Published on Nov 14, 2025 Updated 0 Hours ago

ভারত দৃঢ় অংশীদারিত্বের মাধ্যম মলদ্বীপের মন জয় করেছে

মালের অবস্থান বদল

২৫-২৬ জুলাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মলদ্বীপ সফর এই অঞ্চলে ভারতের স্থায়ী প্রভাব উপস্থিতি সম্পর্কে একটি জোরালো বার্তা প্রদান করে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু ইন্ডিয়া আউটপ্রচারণার মাধ্যমে নির্বাচনে জয়লাভ করেন এবং মলদ্বীপপন্থীনীতির অজুহাতে চিনে সঙ্গে ঘনিষ্ঠতর হয়ে ভারতের থেকে দূরে সরে গিয়ে সম্পর্ক বৈচিত্র্যময় করতে শুরু করেন। তবুও ভারতের সহনশীল সম্পৃক্ততা, চিনের দুর্বল কর্মক্ষমতা এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সঙ্কট মুইজ্জুকে সম্পর্ক পুনর্বিন্যাস করতে বাধ্য করে। মোদীর সফর ইঙ্গিত দেয় যে, ভারত এই পুনর্বিন্যাসের প্রতিদান দিচ্ছে এবং তারা সে দেশের অবিচল অংশীদার হিসেবেই থাকবে। 

২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে শপথ গ্রহণের পর মুইজ্জু ভারতের সঙ্গে মলদ্বীপের হাইড্রোগ্রাফিক চুক্তি বাতিল করেন, নয়াদিল্লিকে তার সৈন্য প্রত্যাহার করতে বলেন এবং আনুষ্ঠানিক ভাবে তুরস্ক ও চিন সফর করেন। ভারত অভ্যন্তরীণ বাধ্যবাধকতা বুঝতে পেরেছিল এবং এই মনোভাব নীতিগুলি সহ্য করে চলেছে। দিল্লি তার উচ্চ স্তরের সম্পৃক্ততা, বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং রফতানি কোটা বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে। ভারত তার সৈন্যদের প্রযুক্তিবিদদের দিয়ে প্রতিস্থাপন করে এবং ধারাবাহিক ভাবে মালেকে নিজের বিপদসীমা সম্পর্কে স্পষ্টতই অবগত করে। চিরাচরিত ভাবে মুইজ্জু তাঁর দল বেজিংয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক উপভোগ করেছে এবং এটি তাঁর ভারত-বিরোধী নীতিকে কিছুটা ইন্ধন জুগিয়েছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে চিনে তাঁর রাষ্ট্রীয় সফরের সময় মুইজ্জু ২০টিরও বেশি সমঝোতাপত্র স্বাক্ষর করে, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও গভীর হয় এবং চিন এই সম্পর্ককে একটি ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক  অংশীদারিত্বে উন্নীত করতে সম্মত হয়। তিনি ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) পুনরুজ্জীবিত করতে এবং মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) বাস্তবায়নে সম্মত হন। বিনিময়ে, মুইজ্জু চিনের কাছ থেকে বিনিয়োগ সহায়তা আশা করেছিলেন। তিনি উত্তরাধিকারসূত্রে বাজেট ও বাণিজ্য ঘাটতি এবং পরিপক্ব ঋণে জর্জরিত অর্থনীতি পেয়েছিলেন। ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত মলদ্বীপের বকেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ৬.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ঋণ জিডিপি অনুপাত ছিল ৯৭ শতাংশ। বেশির ভাগ ঋণ ছিল অভ্যন্তরীণ। বহির্বিশ্বে চি ছিল বন্ডহোল্ডার এবং ভারত ছিল শীর্ষ ঋণদাতা।

সেই সফরে বেজিং ১৩০ মিলিয়ন ডলার অনুদান প্রদান করে এবং পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য ঋণ ত্রাণ প্রদানে সম্মত হয়। ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে চিন ৭৫ মিলিয়ন ডলারের ঋণ পুনঃঅর্থায়ন করেছিল, কিন্তু ত্রাণ বা নতুন ঋণ দিতে দ্বিধা করেছিল। বরং চিন ছোট এবং সুন্দরপ্রকল্পের ব্র্যান্ডের অধীনে কমিউনিটি প্রকল্প অনুদানের উপর মনোনিবেশ করেছে, যা মুইজ্জুর প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। ফলে মলদ্বীপ চিনা ঋণ বন্ড পরিষেবা প্রদান অব্যাহত রেখেছে, যার ফলে বৈদেশিক ভাণ্ডার হ্রাস পেয়েছে। একই সময়ে, ভারতীয় ঋণ পরিপক্ব হয়েছে, যার ফলে দেশের ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে, ঋণের পরিমাণ ৯.৪ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ জিডিপির ১২২ শতাংশ। চিনের কাছে মলদ্বীপের ৪৭৩ মিলিয়ন ডলার এবং সার্বভৌম গ্যারান্টি ৫৬৭ মিলিয়ন ডলার প্রদেয় রয়েছেভারতের সঙ্গে আবার মলদ্বীপের ঋণ এখন ৫৭২ মিলিয়ন ডলার এবং সার্বভৌম গ্যারান্টি ৬০৮ মিলিয়ন ডলারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের পূর্ববর্তী প্রতিশ্রুতি থেকে আরও ৮০০ মিলিয়ন ডলার এখনও বিতরণ করা হয়নি।

