমান সম্ভাবনার দরুন। রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রুবল আরও শক্তিশালী হয়েছে। তবে একই সময়ে বিশ্বব্যাপী চাহিদার অভাব, মন্দার ক্রমবর্ধমান হুমকি, উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ওপিইসি+-এর নীতিতে পরিবর্তন এবং ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের জন্য চাপের কারণে তেলের দাম কমতে শুরু করে।
ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেলের দাম ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতি ব্যারেল ৭৬ ডলার থেকে এপ্রিলের শুরুতে ৫৯ ডলারে নেমে এসেছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির পর এই মূল্য সর্বনিম্ন। একই ভাবে, রাশিয়ান ইউরাল অপরিশোধিত তেলের দাম ক্রমশ কমছে। ৬ এপ্রিল এর দাম প্রতি ব্যারেল ৫২ ডলারে নেমে এসেছে (দ্রষ্টব্য চিত্ররেখ ১.১)। রাশিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, তেল ও গ্যাস রাজস্ব থেকে বাজেট ১৭% কমেছে। এই ঘটনাপ্রবাহ অদূর ভবিষ্যতে রুবল দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনার দিকে ইঙ্গিত দেয়। এফজি ফিনামের বিশ্লেষক আলেকজান্ডার পোটাভিনের মতে, বসন্তের শেষ নাগাদ রুবল ডলার প্রতি ৯০-৯৫ ইউনিটে দুর্বল হতে পারে।
চিত্ররেখ ১.১: ইউরাল অপরিশোধিত তেলের দাম ২০২৪ সালের এপ্রিল মাস থেকে ২০২৫ সালের ৪ এপ্রিল
দ্রষ্টব্য: ইএসপিও এবং এসওকেওএল-এর মতো অন্যান্য রাশিয়ান গ্রেডের গড় মাসিক মূল্য অনুপলব্ধ
সূত্র: অর্থনৈতিক উন্নয়ন মন্ত্রক, রাশিয়ান ফেডারেশন
ট্রাম্প ৯০ দিনের বিরতি ঘোষণা করলেও রাশিয়ার বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার চিনকে এই বিরতির অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি এবং বেজিংয়ের উপর ২৪৫%-এরও বেশি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ২০২৪ সালে চিনের সঙ্গে রাশিয়ার মোট বাণিজ্য ছিল ২৪৫ বিলিয়ন ডলার। চিনে রাশিয়ার মোট রফতানি ছিল ১২৯ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে ৯৫ বিলিয়ন ডলার ছিল খনিজ জ্বালানি (তেল, তেল পণ্য, কয়লা, গ্যাস)। ইউরোপীয় দেশগুলির সঙ্গে রাশিয়ার বাণিজ্য হ্রাস পাওয়ায় চিনের উপর তার অর্থনৈতিক নির্ভরতা কেবল বৃদ্ধি পেয়েছে।
তেলের দাম হ্রাসের ফলে বাজেট রাজস্ব হ্রাস পাবে এবং তেল ও তেল-সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলি রাজস্ব ক্ষতির সম্মুখীন হবে (দ্রষ্টব্য চিত্র ১.১)। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ হ্রাস পাবে এবং সরকারকে ঋণ নিতে হবে। নিষেধাজ্ঞার কারণে যেহেতু মস্কো আন্তর্জাতিক উৎস থেকে ঋণ সংগ্রহ করতে পারে না, তাই স্থানীয় ভাবে ঋণ সংগ্রহ করতে হবে। যুদ্ধের অর্থায়নের দরুন ব্যয় ক্রমশ বাড়তে থাকায় এটি অর্থনীতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলবে। সুতরাং, সুদের হার - যা সর্বকালের সর্বোচ্চ ২১% - দ্রুতই যে হ্রাস পাবে, এমন সম্ভাবনা কম। এর অর্থ হল এই যে, ব্যবসা ও ভোক্তাদের জন্য ঋণ ব্যয়বহুল হবে এবং অর্থনৈতিক কার্যকলাপ ধীর হয়ে যাবে।
চিত্র ১.১: খাত অনুসারে ২০২৫-২০২৬ সালের জন্য লাভের গড় হ্রাস
সূত্র: বিসিএস ওয়ার্ল্ড অফ ইনভেস্টমেন্টস
