-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
নতুন জটিলতা ও প্রয়োজনীয়তার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত ও মলদ্বীপ উভয়ই সম্পর্কের গতিপথ গঠনের জন্য বাস্তববাদ, মানের উপর জোর ও নির্দলীয়তা প্রয়োগ করছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০২৫ সালের ২৫ থেকে ২৬ জুলাই মলদ্বীপে রাষ্ট্রীয় সফর করেন। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই সফর ভারত-মলদ্বীপ সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের চিহ্ন বহন করে। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে মলদ্বীপ চিনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা, ভারতের উপর নির্ভরতা হ্রাস এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বৈচিত্র্যময় করার লক্ষ্যে একটি ‘মলদ্বীপপন্থী’ নীতি গ্রহণ করে। এই নীতি মূলত মুইজ্জু ও তাঁর দলের ইন্ডিয়া আউট প্রচারণা, অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং চিনপন্থী প্রবণতা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। তবে গত এক বছরে সম্পর্কের পুনর্বিন্যাস দেখা গিয়েছে। নতুন জটিলতা ও প্রয়োজনীয়তার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত ও মলদ্বীপ উভয়ই সম্পর্কের গতিপথ গঠনের জন্য বাস্তববাদ, গুণমানের উপর জোর দেওয়া এবং নির্দলীয়তা ব্যবহার করছে।
বাস্তববাদের পথ ধরে চলা এবং ভূ-রাজনীতি থেকে রাজনীতিকে পৃথক করে দেখা
২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে তুরস্কে সরকারি সফরে ও ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে চিনে রাষ্ট্রীয় সফরে ভ্রমণ করে মুইজ্জু নবনির্বাচিত মলদ্বীপের প্রেসিডেন্টদের তরফে তাঁদের প্রথম সফরের জন্য ভারতকে বেছে নেওয়ার ঐতিহ্য ভেঙে দেন। তবে তাঁদের ভারত-বিরোধী রাজনীতি সত্ত্বেও নতুন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের প্রেক্ষিতে ভারত আশাবাদী ছিল। মুইজ্জুর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে একজন প্রতিমন্ত্রীর পরিবর্তে একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রী পাঠিয়ে ভারত অবস্থা বোঝার চেষ্টা করে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) কপ-২৮ শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে মোদী এবং মুইজ্জুরও দেখা হয়েছিল। এই অনুষ্ঠানেই মুইজ্জু ভারতকে তার সৈন্য প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছিলেন এবং ভারত ইতিবাচক সাড়াও দিয়েছিল। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন (এনএএম) শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে তাঁর সমকক্ষের সঙ্গে দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ প্রেক্ষিত নিয়ে ‘খোলাখুলি আলোচনা’ করার জন্য সাক্ষাৎ করেন। মলদ্বীপের বেশ কিছু মন্ত্রী ভারত সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করেন এবং মুইজ্জু ভারতকে ‘গুন্ডামি’ করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন। নানাবিধ উস্কানি সত্ত্বেও ভারত যোগাযোগ অব্যাহত রাখে। মুইজ্জুর দাবির অভ্যন্তরীণ বাধ্যবাধকতা বুঝতে পেরে ২০২৪ সালের মে মাসে ভারত নিজের ৭৬ জন সেনাকে টেকনিশিয়ানদের দিয়ে প্রতিস্থাপন করে দুই দেশের মধ্যেকার সবচেয়ে বড় দ্বিপাক্ষিক বাধা অতিক্রম করে। ইতিমধ্যে নয়াদিল্লি মলদ্বীপে উন্নয়ন সহায়তা ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৪০০ কোটি টাকা থেকে ৬০০ কোটি টাকা করে এবং কিছু পণ্যের রফতানির পরিমাণ ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে।
