Author : Avni Arora

Published on Feb 02, 2022 Updated 0 Hours ago

যে হেতু নারীরাই ক্রমবর্ধমান আয়–বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন, সেই কারণে ইতিবাচক নীতি–পরিবর্তনের প্রয়োজন আরও প্রকট হয়ে উঠেছে।

ট্রিকল-ডাউন ওয়েজ: লিঙ্গ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ভারতীয় অসাম্যের বিশ্লেষণ

দ্য ওয়র্ল্ড ইনইকুয়ালিটি রিপোর্ট ২০২২ বিশ্বজুড়ে সম্পদ ও আয়ের বৈষম্যের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গাগুলি সামনে নিয়ে এসেছে। প্রতিবেদনটি ওয়র্ল্ড ইনইকুয়ালিটি ল্যাব–এর তত্ত্বাবধানে ১০০ জনেরও বেশি গবেষকের কাজের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, এবং আন্তর্জাতিক অসাম্যের উপর বিশ্লেষণাত্মক তথ্য সামনে আনতে এই উদ্যোগ যুক্ত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়, পরিসংখ্যান প্রতিষ্ঠান, কর কর্তৃপক্ষ ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলির একটি সমৃদ্ধ ও বিশাল নেটওয়ার্কের সঙ্গে। প্রতিবেদনটি গণতান্ত্রিক বিতর্কে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে ‘ধনীরা আরও ধনী হচ্ছেন’ আখ্যানের একটি তথ্যবহুল অন্তর্দৃষ্টি দেয়, এবং তার পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক ভিত্তিতে আয় ও সম্পদের বড় ধরনের ঘনত্বের স্তরগুলির ব্যবচ্ছেদের সূক্ষ্মদৃষ্টিও দেয়।

দক্ষিণ এশিয়ার ছবি

অতিমারি বর্তমান বিশ্বের গভীর আর্থ-সামাজিক বৈষম্যগুলিকে উন্মোচিত ও পুষ্ট করেছে। বিলিয়নেয়ারদের প্রাক- অতিমারি আয়ের জায়গায় পৌঁছতে মাত্র ন’মাস সময় লেগেছে। কিন্তু, অক্সফ্যামের ইনইকুয়ালিটি ভাইরাস গ্লোবাল রিপোর্ট ২০২১ অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্রদের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক শ্লথগতি থেকে বেরোতে এক দশক পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। দক্ষিণ এশিয়া এখন পৃথিবীর সর্বাধিক অসম ভৌগোলিক অঞ্চলগুলির একটি। অতিমারি শুরুর পর থেকে এটি বিশ্বের সেই পাঁচটি সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের একটি হয়ে উঠেছে, যে অর্থনীতিগুলি যোগাযোগ–নিবিড় এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রের উপর বিরাট ভাবে নির্ভরশীল। আর এই ক্ষেত্রগুলিতেই চাকরি হারানোর সম্ভাবনা, এবং অবশ্যই ব্যাপকতর অর্থে আর্থ-সামাজিক বৈষম্যের অসম বোঝা, সবচেয়ে বেশি। বিশ্বব্যাঙ্ক বলেছে, “করোনাভাইরাস অতিমারির ধ্বংসাত্মক প্রভাবের কারণে যে অঞ্চলে মানবজাতির এক–চতুর্থাংশ জীবনযাপন করেন সেই দক্ষিণ এশিয়া তার সবচেয়ে খারাপ মন্দার শিকার হয়েছে এবং তা লক্ষ লক্ষ মানুষকে চরম দারিদ্রের দিকে ঠেলে দিয়েছে।”

দক্ষিণ এশিয়া এখন পৃথিবীর সর্বাধিক অসম ভৌগোলিক অঞ্চলগুলির একটি। অতিমারি শুরুর পর থেকে এটি বিশ্বের সেই পাঁচটি সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের একটি হয়ে উঠেছে, যে অর্থনীতিগুলি যোগাযোগ–নিবিড় এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রের উপর ব্যাপক ভাবে নির্ভরশীল। আর এই ক্ষেত্রগুলিতেই চাকরি হারানোর সম্ভাবনা, এবং অবশ্যই ব্যাপকতর অর্থে আর্থ-সামাজিক বৈষম্যের অসম বোঝা, সবচেয়ে বেশি।

