Author : Arya Roy Bardhan

Published on Jul 17, 2024 Updated 0 Hours ago

ভারত ও ইএফটিএ একটি বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি অনুমোদন করেছে, এবং আইপিআর ও স্থিতিশীল উন্নয়ন বজায় রেখে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর অঙ্গীকার করেছে

ভারত-ইএফটিএ বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি: একটি সময়োপযোগী দৃষ্টান্ত

ভারত ১০ মার্চ ২০২৪-এ সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, আইসল্যান্ড ও লিচেনস্টাইন সমন্বিত ইউরোপীয় মুক্ত বাণিজ্য সংস্থা (ইএফটিএ)-‌র সঙ্গে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (টিইপিএ) স্বাক্ষর করেছে। ২০০৮ সাল থেকে ২১ দফা আলোচনার পর এই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিটি অবশেষে অনুমোদন করা হয়েছে, যেটি অন্য নানা ক্ষেত্রের সঙ্গে বাণিজ্য, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, মেধা সম্পত্তি এবং স্থিতিশীল উন্নয়নে বর্ধিত সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি এনেছে। এই চুক্তির স্বাতন্ত্র্যসূচক বৈশিষ্ট্য ইউরোপীয় দেশগুলির দ্বারা তৈরি করা ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাধ্যতামূলক প্রতিশ্রুতি থেকে উদ্ভূত, যা আগামী ১৫ বছরে বিনিয়োগ করা হবে, এবং যার ফলে ১ মিলিয়নেরও বেশি প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান হবে। টিইপিএ-তে দেওয়া পারস্পরিক প্রতিশ্রুতিগুলিকে ওজন করা দরকার, মূল্যায়ন করা দরকার যে সমস্ত পক্ষ কী লাভ করতে পারে এবং ভারত কীভাবে তার বাণিজ্য ভারসাম্যকে শক্তিশালী করতে এটিকে কাজে লাগাতে পারে।


এই চুক্তির স্বাতন্ত্র্যসূচক বৈশিষ্ট্য ইউরোপীয় দেশগুলির দ্বারা তৈরি করা ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাধ্যতামূলক প্রতিশ্রুতি থেকে উদ্ভূত, যা আগামী ১৫ বছরে বিনিয়োগ করা হবে, এবং যার ফলে ১ মিলিয়নেরও বেশি প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান হবে।



বাণিজ্য গতিশীলতা

২০২২-‌২৩ সালের হিসাবে, ইএফটিএ দেশগুলিতে ভারতের বাণিজ্য দেশের মোট বাণিজ্যের ১.৬-শতাংশ, যেখানে মোট বাণিজ্যের পরিমাণ
১৮.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যদিও ইএফটিএ-তে ভারতীয় রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে, ভারতের কম  আমদানির কারণে পণ্যের মোট ভারতীয় বাণিজ্যে তাদের অংশ ক্রমাগতভাবে হ্রাস পাচ্ছে। এটি এই দেশগুলির সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস করেছে। ইএফটিএ-তে ভারতের শীর্ষ রপ্তানিগুলির মধ্যে রয়েছে জৈব রাসায়নিক, পোশাক আনুষঙ্গিক ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, আর এর আমদানির মধ্যে বেশিটাই যন্ত্রপাতি এবং ওষুধপত্র। এইভাবে আমদানি হ্রাসকে আমদানি-প্রতিস্থাপন প্রকল্পগুলির সরাসরি ফলাফল হিসাবে দেখা যেতে পারে, যেমন মেক ইন ইন্ডিয়া ও প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেনটিভ (পিএলআই) স্কিমের মতো দেশীয় উৎপাদন উন্নত করার উপকরণ।

সারণি ১: ভারতীয় বাণিজ্যে ইএফটিএ দেশগুলির শেয়ার (মার্কিন মিলিয়ন ডলারে) 