এই সফর আরও উচ্চ-স্তরের যোগাযোগ এবং সৎ আলাপ-আলোচনার পথ প্রশস্ত করে। নিচের সারণি ১-এ উভয় দেশের মধ্যে উচ্চ-স্তরের যোগাযোগের পরিসংখ্যান দেখানো হয়েছে।
ভারতের সৈন্য স্থানান্তর, সহানুভূতিশীল অবস্থান, ২০২৪ সালের এপ্রিল নির্বাচনের পর মলদ্বীপ পার্লামেন্টে ক্ষমতাসীন পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেস-এর (পিএনসি) বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা, অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং চিনের অপ্রতিরোধ্য সমর্থন মলদ্বীপকে রাজনীতিকে ভূ-রাজনীতি থেকে আলাদা করতে বাধ্য করেছিল। ২০২৪ সালের মে মাসে মলদ্বীপের বিদেশমন্ত্রী সম্পর্ক পুনরুদ্ধার ও অর্থনৈতিক সহায়তা চাইতে ভারত সফর করেন। এই সফর আরও উচ্চ-স্তরের যোগাযোগ এবং সৎ আলাপ-আলোচনার পথ প্রশস্ত করে। নিচের সারণি ১-এ উভয় দেশের মধ্যে উচ্চ-স্তরের যোগাযোগের পরিসংখ্যান দেখানো হয়েছে। মুইজ্জু এমনকি ২০২৪ সালের অক্টোবরে ভারত সফর করেছিলেন, যেখানে উভয় দেশ ব্যাপক অর্থনৈতিক ও সমুদ্র নিরাপত্তা অংশীদারিত্বের দৃষ্টিভঙ্গিমূলক নথি গ্রহণ করেছিল। নথিতে রাজনৈতিক যোগাযোগ, উন্নয়ন অংশীদারিত্ব, সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক, ব্যবসায়িক যোগাযোগ এবং ডিজিটাল সংযোগের ক্ষেত্রে সহযোগিতার রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। ভারত মলদ্বীপের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের তিনটি টি-বিলও চালু করেছে এবং ৭৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের মুদ্রা বিনিময়ের প্রস্তাব দিয়েছে।
সারণি ১: ভারত ও মলদ্বীপের মধ্যে উচ্চ-স্তরের সম্পৃক্ততা
|
তারিখ |
সফর ও উদ্দেশ্য |
|
১৬-১৮ নভেম্বর ২০২৩ |
ভারতের পৃথিবী সংক্রান্ত বিজ্ঞানমন্ত্রী কিরেন রিজিজু মলদ্বীপে প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। |
|
১ ডিসেম্বর ২০২৩ |
মোদী ও মুইজ্জু ইউএই-র কপ২৮ সম্মেলনের পার্শ্ব অনুষ্ঠানে সাক্ষাৎ করেন। |
|
১৮ জানুয়ারি ২০২৪ |
ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর উগান্ডায় এনএএম সম্মেলনের সমান্তরালে নিজের সমকক্ষ মুসা জামিরের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করেন। |
|
৯ মে ২০২৪ |
মলদ্বীপের বিদেশমন্ত্রী মুসা জামির দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের বরফ গলানোর প্রচেষ্টায় ভারত ভ্রমণ করেন এবং অর্থনৈতিক সহায়তার অনুরোধ করেন। |
|
৯-১০ জুন ২০২৪ |
মোহাম্মদ মুইজ্জু ভারতের প্রধানমন্ত্রীর শপথ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে ভারত আসেন। |
|
৯-১১ অগস্ট ২০২৪ |
মুইজ্জুর ভারতের রাষ্ট্রীয় সফরকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে এস জয়শঙ্কর মলদ্বীপ সফর করেন। |
|
৬-১০ অক্টোবর ২০২৪ |
মোহাম্মদ মুইজ্জু ভারতে রাষ্ট্রীয় সফরে আসেন। |
|
২-৪ জানুয়ারি ২০২৫ |
মলদ্বীপের বিদেশমন্ত্রী আবদুল্লা খলিল যৌথ ভিশন নথি বাস্তবায়ন ও সহযোগিতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ভারত সফর করেন। |