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু ইন্ডিয়া আউটপ্রচারণার মাধ্যমে নির্বাচনে জয়লাভ করেন এবং মলদ্বীপপন্থীনীতির অজুহাতে চিনে সঙ্গে ঘনিষ্ঠতর হয়ে ভারতের থেকে দূরে সরে গিয়ে সম্পর্ক বৈচিত্র্যময় করতে শুরু করেন। তবুও ভারতের সহনশীল সম্পৃক্ততা, চিনের দুর্বল কর্মক্ষমতা এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সঙ্কট মুইজ্জুকে সম্পর্ক পুনর্বিন্যাস করতে বাধ্য করে।

এই অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পূর্বাভাস পেয়ে ভারতের আবাসন নীতি লক্ষ্য করে ২০২৪ সালের মে মাসে মলদ্বীপের বিদেশমন্ত্রী সম্পর্ক উন্নতি করতে এবং অর্থনৈতিক সহায়তা চাওয়ার জন্য ভারত সফর করেন। এর ফলে আরও উচ্চ স্তরের যোগাযোগ এবং সাহায্যের পথ তৈরি হয়। মুইজ্জু দুবার ভারত সফর করেন এক বার মোদীর শপথ গ্রহণের সময় এবং আবার ২০২৪ সালের অক্টোবরে তাঁর রাষ্ট্রীয় সফরের সময়। সেই সফরে উভয় দেশই ব্যাপক অর্থনৈতিক ও সামুদ্রিক নিরাপত্তা অংশীদারিত্বের দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে। মোদীর সাম্প্রতিক সফর উচ্চ স্তরের যোগাযোগের এই ঐতিহ্য অনুসরণ করে এবং মলদ্বীপে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা প্রদর্শন করে।

প্রথমত ভারত মলদ্বীপের অর্থনৈতিক সমস্যা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেখিয়েছে। ২০২৪ সালের মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দিল্লি ১০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের টি-বিল, ৪০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের মুদ্রা বিনিময় এবং ৩,০০০ কোটি ডলার (৩৫০ মিলিয়ন ডলার) প্রদান করে। এই সফরের মাধ্যমে ভারত ৪,৮৫০ কোটি ডলার (৫৬৫ মিলিয়ন ডলার) মূল্যের একটি নতুন ভারতীয় রুপি-নির্ভর ক্রেডিট লাইন (এলওসি) প্রসারিত করে। উভয় দেশই একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে, যার মাধ্যমে পূর্ববর্তী মার্কিন ডলারে চিহ্নিত এলওসি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে মলদ্বীপের বার্ষিক ঋণের দায় ৪০ শতাংশ কমে ৫১ মিলিয়ন ডলার থেকে ২৯ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে মুইজ্জু প্রশাসনের প্রতি ভারতের সরাসরি সহায়তার পরিমাণ ১.৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

ভারতও ডলার থেকে রুপিতে তার সহায়তা পরিবর্তন করছে। এটি মলদ্বীপকে ডলারের ভাণ্ডারের সঙ্গে তার ক্রমাগত লড়াই থেকে মুক্তি দেবে এবং ভারতের ডলারমুক্তির প্রচেষ্টাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। মুইজ্জু সরকারকে ভারতের ৯০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি সহায়তা রুপিতে হয়েছেএই সফরে ইউনিফায়েড পেমেন্টস ইন্টারফেস (ইউপিআই) বাস্তবায়নও দেখা গিয়েছে, যা রুপে কার্ডের সঙ্গে মিলিত হয়ে পর্যটন, ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য স্থানীয় মুদ্রায় অর্থ প্রদানকে সম্ভব করে তোলে। এফটিএ দ্বারা বাণিজ্য আরও জোরদার করা হবে যার শর্তাবলি সফরের সময় চূড়ান্ত করা হয়েছিল। মলদ্বীপের ব্যাঙ্ক ভারতীয় টাকায় অ্যাকাউন্ট খোলার অনুমতিও দেবে, যা দেশকে বাণিজ্য বজায় রাখতে এবং ভারতীয় ঋণ পরিশোধ করতে মুদ্রার একাধিক উৎস ব্যবহার করতে সহায়তা করবে।

