Published on Feb 28, 2025 Updated 0 Hours ago

ট্রাম্প ২.০-র আমেরিকা ফার্স্ট নীতি এবং উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে দেশটির কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্ব এশীয় মিত্রদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করেছে এবং এটি এমন একটি পদক্ষেপ, যা চিনের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের অর্থনৈতিক যুদ্ধে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে

ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ এবং মার্কিন-দক্ষিণ কোরিয়া-জাপান নিরাপত্তা জোটের ভবিষ্যৎ

ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মিত্রদের মধ্যে উদ্বেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন যে, ট্রাম্প তাঁর আমেরিকা ফার্স্ট কর্মসূচির দরুন মিত্রদের উদ্বেগের চাইতেও মার্কিন নিরাপত্তা স্বার্থকে বেশি প্রাধান্য দেবেন। ইউরোপীয় মিত্ররা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশনের উপর (ন্যাটো) ভবিষ্যতে ট্রাম্পবাদের প্রভাব সম্পর্কে বিশেষ ভাবে উদ্বিগ্ন। আবার উত্তর-পূর্ব এশিয়ার মিত্ররা ট্রাইল্যাটেরাল সিকিউরিটি কোঅপারেশনের (টিএসসি) ভবিষ্য নিয়ে সমান রকমের উদ্বিগ্ন। দক্ষিণ কোরিয়া জাপান ট্রাম্প যুগের প্রত্যাবর্তনকে যথেষ্ট ভয়ের নজরেই দেখছে। কারণ এটি একটি লেনদেনমূলক মার্কিন বিদেশনীতির আগমনের প্রতীক, যা আসলে মিত্রদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত হুমকি দেওয়ার বিষয়ে গর্ব বোধ করে। পূর্ববর্তী মেয়াদের উলটো দিকে হেঁটে আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক গতিশীলতা কৌশলগত, রাজনৈতিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের কারণে বর্তমান পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

ইউরোপীয় মিত্ররা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশনের (ন্যাটো) উপর ভবিষ্যতে ট্রাম্পবাদের প্রভাব সম্পর্কে বিশেষ ভাবে উদ্বিগ্ন। আবার উত্তর-পূর্ব এশিয়ার মিত্ররা ট্রাইল্যাটেরাল সিকিউরিটি কোঅপারেশনের (টিএসসি) ভবিষ্য নিয়ে সমান রকমের উদ্বিগ্ন।

ত্রিপাক্ষিক নিরাপত্তা সহযোগিতার বিবর্তন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া জাপানের টিএসসি গত চার বছরে বাইডেন প্রশাসনের সময় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে এবং ক্লিনটন প্রশাসনের অধীনে ১৯৯৪ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তিবদ্ধ কাঠামো টিএসসি-র ভিত্তি প্রদান করেছিলট্রাইল্যাটেরাল কোঅর্ডিনেশন ওভারসাইট গ্রুপ-এর (টিসিওজি) মাধ্যমে - যা ২০০৩ সাল পর্যন্ত কার্যকর ছিল - মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক সমস্যা সমাধানের জন্য তার উত্তর-পূর্ব এশীয় মিত্রদের সঙ্গে নীতি সমন্বয়ের মূল্য স্বীকার করেছিল। তবে বুশ প্রশাসন সমস্যাটি সমাধানের জন্য বহুপাক্ষিক প্রক্রিয়াকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল কারণ তারা দ্বিপাক্ষিক ত্রিপাক্ষিক সম্পৃক্ততার (টিসিওজি) ফলাফল নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিল। বুশ বেজিংকে ত্রিপাক্ষিক ও ছয়-পাক্ষিক আলোচনায় মধ্যস্থতা করার জন্য তালিকাভুক্ত করেন, যা ২০০৭ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ফলাফল ছাড়াই কার্যকর ছিল।

