Published on Jul 19, 2025 Updated 10 Hours ago

দক্ষিণ কোরিয়ায় নিম্ন উর্বরতা কেবল একটি নীতিগত ত্রুটি নয়, এটি লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকা, অর্থনৈতিক চাপ ক্রমবর্ধমান নারীবাদী বিরোধিতার ফল

দক্ষিণ কোরিয়ার উর্বরতা হ্রাসের লিঙ্গভিত্তিক কারণ

দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বের সবচেয়ে তীব্র জনসংখ্যাগত সঙ্কটেসম্মুখীন হচ্ছে এবং সে দেশের সরকার গত বছর আনুষ্ঠানিক ভাবে এটিকে জাতীয় জরুরি অবস্থা বলে ঘোষণা করেছে। ২০২৪ সালে দেশটির মোট উর্বরতা হার (টিএফআর) রেকর্ড সর্বনিম্ন ০.৭৫-এ নেমে এসেছে, যা স্থিতিশীল জনসংখ্যা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ২.১ প্রতিস্থাপন হারের চেয়ে অনেক কম। এই হারে চলতে থাকলে অনুমান করা হচ্ছে যে, এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ দক্ষিণ কোরিয়া জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে, যার ফলে দেশটির অর্থনীতি জাতীয় নিরাপত্তার উপর গভীর প্রভাব পড়বে। বিশ্বব্যাপী উচ্চ আয়ক্ষম দেশগুলিতে উর্বরতার হার হ্রাস একটি সাধারণ প্রবণতা হলেও দক্ষিণ কোরিয়ার সমস্যাটি সঙ্কটের স্পষ্ট লিঙ্গগত প্রকৃতির দরুন অনন্য

২০২৪ সালে দেশটির মোট উর্বরতা হার (টিএফআর) রেকর্ড সর্বনিম্ন ০.৭৫-এ নেমে এসেছে, যা স্থিতিশীল জনসংখ্যা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ২.১ প্রতিস্থাপন হারের চেয়ে অনেক কম।

জনসংখ্যাগত মন্দার লিঙ্গগত প্রভাবের মূল্যায়ন

২০২৪ সালের বৈশ্বিক লিঙ্গগত বৈষম্য সূচক অনুসারে, দক্ষিণ কোরিয়া ১৪৬টি দেশের মধ্যে ৯৪তম স্থানে ছিল, যেখানে লিঙ্গগত বৈষম্যের মাত্রা ছিল ০.৭, যা ইঙ্গিত দেয় যে, লিঙ্গগত বৈষম্য কমপক্ষে ৩০ শতাংশ বিদ্যমান। এই বৈষম্য সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই দেখা যায়। ২০২৪ সালে শ্রমশক্তিতে পুরুষদের অংশগ্রহণ ছিল ৭২.৯ শতাংশ এবং মহিলাদের ৫৬.৩ শতাংশ, যা অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা(ওইসিডি) গড়ের চেয়ে অনেক কম। কিন্তু আরও আশ্চর্যজনক বিষয় হল যে, দেশটিতে ওইসিডি দেশগুলির মধ্যে সর্বোচ্চ লিঙ্গগত মজুরি বৈষম্য রয়েছে, যা প্রায় ৩২ শতাংশ।

