উন্নয়ন সহযোগী হিসাবে অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলির সঙ্গে ভারতের সম্পৃক্ত থাকার ইতিহাস দীর্ঘ। ভারতের উন্নয়ন সহযোগিতা কর্মসূচির প্রতিষ্ঠামূলক নীতিগুলি তার জাতীয় আন্দোলনের উপর ভিত্তি করে রচিত হয়েছিল এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর যুগে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে ভারতের উন্নয়ন সহযোগিতা কার্যক্রম ২০০০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে দ্রুত ত্বরান্বিত হয়েছে। অর্থ মন্ত্রকের করা সাম্প্রতিক বাজেট বরাদ্দগুলি নিকটবর্তী পরিসরে এবং তার ঊর্ধ্বে উঠে ভারতের ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন সহায়তাকেই তুলে ধরে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, নেপালে প্রায় ৫৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, সংঘর্ষে জর্জরিত আফগানিস্তান প্রায় ২০০ কোটি টাকার সহায়তা পেয়েছে এবং মলদ্বীপের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৪০০ কোটি টাকা।
এই নিবন্ধটি উন্নয়ন সহযোগিতার একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অর্থাৎ ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতায় ভারতের সম্পৃক্ততার অন্বেষণ করে। শব্দবন্ধটি ওইসিডি-ডিএসি দাতাদের ও দক্ষিণী দেশগুলির তুলনামূলক সুবিধাগুলিকে একত্র করে জ্ঞান ভাগ করে নেওয়া এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির উন্নয়ন উদ্বেগগুলিকে মোকাবিলা করার উদ্যোগ ও ভাবনাকেই দর্শায়। ত্রিপাক্ষিক অংশীদারিত্বে তিনটি ক্ষমতা রয়েছে — সুবিধাভোগী অংশীদার (যে দেশ একটি নির্দিষ্ট উন্নয়ন উদ্বেগ মোকাবিলায় সাহায্যের প্রত্যাশা করে); প্রধান অংশীদার (যে দেশ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা প্রমাণ করেছে); এবং সুবিধা প্রদানকারী অংশীদার (যে দেশ সুবিধাভোগী এবং প্রধান অংশীদারদের মধ্যে সমন্বয়ের জন্য আর্থিক এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করে)।
১৯৫০-এর দশকে ত্রিভুজাকার বিন্যাসে ভারতের প্রথম সম্পৃক্ততা ঘটে যখন দেশটি নেপালে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার সঙ্গে যৌথ অংশীদার হয়ে ওঠে। তবে ত্রিভুজাকার অংশীদারিত্বে এর আগ্রহ শীঘ্রই হ্রাস পায়। ১৯৭০ এবং ১৯৯০-এর দশকের প্রথম দিকে পশ্চিমী দাতা দেশগুলির সঙ্গে ভারতের সহযোগিতা হ্রাস পায়। কারণ দেশটি তার নিজস্ব উন্নয়ন সহযোগিতা মডেল গঠনের উদ্দেশ্যে নিজের শক্তিকে কেন্দ্রীভূত করেছিল। মূলত ওইসিডি দেশগুলির সঙ্গে ভারতের বৃহত্তর সম্পৃক্ততার ফলে ২০১৪ সাল থেকে ত্রিপাক্ষিকতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের সঙ্গে ‘স্টেটমেন্ট অব গাইডিং প্রিন্সিপালস অন ট্রায়াঙ্গুলার কোঅপারেশন ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট’ এবং ‘স্টেটমেন্ট অফ ইনটেন্ট অন পার্টনারশিপ ফর কোঅপারেশন ইন থার্ড কান্ট্রিজ’ চুক্তি স্বাক্ষর এক নতুন পর্বের সূচনা করে যখন সেখানে উচ্চ পর্যায়ের ওইসিডি-ডিএসি দেশগুলির সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক অংশীদারিত্বে অংশগ্রহণ করার জন্য ভারতের উচ্চ স্তরে রাজনৈতিক সদিচ্ছা পরিলক্ষিত হয়।
ত্রিপাক্ষিকতার প্রেক্ষিতে ভারতের অবস্থানে এই পরিবর্তনের প্রধান কারণ কী ছিল? প্রথমত, উন্নয়ন অংশীদারিত্বের পশ্চিমী বা ওইসিডি মডেলে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছে। দাতা-গ্রহীতা শ্রেণিবিন্যাস ধীরে ধীরে ভেঙে গিয়েছে এবং মনোযোগ গিয়ে পড়েছে পারস্পরিক শিক্ষা, উন্নয়ন পদ্ধতির পরিপূরকতা এবং সমস্ত অংশীদারদের সুবিধার উপর। দ্বিতীয়ত, সেবাস্তিয়ান পাওলোর মতো গবেষকরা জোর দিয়ে বলেছেন যে, ভারতের অর্থনৈতিক শক্তির বৃদ্ধি এবং মূল সাহায্য প্রদানকারী হিসাবে এর নতুন অবস্থান দেশটিকে ওইসিডি দেশগুলির সঙ্গে সমান তালে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার বিষয়ে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। তবে বিশেষ করে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে এটি চিনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের মতো বিষয়গুলি পশ্চিমের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক অংশীদারিত্বকে উভয় পক্ষের জন্যই আকর্ষণীয় করে তুলেছে। যদিও ত্রিপাক্ষিক অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে ভারতের অভিজ্ঞতা যথেষ্ট নয়। সুশীল সমাজের সংগঠনগুলি সফলভাবে বেশ কিছু ত্রিপাক্ষিক প্রকল্পের বাস্তবায়ন করলেও আন্তঃসরকার প্রকল্পগুলি কম সাফল্য পেয়েছে।
ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতা নানা সুবিধা প্রদান করলেও এটি একাধিক চ্যালেঞ্জেরও সম্মুখীন হয়। বেশির ভাগ দেশ ত্রিপাক্ষিক প্রকল্পে অংশগ্রহণ করতে অনিচ্ছুক। কারণ দুই দেশের নিয়ম ও মান মেনে চলার কারণে প্রশাসনিক খরচ বৃদ্ধি পায়। ত্রিপাক্ষিক অংশীদারিত্ব বিলম্ব এবং বাস্তবায়ন সমস্যা দ্বারা চিহ্নিত করা জরুরি। ত্রিপাক্ষিক প্রকল্পকে সফল করার জন্য তিনটি শক্তির মধ্যে সমন্বয় সাধন ও বাস্তবায়নকে উন্নততর করতে হবে।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় দ্য টেলিগ্রাফ-এ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.