Author : Shairee Malhotra

Published on Aug 09, 2025 Updated 0 Hours ago

ঐতিহাসিক হিসাবে প্রচারিত, ভারত-যুক্তরাজ্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বর্ধিত বাণিজ্য আস্থার প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু অভিবাসন, পরিষেবা এবং জলবায়ু নমনীয়তার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা প্রকাশ করে

ভারত-যুক্তরাজ্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি: শেষ পর্যন্ত একটি বোঝাপড়া

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে, ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার উত্তাপের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতিকে উপেক্ষা করা হয়েছে২০২২ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বে শুরু হওয়া এবং তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা ভারত যুক্তরাজ্য (ইউকে) মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (‌এফটিএ) নিয়ে আলোচনার সমাপ্তি হয় ২০২৫ সালের মেচারজন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এবং বেশ কয়েকটি সময়সীমা মিস করার পর, ২০২৫ সালে প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার এবং লেবার পার্টির নেতৃত্বে বোঝাপড়া চূড়ান্ত হয়েছেস্টারমার ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ক্ষমতায় আসেন

সম্প্রতি সম্পন্ন ভারত-যুক্তরাজ্য এফটিএ  উভয় দেশের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য চুক্তি হিসাবে প্রচারিত হচ্ছেযুক্তরাজ্যের জন্য, চুক্তিটি ২০২০ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ইউরোপীয় একক বাজার থেকে বেরিয়ে আসার পর ব্রেক্সিট-পরবর্তী বাণিজ্য নীতি সম্পৃক্ততার একটি বাস্তব প্রতীক

ভারত যুক্তরাজ্যের জন্য সুবিধা

ভারতের জন্য, ৯৯ শতাংশ ভারতীয় রপ্তানির উপর ব্রিটিশ শুল্ক সম্পূর্ণরূপে বাতিলের সুবিধা রয়েছেবিশেষ করে বস্ত্র পোশাকের মতো ভারতীয় শ্রমনিবিড় ক্ষেত্রগুলির যুক্তরাজ্যের শুল্ক হ্রাসের ফলে উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যার বর্তমান হার ১০ শতাংশ এবং যা বাংলাদেশের মতো দেশগুলির কাছ থেকে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হচ্ছেইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য, অটো যন্ত্রাংশ, রাসায়নিক, রত্ন অলংকার, চামড়া, ক্রীড়া সামগ্রী এবং খেলনা হল অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র যা হ্রাসকৃত শুল্কের ফলে উপকৃত হবে২০৩০ সালের মধ্যে বার্ষিক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানিতে পৌঁছনোর বৃহত্তর ভারতীয় লক্ষ্যে এফটিএ অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে


ভারতীয় শুল্ক হ্রাসের সুযোগ পাওয়া পণ্যের মধ্যে থাকবে অ্যালকোহল অটোমোবাইলের মতো দুটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র, যেগুলি বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের লক্ষ্যবস্তু



অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যের জন্যও ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে ভারতীয় শুল্ক হ্রাস পাবে, যার ৮৫ শতাংশ এক দশকের মধ্যে শুল্কমুক্ত হয়ে যাবেতাদের প্রোডাক্ট লাইনের মধ্যে রয়েছে চিকিৎসা সরঞ্জাম, যন্ত্রপাতি, বিমানের যন্ত্রাংশ, ভেড়ার মাংস, স্যামন, সফট ড্রিংকস, চকোলেট, বিস্কুট প্রসাধনীভারতীয় শুল্ক হ্রাসের সুযোগ পাওয়া পণ্যের মধ্যে থাকবে অ্যালকোহল অটোমোবাইলের মতো দুটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র, যেগুলি বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের লক্ষ্যবস্তু। ব্রিটিশ হুইস্কি ও জিনের উপর ভারতীয় শুল্ক ১৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭৫ শতাংশ করা হবে, এবং দশ বছরের মধ্যে ৪০ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। ব্রিটিশ অটোমোবাইলের উপর শুল্ক ১১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হবে, যদিও গাড়ি রপ্তানির জন্য নির্ধারিত কোটা থাকবে। এই কোটার মধ্যে ২২,০০০ উচ্চমূল্যের ব্রিটিশ বৈদ্যুতিক যানবাহন (ইভি) অন্তর্ভুক্ত থাকবে এবং বিনিময়ে ভারতের জন্যও যুক্তরাজ্যে রপ্তানি করা নিম্ন ও মাঝারি পরিসরের ভারতীয় বৈদ্যুতিক যানবাহনের কোটা থাকবে।

