-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে সাম্প্রতিক বৈঠকটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যখন রাশিয়ার তেল আমদানি অব্যাহত রাখার জন্য ভারতের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরোক্ষ শুল্ক আরোপের পটভূমিতে ভারত-মার্কিন সম্পর্কে টানাপড়েনের সৃষ্টি হয়েছিল। ওয়াশিংটন অভিযোগ করেছে যে, ভারত রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে। নয়াদিল্লি এই অভিযোগগুলি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে যে, ভারতের ক্রয় তার জ্বালানি নিরাপত্তার চাহিদা দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। সেকেন্ডারি ট্যারিফ বা পরোক্ষ শুল্ক ভারতের নীতিগত সমীকরণে একটি কূটনৈতিক পুনর্বিন্যাসকেই উৎসাহিত করেছে এবং মস্কোর সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্ক আরও জোরদার করেছে।
ভারত-রাশিয়া অংশীদারিত্ব একটি পরিকল্পিত অংশীদারিত্ব, আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা পুনর্গঠন এবং পশ্চিমি নেতৃত্বাধীন ব্যবস্থার সংস্কারের পক্ষে যৌথ স্বার্থের উপর ভিত্তি করে নির্মিত। উভয় দেশ সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন, জি২০ এবং ব্রিকসের মতো আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক মঞ্চে একসঙ্গে কাজ করে।
সেকেন্ডারি ট্যারিফ বা পরোক্ষ শুল্ক ভারতের নীতিগত সমীকরণে একটি কূটনৈতিক পুনর্বিন্যাসকেই উৎসাহিত করেছে এবং মস্কোর সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্ক আরও জোরদার করেছে।
এই সারিবদ্ধতার ইতিহাস একটি সময়-পরীক্ষিত অংশীদারিত্বের ভিত্তি তৈরি করেছে, যা প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে তার প্রাসঙ্গিকতা খুঁজে পাচ্ছে। মস্কো এখনও নয়াদিল্লির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা অংশীদার। ভারতের ৬০%-এরও বেশি সামরিক মঞ্চ রুশ উৎপাদিত এবং ভারতের প্রতিরক্ষা আমদানিতে রাশিয়ার অংশ হ্রাস পাওয়া সত্ত্বেও - ২০১৭ সালে ৬২% থেকে ২০২২ সালে ৪৫% - উভয় পক্ষই সামরিক প্রযুক্তিগত অংশীদারিত্ব জোরদার করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দুই দেশের সম্পর্ক তাত্পর্যপূর্ণ ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪ সালে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৬৮.৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা অতিমারি-পূর্ববর্তী ১০.১ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যের পর থেকে ৫.৮ গুণ বেশি। ভারত রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ব্যবস্থায় যোগ দেয়নি। এর ফলে ভারত মস্কোর দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হয়ে উঠেছে। বাণিজ্যের পরিমাণে এই বৃদ্ধি মূলত ছাড়যুক্ত রুশ অপরিশোধিত তেল আমদানির দ্বারা চালিত হয়েছে এবং অন্য দিকে তেল-বহির্ভূত বাণিজ্য ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাণিজ্যের পরিসরে তেলের সমীকরণ
ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের আগে ভারতের তেল আমদানি মূলত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি থেকে হত। তবে ২০২২ সাল থেকে নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাশিয়ার তেল আমদানির উপর ৬০ ডলারের মূল্যসীমা আরোপের দরুন পশ্চিমি বিশ্বে বাজার সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। রুশ রফতানিকারকরা প্রতি ব্যারেল ১৫-২০ ডলার পর্যন্ত ছাড় দিয়ে তেল বিক্রি করেছিল, যার ফলে ভারতীয় পরিশোধকরা তেল সরবরাহ চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়েছিল। নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উভয় দেশই জাতীয় মুদ্রায় অর্থ প্রদান এবং সামুদ্রিক পণ্যসম্ভারের বিমা করার জন্য ব্যবস্থা তৈরি করেছিল। এই উন্নয়নের ফলে নয়াদিল্লি ২০২২ সাল থেকে ১৪০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের রুশ অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে। ছাড়ের ফলে মোট সঞ্চয় হয়েছে ১২.৬ বিলিয়ন ডলার, যা দেশীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করেছে এবং বিশ্বব্যাপী তেল বাজারকে স্থিতিশীল করেছে।