এই পরিসংখ্যানের মূলে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার কুখ্যাত অতি-প্রতিযোগিতামূলক অতিরিক্ত পরিশ্রমী শ্রম সংস্কৃতি। সরকার শ্রমঘণ্টা হ্রাস করে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা শুরু করলেও ২০২৪ সালে কর্মীরা গড়ে ১,৯০১ ঘণ্টা কাজ করেছেন, যা ওইসিডি-র নির্ধারিত গড়ের চেয়ে ১৪৯ণ্টা বেশি। এই ধরনের পরিবেশে সন্তান ধারণ একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় এবং তার পাশাপাশি মাতৃত্বকালীন বা পিতৃত্বকালীন ছুটির বিরুদ্ধে সামাজিক কলঙ্ক আরও তীব্র হয়ে ওঠে। এই বছরের শুরুতে অবশ্য মাতৃত্বকালীন ছুটি পিতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ যথাক্রমে তিন মাস সর্বোচ্চ ২০ দিন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। তবে এ কথা অস্বীকার করা যায় না যে, যে সব মহিলার পেশায় বিরতি থেকেছে, তাদের পুনর্নিয়োগ করতে নিয়োগকর্তারা নীহা দর্শিয়েছে কিংবা এই ধরনের মহিলাদের নিয়োগ করলেও কম বেতন দেওয়া হয় বা অস্থায়ী পদে পুনর্নিয়োগ করা হয়। এই মাতৃত্বকালীন শাস্তি ধারণাটির সঙ্গে সন্তান ধারণের উচ্চ পেশাদার খরচ জড়িত, যা সন্তান ধারণের বিষয়টিকে অপ্রীতিকর বিকল্প করে তোলে।

সন্তান লালন-পালনের অর্থনৈতিক বোঝা আরও একটি বাধার স্তর যোগ করে। ২০২৩ সালে বেসরকারি শিক্ষার খরচ সর্বকালের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে এবং গড়ে প্রতি শিক্ষার্থীর খরচ ছিল ৩৩০ মার্কিন ডলার। অভিভাবকদেরও বেসরকারি শিক্ষার জন্য প্রচুর ব্যয় করার আশঙ্কা করা হচ্ছে, যার মূল্য ২০.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং যা আগের বছরের তুলনায় ৪.৫ শতাংশ বেশি। তা ছাড়া, আবাসন খরচ আর কটি বাধা হিসেবে উঠে আসছে। কারণ দক্ষিণ কোরিয়ায় সম্পত্তির দাম গড় পরিবারের আয়ের তুলনায় ১০ গুণ বেশি, যার ফলে বাড়ির মালিকানা ক্রমশ নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।

দেশটিতে অবৈতনিক গৃহস্থালি শ্রমের ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য সবচেয়ে বেশি, যেখানে মহিলারা তাঁদের সময়ের ১২.৪ শতাংশ অবৈতনিক যত্ন গৃহস্থালি কাজে ব্যয় করেন এবং পুরুষরা ব্যয় করেন ৩.৬ শতাংশ।

এই আর্থিক চাপগুলি লিঙ্গগত নিয়মের সঙ্গে সমাপতিত হয়েছে। দেশটিতে অবৈতনিক গৃহস্থালি শ্রমের ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য সবচেয়ে বেশি, যেখানে মহিলারা তাঁদের সময়ের ১২.৪ শতাংশ অবৈতনিক যত্ন গৃহস্থালি কাজে ব্যয় করেন এবং পুরুষরা ব্যয় করেন ৩.৬ শতাংশ। বেতনভুক্ত অবৈতনিক শ্রমের এই দ্বৈত বোঝা মহিলাদের অর্থনৈতিক স্বাধিকার হ্রাস করে এবং দীর্ঘমেয়াদি পেশাদার বিনিয়োগকে সীমিত করে।

অপ্রচলিত পরিবারের জন্য চ্যালেঞ্জগুলি আরও স্পষ্ট। দক্ষিণ কোরিয়া একক মা বা সমকামী দম্পতিদের (যাঁরা আদতে স্বামীহীন) সহায়তাপ্রাপ্ত প্রজনন প্রযুক্তি পেতে বাধা দেয়। অন্য দিকে, দত্তক গ্রহণের হার ২০১১ সালে ২,৪৬৪ থেকে কমে ২০২০ সালে মাত্র ৪৯২-এ দাঁড়িয়েছেকারণ দত্তক নিতে ইচ্ছুক পিতামাতারা বিভিন্ন আইনি সামাজিক বাধার সম্মুখীন হন। এই সমস্যাগুলি প্রজনন স্বাধিকারকে সীমিত করে এবং পিতামাতার বিকল্প পথগুলিকে সীমিত করে, যা জনসংখ্যাগত মন্দায় আরও অবদান রাখে।