ভারতের এখনকার অবস্থাকে ‘‌বিশ্বে সম্পদ ও আয়ের বৈষম্যের চরমতম ঘটনা’‌ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এই অবস্থাকে ১৯৯০–এর দশক থেকে একটি নিয়ন্ত্রণমুক্ত অর্থনীতির উদারপন্থা অনুসরণের উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত অনিবার্যতার পরিবর্তে বলা যেতে পারে একটি বেছে–নেওয়া রাজনৈতিক বিকল্প। এই নীতিগুলি একটি দেশের মধ্যেও বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে বিভিন্ন ভাবে প্রভাবিত করেছে। রিপোর্টের পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, জনসংখ্যার শীর্ষ ১০ শতাংশ নিচের ৫০ শতাংশের তুলনায় প্রায় ২০ গুণ বেশি আয় করে। নিচের ৫০ শতাংশের আয় কমতে কমতে ১৩ শতাংশে নেমেছে, আর শীর্ষ ১ শতাংশ মোট জাতীয় আয়ের ২২ শতাংশ উপার্জন করছে। ‘‘‌‌ভারত অতএব বিশিষ্ট হয়ে উঠেছে একটি দরিদ্র ও অতি–অসম দেশ হিসেবে যার একটি ধনী এলিট শ্রেণি রয়েছে।’‌’‌এই আর্থ-সামাজিক বৈষম্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাত্রা হল লিঙ্গ-ভিত্তিক বৈষম্য, আর তা এই নজিরবিহীন সময়ে মহিলাদের উপর প্রতিকূল অর্থনৈতিক প্রভাব ফেলেছে। ২০২০ সালের রাষ্ট্রপুঞ্জের উইমেন রিপোর্ট বলেছে ২০২১ সালের মধ্যে ভারতে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করার সম্ভাবনা পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের ১০ শতাংশ বেশি৷ যদিও ‘‌নারী’‌ বলতে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ভৌগোলিক প্রেক্ষাপটের মানুষকে বোঝায়, এবং তাঁদের সুযোগ–সুবিধার পরিসরও বিভিন্ন, সেই কারণে এটি একটি একক পরিচয় নয়। নারীদের শিক্ষাগত সুযোগ, অর্থ উপার্জনের সুযোগ, মজুরি ও অন্যান্য সামাজিক সীমাবদ্ধতার অসম অনুপাত আগে থেকেই বৈষম্যমূলক ছিল, আর অতিমারি তা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

লিঙ্গ বৈষম্য ও শ্রম–আয়ের অংশ 

বৈষম্যের বিভিন্ন চেহারার মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন ও সবচেয়ে ব্যাপ্ত একটি হল লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য। কাজেই কোভিড-১৯ অতিমারির সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবগুলি আদৌ লিঙ্গ–নিরপেক্ষ নয়। বিশ্বজুড়ে উপার্জনের ক্ষেত্রে যে ধরনের লিঙ্গ–বৈষম্য দেখা যায় তার প্রথম বিশ্বব্যাপী হিসেব তুলে ধরে ইনইকুয়ালিটি রিপোর্ট আয় ও সম্পদের স্তর সম্পর্কে একটি সমালোচনামূলক অভিমুখের নেতৃত্ব দিয়েছে। এটি ১৯৯০-২০২০ সাল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে মহিলা শ্রমিকদের আয় থেকে শুরু করে পুরুষদের সঙ্গে তাঁদের মজুরির ব্যবধানের মতো মৌলিক আয়–বৈষম্যের দিকে নজর রেখেছে। অবশ্যই লিঙ্গভিত্তিক মজুরির ব্যবধান নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রচুর লেখালেখি হয়ে গেছে;‌ কিন্তু নারী ও পুরুষদের মধ্যে শ্রম–আয়ের সামগ্রিক অংশ কার কতটা, সেই তথ্য একটি দেশের মধ্যে পদ্ধতিগত বৈষম্যের ছবিটা আরও স্পষ্ট করে দেয়। এটি একটি নির্দিষ্ট দেশে পুরুষদের তুলনায় শ্রমবাজারে মহিলাদের প্রবেশ ও তা বজায় রাখার পরিমাপ করে। ভারতের সংখ্যা এখানে ভয়াবহ এবং তা এখন ১৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, এবং তা এশিয়ার গড় ২৭ শতাংশের পরিপ্রেক্ষিতে সর্বনিম্নগুলির একটি, যার পেছনে আছে শুধু পাকিস্তান ও আফগানিস্তান (‌যারা ১০ শতাংশের নিচে)‌। এশিয়া ফাউন্ডেশন–এর রিপোর্টে এমন প্রবণতার কথা তুলে ধরা হয়েছে যেখানে দক্ষিণ এশিয়ায় আগের থেকে কম মহিলা তাঁদের পুরুষ সমকক্ষদের তুলনায় কম বেতনে বেশি সময় ধরে কাজ করছেন।