যাই হোক, পুনঃভারসাম্যমূলক কৌশলের দরুন ওবামা প্রশাসন তাঁর এশিয়া-প্যাসিফিক মিত্রদের সঙ্গে সহযোগিতার বিকাশের উপর জোর দিয়ে টিএসসি-কে পুনরুজ্জীবিত করে, যার মধ্যে টোকিয়ো সিওলেসঙ্গে ত্রিপাক্ষিক সম্পৃক্ততা অন্তর্ভুক্ত ছিল। উপরন্তু, বাইডেন একটি কূটনীতি প্রথম (ডিপ্লোমেসি ফার্স্ট) পদ্ধতির অগ্রাধিকার দিয়ে এবং একটি ল্যাটিস ফেন্স স্ট্রাকচার পদ্ধতিতে মনোনিবেশ করে টিএসসি-র সম্ভাবনাকে আরও বৃদ্ধি করেছেন। এর পাশাপাশি বাইডেন উত্তর কোরিয়ার প্রসঙ্গ এবং এর প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের ঊর্ধ্বে উঠে টিএসসি-মনোযোগের বিস্তার ঘটিয়ে দুটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জনে অবদান রেখেছিলেন। তিনি ইন্দো-প্যাসিফিক-কোয়াড (কোয়াড্রিল্যাটেরাল সিকিউরিটি ডায়লগ, যা কিনা অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি জোট), টিএসপি, স্কোয়াড (মার্কিন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ফিলিপিন্স), আইপিইএফ (ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক ফর প্রসপারিটি) এবং অউকাস (অস্ট্রেলিয়া, সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) গঠন, সম্প্রসারণ ও নানা ক্ষুদ্রপাক্ষিকের শৃঙ্খলের মধ্যেকার সংযোগ সশক্ত করে নিজের মেয়াদ শেষ করেন। তাঁর লক্ষ্যই ছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেন বিবর্তিত আঞ্চলিক শৃঙ্খলার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে। মার্কিন বিদেশনীতিতে এই পরিবর্তনগুলি তার মিত্রদের নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য দায়বদ্ধ করে তুলেছিল

বাইডেন একটি কূটনীতি-প্রথম (ডিপ্লোমেসি ফার্স্ট) পদ্ধতির অগ্রাধিকার দিয়ে এবং একটি ল্যাটিস ফেন্স কাঠামো মনোনিবেশ করে টিএসসি-র সম্ভাবনাকে আরও বৃদ্ধি করেছেন।

বাইডেনের বিপরীতে আবার ট্রাম্প বহুপাক্ষিক ক্ষেত্রে কাজ করতে পছন্দ করেন না। তাঁর প্রশাসনের প্রথম মেয়াদে দেখা গিয়েছিল, তিনি বিশ্বাস করতেন যে, মার্কিন স্বার্থ রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি বহুপাক্ষিকতার পরিবর্তে দ্বিপাক্ষিকতার মাধ্যমে আরও কার্যকর ভাবে অর্জন করা যেতে পারে। যাই হোক, এই কৌশলগত পন্থা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুই মিত্র দক্ষিণ কোরিয়া জাপানের জন্য মোটেও ভাল ছিল না। অতএব, নিজের কৃতিত্ব রক্ষার জন্য বাইডেন তাঁর মিত্রদের সাথে কাজ করে, তিনটি দেশের রাজনৈতিক উন্নয়নের জন্য টিএসসিকে দুর্ভেদ্য করে তুলেছিলেন। তা সত্ত্বেও, প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের পরেও ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত স্বভাবের কারণে টিএসসির ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

ট্রাম্প, ত্রিপাক্ষিক এবং উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে বিচ্ছিন্নকরণ

দশক-ব্যাপী বিবর্তনের মাঝেই তিনটি কারণ প্রাথমিক ভাবে টিএসসি-র সাফল্যে অবদান রেখেছে: মার্কিন নেতৃত্বের প্রকৃতি, দক্ষিণ কোরিয়া-জাপান সম্পর্কের অবস্থা এবং উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপলব্ধ হুমকি। তিনটির মধ্যে প্রথম দুটি কারণ প্রাথমিক ভাবে টিএসসি-র গতিপথ নির্ধারণ করেছে এবং তৃতীয়টি ট্রাম্পের মেয়াদের আগে পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে প্রেসিডেন্টের অধীনে স্থির ছিল। এর পাশাপাশি উত্তর কোরিয়ার ধারণা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সমীকরণটি পরিবর্তিত হয় এবং তৃতীয় কারণটি আরও বেশি করে প্রধান হয়ে ওঠে।

