অপুষ্টি একটি প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যা, যা স্বাস্থ্যের প্রতিকূল পরিণতি ঘটায় এবং অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করে। অপুষ্টির কারণে বছরে ৩.১ মিলিয়ন শিশুর মৃত্যু হয়, যা সার্বিক শিশুমৃত্যুর প্রায় ৪৫ শতাংশ।
মানব পুঁজিতে বর্ধিত বিনিয়োগ মানুষের মধ্যে উন্নত জ্ঞান ও দক্ষতার মাধ্যমে অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে। সুস্থ নারী ও শিশুরা একটি সমৃদ্ধ সমাজের স্তম্ভ। তথ্যপ্রমাণ শিশুদের জন্য উন্নত ফলাফলের উদ্দেশ্যে একটি কার্যকর কৌশল হিসাবে নারী ও শিশুদের মঙ্গলে বিনিয়োগের পরামর্শকেই তুলে ধরে।
মানব পুঁজি হল রাষ্ট্রের সম্পদ এবং মানুষের স্বাস্থ্য, পুষ্টি, দক্ষতা এবং জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। হিউম্যান ক্যাপিটাল ইনডেক্স অনুসারে, ভারত ১৭৪টি দেশের মধ্যে ১১৬তম স্থানে রয়েছে এবং তার ০.৪৯ শতাংশের স্কোর এই ইঙ্গিত করে যে, ভারতে জন্মগ্রহণকারী একটি শিশুকে সম্পূর্ণ শিক্ষা এবং সুস্বাস্থ্য প্রদান করলে সে ৪৯ শতাংশ উত্পাদনশীল হবে।
তথ্যপ্রমাণ দর্শিয়েছে যে, মানসম্পন্ন প্রারম্ভিক শৈশব কর্মসূচিগুলিতে বিনিয়োগ করা প্রতিটি অতিরিক্ত ডলার ৬ থেকে ১৭ মার্কিন ডলারের মাঝে মুনাফা প্রদান করে। শিশুদের মধ্যে প্রাথমিক উদ্দীপনা তাদের ভবিষ্যৎ আয়ের ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে বলে জানা যায়। শৈশবে খর্বতা মস্তিষ্কের বিকাশ, কম জ্ঞানগত দক্ষতা এবং শিক্ষার দিকে পরিচালিত করে, যা ভবিষ্যতে কম আয়ের কারণ। এটি প্রায়শই অসংক্রামক রোগের পরিপ্রেক্ষিতে জীবনের প্রতিকূল ফলাফলের সঙ্গে সংযুক্ত, যার ফলে স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার খরচ অত্যধিক বেড়ে যায়।
শিশুদের মধ্যে প্রাথমিক উদ্দীপনা তাদের ভবিষ্যৎ আয়ের ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে বলে জানা যায়। শৈশবে খর্বতা মস্তিষ্কের বিকাশ, কম জ্ঞানগত দক্ষতা এবং শিক্ষার দিকে পরিচালিত করে, যা ভবিষ্যতে কম আয়ের কারণ।
গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজ স্টাডি অনুসারে, ভারতে অক্ষমতা-সহ বেঁচে থাকার বছরগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত দশটি ঝুঁকির কারণের মধ্যে ছ’টি পুষ্টি সংক্রান্ত। ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে (এনএফএইচএস-৫) অনুসারে, কয়েক বছর ধরে প্রান্তিক উন্নতি সত্ত্বেও ভারতে অগ্রহণযোগ্য ভাবে উচ্চ মাত্রার খর্বতা (৩৫.৫ শতাংশ) রয়েছে। বিশ্ব ব্যাঙ্কের মতে, ‘শৈশবের খর্বতার কারণে প্রাপ্তবয়স্কদের উচ্চতার ১ শতাংশ হ্রাস অর্থনৈতিক উত্পাদনশীলতার ১.৪ শতাংশ ক্ষতির সঙ্গে সম্পর্কিত’, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। হিসেব অনুযায়ী, খর্ব শিশুরা প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে সুস্থ শিশুর তুলনায় ২০ শতাংশ কম উপার্জন করে।
আর একটি জটিল কারণ হল প্রায় ৫৭ শতাংশ অল্পবয়সি মহিলার মধ্যে রক্তাল্পতা, যা তাঁদের ভবিষ্যতের গর্ভধারণ এবং প্রসবের উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়, যখন শিশুদের অপ্রতুল খাবার খাওয়ানো হয় এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং স্বাস্থ্যবিধিও থাকে অপ্রতুল।