অভিবাসনের বিষয়টি আলোচনার একটি প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও চুক্তিটি চুক্তিভিত্তিক পরিষেবা সরবরাহকারী, রাঁধুনি, সঙ্গীতজ্ঞ ও যোগী সহ নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে কর্মরত ভারতীয় পেশাদারদের জন্য সহজে চলাচলের সুযোগ করে দেয়, ফলাফলটি নয়াদিল্লির পূর্ববর্তী বৃহত্তর পেশাদার কোটার দাবি থেকে একটি বড় পিছু হঠা, বিশেষ করে আইটি ও স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে।

একটি '
ডাবল কনট্রিবিউশন কনভেনশন'-এ দুই দেশ সম্মত হয়েছে, যা যুক্তরাজ্যে অস্থায়ীভাবে থাকা ভারতীয়দের এবং একইভাবে ভারতে থাকা যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের তিন বছরের জন্য সামাজিক সুরক্ষায় অবদান রাখা থেকে অব্যাহতি দেয়। এই সিদ্ধান্তের লক্ষ্য হল কর্মীদের একাধিক সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থায় অর্থ প্রদান থেকে বিরত রাখা। এই কনভেনশন, যুক্তরাজ্যে ভারতীয় পেশাদার পরিষেবার সুযোগ বৃদ্ধি করার পাশাপাশি, ব্রিটিশ ব্যবসাগুলির চলাচল সহজ করার মাধ্যমে ভারতের প্রতিভা পুলে আরও বেশি সুযোগ প্রদান করবে। এটি ভারতীয় নিয়োগকর্তাদের জন্য ২০ শতাংশ সাশ্রয় এবং ৪,০০০ কোটি টাকা আর্থিক লাভের সুযোগ করে দেবে। তবে, ব্রিটেনের বিরোধী রাজনীতিবিদরা এই কনভেনশনের বিরোধিতা করেছেন। তাঁরা ধরে নিয়েছেন যে এটি ব্রিটিশ কর্মীদের, যাদের জন্য জাতীয় বিমা অবদান বৃদ্ধি করা হয়েছে, সংখ্যা হ্রাস করে এবং একটি 'দ্বি-স্তরীয়' কর ব্যবস্থা তৈরি করবে।

ভারতের পক্ষ থেকে নমনীয়তা প্রদর্শন করে নীলনকশায় শ্রম অধিকার, পরিবেশগত মান, দুর্নীতি দমন এবং লিঙ্গ সমতা সম্পর্কিত অধ্যায়গুলি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যদিও ভারতের ঐতিহ্যগতভাবে বাণিজ্য চুক্তিতে এই ক্ষেত্রগুলি অন্তর্ভুক্ত করার বিরোধিতা রয়েছে।


এই চুক্তি ব্রিটিশ কোম্পানিগুলিকে টেন্ডারের জন্য দরপত্র আহ্বান করতে এবং ভারতের বিশাল ক্রয় বাজারে প্রবেশাধিকার পেতে অনুমতি দেয় — "
প্রতি বছর প্রায় ৪০,০০০ টেন্ডার যার মূল্য কমপক্ষে ৩৮ বিলিয়ন পাউন্ড।" ভারতের পক্ষ থেকে নমনীয়তা প্রদর্শন করে নীলনকশায় শ্রম অধিকার, পরিবেশগত মান, দুর্নীতি দমন এবং লিঙ্গ সমতা সম্পর্কিত অধ্যায়গুলি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যদিও ভারতের ঐতিহ্যগতভাবে বাণিজ্য চুক্তিতে এই ক্ষেত্রগুলি অন্তর্ভুক্ত করার বিরোধিতা রয়েছে।

চুক্তিটি কী বাদ দেয়

দেশীয় শিল্পগুলিকে রক্ষা করার জন্য দুগ্ধজাত পণ্য, আপেল ও পনিরের মতো সংবেদনশীল পণ্যগুলির উপর শুল্ক থাকবে।

যুক্তরাজ্যের ল সোসাইটি কর্তৃক '
হারানো সুযোগ' হিসাবে বলা হয়েছে, চুক্তিতে আইনি পরিষেবাগুলির কোনও উল্লেখ নেই, যা ব্রিটিশ অর্থনীতিতে বার্ষিক ৫৭.৮ বিলিয়ন পাউন্ড অবদান রাখে। ভারতীয় নিয়মকানুনগুলিতে পরিবর্তন বিদেশি সংস্থাগুলিকে স্থানীয় অংশীদার ছাড়াই ভারতে প্র‌্যাকটিস করার অনুমতি দেয়, যদিও কিছু সতর্কতা সহ। ভারত ঐতিহ্যগতভাবে তার পরিষেবা ক্ষেত্র উন্মুক্ত করতে অনিচ্ছুক, যা দেশের মোট আভ্যন্তর উৎপাদনে (জিডিপি) ৫০ শতাংশেরও বেশি অবদান রাখে।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এই চুক্তি ভারতকে
যুক্তরাজ্যের কার্বন বর্ডার অ্যাডজাস্টমেন্ট মেকানিজম (সিবিএএম) থেকে অব্যাহতি দেয় না, যা ১ জানুয়ারি ২০২৭ থেকে কার্যকর হতে চলেছে। এই প্রক্রিয়ার লক্ষ্য কার্বন-নিবিড় আমদানিকৃত পণ্য যেমন লোহা, ইস্পাত ও সারের উপর তাদের কার্বন নির্গমনের উপর ভিত্তি করে কর আরোপ করা। ভারত ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে আলোচনা এই প্রধান বিরোধপূর্ণ বিষয় নিয়ে অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। তাছাড়া থাকবে ২০১৬ সালে ভারত বিআইটি স্থগিত করার পর বিনিয়োগ রক্ষা এবং বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একটি দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ চুক্তি (বিআইটি) চূড়ান্ত করার জন্য আলোচনা।