অর্থনৈতিক অসুবিধা সত্ত্বেও উন্নয়ন প্রকল্প চালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে ভারত। মোদীর সফরে সময় দুই দেশ বিমানবন্দর প্রধান জিএমসিপি প্রকল্প-সহ ভারতের সহায়তায় নির্মিত বিভিন্ন প্রকল্প পর্যালোচনা করেছে। মোদী ৩,৩০০টি আবাসন ফ্ল্যাট হস্তান্তর করেছেন এবং ছটি উচ্চ প্রভাবশালী সম্প্রদায় উন্নয়ন প্রকল্পের (এইচআইসিডিপি) উদ্বোধন করেছেন। বর্তমানে, ৫৩/৫৬টি এইচআইসিডিপি-র মধ্যে ২০টি সম্পন্ন হয়েছে - শুধুমাত্র মুইজ্জু সরকারের অধীনে হয়েছে ১২টি। নতুন এলওসি খেলাধুলো, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা আবাসনের মতো খাতের প্রকল্পগুলির জন্যও হবে। মলদ্বীপ তার অর্থায়নের উৎসগুলিকে কার্যকর ভাবে কাজে লাগাতে এবং বিলম্বের খরচ এড়াতে এই প্রকল্পগুলি সম্পন্ন করতে আগ্রহী। আর্থিক ব্যবস্থার কারণে বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান নতুন প্রকল্প গ্রহণ বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তাই প্রকল্পগুলিকে স্বস্তির সঙ্গেই দেখা যেতে পারে

তিনি পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্বকারী ছোট দলগুলির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের সঙ্গেও দেখা করেন। এমডিপি মোহাম্মদ  নাশিদের সঙ্গে আলাদা ভাবে সাক্ষাতের মাধ্যমে ভারত ইঙ্গিত দিয়েছে যে, ভারত নিজের বন্ধু সমমনস্ক অংশীদারদের ত্যাগ করেনি।

রাজনীতিকরণ সত্ত্বেও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। মোদীর সফরের সময় ভারত মলদ্বীপ জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে (এমএনডিএফ) ৭২টি যানবাহন হস্তান্তর করেছে এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ভবন উদ্বোধন করেছে। ভারত আরও জানিয়েছে যে, তার তিনটি বিমান ইউনিট সম্পর্কিত চুক্তি পুনর্নবীকৃত হয়েছে। নতুন নিয়ন্ত্রণ রেখা মলদ্বীপের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা উন্নয়নের জন্যও ব্যবহার করা হবে।

মোদীর সফরের মাধ্যমে ভারত আরও দেখিয়েছে যে, দিল্লির উদ্বেগকে সম্মান করলে ক্ষমতায় থাকা দলের সঙ্গে মিলে ভারত কাজ করবে। ২০০৮ সালে দেশটির গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পর এটি ছিল মলদ্বীপের ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এমডিপি) প্রশাসনের অধীনে কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রথম সফর। মোদী বেশ কয়েকজন মন্ত্রিপরিষদ মন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করেছেন এবং রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি স্পিকারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন, যাঁদের অনেকেই চিনের ঘনিষ্ঠ এবং ভারতবিরোধী মতামত প্রচার করেতিনি পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্বকারী ছোট দলগুলির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের সঙ্গেও দেখা করেন। এমডিপি মোহাম্মদ নাশিদের সঙ্গে আলাদা ভাবে সাক্ষাতের মাধ্যমে ভারত ইঙ্গিত দিয়েছে যে, ভারত নিজের বন্ধু সমমনস্ক অংশীদারদের ত্যাগ করেনি। এই সফর ভারত-মলদ্বীপ সম্পর্ক এবং দিল্লির দীর্ঘ খেলায় একটি উল্লেখযোগ্য উন্নতি। তবে মলদ্বীপের মাটি থেকে চিনকে সম্পূর্ণ রূপে বাদ দেওয়া যায় না। মালে চিনের সঙ্গে স্থানীয় মুদ্রা নিষ্পত্তি বাস্তবায়ন এবং একটি চিনা ব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠা নিয়ে আলোচনা করছে। বেজিং মুইজ্জুর মলদ্বীপে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, পরিপক্ব ঋণ, সম্প্রদায় উন্নয়ন প্রকল্প ঠিকাদার হিসেবে কাজ করা চিনা সংস্থাগুলির সঙ্গে স্থায়ী ভাবে জড়িত। অর্থনৈতিক সঙ্কট গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুইজ্জু উভয় দেশের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে সমাধান খুঁজে বের করতে আগ্রহী হবেন। দ্বীপপুঞ্জে ভারতের সাম্প্রতিক পুনরুত্থানের প্রতি চিন কী ভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে, তার উপর এখন অনেক কিছু নির্ভর করবে।

 


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ওপেন-এ।


নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত লেখক(দের) ব্যক্তিগত।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Harsh V. Pant

Harsh V. Pant

Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...

Read More +
Aditya Gowdara Shivamurthy

Aditya Gowdara Shivamurthy

Aditya Gowdara Shivamurthy is an Associate Fellow with the Strategic Studies Programme’s Neighbourhood Studies Initiative.  He focuses on strategic and security-related developments in the South Asian ...

Read More +