নারীর মতো দুর্বল ও প্রান্তিক সামাজিক গোষ্ঠীর অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও লড়াই করে ফিরে আসার ক্ষমতার উপর অতিমারি বহুমাত্রিক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে, যেখানে সামাজিক–সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট শ্রমবাজারে মহিলাদের প্রবেশ ও অংশগ্রহণে বাধা দেয়। লিঙ্গ সমতার জন্য ভারতের লড়াই যথেষ্ট কষ্টসাধ্য কাজ, এবং ওয়র্ল্ড ইকনমিক ফোরামের ২০২১ সালের গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট অনুসারে সেই কাজটা এগোচ্ছে ধীর গতিতে। ওই রিপোর্টে ভারতকে ফেলা হয়েছে সেই দেশগুলির মধ্যে যেখানে অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ ও সুযোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি লিঙ্গ ব্যবধান রয়েছে, কারণ ভারতে মেয়েদের শ্রমবাহিনীতে অংশগ্রহণ ক্রমশ হ্রাস পেয়ে ২০১০ সালের ২৭ শতাংশের জায়গায় ২০২০ সালে ২২ শতাংশে নেমেছে। ২০২১ সালের আজিম প্রেমজির স্টেট অফ ওয়র্কিং ইন্ডিয়া রিপোর্ট ভারতের কর্মীবাহিনীর লিঙ্গগত দিকটির একটি বাস্তবসম্মত ছবি এঁকেছে:‌ “লকডাউনের সময় এবং কয়েক মাস পরে যেখানে পুরুষদের ৬১ শতাংশ কর্মরত ছিলেন এবং মাত্র ৭ শতাংশ কাজ হারিয়েছিলেন, সেখানে মহিলাদের মাত্র ১৯ শতাংশ কর্মরত ছিলেন এবং একটি বিশাল অংশ, ৪৭ শতাংশ, স্থায়ী চাকরি হারিয়েছেন।”

লিঙ্গ সমতার জন্য ভারতের লড়াই যথেষ্ট কষ্টসাধ্য কাজ, এবং ওয়র্ল্ড ইকনমিক ফোরামের ২০২১ সালের গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট অনুসারে সেই কাজটা এগোচ্ছে ধীর গতিতে। ওই রিপোর্টে ভারতকে ফেলা হয়েছে সেই দেশগুলির মধ্যে যেখানে অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ ও সুযোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি লিঙ্গ ব্যবধান রয়েছে, কারণ ভারতে মেয়েদের শ্রমবাহিনীতে অংশগ্রহণ ক্রমশ হ্রাস পেয়ে ২০১০ সালের ২৭ শতাংশের জায়গায় ২০২০ সালে ২২ শতাংশে নেমেছে।

ইনইকুয়ালিটি রিপোর্ট ২০২২ অনুসারে, নারীরা জনসংখ্যার প্রায় ৫০ শতাংশ হলেও তাঁরা শ্রম থেকে আয়ের এক-তৃতীয়াংশের মতো উপার্জন করেন 50 percent of the population, they earn only about one-third of the labour income for it। যাঁরা কর্মী বাহিনীতে পা রাখেন, তাঁদের প্রায়শই অপ্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে কাজের প্রস্তাব দেওয়া হয়, যেখানে শ্রম আইনের কোনও সুরক্ষা নেই এবং পেনশন, সবেতন অসুস্থতার ছুটি বা মাতৃত্বকালীন ছুটির মতো সামাজিক সুবিধাও নেই। অপ্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্র বাজারের ওঠানামার সঙ্গে যুঝবার মতো শক্তি জোগায় না, এবং এর ফলে তাঁরা আরও অরক্ষিত হয়ে পড়েন, দারিদ্র্যের মধ্যে ডুবে থাকেন এবং কর্মীবাহিনীতে প্রবেশের বিষয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন। পুরুষেরা যেখানে ভাল সুযোগ না–পেলে অপ্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে কাজ নেন, সে ক্ষেত্রে নারীরা কিন্তু গৃহস্থালির কাজের বোঝার বৃদ্ধি বা নিরাপত্তা জালিকার তীব্র অভাবের কারণে কাজ পুরোপুরি ছেড়ে দেন।

