ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলতি যুদ্ধ এমন একটি একক বৃহত্তম চ্যালেঞ্জকে সামনে নিয়ে এসেছে, আঞ্চলিক স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়ায় কোনও একদিন অবশ্যই যার মুখোমুখি হওয়ারই কথা ছিল। চ্যালেঞ্জটি হল প্যালেস্তাইন ইস্যু। মার্কিন কূটনীতিকদের ওয়াশিংটন ডিসি–র কাছে এই অঞ্চলে মুখরক্ষা করতে না–পারার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করার রিপোর্ট থেকে শুরু করে গাজায় ক্রমবর্ধমান মৃতদেহের সংখ্যা, গত অক্টোবর মাসে এই সংঘাত অনেক লাল রেখা অতিক্রম করেছিল।
যাই হোক, গাজা নিয়ে আলোচনার জন্য রিয়াধে অনুষ্ঠিত আরব লিগের সঙ্গে অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো–অপারেশন (ওআইসি)–এর জরুরি অধিবেশনে নিন্দা করার বাইরে আরব ঐকমত্যের অভাব এবং অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রগুলির বিচ্ছিন্ন দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থ প্রদর্শিত হয়েছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিও সেখানে উপস্থিত ছিলেন, এবং চিনের মধ্যস্থতায় এই বছরের শুরুতে অর্জন করা একটি কূটনৈতিক দাতাতেঁর সৌজন্যে এক দশকেরও বেশি সময় পরে তিনি তাঁর সৌদি সমকক্ষের সঙ্গে দেখা করেন। তেহরান হামাস ও হিজবুল্লার প্রতি সমর্থনের বিষয়ে কোনও কিছু গোপন করেনি, এবং প্যালেস্তাইনি প্রতিরোধের অংশ হিসাবে তাদের তুলে ধরে দাবি করেছে তারা নিছক নিষিদ্ধ সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী নয়। রিয়াধে রাইসি তার মুসলিম সমকক্ষদের ইজরায়েলের সশস্ত্র বাহিনীকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করতে আহ্বান জানান।
সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি (ইউএই) ও অন্যদের জন্য কৌশলগত স্বার্থ যেহেতু দীর্ঘমেয়াদি, তাই বর্তমান সংঘাত তাদের দৃষ্টিভঙ্গির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। বিগত কয়েক বছর ধরে এই অঞ্চলের মধ্যে কূটনৈতিক ও কৌশলগত পুনর্বিন্যাস এক দ্রুত পরিবর্তনশীল স্বার্থকে চিহ্নিত করেছে, যেখানে সংঘাতের ইতিহাস পিছনে ফেলে এমন এক ভবিষ্যতের দিকে যাত্রা শুরু হয়েছে যার সারমর্ম হিসেবে দেখা হয় কার্যকরী স্থিতিশীলতাকে। ২০২১ সালে স্বাক্ষরিত আব্রাহাম চুক্তিটি শুধু কিছু আরব রাষ্ট্র ও ইজরায়েলের মধ্যেই নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বৃহত্তর অঞ্চলের মধ্যেও সহযোগিতা এবং স্বাভাবিকীকরণের একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে। এই স্বাভাবিকীকরণের একটি প্রত্যক্ষ ফলাফল ছিল ভারত, ইজরায়েল, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি (ইউএই) ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য বাস্তুতন্ত্র হিসাবে আই২ইউ২–এর মতো নতুন উদ্যোগ স্থাপন করা, যাকে ‘নতুন’ মধ্যপ্রাচ্য (পশ্চিম এশিয়া) কী অর্জন করতে পারে তার অগ্রণী উদাহরণ হিসাবে দেখা হয়েছিল।
ইজরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্কের স্বাভাবিকীকরণ, যে সৌদিতে দুটি পবিত্র মসজিদ আছে, হবে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। এটি ভূ–কৌশলগতভাবে বালির মধ্যেকার রেখাগুলিকে পুনরায় আঁকবে, যেখানে মার্কিন সমর্থনপুষ্ট একটি আরব–ইজরায়েলি ব্লক ইরানের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হবে, যা শিয়া রাষ্ট্রটির জন্য একটি অপ্রিয় সম্ভাবনা।