৪বি আন্দোলন এবং সামাজিক মনোভাবের পরিবর্তন

লিঙ্গ বৈষম্য অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতার এ হেন আবহে বিষয়ে অবাক করার মতো কিছু নেই যে, দক্ষিণ কোরিয়ার অনেক মহিলা বিবাহ করতে চাইছেন না এবং মাতৃত্বের পথে একেবারেই হাঁটতে নারাজ। ২০২৩ সালের একটি প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছে যে, ৬৫ শতাংশ মহিলা সন্তান চান না এবং ৪২ শতাংশ মহিলা বিবাহ করতে চান না। উদ্বেগজনক ভাবে, এই মহিলাদের ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষ তাঁদের সিদ্ধান্তের নেপথ্যে পারিবারিক সহিংসতাকে একটি মূল কারণ হিসাবে উল্লেখ করেছেন।

এই ক্রমবর্ধমান হতাশা ৪বি আন্দোলনের উত্থানকে ইন্ধন জুগিয়েছে, যা আসলে ‘বি’ (যার অর্থ না’) দিয়ে শুরু হওয়া চারটি কোরিয়ান শব্দ থেকে উঠে এসেছে: বিহন (বিবাহে না), বিচুলসাল (প্রসবে না), বিইয়োনেই (ডেটিংয়ে না) এবং বিসেকসেউ (লিঙ্গে না)। এই আন্দোলনের মাধ্যমে তারা চিরাচরিত লিঙ্গ ভূমিকার বাইরে বেরিয়ে নিজেদের জীবনকে পুনরায় সংজ্ঞায়িত করতে চা। ব্যক্তিগত পছন্দের প্রকাশের চাইতেও এটি ক্রমাগত লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা, অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা শ্রমবাজারের সীমাবদ্ধতার প্রতি একটি বিস্তৃত প্রতিক্রিয়াকেই দর্শায়।

২০১০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার ক্রমবর্ধমান সচেতনতা গত দশকে উল্লেখযোগ্য গতি পেয়েছে, যার নেপথ্যে রয়েছে একের পর এক ভয়াবহ ঘটনা। বিশেষ করে, যৌন নির্যাতন একটি ব্যাপক উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে। এর উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা যায় সেই মর্মান্তিক ঘটনার কথা। একজন মহিলাকে একজন পুরুষ হত্যা করেছিলেন। এই হত্যার কারণ হিসেবে পুরুষটি বলেছিলেন যে, ওই মহিলা শুধুমাত্র তাকে উপেক্ষা করেছিলে! এর পাশাপাশি, ডিজিটাল যৌন অপরাধের তীব্র বৃদ্ধি ঘটেছে, যেখানে শুধুমাত্র ২০২৩  সালেই ৩৩,৪৩৭টি ডিজিটাল যৌন অপরাধের ঘটনা প্রতিবেদিত হয়েছিল এবং দৈনিক গড় ছিল ৯১.৬টি ঘটনা। অনলাইন বা অফলাইন যা-ই হোক না কেনএই ধরনের ঝুঁকি ঘনিষ্ঠতা, অংশীদারিত্ব প্রজননের ক্ষেত্রে মহিলাদের ঝুঁকির পরিস্থিতিকে নতুন করে আকার দিয়েছে।

নারীবাদশব্দটি মৌলবাদ বা অপপ্রচারের সঙ্গে জড়িত এবং ৪বি আন্দোলনের কর্মীদের প্রতি অনলাইনে হয়রানির এক ঢেউ উঠেছে।