বছর

 আমদানি

 রপ্তানি

মোট বাণিজ্য

ভারতীয় বাণিজ্যে অংশ

২০১৮-‌১৯

  ১৫৩৩.‌৯৩

১৮৪৪৬.‌৩২ 

২০০০০.‌২৫


২.‌৩৭

২০১৯-‌২০

১৬৩৬.‌১

১৭৫৪১.‌৫১

১৯১৭৭.‌৫৯


২.‌৪৩

২০২০-‌২১

১৫৯৮.‌৬৭

১৮৯১১.‌১৭

২০৫০৯.‌৮৪ 

২.৯৯

২০২১-‌২২

১৭৪২.‌০২

২৫৪৯১.‌২২

২৭২৩৩.‌২৪

২.৬৩

২০২২-‌২৩

১৯২৬.‌৪৪ 

১৬৭৩৮.‌৯৩ 

১৮৬৬৫.‌৩৭


১.৬০

 সূত্র: এক্সিম ডেটা ব্যাঙ্ক থেকে লেখক দ্বারা গণনা করা হয়েছে


টিইপিএ এই এফটিএ-‌র সঙ্গে যুক্ত ট্যারিফ ও শুল্ক নিয়মিত বর্জন বা হ্রাস ছাড়াও পক্ষগুলির মধ্যে বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য একাধিক ধারা প্রবর্তন করেছে৷ এটি
শিল্প পণ্য এবং সামুদ্রিক পণ্যের উপর বিদ্যমান শুল্কের অবসান ঘটাবে, যা দেশগুলির মধ্যে আরও উদার বাণিজ্য পরিবেশকে সহজতর করে। তাছাড়া, কৃষি পণ্যের ক্ষেত্রে, ভারত, সুইজারল্যান্ড এবং লিচেনস্টাইন চুক্তিতে প্রবেশ করেছে, যা উন্নত বাজারে প্রবেশাধিকার প্রদান করবে এবং মৌলিক ও প্রক্রিয়াজাত উভয় কৃষি পণ্যের উপর শুল্ককে ব্যাপকভাবে ভর্তুকি দেবে। এছাড়াও, টিইপিএ আরও সহজ, আরও স্বচ্ছ এবং দ্রুত বাণিজ্য পদ্ধতির নিশ্চয়তা দেয়, যা হবে আন্তর্জাতিক মান সম্মত।


চিত্র ১: ইএফটিএ-‌র সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য (মিলিয়ন মার্কিন ডলারে)
 The India Efta Trade And Economic Partnership Agreement A Timely Template
‌সূত্র:
এক্সিম ডেটা ব্যাঙ্ক

এই নিশ্চয়তাটি আরও ধারা দ্বারা সমর্থিত, যা বাণিজ্যে প্রযুক্তিগত বাধা সহ স্যানিটারি এবং ফাইটোস্যানিটারি ব্যবস্থা হ্রাস নিশ্চিত করে। যদিও আগেরটি বাণিজ্যকৃত খাদ্যপণ্যের গুণমান এবং মান সংক্রান্ত, পরেরটির লক্ষ্য বৈষম্যহীন বাণিজ্য অনুশীলন ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা। একত্রে, তারা মানসম্মত, অ-সুরক্ষামূলক বাণিজ্য ব্যবস্থার জন্য নির্দেশিকা প্রদান করে। স্বচ্ছতা এবং প্রোটোকলের উপর এই ধরনের জোর দেওয়ার পাশাপাশি, টিইপিএ-তে আরও একটি ধারাও রয়েছে যা একচেটিয়াভাবে আর্থিক, টেলিযোগাযোগ, বিমা এবং ব্যাঙ্কিং পরিষেবাগুলিতে বাণিজ্য বাড়ানোর উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। এটি ভারতের জন্য তার ক্রমবর্ধমান পরিষেবা ক্ষেত্রকে লাভবান করা এবং দেশে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) এর প্রবাহ দ্রুত বৃদ্ধি করার জন্য একটি বড় সুযোগ হিসাবে কাজ করতে পারে।

বিনিয়োগ বৃদ্ধি

এপ্রিল ২০০০ থেকে ডিসেম্বর ২০২৩ সময়কালে ভারতে ইএফটিএ দেশের নেট এফডিআই বিতরণ প্রায় ১০.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা টিইপিএ আগামী ১৫ বছরে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এটি ভারতের এফডিআই স্টকে ইএফটিএ-র শেয়ারের একটি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধিকেও নির্দেশ করবে, এবং এই বিনিয়োগকে দক্ষ ক্ষেত্রের দিকে নির্দেশিত করারও প্রয়োজন থাকছে। ভারতীয় অর্থনীতিতে তাদের পা ফেলার জায়গা মজবুত করার এই পরিকল্পনাটি অতিমারি-পরবর্তী সময়ে ভারতের রেকর্ড বৃদ্ধির দ্বারা চালিত হয়েছিল, এবং তারা তাদের বিনিয়োগে ৩-শতাংশ আউটপারফরমেন্স মার্জিন উপলব্ধি করার আশা করছে। যাই হোক, ভারতে সরাসরি কর্মসংস্থান সৃষ্টির উপর ফোকাসের অর্থ পারস্পরিক সুবিধা পাওয়া।

সারণি ২: এপ্রিল ২০০০ থেকে ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত দেশভিত্তিক এফডিআই ইক্যুইটি ইনফ্লো

দেশ

এফডিআই ইক্যুইটি ইনফ্লো (মিলিয়ন মার্কিন ডলারে)