তথ্যপ্রমাণ থেকে জানা যায় যে, ভারতের বর্তমান শ্রমশক্তির দুই তৃতীয়াংশই খর্ব, যার মাথাপিছু আয় হ্রাসের পরিপ্রেক্ষিতে প্রচুর অর্থনৈতিক ব্যয় রয়েছে। খর্বতার উচ্চ হারের কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলির মাথাপিছু আয়ের গড় হ্রাস ৭ শতাংশ এবং ভারতের প্রেক্ষিতে সেই পরিমাণ ১৩ শতাংশ। অপচয়ের কারণে ভারতের যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে, তা আজীবন উৎপাদনশীলতার পরিপ্রেক্ষিতে ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি অনুমান করা যায়।
গ্লোবাল নিউট্রিশন রিপোর্ট অনুসারে, অপুষ্টি প্রতিরোধ করার জন্য প্রতি ১ মার্কিন ডলার খরচের বিনিয়োগে ১৬ মার্কিন ডলার উঠে আসে, যা পুষ্টিতে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে। ভারতের অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৬-এ স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে যে, মাতৃত্বকালীন এবং জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ের পুষ্টিতে বিনিয়োগ করার অন্তর্নিহিত কারণ থাকলেও পুষ্টি সংক্রান্ত কর্মসূচিগুলিতে বিনিয়োগে অত্যন্ত উচ্চ বিনিময় মূল্য পাওয়া সম্ভব।
জল, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং স্বাস্থ্যবিধির (ওয়াশ) মতো পুষ্টি সংবেদনশীল হস্তক্ষেপগুলি অন্তর্নিহিত নির্ধারকগুলির উপর মনোনিবেশ করে, কারণ দুর্বল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাও খর্বতার কারণ হতে পারে। তথ্যপ্রমাণগুলি গ্রামীণ ভারতে একটি সমন্বিত জল এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার উন্নতি কর্মসূচির মাধ্যমে ডায়রিয়া পর্বে (৩-৫০ শতাংশ) স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি উভয়ই হ্রাস করার পরামর্শ দেয়। ওয়াশ শৈশবকালীন অপুষ্টি মোকাবিলায় উল্লেখযোগ্য লাভ ঘটাতে পারে এবং এটি খর্বতার গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারকও বটে (কামিং প্রমুখ, ২০১৬)।
শিশুদের শিক্ষা মানব পুঁজি সংগ্রহ, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জন্ম ও পুষ্টির ফলাফলের উন্নতির জন্য গর্ভধারণ থেকে দুই বছর বয়স পর্যন্ত ১০০০ দিনের সময়সীমাকে লক্ষ্য করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে সর্বাধিক মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটলে শিশুরা দ্রুত শেখে এবং এই গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে বিনিয়োগের অর্থনৈতিক নিরিখে একাধিক সুবিধা রয়েছে।
এমনকি নানা গবেষণা গর্ভবতী মহিলাদের এবং ছোট শিশুদের পুষ্টিগত উন্নতির মাধ্যমে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের পুঁজি এবং স্বাস্থ্যের উপর দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা প্রদানের পরামর্শ দেয়। জীবনের প্রথম ১০০০ দিন হল দ্রুত বৃদ্ধি ও বিকাশের সময় এবং ভাল পুষ্টির অভাব আজীবনের জন্য বিরূপ পরিণতির দিকে চালিত করতে পারে। এই সময়কাল সুযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ জানালা। কারণ এই সময়ের মধ্যে খর্বতা প্রকাশ পায় এবং দু’বছর বয়সের মধ্যে তা প্রকট হয়।
