Author : Harsh V. Pant

Published on Apr 19, 2023 Updated 0 Hours ago

বিশ্বাসভিত্তিক অংশীদারি আজ বৈশ্বিক ভূ–দৃশ্যকে পুনরায় সংজ্ঞায়িত করছে, এবং সাম্প্রতিক ইতিহাসে দেখা যায়নি এমন দৃঢ় মনোভাব নিয়ে ভারত এগিয়ে চলেছে।

নয়াদিল্লি–ক্যানবেরা সম্পর্কের উদীয়মান রেখা

ভারতীয় বিদেশনীতি সাম্প্রতিক বছরগুলিতে শক্তিশালী অংশীদারি তৈরি করার পথে এগিয়ে চলেছে। সমমনস্ক অংশীদারদের সঙ্গে একত্র হওয়ার প্রশ্নে যে দেশটি আড়ষ্ট ছিল, সেই নয়াদিল্লি আজ যাদের সঙ্গে সে রাজনৈতিক সংযোগ অনুভব করে সেই দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে তার দৃঢ়তা প্রদর্শন করছে। বিশ্বাসভিত্তিক অংশীদারি আজ বৈশ্বিক ভূ–দৃশ্যকে পুনরায় সংজ্ঞায়িত করছে, এবং সাম্প্রতিক ইতিহাসে দেখা যায়নি এমন দৃঢ় মনোভাব নিয়ে ভারত এগিয়ে চলেছে, কারণ আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় একটি নেতৃস্থানীয় শক্তি হিসাবে তার বৈশ্বিক অবস্থানকে ভারত দেখতে পেয়েছে। এটি ইন্দো–প্যাসিফিকের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সত্য, যেখানে পুরনো অংশীদারির পুনর্নির্মাণ এবং আঞ্চলিক ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সময়ে নতুন নতুন অংশীদারি তৈরি করা হয়েছে।

এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পৃক্ততা বিশেষভাবে চোখে পড়ে, এই দুটি দেশ তাদের দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগকে যে গতিতে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হয়েছে তার জন্য। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ ভারতে এসে শুধু হোলির উৎসবই উদযাপন করেননি, বরং একটি অংশীদারির প্রাণবন্ততাও উদযাপন করেছেন যা কয়েক বছর আগে পর্যন্ত তার পূর্ণ সম্ভাবনায় পৌঁছনোর জন্য সংগ্রাম করছিল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের পরপর নেতারা নয়াদিল্লি–ক্যানবেরা যোগাযোগের সুর ও সারমর্মে একটি দর্শনীয় পরিবর্তন নিশ্চিত করেছেন। ২০১৭ সালের পর এটাই ছিল অস্ট্রেলিয়ার কোনও প্রধানমন্ত্রীর প্রথম ভারত সফর। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আলবানিজেরও এটা ছিল প্রথম ভারত সফর, যদিও তিনি ইতিমধ্যেই কয়েকবার তাঁর ভারতীয় সমকক্ষের সঙ্গে দেখা করেছেন।

বিশ্বাসভিত্তিক অংশীদারি আজ বৈশ্বিক ভূ–দৃশ্যকে পুনরায় সংজ্ঞায়িত করছে, এবং সাম্প্রতিক ইতিহাসে দেখা যায়নি এমন দৃঢ় মনোভাব নিয়ে ভারত এগিয়ে চলেছে, কারণ আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় একটি নেতৃস্থানীয় শক্তি হিসাবে তার বৈশ্বিক অবস্থানকে ভারত দেখতে পেয়েছে।