মোট এফডিআই প্রবাহের অংশ

সুইজারল্যান্ড

৯,৯৪৬.‌০২  

১.‌৪৯

নরওয়ে

৭২১.‌৫২ 

০.‌১১

আইসল্যান্ড   

২৯.‌২৬ 

০.‌০০৪

লিচেনস্টাইন

১০৫.‌২২

০.‌০২ 

ইএফটিএ মোট

১০,৮০২.‌০২ 

১.‌৬২

 সূত্র: ডিপিআইআইটি, ভারত সরকার


ভারতকে যেমন বিদেশী বিনিয়োগের জন্য উপযোগী পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে, তেমনই টিইপিএ সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলিতেও ফোকাস করে যা এই অর্থনীতিগুলির পরিপূরকতা কাজে লাগাতে পারে৷ এর মধ্যে রয়েছে বাধা অপসারণ, সুযোগ সনাক্তকরণ, প্রযুক্তিগত সহযোগিতা এবং মাঝারি, ক্ষুদ্র এবং অতিক্ষুদ্র উদ্যোগের (এমএসএমই) মধ্যে যৌথ উদ্যোগ সক্রিয় করা। বাজারে এমএসএমই-র সর্বব্যাপকতা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তাদের প্রধান ভূমিকার পরিপ্রেক্ষিতে এটি ভারতকে ব্যাপকভাবে উপকৃত করবে। টিইপিএ উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির মাধ্যমে মেক ইন ইন্ডিয়া উদ্যোগকেও প্রচার করবে, এবং ইএফটিএ দেশগুলির সঙ্গে বাণিজ্য ভারসাম্যকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করবে।


ভারতীয় ও ইউরোপীয় পরিষেবা বাজারের একীকরণ দক্ষ মধ্যবিত্তের বর্ধিত মজুরির মাধ্যমে ভারতীয় সমাজে সমৃদ্ধির স্তরকে পদ্ধতিগতভাবে প্রভাবিত করতে পারে।



পরিষেবা ক্ষেত্রের দিকে এফডিআই নির্দেশিত করা দুই-স্তরের সুবিধা প্রদান করতে পারে, ব্যবসায়িক-স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে পারে এবং একইসঙ্গে ভিত্তি হিসেবে সুইজারল্যান্ডের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ক্ষেত্রীয় কার্যক্রম সম্প্রসারণ করতে পারে। ভারতীয় ও ইউরোপীয় পরিষেবা বাজারের একীকরণ দক্ষ মধ্যবিত্তের বর্ধিত মজুরির মাধ্যমে ভারতীয় সমাজে সমৃদ্ধির স্তরকে পদ্ধতিগতভাবে প্রভাবিত করতে পারে। গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি)-‌এর মতো পরিষেবাগুলিও চুক্তিতে উপেক্ষা করা হয় না, এবং তা মেধা সম্পত্তির অধিকারের সুরক্ষাকে হাইলাইট করে৷ চুক্তিতে ভারতীয় অগ্রাধিকারগুলিকে তুলে ধরা হয়েছে, আর এর একটি সম্পূর্ণ অংশ স্থিতিশীল উন্নয়নের ইস্যুকে সম্বোধন করে।

স্থিতিশীলতার পক্ষে সমর্থন

টিইপিএ স্পষ্টভাবে বলে যে সমস্ত বাণিজ্য স্থিতিশীলতার নিয়ম অনুসরণ করবে, যা পরিবেশ সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয় এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধির অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করে। এই চুক্তির পক্ষগুলির তাদের নিজস্ব পরিবেশগত এবং শ্রম আইন ডিজাইন করার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে, তবে এর বাণিজ্যের অ-বৈষম্যমূলক প্রকৃতির উপর আঘাত করা উচিত নয়। অধিকন্তু, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নির্দেশিকা মেনে চলার প্রতিশ্রুতি সহ একটি লিঙ্গ দৃষ্টিভঙ্গির গুরুত্ব স্বীকার করা হয়। জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত রাষ্ট্রপুঞ্জের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন (ইউএনএফসিসিসি) এবং প্যারিস চুক্তি দ্বারা নির্ধারিত লক্ষ্যগুলির পরিপ্রেক্ষিতে, দেশগুলি এই লক্ষ্যগুলি অর্জনের জন্য দ্বিপাক্ষিকভাবে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে।


টিইপিএ স্পষ্টভাবে বলে যে সমস্ত বাণিজ্য স্থিতিশীলতার নিয়ম অনুসরণ করবে, যা পরিবেশ সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয় এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধির অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করে।



এইভাবে, পণ্য ও পরিষেবাগুলিতে বাণিজ্য, বিনিয়োগ প্রসার, দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা, পরিবেশ সুরক্ষা ও শ্রম কল্যাণের দিকে মনোযোগ দিয়ে টিইপিএ একটি অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে৷ কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর), দায়িত্বশীল উপভোগ ও উৎপাদন, ন্যায্য পরিবর্তন, এবং ইকোসিস্টেম ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে সর্বোত্তম অনুশীলন ভাগ করে নেওয়ার উপর বিশেষভাবে জোর দেওয়া হয়েছে, যা সামাজিকভাবে মূল্যবান পরিষেবাগুলির অন্তর্ভুক্তি নির্দেশ করে, যা প্রায়শই ঐতিহ্যগত বাণিজ্য চুক্তিতে উপেক্ষা করা হত। যদিও এটি অবশ্যই স্বাভাবিক অর্থনৈতিক চ্যানেলগুলির মাধ্যমে ভারতীয় উন্নয়নমূলক যাত্রাকে প্রসারিত করার সম্ভাবনা রাখে, এটি ভবিষ্যতের বাণিজ্য চুক্তির জন্য একটি প্রোটোটাইপ হিসাবেও কাজ করতে পারে।



আর্য রায় বর্ধন অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন গবেষণা সহকারী

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.