তথ্য (এনএফএইচএস-৫) প্রকাশ করে যে, সম্ভবত আর্থ-সামাজিক ভিন্নতার কারণে শহরাঞ্চলের তুলনায় ভারতের গ্রামীণ এলাকায় বেশি খর্ব শিশু রয়েছে। মায়ের শিক্ষা এবং পরিবারের আয়ের উপর নির্ভর করে খর্বতার প্রবণতা পরিবর্তিত হয়। মেঘালয় (৪৬.৫ শতাংশ) এবং বিহার (৪২.৯ শতাংশ) রাজ্যে খর্বতার উচ্চ হার-সহ অন্যান্য অঞ্চলের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে, যেখানে সিকিম এবং পুদুচেরির মতো রাজ্যগুলিতে যথাক্রমে ২২.৩ শতাংশ এবং ২০ শতাংশ নিয়ে সেই হার সর্বনিম্ন। খর্বতার প্রাদুর্ভাবের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য আন্তঃ-রাজ্য এবং আন্তঃ-জেলা ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়েছে।
এমনকি নানা গবেষণা গর্ভবতী মহিলাদের এবং ছোট শিশুদের পুষ্টিগত উন্নতির মাধ্যমে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের পুঁজি এবং স্বাস্থ্যের উপর দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা প্রদানের পরামর্শ দেয়।
ভারতের শিশুদের সুশিক্ষা, পুষ্টি এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা-সহ মানবিক পুঁজিতে আরও বেশি করে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা আগের চেয়ে এই মুহূর্তে অনেক বেশি বাস্তব। পুষ্টি সংবেদনশীল কর্মসূচিগুলির সঙ্গে পুষ্টি-নির্দিষ্ট হস্তক্ষেপগুলি সংযুক্ত করার প্রয়োজন রয়েছে যা অপুষ্টির মোকাবিলা করে।
একটি স্বাস্থ্যবান, উচ্চ দক্ষ কর্মীশক্তি তৈরি করা এবং বজায় রাখার জন্য ভারতকে অবশ্যই শিশু স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং শিক্ষার উন্নতির উদ্দেশ্যে সাশ্রয়ী বিনিয়োগ করতে হবে। স্বাস্থ্য পরিষেবা সংক্রান্ত সুবিধাগুলিতে বিনিয়োগ মানব পুঁজি তৈরি করতে সাহায্য করে, যা শারীরিক এবং মানসিক ভাবে সুস্থ, উত্পাদনশীলতা, অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পুষ্টির জন্য বিনিয়োগের কাঠামোর উপর করা বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রতিবেদন অনুসারে, খর্বতা, মহিলাদের রক্তস্বল্পতা, শিশুদের জন্য একচেটিয়া স্তন্যপান এবং ছোট শিশুদের মধ্যে মারাত্মক অপচয়ের চিকিত্সার জন্য বিশ্বব্যাপী লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের উদ্দেশ্যে ১০ বছরে ৭০ বিলিয়ন ডলার উচ্চ প্রভাবমূলক পুষ্টি নির্দিষ্ট হস্তক্ষেপে বিনিয়োগ করতে হবে। তাই ভারতকে বিশেষ করে প্রথম ১০০০ দিনে অল্পবয়সি শিশুদের জন্য সাশ্রয়ী পুষ্টি নির্দিষ্ট হস্তক্ষেপের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে হবে, যাতে ‘সকল প্রকারের অপুষ্টির অবসান’ ঘটিয়ে স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ২ অর্জন করা যায় এবং দেশটি মানব পুঁজি উন্নয়নে বিনিয়োগ করার লাভ তুলতে পারে।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় নিউজ১৮ ডট কম-এ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.