ঠান্ডা যুদ্ধের সময় ভারত ও অস্ট্রেলিয়া বিপরীত আদর্শগত মেরুতে দাঁড়িয়ে ছিল। বাণিজ্য সম্পর্কের অভাব এবং তাদের নিজ নিজ এলাকা নিয়ে ব্যস্ততা তাদের নিজেদের সম্পর্কের সম্ভাব্যতা অন্বেষণ করতে দুই দেশকে বাধা দিয়েছিল। ঠান্ডা যুদ্ধ শেষ হওয়ার সঙ্গেসঙ্গেই ভারত ও অস্ট্রেলিয়া একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে শুরু করে, যদিও ভারতে অনেকেই তখন অস্ট্রেলিয়াকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘অনুচর’‌ হিসাবে দেখতেন। ২০০৭ সালে ভারতের কাছে ইউরেনিয়াম বিক্রির বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিধা দুই দেশের মধ্যে ইতিমধ্যে বিদ্যমান অবিশ্বাসকে আরও বাড়ায়। ২০১১ সালে ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষর করার পর অবশ্য অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে আসতে থাকে, যে ঘটনাটি নয়াদিল্লিতে অনেকের কাছে দেশটির বৈদেশিক নীতিসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অ–স্বাধীন প্রকৃতিকেই তুলে ধরেছিল। তারপর থেকে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের তাৎপর্যপূর্ণ উন্নতি হয়েছে, এবং আজ তারা ইতিহাসের যে কোনও সময়ের চেয়ে অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ। এক দশক আগে দুটি দেশের দূরত্ব মাথায় রাখলে এই অসাধারণ স্বাচ্ছন্দ্যের স্তরটি বিশেষভাবে চোখে পড়ে ।

দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারি ২০২০ সালের জুন মাসে ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্বে (‌কমপ্রিহেনসিভ স্ট্র‌্যাটেজিক পার্টনারশিপ)‌ উন্নীত হয়, এবং ভারত–অস্ট্রেলিয়া অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বাণিজ্য চুক্তি (ইসিটিএ)‌ ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২–এ কার্যকর হয়। এই চুক্তিটি দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক আস্থার ফল। চুক্তি অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ার ট্যারিফ লাইনের ১০০ শতাংশে প্রদত্ত অগ্রাধিকারমূলক বাজার–প্রবেশের অধিকার পেয়ে ভারত উপকৃত হচ্ছে, এবং ভারত তার ট্যারিফ লাইনের ৭০ শতাংশের বেশি ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়াকে অগ্রাধিকারমূলক বাজার–প্রবেশাধিকার দিচ্ছে।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ভারতে একটি বড় ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদলেরও নেতৃত্ব দেন, কারণ ক্যানবেরা তার সমস্ত দাঁও চিনের ঝুড়িতে রাখার পরিবর্তে তার বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদারিতে বৈচিত্র্য আনতে চায়। পুনঃনিযুক্তির সাম্প্রতিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ক্যানবেরার সঙ্গে চিনের সম্পর্ক পরীক্ষামূলক থেকে গেছে। ভারত হল অস্ট্রেলিয়ার ষষ্ঠ বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার, এবং ক্যানবেরা যখন তার রপ্তানির উপর চিনের বাণিজ্য অবরোধ আরোপের সঙ্গে লড়াই করছে সেই সময় এই অংশীদারি আরও বাড়ানোর জন্য উভয় পক্ষের উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে। চিন সবচেয়ে বড় গ্রহীতাদের মধ্যে একটি হওয়া সত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়ার অতি–গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সরবরাহের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনার বিষয়টি তাদের নতুন লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। ক্যানবেরার লক্ষ্য ভারত, জাপান ও কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক অংশীদারদের কাছে একটি ‘‌বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য সরবরাহকারী’‌ হয়ে ওঠা।

ভারত হল অস্ট্রেলিয়ার ষষ্ঠ বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার, এবং ক্যানবেরা যখন তার রপ্তানির উপর চিনের বাণিজ্য অবরোধ আরোপের সঙ্গে লড়াই করছে সেই সময় এই অংশীদারি আরও বাড়ানোর জন্য উভয় পক্ষের উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে।