তবে এই আন্দোলনটি উল্লেখযোগ্য প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে সেই দেশে, যেখানে দেশের জনসংখ্যার অবনতির জন্য প্রায়শই নারীবাদীদের বলির পাঁঠা করা হয়। নারীবাদশব্দটি মৌলবাদ বা অপপ্রচারের সঙ্গে জড়িত এবং ৪বি আন্দোলনের কর্মীদের প্রতি অনলাইনে হয়রানির এক ঢেউ উঠেছে। একটি অত্যন্ত লজ্জাজনক ঘটনার উদাহরণ হিসেবে তুলে বলা যায়, একজন পুরুষ এক মহিলাকে হত্যা করেছিলেন শুধুমাত্র মহিলার ছোট চুল থাকার কারণে। কারণ হত্যাকারী পুরুষটি বিশ্বাস করত যে, ছোট চুলের ওই মহিলা নারীবাদী

প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া নারীদের উদ্বেগ দূর করতে তেমন কাজই করেনি। প্রকৃতপক্ষে, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলের প্রশাসনের অধীনে (২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে যিনি অভিশংসিত হন) ইউন ২০২২ সালে লিঙ্গ সমতা ও পরিবার মন্ত্র বাতিল করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রচার চালিয়েছিলেন এবং যুক্তি দিয়েছিলেন যে এই মন্ত্রক পুরুষদের সম্ভাব্য যৌন অপরাধী’ বলে মনে করে।

অতএব, ৪বি আন্দোলন কেবল পরিবারকেই নয়, বরং দক্ষিণ কোরিয়ার সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে থাকা বৃহত্তর কাঠামোগত লিঙ্গ বৈষম্যকেও প্রত্যাখ্যান করে।

ভবিষ্যতের পথ?

উর্বরতা সংক্রান্ত সঙ্কটের প্রতিক্রিয়ায় দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার গত ১৬ বছরে ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি অর্থ ঢেলেছে। এগুলি প্রজনন-সমর্থক নীতির আকারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যেমন শিশু থাকলে ২২,১০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত সুবিধা প্রদান, রাষ্ট্র-সমর্থিত নানাবিধ ডেটিং করার অনুষ্ঠান, মাতৃত্ব, পিতৃত্ব শিশু যত্নকালীন ছুটির মেয়াদ সম্প্রসারণ, কর্মঘণ্টা হ্রাস, এমনকি পুরুষদের জন্য সামরিক নিয়োগ থেকে অব্যাহতি। কিন্তু তা সত্ত্বেও জন্মোত্তর হার হ্রাস পাচ্ছে।

কিছু দেশে প্রজনন-সমর্থক নীতিগুলি মাঝারি মাত্রায় জন্মহার বাড়াতে সহায়ক হলেও দক্ষিণ কোরিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি তার জনসংখ্যাগত সঙ্কটের লিঙ্গভিত্তিক প্রকৃতি স্বীকার করতে ব্যর্থ হয়েছে। সরকারের মূল মনোযোগ অভিভাবকত্বকে উৎসাহিত করার দিকেই সীমাবদ্ধ রয়েছেকিন্তু এটি এই সিদ্ধান্তগুলিকে প্রভাবিতকারী বিস্তৃত কারণগুলিকে উপেক্ষা করছে, যেমন— অবৈতনিক গৃহস্থালির কাজ ও বেতনের কাজের দ্বৈত বোঝা, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, প্রচলিত পরিবারের বাইরে থাকা পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত সহায়তার অভাব এবং নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ।

আরও কার্যকর প্রতিক্রিয়ার জন্য তাদের জনসংখ্যাগত কৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে লিঙ্গ-সংবেদনশীল সংস্কার অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। এই গঠনগত সমস্যাগুলির সমাধান করা শুধু নৈতিক দায়িত্ব নয়, বরং এটি অর্থনৈতিক ও জাতীয় নিরাপত্তার দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 


শ্যারন সারা থাওয়ানে ওআরএফ কলকাতা এবং সিএনইডি-র ডিরেক্টর নীলাঞ্জন ঘোষের এক্সিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.