গত এপ্রিলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দেশে গণতন্ত্র ধ্বংস করার চেষ্টার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র নিন্দা করে সংসদে ভাষণ দেন। হাসিনার বক্তব্য বাংলাদেশ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার মতো দক্ষিণ এশীয় দেশগুলিতে আমেরিকা–বিরোধী বক্তব্যের একটি উদীয়মান প্রবণতাকে নির্দেশ করে। যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়ায় তার প্রসারের মাত্রা বাড়াচ্ছে, তাই এই অঞ্চলের এলিট ও রাজনৈতিক দলগুলি জনসাধারণের কাছে আমেরিকা–বিরোধী বক্তব্য প্রচার করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পূর্ববিদ্যমান আপত্তি, জাতীয়তাবাদ, অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও দক্ষিণ এশীয় দেশগুলির ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব এবং নিজস্ব লক্ষ্যপূরণের সক্ষমতার মতো পরস্পর–সম্পর্কিত উৎস থেকে এই প্রচার উদ্ভূত হচ্ছে।
পূর্ববিদ্যমান আপত্তি
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলি মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কিছু বিরূপতা আজও ধরে রেখেছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ছোট অথচ প্রভাবশালী ইসলামপন্থী দলগুলো আমেরিকানদের নেতিবাচক চিত্র তুলে ধরেছে। আফগানিস্তান ও ইরাকে আমেরিকার আগ্রাসন এবং বাংলাদেশে পশ্চিম–বিরোধী মতাদর্শ ও চরমপন্থা অতীতে আমেরিকা–বিরোধী বিক্ষোভ ও মার্কিন নাগরিকদের বিরুদ্ধে হামলা উসকে দিয়েছে। সমাজের কিছু অংশ আফগানিস্তানে তালিবানের ফিরে আসাকে ইসলামের বিজয় হিসাবে উদযাপন করেছে। পরবর্তী সময়ের সরকারগুলি হয় এই কট্টরপন্থীদের মূলধারার রাজনীতিতে স্থান করে দিয়েছে বা অন্তত তাদের সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেছে। এইভাবে, এই প্রচার ও চ্যালেঞ্জ টিকিয়ে রাখা হয়েছে।
আফগানিস্তান ও ইরাকে আমেরিকার আগ্রাসন এবং বাংলাদেশে পশ্চিম–বিরোধী মতাদর্শ ও চরমপন্থা অতীতে আমেরিকা–বিরোধী বিক্ষোভ ও মার্কিন নাগরিকদের বিরুদ্ধে হামলাকে উসকে দিয়েছে।
শ্রীলঙ্কায় মার্কিন অভিপ্রায় নিয়ে সংশয় ১৯৭০ সাল থেকে রয়েছে। যাই হোক, গৃহযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে ওয়াশিংটনের অস্পষ্টতা, এবং তারপর রাষ্ট্রপুঞ্জের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর)–এর প্রস্তাব এবং মানবাধিকার ও পুনর্মিলন সম্পর্কিত বর্ণনগুলি মানুষের কিছু অংশকে গভীরভাবে মার্কিন–বিরোধী করে তুলেছে। অতীতে জাতীয়তাবাদী দলগুলি মার্কিন পণ্য বয়কটের দাবি তুলেছিল, পশ্চিম–বিরোধী বিক্ষোভ সংগঠিত করেছিল, এবং সভা বা অনুষ্ঠান ব্যাহত করেছিল। নির্বাচনী উদ্দেশ্যে এই সিংহলি জাতীয়তাবাদকে কাজে লাগানোর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এই আপত্তি আরও শক্তিশালী হয়েছে। কাঠমান্ডুতেও ১৯৫০–এর দশক থেকেই আমেরিকার তিব্বতে অশান্তি বাড়াতে এবং চিনের উপর গুপ্তচরবৃত্তির জন্য নেপালের অঞ্চল ব্যবহার ঘিরে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল।
জাতীয়তাবাদ
এই পূর্ববিদ্যমান আপত্তিগুলি সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্রমাগত দাবি করে যে এই দেশগুলিকে তাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে শক্তিশালী করতে হবে, দুর্নীতি দমন করতে হবে, এবং সমঝোতা ও মানবাধিকারের প্রসার ঘটাতে হবে। আমেরিকা এই সংস্কারগুলিকে তার সহযোগিতা, সম্পৃক্ততা ও বিনিয়োগের পূর্বশর্ত হিসাবে বিবেচনা করে, কারণ এগুলি ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলে মূল্যবোধভিত্তিক শৃঙ্খলার প্রসারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ফলস্বরূপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নজ এবং কিছু উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বলপূর্বক গুম করে দেওয়ার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। শ্রীলঙ্কায় মার্কিন সরকার গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা এবং তামিলদের সঙ্গে পুনর্মিলনকে উন্নীত করার উপর জোর দিয়ে আসছে। বাইডেন প্রশাসন চার উচ্চস্তরের সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে এবং শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ইউএনএইচসিআর প্রস্তাবের পৃষ্ঠপোষকতা অব্যাহত রেখেছে। সর্বশেষ প্রস্তাবটি শ্রীলঙ্কায় মানবাধিকার লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ বিশ্লেষণ, সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য হাই কমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস (ওএইচসিএইচআর)–এর অফিসকে শক্তিশালী করেছে। নেপাল, যে দেশটি মানবাধিকার রেকর্ডের জন্য খুব কমই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা সমালোচিত হয়েছিল, সেও এখন যাচাইয়ের আওতায় পড়েছে। দেশটিকে দুর্নীতি ও অর্থ পাচার প্রতিরোধ করতে এবং মানবাধিকার ও বাজার সংস্কার প্রসারের জন্য তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
