Image Source: Getty
২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ গ্রহণ করবেন। ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচন এবং অব্যবহিত ভাবে ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন একাধিক দেশে কৌতূহল ও ‘শঙ্কা’ উস্কে দিয়েছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় তিনি একটি সুস্পষ্ট ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেন। তাঁর মতাদর্শ ও বিদেশনীতির লক্ষ্যগুলি বর্ধিত দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা, সমন্বয় ও মত বিনিময়ের উপর ক্রমাগত জোর দেবে। এর পাশাপাশি তাঁর নেতৃত্বের ধরন, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রকৃতি ও বৃহৎ ক্ষমতার রাজনীতির ব্যবস্থাপনা নতুন সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ প্রদান করবে।
মার্কিন-ভারত সম্পর্কের পরামিতি
এই শতকের শুরু থেকে ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই তাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি ঊর্ধ্ব গতির সাক্ষী থেকেছে। এই অঞ্চলে দেশটির নেতৃত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমনকি ২০০৯ সালে ভারতকে একটি প্রধান নিরাপত্তা প্রদানকারীর তকমা প্রদান করেছিল। বাইডেন প্রশাসনও (২০২১-২৪) অনুরূপ দৃষ্টিভঙ্গি অনুকরণ করেছে। চিনের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসন ও সক্রিয়তার দরুন ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই দক্ষিণ এশিয়ায় তাদের সম্পৃক্ততা ও আন্তঃসহযোগিতাকে জোরদার করেছে। তার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চিনকে মোকাবিলা করতে এবং মূল্যবোধভিত্তিক ব্যবস্থা বজায় রাখতে ভারতের আঞ্চলিক নেতৃত্বের পরিপূরক হয়ে উঠতে চায়। নেপালে মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ কর্পোরেশন (এমসিসি) প্রকল্পে ভারতের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা এবং শ্রীলঙ্কাকে তার অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসতে মার্কিন সাহায্য আসলে ভারত ও মার্কিন ক্রমবর্ধমান সহযোগিতাকেই দর্শায়। এ ছাড়াও, আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর পাকিস্তানের সঙ্গে বাইডেনের শীতল সম্পর্ক ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এই অঞ্চলের জন্য একটি অভিন্ন সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে।
চিনের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসন ও সক্রিয়তার দরুন ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই দক্ষিণ এশিয়ায় তাদের সম্পৃক্ততা ও আন্তঃসহযোগিতাকে জোরদার করেছে।
এই সম্পর্ক মতবিরোধ ও মতপার্থক্য মুক্ত নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতার নিরিখে নয়াদিল্লির প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল চিনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং বিকল্প উন্নয়ন অংশীদার প্রদান করা। যাই হোক, বাইডেন প্রশাসন মূল্যবোধ-ভিত্তিক ব্যবস্থা বজায় রাখা ও চিনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রেক্ষিতে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বিষয়ে কিছু দেশের উপর নজরদারি চালিয়েছে। ভারত যখন বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারকে সমর্থন করেছিল এবং বাস্তবসম্মত ভাবে মায়ানমারের হুন্তার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিল, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় প্রশাসনের উপর চাপ বৃদ্ধি করেছে এবং সুনির্দিষ্ট আর্থিক নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে। এই চাপ দেশগুলিকে চিনের ঘনিষ্ঠ করে তুলেছে। একই রকম ভাবে রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা করার জন্য ভারতীয় সংস্থাগুলির উপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা এবং আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ শ্রীলঙ্কায় দু’টি ভারতীয় প্রকল্পকে ব্যর্থ করেছে, যা ভারতকে তার সিদ্ধান্তের ফলাফলের সম্মুখে দাঁড় করিয়েছে।
বিরক্তির কারণ হ্রাস