ভারত-যুক্তরাজ্য কৌশলগত অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি

এই চুক্তির ফলে
দ্বিপাক্ষিক ভারত-যুক্তরাজ্য বাণিজ্য,  যার মূল্য বর্তমানে ৪২ বিলিয়ন পাউন্ড, ২০৪০ সাল নাগাদ বার্ষিক ২৫.৫ বিলিয়ন পাউন্ড করে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২৪ সালে, ভারত ছিল যুক্তরাজ্যের ১২তম বাণিজ্যিক অংশীদার, যেখানে যুক্তরাজ্য ছিল ভারতের ১৪তম বাণিজ্যিক অংশীদার, যা মোট যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যের মাত্র ২.৪ শতাংশ ছিল। আরও বিস্তৃতভাবে বলতে গেলে, এফটিএ ত্বরান্বিত করবে উদ্ভাবনকে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে, এবং বৃহত্তর বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রবাহকে উদ্দীপিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।


ইন্দো-প্যাসিফিকের দিকে ঝুঁকে পড়া', গ্লোবাল সাউথের সঙ্গে এর বিস্তৃত সম্পৃক্ততা, এবং ব্রেক্সিট-পরবর্তী বৈশ্বিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্য ব্রিটেনের ভারতের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।



নির্ভরযোগ্য বাণিজ্যিক অংশীদারদের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি করা ভারত এবং যুক্তরাজ্য উভয়ের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার। মূল্যস্ফীতি, বৈশ্বিক অস্থিতিশীলতা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের চলতি অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়ার সময়ে ব্রিটেনের অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের অ্যাজেন্ডার জন্য ভারতের ১.৫ বিলিয়ন জনসংখ্যার বিশাল বাজার এবং স্থিতিশীল অর্থনৈতিক গতিপথ স্বাভাবিকভাবেই উপযুক্ত।
ইন্দো-প্যাসিফিকের দিকে ঝুঁকে পড়া', গ্লোবাল সাউথের সঙ্গে এর বিস্তৃত সম্পৃক্ততা, এবং ব্রেক্সিট-পরবর্তী বৈশ্বিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্য ব্রিটেনের ভারতের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এই চুক্তির ফলে ভারতে যুক্তরাজ্যের রপ্তানি প্রায় ৬০ শতাংশ (১৫.৭ বিলিয়ন পাউন্ড) বৃদ্ধি পাবে বলে
আশা করা হচ্ছে, যেখানে যুক্তরাজ্যে ভারতীয় রপ্তানি মাত্র ২৫ শতাংশ (৯.৮ বিলিয়ন পাউন্ড) বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। যদি এই অনুমানগুলি সঠিক হয়, তবে চুক্তিটি ট্রাম্পের বাধা এবং চিনা নির্ভরতার মধ্যে একে অপরের বাজারে প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি করে। এই চুক্তি বিশ্বের পঞ্চম এবং ষষ্ঠ বৃহত্তম অর্থনীতি, ভারত ও যুক্তরাজ্যকে যথাক্রমে বহিরাগত ধাক্কা থেকে রক্ষা করতে পারে এবং তাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে পারে, বিশেষ করে যেহেতু ভারত আঞ্চলিক ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব (আরসিইপি) বা ট্রান্স-প্যাসিফিক অংশীদারিত্বের জন্য ব্যাপক এবং প্রগতিশীল চুক্তি (সিপিটিপিপি)-‌র মতো প্রধান বাণিজ্য ব্লকের বাইরে থাকে।

চুক্তিটি উভয় সংসদ কর্তৃক অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। তবে, এফটিএ ভারত-যুক্তরাজ্য কৌশলগত অংশীদারিকে আরও দৃঢ় ভিত্তির দিকে নিয়ে যাবে, যা বর্তমানে
রোডম্যাপ ২০৩০ দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।



শায়
রী মলহোত্র অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ডেপুটি ডিরেক্টর।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.