এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় দ্য হিন্দু-তে।
সিওলের সঙ্গে কয়েক দশক ব্যাপী সমন্বিতকরণের লক্ষ্য পরিত্যাগের পাশাপাশি কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা সৃষ্টিকারী একাধিক কর্মকাণ্ডের মাঝেই পিয়ংইয়ং খুব দ্রুতই রাশিয়ার সঙ্গে নিজের সম্পর্ক গভীরতর করছে। ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর থেকে এই সম্পর্কের গতি ও গভীরতা দুই-ই বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, যা মস্কোর সঙ্গে বেশির ভাগ আন্তর্জাতিক শক্তির সম্পর্কের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু-র নেতৃত্বে রাশিয়ার একটি প্রতিনিধিদল পিয়ংইয়ং সফরে গেলে এই চাপ আরও বৃদ্ধি পায় এবং ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের পরবর্তী মস্কো সফরও তার পরপরই ঘটে।
২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর থেকে এই সম্পর্কের গতি ও গভীরতা দুই-ই বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, যা মস্কোর সঙ্গে বেশির ভাগ আন্তর্জাতিক শক্তির সম্পর্কের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে।
রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২০২৪ সালে আবারও পিয়ংইয়ং সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। উভয় দেশের দুই নেতার মধ্যে এক শীর্ষ সম্মেলনের প্রস্তুতি চলছে, যেখানে ‘খুব ভাল’ চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২৩ এমন একটি বছর ছিল, যখন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কগুলি দ্রুত গতিতে অগ্রসর হয়েছে। উত্তর কোরিয়ায় রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মাতসেগোরা মনে করেন যে, ২০২৪ সালটি দুই দেশের জন্য একটি যুগান্তকারী বছর হবে। ফেব্রুয়ারি মাসে পুতিন উত্তর কোরিয়ার নেতাকে একটি বিলাসবহুল রুশ-নির্মিত গাড়ি উপহার দিয়েছেন, যে ধরনের গাড়ি পুতিন নিজেই ব্যবহার করেন।
উষ্ণতর সম্পর্ক, বৃহত্তর সহযোগিতা
চিরাচরিত ভাবে দুই দেশ ঠান্ডা লড়াইয়ের যুগের কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে, যা মূলত কমিউনিস্ট রাষ্ট্র হিসাবে অভিন্ন সাধারণ আদর্শগত সখ্য দ্বারা চালিত হয়েছিল। মস্কো ও পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যকার সাম্প্রতিক বছরের সম্পর্কগুলি ভূ-রাজনৈতিক পরিসর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ওঠানামার সম্মুখীন থেকেছে। রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য গভীরতা দেখা দিয়েছে, যা কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা এবং কৌশলগত সহযোগিতার মাধ্যমেই প্রকাশ্যে এসেছে। পিয়ংইয়ং বিদ্যমান ইউক্রেন যুদ্ধের সময় মস্কোকে মূল অস্ত্র, যুদ্ধাস্ত্র, কামানের গোলাবারুদ এবং অন্যান্য প্রচলিত অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, দুই দেশই সেই সকল স্পর্শকাতর ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা চালাচ্ছে, যেগুলি প্রকাশ্যে আনা সম্ভব নয় এবং পুতিন গুপ্তচর উপগ্রহের বিকাশের জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তার প্রস্তাবও দিয়েছেন (বেশ কিছু সময় যাবৎ উত্তর কোরিয়া যে লক্ষ্যে ব্রতী হয়েছে)। বেজিংয়ের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক নৌ মহড়ার কথা থাকলেও সে সম্পর্কে নিশ্চিত কোনও খবর নেই। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পিয়ংইয়ং কোভিড-১৯ অতিমারির পর থেকে প্রথম বারের মতো রাশিয়ার পর্যটকদের জন্য উত্তর কোরিয়ার দরজা খুলে দেয়।
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত উত্তর কোরিয়ার জন্য জ্বালানি ও পরিবহণের মতো ক্ষেত্রে এবং এমনকি পিয়ংইয়ংয়ের দীর্ঘস্থায়ী খাদ্য ঘাটতি মোকাবিলায় রাশিয়া এক সম্ভাব্য ত্রাণকর্তা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে।