মস্কো থেকে ছাড়যুক্ত অপরিশোধিত তেল আমদানি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন কোনও অগ্রগতি নয়। ১৯৬০-এর দশকে, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতে ১০-২০% ছাড়ে তেল বিক্রি করেছিল। ভারতের মতো মূল্য-সংবেদনশীল বাজারে, এই ধরনের ছাড় সরাসরি ক্রয়ের পরিমাণকে প্রভাবিত করে। ২০২৫ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে রাশিয়ান স্থাপনাগুলিতে ইউক্রেনীয় হামলার কারণে আমদানি প্রতিদিন ১৬৫,০০০ টনে নেমে আসে এবং প্রতি ব্যারেলে ছাড় ১-২ ডলারে নেমে আসে। সেকেন্ডারি ট্যারিফ চালু হওয়ার পর, ছাড় আবারও বেড়েছে, যার ফলে পরিশোধকরা ক্রয় বাড়িয়েছে। রয়টার্সের অনুমান, এই মাসে রাশিয়া থেকে ভারতের অপরিশোধিত তেল আমদানি ১০-২০% বৃদ্ধি পাবে।
মার্কিন ব্যবসাগুলি রুশ জ্বালানি প্রকল্পে বিনিয়োগের দিকে নজর রাখলেও ভারতের উপর শুল্ক আরোপের জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের নিরপেক্ষ যুক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
ভারত রাশিয়ার প্রায় ৪০% তেল আমদানি করে। ছাড় যদি সামান্যও হয়, তবুও তেলশোধক সংস্থাগুলি রুশ অপরিশোধিত তেল কেনা বন্ধ করে দেবে এমন সম্ভাবনা কম।, কারণ স্বল্পমেয়াদে দিনে ২০ লক্ষ ব্যারেলের মতো তেলের পরিমাণ পূরণ করা সম্ভব হবে না। উপরন্তু, মার্কিন ব্যবসাগুলি রুশ জ্বালানি প্রকল্পে বিনিয়োগের দিকে নজর রাখলেও ভারতের উপর শুল্ক আরোপের জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের নিরপেক্ষ যুক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
ইউক্রেন যুদ্ধের পর পশ্চিমিদের চাপ সত্ত্বেও নয়াদিল্লি মস্কোর সঙ্গে তার যোগাযোগ বজায় রেখেছে। তবে ভারত-মার্কিন সম্পর্কের সাম্প্রতিক অস্থিরতা রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করার জন্য কেবল অনুপ্রেরণাই জুগিয়েছে, যা প্রতিরক্ষা চুক্তি ত্বরান্বিত করার আহ্বান এবং প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, আর্কটিক এবং তার ঊর্ধ্বে উঠে সহযোগিতা এগিয়ে নেওয়ার জন্য আইআরআইজিসি কাঠামোর অধীনে বিদ্যমান আলোচনায় স্পষ্ট। অনেক কারণই এই দ্বিপাক্ষিক অংশীদারিত্বকে প্রভাবিত করবে, বিশেষ করে মার্কিন-রাশিয়া সম্পর্ক, ইউক্রেনের যুদ্ধের সম্ভাব্য শর্তাবলি এবং বিশেষ করে রাশিয়া-চিন সম্পর্ক। রাশিয়ার মতো - যারা পশ্চিম-বিরোধী কাঠামোর মধ্যে চিনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তার পররাষ্ট্র নীতি সংজ্ঞায়িত করে চলেছে – অবস্থান নিতে ভারত ইচ্ছুক নয় এবং ভারত বিষয়টিকে পশ্চিম-বিরোধী নয়, বরং ‘অ-পশ্চিম’ হিসাবেই সংজ্ঞায়িত করতে থাকবে। তবে এ বিষয়ে সন্দেহ নেই যে, ট্রাম্পের খামখেয়ালি আচরণ এবং ইউক্রেন যুদ্ধকে ‘মোদীর যুদ্ধ’ হিসাবে বর্ণনা করা কেবল এ কথাই সুনিশ্চিত করবে যে, নয়াদিল্লি মস্কোর সঙ্গে তার বাস্তব যোগাযোগ অব্যাহত রেখেই এগোবে।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় এনডিটিভি-তে।
নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত লেখক(দের) ব্যক্তিগত।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...
Read More +
Rajoli Siddharth Jayaprakash is a Junior Fellow with the ORF Strategic Studies programme, focusing on Russia’s foreign policy and economy, and India-Russia relations. Siddharth is a ...
Read More +