যাই হোক, ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন সম্ভবত এই বিরক্তির কারণগুলিকে প্রশমিত করবে। তাঁর প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প নিজের বৈদেশিক নীতিতে বোঝা ভাগ করে নেওয়া, পারস্পরিকতা, জাতীয়তাবাদ এবং চিনের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইঙ্গিত অব্যাহত রেখেছিলেন। ট্রাম্প যদি কথা রাখেন, তা হলে তিনি মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও দেশ গঠনের উপর কম গুরুত্ব দিয়ে চিনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলাকে অগ্রাধিকার দেবেন। তিনি আরও চাইবেন যে, ভারত এই অঞ্চলে নেতৃত্ব দান করুক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্যে একজোট হয়ে কাজ করুক। এই সব কিছুই মতপার্থক্যের পরিসর হ্রাস করবে এবং উভয় দেশের মধ্যে সহযোগিতামূলক নীতির সংখ্যা বৃদ্ধি করবে। উভয় দেশের মধ্যে আর একটি সম্ভাব্য বিরক্তির কারণ ছিল আফগানিস্তান ও পাকিস্তান সম্পর্কে দুই দেশের নীতি। তাঁর প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প পাকিস্তানের সঙ্গে সহযোগিতা চালানোর পাশাপাশি দেশটিকে শাস্তিও দিয়েছিলেন এবং আফগানিস্তানে একটি স্থিতিশীল সমাধান খোঁজার জন্য ভারতকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে আহ্বান করেছিলেন। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার এবং পাকিস্তানের ন্যূনতম কৌশলগত গুরুত্বের দরুন সমস্যাটি এখন আর ততটা তীব্র নয়।
গণতন্ত্র, দেশ গঠন এবং মানবাধিকারের উপর ট্রাম্পের স্বল্প মনোযোগ (তাঁর প্রথম মেয়াদের মতোই) শ্রীলঙ্কাকেও উপকৃত করবে, যেখানে একটি নতুন সরকার এখনও অর্থনৈতিক সহায়তা প্রত্যাশী এবং দীর্ঘমেয়াদি তামিল সমস্যার স্থায়ী সমাধান খুঁজছে।
তাঁর প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প সক্ষমতা বৃদ্ধি, উন্নয়ন সহায়তা, প্রতিরক্ষা চুক্তি এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে সহযোগিতার প্রচার চালিয়েছিলেন। চিনের মোকাবিলা এবং ভারতকে পরিপূরক হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষার দরুন এই ধরনের সহায়তা অব্যাহত থাকবে। গণতন্ত্র, দেশ গঠন এবং মানবাধিকারের উপর ট্রাম্পের স্বল্প মনোযোগ (তাঁর প্রথম মেয়াদের মতোই) শ্রীলঙ্কাকেও উপকৃত করবে, যেখানে একটি নতুন সরকার এখনও অর্থনৈতিক সহায়তা প্রত্যাশী এবং দীর্ঘমেয়াদি তামিল সমস্যার স্থায়ী সমাধান খুঁজছে। এই পদ্ধতিতে মায়ানমার ও তালিবানও উপকৃত হতে পারে, যদিও ওয়াশিংটন এই দু’টি দেশের সঙ্গে কতটা সম্পৃক্ত হতে চায় তার উপর বিষয়টি নির্ভর করবে। যাই হোক, নতুন শাসনামলে রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে পথ করে নেওয়া বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে ও তার প্রাপ্ত সহায়তার সম্ভাব্য হ্রাস ঘটবে।
চিন এবং সংশ্লিষ্ট অঞ্চল
চিনের প্রতি ট্রাম্পের দ্বন্দ্বমূলক দৃষ্টিভঙ্গি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিকে আরও চাপে ফেলবে। তাঁর খামখেয়ালি সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে, ওয়াশিংটন সম্ভবত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির ক্ষমতা এবং একটি পরাশক্তির অপর পরাশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই সম্পর্কে আরও কম সহনশীল হয়ে উঠবে। এ ছাড়াও, এই অঞ্চলের ধারাবাহিক রাজনীতিকরণ এবং বিনিয়োগ, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ও চুক্তির বিষয়ে অস্পষ্টতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে পরিপূরকতার নিরিখে আরও চাপের সৃষ্টি করবে। যাই হোক, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি আনা এবং পশ্চিম এশিয়ার সঙ্কট সমাধানের (সফল হলে) বিষয়ে তাঁর প্রতিশ্রুতি দক্ষিণ এশিয়ার দুর্বল অর্থনীতিকে তাদের খাদ্য ও জ্বালানি মূল্যস্ফীতির চাপ কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।
সমগ্র বিশ্ব যখন ট্রাম্প ২.০-কে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে, তখন দক্ষিণ এশিয়া বিস্তৃত কাঠামোগত পরিবর্তন থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে পারবে না। তবুও, অঞ্চল আরও ধারাবাহিকতার সাক্ষী থাকবে বলে আশা করা যায়। ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন দক্ষিণ এশিয়ায় তাদের সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে এবং তাদের দূরত্বের মাঝে সেতুবন্ধন করবে, তখন ট্রাম্পের মতাদর্শ, নেতৃত্বের ধরন এবং মহান ক্ষমতার রাজনীতির ব্যবস্থাপনা এই অঞ্চলের জন্য সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ উভয়ই তুলে ধরবে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলি চিন ও ভারতের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখার পাশাপাশি কী ভাবে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে মানিয়ে নেবে, তার উপর সকলের নজর থাকবে।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় দ্য হিন্দু-তে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.