বাইডেন প্রশাসন চার উচ্চস্তরের সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে এবং শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ইউএনএইচসিআর প্রস্তাবের পৃষ্ঠপোষকতা অব্যাহত রেখেছে।
এই চাপের ফল কিন্তু বিপরীত হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলি যুক্তরাষ্ট্রের ভন্ডামির কথা বলেছে। তারা এই নীতিটিকে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রকে অস্ত্রে পরিণত করার মার্কিন প্রয়াস হিসাবে দেখে, যার উদ্দেশ্য দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশগুলির বিরুদ্ধে এই অস্ত্র কাজে লাগিয়ে চিনের বিরুদ্ধে তাদের প্ররোচিত করা। দক্ষিণ এশীয় দেশগুলি মূলত এই কৌশলগুলিকে ‘জবরদস্তি’র একটি উপায় হিসাবে দেখে, যা রাজনৈতিক দল এবং সমাজের বিভিন্ন অংশগুলির তরফে জাতীয়তাবাদী অনুভূতি ও মার্কিনবিরোধী জোরালো বক্তব্যকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
ঘরোয়া রাজনীতি
দেশীয় রাজনীতিও এই ঘটনার পেছনে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। রাজনৈতিক দলগুলি প্রায়শই তাদের বিরোধীদের বিভিন্ন যোগাযোগের রাজনীতিকরণ করে, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা ও দেশের সার্বভৌমত্বের সঙ্গে আপস করার জন্য তাদের সমালোচনা করে জাতীয়তাবাদী অনুভূতি জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করে। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগও বাড়ছে। রাজনৈতিক দলগুলি প্রায়শই একটি প্রধান শক্তির (ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন) পক্ষে দাঁড়ায়। এবং যে অংশগুলি নির্বাচনী লক্ষ্যে ভারতবিরোধী জাতীয়তাবাদ ও সংশয়বাদকে সমর্থন করেছিল, তারা এখন এই অঞ্চলে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা করার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তাদের আক্রমণ পুনর্নির্দেশিত করছে। এটি এই অঞ্চলে মার্কিন বিনিয়োগ ও কূটনৈতিক তৎপরতার রাজনীতিকরণ করেছে, যা দেশটির বিরুদ্ধে আরও সন্দেহের উদ্রেক করেছে।
যেমন, এই বছর যখন বাংলাদেশ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, সেই সময় বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান সম্পৃক্ততা শেখ হাসিনা সরকারকে বাধ্য করেছে তাঁকে উৎখাত করে একটি ‘অগণতান্ত্রিক’ বিরোধী পক্ষকে ক্ষমতায় আনার চেষ্টা করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করতে। নেপালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ কর্পোরেশন (এমসিসি) প্রকল্পটি ভুল তথ্য ও বিভ্রান্তির শিকার হয়েছিল, বিশেষ করে সেই সময় যখন নির্বাচন ঘনিয়ে আসছিল। কমিউনিস্ট দল ও চিনের ঘনিষ্ঠ অন্য রাজনীতিবিদেরা চুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন, এবং এমসিসি প্রকল্পের বিরুদ্ধে সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ করা ও দেশে মার্কিন সৈন্য আনার জল্পনা প্রচার করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রপন্থী হওয়ার দায়ে এবং এমসিসি প্রকল্পে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী দেউবা সমালোচিত হন। শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট বিক্রমসিংহে মার্কিনপন্থী হওয়ার জন্য সমালোচিত হচ্ছেন। অর্থনৈতিক সঙ্কটের সময় দেশটিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্ধিত সহায়তা এমনকি শ্রীলঙ্কায় একটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটি স্থাপন ও বিতর্কিত ফোর্সেস চুক্তির মর্যাদাকে পুনরুজ্জীবিত করা হবে বলে সন্দেহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বামপন্থী দলগুলি ও রাজাপক্ষের প্রাক্তন জোটের অংশীদারেরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এই জল্পনাকে উস্কে দিয়েছে।
কমিউনিস্ট দল ও চিনের ঘনিষ্ঠ অন্য রাজনীতিবিদেরা চুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন এবং এমসিসি প্রকল্পের বিরুদ্ধে সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ করা ও দেশে মার্কিন সৈন্য আনার জল্পনা প্রচার করেছিল।
ভূ–রাজনীতি ও নিজস্ব লক্ষ্যের অনুশীলন