সুতরাং, ট্রাম্পের অধীনে আমেরিকা-উত্তর কোরিয়া সম্পর্কের উন্নতির সম্ভাবনা ত্রিপাক্ষিক নেতা হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। ট্রাম্প উত্তর কোরিয়াকে প্ররোচিত করার বিষয়ে তাঁর প্রথম মেয়াদে খুব বেশি অর্জন করতে না পারলেও এই পরিবর্তনটি টিএসসি-র সাফল্যের উপর মার্কিন নেতৃত্বের প্রভাব এবং তার মিত্রের (দক্ষিণ কোরিয়ার) জাতীয় নিরাপত্তার উপর এর সরাসরি প্রভাবকে দর্শায়। সুতরাং, ট্রাম্পের অধীনে মার্কিন নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তাই ট্রাম্প ক্ষমতায় ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন  যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর কোরিয়া নীতি বিশেষ করে তার মিত্রদের জন্য আবার বিতর্কের বিষয় হয়ে উঠেছে।

ট্রাম্প উত্তর কোরিয়াকে প্ররোচিত করার বিষয়ে তাঁর প্রথম মেয়াদে খুব বেশি অর্জন করতে না পারলেও এই পরিবর্তনটি টিএসসি-র সাফল্যের উপর মার্কিন নেতৃত্বের প্রভাব এবং তার মিত্রের (দক্ষিণ কোরিয়ার) জাতীয় নিরাপত্তার উপর এর সরাসরি প্রভাবকে দর্শায়।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদন এবং জনসাধারণের মন্তব্যে এ কথা স্পষ্ট হয়েছে যে, ট্রাম্প সম্ভবত তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে তাঁর শীর্ষ সম্মেলন সংক্রান্ত কূটনীতি পুনরায় শুরু করবেন। উপরন্তু, তিনি উত্তর কোরিয়াকে একটি পারমাণবিক অস্ত্র রাষ্ট্র হিসাবে গ্রহণ করার কথাও বিবেচনা করছেন, যা দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশনীতি থেকে প্রস্থানকেই দর্শায়। ২০২৪ সালের রিপাবলিকান জাতীয় সম্মেলনে ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি কিম জং উনের সঙ্গে তাঁর উষ্ণ সম্পর্কের বিষয়ে গর্ব করে বলেছিলেন, ‘আমরা উত্তর কোরিয়া থেকে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ বন্ধ করে দিয়েছি। এখন উত্তর কোরিয়া আবারও কাজ করতে শুরু করেছে। তবে আমরা কিম জং উন-এর সঙ্গেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।’ এটি প্রেসিডেন্ট হওয়ার পাশাপাশি কিম জং উনের সঙ্গে আবার আলোচনায় ফিরে আসার ট্রাম্পের অভিপ্রায়কেই দর্শায়। তিনি উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক শক্তি হিসাবে উল্লেখ করেছেন এবং দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় শুরু করার ইচ্ছা ঘোষণা করেছেন। ফলে যা অনুমান করা হচ্ছিল, পরিস্থিতি সে দিকেই এগোচ্ছে এবং উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির মার্কিন ইচ্ছা দক্ষিণ কোরিয়ার কাছ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেবে।