রাশিয়া – যে একটি দেশ হিসাবে বিশ্ব রাজনীতিতে বহিরাগত শক্তি হিসেবে রয়ে গেলেও একটি পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন দেশ - উত্তর কোরিয়ায় কৃষির উন্নতির জন্য এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত উত্তর কোরিয়ার জন্য জ্বালানি ও পরিবহণের মতো ক্ষেত্রে এবং এমনকি পিয়ংইয়ংয়ের দীর্ঘস্থায়ী খাদ্য ঘাটতি মোকাবিলায় রাশিয়া এক সম্ভাব্য ত্রাণকর্তা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। এর আগে অবকাঠামো প্রকল্প যেমন রাজিন-খাসান রেলপথ - যেটি রাশিয়াকে উত্তর কোরিয়ার রাজিন বন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত করে - অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে জোরদার করার লক্ষ্যে গৃহীত হয়েছে।
জ্বালানি সংযোগ
জ্বালানি সহযোগিতা অংশীদারিত্বের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষিত। রাশিয়া উত্তর কোরিয়ার জ্বালানির এক প্রধান সরবরাহকারী এবং জ্বালানি ক্ষেত্রে আরও সহযোগিতার জন্য আলোচনা চলছে। এই দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার মূল ভিত্তি ‘ফুড ফর আর্মস এগ্রিমেন্ট’ (অস্ত্রের বিনিময়ে খাদ্যের চুক্তি)। ২০২৩ সালের অগস্ট মাসে এর প্রমাণ সামনে এলেও উভয় দেশের কেউই এই ধরনের চুক্তির অস্তিত্ব স্বীকার করেনি। যদিও এর মতো একটি চুক্তির উপযোগিতা অনস্বীকার্য। কারণ পিয়ংইয়ংয়ের পণ্য ও খাদ্যের তীব্র প্রয়োজন থাকাকালীন ইউক্রেনে তার আক্রমণ টিকিয়ে রাখার জন্য আবার মস্কোর অস্ত্রের প্রয়োজন। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে স্যাটেলাইট চিত্রগুলি থেকে উত্তর কোরিয়া-রাশিয়া সীমান্তের কাছে অবস্থিত তুমাংগাং রেল ফেসিলিটিতে মালবাহী রেলগাড়ির ট্র্যাফিকের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি লক্ষ করা গিয়েছে, যা উত্তর কোরিয়া থেকে রাশিয়ায় গোলাবারুদের সরবরাহকেই দর্শায়।
প্রসঙ্গ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
এই সম্প্রীতিতে অবদান রাখার অন্যান্য কারণের মধ্যে অন্যতম হল এই অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের তরফে উদ্ভূত অভিন্ন সাধারণ চ্যালেঞ্জ। উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়া পশ্চিমের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিভিন্ন মাত্রার চাপের সম্মুখীন হয়েছে, যা তাদের বৈদেশিক নীতির অগ্রাধিকারগুলির একটি বাস্তবসম্মত পুনর্নির্মাণকে প্ররোচিত করেছে। মস্কো উত্তর-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তর নিরাপত্তামূলক পরিসরকে প্রভাবিত করার উপায় হিসেবে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ততাকে বিবেচনা করেছে।
প্রায়শই চিনের সহযোগিতায় রাশিয়ার তরফে গৃহীত কূটনৈতিক উদ্যোগ পশ্চিমী প্রভাব থেকে সরে এসে স্বাধীন ভাবে আঞ্চলিক নিরাপত্তা অবকাঠামো গঠনের আকাঙ্ক্ষাকেই দর্শায়। উত্তর কোরিয়ার বিদেশমন্ত্রী চো সন-হুই ২০২৩ সালের অক্টোবরে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন যে, মস্কো ও পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্ক ওয়াশিংটন, টোকিয়ো ও সিওলের মতো একটি শক্তিশালী জোটের মার্কিন নেতৃত্বাধীন প্রচেষ্টাকে খর্ব করতে পারে।
যেহেতু উভয় দেশই বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের সম্পৃক্ততা ও সহযোগিতাকে গভীরতর করছে, তাই তাদের সম্পর্ক কোরীয় উপদ্বীপ ও বৃহত্তর উত্তর-পূর্ব এশীয় অঞ্চলের সমীকরণে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।
২০২৩ সাল এবং ২০২৪ সালের ঘটনাপ্রবাহ রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ‘সশক্তিকরণ’কেই দর্শায়, ‘যেখানে উভয় দেশই একে অপরের মধ্যে সহজাত সহযোগী খুঁজে পেয়েছে।’ এই অংশীদারিত্ব অভিন্ন সাধারণ প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা এবং কৌশলগত উদ্দেশ্য সাধনের জন্যই গড়ে উঠেছে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতিতে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। যেহেতু উভয় দেশই বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের সম্পৃক্ততা ও সহযোগিতাকে গভীরতর করছে, তাই তাদের সম্পর্ক কোরীয় উপদ্বীপ ও বৃহত্তর উত্তর-পূর্ব এশীয় অঞ্চলের সমীকরণে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন, রাশিয়া-উত্তর কোরিয়া সম্পর্ক ভূ-রাজনৈতিক পরিসরে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনাপ্রবাহকেই দর্শায়, যার প্রভাব তাৎক্ষণিক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ঊর্ধ্বে উঠেও বিস্তৃত।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.