এ ছাড়া দক্ষিণ এশীয় দেশগুলির ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব এবং নিজস্ব লক্ষ্য আমেরিকা বিরোধী বক্তব্যে আরও অবদান রেখেছে। চিনের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার অংশীদারদের উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গেসঙ্গে প্রধান শক্তিগুলি এই অঞ্চলে ক্রমবর্ধমানভাবে প্রাসঙ্গিক থাকার চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সামরিক তথ্য চুক্তির (জিএসওএমআইএ) খসড়ায় স্বাক্ষর করেছে, যদিও চিন সে দেশে সামরিক হার্ডওয়্যার রপ্তানি করে চলেছে। নেপালের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেশটিকে এমসিসি–র বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাপ দিয়েছে এবং নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব কর্মসূচির (এসপিপি) অংশ হওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে; অন্যদিকে চিন দেশটিকে গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ (জিএসআই) –এর অংশ হওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে। একইভাবে শুধু গত বছরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কাকে ২৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের মানবিক সহায়তা প্রদান করেছে, যা ১৯৫০ সাল থেকে শ্রীলঙ্কাকে দেওয়া তার মোট সহায়তার প্রায় ১৩.৫ শতাংশ। অন্যদিকে এই দেশগুলিকে আমেরিকার বিরুদ্ধে জাগ্রত করার প্রয়াসে রাশিয়ার দূতাবাস বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের দায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দা করেছে। পাশাপাশি চিন নেপালের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা করেছে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলি ভারসাম্য বজায় রেখে এবং নিজস্ব লক্ষ্যপূরণের উদ্দেশ্যে এসব ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। বাণিজ্য, সামরিক হার্ডওয়্যার ও বিনিয়োগের জন্য চিনের কাছে পৌঁছনো অব্যাহত রেখেও বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার পথ অনুসরণ করছে। আবার ঢাকা তার পারমাণবিক শক্তি প্রকল্পের জন্য রাশিয়ার সহায়তাও অব্যাহত রেখেছে। পুনরুদ্ধাররত শ্রীলঙ্কাও রাশিয়া থেকে সস্তা তেল আমদানি অব্যাহত রেখেছে, এবং ইউক্রেন সংঘাতের জন্য রাশিয়ার সমালোচনা করেনি। দেশটি চিনের স্বার্থের প্রতি সংবেদনশীলতা দেখিয়েছে; আবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভান্ডারের (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনা করছে এবং মানবিক সহায়তার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চেয়েছে। নেপাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমসিসি–কে গ্রহণ করেছে, এবং পোখরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও আন্তঃসীমান্ত রেলপথের মতো কিছু চিনা প্রকল্পও চালু রেখেছে। তবে দেশটি চিনকে তার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য অনুদান ও নরম ঋণ দেওয়ার জন্যও চাপ দিচ্ছে। নেপাল তিব্বতিদের পরিচয়পত্র না–দিয়ে বা বেজিংয়ের ইচ্ছামতো তাদের চিনের কাছে হস্তান্তর করে তার নিজস্ব ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে।
বাণিজ্য, সামরিক হার্ডওয়্যার ও বিনিয়োগের জন্য চিনের কাছে পৌঁছনো অব্যাহত রেখেও বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার পথ অনুসরণ করছে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে একটি ক্রমবর্ধমান উপলব্ধি রয়েছে যে সংস্কারের দাবি করা সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্য প্রধান শক্তিগুলির মতোই এই অঞ্চলে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখবে। যেমন, শেখ হাসিনার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সংসদে ভাষণের পরেও মার্কিন বিদেশ সচিব বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। এমসিসি চুক্তিতে প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ডের সংশয়জনক ভূমিকা সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নেপালের নতুন সরকারের কাছেও পৌঁছে গিয়েছে। শ্রীলঙ্কায় সঙ্কট শুরু হলে আমেরিকা কিন্তু চিনপন্থী রাজাপক্ষদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি এই দেশগুলিতে প্রায় একই রকম থাকা সত্ত্বেও এই সমস্ত কিছু ঘটেছে।
এই ক্রমবর্ধমান গুরুত্বকে সর্বোত্তমভাবে কাজে লাগাতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলি তাদের পক্ষে অনুকূল ভারসাম্য আনার চেষ্টা করছে। প্রধান কুশীলবেরা যখন তাদের খুশি করার চেষ্টা করছে, এবং যখন দেশগুলি নতুন উন্নয়ন অংশীদার পাচ্ছে, সেই অবস্থায় দক্ষিণ এশীয় দেশগুলি অভ্যন্তরীণ সংস্কারের জন্য মার্কিন চাপ প্রতিহত করতে এবং তাদের নিজস্বতা ও ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের সংকেত দিতে আমেরিকা–বিরোধী বক্তব্য ব্যবহার করছে।
আদিত্য গৌদারা শিবমূর্তি স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রাম, অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন–এর জুনিয়র ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.