ট্রাম্প ছাড়াও এই অনুভূতি তাঁর মন্ত্রিসভা ও প্রবীণ কূটনৈতিকদের সঙ্গেও অনুরণিত হয়, যাঁরা তাঁর উত্তর কোরিয়া নীতির প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছেতাঁর সেনেটের নিশ্চিতকরণ শুনানিতে ট্রাম্পের সেক্রেটারি অফ স্টেট মার্কো রুবিও বর্তমান উত্তর কোরিয়া নীতি বদলের প্রস্তাব দিয়ে বলেছিলেন,আমি মনে করি বিস্তৃত উত্তর কোরিয়ার নীতিগুলিকে গুরুতর ভাবে খুঁটিয়ে দেখা জরুরি।’ তাঁএ হেন মন্তব্য বছর আগের অবস্থান থেকে শুধু পরিবর্তনই নয়, উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র হিসেবে গ্রহণ করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দশকব্যাপী বিরোধিতার কারণেও হয়েছে। একই ভাবে, ইউএস সেক্রেটারি অফ ডিফেন্স পিট হেগসেথ উত্তর কোরিয়াকে একটি পারমাণবিক শক্তি বলে অভিহিত করেছেন এটি এমন একটি ফ্রয়েডীয় স্লিপ (অবচেতনে অনিচ্ছাকৃত ভুল স্পষ্ট হয়) যা উত্তর কোরিয়ার বিষয়ে মার্কিন নীতি পরিবর্তনের বৈশিষ্ট্যকে দর্শায়। উপরন্তু, রিচার্ড গ্রেনেল (ট্রাম্পের স্পেশ্যাল মিশনের জন্য প্রেসিডেনশিয়াল এনভয় বা রাষ্ট্রপতির দূত), অ্যালেক্স ওং (ডেপুটি ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার) এবং এলব্রিজ কোলবি-র (আন্ডার সেক্রেটারি অফ ডিফেন্স ফর পলিসি) নিয়োগ উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে কূটনীতির পুনরুদ্ধার এবং মার্কিন-দক্ষিণ কোরিয়া জোট ত্রিদেশীয় সহযোগিতা থেকে দেশটিবিচ্ছিন্নকরণের দিকেই ইঙ্গিত দেয়।

বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা, প্রতিরক্ষা বাজেট এবং স্ট্যাটাস ফোর্স এগ্রিমেন্ট নিয়ে দ্বিপাক্ষিক মতানৈক্য সহযোগিতা ও সম্পৃক্ততার সুযোগকে আরও জটিল করে তোলে।

নীতি পরিবর্তন কিমের সঙ্গে কূটনৈতিক সাফল্যের গ্যারান্টি না দিলেও এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে বিভিন্ন হুমকির ধারণার জন্য মিত্রদের অস্বস্তিকেই তুলে ধরে, যা তাদের দেশের জন্য অবশ্যই একটি গুরুতর জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগ। এই মতানৈক্য জোট বা ত্রিপাক্ষিক কোনটির জন্যই ভাল লক্ষণ নয়। এর পাশাপাশি, বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা, প্রতিরক্ষা বাজেট এবং স্ট্যাটাস ফোর্স এগ্রিমেন্ট নিয়ে দ্বিপাক্ষিক মতানৈক্য সহযোগিতা ও সম্পৃক্ততার সুযোগকে আরও জটিল করে তোলে। বিরোধের আর কটি বিষয় ট্রাম্পের চিন-বিরোধী কর্মসূচি সম্পর্কিত, যা সম্ভবত ত্রিপাক্ষিকের জন্য বিতর্কের একটি বিন্দু হয়ে উঠবে কারণ এই সময় সি টোকিয়োর নিজেদের স্বার্থের সঙ্গে আপস করার সম্ভাবনা কম

ট্রাম্পের অধীনে ত্রিপাক্ষিক নিরাপত্তা সহযোগিতার ভবিষ্য কী?

ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবিত অভিষেক-পরবর্তী কোয়াড সম্মেলন তার ইন্দো-প্যাসিফিক মিত্র অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করার নতুন প্রতিশ্রুতিকেই দর্শায়, বাইডেনের কাজকেই এগিয়ে নিয়ে যায়। তবে সম্পৃক্ততার আকার, পরিসর ও কর্মসূচি অনিশ্চিত রয়ে গিয়েছে। এই অস্পষ্টতা এমনকি জাপান দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক নিরাপত্তা সহযোগিতা পর্যন্ত প্রসারিত। ট্রাম্পের আমেরিকা ফার্স্ট কর্মসূচির শীর্ষে থাকা দক্ষিণ কোরিয়ার অব্যাহত রাজনৈতিক চাপানউতোর ও চিনের সঙ্গে জাপানের সম্পর্ক সহজ করার মতো চ্যালেঞ্জ ত্রিপাক্ষিক নিরাপত্তা সহযোগিতার কাজকে আরও জটিল করে তুলবে।