এই ক্ষেত্রে, ইজরায়েলের বিরুদ্ধে হামাসের সন্ত্রাসবাদী হামলা এবং তার পরবর্তী গাজায় সামরিক অভিযান, এই উভয়ের প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরশাহির প্রতিক্রিয়া ছিল সংযত এবং অনেকের কাছেই অপ্রত্যাশিত। আবুধাবির প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল ইজরায়েলের বিরুদ্ধে হামাসের কর্মকাণ্ডের নিন্দা করা, এবং এটিকে ‘গুরুতর ও ভয়ঙ্কর উত্তেজনাবৃদ্ধি ’ বলে অভিহিত করা। তারপর থেকে আমিরশাহি একটি ভারসাম্য বজায় রেখেছে, কিন্তু অ্যাকর্ড সিস্টেমের মধ্যে ফাটল দৃশ্যমান বলে মনে হচ্ছে। সংযুক্ত আরব আমিরশহি অবশ্য চুক্তিটি যা কিছুর প্রতিনিধিত্ব করে তার প্রতি তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে; কিন্তু তাদের অংশীদার বাহরাইন, যে ইজরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছিল, বাণিজ্য থামিয়েছে এবং পরামর্শের জন্য তাদের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করেছে।
যাই হোক, একটি রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মধুর জায়গা খোঁজার জন্য হুড়োহুড়ির মধ্যে গাজার দ্বন্দ্বের কারণে বা আরব রাষ্ট্রগুলি ও ইরানের মধ্যে আরও সংঘাতের সম্ভাবনার কারণে এই নতুন আরব–ইজরায়েল ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা কম। ইউরোপীয় ইহুদি সমিতি ও আমেরিকান ইজরায়েল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি দ্বারা আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির ফেডারেল ন্যাশনাল কাউন্সিলের প্রতিরক্ষা, অভ্যন্তরীণ ও বিদেশ বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান আলি রশিদ আল নুয়াইমি বলেছেন, ‘‘(আব্রাহাম) চুক্তিগুলি আমাদের ভবিষ্যৎ।’’
সংযুক্ত আরব আমিরাশাহির মতো সৌদিরাও ইজরায়েলের সঙ্গে একটি স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) হামাসের হামলার মাত্র কয়েক দিন আগে একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে রাজতন্ত্রটি ইজরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার দিকে প্রতিদিন আরও কাছাকাছি আসছে। তবে তিনি এই সতর্কতাও যোগ করেছিলেন যে এই জাতীয় উদ্যোগের সাফল্যও প্যালেস্তাইনের ক্ষেত্রে ইজরায়েল কী করে তার উপর নির্ভরশীল। যদিও এফ গ্রেগরি গাউস ৩–এর মতো পণ্ডিতরা মনে করছেন যে সৌদি–ইজরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের মৌলিক বিষয়গুলি এখনও উপলব্ধ রয়েছে, উপসাগরীয় রাজতন্ত্রগুলি আরব বসন্তের ধাক্কার মধ্যে বসবাস করে এবং তাই বর্তমানে কেউ কেউ যা প্রত্যাশা করছেন তার চেয়ে বেশি সতর্কতার সঙ্গে এগোবে।
সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি (ইউএই) ও অন্যদের জন্য কৌশলগত স্বার্থ যেহেতু দীর্ঘমেয়াদি, তাই বর্তমান সংঘাত তাদের দৃষ্টিভঙ্গির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।
এমনকি যদি হামাসের কাজগুলি প্রাথমিকভাবে উপরের বর্ণনাগুলিকে ব্যাহত করার উদ্দেশ্যে না–ও করা হয়ে থাকে, তাহলেও বিষয়টি একটি বড় লাভ এনে দেবে। ইজরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্কের স্বাভাবিকীকরণ, যে সৌদিতে দুটি পবিত্র মসজিদ আছে, হবে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। এটি ভূ–কৌশলগতভাবে বালির মধ্যেকার রেখাগুলিকে পুনরায় আঁকবে, যেখানে মার্কিন সমর্থনপুষ্ট একটি আরব–ইজরায়েলি ব্লক