Author : Sunaina Kumar

Published on Mar 18, 2024 Updated 10 Hours ago

উচ্চ স্তরের শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন কমবয়সি নারীরা কর্মশক্তিতে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে ভারতে নারী র্মীশক্তি পরিবর্তিত হচ্ছে

ভারতে নারী কর্মশক্তি: উদীয়মান প্রবণতা এবং অন্তর্দৃষ্টি

এই নিবন্ধটি ইন্টারন্যাশনাল উইমেন’স ডে সিরিজের অংশ।


ভারতের কর্মীশক্তি প্রধানত পুরুষ। একটি দেশ যেটি তার জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ ব্যবহার করতে মরিয়া, যেটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কর্মক্ষম বয়সের জনসংখ্যাসম্পন্ন - ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ স্পর্শ করবে বলে আশা করা হচ্ছে সেই দেশে শ্রমশক্তিতে আমরা কোনও মতেই নারীদের কম অংশগ্রহণকে সমর্থন করতে পারি না ভারত বিশ্বব্যাপী বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় অবদানকারী দেশ হয়ে উঠতে প্রস্তুত। একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষায় পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে যে, দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশ অর্জনের জন্য আগামী পাঁচ বছর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সেই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে ২০৩০ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া নতুন কর্মশক্তির অর্ধেকেরও বেশি নারী হওয়া জরুরি।

 

ভারতের শ্রমশক্তিতে লিঙ্গগত ব্যবধান - যা মূলত রক্ষণশীল সামাজিক নিয়মের জন্য দায়বদ্ধ – তা চাহিদা (কাজের সুযোগ) সরবরাহের দিক (কাজের জন্য নারীদের প্রাপ্যতা) উভয় কারণেই সাম্প্রতিক দশকের সবচেয়ে স্থায়ী প্যারাডক্স হয়ে রয়ে গিয়েছে

 

দেশে নারী কর্মীশক্তির অংশগ্রহণ হ্রাসের চিরাচরিত ইতিহাস রয়েছে। ১৯৫৫ সালে স্বাধীনতার পরপরই দেশের নারী শ্রমশক্তি অংশগ্রহণের হার (এফএলএফপিআর) ছিল ২৪.১ শতাংশ ১৯৭২ সালে এফএলএফপিআর বৃদ্ধি পেয়ে ৩৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছিলতার পরে এটি ক্রমহ্রাস পেয়েছে এবং ২০১৭ সালে সর্বনিম্ন স্তরে অর্থাৎ ২৩ শতাংশে নেমে এসেছে। ভারতের শ্রমশক্তিতে লিঙ্গগত ব্যবধান - যা মূলত রক্ষণশীল সামাজিক নিয়মের জন্য দায়বদ্ধ – তা চাহিদা (কাজের সুযোগ) সরবরাহের দিক (কাজের জন্য নারীদের প্রাপ্যতা) উভয় কারণেই সাম্প্রতিক দশকের সবচেয়ে স্থায়ী প্যারাডক্স হয়ে রয়ে গিয়েছে। অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, প্রজনন হার হ্রাস এবং কয়েক দশক ধরে উচ্চ শিক্ষায় নারীদের তালিকাভুক্তি বৃদ্ধি হওয়া সত্ত্বেও এমনটা ঘটেছে। বেতনভুক্ত কাজ থেকে নারীদের বাদ দেওয়ার ফলে অর্থনীতিতে চিরস্থায়ী লিঙ্গ বৈষম্য দেখা দিয়েছে। চিরাচরিত ভাবে ভারতে নারীরা মূলত সামাজিক নিরাপত্তা ছাড়াই শ্রম-নিবিড়, কম বেতনের, অনানুষ্ঠানিক কাজে নিযুক্ত হয়েছেন।

যাই হোক, গত ছয় বছরে এফএলএফপিআর-এর উন্নতি হয়েছে এবং নতুন প্রবণতা দেখা গিয়েছে। পর্যায়ক্রমিক শ্রম শক্তি সমীক্ষা (২০২২-২৩) থেকে পাওয়া তথ্য নির্দেশ করে যে, এফএলএফপিআর ৩৭ শতাংশে রয়েছে, যা শেষ সমীক্ষা (২০২১-২২) থেকে ৪.২ শতাংশ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

অল্পবয়সি উচ্চশিক্ষিত নারীরা কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করছে

এই পরিবর্তন অন্যান্য সমীক্ষাতেও প্রতিফলিত হয়েছে। স্টেট অফ ওয়ার্কিং ইন্ডিয়া রিপোর্ট ২০২৩ ভারতে কর্মসংস্থানের প্রবণতায় লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাসের দিকে নির্দেশ করে। এই হ্রাস অর্থনীতিতে কাঠামোগত পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত, যা সারা দেশে নারী কর্মীশক্তির পরিবর্তনের দিকে চালিত করে।

১) সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, নিম্ন স্তরের শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন বয়স্ক নারীদের কর্মশক্তি থেকে প্রস্থান ঘটছে। একই সময়ে উচ্চ স্তরের শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন অল্পবয়সি নারীরা কর্মশক্তিতে প্রবেশ করছে

২) এক দিকে বেতনভুক্ত চাকরিতে নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অন্য দিকে অনানুষ্ঠানিক মজুরির কাজে নারীর সংখ্যা ক্রমশ কমছে।

৩) কৃষি ক্ষেত্রে কর্মরত নারীর অংশ কমছে। সেবা ক্ষেত্রে আবার নারীদের প্রবেশের অনুপাত বাড়ছে।

বেতনভুক্ত কর্মসংস্থানে নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা উপার্জনের লিঙ্গ ব্যবধানের উপর একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, যা অনেক সংখ্যক নারীর নিত্যনৈমিত্তিক মজুরির কাজ ছেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হ্রাস পায়। নারী কর্মশক্তিতে এই পরিবর্তনগুলি দেশে নারীদের অর্থনৈতিক অংশগ্রহণের উপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবকেই দর্শায়

 

ভারতে এবং অনেক উন্নয়নশীল দেশে নারীরা ব্যাপক ভাবে অবৈতনিক অর্থনৈতিক কাজে নিযুক্ত রয়েছেন এবং সেগুলি যত্ন প্রদানের কাজ বা গৃহস্থালির কাজ থেকে আলাদাযেমন খামার বা পারিবারিক উদ্যোগে কাজ করা। এ সব ক্ষেত্রে কাজ করার জন্য তাঁদের বেতন দেওয়া হয় না বা শ্রমিক হিসাবে নারীরা স্বীকৃত হ না।

 

শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের সামগ্রিক বৃদ্ধি আরও বেশি সংখ্যক গ্রামীণ নারীদের কর্মশক্তিতে যোগদান দ্বারা চালিত হয়। পিএলএফএস তথ্য দর্শিয়েছে যে, এলএফপিআর শহুরে নারীদের জন্য শতাংশ পয়েন্ট এবং গ্রামীণ নারীদের জন্য ১৪ শতাংশ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। বেশ কয়েকটি বিশ্লেষণ অনুসারে দেখা গিয়েছে, এটি আংশিক ভাবে নারীদের কাজের আরও সঠিক পরিমাপের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে ভারতে এবং অনেক উন্নয়নশীল দেশে নারীরা ব্যাপক ভাবে অবৈতনিক অর্থনৈতিক কাজে নিযুক্ত রয়েছেন এবং সেগুলি যত্ন প্রদানের কাজ বা গৃহস্থালির কাজ থেকে আলাদাযেমন খামার বা পারিবারিক উদ্যোগে কাজ করা। এ সব ক্ষেত্রে কাজ করার জন্য তাঁদের বেতন দেওয়া হয় না বা শ্রমিক হিসাবে নারীরা স্বীকৃত হ না। বর্তমানে যে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে, তা দর্শায়, নারীদের কাজের চিরাচরিত ভুল পরিমাপের বিষয়ে তাঁরা আরও বেশি সচেতন এবং এটি এফএলএফপিআর বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। ২০১৭-১৮ থেকে ২০২২-২৩ পর্যন্ত মোট নারী শ্রমিকের মধ্যে অবৈতনিক কর্মীদের পরিমাণ ৩১.৭ শতাংশ থেকে ৩৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

 

নারীদের স্ব-কর্মসংস্থানে উত্থান ঘটলেও যত্ন প্রদানের বোঝায় কোনও পার্থক্য নেই

পিএলএফএস-এর সর্বশেষ পর্যায়ে (২০২২-২৩) আর কটি উল্লেখযোগ্য প্রবণতা লক্ষ করা গিয়েছে। স্ব-নিযুক্ত নারীদের অনুপাত সর্বোচ্চ ৭০.১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা ২০২১-২২ সালের ৬০ শতাংশ থেকে অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। পিএলএফএস-এ স্ব-নিযুক্তদের শ্রেণির মধ্যে আবার দুটি উপশ্রেণি রয়েছে— নিজস্ব অ্যাকাউন্ট কর্মী নিয়োগকর্তা এবং পারিবারিক উদ্যোগে অবৈতনিক সাহায্যকারী। অর্ধেকেরও বেশি নারী পারিবারিক উদ্যোগগুলিতে বিনা বেতনে সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করেছেন।

 

স্ব-নিযুক্ত কর্মীদের বৃদ্ধিকে সারা দেশে আরও বেশি নারীর উদ্যোক্তা গ্রহণের লক্ষণ হিসাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে

 

শহুরে এলাকার তুলনায় গ্রামীণ এলাকায় স্ব-নিযুক্ত নারী শ্রমিকদের পরিমাণর্বদাই বেশি। গ্রামীণ নারীরা যে কাজের সঙ্গে জড়িত, তার তিন-চতুর্থাংশের জন্য কৃষি সংশ্লিষ্ট কার্যকলাপগুলি দায়বদ্ধ। স্ব-নিযুক্ত কর্মীদের বৃদ্ধিকে সারা দেশে আরও বেশি নারীর উদ্যোক্তা গ্রহণের লক্ষণ হিসাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনার অধীনে - যা উদ্যোক্তার জন্য ক্ষুদ্র-ঋণ দেওয়ার সুযোগকে প্রসারিত করে - প্রায় ৭০ শতাংশ সুবিধাভোগী নারী এবং স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়ার অধীনে অনুমোদিত ঋণের ৮৪ শতাংশ নারী সুবিধাভোগীরা পেয়েছেন। এই দুটি প্রকল্পই সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ডিজিটাল আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জন্য ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে ঘটেছে, যার মাধ্যমে লিঙ্গের অন্তর্ভুক্তি সম্ভব হয়েছে।

তবে কিছু ক্ষেত্রে সতর্কতা নেওয়া বাঞ্ছনীয়। স্টেট অফ ইন্ডিয়া ওয়ার্কিং রিপোর্টে স্ব-নিযুক্ত গ্রামীণ নারীদের বৃদ্ধিকে অতিমারির পরে অর্থনৈতিক দুর্দশার বৃদ্ধির সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে, যা পুরুষদের তুলনায় নারীদে উপর বেশি প্রভাব ফেলেছে। কর্মীদের স্ব-কর্মসংস্থান বিভাগের বৃদ্ধি - যা পুরুষ ও নারীদের মধ্যে অতিমারির সময় প্রচলিত ছিল - পুরুষদের জন্য প্রাক-অতিমারি স্তরে ফিরে গেলেও নারীদের জন্য তা বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি উভয় লিঙ্গের সহাবস্থানের প্রবণতার ফলে ঘটে থাকতে পারে। অর্থনৈতিক দুর্দশা আরও বেশি সংখ্যক নারীকে অর্থ প্রদেয় কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে বাধ্য করেছে এবং সরকারি প্রকল্পগুলির মাধ্যমে ঋণের সহজ লভ্যতা আরও বেশি সংখ্যক নারীকে ক্ষুদ্র-উদ্যোগ নিতে সক্ষম করেছে। যাই হোক না কেন, ভারতীয় অর্থনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণে একটি মৌলিক পরিবর্তন দেখা গিয়েছে।

 

কর্মীদের স্ব-কর্মসংস্থান বিভাগের বৃদ্ধি - যা পুরুষ ও নারীদের মধ্যে অতিমারির সময় প্রচলিত ছিল - পুরুষদের জন্য প্রাক-অতিমারি স্তরে ফিরে গেলেও নারীদের জন্য তা বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি উভয় লিঙ্গের সহাবস্থানের প্রবণতার ফলে ঘটে থাকতে পারে।

 

এটি মোটেও অপ্রত্যাশিত নয় যে, নারীর কর্মশক্তির অংশগ্রহণের সামগ্রিক বৃদ্ধি সত্ত্বেও নারীদের উপর যত্ন প্রদান এবং গৃহস্থালির কাজের বোঝা কমেনি। ভারতে নারীরা গড়ে ৭.২ণ্টা অবৈতনিক গার্হস্থ্য কাজে ব্যয় করেন, যেখানে পুরুষরা একই কাজে মাত্র ২.৮ণ্টা অতিবাহিত করে থাকেন। এটি বেতনভুক্ত কাজে নারীদের অংশগ্রহণ করার ক্ষমতার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।

দেশে আরও বেশি নারী বেতনভুক্ত কাজে প্রবেশ করলে শালীন কাজ, ন্যায্য আয়, সামাজিক সুরক্ষা নিরাপদ কাজের পরিবেশ দ্বারা সংজ্ঞায়িত অন্তর্নিহিত লক্ষ্য হিসাবে কর্মসংস্থানের গুণমান বৃদ্ধি পাবে। একই সময়ে, গৃহস্থালিতে পরিচর্যার কাজের হ্রাস এবং পুনর্বণ্ট-সহ পরিচর্যা পরিকাঠামো পরিষেবাগুলিতে বৃহত্তর বিনিয়োগের সঙ্গে শ্রমশক্তিতে নারীদের প্রবেশকে সমর্থন করতে হবে।

 


সুনয়না কুমার অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.