প্রেসিডেন্সিয়াল অ্যাকাডেমির ইন্টারন্যাশনাল ল্যাবরেটরির ফরেন ট্রেড রিসার্চের গবেষক আলেকজান্ডার ফিরানচুকের মতে, অদূর ভবিষ্যতে ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়ান রফতানির উপর, বিশেষ করে ধাতু, সার এবং জ্বালানি বাহকগুলির উপর শুল্ক আরোপ করতে পারে, যার ফলে সরবরাহ হ্রাস পাবে এবং রফতানি আয়ের উপর সামান্য প্রভাব পড়বে। অতএব, মস্কোর সরবরাহ ও আর্থিক পরিকল্পনাকে নতুন অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা অর্থনীতিকে আরও বহিরাগত ধাক্কা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে। এমনটা মহামন্দার সময়েও দেখা গিয়েছিল, যখন ইউএসএসআর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক উত্থানের সময় দ্রুত শিল্পায়ন বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছিল।
চিত্ররেখ ১.২: ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত রাশিয়ায় সামষ্টিক-অর্থনৈতিক সূচক
সূত্র: ব্যাঙ্ক অফ রাশিয়া
রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ
মস্কো সাম্প্রতিক আরোপিত শুল্কের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে এবং জোর দিয়ে বলেছে যে, এগুলি বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুতর ঝুঁকি বহন করে, যার ফলে বাণিজ্য উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে।
অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে, ক্রেমলিন অপেক্ষা করা এবং পর্যবেক্ষণ করার পদ্ধতিই গ্রহণ করেছে। রাশিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের গভর্নর এলভিরা নাবিউলিনা বলেছেন যে, ‘বাজেট নিয়ম’-এর মতো পাল্টা ব্যবস্থা অর্থনীতিকে বহিরাগত ধাক্কা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে। বাজেট নিয়মের অধীনে, অর্থ মন্ত্রক জাতীয় সম্পদ তহবিল থেকে তহবিল প্রত্যাহার করবে, যা মূলত তেল ও গ্যাস রফতানি থেকে উৎপাদিত উদ্বৃত্ত রাজস্ব দ্বারা অর্থায়িত আর্থিক সহায়তা, যার মূল্য বর্তমানে ১৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। পণ্যের দাম হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধাক্কাগুলিকে স্থিতিশীল করতে সম্ভবত এনডব্লিউএফ ব্যবহার করা হবে। তবে এমনটা করার দরুন অর্থনীতি আরও অস্থিতিশীল হবে। কারণ ইউক্রেনের যুদ্ধ শেষ করার বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে আলোচনা বিবেচনা করলেও দ্রুত নিষেধাজ্ঞা শিথিলকরণ এবং রাশিয়ায় পশ্চিমি ব্যবসার প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা নিতান্তই অসম্ভাব্য বলে মনে হচ্ছে।
সামনের পথ
৯ এপ্রিল ট্রাম্পের ৯০ দিনের জন্য শুল্ক স্থগিতের ঘোষণার ফলে তেলের দাম কিছুটা কমেছে। অন্য কারণগুলি - যেমন বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধি পর্যায়ক্রমে পুনরুদ্ধার - তেলের দাম স্থিতিশীল করেছে, রুবলের উপর চাপ কমিয়েছে। তবে মন্দার পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী চাহিদা হ্রাসের কারণে রাশিয়ার রফতানির পরিমাণ হ্রাস পাবে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সম্ভাবনা নিতান্তই অমূলক বলে মনে হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাশিয়াকে অর্থনীতিকে নিম্ন প্রবৃদ্ধির হার, ব্যবসা করার উচ্চ ব্যয় এবং অর্থনৈতিক কার্যকলাপের সঙ্গে লড়াই করতে হবে। এর পাশাপাশি রাষ্ট্রের উপর নির্ভরতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বহিরাগত ধাক্কা থেকেও নিজেকে রক্ষা করতে হবে।
রাজোলি সিদ্ধার্থ জয়প্রকাশ অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Rajoli Siddharth Jayaprakash is a Research Assistant with the ORF Strategic Studies programme, focusing on Russia's domestic politics and economy, Russia's grand strategy, and India-Russia ...
Read More +