ইরানের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হবে, যা শিয়া রাষ্ট্রটির জন্য একটি অপ্রিয় সম্ভাবনা। এর প্রতিক্রিয়ায় ইরান বছরের পর বছর ধরে পাকিস্তানের সাবেক সামরিক স্বৈরশাসক জিয়া–উল–হক কল্পিত একটি কৌশলের সম্ভবত সবচেয়ে উপযোগী সংস্করণটি একত্রিত করেছে, যার মূল কথা হল ‘হাজার আঘাতের মাধ্যমে’ প্রতিপক্ষকে লক্ষ্যবস্তু করা। জিয়া অবশ্য তাঁর প্রতিপক্ষ ভারতের বিরুদ্ধে এই প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু ইরানিরা কাডস ফোর্সের প্রয়াত নেতা কাসেম সোলেইমানির অধীনে, যিনি ২০২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে নিহত হন, যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল তা হল ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন ও লেবানন জুড়ে মিলিশিয়াদের একটি বিশাল বাহিনী গঠনের মাধ্যমে ইজরায়েলকে নিবৃত্ত করা, এবং প্রয়োজনে আরবদেরও। সেই লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে বলে মনে হয়।
আই২ইউ২–এর জন্য চলতি সংকট একটি ধাক্কা, কিন্তু তা অস্তিত্বগত নয়। ক্ষুদ্রপাক্ষিক বিন্যাসটি আগামী মাসগুলিতে কিছুটা বাষ্প হারাতে পারে, তবে একটি প্রতিষ্ঠান হিসাবে গুরুত্বপূর্ণই থেকে যাবে। তবে এই ধারণাটি এখনও সফল সরবরাহ পদ্ধতিসহ একটি চমৎকার কূটনীতির নকশা হিসাবে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর আন্তর্জাতিক কাঠামোর একটি সম্ভাব্য বিকল্প, প্রমাণিত হয়নি। সম্ভবত এই সঙ্কটটি এই ধরনের ক্ষুদ্রপাক্ষিকের জন্য যোগ্যতার প্রমাণ দেখাতে পূর্ববিদ্যমান আঞ্চলিক ফোরামগুলির সঙ্গে কাজ করার একটি উপযুক্ত সময়। আই২ইউ২–এর মধ্যে মার্কিন–ইজরায়েল ব্লক দ্বিপাক্ষিক স্তরে কাজ করছে, এবং ইউএই দূরত্ব ও ভারসাম্য উভয়ই বজায় রেখে চলেছে। ভারতও তার নিজস্ব বিদেশনীতি এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে সঙ্কটের মধ্যে একটি কঠিন পথ হাঁটছে। নয়াদিল্লি গাজায় মানবিক যুদ্ধবিরতির দাবিতে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) আহ্বানের সঙ্গে যুক্ত হওয়া থেকে বিরত ছিল, কিন্তু কয়েকদিন পর আবার ইউএনজিএ–তে প্যালেস্তাইনি ভূখণ্ডে ইজরায়েলি বসতি স্থাপনের নিন্দা জানিয়ে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে ভোট দেয় (ভারত এই প্রস্তাবের পক্ষে প্রতি বছর ভোট দিয়ে আসছে)। এটি আরব ও ইজরায়েলি স্বার্থের মধ্যে ভোটের ভারসাম্য বজায় রেখে একটি সার্বভৌম প্যালেস্তাইনি রাষ্ট্র এবং একটি দ্বি–রাষ্ট্র সমাধানের জন্য নয়াদিল্লির অবস্থানকে পোক্ত করেছে।
আই২ইউ২, এবং এমনকি সেপ্টেম্বরে জি২০ সম্মেলনের সাইডলাইনে ঘোষিত ভারত–মধ্যপ্রাচ্য–ইউরোপ ইকনমিক করিডোরের (আইএমইইসি) ব্যবস্থাগুলি, থাকার জন্যই এসেছে৷ ‘নতুন’ ও ‘পুরনো’ মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে একটি সংঘর্ষ প্রত্যাশিতই ছিল, বিশেষ করে প্যালেস্তাইন ইস্যুতে। হামাসের আক্রমণ প্যালেস্তাইনি সঙ্কটের কেন্দ্রিকতাকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। এই অঞ্চলের ভবিষ্যতের কোনও নকশা, অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক, প্যালেস্তাইনিদের উপেক্ষা করতে পারে না। সন্ত্রাসের মাধ্যমে হামাসের বার্তা যেমন আরবদের জন্য ছিল, তেমনই ইজরায়েলিদের জন্যও।
কবীর তানেজা অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের একজন ফেলো
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.