|
৭-১১ জানুয়ারি ২০২৫ |
মলদ্বীপের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মোহাম্মদ ঘাসান মাউমুন যৌথ ভিশন নথির বাস্তবায়ন ও সহযোগিতা নিয়ে আলোচনার জন্য ভারত সফর করেন। |
|
১০-১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ |
মলদ্বীপের পার্লামেন্ট স্পিকার আব্দুল রহিম আবদুল্লা ভারতে সংসদীয় বিনিময় সফরে আসেন। |
|
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ |
এস জয়শঙ্কর আব্দুলা খলিলের সঙ্গে ওমানে ভারত মহাসাগর সম্মেলনে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করেন। |
|
২১-২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ |
মলদ্বীপের স্বাস্থ্য মন্ত্রী আবদুল্লা নাজিম ইব্রাহিম স্বাস্থ্য সহযোগিতা প্রসারিত করতে ভারতে সরকারি সফরে আসেন। |
|
১৬-১৯ মার্চ ২০২৫ |
আবদুলা খলিল রাইসিনা ডায়লগ ২০২৫-এর জন্য ভারতে আসেন। |
|
২৫-২৭ মে ২০২৫ |
আব্দুলা খলিল ২য় ভারত-মলদ্বীপ হাই লেভেল কোর গ্রুপের (এইচএলসিজি) সভায় অংশগ্রহণের জন্য ভারতে আসেন। |
উৎস: লেখকের সঙ্কলিত
এর বিনিময়ে মুইজ্জু সরকার ভারতীয় উদ্বেগের প্রতি সংবেদনশীলতা দেখাতে শুরু করেছে। তারা তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে বৈদেশিক নীতি থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে এবং ভারতীয় সৈন্যদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের পরিবর্তে প্রযুক্তিবিদদের দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে সম্মত হয়ে ভারতের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছে। মলদ্বীপের সরকার ভারতের সঙ্গে চুক্তি সংশোধন করার কথা বজায় রেখে এবং পার্লামেন্টে দেশে বিদেশি সৈন্যদের উপস্থিতি সম্পর্কিত একটি সংশোধনী পাস করার পরেও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। ভারত-অর্থায়িত উথুরু থিলা ফালহু (ইউটিএফ) বন্দরের কাছে চিনা প্রকল্প সম্পর্কে ভারত উদ্বেগ প্রকাশ করার পর মলদ্বীপও তাদের একটি চিনা কৃষি প্রকল্প স্থানান্তর করেছে। এর অর্থ এই নয় যে, মুইজ্জু ভারত-পন্থী নীতি গ্রহণ করেছে। সে দেশের সরকার ভারতের উপর তার অতিরিক্ত নির্ভরতা কমানোর চেষ্টায় অন্যান্য দেশের সঙ্গে তার সম্পর্ক বৈচিত্র্যময় করে চলেছে। তবে মলদ্বীপ ভারতের স্বার্থ সম্পর্কে সচেতন। নিজের পক্ষ থেকে ভারত মলদ্বীপের অভ্যন্তরীণ বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে তার সংযোগ ক্ষমতা ও যোগাযোগের অধিকার সহ্য করেছে। ভারত অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন সহায়তা প্রদান অব্যাহত রেখেছে এবং একটি বাস্তববাদী নীতি বজায় রেখেছে।
পরিমাণের চেয়ে গুণমানের দিকে খেয়াল
একটি উল্লেখযোগ্য প্রবণতা হল পরিমাণের চেয়ে সম্পর্কের গুণমানের উপর জোর দেওয়া। মলদ্বীপ সরকার ভারতের সঙ্গে বিদ্যমান কোনও বড় প্রকল্প বাতিল না করলেও কোনও নতুন প্রকল্পও শুরু করেনি। অর্থের উৎসকে দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগানো এবং বিলম্ব সম্পর্কিত খরচ কমাতে বিদ্যমান বড় প্রকল্পগুলি সম্পন্ন করার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। সারণি ২-এ ভারতের বড় প্রকল্পগুলি ত্বরান্বিত করার উপর মলদ্বীপ সরকারের মনোযোগের