আঞ্চলিক স্তরে দুটি দেশ সমমনস্ক দেশগুলির একটি ইন্দো–প্যাসিফিক জোট গঠন করে তাদের অভিন্ন বিপদের উপলব্ধি এবং সাধারণ মূল্যবোধের ভিত্তিতে একত্র হতে চেয়েছে। কোয়াডের আজ এক নতুন উদ্যম রয়েছে, যা চিনের ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসতে আগ্রহী দেশগুলির কাছে একটি শক্তিশালী বিকল্প প্রস্তাব করার আশা করছে। নয়াদিল্লি ও ক্যানবেরার মধ্যে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ক্রমশ বেশি করে জাহাজ চলাচলের স্বাধীনতা ও ইন্দো–প্যাসিফিক সামুদ্রিক পরিসরে একটি ‘কৌশলগত ভারসাম্য’ বজায় রাখা, এবং তার পাশাপাশি বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও ভূখণ্ডগত অখণ্ডতার প্রতি বিশ্বাস তুলে ধরার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে৷ সর্বোপরি, তারা উভয়ই এই অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলের সুবিধাভোগী যা আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি নিয়মভিত্তিক আদেশকে সম্মান করে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ইন্দো–প্যাসিফিকের অংশীদারি নিয়ে কিছু দেশের বৈরী মনোভাবের কারণে এই অঞ্চলের সামুদ্রিক শৃঙ্খলার স্থিতিশীলতা সম্পর্কে দুই দেশ আরও উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে। ঠিক যেমন চিনা ঔদ্ধত্য না থাকলে একটি গুরুত্বপূর্ণ কোয়াড দূরের স্বপ্ন হয়েই থাকত, তেমনই ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার সক্রিয় অবস্থান না থাকলে এই গ্রুপিং এত দ্রুত এতদূর অগ্রসর হতে পারত না। ২০২০ সালে নয়াদিল্লি ক্যানবেরাকে তার উচ্চস্তরের নৌ অনুশীলনে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যা সাধারণত ভারত, জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীকে নিয়ে হত। যখন চারটি দেশের মধ্যে কৌশলগত সংলাপ ও অনানুষ্ঠানিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পাচ্ছিল, সেই সময় ২০২১ সালের অনুশীলনটি প্রথম বারের মতো অস্ট্রেলিয়াকে এই আনুষ্ঠানিক যৌথ সামরিক সম্পৃক্ততার অংশ করে তোলে।

ইন্দো–প্যাসিফিক নির্মাণ ভারত ও অস্ট্রেলিয়াকে তাদের নিজ নিজ কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গিতে একে অপরকে নতুন করে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। ভারত মহাসাগরকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য অস্ট্রেলিয়ার কৌশলগত দিগন্তের বিস্তৃতি, এবং দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে ভারতের ক্রমবর্ধমান পদচিহ্ন ইন্দো–প্যাসিফিকের কল্পনাকে একটি বাস্তব সম্ভাবনায় পরিণত করেছে। অভিন্নতা সত্ত্বেও অংশীদারির গতি বজায় রাখার জন্য স্থিতিশীল বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। মোদী কোয়াড লিডারস’‌ সামিটের জন্য অস্ট্রেলিয়া যাবেন, এবং আলবেনিজ আবার সেপ্টেম্বরে জি২০ নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনের জন্য ভারতে আসবেন, ‌এবং এই দুই সফর উভয় পক্ষকে এখনও পর্যন্ত যা অর্জিত হয়েছে তা সুসংবদ্ধ করার এবং নতুন দিগন্তের দিকে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেবে। ইতিমধ্যে ভারত আলবেনিজকে নিজ ভূমিতে স্বাগত জানানোর পর ‘ক্রিকেট, কমনওয়েলথ ও কারি’‌র এবার ‘‌চিন, জলবায়ু ও অতি–গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি’‌র জন্য জায়গা করে দেওয়া উচিত।


এই ভাষ্যটি প্রথম ‘ফাইনান্সিয়াল এক্সপ্রেস’-এ প্রকাশিত হয়েছিল।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.