এ ছাড়াও, ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি বাইডেনের সম্পূর্ণ বিপরীতে দাঁড়িয়েছে। বাইডেন তাঁর উত্তর-পূর্ব এশীয় মিত্রদের নিরাপত্তা উদ্বেগের সমাধান করার লক্ষ্যে কাজ করেছেনমাল্টিল্যাটেরাল স্যাংশন মনিটরিং টিমের মাধ্যমে – যা কিনা উত্তর কোরিয়ার নিষেধাজ্ঞা নিরীক্ষণের জন্য ১১ সদস্যবিশিষ্ট আন্তঃসরকারি প্রচেষ্টা, এবং টিএসসি-কে প্রাতিষ্ঠানিক করে তোলার মাধ্যমে এমনটা করেছিলেন। উভয় উদ্যোগের লক্ষ্য হল উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ জোরদার করা। যাই হোক, ট্রাম্পের অধীনে, এই উদ্যোগগুলির অগ্রগতি সম্ভবত তাঁর প্রশাসনের উত্তর কোরিয়া নীতির উপর নির্ভর করবে (যে ক্ষেত্রে পরিবর্তন প্রত্যাশিত)। আসন্ন প্রশাসনের উত্তর কোরিয়া নীতি সম্পর্কে অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও, সিল এবং টোকিয়ো সতর্কতার সঙ্গে বিপদসীমা পর্যবেক্ষণ করবে। প্রথমত, ট্রাম্প আনুষ্ঠানিক ভাবে উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক অস্ত্রের রাষ্ট্র হিসেবে গ্রহণ করবেন কি না এবং দ্বিতীয়ত, তিনি তাঁর উত্তর-পূর্ব এশিয়ার মিত্রদের প্রতি দৃঢ় নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করার কাজ অব্যাহত রাখবেন কি না।

রাশিয়া চিন ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের মতো কঠোর নিষেধাজ্ঞার প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে আগ্রহী নয়, যা কিমকে স্বস্তির পরিসর করে দিয়েছে। এই নতুন সম্পৃক্ততা কিম ট্রাম্পের মধ্যে যে কোনও সম্ভাব্য মীমাংসার সম্ভাবনাকে হ্রাস করে।

ট্রাম্প তাঁর মিত্রদের চাইতেও মার্কিন স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে প্রথম মেয়াদে বিপদরেখা প্রসারিত করার চেষ্টা করেছিলেন। তবে দ্বিতীয় মেয়াদটি ভিন্ন হবে কারণ এই মেয়াদের প্রেক্ষাপট শর্তগুলি ভিন্ন এবং মার্কিন মিত্রদের জন্য ঝুঁকিও অত্যন্ত বেশি। এ ছাড়া রাশিয়ার সঙ্গে আধা-মৈত্রীর পুনর্নবীকরণের কারণে এ বার ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার জন্য পিয়ংইয়ং অনেক শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। উপরন্তু, রাশিয়া চিন ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের মতো কঠোর নিষেধাজ্ঞার প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে আগ্রহী নয়, যা কিমকে স্বস্তির পরিসর করে দিয়েছে। এই নতুন সম্পৃক্ততা কিম ট্রাম্পের মধ্যে যে কোনও সম্ভাব্য মীমাংসার সম্ভাবনাকে হ্রাস করে। যাই হোক, এত কিছু সত্ত্বেও ট্রাম্প যদি পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে তাঁর কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা চালিয়ে যেতে চান, তবে তা অবশ্যই একটি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ বাজি হবে। এ ছাড়া, এ ধরনের পন্থা অবলম্বন করলে চিন-মার্কিন প্রতিযোগিতার বিষয়ে তাঁর মিত্রদের সমর্থন হারানোর ঝুঁকি থাকবে। এই মুহূর্তে মিত্র দেশগুলিকে বিচ্ছিন্ন করা অবশ্যই একটি ভুল সিদ্ধান্ত হবে।

অতএব, উত্তর কোরিয়া নীতি পুনর্নবীকরণের আগে ট্রাম্পকে তাঁর প্রশাসনের মেয়াদের প্রথম এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, ব্যর্থ হবেই এমন উদ্যোগে রাজনৈতিক পুঁজি বিনিয়োগ করবেন না কি জটিল আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি সমাধানে নিজের মিত্রদের সঙ্গেই কাজ করবেন ও মিত্রদের আস্থা অর্জন করবেন। এই সিদ্ধান্ত শুধু টিএসসি-র ভবিষ্যতের জন্য নয়, উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় এ জোটের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ হবে।

 


অভিষেক শর্মা অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.