অবৈতনিক যত্নপ্রদানের কাজ, পিতৃতান্ত্রিক সামাজিক নিয়ম, ও অন্যান্য কারণ

একটি দেশের অভ্যন্তরে ও বিভিন্ন দেশের মধ্যে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য খুব বেশি হওয়ার কারণগুলির মধ্যে আছে আয়ের পার্থক্য, নারীদের পেশার ধরন, এবং সেই সঙ্গে নারীদের কাজের ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক বাধা। এই ক্রমহ্রাসমান প্রবণতার পিছনে আবার অনেক এবং নানা ধরনের কারণ আছে। সময় ব্যবহারের সমীক্ষা অনুসারে, মহিলারা ঘরবাড়ি পরিষ্কার করা, রান্না, বয়স্কদের যত্ন করা, জল আনা, শিশুদের যত্ন ইত্যাদির মতো অবৈতনিক যত্নের কাজে প্রায় দ্বিগুণ সময় ব্যয় করেন। ‘‌‘‌বিভিন্ন অঞ্চলের, সংস্কৃতির ও শ্রেণির মহিলারা দিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ঘরোয়া কাজ ও প্রজনন ভূমিকার প্রত্যাশা পূরণের জন্য ব্যয় করেন।’‌’‌ এই ভাবে, মহিলারা বৈতনিক ও অবৈতনিক কাজের ‘‌দ্বৈত বোঝা’‌ বহন করে থাকেন। ওইসিডি কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুসারে একটি দেশের সম্পদের সঙ্গে অবৈতনিক পরিচর্যার কাজে লিঙ্গ বৈষম্যের একটি নেতিবাচক পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে। এই ভাবে শ্রমের লিঙ্গগত পার্থক্যের সামাজিক নিয়ম মহিলাদের জন্য শ্রমবাজারে প্রবেশ করা এবং টিকে থাকা কঠিন করে তোলে। পরিবার ছোট হয়ে যাওয়ার কারণে নারীদের অসামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে বেশি সময় ব্যয় করতে হচ্ছে বলে ভারতে অবৈতনিক পরিচর্যার জটিল সমস্যা বেড়েই চলেছে। ডেলয়েট গ্লোবাল সার্ভে উইমেন @ ওয়ার্ক বলেছে যে বিশ্বব্যাপী মাত্র ৩৯ শতাংশ মহিলা মনে করেন যে অতিমারির সময়ে তাঁদের নিয়োগকর্তারা কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের সমর্থন করার জন্য যথেষ্ট কাজ করছেন। এলজিবিটিকিউ+ মহিলাদের ক্ষেত্রে সংখ্যাটি আরও কম।

আজিম প্রেমজি ইউনিভার্সিটির রিপোর্ট ‘‌স্টেট অফ ওয়র্কিং ইন্ডিয়া’‌ অনুসারে যে ক্ষেত্রগুলিতে পুরুষদের বেশি প্রতিনিধিত্ব আছে সেগুলির তুলনায় লকডাউন অনেক বেশি ক্ষতি করেছে নারীদের জন্য নির্দিষ্ট ক্ষেত্রগুলিকে, যেমন কেয়ার ইকনমি ও গিগ ইকনমি। মাত্র ১৯ শতাংশ নারী তাঁদের কাজ বজায় রাখতে পেরেছেন, আর একটি বিশাল অংশ, ৪৭ শতাংশ, স্থায়ী ভাবে চাকরি হারানোর সম্মুখীন হয়েছেন। গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০২১ অনুসারে ‘‌শ্রম বাজারের ক্ষত’র‌ ধারণাটির ব্যাখ্যা হল:‌ এমন এক পরিস্থিতি যেখানে ব্যক্তিগত কাজের অস্থায়ী সীমাবদ্ধতা ভবিষ্যতে মহিলাদের যথাযথ কর্মসংস্থানের সুযোগের উপর স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলেছে।

এমনকি ভার্চুয়াল কর্মক্ষেত্রেও নারীদের অ-অন্তর্ভুক্তিমূলক আচরণের মোকাবিলা করতে হচ্ছে। ডেলয়েট–এর উইমেন @ ওয়র্ক রিপোর্টে উত্তরদাতাদের অর্ধেকেরও বেশি ‘ব্যক্তিভিত্তিক আগ্রাসন’ বা কোনও ধরনের ‘হয়রানি’ রিপোর্ট করেছেন। ৫১ শতাংশ তাঁদের ভবিষ্যৎ কেরিয়ারের সম্ভাবনা সম্পর্কে কম আশাবাদী।

গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০২১ অনুসারে ‘‌শ্রম বাজারের ক্ষত’র‌ ধারণাটির ব্যাখ্যা হল:‌ এমন এক পরিস্থিতি যেখানে ব্যক্তিগত কাজের অস্থায়ী সীমাবদ্ধতা ভবিষ্যতে মহিলাদের যথাযথ কর্মসংস্থানের সুযোগের উপর স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলেছে।

নারীদের কাজের ক্ষেত্রে প্রচলিত সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিধিবিধানের কারণে দক্ষিণ এশিয়া যে এই সব ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা অস্বীকার করা কঠিন। পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে সর্বজনের ব্যবহারিক স্থানে বা কর্মক্ষেত্রে যাতায়াতের সময় হয়রানি ও হিংসার ঘটনার কারণে। মহিলাদের অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ খুবই সীমিত, এবং তাঁদের মৌলিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতাগুলিও বাধাপ্রাপ্ত হয়, এবং এর ফলে তাঁদের কাজের সুযোগ খর্ব হয়। এর পাশাপাশি ডেলয়েট গ্লোবাল সার্ভে জানাচ্ছে, এলজিবিটি+ মহিলাদের কর্মক্ষেত্রে যৌন রসিকতার মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি

খামতি ও পুনরুদ্ধারের পথ 

ভারত শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, পুরো গ্লোবাল সাউথ–এর জন্য উন্নয়নমূলক নীতি প্রণয়নে একটি শক্তিশালী আঞ্চলিক ও রাজনৈতিক চরিত্র হয়ে উঠেছে। ইনইকুয়ালিটি রিপোর্ট ২০২২ ভারতের আর্থ-সামাজিক ত্রুটিগুলি তুলে ধরে তার ব্যবস্থাপনার মধ্যে বড় ধরনের খামতি বার করেছে। এই বিষয়টি বেশিরভাগ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির জন্য সত্য, যেখানে মহিলারা রয়েছেন সম্পদ ও আয়বন্ধনীর নিচের প্রান্তে। বৈষম্যমূলক নীতি ও সামাজিক কাঠামো, লাভজনক চাকরি বা শ্রমবাজারে প্রবেশাধিকারের অভাব, এবং বৈতনিক ও অবৈতনিক উভয় ধরনের শ্রমের দ্বৈত বাঁধনের মধ্যে মহিলারা শ্রম–আয়ের মাত্র এক তৃতীয়াংশ উপার্জন করছেন। নীতি পরিবর্তনের জন্য পর্যাপ্ত অনুশীলন না–করলে ভারতের পক্ষে আগামী পুনরুদ্ধারের পথে বিপজ্জনক ভাবে জনসংখ্যার অর্ধেক পিছনে পড়ে যাবেন, এবং আরও বেশি বৈষম্যের শিকার হবেন। আমাদের দেশের শ্রম বণ্টনের পুনর্বিন্যাস করতে হবে, এবং নীতিগত স্তরে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রের কাঠামোর পুনর্বিবেচনা করতে হবে। মহিলাদের উপর বিশেষ মনোযোগ রেখে অপ্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রের কর্মীদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রসারিত করা প্রয়োজন। কাজেই ‘কঠিন পেশার’‌ জন্য মহিলাদের দক্ষ করে তোলা এবং ‘কেয়ার লেন্স’‌ গ্রহণ করা অত্যন্ত আবশ্যক, কারণ এ ভাবেই যত্ন প্রদানের কাজকে শুধু মহিলাদের এক্তিয়ার থেকে বার করে আনা এবং লিঙ্গনির্বিশেষে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সমান ভাবে পুনর্বণ্টন করার পথে এগনো সম্ভব। স্পষ্টতই লিঙ্গ সংবেদনশীল আর্থিক নীতি তৈরি করা, বেড়ে–চলা বৈষম্যের ঝুঁকি সম্পর্কে জনসাধারণকে শিক্ষিত করা, এবং নব্য উদারবাদী বিশ্বে টিকে থাকার জন্য শ্রম আইনের একটি কাঠামো তৈরি করাও গুরুত্বপূর্ণ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.