কথা তুলে ধরা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, হানিমাধু বিমানবন্দর প্রকল্পের পাশাপাশি ৪,০০০ আবাসন ইউনিট, ২০২৫ সালের অগস্ট থেকে সম্পূর্ণ রূপে কার্যকর হয়েছে। গ্রেটার মালে কানেক্টিভিটি প্রজেক্ট (জিএমসিপি) সেতু ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। ভারত ২০২৪ সালের অগস্ট মাসে আদ্দুতে একটি সংযোগ সেতু প্রকল্প উদ্বোধন করেছে এবং ২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের একটি বিমানবন্দরও তৈরি করছে। ভিশন ডকুমেন্টে ভারত সহায়তা করবে এমন কিছু প্রকল্পের রূপরেখা দেওয়া হয়েছে - যেমন আবাসন প্রকল্প, জিএমসিপি সম্প্রসারণ, থিলুফুশিতে বন্দর উন্নয়ন এবং ইভান গেটওয়ে প্রকল্প – তবে এখনও কোনও বড় অগ্রগতি হয়নি।
সারণি ২: প্রধান ভারতীয় প্রকল্পগুলির অগ্রগতি
|
প্রকল্প |
মুইজ্জুর |
সম্পন্ন শতাংশ (সর্বশেষ) |
ভারতীয় সহায়তা |
|
হানিমাধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর |
ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত ৩৭ শতাংশ |
জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত ৮৯ শতাংশ |
ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক থেকে ১৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ |
|
জিএমসিপি ব্রিজ |
নভেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত ২৯ শতাংশ |
জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত ৬০ শতাংশ |
১০০ মিলিয়ন ডলারের অনুদান ৪০০ মিলিয়ন ডলারের ক্রেডিট লাইন |
|
৪,০০০ আবাসিক ইউনিট |
নভেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত ৩৩ শতাংশ |
জুন ২০২৫ পর্যন্ত ৯৫ শতাংশ |
ভারতীয় এক্সিম ব্যাঙ্ক থেকে ২২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ |
উৎস: লেখকের সঙ্কলিত
একই ভাবে মলদ্বীপ সরকার ভারতের অর্থায়নে পরিচালিত উচ্চ প্রভাবশালী সম্প্রদায় উন্নয়ন প্রকল্প (এইচআইসিডিপি) সম্পন্ন করতে পছন্দ করেছে। ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত ভারত ও মলদ্বীপ ৪৭টিরও বেশি এইচআইসিডিপি চূড়ান্ত করেছে, যার মধ্যে আটটি নতুন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময় শেষ হয়েছে। প্রকল্পের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য রকমের বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে ২০২৩ সালের নির্বাচনের বছরে। নিচের সারণি ৩-এ প্রতি বছর এইচআইসিডিপি সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হওয়ার পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে। নতুন সরকারের অধীনে এই প্রকল্পগুলির মধ্যে সাতটি স্থগিত করা হয়েছে। ২০২৪ সালে কোনও নতুন সমঝোতাপত্র (মউ) স্বাক্ষরিত হয়নি। ২০২৫ সালে উভয় দেশই মলদ্বীপের ফেরি শৃঙ্খল উন্নত করার জন্য মাত্র দু’টি প্রকল্প (কিন্তু ১৩টি নতুন সমঝোতাপত্র-সহ) দিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে এইচআইসিডিপি-এর তৃতীয় পর্যায় শুরু করে। ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত প্রকল্পের সংখ্যা প্রায় ৫৩-৫৬টি বলে অনুমান করা হচ্ছে, যার মধ্যে ১৪টি সম্পন্ন হয়েছে। নতুন সরকারের অধীনে ছ’টি প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে এবং অন্যান্য প্রকল্প ত্বরান্বিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সারণি ৩: ভারতীয় এইচআইসিডিপি
|
বছর |
এইচআইসিডিপি (মউ স্বাক্ষরিত) |
|
২০১৯ |
৩ |
|
২০২০ |
৮ |
|
২০২১ |
৯ |
|
২০২২ |
৭ |
|
২০২৩ |
২০ |
|
২০২৪ |
০ |
|
২০২৫ |
১৩ |
আর একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল সহযোগিতার নির্বাচিত ক্ষেত্রগুলিতে অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং তদারকি করার জন্য উচ্চ-স্তরের কোর গ্রুপ মিটিং (এইচএলসিজিএম) ব্যবহার করা। সমস্যা মোকাবিলার সমাধান অনুসন্ধান এবং ভারতের অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলি সুষ্ঠু ভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না তা নিশ্চিত করার জন্য এইচএলসিজিএম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই প্রক্রিয়াটি ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে মুইজ্জুর সঙ্গে মোদীর বৈঠকের ফলাফল। তার পরবর্তী সময়ে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০২৪ সালের মে মাসের মধ্যে চারটি এইচএলসিজিএম অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকগুলিতে ভারতীয় সেনাদের টেকনিশিয়ানদের দ্বারা প্রতিস্থাপনের তদারকি করা হয়েছিল এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ও ভারতীয় বিমান চলাচল মঞ্চগুলির অব্যাহত পরিচালনার বিকল্পগুলি অনুসন্ধান করা হয়েছিল। বৈঠকগুলিতে উন্নয়ন সহযোগিতার বিষয়টিও পর্যালোচনা করা হয়েছিল। সৈন্য প্রতিস্থাপনের পরে একটি নতুন এইচএলসিজিএম গঠন করা হয়েছিল এবং ভিশন ডকুমেন্ট বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এটি উভয় দেশের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরামর্শের পর অনুষ্ঠিত হয়েছিল। প্রথম এইচএলসিজিএম ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে সরকারি পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হলেও দ্বিতীয় এইচএলসিজিএম-এতে ২০২৫ সালের মে মাসে মন্ত্রী পর্যায়ে অংশগ্রহণ দেখা যায়। এ ভাবে সম্পর্কের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা, যাচাই-বাছাই ও সংশোধন করার চেষ্টা করা হয়েছে।
নির্দলীয়তা
ভারত এবং মলদ্বীপ তাদের দলীয় বিদেশনীতির ঊর্ধ্বে ওঠার চেষ্টা করছে। চিরাচরিত ভাবে মলদিভিয়ান ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এমডিপি) ভারতের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক উপভোগ করছে এবং অন্য দিকে পিএনসি চিনের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছে। যাই হোক, মুইজ্জু তাঁর দলীয় নীতিকে বাস্তববাদী নীতির সঙ্গে প্রতিস্থাপন করার মাধ্যমে নয়াদিল্লির উদ্বেগকে প্রশমিত করেছেন এবং ভারতের বিপদসীমা ও সংবেদনশীলতাকে সম্মান করেছেন। এর বিনিময়ে তিনি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক সহায়তা ও সহযোগিতা নিশ্চিত করেছেন।
ভারতের সঙ্গে এই সম্পর্ক এবং বৃহত্তর পরিমাণে অর্থনৈতিক নির্ভরতা জাতীয়তাবাদী বক্তব্য ও এমডিপি-র সমালোচনা থেকেও মুইজ্জুকে রক্ষা করেছে। এমডিপি ভারতের সঙ্গে তার বর্ধিত সম্পৃক্ততার জন্য সরকারের প্রশংসাও করেছে। অন্য দিকে, ভারত পিএনসির সঙ্গে এই সম্পৃক্ততাকে কম বিতর্কিত বলে মনে করে। ভারত অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া এবং পছন্দের বিকল্পকে বেছে নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত নয়, বিশেষ করে যতক্ষণ না সরকার গণতন্ত্রের উপর কঠোর ব্যবস্থা না নেয় এবং ভারতীয় বিপদসীমাকে সম্মান করে। এই বাস্তববাদী সম্পৃক্ততার মাধ্যমে ভারত নগণ্য ভারতবিরোধী বক্তব্যের মাধ্যমে সদিচ্ছা ও লাভ লালন করে চলেছে।
ভিশন ডকুমেন্টে রাজনৈতিক ও নেতৃত্বের আদান-প্রদান বৃদ্ধি এবং এই বহুমুখী সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নেওয়ার উপরও জোর দেওয়া হয়েছিল।
সর্বোপরি, উভয় দেশের ক্ষমতাসীন দলগুলি উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা, নিয়মিত পর্যালোচনা ও খোলামেলা কথোপকথনের মাধ্যমে আস্থা তৈরি এবং দুই দলের মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে। ২০২৪ সালের অগস্ট মাসে তাঁর সরকারি সফরের সময় ইএএম জয়শঙ্কর এমডিপির বিরোধী নেতাদের সঙ্গেও একটি বৈঠক করেছিলেন। তবে পিএনসি এই আলোচনার রাজনীতিকরণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই ভাবে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে তাঁর সফরের সময় মুইজ্জু দুই দলের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নত করার জন্য ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সভাপতি জেপি নাড্ডার সঙ্গেও দেখা করেছিলেন। ভিশন ডকুমেন্টে রাজনৈতিক ও নেতৃত্বের আদান-প্রদান বৃদ্ধি এবং এই বহুমুখী সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নেওয়ার উপরও জোর দেওয়া হয়েছিল। এর পরে পার্লামেন্ট স্পিকার - যিনি ক্ষমতাসীন পিএনসির চেয়ারপারসনও বটে - ভারত সফর করেন। এই বিনিয়োগগুলি অবশ্যই নেতৃত্বের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধি করবে এবং এমন একটি বৈদেশিক নীতির দিকে পরিচালিত করবে, যা দীর্ঘমেয়াদে অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রতি কম সংবেদনশীল হবে।
এই দিক থেকে দেখলে, মোদীর মলদ্বীপ সফর ঐতিহাসিকই বটে। ২০০৮ সালে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পর এটিই প্রথম বারের মতো, যখন কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী একটি নন-এমডিপি প্রশাসনের অধীনে মলদ্বীপ সফর করেছেন। ভারতের জন্য এই সফরটি প্রমাণ করেছে যে, মলদ্বীপে তাঁর প্রভাব অপ্রতিরোধ্য ও চিরস্থায়ী। মলদ্বীপের পক্ষ থেকে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক জীবনরেখার পাশাপাশি মুইজ্জু তাঁর দর্শকদের দেখাতে সক্ষম হয়েছেন যে, তিনি ভারতের মতো বৃহত্তর প্রতিবেশীর সঙ্গে তাঁর শর্তে আচরণ করেছেন এবং মলদ্বীপের সার্বভৌমত্ব ও ক্ষমতা সমুন্নত রেখেছেন। বাস্তববাদ, গুণমান ও নিরপেক্ষতার উপর জোর দিয়ে উভয় দেশই সম্পর্কের গতিপথ পুনর্লিখন করছে এবং ক্রমপতনশীল সম্পর্ক থেকে রক্ষা করেছে।
আদিত্য গৌদারা শিবমূর্তি অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।
নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত লেখক(দের) ব্যক্তিগত।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Aditya Gowdara Shivamurthy is an Associate Fellow with the Strategic Studies Programme’s Neighbourhood Studies Initiative. He focuses on strategic and security-related developments in the South Asian ...
Read More +